রাতের সালাতের গুরুত্ব
রাতের সালাতের গুরুত্ব >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৩১
- অধ্যায়ঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৩১. প্রথম অনুচ্ছেদ
১১৮৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] ইশার সলাতের পর ফাজ্র পর্যন্ত প্রায়ই এগার রাক্আত সলাত আদায় করিতেন। প্রতি দু রাক্আত সলাতের পর সলাম ফিরাতেন। শেষের দিকে এক রাক্আত দ্বারা বিত্র আদায় করে নিতেন। আর এক রাক্আতে এত লম্বা সাজদাহ্ করিতেন যে, একজন লোক সাজদাহ্ হইতে মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত পড়ে ফেলতে পারত। এরপর মুয়ায্যিনের ফাজ্রের আযানের আওয়াজ শেষে ফাজ্রের সময় স্পষ্ট হলে তিনি দাঁড়াতেন। দু রাক্আত হালকা সলাত আদায় করিতেন। এরপর খুব স্বল্প সময়ের জন্যে ডান পাশে ফিরে শুয়ে যেতেন। এরপর মুয়ায্যিন ইক্বামাতের অনুমতির জন্যে তাহাঁর কাছে এলে তিনি মাসজিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যেতেন।] {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৯৯৪, মুসলিম ৭৩৬। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৮৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] ফাজ্রের সুন্নাত সলাত [ঘরে] আদায়ের পর যদি আমি সজাগ হয়ে উঠতাম তাহলে আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেন। আর আমি ঘুমে থাকলে তিনি শয়ন করিতেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৪৩, বোখারী ১১৬১। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯০. উক্ত রাবী {আয়িশাহ্ [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] ফাজ্রের দু রাক্আত সুন্নাত সলাত আদায় করে নিজের ডান পাঁজরের উপর শুয়ে যেতেন।১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৬০, মুসলিম ৭৩৬। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] রাত্রে তের রাক্আত সলাত আদায় করিতেন। এর মাঝে বিত্র ও ফাজ্রের সুন্নাত দু রাক্আতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৪০, মুসলিম ৭৩৭; শব্দবিন্যাস মুসলিমের। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯২. মাসরূক্ব থেকে বর্ণিত। হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ্ [রাদি.]-কে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রাত্রের সলাতের ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, ফাজ্রের সুন্নাত ব্যতীত কোন কোন সময় তিনি [সাঃআঃ] সাত রাক্আত, কোন কোন সময় নয় রাক্আত, কোন কোন সময় এগার রাক্আত আদায় করিতেন।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ১১৩৯। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন রাত্রে [তাহাজ্জুদের] সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়াতেন তখন তিনি তাহাঁর সলাতের আরম্ভ করিতেন দু রাক্আত সংক্ষিপ্ত সলাত দিয়ে। [ {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৬৭। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : তোমাদের কেউ যখন রাত্রে সলাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠে, সে যেন দু রাক্আত সংক্ষিপ্ত সলাত দ্বারা [তার সলাত] আরম্ভ করে। ১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৮৬। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি আমার খালা উম্মুল মুমিনীন মায়মূনাহ্ [রাদি.]-এর বাড়ীতে রাত কাটালাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সে রাত্রে তাহাঁর বাড়ীতে ছিলেন। ইশার পর কিছু সময় তিনি তাহাঁর স্ত্রী মায়মূনার সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তারপর শুয়ে পড়েন। রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশে অথবা রাতের কিছু সময় অবশিষ্ট থাকতে তিনি সজাগ হলেন। আকাশের দিকে লক্ষ করে এ আয়াত পাঠ করিলেন :
إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّموتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَأَۤيَاتٍ لِّأُوْلِي الْأَلْبَابِ [آل عمران 3 : 190]
অর্থাৎ “আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করা, রাত ও দিনের ভিন্নতার [কখনো অন্ধকার কখনো আলোকিত, কখনো গরম কখনো শীত, কখনো বড়ো কখনো ছোট] মাঝে রয়েছে জ্ঞানীদের জন্যে আল্লাহর নিদর্শন”-[সূরাহ্ আলি ইমরান ৩ : ১৯০] তিনি সূরাটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। তারপর উঠে তিনি পাত্রের কাছে গেলেন। এর বাঁধন খুললেন। পাত্রে পানি ঢাললেন। তারপর দু উযূর মাঝে মধ্যম ধরনের ভাল উযূ করিলেন। হাদিস বর্ণনাকারী বলেন, [মধ্যম ধরনের উযূর অর্থ] খুব অল্প পানি খরচ করিলেন। তবে শরীরে দরকারী পানি পৌঁছিয়েছেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিতে লাগলেন। [এসব দেখে] আমি নিজেও উঠলাম। অতঃপর উযূ করে তাহাঁর বাম পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার কান ধরে তাহাঁর বাম পাশ থেকে ঘুরিয়ে এনে আমাকে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। তার তের রাক্আত সলাত আদায় করা শেষ হলে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। শুয়ে পড়লে তিনি নাক ডাকতেন। তাই তাহাঁর নাক ডাকা শুরু হলো। ইতোমধ্যে বেলাল এসে সলাত প্রস্তুতির ঘোষণা দিলেন। তিনি সলাত আদায় করালেন। কোন উযূ করিলেন না। তার দুআর মাঝে ছিল,
اللّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا وَّفِي بَصَرِىْ نُورًا وَّفِي سَمْعِي نُورًا وَّعَنْ يَّمِينِىْ نُورًا وَّعَنْ يَّسَارِىْ نُورًا وَّفَوْقِي نُورًا وَّتَحْتِىْ نُوْرًا وَّأَمَامِىْ نُوْرًا وَّخَلْفِىْ نُورًا وَّاجْعَلْ لِّىْ نُورًا
“আল্ল-হুম্মাজ্আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াফী সাম্ঈ নূরাওঁ ওয়াআই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়াআই ইয়াসা-রী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহ্তী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়াজ্আল্ লী নূরা-” [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার হৃদয়ে, আমার চোখে, আমার কানে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার সম্মুখে, আমার পেছনে নূর দিয়ে ভরে দাও। আমার জন্যে কেবল নূরই নূর সৃষ্টি করে দাও।] কোন কোন বর্ণনাকারী এ শব্দগুলোও নকল করিয়াছেন, “ওয়াফী লিসা-নী নূরা-” [অর্থাৎ- আমার জিহবায় নূর পয়দা করে দাও]। [অন্য বর্ণনায় এ শব্দগুলোও] উল্লেখ করিয়াছেন, “ওয়া আসাবী ওয়া লাহ্মী ওয়াদামী ওয়া শারী ওয়া বাশারী” [অর্থাৎ- আমার শিরা উপশিরায়, আমার গোশতে, আমার রক্তে, আমার পশমে, আমার চামড়ায় নূর তৈরী করে দাও]।
বোখারী ও মুসলিমেরই আর এক বিবরণে এ শব্দগুলোও আছে, “ওয়াজ্আল ফী নাফ্সী নূরাওঁ ওয়া আযিম লী নূরা-” [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার মনের মধ্যে নূর সৃষ্টি করে দাও এবং আমার মাঝে নূর বাড়িয়ে দাও]। মুসলিমের এক বিবরণে আছে, “আল্ল-হুম্মা আত্বিনী নূরা-” [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নূর দান করো]।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৩১৬, মুসলিম ৭৬৩। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৬. উক্ত রাবী {আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এক রাতে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট শুইলেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাত্রে জাগলেন। মিসওয়াক করিলেন ও উযূ করিলেন। তারপর এ আয়াত পাঠ করিলেন, ইন্না ফী খালকিস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি….. সূরার শেষ পর্যন্ত। এরপর তিনি দাঁড়ালেন, অতঃপর দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। সলাতে তিনি বেশ লম্বা ক্বিয়াম, রুকূ ও সাজদাহ্ করিলেন। সলাত শেষে তিনি ঘুমিয়ে গেলেন ও নাক ডাকতে শুরু করিলেন। এ রকম তিনি তিনবার করিলেন। তিনবারে তিনি ছয় রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। প্রত্যেকবার তিনি মিসওয়াক করিলেন, উযূ করিলেন। ঐ আয়াতগুলোও পাঠ করিলেন। সর্বশেষ বিত্রের তিন রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ৭৬৩। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৭. যায়দ ইবনি খালিদ আল জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার ইচ্ছা করলাম, আজ রাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সলাত দেখব। প্রথমে তিনি হালকা দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। তারপর দীর্ঘ দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন দীর্ঘ দীর্ঘ দীর্ঘ করে। তারপর তিনি আরো দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন যা পূর্বের দু রাক্আত থেকে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু রাক্আত আদায় করিলেন যা পূর্বের আদায় করা দু রাক্আত হইতে কম দীর্ঘ ছিল। তারপর তিনি আরো দু রাক্আত যা আগে আদায় করা দু রাক্আত হইতে কম লম্বা ছিল। তারপর আরো দু রাক্আত আদায় করিলেন যা আগের আদায় করা দু রাক্আত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর তিনি বিত্র আদায় করিলেন। এ মোট তের রাক্আত [সলাত] তিনি আদায় করিলেন।
আর যায়দ-এর কথা, অতঃপর তিনি দু রাক্আত আদায় করিলেন যা প্রথমে আদায় করা দু রাক্আত থেকে কম লম্বা ছিল। সহীহ মুসলিমে ঈমাম হুমায়দীর কিতাবে, মুয়াত্তা ঈমাম মালিক, সুনানে আবু দাউদ এমনকি জামিউল উসূলসহ সব স্থানে চারবার উল্লেখ করা হয়েছে।{১}
1] সহীহ : মুসলিম ৭৬৫। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছলে বার্ধক্যের কারণে তিনি ভারী হয়ে গেলেন। তখন তিনি অনেক সময়ে নাফ্ল সলাতগুলো বসে বসে আদায় করিতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৫৯০, মুসলিম ৭৩২। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১১৯৯. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যেসব সূরাহ্ পরস্পর একই রকমের ও যেসব সূরাকে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একসাথে করিতেন আমি এগুলোকে জানি। তাই আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ তাহাঁর ক্রমিক অনুযায়ী বিশটি সূরাহ্ যা [তিওয়ালে] মুফাস্সালের প্রথমদিকে তা গুণে গুণে বলে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ সূরাগুলোকে এভাবে একত্র করিতেন যে, এক এক রাক্আতে দু দুটি সূরাহ্ পাঠ করিতেন। আর বিশটি সূরার শেষের দুটি হলো, [৪৪ নং সূরাহ্] হা-মীম আদ্ দুখা-ন ও [৭৮ নং সূরাহ্] আম্মা ইয়াতাসা-আলূন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭৭৫, ৪৯৯৬, মুসলিম ৮২২। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩১. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১২০০. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-কে রাত্রে [তাহাজ্জুদের] সলাত আদায় করিতে দেখেছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিনবার
اللهُ أَكْبَرُ
“আল্ল-হু আকবার” বলে এ কথা বলেছেন :
ذُوْ الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
“যুল মালাকূতি ওয়াল জাবারূতি ওয়াল কিবরিয়া-য়ি ওয়াল আযামাতি। তারপর তিনি সুব্হা-নাকা আল্ল-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা পড়ে সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ পড়তেন। এরপর রুকূ করিতেন। তাহাঁর রুকূ প্রায় ক্বিয়ামের মতো [দীর্ঘ] ছিল। রুকূতে তিনি
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
সুব্হা-না রব্বিআল আযীম বলেছেন। তারপর রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে প্রায় রুকূ সমপরিমাণ সময় দাঁড়িয়েছেন। [এ সময়] তিনি বলিতেন,
لِرَبِّيَ الْحَمْدُ
লিরব্বিয়াল হাম্দু অর্থাৎ সব প্রশংসা আমার রবের জন্যে। তারপর তিনি সাজদাহ্ করিয়াছেন। তাহাঁর সাজদার সময়ও তাহাঁর ক্বাওমার বরাবর ছিল। সাজদায় তিনি বলিতেন,
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلى
সুব্হা-না রব্বিয়াল আলা-। তারপর তিনি সাজদাহ্ হইতে মাথা উঠালেন। তিনি উভয় সাজদার মাঝে সাজদার পরিমাণ সময় বসতেন। তিনি বলিতেন,
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي
রব্বিগ্ফির লী, রব্বিগ্ফির লী হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করো। হে আল্লাহ আমাকে মাফ করো। এভাবে তিনি চার রাক্আত [সলাত] আদায় করিলেন। [এ চার রাক্আত সলাতে] সূরাহ্
الْبَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ وَالنِّسَاءَ وَالْمَائِدَةَ أَوِ الْأَنْعَامَ
আল বাক্বারাহ্, আ-লি ইমরান, আন্-নিসা, আল মায়িদাহ্ অথবা আল আন্আম পড়তেন। এ হাদিসের একজন বর্ণনাকারী শুবার সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, হাদীসে শেষ সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ উল্লেখ করা হয়েছে না সূরাহ্ আল আন্আম। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৮৭৪, নাসায়ী ১০৬৯, ১১৪৫, আহমাদ ২৩৩৭৫, সুনান আস্ সুগরা লিল বায়হাক্বী ৪১৫, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৯৭। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২০১. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনুল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইরশাদ করিয়াছেন : যে লোক দশটি আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত [সলাতে] ক্বিয়াম করিবে তাকে গাফিলীনের [আনুগত্যশীলের] মাঝে গণ্য করা হবে না। আর যে লোক একশত আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত ক্বিয়াম করে তার নাম গাফিলীনের মাঝে লিখা হবে। আর যে লোক এক হাজার আয়াত পাঠ করার সময় পর্যন্ত দাঁড়াবে তার নাম অধিক সওয়াব পাওয়ার লোকেদের মাঝে লিখা হবে। {১}
{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ১৩৯৮, ইবনি খুযায়মাহ্ ১১৪৪, ইবনি হিব্বান ২৫২৭, সহীহাহ্ ৬৪২, সহীহ আত তারগীব ৬৩৯, সহীহ আল জামি ৬৪৩৯। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১২০২.আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
{১} হাসান : আবু দাউদ ১৩২৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১২০৩. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
{১} হাসান সহীহ : আবু দাউদ ১৩২৭, শামায়িল ৩১৪, আহমাদ ২৪৪৬, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪৬৯৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
১২০৪. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৩২৯। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২০৫. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
{১} হাসান : নাসায়ী ১০১০, ইবনি মাজাহ ১৩৫০। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
১২০৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
{১} সহীহ : আত তিরমিজি ৪২০, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ১১২০, সহীহ ইবনি হিব্বান ২৪৬৮, সহীহ আল জামি ৬৪২। রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৩১. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১২০৭. মাসরূক থেকে বর্ণিত। হইতে বর্ণীতঃ
{১} সহীহ : বোখারী ১১৩২, মুসলিম ৭৪১।
রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২০৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২০৯. হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাতের সালাতের গুরুত্ব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১২১০. ইয়ালা ইবনি মুমাল্লাক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ [রাদি.]-কে একদিন রাসূলুল্লাহর রাত্রের সলাত ও ক্বিরাআতের ব্যাপারে প্রশ্ন করিলেন। উত্তরে উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বললেন, তাহাঁর সলাতের বিবরণ দিলে তোমাদের কি কল্যাণ হবে? যে সময় পরিমাণ সলাত আদায় করিতেন, সে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন। তারপর সে সময় পরিমাণ সলাত আদায় করিতেন যে পরিমাণ সময় ঘুমাতেন, এভাবে ভোর হত। বর্ণনাকারী ইয়ালা বলেন, অতঃপর উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] তাহাঁর ক্বিরাআতের বর্ণনা দিয়েছেন, দেখলাম তিনি পৃথক পৃথক এক এক অক্ষর করে বিস্তারিত পড়ার বর্ণনা দিলেন।{১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৪৬৬, আত তিরমিজি ২৯২৩, নাসায়ী ২৬২৯, শামায়েল ৩০৭, ইবনি খুযায়মাহ্ ১১৫৮, শুআবুল ঈমান ২১৫৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১১৬৫, সুনান আল কুবরা ৪৭১৩। কারণ এর সানাদে ইয়ালা ইবনি মামলাক একজন অপরিচিত রাবী যিনি আবদুল্লাহ ইবনি আবী মুলায়কাহ্ থেকে বর্ণনা করিতে গিয়ে একাকী হয়েছেন। আর ইবনি হিব্বান ছাড়া তাকে কেউ বিশ্বস্ত বলেননি।এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply