রোগ ও রোগীদের বর্ণনা, সেবা করা, হাত রাখা ও দুআ করা

রোগ ও রোগীদের বর্ণনা, সেবা করা, হাত রাখা ও দুআ করা

রোগ ও রোগীদের বর্ণনা, সেবা করা, হাত রাখা ও দুআ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৭৫, রোগীদের বর্ণনা, অধ্যায়ঃ (১-২২)=২২টি

৭৫/১. অধ্যায়ঃ রোগের কাফ্‌ফারা ও ক্ষতিপূরণ।
৭৫/২. অধ্যায়ঃ রোগের তীব্রতা
৭৫/৩. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন নাবীগণ। এরপরে ক্রমশ প্রথম ব্যক্তি এবং পরবর্তী প্রথম ব্যক্তি।
৭৫/৪. অধ্যায়ঃ রোগীর সেবা করা ওয়াজিব।
৭৫/৫. অধ্যায়ঃ সংজ্ঞাহীন ব্যক্তির সেবা করা।
৭৫/৬. অধ্যায়ঃ মৃগী রোগে আক্রান্ত রোগীর ফাযীলাত ।
৭৫/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছে তার ফাযীলাত।
৭৫/৮. অধ্যায়ঃ মহিলাদের পুরুষ রোগীর সেবা করা।
৭৫/৯. অধ্যায়ঃ অসুস্থ শিশুদের সেবা করা।
৭৫/১০. অধ্যায়ঃ অসুস্থ বেদুঈনদের সেবা করা।
৭৫/১১. অধ্যায়ঃ মুশরিক রোগীর দেখাশুনা করা।
৭৫/১২. অধ্যায়ঃ কোন রোগীকে দেখিতে গিয়ে সলাতের সময় হলে সেখানেই উপস্থিত লোকদের নিয়ে জামাআতবদ্ধ সলাত আদায় করা।
৭৫/১৩. অধ্যায়ঃ রোগীর দেহে হাত রাখা।
৭৫/১৪. অধ্যায় :রোগীর সামনে কী বলিতে হইবে এবং তাকে কী জবাব দিতে হইবে।
৭৫/১৫. অধ্যায়ঃ রোগীর দেখাশুনা করা, আরোহী অবস্থায়, পায়ে চলা অবস্থায় এবং গাধার পিঠে সাওয়ারীর পিছনে বসে।
৭৫/১৬. অধ্যায়ঃ রোগীর উক্তি “আমি যাতনাগ্রস্থ” কিংবা আমার মাথা গেল, কিংবা আমার যন্ত্রণা প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে এর বর্ণনা।
৭৫/১৭. অধ্যায়ঃ তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, রোগীর এ কথা বলা।
৭৫/১৮. অধ্যায়ঃ দুআ নেয়ার উদ্দেশে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাওয়া।
৭৫/১৯. অধ্যায়ঃ রোগী কর্তৃক মৃত্যু কামনা করা।
৭৫/২০. অধ্যায়ঃ রোগীর জন্য শুশ্রুষাকারীর দুআ করা।
৭৫/২১. অধ্যায়ঃ রোগীর শুশ্রুষাকারীর অযূ করা।
৭৫/২২. অধ্যায়ঃ জ্বর, প্লেগ ও মহামারী দূর হবার জন্য কোন ব্যক্তির দুআ করা ।

৭৫       রোগীদের বর্ণনা

৫৬৪০ – ৫৬৭৭

৭৫/১. অধ্যায়ঃ রোগের কাফ্‌ফারা ও ক্ষতিপূরণ।

এবং মহান আল্লাহর বাণীঃ “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করিবে তাকে সেই কাজের প্রতিফল দেয়া হইবে।” (সুরা আন-নিসা ৪/১২৩)

৫৬৪০

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) -এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭২, আহমাদ ২৪৮৮২] আঃপ্রঃ- ৫২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৫)

৫৬৪১

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭৩]আঃপ্রঃ- ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৬)

৫৬৪২

আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) ও আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭৩]আঃপ্রঃ- ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৬)

৫৬৪৩

কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির উদাহরণ হল শস্যক্ষেতের নরম চারা গাছের মত, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেকবার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত, ভূমির উপর শক্তভাবে স্থাপিত বৃক্ষ, যাকে কিছুতেই নোয়ানো যায় না। শেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উপড়ে যায়। যাকারিয়্যা…… কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি নাবী (সাঃআঃ) থেকে আমাদের কাছে এরকম বর্ণনা করিয়াছেন। [মুসলিম ৫০/১৪, হাদীস ২৮১০]আঃপ্রঃ- ৫২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৭)

৫৬৪৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হল, শস্যক্ষেতের নরম চারাগাছের মত। যে কোন দিক থেকেই তার দিকে বাতাস আসলে বাতাস তাকে নুইয়ে দেয়। আবার যখন বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হয় তখন তা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। বালা মুসিবত মুমিনকে নোয়াতে থাকে। আর ফাসিক হল শক্ত ভূমির উপর শক্তভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো গাছের মত, যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছে করেন ভেঙ্গে দেন। [৭৪৬৬; মুসলিম ৫০/১৪, হাদীস ২৮০৯] আঃপ্রঃ- ৫২৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৮)

৫৬৪৫

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।(আঃপ্রঃ- ৫২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৯)

৭৫/২. অধ্যায়ঃ রোগের তীব্রতা

৫৬৪৬

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চেয়ে বেশী রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাকেও দেখিনি। [১][মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭০, আহমাদ ২৫৪৫৩]আঃপ্রঃ- ৫২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩০)

[১] আলোচ্য হাদীসে দেখা যায় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাঝে মধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়তেন। কুরআন মাজীদে সুরায়ে আম্বিয়ায় দেখা যায় আইয়ূব (আঃ) কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে উক্ত রোগ যন্ত্রণা হইতে নিস্কৃতি চেয়ে আল্লাহ তাআলার সমীপে দুআ করিয়াছেন। অতীব দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, অজ্ঞ লোকেরা কোন আলিম, পরহেজগার লোকগণকে কোন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হইতে দেখলে গভীর উৎসাহের সাথে বলিতে থাকে যে, অমুক আলিম সাহেব বা মুহাদ্দিস সাহেবের বর্তমানে ভীষণ রোগে ভুগতে দেখা যায়। সুতরাং তাহাঁর আমল ভাল নয়। তাহাঁর প্রতি আল্লাহর কোন রহমত নেই। তিনি যদি রহমতপ্রাপ্ত লোকই হয়ে থাকেন, তবে তাহাঁর এই অবস্থা কেন হইবে? ইত্যাদি ইত্যাদি বদনাম ছড়িয়ে পরহেজগার আলিম ওলামা শ্রেণীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষদেরকে বীতশ্রদ্ধ করে তুলতে চায়। এখানে লক্ষ্য করলে পরিষ্কার দেখা যায় যে, রহমতের অসীম ভাণ্ডার যে নাবীর প্রতি বর্ষিত হয়েছে, যাঁকে নিঃসীম রহমতের প্রতীক রহমাতুল্লিল আলামীন উপাধিতে আল্লাহ তাআলা নিজেই ভূষিত করিলেন, তাঁকেই রোগ ব্যাধি দিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত করে দেন, সেখানে তাহাঁর কোন অনুসারীকে উক্ত পরীক্ষায় নিক্ষেপ করা তো স্বাভাবিক ব্যাপার।

অতএব কোন খাঁটি ও নেক বান্দাদের প্রতি আলিম বিদ্বেষী অযথা কটাক্ষকারীদের কথায় সাধারণ মুমিনদের বিভ্রাস্ত হওয়া ঠিক নয়। বরং কোন আলিম উলামা, পরহেজগার শ্রেণীকে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখা গেলে তাঁদের প্রতি গভীর ভক্তি শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা নিয়ে তাঁদের সেবা যত্নে আত্মনিয়োগ করা সৌভাগ্যের প্রতীক বলে মনে করিতে হইবে। পূর্ববর্তী নেককার লোকদের এবং সাহাবায়ে কিরামদের আমাল ও অভ্যাস এমনটাই ছিল নিঃসন্দেহে।

৫৬৪৭

আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর অসুস্থ অবস্থায় তাহাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললামঃ নিশ্চয়ই আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে, এটা এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যে কেউ রোগাক্রান্ত হয়, তাথেকে গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হইতে তার পাতাগুলো ঝরে যায়। [৫৬৪৮, ৫৬৬০, ৫৬৬১, ৫৬৬৭; মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭১] আঃপ্রঃ- ৫২৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩১)

৭৫/৩. অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন নাবীগণ। এরপরে ক্রমশ প্রথম ব্যক্তি এবং পরবর্তী প্রথম ব্যক্তি।

৫৬৪৮

আবদুল্লাহ (রাঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমাদের দুব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললামঃ এটি এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তাই। কেননা যেকোন মুসলিম দুঃখ কষ্টে পতিত হয়, তা একটা কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে তার পাতাগুলো ঝরে পড়ে।(আঃপ্রঃ- ৫২৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩২)

৭৫/৪. অধ্যায়ঃ রোগীর সেবা করা ওয়াজিব।

৫৬৪৯

আবু মূসা আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর। [৫৫](আঃপ্রঃ- ৫২৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৩)

[৫৫] উপরোক্ত হাদীসে নাবী (সাঃআঃ) ক্ষুধার্তকে অন্নদান, রোগীকে সেবা করা, নিপীড়িত ব্যক্তির মুক্তি দানের জন্য মানবগোষ্ঠিকে তাকীদ দিয়েছেন। বস্তুতপক্ষে রাসুল (সাঃআঃ) -এর সারা জীবনে উক্ত কালজয়ী বাণীর বাস্তবতা অসংখ্যবার নিজেই প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। নবুয়্যাতের কষ্টি পাথরের পরশে যারা সোনার মানুষে পরিণত হয়েছিলেন তাদের কাজে-কর্মে, চলনে-বলনে মানব সেবা, আর্তের সেবাই ছিল রাসুল (সাঃআঃ) -এর উক্ত মহান বাণীর বাস্তব প্রতিফলন। অনাহারী, অর্ধাহারী, বুভুক্ষু নর-নারী, অসহায় নিরাশ্রয় মানুষের পরম বন্ধু ছিলেন আমাদের মহানাবী (সাঃআঃ)। অতঃপর সাহাবা (রাদি.) হইতে শুরু করে খলীফা চতুষ্টয়ের শেষ আমলসহ তাবে-তাবেয়ীনদের শেষ আমল পর্যন্ত মানব সেবায় রাসুল (সাঃআঃ) -এর উক্ত অমিয় বাণীকে মুসলিমগণ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যারা পৃথিবীতে এক সোনালী ইতিহাস রচনা করিতে সক্ষম হয়েছিলেন। যার ফলে মাত্র ২৫ বছরের মুসলিম শাসনের পর অর্ধ-পৃথিবী মুসলিম শাসনাধীন হয়েছিল। আজকের বিশ্বেও পুনর্বার সেই উদ্দীপনা নিয়ে যদি মুসলিম জাতি সমাজে, রাষ্ট্রে আবির্ভূত হইতে পারে তাহলে সমগ্র পৃথিবী মুসলিমদের বিজয় দুন্দুভি বেজে উঠবে। মুসলিম জাতির শাসন প্রতিবন্ধকহীনভাবে ততদিন চলমান ছিল যতদিন পর্যন্ত তাদের ত্যাগ তিতিক্ষা, কুরবানী, মানব-সেবা, সততা, ন্যায়নীতি ক্রম ধাবমান গতিতে এগিয়ে চলেছিল। মুসলিম জাতি যখন সেবা, সততা, ন্যায়নীতিকে ইস্তফা দিয়ে ও নাকে তেল দিয়ে ভোগ বিলাসের নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো তখন হইতেই তাদের বিশ্বময় কর্তৃত্বের দিন শেষ হয়ে যায়। নাবী (সাঃআঃ) আলোচ্য হাদীসকে স্বীয় উম্মাতের নৈতিক দায়িত্ব বলে ঘোষণা করার মূলে ও উম্মাতের শ্রেষ্ঠত্বের গৌরব অক্ষুন্ন রাখার অভিপ্রায় নিহিত আছে।

৫৬৫০

বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের সাতটি জিনিসের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করিয়াছেন। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, মোটা ও পাতলা এবং কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় ব্যবহার করিতে এবং কাস্‌সী ও মীসারাহ [৫৬] কাপড় ব্যবহার করিতে। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ আমরা যেন জানাযার পশ্চাতে যাই, পীড়িতের সেবা করি এবং সালামের প্রসার ঘটাই।(আঃপ্রঃ- ৫২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৪)

[৫৬] বিশেষ এক ধরনের রেশমী পোষাক।

৭৫/৫. অধ্যায়ঃ সংজ্ঞাহীন ব্যক্তির সেবা করা।

৫৬৫১

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একবার আমি ভীষণভাবে পীড়িত হয়ে গেলাম। তখন নাবী (সাঃআঃ) ও আবু বাক্‌র (রাদি.) পায়ে হেঁটে আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আমার নিকট আসলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আমাকে পেলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) অযূ করিলেন। তারপর তিনি তাহাঁর অবশিষ্ট পানি আমার গায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি জ্ঞান ফিরার পর দেখলাম, নাবী (সাঃআঃ) উপস্থিত। আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমি কী করব? আমার সম্পদ সম্পর্কে কীভাবে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহন করব? তিনি তখন আমাকে কোন জবাব দিলেন না। শেষে মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হল। [১৯৪; মুসলিম ২৩/২, হাদীস ১৬১৬, আহমাদ ১৪৩০২] আঃপ্রঃ- ৫২৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৫)

৭৫/৬. অধ্যায়ঃ মৃগী রোগে আক্রান্ত রোগীর ফাযীলাত ।

৫৬৫২

আত্বা ইবনু আবু রাবাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কালো রঙের মহিলাটি, সে নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বললঃ আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করুন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করিতে পার। তোমার জন্য আছে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি, যেন তোমাকে আরোগ্য করেন। স্ত্রীলোকটি বললঃ আমি ধৈর্যধারণ করব। সে বললঃ ঐ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়, কাজেই আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর জন্য দুআ করিলেন।

আত্বা (রহ:) হইতে বর্ণিত যে, তিনি সেই উম্মু যুফার (রাদি.) -কে দেখেছেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়। সে ছিল দীর্ঘ দেহী কৃষ্ণ বর্ণের এক মহিলা।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাদীস ২৫৭৬, আহমাদ ৩২৪০]আঃপ্রঃ- ৫২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৭)

৭৫/৭. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছে তার ফাযীলাত।

৫৬৫৩

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি যে, আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দুটি বস্তু সম্পর্কে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তাতে ধৈর্য ধরে, তাহলে আমি তাকে সে দুটির বিনিময়ে জান্নাত দান করব। আনাস (রাদি.) বলেন, দুটি প্রিয় বস্তু হল সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। এরকম বর্ণনা করিয়াছেন আশ্‌আস ইবনু জাবির ও আবু যিলাল (রহ:) আনাস (রাদি.) -এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে। [৫৭](আঃপ্রঃ- ৫২৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৮)

[৫৭] উপরিউক্ত হাদীসে রাসুল (সাঃআঃ) দুচোখ হারানো ব্যক্তির ফাযীলাত বর্ণনা করে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। যদি উক্ত অন্ধ লোকটি আন্তরিকতার সাথে সবর করিতে পারে। আফসোসের ব্যাপার এই যে, আমাদের সমাজে জাহিলী চরিত্রের লোকেরা চোখ হারানো ব্যক্তিটি যত বড় আলিম, বুযুর্গ, পরহেজগার হোন না কেন, তাকে নিয়ে উপহাস তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে আর বলে, ঐ লোকের পাপ আল্লাহ তাআলা সহ্য করিতে না পেরে ওর দুটি চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন। ঐ লোক যদি ভালই হইবে, তবে তার এক চোখ বা দুই চোখ কানা হইবে কেন? পবিত্র কুরআন সাক্ষ্য দেয়ঃ ইয়াকূব (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দুই চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হারানো ছেলের চিন্তায় তাহাঁর উভয় চোখ সাদা (অন্ধ) হয়ে গিয়েছিল। এখন বুঝতে হইবে আল্লাহর নাবী ইয়াকূব (আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যদি অন্ধ হইতে পারেন তাহলে সাধারণ পরহেজগার লোকের অন্ধ হওয়াটা তো কোন বিষয়ই হইতে পারে না। আল্লাহর নাবীর (সাঃআঃ) এ হাদীস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অন্ধ লোকের প্রতি আমরা যেন যথাযথ আচরণ করিতে সচেষ্ট হই।

৭৫/৮. অধ্যায়ঃ মহিলাদের পুরুষ রোগীর সেবা করা।

উম্মু দারদা (রাদি.) মাসজিদে অবস্থানকারী এক আনসারের সেবা করেছিলেন।

৫৬৫৪

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মদিনায় আসলেন, তখন আবু বকর (রাদি.) ও বিলাল (রাদি.) জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের কাছে গেলাম এবং বললামঃ হে আব্বাজান! আপনাকে কেমন লাগছে? হে বিলাল! আপনাকে কেমন লাগছে? আবু বকর (রাদি.) -এর অবস্থা ছিল, তিনি যখন জ্বরে আক্রান্ত হইতেন তখন তিনি আওড়াতেনঃ

“সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজনের মধ্যে,

আর মৃত্যু অপেক্ষা করে তার জুতার ফিতার চেয়ে নিকটে।”

বিলাল (রাদি.) -এর জ্বর যখন থামত তখন তিনি বলিতেনঃ

“হায়! আমি যদি লাভ করতাম একটি রাত কাটানোর সুযোগ

এমন উপত্যকায় যে আমার পাশে আছে ইয্‌খির ও জালীল ঘাস।

যদি আমার অবতরণ হতো কোন দিন মাজিন্নার কূপের কাছে।

হায়! আমি কি কখনো দেখা পাব শামাহ ও ত্বফীলের[১]।”

আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে এসে তাঁকে এদের অবস্থা অবগত করলাম। তখন তিনি দুআ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! মাদীনাহকে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমন তুমি আমাদের কাছে মাক্কাহ প্রিয় করে দিয়েছিলে কিংবা সে অপেক্ষা আরো অধিক প্রিয় করে দাও। হে আল্লাহ! আর মাদীনাহকে উপযোগী করে দাও এবং মাদীনাহর মুদ্দ ও সা এর ওযনে বারাকাত দান কর। আর এখানকার জ্বরকে সরিয়ে দাও জুহফা এলাকায়।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৯)

[১] শামা ও তাফীল মক্কা শরীফের দুটি পর্বতের নাম। কারো কারো মতে দুটি কূপের নাম।

৭৫/৯. অধ্যায়ঃ অসুস্থ শিশুদের সেবা করা।

৫৬৫৫

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) -এর এক কন্যা (যাইনাব) তাহাঁর কাছে খবর দিয়েছেন, এ সময় উসামাহ, সাদ ও সম্ভবতঃ উবাই (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -এর সঙ্গে ছিলেন। খবর এই ছিল যে, (যায়নাব বলেছেন) আমার এক শিশুকন্যা মৃত্যুর দুয়ারে উপনীত। কাজেই আপনি আমাদের এখানে আসুন। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর কাছে সালাম পাঠিয়ে বলে দিলেনঃ আল্লাহ যা চান নিয়ে নেন, যা চান দিয়ে যান। তাহাঁর কাছে সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই তুমি ধৈর্য ধর এবং উত্তম বিনিময়ের আশা পোষণ কর। অতঃপর পুনরায় তিনি নাবী (সাঃআঃ) -এর নিকট কসম ও তাগিদ দিয়ে প্রেরণ করলে নাবী (সাঃআঃ) উঠে দাঁড়ালেন। আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপরে শিশুটিকে নাবী (সাঃআঃ) -এর কোলে তুলে দেয়া হল। এ সময় তার নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। নাবী (সাঃআঃ) -এর দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। সাদ (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! এটা কী? তিনি উত্তর দিলেনঃ এটা হল রাহমাত। আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করেন তার হৃদয়ে এটি দিয়ে দেন। আর আল্লাহ তাহাঁর দয়াদ্র বান্দাদের প্রতিই দয়া করে থাকেন(আঃপ্রঃ- ৫২৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪০)

৭৫/১০. অধ্যায়ঃ অসুস্থ বেদুঈনদের সেবা করা।

৫৬৫৬

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) এক বেদুঈনের নিকট গিয়েছিলেন, তার রোগ সম্পর্কে জানার জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, আর নাবী (সাঃআঃ) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীকে দেখিতে যেতেন তখন তাকে বলিতেনঃ কোন ক্ষতি নেই। ইনশাআল্লাহ তুমি তোমার গুনাহসমূহ থেকে পবিত্রতা লাভ করিবে। তখন বেদুঈন বললঃ আপনি বলেছেন, এটা গুনাহ থেকে পবিত্র করে দেবে? কক্ষনো না, বরং এটা এমন এক জ্বর যা এক অতি বৃদ্ধকে গরম করছে কিংবা সে বলেছে উত্তপ্ত করছে, যা তাকে কবরে পৌঁছাবে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ তাহলে তেমনই।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪১)

৭৫/১১. অধ্যায়ঃ মুশরিক রোগীর দেখাশুনা করা।

৫৬৫৭

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদীর ছেলে নাবী (সাঃআঃ) -এর সেবা করত। ছেলেটির অসুখ হলে নাবী (সাঃআঃ)) তাহাঁর অসুখের খোঁজ নিতে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে ইসলাম গ্রহণ করিল। সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহ:) তাহাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আবু ত্বলিব মারা গেলে নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে এসেছিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪২)

৭৫/১২. অধ্যায়ঃ কোন রোগীকে দেখিতে গিয়ে সলাতের সময় হলে সেখানেই উপস্থিত লোকদের নিয়ে জামাআতবদ্ধ সলাত আদায় করা।

৫৬৫৮

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) -এর অসুস্থতার সময় লোকজন তাঁকে দেখার জন্য তাহাঁর কাছে আসলে তিনি তাঁদের নিয়ে বসা অবস্থায় সলাত আদায় করেন। লোকজন দাঁড়িয়ে সলাত শুরু করেছিল, ফলে তিনি তাদের ইঙ্গিত করিলেন, বসে যাও। সলাত শেষ করে তিনি বলেনঃ ইমাম হল এমন ব্যক্তি যাকে অনুসরণ করিতে হয়। সে রুকু করলে তোমরাও রুকু করিবে। সে যখন মাথা উঠাবে, তোমরাও মাথা উঠাবে। সে যখন বসে সলাত আদায় করিবে, তখন তোমরাও বসে সলাত আদায় করিবে। হুমাইদী (রহ:) বলেছেনঃ এ হাদীসটি রহিত হয়ে গেছে।

আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহ:) বলেন, কেননা, নাবী (সাঃআঃ) জীবনে শেষ যে সলাত আদায় করেন তাতে তিনি নিজে বসে সলাত আদায় করেন আর লোকজন তাহাঁর পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৩)

৭৫/১৩. অধ্যায়ঃ রোগীর দেহে হাত রাখা।

৫৬৫৯

আয়েশা বিনত সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাহাঁর পিতা বলেছেন, আমি যখন মক্কায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দেখার জন্য আসেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর নাবী! আমি সম্পদ রেখে যাচ্ছি। আর আমার একটি মাত্র কন্যা ব্যতীত আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার দুতৃতীয়াংশ সম্পদ অসীয়ত করে এক-তৃতীয়াংশ রেখে যাব? তিনি উত্তর দিলেনঃ না। আমি বললামঃ তা হলে অর্ধেক রেখে দিয়ে আর অর্ধেক অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে দুতৃতীয়াংশ রেখে দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি উত্তর দিলেনঃ এক-তৃতীয়াংশ পার, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তারপর তিনি আমার কপালের উপর তাহাঁর হাত রাখলেন এবং আমার চেহারা ও পেটের উপর তাহাঁর হাত বুলিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ, সাদকে তুমি আরোগ্য কর। তাহাঁর হিজরাত পূর্ণ করে দাও। আমি তাহাঁর হাতের শীতল স্পর্শ এখনও পাচ্ছি এবং মনে করি আমি তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত পাব।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৪)

৫৬৬০

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি ভয়ানক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাহাঁর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম এবং বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ আমি এমন কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হই, যা তোমাদের দুজনের হয়ে থাকে। আমি বললামঃ এটা এজন্য যে, আপনার জন্য বিনিময়ও দ্বিগুণ। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ! এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যে কোন মুসলিমের উপর কোন কষ্ট বা রোগ-ব্যাধি হলে আল্লাহ তাহাঁর গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, যেমনভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।(আঃপ্রঃ- ৫২৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৫)

৭৫/১৪. অধ্যায় :রোগীর সামনে কী বলিতে হইবে এবং তাকে কী জবাব দিতে হইবে।

৫৬৬১

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর অসুস্থতার সময় তাহাঁর কাছে এলাম। এরপর তাহাঁর শরীরে হাত বুলিয়ে দিলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললামঃ আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত এবং এটা এজন্য যে, আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হাঁ! কোন মুসলিমের উপর কোন কষ্ট আপতিত হলে তাথেকে গুনাহগুলো এমনভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হইতে পাতা ঝরে যায়।(আঃপ্রঃ- ৫২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৬)

৫৬৬২

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক রোগীকে দেখার জন্য তার কাছে প্রবেশ করিলেন। তখন তিনি বলেনঃ কোন ক্ষতি নেই, ইনশাআল্লাহ গুনাহ থেকে তুমি পবিত্রতা লাভ করিবে। রোগী বলে উঠলঃ কক্ষনো না বরং এটি এমন জ্বর, যা এক অতি বৃদ্ধের শরীরে টগবগ করে ফুটছে এন তাকে কবরে পৌঁছাবে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হাঁ, তবে তাই।(আঃপ্রঃ- ৫২৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৭)

৭৫/১৫. অধ্যায়ঃ রোগীর দেখাশুনা করা, আরোহী অবস্থায়, পায়ে চলা অবস্থায় এবং গাধার পিঠে সাওয়ারীর পিছনে বসে।

৫৬৬৩

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করিলেন। গাধাটির পিঠে ছিল ফাদক এলাকায় তৈরী চাদর মোড়ানো একটি গদি। তিনি নিজের পেছনে উসামাহ (রাদি.) -কে বসিয়ে অসুস্থ সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -কে দেখিতে গিয়েছিলেন। এটা বদর যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। নাবী (সাঃআঃ) চলতে চলতে এক পর্যায়ে এক মজলিসের পার্শ্ব অতিক্রম করিতে লাগলেন। সেখানে ছিল আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। এ ঘটনা ছিল আবদুল্লাহর ইসলাম গ্রহণের আগের। মজলিসটির মধ্যে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের লোকও ছিল। আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) -ও সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। সাওয়ারী জানোয়ারটির পায়ের ধূলা-বালু যখন মজলিসের লোকদের মাঝে উড়তে লাগল, তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে নিজের নাক চেপে ধরল এবং বললঃ আমাদের উপর ধূলাবালু উড়াবেন না। নাবী (সাঃআঃ) সালাম দিলেন এবং নীচে অবতরণ করে তাদের আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানালেন। এরপর তিনি তাদের সামনে কুরআন পাঠ করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তাঁকে বললঃ জনাব, আপনি যা বলেছেন আমার কাছে তা পছন্দনীয় নয়। যদি এসব কথা সত্য হয়, তাহলে আপনি এ মজলিসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। বরং আপনি নিজের বাড়ীতে চলে যান এবং সেখানে যে আপনার কাছে যাবে, তার কাছে এসব বিবরণ প্রকাশ করবেন। ইবনু রাওয়াহা বলে উঠলেনঃ অবশ্য, হে আল্লাহর রাসুল! এসব কথাবার্তা নিয়ে আমাদের মজলিসে আসবেন। আমরা এগুলো পছন্দ করি। এরপর মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে গেল, এমনকি তারা পরস্পর মারামারি করিতে উদ্যত হলো। নাবী (সাঃআঃ) তাদের শান্ত ও নীরব করার জন্য চেষ্টা করিতে থাকেন। অবশেষে সবাই শান্ত হলে নাবী (সাঃআঃ) সাওয়ারীর উপর আরোহন করেন এবং সাদ ইবনু উবাদাহ (রাদি.) -এর বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি তাঁকে অর্থাৎ সাদ (রাদি.) -কে বললেনঃ তুমি কি শুনতে পাওনি আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী উক্তি করেছে? সাদ (রাদি.) উত্তর দিলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! তাকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহ আপনাকে যে মর্যাদা দান করার ইচ্ছে করিয়াছেন তা দান করিয়াছেন। আমাদের এ উপ-দ্বীপ এলাকার লোকজন একমত হয়েছিল তাকে রাজমুকুট পরিয়ে দেয়ার জন্য এবং তাকে নেতৃত্ব দান করার জন্য। এরপর যখন আপনাকে আল্লাহ যে হক ও সত্য দান করিয়াছেন তখন এর দ্বারা তার ইচ্ছে বরবাদ হয়ে গেল। এতে সে ভীষণ মনোক্ষুণ্ন হল। আর আপনি তার যে ব্যবহার দেখলেন, এটিই তার কারণ।(আঃপ্রঃ- ৫২৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৮)

৫৬৬৪

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার অসুস্থতা দেখার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় তিনি গাধার পিঠে আরোহী ছিলেন না, ঘোড়ার পিঠেও ছিলেন না।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৯)

৭৫/১৬. অধ্যায়ঃ রোগীর উক্তি “আমি যাতনাগ্রস্থ” কিংবা আমার মাথা গেল, কিংবা আমার যন্ত্রণা প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে এর বর্ণনা।

আর আইয়ূব (আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ “ আমি দুঃখ কষ্টে নিপতিত হয়েছি, তুমি তো দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ।” (সুরা আল-আম্বিয়া ২১ : ৮৩)

৫৬৬৫

কাব ইবনু উজরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) পথ অতিক্রম করছিলেন, এ সময় আমি হাঁড়ির নীচে লাকড়ি জ্বালাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার মাথার উকুন কি তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমি বললামঃ জ্বি, হ্যাঁ। তখন তিনি নাপিত ডাকলেন। সে মাথা মুড়িয়ে দিল। তারপর নাবী (সাঃআঃ) আমাকে ফিদইয়া আদায় করার নির্দেশ দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫০)

৫৬৬৬

কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহ:) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আয়েশা (রাদি.) বলেছিলেন হায় যন্ত্রণায় আমার মাথা গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তোমার জন্য দুআ করব। আয়েশা (রাদি.) বললেনঃ হায় আফসোস, আল্লাহর শপথ। আমার ধারণা আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর তা হলে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য স্ত্রীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পারবেন। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ বরং আমি আমার মাথা গেল বলার অধিক যোগ্য। আমি তো ইচ্ছে করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলামঃ আবু বকর (রাদি.) ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাব এবং অসীয়ত করে যাব, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্খাকারীদের কোন আকাঙ্খা করার অবকাশ না থাকে। তারপর ভাবলাম। আল্লাহ (আবু বাক্‌র ছাড়া অন্যের খলীফা হওয়া) তা অপছন্দ করবেন, মুমিনগণ তা বর্জন করবেন। কিংবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা প্রতিহত করবেন এবং মুমিনগণ তা অপছন্দ করবেন।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫১)

৫৬৬৭

ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাহাঁর গায়ে আমার হাত দিলাম এবং বললামঃ আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যেমন তোমাদের দুজনকে ভুগতে হয়। ইবনু মাসঊদ (রাদি.) বললেনঃ আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কোন মুসলিম কষ্ট বা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে কিংবা অন্য কোন যন্ত্রণায় পতিত হলে, আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন, যেমনভাবে বৃক্ষ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫২)

৫৬৬৮

আমির ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের সময় আমার রোগ কঠিন আকার ধারণ করলে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাদের কাছে আসলেন। আমি বললামঃ (মৃত্যু) আমার সন্নিকটে এসে গেছে যা আপনি দেখিতে পাচ্ছেন অথচ আমি একজন বিত্তবান ব্যক্তি। একটি মাত্র কন্যা ব্যতীত আমার কোন ওয়ারিশ নেই। এখন আমি আমার সম্পদের দুতৃতীয়াংশ সদাক্বাহ করিতে পারি কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেনঃ এও অনেক অধিক। নিশ্চয়ই তোমার ওয়ারিশদের স্বাবলম্বী রেখে যাওয়াই শ্রেয় তাদের নিঃস্ব ও মানুষের দ্বারস্থ করে যাবার চেয়ে। আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে যে ব্যয়ই কর না কেন, তার বিনিময়ে তোমাকে সাওয়াব দেয়া হইবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে আহার তুলে দাও তাতেও।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৩)

৭৫/১৭. অধ্যায়ঃ তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, রোগীর এ কথা বলা।

৫৬৬৯

আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর ইন্তিকালের সময় আগত হল, তখন ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের জমায়েত ছিল। যাঁদের মধ্যে উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) -ও ছিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) (রোগ কাতর অবস্থায়) বললেনঃ লও, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেব, যাতে পরবর্তীতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। তখন উমার (রাদি.) বললেনঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর উপর রোগ যন্ত্রণা তীব্র হয়ে উঠেছে, আর তোমাদের কাছে কুরআন মাওজুদ। আর আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময় আহলে বাইতের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হল। তাঁরা বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হলেন, তন্মধ্যে কেউ কেউ বলিতে লাগলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে কাগজ পৌঁছে দাও এবং তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেবেন, যাতে পরবর্তীতে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হও। আবার তাদের মধ্যে উমার (রাদি.) যা বলিলেন, তা বলে যেতে লাগলেন। এভাবে নাবী (সাঃআঃ) -এর কাছে তাঁদের বাকবিতন্ডা ও মতভেদ বেড়ে চলল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমরা উঠে যাও।

উবাইদুল্লাহ (রাদি.) বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন, বড় মুসীবত হল লোকজনের সেই মতভেদ ও তর্ক-বিতর্ক, যা নাবী (সাঃআঃ) ও তাহাঁর সেই লিখে দেয়ার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৪)

৭৫/১৮. অধ্যায়ঃ দুআ নেয়ার উদ্দেশে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাওয়া।

৫৬৭০

সায়িব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমার বোনের ছেলে পীড়িত। তখন নাবী (সাঃআঃ) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দুআ করিলেন। এরপর তিনি অযূ করিলেন। আমি তাহাঁর অযূর বেঁচে যাওয়া পানি পান করলাম এবং তাহাঁর পৃষ্ঠের পশ্চাতে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন আমি মোহরে নবুওয়াতের পানে চেয়ে দেখলাম। সেটি তাহাঁর দুস্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং খাটিয়ার গোলাকৃতি ঘুন্টির মত।(আঃপ্রঃ- ৫২৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৫)

৭৫/১৯. অধ্যায়ঃ রোগী কর্তৃক মৃত্যু কামনা করা।

৫৬৭১

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করিতেই চায়, তা হলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়।(আঃপ্রঃ- ৫২৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৬)

৫৬৭২

কায়স ইবনু আবু হাযিম (রহ:) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খব্বাব (রাদি.) -কে দেখিতে গেলাম। এ সময় (চিকিৎসার জন্য তাঁকে) সাতবার দাগ লাগানো হয়েছিল। তখন তিনি বললেনঃ আমাদের সাথীরা ইন্তিকাল করিয়াছেন। তাঁরা এমন অবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাঁদের আমলের সাওয়াবে কোন রকম কমতি করিতে পারেনি। আর আমরা এমন জিনিস লাভ করেছি, যা মাটি ভিন্ন অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নাবী (সাঃআঃ) আমাদের মৃত্যুর জন্য দুআ কামনা করিতে নিষেধ না করিতেন, তবে আমি মৃত্যুর জন্য দুআ করতাম। অতঃপর আমরা আরেকবার তাহাঁর কাছে এসেছিলাম। তখন তিনি তাহাঁর বাগানের দেয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেনঃ মুসলিমকে তাহাঁর যাবতীয় ব্যয়ের জন্য সাওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে স্থাপিত জিনিসের কথা আলাদা।(আঃপ্রঃ- ৫২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৭)

৫৬৭৩

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নেক আমাল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করলঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাহাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন। কাজেই মধ্যমপন্থা গ্রহণ কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বয়স দ্বারা) তার নেক আমাল বৃদ্ধি হইতে পারে। আর খারাপ লোক হলে সে তাওবাহ করার সুযোগ পাবে।(আঃপ্রঃ- ৫২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৮)

৫৬৭৪

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) -কে আমার পায়ের উপর হেলান দেয়া অবস্থায় বলিতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, আর আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত কর।(আঃপ্রঃ- ৫২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৯)

৭৫/২০. অধ্যায়ঃ রোগীর জন্য শুশ্রুষাকারীর দুআ করা।

আয়েশা বিনত সাদ তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! সাদকে আরোগ্য কর।

৫৬৭৫

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাহাঁর নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত, তখন তিনি বলিতেনঃ কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। [৫৭৪৩, ৫৭৪৪, ৫৭৫০; মুসলিম ৩৯/১৯, হাদীস ২১৯১, আহমাদ ২৪২৩০]

আমর ইবনু আবু কায়স ও ইবরাহীম ইবনু তুহমান হাদীসটি মানসূর, ইবরাহীম ও আবুয্ যুহা থেকে إِذَا أُتِيَ بِالْمَرِيضِ যখন কোন রোগীকে আনা হত, এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।

জারীর হাদীসটি মানসূর, আবুয্ যুহা সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি إِذَا أَتٰى مَرِيضًا যখন রোগীর কাছে আসতেন এ শব্দসহ বর্ণনা করিয়াছেন। আঃপ্রঃ- ৫২৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬০)

৭৫/২১. অধ্যায়ঃ রোগীর শুশ্রুষাকারীর অযূ করা।

৫৬৭৬

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার কাছে প্রবেশ করিলেন, তখন আমি পীড়িত ছিলাম। তিনি অযূ করিলেন। অতঃপর আমার গায়ের উপর অযূর পানি ছিটিয়ে দিলেন। কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেনঃ এরপর তিনি উপস্থিত লোকদের বলেছেনঃ তার গায়ে পানি ছিটিয়ে দাও। এতে আমি সংজ্ঞা ফিরে পেলাম। আমি বললামঃ কালালাহ (পিতাও নেই, সন্তানও নেই) ছাড়া আমার কোন ওয়ারিশ নেই। কাজেই আমার রেখে যাওয়া সম্পদ কীভাবে বন্টন করা হইবে? তখন ফারায়েয সম্বন্ধীয় আয়াত অবতীর্ণ হয়।(আঃপ্রঃ- ৫২৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬১)

৭৫/২২. অধ্যায়ঃ জ্বর, প্লেগ ও মহামারী দূর হবার জন্য কোন ব্যক্তির দুআ করা ।

৫৬৭৭

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন নাবী (সাঃআঃ) (মাদীনাহ) আসলেন, তখন আবু বকর (রাদি.) ও বিলাল (রাদি.) জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের নিকট বললামঃ আব্বাজান, আপনি কেমন অনুভব করছেন? হে বিলাল! আপনি কেমন অনুভব করছেন? তিনি বলেনঃ আবু বকর (রাদি.) যখন জ্বরে আক্রান্ত হইতেন তখন তিনি আবৃত্তি করিতেন,

“সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজন নিয়ে ,

আর মৃত্যু অপেক্ষা করে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে।”

আর বিলাল (রাদি.)–এর নিয়ম ছিল যখন তাহাঁর জ্বর ছেড়ে যেত, তিনি তখন উচ্চ আওয়াজে বলিতেনঃ

হায়! আমি যদি পেতাম একটি রাত অতিবাহিত করার সুযোগ

এমন উপত্যকায় যেখানে আমার পাশে আছে ইয্‌খির ও জালীল ঘাস।

যদি আমার অবতরণ হত কোন দিন মাযিন্না এলাকার কূপের কাছে,

যদি আমার চোখে ভেসে উঠত শামা ও তাফীল।

আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাদের কাছে মাদীনাহকে প্রিয় করে দাও, যেভাবে আমাদের কাছে প্রিয় ছিল মাক্কাহ এবং মাদীনাহকে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। আর মাদীনাহর মুদ্দ ও সাতে বরকত দাও এবং মাদীনাহর জ্বরকে স্থানান্তরিত কর জুহফা এলাকায়।(আঃপ্রঃ- ৫২৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬২)

Comments

Leave a Reply