রোজার নিয়ত এবং সায়িম এর বিধি বিধান সমূহ

রোজার নিয়ত এবং সায়িম এর বিধি বিধান সমূহ

রোজার নিয়ত এবং সায়িম এর বিধি বিধান সমূহ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩০, সাওম, অধ্যায়ঃ (২১-৪২)=২২টি

৩০/২১. অধ্যায়ঃ কেউ যদি দিনের বেলা সওমের নিয়ত করে ।
৩০/২২. অধ্যায়ঃ নাপাক অবস্থায় সওম পালনকারীর সকাল হওয়া ।
৩০/২৩. অধ্যায়ঃ সায়িম কর্তৃক স্ত্রীকে স্পর্শ করা ।
৩০/২৪. অধ্যায়ঃ সায়িমের চুম্বন দেয়া ।
৩০/২৫. অধ্যায়ঃ সায়িমের গোসল করা ।
৩০/২৬. অধ্যায়ঃ সায়িম ভুলবশতঃ কিছু খেলে বা পান করে ফেললে ।
৩০/২৭. অধ্যায়ঃ সায়িমের জন্য কাঁচা বা শুকনো দাঁতন ব্যবহার করা ।
৩০/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)- এর বাণীঃ যখন উযূ করিবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি টেনে নিবে ।
৩০/২৯. অধ্যায়ঃ রমযানে যৌন মিলন করা
৩০/৩০. অধ্যায়ঃ যদি রমযানে স্ত্রী মিলন করে এবং তার নিকট কিছু না থাকে এবং তাকে সদকাহ দেয়া হয়, তাহলে সে যেন তা কাফফারা স্বরূপ দিয়ে দেয় ।
৩০/৩১. অধ্যায়ঃ রমযানের সায়িম অবস্থায় যে ব্যক্তি স্ত্রী মিলন করেছে সে ব্যক্তি কি কাফ্‌ফারা হইতে তার অভাবগ্রস্থ পরিবারকে খাওয়াতে পারবে?
৩০/৩২. অধ্যায়ঃ সায়িমের শিঙ্গা লাগানো বা বমি করা ।
৩০/৩৩. অধ্যায়ঃ সফরে সওম পালন করা বা না করা ।
৩০/৩৪. অধ্যায়ঃ রমযানের কয়েক দিন সওম করে যদি কেউ সফর শুরু করে ।
৩০/৩৫.অধ্যায়ঃ
৩০/৩৬. অধ্যায়ঃ প্রচণ্ড গরমের জন্য যে ব্যক্তির উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাহাঁর সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)- এর বাণীঃ সফরে সওম পালন করায় সাওয়াব নেই ।
৩০/৩৭. অধ্যায়ঃ সওম করা ও না করার ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করিতেন না ।
৩০/৩৮. অধ্যায়ঃ লোকদেরকে দেখানোর জন্য সফর অবস্থায় সওম ভঙ্গ করা ।
৩০/৩৯. অধ্যায়ঃ “আর (সওম) যাদের জন্য অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের করণীয়, তারা এর বদলে ফিদইয়া হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দেবে ।” (আল-বাকারাহ : ১৮৪)
৩০/৪০. অধ্যায়ঃ রমযানের কাযা কখন আদায় করিতে হইবে?
৩০/৪১. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী সালাত ও সওম উভয়ই ছেড়ে দিবে ।
৩০/৪২. অধ্যায়ঃ সওমের কাযা রেখে যিনি মারা যান ।

৩০/২১. অধ্যায়ঃ কেউ যদি দিনের বেলা সওমের নিয়ত করে ।

উম্মু দারদা (রাদি.) বলেন, আবুদ-দারদা (রাদি.) তাঁকে এসে জিজ্ঞেস করিতেন, তোমাদের কাছে কিছু খাবার আছে? আমরা যদি বলতাম, নেই, তাহলে তিনি বলিতেন, আজ সাওম পালন করব । আবু তালহা, আবু হুরাইরা, ইবনু আব্বাস এবং হুযায়ফা (রাদি.) অনুরূপ করিতেন ।

