রাত্রিকালীণ সলাতে দুআ ক্বিয়াম ও ক্বিরাআত
রাত্রিকালীণ সলাতে দুআ ক্বিয়াম ও ক্বিরাআত >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২২. অধ্যায়ঃ ঐ নামাজ সর্বোত্তম যাতে ক্বিরাআত লম্বা করা হয়
২৩. অধ্যায়ঃ রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময় দুআ কবূল হয়
২৪.অধ্যায়ঃ শেষ রাতে যিক্র ও প্রার্থনা করা এবং দুআ কবূল হওয়ার আলোচনা
২৫. অধ্যায়ঃ রমাযানে তারাবীহ নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে উৎসাহ প্রদান করা
২৬. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালীণ সলাতে দুআ ও ক্বিয়াম
২৭. অধ্যায়ঃ রাতের সালাতে ক্বিরাআত দীর্ঘ করা মুস্তাহাব
২২. অধ্যায়ঃ ঐ নামাজ সর্বোত্তম যাতে ক্বিরাআত লম্বা করা হয়
১৬৫৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে সলাতে দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়া হয় সে নামাজই সর্বোত্তম নামাজ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৩৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৪৫]
১৬৫৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : কোন্ নামাজ সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন : দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে যে নামাজ আদায় করা হয় সে নামাজ সবচেয়ে উত্তম। আবু বাক্র ইবনি আবু শায়বাহ্ বলেছেন যে, হাদীসটি আবু মুআবিয়াহ্ আমাশের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৪৬]
২৩. অধ্যায়ঃ রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময় দুআ কবূল হয়
১৬৫৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি : সারা রাতের মধ্যে এমন একটি বিশেষ সময় আছে যে সময়ে কোন মুসলিম আল্লাহর কাছে দুন্ইয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। আর ঐ বিশেষ সময়টি প্রত্যেক রাতেই থাকে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৪৭]
১৬৫৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাতের মধ্যে একটি বিশেষ সময় আছে, সে সময় কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ প্রার্থনা করে তাহলে তিনি তাকে তা দান করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৪৮]
২৪.অধ্যায়ঃ শেষ রাতে যিক্র ও প্রার্থনা করা এবং দুআ কবূল হওয়ার আলোচনা
১৬৫৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ থাকে তখন আমাদের প্রতিপালক মহান ও কল্যাণময় আল্লাহ দুন্ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলিতে থাকেন : কে এমন আছ, যে এখন আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। এখন কে এমন আছ যে, আমার কাছে প্রার্থনা করিবে, আমি তাকে দান করব। আর কে এমন আছ, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৪৯]
১৬৫৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক রাতে যখন রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয় তখন আল্লাহ তাআলা দুন্ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলিতে থাকেন-আমিই একমাত্র বাদশাহ্! কে এমন আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে এমন আছ আমার কাছে প্রার্থনা করিবে, আমি তাকে দান করব। কে এমন আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব, ফাজ্রের আলো ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এরূপ বলিতে থাকেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫০]
১৬৫৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাতের অর্ধেক অথবা দু তৃতীয়াংশ অতিক্রম হলে মহান ও বারাকাতময় আল্লাহ দুন্ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলিতে থাকেন : কোন প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে দেয়া হইবে? কোন আহ্বানকারী আছে কি যার আহ্বানে সাড়া দেয়া হইবে? কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হইবে? আল্লাহ তাআলা ভোর প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এরূপ বলিতে থাকেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫১]
১৬৬০. ইবনি মারজানাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাতের অর্ধেকের সময় অথবা শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে মহান আল্লাহ দুন্ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলিতে থাকেন : কে আছে আহ্বানকারী? [আহ্বান কর] আমি তার আহবানে সাড়া দান করব। কে আছে প্রার্থনাকারী? [প্রার্থনা কর] আমি দান করব। এরপর আল্লাহ তাআলা বলিতে থাকেন : এমন সত্তাকে কে কর্জ দিবে যিনি কখনো ফকির বা দরিদ্র হইবেন না বা যুল্ম করিতে পারেন না? {৩২} ঈমাম মুসলিম বলেছেনঃ ইবনি মারজানাহ্ হলেন সাঈদ ইবনি আবদুল্লাহ। মারজানাহ্ তার মায়ের নাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫২]
{৩২} কর্জ বলিতে সদাক্বাহ, নামাজ , সওম, যিকর এবং আল্লাহ তাআলার অন্যান্য আনুগত্যমূলক কাজসমূহ বুঝানো হয়েছে। এ সবের নাম মহান আল্লাহ কর্জ বলে অভিহিত করিয়াছেন, আপন বান্দাদের প্রতি স্নেহ প্রকাশার্থে এবং উৎসাহ দানের জন্য যেন তারা আনুগত্যমূলক কাজসমূহ চালিয়ে যায়; কেননা প্রীতি ও প্রেমের সম্পর্ক থাকলেই কর্জ দান করা হয়। এক্ষেত্রে বান্দা নিশ্চিতরূপেই নিজ প্রদেয় কর্জ ফিরে পাবে বিধায় যেন সন্তষ্টিচিত্তে আমাল চালিয়ে যায়। [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খন্ড ২৫৮ পৃষ্ঠা]
১৬৬১. সাদ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সাদ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এই একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এতে তিনি অতিরিক্ত এতটুকু বর্ণনা করিয়াছেন যে, অতঃপর মহান ও বারাকাতময় আল্লাহ নিজের দুহাত প্রসারিত করে বলেনঃ যিনি কখনো দরিদ্র হইবেন না, কিংবা যুলম করেন না এমন সত্তাকে ঋন দেয়ার জন্য কে আছ?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৩]
১৬৬২. আবু সাঈদ আল খুদরী ও আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা অবকাশ দেন বা দেরী করেন না। এভাবে যখন রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায় তখন তিনি দুন্ইয়ার আকাশে নেমে এসে বলিতে থাকেন : কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি [যে ক্ষমা প্রার্থনা করিবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব]? কোন তাওবাহ্কারী আছে কি [যে তাওবাহ্ করিবে আর আমি তার তাওবাহ্ ক্ববুল করব]? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি [যে প্রার্থনা করিবে আর আমি তার প্রার্থনা ক্ববূল করব]? কোন আহ্বানকারী আছে কি[আমি যার আহ্বানে দিব]? এভাবে ফাজ্রের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি বলিতে থাকেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৭,ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৪]
১৬৬৩. শুবাহ্-এর মাধ্যমে আবু ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও বেশী স্পষ্ট।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৫]
২৫. অধ্যায়ঃ রমাযানে তারাবীহ নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে উৎসাহ প্রদান করা
১৬৬৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৪৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৬]
১৬৬৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দৃঢ় বা কঠোরভাবে নির্দেশ না দিয়ে রমাযান মাসের তারাবীহ পড়তে উৎসাহিত করে বলিতেন: যে ব্যক্তি ঈমানসহ ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে রমাযান মাসের তারাবীহ পড়ল তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মৃত্যুবরণ করিলেন। তখনও এ অবস্থা চলছিল [অর্থাৎ মানুষকে তারাবীহ পড়তে নির্দেশ না দিয়ে শুধু উৎসাহিত করা হত]। আবু বকর [রাদি.] এর খিলাফতকালে এবং উমর [রাদি.] এর খিলাফতের প্রথম দিকেও এ নীতি কার্যকর ছিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৭]
১৬৬৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমান ও একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে সিয়াম পালন করিবে তার পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হইবে। আর যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতে ঈমানসহ ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে নামাজ আদায় করিবে তারও পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৮]
১৬৬৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতে জাগরণ করিতে গিয়ে তা পেয়ে গেল, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হইবে। [রাবী বলেন] আমার মনে হয় তিনি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় কথাটি বলেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৫৯]
১৬৬৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর সাথে কিছু সংখ্যক লোকও নামাজ আদায় করিল। পরের রাতেও তিনি মাসজিদে নামাজ আদায় করিলেন। লোকজন সংখ্যায় অনেক বেশী হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও অনেক লোক এসে একত্র হল। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আর তাদের সাথে যোগ দিলেন না। সকাল বেলা তিনি সবাইকে বললেনঃ [গত রাতে] তোমরা যা করেছ তা আমি দেখেছি। তবে শুধু এ আশঙ্কায় আমি তোমাদের সাথে যোগদান করিনি যে, তোমাদের ওপর তা ফরয করে দেয়া হইতে পারে। তিনি [আয়েশাহ] বলেছেনঃ ঘটনাটি রমাযান মাসে সংঘটিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬০]
১৬৬৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বাড়ী থেকে মাসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করিলেন, অনেক লোকও তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করিল। পরদিন লোকজন এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করিল। সুতরাং ঐ দিন রাতে আরো বেশী লোক [মাসজিদে] একত্রিত হল। ঐ দ্বিতীয় রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে তাদের মাঝে উপস্থিত হলেন। সবাই তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করিল। পরদিনও লোকজন এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করিল। সুতরাং তৃতীয় রাতে লোকের সংখ্যা আরো বেড়ে গেল। রাতেও তিনি [সাঃআঃ] মাসজিদে তাদের মাঝে গেলেন। লোকজন তাহাঁর সাথে নামাজ আদায় করিল। কিন্তু চতুর্থ রাতে লোক সংখ্যা এত বেশী হল যে, মাসজিদে জায়গা সংকুলান হল না। কিন্তু রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে আসলেন না। তাঁদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক নামাজ বলে ডাকতে শুরু করিল। কিন্তু তিনি ঐ রাতে আর বের হলেন না। বরং ফাজ্রের ওয়াক্তে বের হলেন। ফাজ্রের নামাজ শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ঘুরলেন, তাশাহ্হুদ পড়লেন, তারপর “আম্মাবাদ” বলে শুরু করিলেন। তিনি বললেনঃ গতরাতে তোমাদের ব্যাপারটা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, রাতের এ নামাজটি তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হইতে পারে। আর তোমরা তা পালন করিতে অক্ষম হয়ে পড়বে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬১]
১৬৭০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে নামাজ আদায় করিবে সে ক্বদরের রাত প্রাপ্ত হইবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনি ক্বাব বললেনঃ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই সে মহান আল্লাহর ক্বসম! নিশ্চিতভাবে লায়লাতুল ক্বদর রমাযান মাসে। এ কথা বলিতে তিনি ক্বসম করিলেন কিন্তু ইন-শা-আল্লাহ বলিলেন না [অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝলেন যে, রমাযান মাসের মধ্যেই লায়লাতুল ক্বদর আছে]। এরপর তিনি [সাঃআঃ] আবার বললেনঃ আল্লাহর কসম! কোন্ রাতটি ক্বদ্রের রাত তাও আমি জানি। সেটি হল এ রাত, যে রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কে নামাজ আদায় করিতে আদেশ করিয়াছেন। সাতাশ রমাযান তারিখের সকালের পূর্বের রাতটিই সে রাত। আর ঐ রাতের আলামাত বা লক্ষন হল-সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হইবে তা উজ্জ্বল হইবে কিন্তু সে সময় [উদয়ের সময়] তার কোন তীব্র আলোকরশ্মি থাকিবে না [অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হইবে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬২]
১৬৭১. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি লাইলাতুল ক্বদ্র বা ক্বদ্রের রাত সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর ক্বসম! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি এবং এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে, যে রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নামাজ আদায় করিতে আদেশ করিয়াছেন সেটিই অর্থাৎ সাতাশ তারিখের রাতই ক্বদ্রের রাত। হাদীসটির ঐ অংশ সম্পর্কে যে রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে নামাজ আদায় করিতে আদেশ করিয়াছেন।
শুবাহ্ সন্দেহ পোষন করিয়াছেন। বর্ণনাকারী শুবাহ্ বলেছেনঃ আমার এক বন্ধু [আবদাহ্ ইবনি আবু লুবাবাহ্ ] তার থেকে আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৩]
১৬৭২. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুবাহ্ এ বর্ণনাতে সন্দেহ পোষন করিয়াছেন এবং এর পরের কথাগুলো উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৪]
২৬. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালীণ সলাতে দুআ ও ক্বিয়াম
১৬৭৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মায়মূনাহ্-এর {রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীর} ঘরে কাটালাম। [আমি দেখলাম] নবী [সাঃআঃ] রাতের বেলা উঠলেন এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে মুখমন্ডল এবং দুহাত ধুলেন। এরপর তিনি [সাঃআঃ] ঘুমালেন। পরে পুনরায় উঠে মশকের পাশে গেলেন এবং এর বন্ধন খুলে ওযূ করিলেন। ওযূতে তিনি [সাঃআঃ] মধ্যমপন্থা অবলম্বন করিলেন [অর্থাৎ ওযূ করিতে খুব যত্নও নিলেন না আবার একেবারে খুব হালকাভাবেও ওযূ করিলেন না]। তিনি [সাঃআঃ] বেশী পানি ব্যবহার করিলেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ ওযূ করিলেন। তারপর দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিলেন। আমি সে সময় উঠলাম এবং তাহাঁর কাজকর্ম দেখার জন্য জেগে ছিলাম বা সতর্কভাবে তা লক্ষ্য করছিলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এটা যেন না ভেবে বসেন তাই আড়মোড়া ভাঙ্গলাম। এবার আমি ওযূ করলাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালেন, অতঃপর আমিও তাহাঁর বা পাশে দাঁড়ালাম। তিনি [সাঃআঃ] আমাকে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে এনে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এভাবে রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] এর রাতের নামাজ তের রাকআত শেষ হল। এরপর তিনি [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি [ঘুমের মধ্যে তাহাঁর] নাক ডাকতে শুরু করিল। তিনি [সাঃআঃ] স্বভাবতঃ যখনই ঘুমাতেন তখন নাক ডাকত। পরে বিলাল [রাদি.] তাঁকে নামাজের কথা বলে গেলেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ يَسَارِي نُورًا وَفَوْقِي نُورًا وَتَحْتِي نُورًا وَأَمَامِي نُورًا وَخَلْفِي نُورًا وَعَظِّمْ لِي نُورًا
আল্ল-হুমাজ্আল ফী ক্বল্বী নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাওঁ, ওয়া ফী সামঈ নূরাওঁ ওয়া আই ইয়ামীনী নূরাওঁ, ওয়া আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ, ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ, ওয়া তাহতী নূরাওঁ, ওয়া আমা-মী নূরাওঁ, ওয়া খল্ফী নূরাওঁ, ওয়া আযযিম্লী নূরা”-[অর্থাৎ হে আল্লাহ ! তুমি আমার হৃদয়ে আলো দান কর, আমার চোখে আলো দান কর, আমার কানে বা শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর। আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছনে আলো দান কর এবং আমার আলোকে বিশাল করে দাও।] বর্ণনাকারী কুরায়ব বলেছেনঃ তিনি এরূপ আরো সাতটি কথা বলেছিলেন যা আমি ভূলে গিয়েছি। হাদীসের বর্ণনাকারী সালামাহ্ ইবনি কুহায়ল বলেনঃ এরপর আমি আব্বাস [রাদি.] এর এক পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি ঐগুলো [অবশিষ্ট সাতটি] আমার কাছে বর্ণনা করিলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করিলেন : আমার স্নায়ুতন্ত্রীসমূহে, আমার শরীরের গোশতে , আমার রক্তে, আমার চুলে এবং আমার গাত্রচর্মে আলো দান কর। এছাড়াও তিনি আরো দুটি বিষয় উল্লেখ করে বললেনঃ এ দুটিতে তিনি আলো চেয়েছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৮,ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৫]
১৬৭৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একদিন উম্মুল মুমিনীন মায়মুনাহ্ [রাদি.] এর ঘরে রাত কাটালেন। মায়মূনাহ্ [রাদি.] তাহাঁর খালা। তিনি বলেছেন, আমি বিছানাতে আড়াআড়িভাবে শুলাম। এরপরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন। রাতের অর্ধেকের কিছু পূর্বে অথবা অর্ধেকের কিছু পর তিনি জেগে উঠলেন এবং মুখমন্ডলের উপর হাত রগড়িয়ে ঘুমের আলস্য দূর করিতে থাকলেন। এরপর সুরা আ-লি ইমরান এর শেষ দশটি আয়াত পাঠ করিলেন এবং [ঘরে] ঝুলানো একটি মশকের পাশে গিয়ে উত্তমরূপে ওযূ করিলেন। অতঃপর তিনি উঠে নামাজ আদায় করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণনা করিয়াছেন : তখন আমিও উঠে দাঁড়ালাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা যা করেছিলেন আমিও তাই করলাম। তারপর তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন আর আমার ডান কান ধরে মোচড়াতে থাকলেন।{৩৩} তিনি [সাঃআঃ] দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তারপর আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। পরে আরো দু রাকআত, এরপর আরো দু রাকআত এবং পরে আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। আর সর্বশেষে বিত্র পড়লেন।{৩৪} তারপর শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়ায্যিন এসে নামাজ সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি [সাঃআঃ] উঠে সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং তারপর বাড়ী থেকে [মাসজিদে] গিয়ে ফাজ্রের নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৬]
{৩৩} নবী [সাঃআঃ] ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কান মলেছিলেন তার তন্দ্রা দূর করার জন্য কিংবা মামুর বা মুক্তাদী হিসেবে ডান পাশে দাঁড় করানোর জন্য। [মুসলিম শরহে নাবাবী- ১ম ২৬০ পৃষ্ঠা]
{৩৪} এ হাদীসের বর্ণনানুযায়ী রাতের নামাজ বিত্রসহ তের রাকআত আদায় করা যায়। পাঁচ সালামে দশ রাকআত, অতঃপর বিতরের নিয়্যাত করে দু রাকআত আদায় করে সালাম ফিরাবে। আর এগার রাকআত আদায় করলে পাঁচ সালামে দশ রাকআত পড়ে এক রাকআত বিত্র অথবা চার সালামে আট রাকআত আর তিন রাকআত বিত্র এক সালামেও আদায় করিতে পারবে। এ সকল নিয়মে রাতের নামাজ এ অধ্যায়ের সবগুলো হাদীসের উপর আমাল হয়ে যাবে।
১৬৭৫. মাখরামাহ্ ইবনি সুলাইমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে তিনি এতটুকু অতিরিক্ত বলেছেন, এরপর তিনি [সাঃআঃ] একটি পুরনো মশকের কাছে গেলেন এবং মিসওয়াক করে ওযূ করিলেন। তিনি বেশী পানি খরচ না করেই উত্তমরূপে ওযূ করিলেন তারপর আমাকে ঝাঁকুনি দিলেন। তখন আমি উঠলাম। এরপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশটুকু মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৭]
১৬৭৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রী মাইমূনাহ্র [খালা] ঘরে আমি ঘুমালাম আর সেই রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার ঘরে ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর ঘরে রাত্রি যাপন করিলেন। রাতে তিনি ওযূ করে নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালে আমিও তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে ধরে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। ঐ রাতে তিনি তের রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং তারপর ঘুমালেন। ঘুমের মধ্যে তিনি নাক ডাকলেন। আর তিনি যখনই ঘুমাতেন নাক ডাকত। পরে মুয়াযযিন তাহাঁর কাছে আসলেন তিনি [মাসজিদে] চলে গেলেন এবং নতুন ওযূ না করেই নামাজ আদায় করিলেন। হাদীসের বর্ণনাকারী আম্র বলেছেন, আমি বুকায়র ইবনিল আশাজ্জ-এর কাছে এ হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আমার কাছেও তিনি হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৮]
১৬৭৭. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহ্ বিনতু হারিস-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। আমি তাঁকে বললাম, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] [রাতে] যখন উঠবেন তখন আপনি আমাকে জাগিয়ে দিবেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠলে আমিও উঠলাম এবং তাহাঁর বাম পাশে দিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে তাহাঁর ডান পাশে নিলেন। পরে যখনই আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম তখন তিনি আমার কানের নিম্নভাগ ধরে টান দিচ্ছিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলেন-তিনি এগার রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এরপর তিনি শুয়ে থাকলেন। আমি তাহাঁর নাক ডাকানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। অতঃপর ফাজ্রের সময় স্পষ্ট হয়ে গেলে তিনি সংক্ষিপ্তাকারে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৬৯]
১৬৭৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তাহাঁর খালা {রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর স্ত্রী} মায়মুনাহ্-এর ঘরে রাত্রি যাপন করিলেন। রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠে ঝুলিয়ে রাখা একটি পুরনো মশক থেকে পানি নিয়ে হালকাভাবে ওযূ করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাসের আযাদকৃত ক্রীতদাস কুরায়ব বলেছেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলেন, তখন আমিও উঠলাম এবং নবী [সাঃআঃ] যা যা করেছিলেন আমিও তাই করলাম এবং পরে গিয়ে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে তাহাঁর পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে ডান পাশে নিয়ে দাঁড় করালেন। এরপর নামাজ আদায় করে তিনি শয্যা গ্রহণ করিলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাকও ডাকলেন। পরে বিলাল এসে তাঁকে নামাজের সময়ের কথা জানালে তিনি গিয়ে ফাজ্রের নামাজ আদায় করিলেন। কিন্তু নতুন ওযূ করিলেন না। হাদীসের বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেছেন, এ ব্যবস্থা শুধু [ঘুমানোর পর নতুন ওযূ না করে নামাজ আদায় করা] নবী [সাঃআঃ] এর জন্য নির্দিষ্ট। কেননা আমরা এ কথা জানি যে, তাহাঁর চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু হৃদয় মন ঘুমায় না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭০]
১৬৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একদা আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে রাত্রিযাপন করলাম আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কীভাবে নামাজ আদায় করেন তার প্রতি লক্ষ্য রাখলাম। তিনি [আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস] বলেছেনঃ [রাতে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠে প্রস্রাব করিলেন এবং মুখমন্ডল ও দু হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে আবার উঠে মশকের পাশে গেলেন, এর বাঁধন খুললেন এবং বড় থালা বা কাষ্ঠ নির্মিত প্লেটে পানি ঢাললেন। পরে হাত দিয়ে তা নীচু করিলেন এবং দু ওযুর মাঝামাঝি উত্তম ওযূ করিলেন [অর্থাৎ অত্যধিক যত্নের সাথে ওযূ করিলেন না, আবার খুব হালকাভাবেও করিলেন না]। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালে আমিও উঠে গিয়ে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তখন তিনি [সাঃআঃ] আমাকে ধরে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মোট তের রাকআত নামাজ দ্বারা তাহাঁর নামাজ শেষ হল। এরপর তিনি [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন নাক ডাকতে শুরু করিল। আমরা নাক ডাকানোর আওয়াজ শুনে তাহাঁর ঘুমানো বুঝতে পারতাম। তারপর নামাজের জন্য [মাসজিদে] চলে গেলেন এবং নামাজ আদায় করিলেন। নামাজের মধ্যে অথবা সিজদায় গিয়ে তিনি [সাঃআঃ] এ বলে দুআ করিতে থাকলেন
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي سَمْعِي نُورًا وَفِي بَصَرِي نُورًا وَعَنْ يَمِينِي نُورًا وَعَنْ شِمَالِي نُورًا وَأَمَامِي نُورًا وَخَلْفِي نُورًا وَفَوْقِي نُورًا وَتَحْتِي نُورًا وَاجْعَلْ لِي نُورًا أَوْ قَالَ وَاجْعَلْنِي نُورًا
“আল্ল-হুম্মাজ্আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়া ফী সামঈ নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাওঁ ওয়া আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া আন্ শিমালী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহ্তী নূরাওঁ ওয়াজ আল্লী নূরান্ আও ক্ব-লা ওয়াজ্আলনী নূরা-” -[অর্থাৎ- হে আল্লাহ ! তুমি আমার হৃদয়-মনে আলো দান কর, আমর শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর, আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাম দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর এবং আমার জন্য আলো সৃষ্টি কর। অথবা তিনি বললেনঃ আমাকে আলোতে পরিণত করে দাও।]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭১]
১৬৮০. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহ্-এর কাছে ছিলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখানে আসলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি গুনদার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু উল্লেখ করিলেন। এতে তিনি
وَاجْعَلْنِي نُورًا
“ওয়াজ্আলনী নূরান” অর্থাৎ আমাকে আলো বানিয়ে দাও কথাটি বলিতে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭২]
১৬৮১. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। অতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন কিন্তু হাতের কব্জিদ্বয় ও মুখমন্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। বর্ণনাতে তিনি বলেছেনঃ পরে তিনি [সাঃআঃ] মশকের পাশে গেলেন, এটির বাঁধন খুললেন এবং দু ওযূর মাঝামাঝি ওযূ করিলেন। এরপর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর আবার উঠে মশকের পাশে গিয়ে ওটির বন্ধন খুললেন এবং ওযূ যেমনটি হওয়া দরকার তেমনি করিলেন। আর তিনি আমাকে এতে বলেছেন,
وَاجْعَلْنِي نُورًا
“আযিম্ লী নূরান ” অর্থাৎ [হে আল্লাহ!] আমার আলোকে বড় করে দাও। তবে এতে তিনি “ওয়াজ্আলনী নূরান” অর্থাৎ- আমাকে নূর বা আলো বানিয়ে দাও কথাটি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৩]
১৬৮২. কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে [তাহাঁর ঘরে] রাত্রি যাপন করিলেন। তিনি বলেছেনঃ রাতের বেলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উঠে একটি মশকের পাশে গেলেন এবং তা থেকে পানি ঢেলে ওযূ করিলেন। এতে তিনি অধিক পানি ব্যবহার করিলেন না বা ওযূ সংক্ষিপ্তও করিলেন না। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি হাদীসটি পূর্বের হাদীসটির অনুরূপ বর্ণনা করিলেন। তবে এতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ রাতে ঊনিশটি কথা বলে দুআ করিলেন।
সালামাহ্ ইবনি কুহায়ল বলেছেন-কুরায়ব ঐ কথাগুলো সব আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন। আমি তার বারোটি মাত্র মনে রাখতে পেরেছি আর অবশিষ্টগুলো ভুলে গিয়েছি। তিনি তাহাঁর দুআয় বলেছিলেন ”
arbi
“হে আল্লাহ ! তুমি আমার জন্য আমার হৃদয় মনে আলো দান কর, আমার জিহ্বা বা বাকশক্তিতে আলো দান কর। আমার শ্রবণশক্তিতে আলো দান কর, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর, আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছন দিকে আলো দান কর, আমার নিজের মধ্যে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার আলোকে বিশালতা দান কর।
[ই,ফা. ১৬৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৪]
১৬৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একরাতে আমার খালা {নবী [সাঃআঃ] এর স্ত্রী} মায়মূনাহ্-এর ঘরে ঘুমালেন। উক্ত রাতে নবী [সাঃআঃ] রাতে কিভাবে নামাজ আদায় করেন তা দেখা ছিল আমার উদ্দেশ্য। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলেছেনঃ তিনি তাহাঁর স্ত্রীর সাথে কিছুক্ষন কথাবার্তা বলিলেন এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন। …….এতটুকু বলার পর পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে এতটুকু কথা অধিক আছে যে, তিনি উঠে ওযূ ও মিসওয়াক করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৫]
১৬৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদিন রাতে তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুম থেকে জেগে উঠে মিসওয়াক ও ওযূ করিলেন। এ সময় তিনি [কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো] পড়ছিলেন :
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لأُولِي الأَلْبَابِ
“আসমান ও জমিনের সৃষ্টি কৌশলে এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে আগমন নির্গমনে সুধী ও জ্ঞানীজনদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে”- [সুরা আলি ইমরান ৩ : ১৯০]। এভাবে তিনি সূরার শেষ পর্যন্ত পড়লেন। এরপর উঠে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এতে তিনি [সাঃআঃ] ক্বিয়াম, রুকু ও সিজদাহ্ দীর্ঘায়িত করিলেন এবং শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডেকে ঘুমালেন। তিনবার তিনি এরূপ করিলেন এবং এভাবে তিনি ছয় রাকআত নামাজ আদায় করিলেন প্রত্যেক বার তিনি মিসওয়াক করিলেন, ওযূ করিলেন এবং এ আয়াতগুলো পড়লেন। সর্বশেষে তিন রাকআত বিত্র পড়লেন। অতঃপর মুয়ায্যিন আযান দিলে তিনি নামাজের জন্য [মাসজিদে ] চলে গেলেন। তখন তিনি এ বলে দুআ করেছিলেন:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَفِي لِسَانِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِي نُورًا وَمِنْ أَمَامِي نُورًا وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُورًا وَمِنْ تَحْتِي نُورًا
“আল্ল-হুম্মআজ্আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী লিসা-নী নূরাওঁ ওয়াজআল ফী সামঈ নূরাওঁ ওয়াজ্আল ফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াজ্আল মিন খলফী নূরাওঁ ওয়ামিন আমা-মী নূরাওঁ ওয়াজ্আল মিন ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়ামিন তাহ্তী নূরান্, আল্ল-হুম্মা আত্বিনী নূরা-” অর্থাৎ হে আল্লাহ আমার হৃদয় মনে আলো [নূর] সৃষ্টি করে দাও, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার পিছন দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার সামনের দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও , আমার উপর দিক থেকে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার নীচের দিক থেকেও আলো সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ ! আমাকে নূর বা আলো দান কর।]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৬]
১৬৮৫. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একরাতে আমি আমার খালা {রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর স্ত্রী} মায়মুনাহ্ এর কাছে [তাহাঁর ঘরে] রাত্রি যাপন করলাম। রাতের বেলা নবী [সাঃআঃ] নফল নামাজ আদায় করিতে উঠলেন। তিনি মশকের পাশে গিয়ে ওযূ করিলেন এবং তারপর নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালেন। তাঁকে এরূপ করিতে দেখে আমিও উঠে মশকের পানি দিয়ে ওযূ করলাম। তারপর তাহাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর পিঠের দিক থেকে আমার হাত ধরে সোজা তাহাঁর পিঠের দিকে দিয়ে নিয়ে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। হাদীসের বর্ণনাকারী আত্বা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নফল নামাজ আদায়কালে এরূপ করেছিলেন। জবাবে তিনি [আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস] বললেনঃ হ্যাঁ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৭]
১৬৮৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমার পিতা আব্বাস আমাকে নবী [সাঃআঃ] এর কাছে পাঠালেন। সেদিন আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে ছিলেন। উক্ত রাতে আমি তাহাঁর সাথে কাটালাম। রাতে তিনি নামাজ আদায় করিতে উঠলে আমিও উঠলাম এবং গিয়ে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে তাহাঁর পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৮]
১৬৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একদিন আমার খালা মায়মুনাহ্-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বর্ণনা কারী ইবনি জুরায়জ ও ক্বায়স ইবনি সাদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৭৯]
১৬৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলা তের রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৩,ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮০]
১৬৮৯. যায়দ ইবনি খালিদ আল জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাতে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ দেখব। রাতের বেলা প্রথমে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাবে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তারপর অনেক অনেক দীর্ঘায়িত করে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তারপর দুরাকআত নামাজ আদায় করিলেন যা পূর্বের দু রাকআত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর দু রাকআত আদায় করিলেন যা পূর্বের দু রাকআত থেকে কম দীর্ঘায়িত ছিল। এরপর দু রাকআত আদায় করিলেন যা পূর্বের দু রাকআত থেকে কম দীর্ঘায়িত ছিল। পরে আরো দুরাকআত আদায় করিলেন যা পূর্বের দু রাকআত থেকেও কম দীর্ঘায়িত ছিল। এরপর বিত্র অর্থাৎ এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং এভাবে মোট তের রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৪ ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮১]
১৬৯০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে ছিলাম। এক সময়ে আমরা এক [পানির কিনারে] ঘাটে গিয়ে পৌছলাম। তিনি আমাকে জিঞ্জেস করলেনঃ জাবির তুমি কি ঘাট পার হইবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ। জাবির ইবনি আবদুল্লাহ বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অপর পারে গিয়ে অবতরণ করলে আমি ও পার হলাম। [জাবির ইবনি আবদুল্লাহ বর্ণনা করিয়াছেন যে,] এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গেলে আর আমি তাহাঁর ওযুর পানি প্রস্তত করে রাখলাম। [তিনি বর্ণনা করিয়াছেন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে ওযু করিলেন এবং একখানা মাত্র কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। কাপড় খানার আচল বিপরীত দিকের দু কাধে দিলেন। তখন আমি গিয়ে তাহাঁর পিছনে দাড়ালাম। কিন্তু তিনি আমার কান ধরে তাহাঁর ডান পাশে খাড়া করে দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮২]
১৬৯১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতে নামাজ আদায় করিতে উঠলে সংক্ষিপ্তভাবে দু রাকআত [প্রথম দু রাকআত] নামাজ শুরু করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৩]
১৬৯২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাতের নামাজ আদায় করিতে শুরু করলে সে যেন সংক্ষিপ্তভাবে দু রাকআত নামাজ দিয়ে শুরু করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৭. ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৪]
১৬৯৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাতের বেলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আদায় করিতে উঠতেন তখন এ বলে দুআ করিতেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَأَخَّرْتُ وَأَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ أَنْتَ إِلَهِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
“আল্লা-হুম্মা লাকাল হাম্দু আন্তা নূরুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্যি ওয়ালাকাল হাম্দু আন্তা ক্বইয়্যামুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্যি ওয়ালাকাল হাম্দু আন্তা রব্বুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্যি ওয়ামান ফীহিন্না আন্তাল হাক্কু ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু ওয়াক্বাওলুকাল হাক্কু ওয়ালিক্বা-উকা হাক্কুন্ ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন্ ওয়ান্না-রু হাক্কুন ওয়াস্ সা-আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আস্লামতু ওয়াবিকা আ-মান্তু ওয়া আলায়কা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলায়কা আনাব্তু ওয়াবিকা খা-সাম্তু ওয়া ইলায়কা হা-কাম্তু ফাগ্ফিরলী মা-ক্বদ্দাম্তু ওয়া আখ্খারতু ওয়া আস্রার্তু ওয়া আলান্তু আন্তা ইলা-হী লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্তা” [অর্থাৎ – হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সব প্রশংসা। তুমি আসমান ও জমিনের নূর বা আলো। তোমার জন্যই সব প্রশংসা, তুমিই আসমান ও জমিনের ব্যবস্থাপক। তোমার জন্যই সব প্রশংসা তুমিই আসমান জমিনের এবং এ সবের মধ্যে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক। তুমিই হাক্ব বা সত্য। তোমার ওয়াদা সত্য, তোমার সব বাণী সত্য। তোমার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি সত্য। জান্নাত সত্য, জাহান্নামও সত্য এবং ক্বিয়ামতও সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার অপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করেছি, তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করেছি, তোমারই জন্যে অন্যদের সাথে বিবাদ করেছি এবং তোমার কাছেই ফায়সালা চেয়েছি। তাই তুমি আমার আগের ও পরের এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দাও। একমাত্র তুমিই আমার ইলাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৫]
১৬৯৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে উপরে বর্ণিত হাদীস টি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুধু দুটি শব্দ ছাড়া ইবনি জুরায়জ বর্ণিত হাদীসের শব্দসমূহ মালিক বর্ণিত হাদীসের শব্দসমূহের অনুরূপ। দুটি স্থানের একটি ইবনি জুরায়জ [আরবী] শব্দের পরিবর্তে [আরবী] শাব্দটি উল্লেখ করিয়াছেন। আর অপর স্থানটিতে শুধু [আরবী] কথাটি উল্লেখ করিয়াছেন। আর ইবনি উয়াইনাহ্ হইতে বর্ণীত। তিনি বলেছেনঃ হাদীসটিতে কিছু অতিরিক্ত শব্দ আছে এবং অনেকগুলো শব্দের ব্যাপারে তিনি মালিকের এবং ইবনি জুরায়জ-এর সাথে পার্থক্য করিয়াছেন।
[ই.ফা.১৬৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৬]
১৬৯৫. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এই একই সানাদে হাদীসটি নবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। এ হাদীসের শব্দ উপরের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮০ ই.সে ১৬৮৭]
১৬৯৬. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.]-কে জিঞ্জেস করলাম যে, নবী [সাঃআঃ] রাতের বেলা যখন নামাজ আদায় করিতেন তখন কীভাবে তাহাঁর নামাজ শুরু করিতেন? জবাবে আয়িশা [রাদি.] বললেনঃ রাতে যখন তিনি [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে উঠতেন তখন এ দুআটি পড়ে নামাজ শুরু করিতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَائِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“ আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইস্রা-ফীলা ফা-ত্বিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্যি আ-লিমান গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি আন্তা তাহ্কুমু বায়না ইবা-দিকা ফীমা-কা-নূ ফীহি ইয়াখ্তালিফূ নাহ্দিনী লিমাখ তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্কি বি ইয্নিকা ইন্নাকা তাহ্দী মান্ তাশা-উ ইলা- সিরা-ত্বিম মুসতাক্বীম” [অর্থাৎ – হে আল্লাহ্! জিব্রীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়সমূহের জ্ঞানের অধিকারী। তোমার বান্দারা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করে তুমিই সেগুলোর ফায়সালা করিবে। সত্য ও ন্যায়ের যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে পথ দেখাও। তুমিই তো যাকে ইচ্ছা সরল-সহজ পথ দেখিয়ে থাকো ]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮১ ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৮]
১৬৯৭. আলী ইবনি আবু ত্বলিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, তিনি [সাঃআঃ] যখন নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াতেন তখন এ বলে শুরু করিতেনঃ
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ . أَنْتَ رَبِّي وَأَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِي لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِي لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
“ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজ্হিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্যা হানীফাওঁ ওয়ামা– আনা-মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা লা শারীকা লাহূ ওয়াবি যা-লিক উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা – আনতা আন্তা রব্বি ওয়া আনা- আব্দুকা যলাম্তু নাফ্সী ওয়াতারাফ্তু বিযাম্বী ফাগফিরলী যুনূবী জামীআন ইন্নাহূ লা- ইয়াগ্ফিরুয্ যুনূবা ইল্লা-আন্তা ওয়াহদিনী লিআহ্সানিল আখলা-ক্বি লা-ইয়াহ্দী লিআহ্সানিহা- ইল্লা- আন্তা ওয়াস্রিফ আন্নি সাইয়্যিআহা-লা- ইয়াস্রিফু আন্নী সাইয়্যিআহা- ইল্লা- আন্তা লাব্বায়কা! ওয়া সাদায়কা! ওয়াল খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা ওয়াশ্ শুর্রু লায়সা ইলায়কা আনা –বিকা ওয়া ইলায়কা তাবা-রাকতা ওয়াতা আ-লাইয়তা আস্তাগ্ফিরুকা ওয়া আতূবু ইলায়ক” [অর্থাৎ- আমি একনিষ্ট হয়ে আমার মুখ সে মহান সত্তার দিকে ফিরিয়ে দিলাম যিনি আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করিয়াছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার নামাজ , আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি সারা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তাহাঁর কোন শরীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলীম বা আত্মসমর্পণকারী। হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম বাদশাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমার প্রতিপালক, আর আমি তোমার বান্দা। আমি নিজে আমার প্রতি যুলুম করেছি। আমি আমার পাপ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সব পাপ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করিতে পারে না।আমাকে সর্বোত্তম আখলাক বা নৈতিকতার পথ দেখাও। তুমি ছাড়া এ পথ আর কেউ দেখাতে সক্ষম নয়। আর আখলাক্ব বা নৈতিকতর মন্দ দিকগুলো আমার থেকে দূরে রাখ। তুমি ছাড়া আর কেউ মন্দগুলোকে দূরে রাখতে সক্ষম নয়। আমি তোমার সামনে হাজির আছি – তোমার আনুগত্য করিতে প্রস্তত আছি। সব রকম কল্যাণের মালিক তুমিই। অকল্যাণের দায় দায়িত্ব তোমার নয়। আমার সব কামনা বাসনা তোমার কাছেই কাম্য। আমার শক্তি-সামর্থ্যও তোমারই দেয়া। তুমি কল্যাণময়, তুমি মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছেই তাওবাহ্ করছি]।আর রুকু করার সময় বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَمُخِّي وَعَظْمِي وَعَصَبِي
“আল্ল-হুম্মা লাকা রাকাতু ওয়াবিকা আ-মান্তু ওয়ালাকা আস্লাম্তু খশাআ লাকা সামঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্খী ওয়া আয্মী ওয়া আসাবী” -[অর্থাৎ -হে আল্লাহ্! তোমার উদ্দেশ্যেই আত্মসমর্পণ করলাম। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং সব স্নায়ুতন্ত্রী তোমার কাছে নত ও বশীভূত হল]। আর রুকু থেকে বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ مَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ
“আল্ল-হুম্মা রব্বানা– লাকাল হা্মদু মিলআস্ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল আল আর্যি ওয়ামিলআ মা- বায়নাহুমা ওয়ামিলআ মা- শিতা মিন শাইয়িন্ বাদু”-[ অর্থাৎ – হে আল্লাহ্! হে আমার প্রতিপালক, সব প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। আসমান ভর্তি প্রশংসা একমাত্র তোমারই প্রাপ্য]। আর যখন সিজদায় যেতেন তখন বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ تَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
“আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাদ্তু ওয়াবিকা আ-মান্তু ওয়ালাকা আস্লাম্তু সাজাদা ওয়াজহী লিল্লাহী খালাক্বাহূ ওয়াসাও্ ওয়ারাহূ ওয়াশাক্বক্বা সামআহূ ওয়া বাসারাহূ তাবা-রাকাল্ল-হু আহসানুল খ-লিক্বীন”- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমারই উদ্দেশে আমি সাজদাহ্ করলাম। তোমারই প্রতি আমি ঈমান পোষণ করেছি। তোমার উদ্দেশে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আমার মুখমণ্ডল সে মহান সত্তার উদ্দেশে সাজদাহ্ করিল যিনি তাকে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আকৃতি দান করিয়াছেন আর কান ও চোখ ফুটিয়ে শোনা ও দেখার উপযোগী করে তৈরী করিয়াছেন। মহা কল্যাণময় আল্লাহ, তিনি কতই না উত্তম সৃষ্টিকারী]। অতঃপর সবশেষে তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্য বর্তী সময়ে তিনি বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
“আল্ল-হুম্মাগ্ফীর্লী মা- ক্বদ্দাম্তু ওয়ামা- আখ্খার্তু ওয়ামা- আস্সরার্তু ওয়ামা- আলান্তু ওয়ামা- আস্রাফ্তু ওয়ামা- আন্তা আলামু বিহী মিন্নী আন্তাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুআখ্খিরু লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা” [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চাইতে বেশী জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত, তুমি ছাড়া আর কেউ ইলাহ নেই ]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৮৯]
১৬৯৮. আরাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এতে তিনি বলেছেনঃ নামাজ শুরু করার সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীর বলিতেনঃ তারপরে
وَجَّهْتُ وَجْهِي
“ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহী” বলিতেন। এরপর শেষের দিকে “
وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
ওয়া আনা-আও্ওয়ালুল মুসলিমীন” বলিতেন। এ হাদীসে তিনি আর বলেছেনঃ যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
“সামি আল্ল-হু-লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হাম্দ” এবং তিনি
وَصَوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُوَرَهُ
“ওয়া সাও্ওয়ারাহূ ফা আহ্সানা সুওয়ারাহূ” –ও বলিতেন [অর্থাৎ তিনি আকৃতি দান করিয়াছেন এবং উত্তম আকৃতি দান করিয়াছেন]। এ বর্ণনাতে আরো আছে, তিনি যখন সালাম ফিরাতেন তখন
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ
“আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী মা-ক্বদ্দামতু” কথাটি থেকে শুরু করে পূর্বোক্ত হাদীসের শেষ পর্যন্ত বলিতেন। আর তিনি তাশাহুদ ও সালামের কথা বলেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯০]
২৭. অধ্যায়ঃ রাতের সালাতে ক্বিরাআত দীর্ঘ করা মুস্তাহাব
১৬৯৯. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী [সাঃআঃ]–এর সাথে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলাম। তিনি সুরা আল বাক্বারাহ্ পড়তে শুরু করলে আমি ভাবলাম তিনি হয়ত একশ আয়াত পড়ে রুকু করবেন। কিন্তু এর পরেও তিনি পড়ে চললেন। তখন আমি চিন্তা করলাম। তিনি এর [সূরা আল বাক্বারাহ্ ] দ্বারা পুরা দু রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবেন। কিন্তু তিনি এরপরেও পড়তে থাকলে আমি ভাবলাম সূরাটি শেষ করে তিনি রুকু করবেন। কিন্তু এরপর তিনি সূরাহ নিসা পড়তে শুরু করিলেন এবং তা পাঠ করিলেন, অতঃপর তিনি সুরাহ্ আ-লি ইমরান শুরু করিলেন এবং তা পাঠ করিলেন। তিনি থেমে থেমে ধীরে ধীরে পড়ছিলেন এবং তাসবীর আয়াত আসলে তাসবীহ পড়ছিলেন আর কিছু চাওয়ার আয়াত আসলে চাইলেন। যখন আশ্রয় প্রার্থনা করার কোন আয়াত পড়ছিলেন তখন প্রার্থনা করছিলেন। অতঃপর তিনি রুকু করিলেন। রুকুতে তিনি বলিতে থাকলেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ
“সুবহা-না রাব্বিয়াল আযীম” [আমার মহান প্রভূ পবিত্র, আমি তাহাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি]। তাহাঁর রুকু ক্বিয়ামের মতই দীর্ঘ ছিল। এরপর
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
“সামি আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” [আল্লাহ শুনে থাকেন যে তাহাঁর প্রশংসা করে] বললেনঃ এরপর যতক্ষন সময় রুকু করেছিলেন প্রায় ততক্ষণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর সাজদাহ্ করিলেন। সাজদাতে তিনি বলিলেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى
“সুবহা-না রাব্বিয়াল আলা” [মহান সুউচ্চ সত্তা আমার প্রভূ পবিত্র, আমি তাহাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি]। তাহাঁর এ সাজদায়ও প্রায় ক্বিয়ামের সময়ের মতো দীর্ঘায়িত হলো। হাদীসটির বর্ণনা কারী বলেন যে, জারীর বর্ণিত হাদীসে এতটুকু কথা অধিক আছেঃ তিনি {রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকু থেকে উঠে} বলিলেন,
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
“সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- লাকাল হাম্দ” [ আল্লাহ শুনেন যে ব্যক্তি তাহাঁর প্রশংসা করে। হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার জন্যই সব প্রশংসা]।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯১]
১৭০০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করলাম। এ সালাতে তিনি ক্বিরআত এত দীর্ঘায়িত করিলেন যে, আমি একটি মন্দ ইচ্ছা করে বসলাম। আবু ওয়ায়িল বলেছেনঃ তাঁকে [আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদকে ] জিঞ্জেস করা হল, আপনি কী ধরণের মন্দ ইচ্ছা করেছিলেন? জবাবে তিনি বললেনঃ আমি বসে পড়ার এবং তাহাঁর পিছনে এ নামাজ পরিত্যাগ করার ইচ্ছা করেছিলাম।
[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯২]
১৭০১. আমাশ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬৯৩]
Leave a Reply