রাতের নামাজ রাকাত। নফল সালাত বসে পড়া

রাতের নামাজ রাকাত। নফল সালাত বসে পড়া

রাতের নামাজ রাকাত। নফল সালাত বসে পড়া >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৬. অধ্যায়ঃ দাঁড়িয়ে ও বসে নাফ্‌ল নামাজ আদায় এবং একই রাকআতের অংশ বিশেষ দাঁড়িয়ে ও অংশ বিশেষ বসে আদায় করার বৈধতা
১৭. অধ্যায়ঃ রাতের নামাজ, নবী [সাঃআঃ] এর রাতের নামাজের রাকআত সংখ্যা, বিত্‌র নামাজ এক রাকআত এবং এক রাকআত নামাজ আদায় সহীহ্ সাব্যস্ত
১৮. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালীন নামাজ- আর যে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ে

১৬. অধ্যায়ঃ দাঁড়িয়ে ও বসে নফল নামাজ আদায় এবং একই রাকআতের অংশ বিশেষ দাঁড়িয়ে ও অংশ বিশেষ বসে আদায় করার বৈধতা

১৫৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নফল নামাজ সম্পর্কে আয়েশাহকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃরসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের [ফার্য সালাতের ] পূর্বে আমার ঘরে চার রাকআত নফল আদায় করিতেন। তারপর গিয়ে মাসজিদে লোকদের সাথে নামাজ আদায় করিতেন। পরে ঘরে এসে আবার দু রাকআত নফল আদায় করিতেন। অত:পর লোকজনের সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করিতেন এবং ঘরে এসে দু রাকআত নফল আদায় করিতেন। আবার ইশার নামাজ লোকজনের সাথে আদায় করে আমার ঘরে এসে দু রাকআত নফল আদায় করিতেন। আর রাতের বেলা বিত্রসহ নয় রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তিনি [সাঃআঃ] রাতের বেলা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করিতেন, আবার দীর্ঘ সময় বসে বসেও নফল নামাজ আদায় করিতেন। যখন তিনি [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে ক্বিরআত পড়তেন তখন দাঁড়িয়েই রুকূ ও সিজদাহ করিতেন। আবার যখন বসে ক্বিরআত করিতেন তখন রুকূ ও সিজদাহ বসেই করিতেন। আর ফাজ্‌রের সময় বা ভোর হলেও দু রাকআত নফল আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৬৯. ইসলামিক সেন্টার-১৫৭৬]

১৫৮৫. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের বেলা দীর্ঘ সময় নামাজ আদায় করিতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিতেন তখন দাঁড়িয়েই রুকূ আদায় করিতেন। আর যখন বসে নামাজ আদায় করিতেন তখন বসেই রুকূ করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭০, ইসলামিক সেন্টার-১৫৭৭]

১৫৮৬. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি পারস্যে অবস্থানকালীন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি বসে বসে নামাজ আদায় করতাম। পরে আমি আয়েশাহকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃরসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের বেলা দীর্ধ সময় পর্যন্ত নামাজ আদায় করিতেন। এরপর তিনি উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করিলেন।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৭৮]

১৫৮৭. আবদুল্লাহ্ ইবনি শাক্বীক্ব আল উক্বায়লী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.] কে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর রাত্রিকালীন নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের বেলা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘ সময় বসে নামাজ আদায় করিতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন তখন দাঁড়িয়েই রুকু করিতেন এবং যখন বসে ক্বিরাআত পড়তেন তখন বসেই রুকু করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৭৯]

১৫৮৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি শাক্বীক্ব আল উক্বায়লী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর [নফল] নামাজ সম্পর্কে আয়িশা [রাদি.] কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] অধিকাংশ নামাজই দাঁড়িয়ে এবং বসে আদায় করিতেন। যখন তিনি [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে নামাজ শুরু করিতেন তখন দাঁড়িয়েই রুকু করিতেন। আর যখন বসে নামাজ শুরু করিতেন তখন বসেই রুকু করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮০]

১৫৮৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি কখনো রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে রাতের সলাতে বসে কিছু পড়তে [ক্বিরাআত করিতে] দেখিনি। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়লে বসে বসেই ক্বিরাআত করিতেন এবং শেষের সূরার ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াত যখন অবশিষ্ট থাকত তখন দাঁড়িয়ে ঐ আয়াতগুলো পড়তেন এবং রুকু করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৪, ই.সে ১৫৮১]

১৫৯০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নফল নামাজ বসে আদায় করিতেন তখন বসে বসেই ক্বিরাআত পড়তেন। এভাবে যখন আনুমানিক ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তে অবশিষ্ট থাকত তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত করিতেন। অতঃপর রুকু ও সিজদাহ্ করিতেন। পরে দ্বিতীয় রাকআতে পুনরায় অনুরূপ করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮২]

১৫৯১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নফল সলাতে বসে ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর রুকু করিতে মনস্থ করলে উঠে এতটুকু সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন, যে সময়ের মধ্যে একজন লোক চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তে পারে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৩]

১৫৯২. আলক্বামাহ্ ইবনি ওয়াক্বক্বাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর রাতের বেলার দু রাকআত নামাজ বসে কীভাবে আদায় করিতেন জবাবে আয়িশা [রাদি.] বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এ দু রাকআত সলাতে ক্বিরাআত পড়তেন। তারপর রুকু করার সময় উঠে দাঁড়িয়ে রুকু করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৪]

১৫৯৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী [সাঃআঃ] কি বসে নামাজ আদায় করিতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, লোকজন তাকে বৃদ্ধ করে দেয়ার পর আদায় করিতেন।{৩০}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৫]

{৩০} মানবতার কল্যাণ সাধনে তাদের যাবতীয় কর্মকান্ড, ভারবহন ও তত্ত্বাবধান করিতে করিতে তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন। [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খন্ড ২৫২ পৃষ্ঠা]

১৫৯৪. আবদুল্লাহ্ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি নবী [সাঃআঃ] থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৬]

১৫৯৫. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] মৃত্যুর পূর্বে বেশীর ভাগ নামাজ বসে বসে আদায় করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮০, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৭]

১৫৯৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর বয়স যখন বেশী হয়ে শরীর ভারী হয়ে গিয়েছিল তখন তিনি অধিকাংশ নামাজ বসে বসে আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮১, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৮]

১৫৯৭. হাফ্‌সাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে কখনো বসে নফল নামাজ আদায় করিতে দেখিনি। পরবর্তী সময়ে তাহাঁর ওয়াফাতের এক বছর পূর্বে তাঁকে বসে নফল নামাজ আদায় করিতে দেখেছি। তিনি অতি উত্তমরূপে স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে সূরাহ্ পড়তেন। এ কারণে তার নামাজ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যেত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৮৯]

১৫৯৮. আবুত্ ত্বহির, হারমালাহ্, ইসহাক্ব ইবনি ইব্রাহীম ও আব্‌দ ইবনি হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. সবাই যুহরী হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তারা উভয়ে [ইবনি ইউসুফ ও মামার] “এক বছর অথবা দুবছর পূর্বে” কথাটি উল্লেখ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯০]

১৫৯৯. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বসে নামাজ না আদায় করে [অর্থাৎ বসে নামাজ আদায়ের মত বার্ধক্যে পৌছার পূর্বে] মারা যাননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৪,ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯১]

১৬০০. আবদুল্লাহ্ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ বসে নামাজ আদায় করলে তা অর্ধেক নামাজের সমকক্ষ। আবদুল্লাহ্ ইবনি আম্‌র বর্ণনা করিয়াছেন, এরপর একদিন আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি বসে নামাজ আদায় করিয়াছেন। আমি তাহাঁর মাথার উপর হাত রাখলাম। তিনি বললেনঃ হে আবদূল্লাহ্ ইবনি আম্‌র! কী ব্যাপার? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আপনি বলেছেনঃ কেউ বসে নামাজ আদায় করলে তা অর্ধেক নামাজের সমান হয়। কিন্তু এখন দেখেছি আপনি নিজেই বসে নামাজ আদায় করছেন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ হ্যাঁ , তবে আমি তোমাদের কারো মত না।{৩১}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯২]