১৯২৪. সালমা ইবনু আকওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আশূরার দিন নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।

৩০/২২. অধ্যায়ঃ নাপাক অবস্থায় সাওম পালনকারীর সকাল হওয়া ।

১৯২৫. আবু বাকর ইবনু আব্দুর রাহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা আয়িশাহ (রাদি.) এবং উম্মু সালামাহ (রাদি.) এর নিকট গেলাম। (অপর বর্ণনায়) আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, আয়িশাহ (রাদি.) এবং উম্মু সালামাহ (রাদি.) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর ফাজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করিতেন এবং সাওম পালন করিতেন। মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুর রাহমান ইবনু হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবু হুরাইরা (রাদি.)-কে শঙ্কিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাদীনার গভর্নর ছিলেন। আবু বাকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মারওয়ান এর কথা আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) পছন্দ করেননি। রাবী বলেন, এরপর ভাগ্যক্রমে আমরা যুল-হুলাইফাতে একত্রিত হই। সেখানে আবু হুরাইরা (রাদি.) এর একখণ্ড জমি ছিল। আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) কে বলিলেন, আমি আপনার নিকট একটি কথা বলিতে চাই, মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলিতেন, তা হলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। অতঃপর তিনি আয়িশাহ (রাদি.) ও উম্মু সালামাহ (রাদি.) এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করিলেন। ফায্‌ল ইবনু আব্বাস (রাদি.) অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবগত। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার সূত্রে আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাওম পরিত্যাগ করে খাওয়ার হুকুম দিতেন। প্রথমোক্ত হাদীসটি সনদের দিক হইতে বিশুদ্ধ।

১৯২৬. আবু বাকর ইবনু আব্দুর রাহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার পিতা আয়িশাহ (রাদি.) এবং উম্মু সালামাহ (রাদি.) এর নিকট গেলাম। (অপর বর্ণনায়) আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)… মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত যে, আয়িশাহ (রাদি.) এবং উম্মু সালামাহ (রাদি.) তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, নিজ স্ত্রীর সাথে মিলনজনিত জুনূবী অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর ফাজরের সময় হয়ে যেত। তখন তিনি গোসল করিতেন এবং সাওম পালন করিতেন। মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবদুর রাহমান ইবনু হারিস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বলিলেন, আল্লাহর শপথ করে বলছি, এ হাদীস শুনিয়ে তুমি আবু হুরাইরা (রাদি.)-কে শঙ্কিত করে দিবে। এ সময় মারওয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মাদীনার গভর্নর ছিলেন। আবু বাকর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মারওয়ান এর কথা আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) পছন্দ করেননি। রাবী বলেন, এরপর ভাগ্যক্রমে আমরা যুল-হুলাইফাতে একত্রিত হই। সেখানে আবু হুরাইরা (রাদি.) এর একখণ্ড জমি ছিল। আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) কে বলিলেন, আমি আপনার নিকট একটি কথা বলিতে চাই, মারওয়ান যদি এ বিষয়টি আমাকে কসম দিয়ে না বলিতেন, তা হলে আমি তা আপনার সঙ্গে আলোচনা করতাম না। অতঃপর তিনি আয়িশাহ (রাদি.) ও উম্মু সালামাহ (রাদি.) এর বর্ণিত উক্তিটি উল্লেখ করিলেন। ফায্‌ল ইবনু আব্বাস (রাদি.) অনুরূপ একটি হাদীস আমাকে শুনিয়েছেন এবং এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক অবগত। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু উমার সূত্রে আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, এরূপ ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাওম পরিত্যাগ করে খাওয়ার হুকুম দিতেন। প্রথমোক্ত হাদীসটি সনদের দিক হইতে বিশুদ্ধ।

৩০/২৩. অধ্যায়ঃ সায়িম কর্তৃক স্ত্রীকে স্পর্শ করা ।

আয়েশাহ (রাদি.) বলেন, সাওম পালনকারীর জন্য তার স্ত্রীর লজ্জাস্থান হারাম ।

১৯২৭. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সওমের অবস্থায় চুমু খেতেন এবং গায়ে গা লাগাতেন। তবে তিনি তাহাঁর প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে তোমাদের চেয়ে অধিক সক্ষম ছিলেন।

ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেন , اِربٌ মানে হাজত বা চাহিদা। তাউস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, غَيرَ اُولِي الاَربَةِ মানে বোধহীন , যার মেয়েদের প্রতি কোন খাহিশ নেই।

৩০/২৪. অধ্যায়ঃ সায়িমের চুম্বন দেয়া ।

জাবির ইবনু যায়দ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, (নারীদের দিকে) তাকালে যদি বীর্যপাত ঘটে, তাহলেও সাওম পূর্ণ করিবে ।

১৯২৮. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সায়িম অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন কোন স্ত্রীকে চুমু খেতেন। (এ কথা বলে) আয়িশাহ (রাদি.) হেসে দিলেন।

১৯২৯. উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একই চাদরে আমি ছিলাম। এমন সময় আমার ঋতু শুরু হল। তখন আমি আমার হায়যের কাপড় পরিধান করলাম। তিনি বললেনঃ তোমার কী হলো? তোমার কি ঋতু দেখা দিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ; অতঃপর আমি আবার তাহাঁর সঙ্গে চাদরের ভিতর ঢুকে পড়লাম। তিনি এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একই পাত্র হইতে গোসল করিতেন এবং সায়িম অবস্থায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে চুমু দিতেন।

৩০/২৫. অধ্যায়ঃ সায়িমের গোসল করা ।

সাওমরত অবস্থায় ইবনু উমার (রাদি.) একটি কাপড় ভিজালেন এরপর তা গায়ে দেয়া হলো । সাওমরত অবস্থায় শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) গোসলখানায় প্রবেশ করিয়াছেন । ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, হাঁড়ি হইতে কিছু বা অন্য কোন জিনিস চেটে স্বাদ দেখায় দোষ নেই । হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাওম পালনকারীর কুলি করা এবং ঠাণ্ডা লাগান দূষণীয় নয় । ইবনু মাসউদ (রাদি.) বলেন, তোমাদের কেউ সাওম পালন করলে সে যেন সকালে তেল লাগায় এবং চুল আঁচড়িয়ে নেয় । আনাস (রাদি.) বলেন, আমার একটি হাউস আছে, আমি সায়িম অবস্থায় তাতে প্রবেশ করি । নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত যে, তিনি সায়িম অবস্থায় মিস্ওয়াক করিতেন । ইবনু উমার (রাদি.) সায়িম অবস্থায় দিনের প্রথমভাগে এবং শেষভাগে মিস্ওয়াক করিতেন । আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, থুথু গিলে ফেললে সাওম ভঙ্গ হয়েছে বলা যায় না । ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কাঁচা মিস্ওয়াক ব্যবহারে কোন দোষ নেই । প্রশ্ন করা হল, কাঁচা মিস্ওয়াকের তো স্বাদ রয়েছে? তিনি বলেন, পানিরও তো স্বাদ আছে, অথচ এ পানি দিয়েই তুমি কুলি কর । আনাস (রাদি.), হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সায়িমের সুরমা ব্যবহারে কোন দোষ মনে করিতেন না ।

১৯৩০. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রমযান মাসে নাবী (সাঃআঃ)-এর ভোর হয়ে যেত ইহতিলাম (স্বপ্নদোষ) ব্যতিত (জুনুবী অবস্থায়)। তখন তিনি গোসল করিতেন এবং সাওম পালন করিতেন।

১৯৩১. আবু বাকর ইবনু আবদুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে রওয়ানা হয়ে আয়িশাহ (রাদি.)-এর নিকট পৌঁছলাম। তিনি বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি ইহতিলাম ব্যতীত স্ত্রী সহবাসের কারণে জুনুবী অবস্থায় সকাল পর্যন্ত থেকেছেন এবং এরপর সাওম পালন করিয়াছেন।

১৯৩২. আবু বাকর ইবনু আবদুর রহমান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

অতঃপর আমরা উম্মু সালামাহ (রাদি.)-এর নিকট গেলাম। তিনিও অনুরূপ কথাই বলিলেন।

৩০/২৬. অধ্যায়ঃ সায়িম ভুলবশতঃ কিছু খেলে বা পান করে ফেললে ।

আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, নাকে পানি দিতে গিয়ে যদি তা কণ্ঠনালীতে ঢুকে যায়, আর সে ফিরাতে সক্ষম না হয় তা হলে দোষ নেই । হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সায়িম ব্যক্তির কণ্ঠনালীতে মাছি ঢুকে পড়লে তার কিছু করিতে হইবে না । হাসান এবং মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, সায়িম ব্যক্তি যদি ভুলবশতঃ স্ত্রী সহবাস করে ফেলে, তবে তার কিছু করিতে হইবে না ।

১৯৩৩. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সাওম পালনকারী ভুলক্রমে যদি আহার করে বা পান করে ফেলে, তাহলে সে যেন তার সাওম পুরা করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন।

৩০/২৭. অধ্যায়ঃ সায়িমের জন্য কাঁচা বা শুকনো দাঁতন ব্যবহার করা ।

আমির ইবনু রাবীআহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ-কে সায়িম অবস্থায় অসংখ্য বার মিসওয়াক করিতে দেখেছি । আবু হুরাইরাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমার উম্মাতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তাহলে প্রতিবার উযুর সময়ই আমি তাদের মিসওয়াকের নির্দেশ দিতাম । জাবির (রাদি.) এবং যায়েদ ইবনু খালিদ (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি সায়িম এবং যে সায়িম নয়, তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি । আয়েশাহ (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, মিসওয়াক করায় রয়েছে মুখের পবিত্রতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি । আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং কাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, সায়িম তার মুখের থুথু গিলে ফেলতে পারে ।

১৯৩৪. হুমরান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উসমান (রাদি.)-কে উযূ করিতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতের উপর পানি ঢাললেন। এরপর কুলি করিলেন, নাকে পানি দিলেন। অতঃপর তিনবার চেহারা (মুখমণ্ডল) ধুলেন। এরপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন এবং বামহাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। এরপর তিনি মাথা মাসাহ করিলেন। অতঃপর ডান পা তিনবার ধুলেন অতঃপর বাম পা তিনবার ধুলেন। এরপর বলিলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে উযূ করিতে দেখেছি আমার এ উযূর মতই। এরপর তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এ উযূর মত উযূ করে দুরাকআত সালাত আদায় করিবে এবং এতে মনে মনে কোন কিছুর চিন্তা-ভাবনায় লিপ্ত হইবে না, তার অতীতের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।

৩০/২৮. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)- এর বাণীঃ যখন উযূ করিবে তখন নাকের ছিদ্র দিয়ে পানি টেনে নিবে ।

নাবী (সাঃআঃ) সায়িম এবং সায়িম নয়, তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি । হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সায়িমের জন্য নাকে ঔষধ ব্যবহার করায় দোষ নেই যদি তা কণ্ঠনালীতে না পৌঁছে এবং সে সুরমা ব্যবহার করিতে পারবে । আত্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কুলি করে মুখের পানি ফেলে দেয়ার পর থুথু এবং মুখের অবশিষ্ট পানি গিলে ফেলায় কোন ক্ষতি নেই এবং সায়িম গোন্দ (আঠা) চিবাবে না । গোন্দ চিবিয়ে যদি কেউ থুথু গিলে ফেলে, তা হলে তার সাওম নষ্ট হয়ে যাবে, আমি এ কথা বলছি না, তবে এরূপ করা হইতে নিষেধ করা উচিত ।

৩০/২৯. অধ্যায়ঃ রমযানে যৌন মিলন করা

আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে একটি মারফূ হাদীসে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ওযর এবং রোগ ব্যতীত রমযানের একটি সাওম ভেঙ্গে ফেলল, তার সারা জীবনের সওমের দ্বারাও এ কাযা আদায় হইবে না, যদিও সে সারা জীবন সাওম পালন করে । ইবনু মাসউদ (রাদি.)-ও অনুরূপ কথাই বলেছেন । সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব, শাবী, ইবনু যুবায়র, ইব্রাহীম, কাতাদাহ এবং হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, তার স্থলে একদিন কাযা করিবে ।

১৯৩৫. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল যে, সে তো জ্বলে গেছে। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? লোকটি বলিল, রমযানে আমি স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। এ সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে (খেজুর ভর্তি) ঝুড়ি এল, যাকে আরাক (১৫ সা পরিমাণ) বলা হয়। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ অগ্নিদগ্ধ লোকটি কোথায়? লোকটি বলিল, আমি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এ গুলো সদাকাহ করে দাও।

৩০/৩০. অধ্যায়ঃ যদি রমযানে স্ত্রী মিলন করে এবং তার নিকট কিছু না থাকে এবং তাকে সদকাহ দেয়া হয়, তাহলে সে যেন তা কাফফারা স্বরূপ দিয়ে দেয় ।

১৯৩৬. আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বলিল, আমি সায়িম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আযাদ করার মত কোন ক্রীতদাস তুমি মুক্ত করিতে পারবে কি? সে বলিল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি একাধারে দুমাস সাওম পালন করিতে পারবে? সে বলিল, না। এরপর তিনি বললেনঃ ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে কি? সে বলিল, না। রাবী বলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) থেমে গেলেন, আমরাও এ অবস্থায় ছিলাম। এ সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এক আরাক পেশ করা হল যাতে খেজুর ছিল। আরাক হল ঝুড়ি। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলিল, আমি। তিনি বললেনঃ এগুলো নিয়ে সদাকাহ করে দাও। তখন লোকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার চাইতেও বেশি অভাবগ্রস্থকে সদাকাহ করব? আল্লাহর শপথ, মাদীনার উভয় লাবা অর্থাৎ উভয় প্রান্তের মধ্যে আমার পরিবারের চেয়ে অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হেসে উঠলেন এবং তাহাঁর দাঁত (আইনয়াব) দেখা গেল। অতঃপর তিনি বললেনঃ এগুলো তোমার পরিবারকে খাওয়াও।

৩০/৩১. অধ্যায়ঃ রমযানের সায়িম অবস্থায় যে ব্যক্তি স্ত্রী মিলন করেছে সে ব্যক্তি কি কাফ্‌ফারা হইতে তার অভাবগ্রস্থ পরিবারকে খাওয়াতে পারবে?

১৯৩৭. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে এসে বলিল, এই হতভাগা স্ত্রী সহবাস করেছে রমযানে। তিনি বললেনঃ তুমি কি একটি গোলাম আযাদ করিতে পারবে? লোকটি বলিল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ক্রমাগত দুমাস সিয়াম পালন করিতে পারবে? লোকটি বলিল, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারবে? সে বলিল, না। এমতাবস্থায় নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এক আরাক অর্থাৎ এক ঝুড়ি খেজুর এল। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এগুলো তোমার তরফ হইতে লোকদেরকে আহার করাও। লোকটি বলিল, আমার চাইতেও অধিক অভাবগ্রস্থ কে? অথচ মাদীনার উভয় লাবার অর্থাৎ হাররার মধ্যবর্তী স্থলে আমার পরিবারের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্থ কেউ নেই। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তা হলে তুমি স্বীয় পরিবারকেই খাওয়াও।

৩০/৩২. অধ্যায়ঃ সায়িমের শিঙ্গা লাগানো বা বমি করা ।

ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাকে বলেছেন… আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, বমি করলে সাওম ভঙ্গ হয় না । কেননা এতে কিছু বের হয়, ভিতরে প্রবেশ করে না । আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে এও বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, সাওম ভঙ্গ হয়ে যাবে । প্রথম উক্তিটি বেশি সহীহ । ইবনু আব্বাস (রাদি.) এবং ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কোন কিছু ভিতরে প্রবেশ করলে সাওম নষ্ট হয়; কিন্তু বের হওয়ার কারণে নয় । ইবনু উমার (রাদি.) সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন । অবশ্য পরবর্তী সময় তিনি দিনে শিঙ্গা লাগানো ছেড়ে দিয়ে রাতে শিঙ্গা লাগাতেন । আবু মূসা (রাদি.) রাতে শিঙ্গা লাগিয়েছেন । সাঈদ, যায়দ ইবনু আরকাম এবং উম্মু সালামাহ (রাদি.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তাঁরা সকলেই সাওম পালনকারী অবস্থায় শিঙ্গা লাগাতেন । বুকায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) উম্মু আলকামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, আমরা আয়েশাহ (রাদি.)-এর সামনে শিঙ্গা লাগাতাম, তিনি আমাদের নিষেধ করিতেন না । হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে একাধিক রাবী সূত্রে মরফূ হাদীসে আছে যে, শিঙ্গা প্রয়োগকারী এবং গ্রহণকারী উভয়ের সাওমই নষ্ট হয়ে যাবে । ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আইয়াশ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে আমার নিকট অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন । তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ কি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত? তিনি বলিলেন, হাঁ । অতঃপর তিনি বলিলেন, আল্লাহই সবচেয়ে অধিক জানেন ।

১৯৩৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং সায়িম অবস্থায়ও শিঙ্গা লাগিয়েছেন।

১৯৩৯. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সায়িম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন।

১৯৪০. সাবিত আল-বুনানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনারা কি সায়িমের শিঙ্গা লাগানো (রক্তমোক্ষম) অপছন্দ করিতেন? তিনি বলিলেন, না। তবে দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে অপছন্দ করতাম। শাবাবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে —— নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন।

৩০/৩৩. অধ্যায়ঃ সফরে সাওম পালন করা বা না করা ।

১৯৪১. ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ সওয়ারী হইতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য এখনো অস্ত যায়নি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী হইতে নেমে আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! সূর্য এখনো ডুবেনি। তিনি বললেনঃ সওয়ারী হইতে নামো এবং আমার জন্য ছাতু গুলিয়ে আন। অতঃপর সে সাওয়ারী হইতে নেমে ছাতু গুলিয়ে আনলে তিনি তা পান করিলেন এবং হাতের ইঙ্গিতে বললেনঃ যখন দেখবে রাত এদিক হইতে ঘনিয়ে আসছে তখন বুঝবে, সাওম পালনকারী ব্যক্তির ইফতারের সময় হয়েছে। জারীর (রাদি.) এবং আবু বাকর ইবনু আইয়াশ…ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম।

১৯৪২. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হামযাহ ইবনু আমর আসলামী (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি একাধারে সিয়ামব্রত পালন করছি।

১৯৪৩. নাবী (সাঃআঃ)- এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

হামযাহ ইবনু আমর আসলামী (রাদি.) অধিক সাওম পালনে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিলেন, আমি সফরেও কি সাওম পালন করিতে পারি? তিনি বললেনঃ ইচ্ছা করলে তুমি সাওম পালন করিতে পার, আবার ইচ্ছা করলে নাও করিতে পার।

৩০/৩৪. অধ্যায়ঃ রমযানের কয়েক দিন সাওম করে যদি কেউ সফর শুরু করে ।

১৯৪৪. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সওমের অবস্থায় কোন এক রমযানে মক্কার পথে যাত্রা করিলেন। কাদীদ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি সাওম ভঙ্গ করে ফেললে লোকেরা সকলেই সাওম ভঙ্গ করিলেন। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উসফান ও কুদায়দ নামক দুই স্থানের মধ্যে কাদীদ একটি ঝর্ণা।

৩০/৩৫.অধ্যায়ঃ

১৯৪৫. আবুদ দারদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন এক সফরে প্রচণ্ড গরমের দিনে আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যাত্রা করলাম। গরম এত প্রচণ্ড ছিল যে, প্রত্যেকেই আপন আপন হাত মাথার উপর তুলে ধরেছিলেন। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এবং ইবনে রাওয়াহা (রাদি.) ব্যতীত আমাদের কেউই সিয়ামরত ছিলেন না।

৩০/৩৬. অধ্যায়ঃ প্রচণ্ড গরমের জন্য যে ব্যক্তির উপর ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে তাহাঁর সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)- এর বাণীঃ সফরে সাওম পালন করায় সাওয়াব নেই ।

১৯৪৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক সফরে ছিলেন, হঠাৎ তিনি লোকের জটলা এবং ছায়ার নিচে এক ব্যক্তিকে দেখে জিজ্ঞেস করলেনঃ এর কি হয়েছে? লোকেরা বলিল, সে সায়িম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সফরে সাওম পালনে কোন সওয়াব নেই।

৩০/৩৭. অধ্যায়ঃ সাওম করা ও না করার ব্যাপারে নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ পরস্পরের প্রতি দোষারোপ করিতেন না ।

১৯৪৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সফরে যেতাম। সায়িম ব্যক্তি গায়ের সায়িমকে (যে সাওম পালন করছে না) এবং গায়ের সায়িম ব্যক্তি সায়িমকে দোষারোপ করত না।

৩০/৩৮. অধ্যায়ঃ লোকদেরকে দেখানোর জন্য সফর অবস্থায় সাওম ভঙ্গ করা ।

১৯৪৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মাদীনাহ হইতে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম পালন করছিলেন। উসফানে পৌঁছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উঁচু করে ধরে সাওম ভঙ্গ করিলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাওম পালন করিয়াছেন এবং সাওম ভঙ্গ করিয়াছেন। যার ইচ্ছা সাওম পালন করিতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ করিতে পারে।

৩০/৩৯. অধ্যায়ঃ “আর (সাওম) যাদের জন্য অতিশয় কষ্ট দেয়, তাদের করণীয়, তারা এর বদলে ফিদইয়া হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দেবে ।” (আল-বাকারাহ : ১৮৪)

ইবনু উমার (রাদি.) এবং সালামাহ ইবনু আকওয়া (রাদি.) বলেন যে, উক্ত আয়াতকে রহিত করেছে এ আয়াত : “ রমযান মাস, এ মাসেই কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী । সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে । তবে কেউ অসুস্থ হলে কিংবা সফরে থাকলে সে অন্য সময়ে সাওম এর সংখ্যা পূরণ করে দিবে । আল্লাহ চান তোমাদের জন্য সহজ করিতে, তিনি এমন কিছু চান না যা তোমাদের জন্য কষ্টকর । যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ কর এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার দরুন আল্লাহর মহিমা বর্ণনা কর এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পার ।

” (আল-বাকারাহ : ১৮৫)

ইবনু নুমাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু আবু লায়লা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, মুহাম্মদ (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণ আমাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন, রমযানের হুকুম নাযিল হলে তা পালন করা তাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায় । তাই তাঁদের মধ্যে কেউ সাওম পালনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সাওম ত্যাগ করে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাওয়াতো। এ ব্যাপারে তাদের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল । (আরবী) আর সাওম পালন করাই তোমাদের জন্য উত্তম, এ আয়াতটি পূর্বের হুকুমকে রহিত করে দেয় এবং সবাইকে সাওম পালনের নির্দেশ দেয়া হয়।

১৯৪৯. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি فِدْيَةٌ طَعَامُ مَسَاكِينَ আয়াতটি পড়ে বলেছেন যে, ইহা মানসূখ (রহিত)।

৩০/৪০. অধ্যায়ঃ রমযানের কাযা কখন আদায় করিতে হইবে?

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, পৃথক পৃথক রাখলে কোন ক্ষতি নেই । কেননা আল্লাহ বলেছেন, অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করিবে (আল-বাকারাহ (২) : ১৮৪) । সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, রমযানের কাযা আদায় না করে যুলহাজ্জ মাসের প্রথম দশকে সাওম পালন করা উচিত নয় । ইবরাহীম নাখঈ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, অবহেলার কারণে যদি পরবর্তী রমযান এসে যায় তাহলে উভয় রমযানের সাওম এক সাথে আদায় করিবে । মিসকীন খাওয়াতে হইবে বলে তিনি মনে করেন না । আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিত । একটি মুরসাল হাদীসে এবং ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে যে, সে খাওয়াবে; অথচ আল্লাহ তাআলা খাওয়ানোর কথাটি উল্লেখ করেননি । বরং তিনি বলেছেন, অন্যদিনে এর সংখ্যা পূর্ণ করিবে- (আল-বাকারাহ : ১৮৪) ।

১৯৫০. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার উপর রমযানের যে কাযা হয়েছে তা পরবর্তী শাবান ব্যতীত আমি আদায় করিতে পারতাম না। ইয়াহইয়া (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর ব্যস্ততার কারণে কিংবা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ব্যস্ততার কারণে।

৩০/৪১. অধ্যায়ঃ ঋতুবতী সালাত ও সাওম উভয়ই ছেড়ে দিবে ।

আবুয-যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শরীআতের হুকুম-আহকাম অনেক সময় কিয়াসের বিপরীতও হয়ে থাকে । মুসলমানের জন্য এর অনুসরণ ব্যতীত কোন উপায় নেই । এর একটি উদাহরণ হল যে, ঋতুবতী মহিলা সওমের কাযা করিবে কিন্তু সলাতের কাযা করিবে না।

১৯৫১. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ এ কথা কি ঠিক নয় যে, ঋতু শুরু হলে মেয়েরা সালাত আদায় করে না এবং সাওমও পালন করে না। এ হল তাদের দ্বীনেরই ত্রুটি।

৩০/৪২. অধ্যায়ঃ সওমের কাযা রেখে যিনি মারা যান ।

হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তার পক্ষ হইতে ত্রিশজন লোক একদিন সাওম পালন করিতে হইবে ।

১৯৫২. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হইতে সাওম আদায় করিবে।

ইবনু ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে উক্ত হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াহইয়া ইবনু আইয়ুব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…ইবনু আবু জাফর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতেও এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

১৯৫৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মা এক মাসের সাওম যিম্মায় রেখে মারা গেছেন, আমি কি তাহাঁর পক্ষ হইতে এ সাওম কাযা করিতে পারি? তিনি বলেন: হাঁ, আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করাই হল অধিক যোগ্য। সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং সালামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীস বর্ণনা করার সময় আমরা সকলেই একসাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁরা উভয়ই বলেছেন যে, ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে এ হাদীস বর্ণনা করিতে আমরা শুনিয়াছি। আবু খালিদ আহমার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আমার বোন মারা গেছে। ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও আবু মুআবিয়া….ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত, জনৈকা মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আমার মা মারা গেছেন। উবায়দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত, এক মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় মানতের সাওম রহিয়াছে। আবু হারীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….ইবনু আব্বাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত, এক মহিলা নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিল, আমার মা মারা গেছে, অথচ তার যিম্মায় পনের দিনের সাওম রয়ে গেছে।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply