রিয়াদুস সালেহিন – শিষ্টাচার অদ্ধায়ের হাদীস সমুহ

রিয়াদুস সালেহিন – শিষ্টাচার অদ্ধায়ের হাদীস সমুহ

রিয়াদুস সালেহিন – শিষ্টাচার অদ্ধায়ের হাদীস সমুহ >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

রিয়াদুস সালেহিন – শিষ্টাচার অদ্ধায়ের হাদীস সমুহ

পরিচ্ছেদ -৮৪ –লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং এ গুণে গুণান্বিত
পরিচ্ছেদ -৮৫ –গোপনীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -৮৬- চুক্তি পূরণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও অঙ্গীকার পালন
পরিচ্ছেদ -৮৭- সদাচার অব্যাহত রাখার গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -৮৮- মিষ্টি কথা বলা এবং হাসি মুখে সাক্ষাৎ
পরিচ্ছেদ –৮৯- কথা স্পষ্ট করে বলা বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা উত্তম
পরিচ্ছেদ -৯০- সঙ্গীর বৈধ কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা
পরিচ্ছেদ -৯১- ওয়ায নসীহত এবং তাতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
পরিচ্ছেদ -৯২- গাম্ভীর্য ও স্থিরতা অবলম্বন করার মাহাত্ম্য
পরিচ্ছেদ -৯৩- নামায, ইলম শিক্ষা ও অন্যান্য ইবাদতে ধীর-স্থিরতা
পরিচ্ছেদ -৯৪- মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
পরিচ্ছেদ -৯৫- ভাল জিনিসের মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ -৯৬- সফরকারীকে বিদায় দেওয়ার দোআ পড়া ও আবেদন
পরিচ্ছেদ -৯৭- ইস্তেখারা ও পরামর্শ করা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ -৯৮- ঈদের নামায এক পথে যাওয়া ও অন্য পথে আসা
পরিচ্ছেদ -৯৯- ডানকে অগ্রাধিকার দেওয়া মুস্তাহাব

পরিচ্ছদঃ ৮৪ -লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং এ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান

৬৮৬. ইবনে ‘উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এক আনসার ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যিনি তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪, ৬১১৮, মুসলিম ৩৬, তিরমিজী ২৬১৫, নাসাঈ ৫০৩৩, আবু দাঊদ ৪৭৯৫, আহমাদ ৪৫৪০, ৫১৬১, ৬৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৬৭৯)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৮৭. ইমরান ইবনে হুসাইন রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে।’’ (মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘লজ্জার সবটুকু মঙ্গলই মঙ্গল”।)

[বিঃদ্রঃ কিন্তু গুপ্ত সমস্যায় শরীয়তের সমাধান জানার ব্যাপারে লজ্জা করা ঠিক নয়।)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬১১৭, মুসলিম ৩৭, আবু দাঊদ ৪৭৯৬, আহমাদ ১৯৩১৬, ১৯৩২৯, ১৯৪০৪, ১৯৪৫৫, ১৯৪৭০, ১৯৪৯৭, ১৯৫০৬)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৮৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাট অপেক্ষা কিছু বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৯, মুসলিম ৩৫, তিরমিজী ২৬১৪, নাসাঈ ৫০০৪, ৫০০৫, ৫০০৬, আবু দাঊদ ৪৬৭৬, ইবনু মাজাহ ৫৭, আহমাদ ৮৭০৭, ৯০৯৭, ৯৪১৭, ৯৪৫৫, ১০১৩৪)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৮৯. আবু সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ অন্তঃপুরবাসিনী কুমারীর চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি কোন জিনিস অপছন্দ করতেন আমরা তাঁর চেহারায় তা বুঝতে পারতাম।’ (বুখারী ও মুসলিম)

আলেমগণ বলেন, ‘লজ্জাশীলতার প্রকৃতত্ব হল এমন সৎচরিত্রতা, যা নোংরা বর্জন করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং অধিকারীর অধিকার আদায়ে ত্রুটি প্রদর্শন করতে বিরত রাখে।

আবুল কাসেম জুনাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘লজ্জাশীলতা হল, নিয়ামত লক্ষ্য করা এবং সেই সাথে (তার কৃতজ্ঞতায়) ত্রুটি লক্ষ্য করা। এই দুয়ের মাঝে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তাকেই লজ্জা বলা হয়।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৫৬২, ৬১০২, ৬১১৯, মুসলিম ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১৮০, আহমাদ ১১২৮৬, ১১৩৩৯, ১১৪২৩, ১১৪৫২, ১১৪৬৪)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৮৫ -গোপনীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ৩৪ আয়াত)

৬৯০. আবু সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়।’’

[মুসলিম ১৪৩৭, আবু দাঊদ ৪৮৭০, আহমাদ ১১২৫৮) শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯১. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

যখন উমার রাঃআঃ-এর কন্যা হাফসা রাঃআঃ বিধবা হয়ে গেলেন, তখন তিনি বললেন যে, আমি ‘উসমান ইবনে ‘আফ্‌ফানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং হাফসাকে বিবাহ করার জন্য দরখাস্ত দিয়ে তাঁকে বললাম, ‘আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বিবাহ আমি উমারের কন্যা হাফসার সাথে দিয়ে দিচ্ছি?’ তিনি বললেন, ‘আমি আমার (এ) ব্যাপারে বিবেচনা করব।’ সুতরাং আমি কয়েকটি রাত্রি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘আমার এখন বিয়ে না করাটাই ভাল মনে করছি।’ (উমার বলেন,) অতঃপর আমি আবু বকর রাঃআঃ-এর সাথে দেখা করে বললাম, ‘যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তাহলে আমি আপনার বিবাহ হাফসার সাথে দিয়ে দিই।’ আবু বকর চুপ থাকলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। সুতরাং আমি ‘উসমান অপেক্ষা তাঁর প্রতি বেশী দুঃখিত হলাম। তারপর কয়েকটি রাত্রি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর নবী সাঃআঃ স্বয়ং তাকে বিবাহের পায়গাম দিলেন। ফলে আমি হাফসার বিবাহ তাঁর সাথেই দিয়ে দিলাম। তারপর আবু বকর আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘আপনি আমাকে হাফসাকে বিবাহ করার দরখাস্ত দিয়েছিলেন এবং আমি কোন উত্তর দিইনি। সেজন্য হয়তো আপনি আমার উপর দুঃখিত হয়েছেন? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমার আপনাকে উত্তর না দেওয়ার কারণ এই ছিল যে, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ হাফসাকে বিবাহ করার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। সুতরাং আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর গোপন কথা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। যদি নবী সাঃআঃ হাফসাকে বর্জন করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমি তাকে গ্রহণ করতাম।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪০০৫, ৫১২২, ৫১২৫, ৫১৪৫, নাসাঈ ৩২৪৮, ৩২৫৯, আহমাদ ৭৫, ৪৭৯২)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯২. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ এর স্ত্রীরা সকলেই তাঁর কাছে ছিল। ইত্যবসরে ফাতেমা রাঃআঃ হেঁটে (আমাদের নিকট) এল। তার চলন এবং আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর চলনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। অতঃপর নবী সাঃআঃ তাকে দেখে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, ‘আমার কন্যার শুভাগমন হোক।’ অতঃপর তিনি তাকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাকে কানে কানে গোপনে কিছু বললেন। ফাতেমা রাঃআঃ জোরেশোরে কাঁদতে আর‎ম্ভ করলেন। সুতরাং তিনি তার অস্থিরতা দেখে পুনর্বার তাকে কানে কানে কিছু বললেন। ফলে (এবার) সে হাসতে লাগল। (আয়েশা বলেন,) অতঃপর আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর স্ত্রীদের মাঝে (তাদেরকে বাদ দিয়ে) তোমাকে গোপনে কিছু বলার জন্য বেছে নেওয়া সত্ত্বেও তুমি কাঁদছ?’ তারপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ যখন উঠে গেলেন, তখন আমি তাকে বললাম, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে কী বললেন?’ সে বলল, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর গোপন কথা প্রকাশ করব না।’ অতঃপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মৃত্যুবরণ করলে আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘তোমার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে। তাই আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি যে, তুমি আমাকে বল, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তোমাকে কী বলেছিলেন?’ সে বলল, ‘এখন বলতে কোন অসুবিধা নেই।’ আল্লাহর রসূল সাঃআঃ প্রথমবারে কানাকানি করার সময় আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, ‘‘জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম প্রত্যেক বছর একবার (অথবা দু’বার) করে কুরআন শোনান। কিন্তু এখন তিনি দু’বার শুনালেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। সুতরাং তুমি (হে ফাতেমা!) আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। কেননা, আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগামী।’’ সুতরাং আমি (এ কথা শুনে) কেঁদে ফেললাম, যা তুমি দেখলে। অতঃপর তিনি আমার অস্থিরতা দেখে দ্বিতীয়বার কানে কানে বললেন, ‘‘হে ফাতেমা! তুমি কি এটা পছন্দ কর না যে, মু’মিন নারীদের তুমি সর্দার হবে অথবা এই উম্মতের নারীদের সর্দার হবে?’’ সুতরাং (এমন সুসংবাদ শুনে) আমি হাসলাম, যা তুমি দেখলে।’ (বুখারী, শব্দাবলী মুসলিমের)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৬২৪, ৩৬২৬, ৩৭১৬, ৪৪৩৪,৬২৮৫, মুসলিম ২৪৫০, তিরমিজী ৩৮৭২, ইবনু মাজাহ ১৬২১, আহমাদ ২৩৯৬২, ২৫৫০১, ২৫৮৭৫)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯৩ আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমার নিকট এলেন যখন আমি বালকদের সাথে খেলা করছিলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে সালাম দিয়ে আমাকে কোন কাজে পাঠালেন। সুতরাং আমার মায়ের নিকট আসতে বিলম্ব হয়ে গেল। তারপর যখন আমি (বাড়ি) এলাম, তখন মা বললেন, ‘কিসে তোমাকে আটকে রেখেছিল?’ আমি বললাম, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে কোন প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন।’ মা বললেন, ‘তাঁর কী প্রয়োজন ছিল?’ আমি বললাম, ‘সেটা তো ভেদের কথা।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর ভেদ খবরদার (কাউকে) বলবে না।’ আনাস রাঃআঃ বলেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি আমি (এ ভেদ) কাউকে বলতাম, তাহলে তোমাকে বলতাম হে সাবেত!’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৮৯, মুসলিম ২৪৮২, আহমাদ ১১৬৪৯, ১২৩৭৩, ১২৬০৯, ১২৮৮০, ১২৯৬০, ১৩০৫৭, ১৩২৪২)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৮৬ -চুক্তি পূরণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও অঙ্গীকার পালন করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “আর প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ৩৪ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

অর্থাৎ “তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর তখন আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর।” (সূরা নাহল ৯১ আয়াত)

তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর।” (সূরা মাইদাহ ১ আয়াত)

তিনি আরো বলেছেন,

অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা বল কেন? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সূরা স্বাফ্‌ফ ২-৩ আয়াত)

৬৯৪. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং (৩) আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।’’

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।’’ (সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৩, ২৬৮২, ২৭৪৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিজী ২৬৩২, নাসাঈ ৫০২০, আবু দাঊদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০)

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯৫. ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যার মধ্যে চারটি স্বভাব পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফেক হয়ে যাবে। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি স্বভাব থাকবে, তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যাবে; যতক্ষণ না সে তা বর্জন করিবে। (১) তাকে আমানত দেওয়া হলে সে খিয়ানত করিবে। (২) কথা বললে মিথ্যা বলবে। (৩) ওয়াদা করলে খেলাপ করিবে। এবং (৪) ঝগড়া করলে গালি-গালাজ করিবে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৪, ২৪৫৯, ৩১৪৯, ৬০৯৫, মুসলিম ৫৮, তিরমিজী ২৬৩২, নাসাঈ ৫০২০, আবু দাঊদ ৪৬৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫-৬৮৪০)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯৬ জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘বাহরাইন থেকে মাল এলে তোমাকে এতটা, এতটা এবং এতটা দেব।’’ অতঃপর বাহরাইনের মাল আসার পূর্বেই নবী সাঃআঃ মারা গেলেন। তারপর বাহরাইনের মাল এসে গেলে আবু বকর রাঃআঃ ঘোষণা করলেন, ‘যার রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট প্রাপ্য কোন প্রতিশ্রুতি অথবা ঋণ আছে, সে আমার নিকট আসুক।’ (ঘোষণা শুনে) আমি (জাবের) তাঁকে বললাম যে, ‘নবী সাঃআঃ আমাকে এতটা মাল দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন।’ অতঃপর তিনি আঁজলা ভরে আমাকে দিলেন। আমি তা গুণে পাঁচশ’ পেলাম। তারপর তিনি বললেন, ‘এর দ্বিগুণ আরো নাও।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ২২৯৬, ২৫৯৮, ২৬৮৩, ৩১৩৭, ৩১৬৫, ৪৩৮৩, মুসলিম ২৩১৪)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৮৭ -সদাচার অব্যাহত রাখার গুরুত্ব

৬৯৭. ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ একদা আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুকের মত হয়ো না, যে রাত্রে উঠে ইবাদত করত, অতঃপর সে রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায ছেড়ে দিয়েছে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১১৩১, ১১৫২, ১১৫৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৭৯, ১৯৮০, ৩৪১৮, ৩৪১৯, ৩৪২০, ৫০৫২, ৫০৫৩, ৫০৫৪, ৫১৯৯, ৬১৩৪, ২৩৯৬, ২৩৯৭, ২৩৯৯, ২৪০০-২৪০৩, আবু দাঊদ ১৩৮৮-১৩৯১, ২৪২৭, ২৪৪৮, ইবনু মাজাহ ১৩৪৬, ১৭১২, আহমাদ ৬৪৪১, ৬৪৫৫, ৬৪৫৫, ৬৪৮০, ৬৪৯১, ৬৭৯১, ৬৮৮২, ৬৯৮৪, ৭০৫৮, দারেমী ১৭৫২, ৩৪৮৬)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৮৮ -মিষ্টি কথা বলা এবং হাসি মুখে সাক্ষাৎ করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “মু’মিনদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (সূরা হিজ্র ৮৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ “আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি হয়েছিলে কোমল-হৃদয়; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হইতে তাহলে তারা তোমার আশপাশ হইতে সরে পড়ত।” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)

৬৯৮. আদী ইবনে হাতেম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, যদি আধখানা খেজুর দান করে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পার তবুও বাঁচ। যদি কোন ব্যক্তি এটাও না পায়, তাহলে সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০২৩, ১৪১৩, ১৪১৭, ৩৫৯৫, ৬৫৩৯, ৬৫৬৩, ৭৪৪৩, ৭৫১২, মুসলিম ১০১৬, নাসাঈ ২৫৫২, ২৫৫৩, আহমাদ ১৭৭৮২)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬৯৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ভাল কথা বলাও সাদকাহ। (বুখারী ও মুসলিম, বিস্তারিত হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৮৯, ২৭০৭, ২৮৯১, মুসলিম ১০০৯, আহমাদ ২৭৪০০, ৮১৫৪)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭০০. আবু যার্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

একদা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘তুমি কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (মুসলিম) (অর্থাৎ মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ভালো কাজ।)

[মুসলিম ২৬২৬, তিরমিজী ১৮৩৩, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, দারেমী ২০৭৯)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৮৯ – কথা স্পষ্ট করে বলা এবং সম্বোধিত ব্যক্তি বুঝতে না পারলে একটি কথাকে বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা উত্তম

৭০১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ কোন কথা বুঝাবার জন্য তিনবার করে বলতেন এবং কোন সম্প্রদায়ের নিকট এলে তিনবার সালাম দিতেন। (বুখারী)

[কথা জটিল হলে প্রয়োজনে তিনবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলতেন। আর সভা বড় হলে অথবা কতক মানুষ শুনতে না পেলে অথবা প্রবেশ-অনুমতি নিতে হলে তিনবার সালাম দিতেন।) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৯৪, ৯৫, ৬২৪৪, তিরমিজী ২৭২৩, ৩৬৪০, আহমাদ ১২৮০৯, ১২৮৯৫)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭০২. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর কথা স্পষ্ট ছিল, সব শ্রোতাই তা বুঝে ফেলত।’

[আবু দাঊদ ৪৮৩৯, তিরমিজী ৩৬৩৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯০ -সঙ্গীর বৈধ কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা, আলেম ও বক্তার সভায় সমবেত জনগণকে চুপ থাকতে অনুরোধ করা

৭০৩. জারীর ইবনে ‘আব্দুল্লাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বিদায় হজ্জ্বে আমাকে বললেন, ‘‘সমবেত জনগণকে চুপ করতে বল।’’ তারপর বললেন, ‘‘আমার পর তোমরা কাফের হয়ে ফিরো না যে, একে অন্যের গর্দান কর্তনে প্রবৃত্ত হবে।’’ (অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি ও হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ো না)।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১২১, ৪৪০৫, ৬৮৬৯, ৭০৮০, মুসলিম ৬৫, নাসাঈ ৪১৩১, ইবনু মাজাহ ৩৯৪২, আহমাদ ১৮৬৮৬, ১৮৭৩২, ১৮৭৭৪, দারেমী ১৯২১)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯১ -ওয়ায-নসীহত এবং তাতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার বিবরণ

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” (সূরা নাহ্ল ১২৫ আয়াত)

৭০৪. আবু ওয়ায়েল শাক্বীক্ব ইবনে সালামা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন। একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, ‘হে আবু আব্দুর রহমান! আমার বাসনা এই যে, আপনি আমাদেরকে যদি প্রত্যেক দিন নসীহত শুনাতেন (তো ভাল হত)।’ তিনি বললেন, ‘স্মরণে রাখবে, আমাকে এতে বাধা দিচ্ছে এই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি। আমি নসীহইতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।’ (অর্থাৎ মাঝে-মধ্যে বিশেষ প্রয়োজন মাফিক নসীহত শুনাতেন।)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৮, ৭০, ৬৪১১, মুসলিম ২৮২১, তিরমিজী ২৮৫৫, আহমাদ ৩৫৭১, ৪০৩১, ৪০৫০, ৪১৭৭, ৪২১৬, ৪৩৯৫, ৪৪২৫)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭০৫. আবুল ইয়াক্বাযান ‘আম্মার ইবনে ইয়াসের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘মানুষের (জুম‘আর) দীর্ঘ নামায ও তার সংক্ষিপ্ত খুতবা তার শরয়ী জ্ঞানের পরিচায়ক। অতএব তোমরা নামায লম্বা কর এবং খুতবা ছোট কর।’’

[মুসলিম ৮৬৯, আহমাদ ১৭৮৫৩, ১৮৪১০, দারেমী ১৫৫৬)- শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭০৬. মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি (একবার) রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। ইত্যবসরে হঠাৎ একজন মুক্তাদীর ছিঁক (হাঁচি) হলে আমি (তার জবাবে) ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাকে রহম করুন) বললাম। তখন অন্য মুক্তাদীরা আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগল। আমি বললাম, ‘হায়! হায়! আমার মা আমাকে হারিয়ে ফেলুক! তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আমার দিকে তাকিয়ে দেখছো?’ (এ কথা শুনে) তারা তাদের নিজ নিজ হাত দিয়ে নিজ নিজ উরুতে আঘাত করতে লাগল। তাদেরকে যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে (তখন তো আমার অত্যন্ত রাগ হয়েছিল); কিন্তু আমি চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাঃআঃ যখন নামায সমাপ্ত করলেন—আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক, আমি তাঁর চেয়ে উত্তম শিক্ষাদাতা না আগে দেখেছি আর না এর পরে। আল্লাহর শপথ! তিনি না আমাকে তিরস্কার করলেন, আর না আমাকে মারধর করলেন, আর না আমাকে গালি দিলেন —তখন তিনি বললেন, ‘‘এই নামাযে লোকদের কোন কথা বলা বৈধ নয়। (এতে যা বলতে হয়,) তা হল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ।’’ অথবা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এই মত কোন কথা বললেন। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জাহেলিয়াতের লাগোয়া সময়ের (নও মুসলিম)। আল্লাহ ইসলাম আনয়ন করিয়াছেন। আমাদের মধ্যে কিছু লোক গণকের কাছে (অদৃষ্ট ও ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের কাছে যাবে না।’’ আমি বললাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে থাকে।’ তিনি বললেন, ‘‘এটা এমন একটি অনুভূতি যা লোকে তাদের অন্তরে উপলব্ধি করে থাকে। সুতরাং এই অনুভূতি তাদেরকে যেন (বাঞ্ছিত কর্ম সম্পাদনে) বাধা না দেয়।’’

[মুসলিম ৫৩৭, নাসাঈ ১২১৮, আবু দাঊদ ৯৩০, ৯৩১, ৩২৮২, ৩৯০৯, আহমাদ ২৩২৫০, ২৩২৫৩, ২৩২৫৬, দারেমী ১৫০২)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭০৭. ইরবায ইবনে সারিয়াহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ আমাদেরকে এমন এক মর্মস্পর্শী ভাষণ শুনালেন, যার দ্বারা আমাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে উঠল এবং চক্ষুসমূহ অশ্রু বিগলিত করতে লাগল।…. অতঃপর ইরবায রাঃআঃ বাকী হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, যা সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব পরিচ্ছেদে (১৬১ নম্বরে) পূর্ণরূপে গত হয়েছে। আর আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি যে, তিরমিজী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।

[ইবনু মাজাহ ৪২, ৪৪, তিরমিজী ২৬৭৬, আবু দাঊদ ৪৬০৭, আহমাদ ১৬৬৯২, দারেমী ৯৫)-শিষ্টাচার সম্পর্কিত হাদিস হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯২ – গাম্ভীর্য ও স্থিরতা অবলম্বন করার মাহাত্ম্য

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “পরম দয়াময়ের দাস, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে, ‘সালাম’।” (সূরা ফুরকান ৬৩ আয়াত)

৭০৮. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

‘নবী সাঃআঃকে কখনো এমন উচ্চহাস্য হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর আলজিভ দেখতে পাওয়া যেত। আসলে তিনি মুচকি হাসতেন।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৮২৯, ৩২০৬, ৬০৯২, মুসলিম ৮৯৯, তিরমিজী ৩২৫৭, আবু দাঊদ ৫০৯৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৯১, আহমাদ ২৩৮৪৮, ২৪৮১৪, ২৫৫০৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৩ -নামায, ইলম শিক্ষা তথা অন্যান্য ইবাদতে ধীর-স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের সাথে গিয়ে যোগদান করা উত্তম

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের তাক্বওয়া(সংযমশীলতা)রই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হজ্জ্ব ৩২ আয়াত)

৭০৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন নামাযের জন্য ইক্বামত (তাকবীর) দেওয়া হয় তখন তোমরা তাতে দৌড়ে আসবে না, বরং তোমরা গাম্ভীর্য-সহকারে স্বাভাবিকরূপে হেঁটে আসবে। তারপর যতটা নামায (ইমামের সাথে) পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের এক বর্ণনায় এ কথা বেশি আছে, ‘‘কারণ তোমাদের কেউ যখন নামাযের উদ্দেশ্যে যায়, সে আসলে নামাযেই থাকে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৩৬, ৯০৮, মুসলিম ৬০২, তিরমিজী ৩২৭, নাসাঈ ৮৬১, আবু দাঊদ ৫৭২, ৫৭৩, ইবনু মাজাহ ৭৭৫, আহমাদ ৭১৮৯, ৭২০৯, ৭৬০৬, ৭৭৩৫, ২৭৪৪৫, ৮৭৪০, ১০৫১২, ১৩১৪৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৫২, দারেমী ১২৮২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১০. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নবী সাঃআঃ এর সঙ্গে আরাফার দিনে (মুযদালিফা) ফিরছিলেন। এমন সময় নবী সাঃআঃ পিছন থেকে (উটকে) কঠিন ধমক ও মারধর করার এবং উটের (কষ্ট) শব্দ শুনতে পেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি তাদের দিকে আপন চাবুক দ্বারা ইশারা করে বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন কর। কেননা, দ্রুত গতিতে বাহন দৌড়ানোতে পুণ্য নেই।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৬৭১, মুসলিম ১২৮২, নাসাঈ ৩০১৮, ৩০১৯, ৩০২০, ৩০২১, আবু দাঊদ ১৯২০, আহমাদ ১৭৯৪, ১৮০১, ১৮২৪, ২০৮৩, ২১৯৪, ২২৬৪, ২৪২৩, ২৫০৩, ৩২৯৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৪ -মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে সে বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইব্রাহীম সংগোপনে তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি (ভুনা) মাংসল বাছুর নিয়ে এল। তা তাদের সামনে রাখল এবং বলল, তোমরা খাচ্ছ না কেন?” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৭ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ “আর তার সম্প্রদায় তার কাছে ছুটে এল এবং তারা পূর্ব হইতে কুকর্ম করেই আসছিল; লূত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! (তোমাদের ঘরে) আমার এই কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতম। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের ব্যাপারে লাঞ্ছিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই?” (সূরা হুদ ৭৮ আয়াত)

৭১১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিজী ১১৮৮, আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৫৭৫, দারেমী ২২২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১২. আবু শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবনে ‘আমর খুযা‘য়ী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের পারিতোষিকসহ তার সম্মান করে।’’ লোকেরা বলল, ‘তার পারিতোষিক কী? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘একদিন ও একরাত (উত্তমভাবে পানাহারের ব্যবস্থা করা)। আর সাধারণতঃ মেহমানের খাতির তিন দিন পর্যন্ত। (অতঃপর স্বেচ্ছায় তার চলে যাওয়া উচিত)। তিনদিনের অতিরিক্ত হবে মেযবানের জন্য সাদকাহস্বরূপ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট এতটা থাকা বৈধ নয়, যাতে সে তাকে গোনাহগার করে ফেলে।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাকে কিভাবে গোনাহগার করে ফেলে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এ ওর কাছে থেকে যায়, অথচ ওর এমন কিছু থাকে না, যার দ্বারা সে মেহমানের খাতির করতে পারে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিজী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবু দাঊদ ৩৭৩৮ ইবনু মাজাহ ৩৬৭২, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা মালেক ১৭২৮, দারেমী ২০৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৫ -কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

অর্থাৎ “তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার দাসদেরকে; যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তার অনুসরণ করে। ওদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান।” (সূরা যুমার ১৭-১৮ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

অর্থাৎ “তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজ দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; যেখানে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি রয়েছে।” (সূরা তাওবাহ ২১ আয়াত)

৭১৩. আবু ইব্রাহীম মতান্তরে আবু মুহাম্মাদ বা আবু মু‘আবিয়াহ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আবু আওফা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ খাদীজা রাঃআঃকে জান্নাতে (তার জন্য) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করলেন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৭৯২, ১৬০০, ৩৮১৯, ৪১৮৮, ৪২৫৫, মুসলিম ২৪৩৩, আবু দাঊদ ১৯০২, ২২৫৯, ইবনু মাজাহ ২৯৯০, আহমাদ ১৮৬২৮, ১৮৬৪৬, ১৮৬৬০, ১৮৯১৭, দারেমী ১৯২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১৪. আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নিজ বাড়িতে ওযূ করে বাইরে গেলেন। এবং তিনি (মনে মনে) বললেন যে, ‘আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সাহচর্যে থাকব।’ সুতরাং তিনি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সাহাবীগণ উত্তর দিলেন যে, ‘তিনি এই দিকে গমন করিয়াছেন।’ আবু মূসা রাঃআঃ বলেন, আমি তাঁর পশ্চাতে চলতে থাকলাম এবং তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ‘আরীস’ কুয়ার (সন্নিকটবর্তী একটি বাগানে) প্রবেশ করলেন। আমি (বাগানের) প্রবেশ দ্বারের পাশে বসে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত রসুলুল্লাহ সাঃআঃ পেশাব-পায়খানা সমাধা করে ওযূ করলেন। অতঃপর আমি উঠে তাঁর দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম, তিনি ‘আরীস’ কুয়ার পাড়ের মাঝখানে পায়ের নলা খুলে পা দুটো তাতে ঝুলিয়ে বসে আছেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আবার ফিরে এসে প্রবেশ-পথে বসে রইলাম। আর মনে মনে বললাম যে, ‘আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূলের দ্বার রক্ষক হব।’ সুতরাং আবু বকর রাঃআঃ এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘আবু বকর।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ তারপর আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর নিকট গিয়ে নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহ রসূল! উনি আবু বকর, প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। আর তার সাথে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং আমি আবু বকর রাঃআঃ-এর নিকট এসে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন।’ আবু বকর প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর ডান দিকে পায়ের নলার কাপড় তুলে পা দুখানি কুয়াতে ঝুলিয়ে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর মত বসে পড়লেন।

আমি পুনরায় দ্বার প্রান্তে ফিরে এসে বসে গেলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার ভাইকে ওযূ করা অবস্থায় ছেড়ে এসেছি; (ওযূর পরে) সে আমার পশ্চাতে আসবে। আল্লাহ যদি তার জন্য কল্যাণ চান, তাহলে তাকে (এখানে) আনবেন। হঠাৎ একটি লোক এসে দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কে?’ সে বলল, ‘উমার ইবন খাত্তাব।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ অতঃপর আমি রসূল সাঃআঃ এর কাছে এসে নিবেদন করলাম যে, ‘উনি উমার। প্রবেশ অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও এবং ওকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও।’’ সুতরাং আমি উমারের নিকট এসে বললাম, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আপনাকে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছেন এবং জান্নাতের শুভ সংবাদও জানাচ্ছেন।’ সুতরাং তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর বাম পাশে কুয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন।

আমি আবার সেখানে ফিরে এসে বসে পড়লাম। আর মনে মনে বলতে থাকলাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তাহলে অবশ্যই তাকে নিয়ে আসবেন। (ইত্যবসরে) হঠাৎ একটি লোক দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কে?’ সে বলল, ‘আমি উসমান ইবনে আফ্‌ফান।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ তারপর আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এসে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। আর জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তবে ওর জীবনে বিপর্যয় আছে।’’ আমি ফিরে এসে তাঁকে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। তবে আপনার বিপর্যয় আছে।’ সুতরাং তিনি সেখানে প্রবেশ করে দেখলেন যে, কুয়ার এক পাড় পূর্ণ হয়েছে ফলে তিনি তাঁদের সামনের অপর পাড়ে গিয়ে বসে গেলেন।

সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব বলেন যে, ‘এ ঘটনা দ্বারা আমি বুঝেছি যে, তাঁদের তিনজনের সমাধি একই স্থানে হবে। (আর উসমানের সমাধি অন্য জায়গায় হবে।)’ (বুখারী-মুসলিম)

এক বর্ণনায় এ সব শব্দাবলী বাড়তিভাবে এসেছে যে, (আবু মূসা বলেন,) ‘আমাকে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ দ্বার রক্ষার নির্দেশ দিলেন।’ আর তাতে এ কথাও আছে যে, যখন তিনি উসমান রাঃআঃ-কে সুসংবাদ (ও বিপর্যয়ের কথা) জানালেন, তখন তিনি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়লেন এবং বললেন, ‘আল্লাহুল মুস্তা‘আন।’ অর্থাৎ আল্লাহই সাহায্যস্থল।

[বুখারী-মুসলিম) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর চারিপাশে বসেছিলাম। আমাদের সাথে আবু বকর ও উমার রাঃআঃ তথা অন্যান্য সাহাবীগণও ছিলেন। ইত্যবস্থায় রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের মাঝ থেকে উঠে (বাইরে) চলে গেলেন। যখন তিনি ফিরে আসতে দেরি করে দিলেন, তখন আমাদের আশংকা হল যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি (শত্রু) কবলিত না হন। এ দুশ্চিন্তায় আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং উঠে পড়লাম। তাঁদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত আমি আনসারদের বনূ নাজ্জারের একটি বাগানে পৌঁছে তার চতুর্দিকে ঘুরতে লাগলাম, যদি কোন (প্রবেশ) দরজা পাই। কিন্তু তার কোন (প্রবেশ) দরজা পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম বাইরের একটি কুয়া থেকে সরু নালা ঐ বাগানের ভিতরে চলে গেছে। আমি সেখান দিয়ে জড়সড় হয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। (দেখলাম,) আল্লাহর রসূল সাঃআঃ সেখানে উপস্থিত। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘আবু হুরাইরা?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘কী ব্যাপার তোমার?’’ আমি বললাম, ‘আপনি আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অকস্মাৎ উঠে বাইরে এলেন। তারপর আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা এই দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে হয়তো আপনি (শত্রু) কবলিত হয়ে পড়বেন। যার ফলে আমরা সকলে ঘাবড়ে উঠলাম। সর্বপ্রথম আমিই বিচলিত হয়ে উঠে এই বাগানে এসে জড়সড় হয়ে শিয়ালের মত ঢুকে পড়লাম। আর সব লোক আমার পিছনে আসছে।’ তিনি আমাকে সম্বোধন করে তাঁর জুতা জোড়া দিয়ে বললেন, ‘‘আবু হুরাইরা! আমার এ জুতো জোড়া সঙ্গে নিয়ে যাও এবং এ বাগানের বাইরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পাঠকারী যে কোন ব্যক্তির সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।’’

অতঃপর সুদীর্ঘ হাদীস তিনি বর্ণনা করিয়াছেন। (মুসলিম ৩১, ২৪০৮, আহমাদ ১৮৭৮০, ১৮৮৪৬, দারেমী ৩৩১৬)

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১৬. ইবনে শিমাসাহ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘আমর ইবনে ‘আস রাঃআঃ-এর মরণোন্মুখ সময়ে আমরা তাঁর নিকটে উপস্থিত হলাম। তিনি অনেক ক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকলেন এবং দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরূপ অবস্থা দেখে তাঁর এক ছেলে বলল, ‘আব্বাজান! আপনাকে কি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি? আপনাকে কি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি?’ এ কথা শুনে তিনি তাঁর চেহারা সামনের দিকে করে বললেন, আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃআঃ আল্লাহর রসূল। আমি তিনটি স্তর অতিক্রম করেছি। (এক) আমার চেয়ে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর প্রতি বড় বিদ্বেষী আর কেউ ছিল না। তাঁকে হত্যা করার ক্ষমতা অর্জন করাই ছিল আমার তৎকালীন সর্বাধিক প্রিয় বাসনা। যদি (দুর্ভাগ্যক্রমে) তখন মারা যেতাম, তাহলে নিঃসন্দেহে আমি জাহান্নামী হতাম।

[দুই) তারপর যখন আল্লাহ তা‘আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রক্ষিপ্ত করলেন, তখন নবী সাঃআঃ এর নিকট হাযির হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার হাতে বায়‘আত করতে চাই।’ বস্তুত তিনি ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তিনি বললেন, ‘‘আম্‌র! কী ব্যাপার?’’ আমি নিবেদন করলাম, ‘একটি শর্ত আরোপ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘‘শর্তটি কী?’’ আমি বললাম, ‘আমাকে ক্ষমা করা হোক—শুধু এতটুকুই।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়, হিজরত পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে এবং হজ্জ্বও পূর্বের পাপসমূহ ধ্বংস করে দেয়?’’

তখন থেকে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ অপেক্ষা অধিক প্রিয় মানুষ আর কেউ নেই। আর আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে সম্মানীয় ব্যক্তি আর কেউ নেই। তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার অবস্থা এরূপ ছিল যে, তাঁর দিকে নয়নভরে তাকাতে পারতাম না। যার ফলে আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, ‘আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর গঠনাকৃতি কিরূপ ছিল?’ তাহলে আমি তা বলতে পারব না। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আশা ছিল যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

[তিন) তারপর বহু দায়িত্বপূর্ণ বিষয়াদির খপ্পরে পড়লাম। জানি না, তাতে আমার অবস্থা কী? সুতরাং আমি মারা গেলে কোন মাতমকারিণী অথবা আগুন যেন অবশ্যই আমার (জানাযার) সাথে না থাকে। তারপর যখন আমাকে দাফন করিবে, তখন যেন তোমরা আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি দেবে। অতঃপর একটি উট যবেহ করে তার মাংস বণ্টন করার সময় পরিমাণ আমার কবরের পাশে অপেক্ষা করিবে। যাতে আমি তোমাদের সাহায্যে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারি এবং আমার প্রভুর প্রেরিত ফিরিশ্‌তাদের সঙ্গে কিরূপ বাক্-বিনিময় করি, তা দেখে নিই।

[মুসলিম ১২১, আহমাদ ১৭৩২৬, ১৭৩৫৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৬ – সফরকারীকে উপদেশ দেওয়া, বিদায় দেওয়ার দো‘আ পড়া ও তার কাছে নেক দো‘আর নিবেদন ইত্যাদি

৭১৭. আবু সুলায়মান মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এসে বিশ দিন অবস্থান করলাম। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপরবশ ছিলেন। তাই তিনি ধারণা করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছি। সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারে কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালে তিনি বললেন, ‘‘তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর। তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করিবে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৮, ৬৩০, ৬৩১, ৬৫৮, ৬৭৭, ৬৮৫, ৮০২, ৮১৯, ৮২৩, ৮২৪, ২৮৪৮, ৬০০৮, ৭২৪৬, মুসলিম ৬৭৪, তিরমিজী ২০৫, ২৮৭, নাসাঈ ৬৩৪, ৬৩৫, ৬৬৯, ৭৮১, ১০৮৫, ১১৫১, ১১৫২, ১১৫৩, আবু দাঊদ ৫৮৯, ৮৪২, ৮৪৩, ৮৪৪, ইবনু মাজাহ ৯৭৯, আহমাদ ১৫১৭১, ২০০০৬, দারেমী ১২৫৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭১৮. উমার ইবনুল খাত্তাব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর কাছে উমরাহ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেনঃ প্রিয় ভাই আমার, তোমার দো‘আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না। এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে সমস্ত পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক হিসাবে (গণ্য) নয়। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেনঃ ভাইয়া! তুমি আমাদেরকেও তোমার দো‘আয় শরীক রেখো। (আবু দাউদ ও তিরমিযি) যঈফ।

[এটিকে আবু দাঊদ (১৪৯৮) ও তিরমিজী (৩৫৬২) ও (ইবনু মাজাহ ২৮৯৪) বর্ণনা করিয়াছেন আর তিরমিজী বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ্। এ সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন ‘‘মিশকাত’’ নং (২২৪৮) ও ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ নং (২৬৪)। হাদীসটি দুর্বল হওয়ার কারণ এই যে, বর্ণনাকারী আসেম ইবনু ওবাইদুল্লাহ্ দুর্বল। তাকে ইবনু আদী, ইবনু হাজার আসকালানী প্রমুখ দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন।) হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

৭১৯. সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবনে উমার হইতে বর্ণিতঃ

সফরকারীকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ বলতেন, আমার নিকটবর্তী হও, তোমাকে ঠিক সেইভাবে বিদায় দেব, যেভাবে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে বিদায় দিতেন। সুতরাং তিনি বলতেন,

 أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ، وَأمَانَتَكَ، وَخَواتِيمَ عَمَلِكَ

আস্তাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা অআমা-নাতাকা অখাওয়াতীমা ‘আমালিক।’ অর্থাৎ তোমার দ্বীন, তোমার সততা এবং তোমার কাজের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম।

[তিরমিজী হাসান সহীহ)(তিরমিজী ৩৪৪৩, ৩৪৪২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৭২০. সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে য়্যাযীদ খাত্বমী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ যখন কোন সেনাবাহিনীকে বিদায় জানাতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন, ‘আস্তাওদি‘উল্লাহা দ্বীনাকুম অআমানাতাকুম অখাওয়াতীমা আ‘মালিকুম। অর্থাৎ তোমাদের দ্বীন, তোমাদের সততা এবং তোমাদের কর্মসমূহের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম।

[সহীহ হাদীস, আবু দাঊদ ও অন্যান্য বিশুদ্ধ সূত্রে)(আবু দাঊদ ২৬০১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে নিবেদন জানাল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি সফরে যাব, সুতরাং আমাকে পাথেয় দিন।’ তিনি উত্তরে এই দো‘আ দিলেন, ‘যাউওয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে সংযমশীলতার পাথেয় দান করুন। লোকটি পুনরায় বলল, ‘আমাকে আরো পাথেয় দিন।’ তিনি দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘অগাফারা যামবাকা।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করুন। লোকটি আবার নিবেদন করল, ‘আমাকে আরো দিন।’ তিনি পুনরায় দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘অয়্যাস্‌সারা লাকাল খাইরা হাইসুমা কুন্ত্।’ অর্থাৎ তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহ যেন তোমার জন্য কল্যাণ সহজ করে দেন।

[তিরমিজী ৩৪৪৪, দারেমী ২৬৭১) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৭ -ইস্তেখারা (মঙ্গল জ্ঞান লাভ করা) ও পরামর্শ করা প্রসঙ্গে

মহান আল্লাহ বলেছেন,

[আরবী)

অর্থাৎ “কাজে-কর্মে তুমি তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেছেন,

[আরবী)

অর্থাৎ “তারা আপোসে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” (সূরা শূরা ৩৮ আয়াত)

৭২২. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তেখারা শিখাতেন। যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। (আর) বলতেন, ‘যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন দু’ রাকআত নামায পড়ে এই দো‘আ বলেঃ-

‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্বদিরুকা বি ক্বুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্‌বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্বদিরু অলা আক্বদিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা (এখানে যে কাজের জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে উল্লেখ করিবে) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-ক্বিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্বদুরহু লী, অয়্যাস্‌সিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শার্রুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-ক্বিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা আরযিবনী বিহ।’’

অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই (এখানে যে কাজের জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে উল্লেখ করিবে) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।

তিনি বলেন, ‘‘সে এ সময়ে তার প্রয়োজনের বিষয়টি উল্লেখ করিবে।’’ (অর্থাৎ দো‘আ কালীন সময়ে ‘আন্না হা-যাল আম্রা’ এর জায়গায় প্রয়োজনীয় বিষয়টি উল্লেখ করিবে।)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১১৬৬, ৬৩৮২, ৭৩৯০, তিরমিজী ৪৮০, নাসাঈ ৩২৫৩, আবু দাঊদ ১৫৩৮, ইবনু মাজাহ ১৩৮৩, আহমাদ ১৪২৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৮ -ঈদের নামায পড়তে, রোগী দেখতে, হজ্জ, জিহাদ বা জানাযা ইত্যাদিতে যেতে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে ফিরে আসা মুস্তাহাব; যাতে ইবাদতের জায়গা বেশী হয়

৭২৩. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ ঈদের দিনে রাস্তা পরিবর্তন করতেন।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৯৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২৪. আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (মদীনা থেকে বাইরে গমনকালে) শাজারা নামক জায়গার রাস্তা ধরে বের হইতেন এবং ফিরার সময় (যুল হুলাইফার) মুআর্রাস মসজিদের পথ ধরে (মদীনায়) প্রবেশ করতেন। অনুরূপ যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন আস্-সানিয়াতুল উল্ইয়ার পথ হয়ে। আর যখন বের হইতেন তখন আস্-সানিয়াতুস সুফলার পথ হয়ে।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৬৬, ৪৮৩, ৪৯২, ১৫১৪, ১৫৩২, ১৫৩৩, ১৫৩৬, ১৫৫৩, ১৫৫৪, ১৫৭৩, ১৫৭৪, ১৬০৬, ১৬০৯, ১৬১১, ১৭৬৭, ১৭৯৯ , ২৩৩৬, ২৮৬৫, ৫৮৫১, ৭৩৫৪, মুসলিম ১১৬৭, ১২৫৭, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬৮, নাসাঈ ১১৭, ২৬৬০, ২৬৬১, ২৮৬২, ২৯৫২, আবু দাঊদ ১৭৭২, ৪০৬৪, আহমাদ ৪৪৪৮, ৪৬০৪, ৪৮৭২, ৪৯৬৩, ৫১৭৯, ৫২১৬ , ৫৫৬৯, ৫৮৫৮, ৬১৯৬, ৬৪২৭, মুওয়াত্তা মালেক ৭৪২, ৯২৩, দারেমী ১৮৩৮, ১৯২৭, ১৯২৮)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৯৯ -সম্মান প্রদর্শনের স্থানে ডানকে অগ্রাধিকার দেওয়া মুস্তাহাব হওয়া (ডান-বাম ব্যবহারবিধি)

সমস্ত ভাল ও সম্মানজনক কাজকর্মে ডান হাত ব্যবহার করা বা ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম; যথাঃ ওযূ, গোসল, তায়াম্মুম, পোশাক পরা, জুতা, মোজা, পায়জামা পরা, মসজিদে প্রবেশ করা, দাঁতন করা, সুরমা লাগানো, নখকাটা, গোঁফ কাটা, বগলের লোম তোলা, চুল কামানো, নামায থেকে সালাম ফেরা, পানাহার করা, মুসাফাহ করা, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, পায়খানা থেকে বের হওয়া, কোন জিনিস লেন-দেন করা ইত্যাদি। আর উক্ত কার্যাদির বিপরীত অন্যান্য কর্মসমূহে বাম হাত ব্যবহার বা বাম দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। যেমন নাকঝাড়া, থুতু ফেলা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, পোশাক, জুতা, মোজা, পায়জামা ইত্যাদি খোলা, পেশাব-পায়খানার পর ইস্তিঞ্জা (পানি বা ঢিল ব্যবহার) করা, ঘৃণিত কিছু স্পর্শ করা ইত্যাদি।

মহান আল্লাহ বলেছেন,

[আরবী)

অর্থাৎ “সুতরাং যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, এই নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ; আমার পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে, আমাকে আমার হিসাবের সম্মুখীন হইতে হবে।সুতরাং সে এক সন্তোষজনক জীবন লাভ করিবে; সুউচ্চ জান্নাতে। যার ফলরাশি ঝুলে থাকবে নাগালের মধ্যে। (তাদেরকে বলা হবে) পানাহার কর তৃপ্তির সাথে, তোমার অতীত দিনে যা করেছিল তার বিনিময়। কিন্তু যার আমলনামা তার বাম হাতে দেওয়া হবে, সে বলবে, হায়! আমাকে যাদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা। এবং আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমাকে যদি দেওয়াই না হত আমার আমলনামা। এবং আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব। হায়! আমার মৃত্যুই যদি আমার শেষ হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন কাজেই আসল না। আমার ক্ষমতাও অপসৃত হয়েছে। ”(সূরা হা-ক্কাহ ১৯ আয়াত)

তিনি বলেছেন,

[আরবী)

অর্থাৎ “ডানওয়ালারা; কত ভাগ্যবান ডানওয়ালারা! আর বামওয়ালারা; কত হতভাগ্য বামওয়ালারা!” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৮-৯ আয়াত)

৭২৫. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সমস্ত কাজে (যেমন) ওযূ করা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরা (প্রভৃতি সমস্ত ভাল) কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন।

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৬৮, ৪২৬, ৫৩৮০, ৫৮৫৪, ৫৯২৬, মুসলিম ২৬৮, তিরমিজী ৬০৮, ৪২১, নাসাঈ ৫২৪০, আবু দাঊদ ৪১৪০, ইবনু মাজাহ ৪০১ , আহমাদ ২৪১০৬, ২৪৪৬৯, ২৪৬২০, ২৪৭৯৩ ২৪৮৪৫ , ২৫০১৮, ২৫১৩৬, ২৫৭৫১)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২৬. উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর ডান হাত তাঁর ওযূ ও আহারের জন্য ব্যবহার হত এবং বাম হাত তাঁর পেশাব-পায়খানা ও নোংরা স্পর্শ করার সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হত।’ (হাদীসটি বিশুদ্ধ, আবু দাঊদ প্রভৃতি বিশুদ্ধ সূত্রে)

[আবু দাঊদ ৩৩, আহমাদ ২৪৭৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২৭. উম্মে আত্বিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ স্বীয় কন্যা যায়নাবের (লাশ) গোসল দেওয়ার সময় তাদের (মহিলাদেরকে) আদেশ করলেন যে, ‘‘তোমরা ওর ডান দিক থেকে ও ওযূর অঙ্গসমূহ থেকে গোসল আর‎‎ম্ভ কর।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৫৫, ১৬৭, ১২৫৩, ১২৫৪, ১২৫৬ , ১২৫৭, ১২৫৯, ১২৬০, ১২৬১, ১২৬২, ১২৬৩, মুসলিম ৯৩৯, তিরমিজী ৯৯০, নাসাঈ ১৮৮৪, ২২৮৩, আবু দাঊদ ৩১৪৫, ইবনু মাজাহ ১৪৫৯, আহমাদ ২৬৭৫২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কেউ যখন জুতা পরবে, তখন সে যেন ডান পা দিয়ে শুরু করে। আর যখন খুলবে, তখন সে যেন বাম পা দিয়ে শুরু করে। ডান পায়ের জুতা যেন আগে পরা হয় এবং পরে খোলা হয়।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৮৫৬, মুসলিম ২০৯৭, তিরমিজী ১৭৭৯, আবু দাঊদ ৪১৩৯, ইবনু মাজাহ ৩৬১৬, আহমাদ ৭১৩৯, ৭৩০২, ৭৭৫৩, ৯০৫১, ৯২৭৩, ৯৬৭৭, ৯৮৩৩, ১০০৮০, মুওয়াত্তা মালেক ১৭০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭২৯. হাফসাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ পানাহার ও কাপড় পরার ক্ষেত্রে স্বীয় ডান হাত কাজে লাগাতেন এবং তাছাড়া অন্যান্য (নোংরা স্পর্শ ইত্যাদি) কাজে বাম হাত লাগাতেন।’

[আবু দাঊদ ৩২, আহমাদ ২৫৯২০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭৩০. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা কাপড় পরিধান করার সময় ও ওযূ করার সময় তোমাদের ডান দিক থেকে আর‎ম্ভ কর।’’

[আবু দাঊদ তিরমিজী, সহীহ সূত্রে) (আবু দাঊদ ৪১৪১, ইবনু মাজাহ ৪০২, আহমাদ ৪৮৩৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৭৩১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মিনায় আগমন করলেন। তারপর জামরায় এসে কাঁকর মারলেন। তারপর পুনরায় মিনায় নিজ ডেরায় ফিরে গেলেন এবং কুরবানীর পশু যবেহ করলেন। তারপর নাপিতকে নিজ মাথার ডান দিকে ইশারা করে বললেন, ‘‘নাও।’’ তারপর বামদিকে (ইশারা করে মাথা নেড়া করলেন)। তারপর মাথার চুল জনগণের মাঝে বিতরণ করতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় আছে, যখন তিনি জামরায় কাঁকর মারলেন এবং কুরবানী পশু নহর (যবেহ) করলেন এবং মাথা মুন্ডন করলেন, সেই সময় তিনি নাপিতকে মাথার ডান দিকটা বাড়িয়ে দিলেন। সে সেদিকটি মুন্ডন করল। তারপর তিনি আবু ত্বালহা আনসারী রাঃআঃ-কে ডেকে (চুলগুলি) তাকে দিলেন। অতঃপর বাম পার্শ্ব নাপিতকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘মুন্ডন কর।’’ সুতরাং সে সেদিকটা মুন্ডন করে দিল। অতঃপর তিনি আবু ত্বালহাকে চুলগুলি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘‘জনগণের মাঝে ওগুলি বণ্টন করে দাও।’’

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মিনায় আগমন করলেন। তারপর জামরায় এসে কাঁকর মারলেন। তারপর পুনরায় মিনায় নিজ ডেরায় ফিরে গেলেন এবং কুরবানীর পশু যবেহ করলেন। তারপর নাপিতকে নিজ মাথার ডান দিকে ইশারা করে বললেন, ‘‘নাও।’’ তারপর বামদিকে (ইশারা করে মাথা নেড়া করলেন)। তারপর মাথার চুল জনগণের মাঝে বিতরণ করতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় আছে, যখন তিনি জামরায় কাঁকর মারলেন এবং কুরবানী পশু নহর (যবেহ) করলেন এবং মাথা মুন্ডন করলেন, সেই সময় তিনি নাপিতকে মাথার ডান দিকটা বাড়িয়ে দিলেন। সে সেদিকটি মুন্ডন করল। তারপর তিনি আবু ত্বালহা আনসারী রাঃআঃ-কে ডেকে (চুলগুলি) তাকে দিলেন। অতঃপর বাম পার্শ্ব নাপিতকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘মুন্ডন কর।’’ সুতরাং সে সেদিকটা মুন্ডন করে দিল। অতঃপর তিনি আবু ত্বালহাকে চুলগুলি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘‘জনগণের মাঝে ওগুলি বণ্টন করে দাও।’’

হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

Comments

Leave a Reply