{৩১} ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ মর্মে উলামাদের বক্তব্য হল-নবী [সাঃআঃ] এর একান্ত স্বতন্ত্র কতক বিশেষত্বের মধ্যে এটিও একটি ছিল যে, দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করার ক্ষমতা থাকা স্বত্ত্বেও তাহাঁর বসে নামাজ আদায়ের সমান সাওয়াব লাভ হত। [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খন্ড ২৫৩ পৃষ্ঠা]

১৬০১. আবু বাকর ইবনি শায়বাহ্, মুহাম্মাদ ইবনিল মুসান্না ও ইবনি বাশ্শার, ইবনিল মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. উভয়ে মানসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইয়াহ্ইয়া আল আরাজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৩]

১৭. অধ্যায়ঃ রাতের নামাজ , নবী [সাঃ] এর রাতের নামাজের রাকআত সংখ্যা, বিত্‌র নামাজ এক রাকআত এবং এক রাকআত নামাজ আদায় সহীহ্ সাব্যস্ত

১৬০২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলা এগার রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তার মধ্যে এক রাকআত বিত্‌র আদায় করিতেন। নামাজ শেষ করে তিনি ডান পাশে ফিরে শুতেন। অতঃপর ভোরে মুয়ায্‌যিন আসলে তিনি [উঠে] সংক্ষিপ্তভাবে দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৪]

১৬০৩. নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ ও ফাজ্‌রের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে এগার রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। এর মধ্যে এক রাকআত বিত্‌র আদায় করিতেন এবং প্রতি দুরাকআতে সালাম ফিরাতেন। ইশার নামাজ কে লোকজন ঐ সময়ে আতামাহ্ বলত। মুয়ায্‌যিন আযান দিয়ে শেষ করলে এবং ফাজ্‌রের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠলে মুয়ায্‌যিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আসত। তখন তিনি সংক্ষিপ্তভাবে দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। এরপর ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন। পরে মুয়ায্‌যিন পুনরায় ইক্বামাতের জন্য আসত [তখন উঠে তিনি নামাজ আদায় করিতেন]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৮, ই. সে ১৫৯৫]

১৬০৪. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে হারমালাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসে- “ফজরের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠলে মুয়াজ্জিন তাহাঁর কাছে আসত” কথাটি উল্লেখ করেননি। আর তিনি ইক্বামাতের কথাও উল্লেখ করেননি। এছাড়া হাদীসের অবশিষ্ট অংশ তিনি আম্‌র ইবনি হারিস বর্ণিত হাদীসের মতো হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৬]

১৬০৫. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের বেলা তের রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাকআত আদায় করিতেন বিত্‌র এবং এতে একেবারে শেষে ছাড়া কোন বৈঠক করিতেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯০, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৭]

১৬০৬. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্ এবং আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. সকলে হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯১, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৮]

১৬০৭. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের বেলা ফাজ্‌রের দুরাকআত সুন্নাতসহ তের রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯২, ইসলামিক সেন্টার- ১৫৯৯]

১৬০৮. আবু সালামাহ্ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আয়িশা [রাদি.]-কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রমাযান মাসের [রাতের] নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রমাযান মাসে কিংবা অন্য কোন সময়ে রাতের বেলা এগার রাকআতের বেশী নামাজ আদায় করিতেন না। প্রথম চার রাকআত তিনি এমনভাবে আদায় করিতেন যে, তার সৌন্দর্য সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করিবে? তারপর চার রাকআত তিনি এত সুন্দর করে আদায় করিতেন যে, তার সৌন্দর্য সম্পর্কে ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে আর কি জিজ্ঞেস করিবে? এরপর তিনি আরো তিন রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বিত্‌র নামাজ আদায়ের পূর্বেই ঘুমাতেন? জবাবে তিনি বলিলেন, হে আয়েশাহ! আমার চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার হৃদয়-মন ঘুমায় না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০০]

১৬০৯. আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.] -কে রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর [রাতের] নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তের রাকআত আদায় করিতেন। প্রথমে তিনি আট রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তারপর বিত্‌র আদায় করিতেন। সবশেষে বসে বসে আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। পরে রুকু করার সময় উঠে দাঁড়িয়ে রুকু করিতেন। অতঃপর ফাজ্‌রের নামাজের আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়েও দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০১]

১৬১০. আবু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আয়িশা [রাদি.] কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। ….. পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন। তবে তাদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসে দাঁড়িয়ে নয় রাকআত নামাজ আদায় করার কথা উল্লেখ আছে এবং তার মধ্যে বিতরের নামাজ ও অন্তর্ভূক্ত আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০২]

১৬১১. আবু সালামাহ্ [রাদি.} হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মাজান! আমাকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে অবহিত করুন তো। তিনি বললেনঃ রমাযান ও অন্যান মাসে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের দু রাকআত [সুন্নাত] নামাজ সহ রাতের বেলা মোট তের রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৩]

১৬১২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাতের এক বেলা রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] দশ রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আর এক রাকআত বিত্‌র এবং দু রাকআত ফাজ্‌রের সুন্নাতসহ মোট তের রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৪]

১৬১৩. আবু ইসহাক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে আস্‌ওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ-এর কাছে বর্ণিত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন এবং শেষভাগে জাগতেন। এ সময় যদি স্ত্রীদের সাহচর্য লাভের প্রয়োজন হত তাহলে তা পূরণ করিতেন এবং এরপর আবার ঘুমাতেন। ফাজ্‌রের আযানের সময় [তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে] তিনি ত্বরিতে উঠতেন। আল্লাহর শপথ! তিনি {আয়েশাহ [রাদি.]} বলেননি যে, তিনি গোসল করিতেন। তার উদ্দেশ্য আকাঙ্খা আমি ভাল করেই জানতাম। তিনি নাপাক না হয়ে থাকলে কোন লোক শুধু নামাজের জন্য যেভাবে ওযূ করে থাকে সেভাবে ওযূ করিতেন এবং তারপর ফাজ্‌রের দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৫]

১৬১৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলা যে নামাজ আদায় করিতেন তাতে সর্বশেষে আদায় করিতেন বিত্‌র নামাজ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৫৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৬]

১৬১৫. মাসরূক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর আমাল সম্পর্কে আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিয়মিত আমালকে পছন্দ করিতেন। মাসরূক্ব বলেন, আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলাম : তিনি নামাজ আদায় করিতেন কোন্‌ সময়? আয়িশা [রাদি.] বললেনঃ তিনি যখন মোরগের ডাক শুনতেন তখন উঠে নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৭]

১৬১৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার ঘরে অথবা আমার কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় সব সময় সুবহে কাযিব [সাহরীর শুরু] এর সময় হয়ে যেত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৮]

১৬১৭. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ফাজ্‌রের দু রাকআত নফল [নামাজ] আদায় করার পর আমি জাগ্রত থাকলে নবী [সাঃআঃ] আমার সাথে কথাবার্তা বলিতেন। অন্যথায় শুয়ে পড়তেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬০৯]

১৬১৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১০]

১৬১৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতের বেলা নামাজ আদায় করিতেন। তাহাঁর বিত্‌র পড়া শেষ হয়ে গেলে তিনি আয়িশা [রাদি.] কে লক্ষ্য করে বলিতেন : হে আয়েশাহ! ওঠো এবং বিত্‌র পড়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১১]

১৬২০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন রাতের বেলা নামাজ আদায় করিতেন তখন আয়িশা [রাদি.] তাহাঁর সামনে তাড়াতাড়ি শুয়ে থাকতেন। নামাজ শেষে যখন তাহাঁর শুধুমাত্র বিত্‌র পড়া বাকি থাকত তখন তিনি আয়েশাহ কে জাগিয়ে দিতেন। আর তিনি {আয়েশাহ [রাদি.]} তখন উঠে বিত্‌র আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৫,ইসলামিক সেন্টার-১৬১২]

১৬২১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সারা রাতের যে কোন সময় রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বিত্‌র আদায় করিয়াছেন। এমন কি কোন কোন সময় রাতের শেষভাগেও তিনি [সাঃআঃ] বিত্‌র নামাজ আদায় করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৩]

১৬২২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সারা রাতের যে কোন অংশে রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] বিত্‌র নামাজ আদায় করিয়াছেন। তিনি রাতের প্রথমভাগে, মধ্যভাগে, শেষভাগে এবং এমনি ভোরে বিত্‌র আদায় করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৪]

১৬২৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সারা রাতের মধ্যে যে কোন সময় রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বিত্‌রের নামাজ আদায় করিয়াছেন। এমনকি তিনি শেষ রাতেও বিত্‌র আদায় করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৫]

১৮. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালীন নামাজ – আর যে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ে

১৬২৪. যুরারাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আল্লাহর পথে [আজীবন] লড়াই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। তাই তিনি মাদীনায় আগমন করিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন এ উদ্দেশে তিনি তার জমি-জমা বিক্রি করে তা দ্বারা অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের ঘোড়া কিনবেন এবং রোমান অর্থাৎ খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু জিহাদ করবেন। তাই মদীনায় এসে তিনি মাদীনাহ্‌বাসী কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাঁকে ঐরূপ করিতে নিষেধ করিলেন। তারা তাকে এ কথাও জানালেন যে, নবী [সাঃআঃ] এর জীবদ্দশায় ছয়জন লোকের একটি দল এ একই করিতে চাইলে আল্লাহর নবী [সাঃআঃ] তা করিতে নিষেধ করেছিলেন : আমার জীবন ও কর্মে কি তোমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ নেই? তারা [মাদীনাহ্‌বাসী] যখন তাকে এ কথাটি শুনালেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলেন [রুজআত করিলেন] এবং কিছু লোককে এ ব্যাপারে সাক্ষী রাখলেন। কেননা এ কাজের [জিহাদের] জন্য তিনি তার স্ত্রীকে ত্বলাক দিয়েছিলেন। এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস-এর কাছে এসে তাঁকে রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর বিত্‌র নামাজ আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস তাঁকে বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর বিত্‌র নামাজ সম্পর্কে পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জানে আমি এমন একজন লোকের সন্ধান কি তোমাকে দিব না? তিনি [সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির] বললেনঃতিনি কে? আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস বললেনঃ তিনি হলেন আয়িশা [রাদি.]। তার কাছে গিয়ে তুমি জিজ্ঞেস করিবে, তারপর তোমাকে দেয়া তাহাঁর জবাব আমাকে এসে জানাবে। আমি তখন তাহাঁর কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম। প্রথমে আমি হাকীম ইবনি আফ্‌লাহ-র কাছে গেলাম। আমি তাকে আমার সাথে তাহাঁর [আয়েশাহ] এ দু দলের ব্যাপারে কোন কিছু বলিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্ত তিনি তা না শুনে বরং একটি পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির বলেনঃ তখন আমি তাঁকে ক্বসম দিয়ে যেতে বললাম। তাই তিনি যেতে রাজি হলেন। আমরা আয়িশা [রাদি.] এর কাছে গিয়ে তাঁকে অবহিত করলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দান করিলেন। আমরা তাহাঁর কাছে গেলে তিনি হাকীম আফ্‌লাহ কে চিনতে পারলেন। তাই বললেনঃ আরে , এ যে হাকীম? তিনি [হাকীম ইবনি আফ্‌লাহ] বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন : তোমার সাথে কে আছে? তিনি বলিলেন ” সাদ ইবনি হিশাম [ইবনি আমির]। তিনি প্রশ্ন করিলেন। কোন্‌ হিশাম? হাকীম ইবনি আফ্‌লাহ বললেনঃ আমিরের পুত্র হিশাম। এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি খুব স্নেহপ্রবণ হলেন এবং তার ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করিলেন। ক্বাতাদাহ্ বর্ণনা করিলেন : আফ্‌লাহ উহুদের যু্দ্ধে শাহীদ হয়েছিলেন। এরপর আমি বললাম : হে উম্মুল মুমিনীন! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর আখলাক্ব সম্পর্কে আমাকে কিছু অবহিত করুন। এ কথা শুনে তিনি আমাকে বলিলেন, তুমি কি কুরআন পড় না? আমি বললাম হ্যাঁ, পড়ি। তিনি বলিলেন, আল্লাহর নবী [সাঃআঃ]-এর আখলাক্ব তো ছিল কুরআন। সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির বলেছেনঃ আমি তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম উঠে চলে আসি এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ ব্যাপারে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করি। কিন্তু আমার মনে আবার একটি নতুন ধারণা জাগল। তাই আমি বললাম : আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রাতের ইবাদাত [ক্বিয়ামুল লায়ল] সম্পর্কে কিছু অবহিত করুন। তিনি এবার আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন : তুমি কি সুরাহ্ “ইয়া আইয়ুহাল মুযযা্‌ম্‌মিল” পড় না? আমি বললাম-হ্যাঁ পড়ি। তিনি বলিলেন ” মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ এ সূরার প্রথমভাগে “ক্বিয়ামুল লায়ল” বা রাতের ইবাদাত বন্দেগী ফরয করে দিয়েছেন। তাই এক বছর পর্যন্ত নবী [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীগণ রাতের বেলা ইবাদাত করিয়াছেন। মহান আল্লাহ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ আসমানে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন [অর্থাৎ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ অবতীর্ণ করেননি]। অবশেষে [বারো মাস পরে] এ সূরার শেষে আল্লাহ তাআলা রাতের ইবাদাতের হুকুম লঘু করে আয়াত অবতীর্ণ করিলেন। আর এ কারণে রাত জেগে ইবাদাত যেখানে ফরয ছিল সেখানে তা নফল বা ঐচ্ছিক হয়ে গেল। সাদ ইবনি হিশাম বলেনঃ আমি বললাম, হে উম্মূল মুমিনীন! রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর বিত্‌র নামাজ সম্পর্কে আমাকে কিছু অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ আমরা তাহাঁর জন্য মিসওয়াক এবং ওযূর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। অতঃপর রাতের বেলা মহান আল্লাহ যখন চাইতেন তখন তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক করিতেন। ওযূ করিতেন এবং নয় রাকআত [বিত্‌র] নামাজ আদায় করিতেন। এতে অষ্টম রাকআত ছাড়া বসতেন না। এ বৈঠকে তিনি আল্লাহকে স্মরণ করিতেন, তাহাঁর প্রশংসা করিতেন এবং তার কাছে প্রার্থনা করিতেন। অতঃপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে আমরা তা শুনতে পেতাম। এবার সালাম ফিরানোর পর ঘরে বসেই তিনি দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। তারপর বললেনঃ হে বৎস! এ এগার রাকআত নামাজ তিনি রাতে আদায় করিতেন। পরবর্তীতে নবী [সাঃআঃ] এর বয়স বেড়ে গিয়েছিল এবং শরীরও কিছুটা মাংসল হয়ে গিয়েছিল তখন তিনি সাত রাকআত বিত্‌র আদায় করিতেন। এক্ষেত্রেও তিনি শেষের দু রাকআত নামাজ পূর্বের মতো করেই আদায় করিতেন : হে বৎস! এভাবে তিনি নয় রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আর নবী [সাঃআঃ] কোন নামাজ আদায় করলে তা সর্বদা নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করিতেন। যখন ঘুমের প্রাবল্য বা ব্যথা-বেদনার কারণে তিনি রাতে ইবাদাত [নামাজ আদায়] করিতে পারতেন না, তখন দিনের বেলা বারো রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। আর নবী [সাঃআঃ] এক রাতে পুরো কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করিয়াছেন বা সকাল পর্যন্ত সারা রাত আদায় করিয়াছেন কিংবা রমাযান মাস ছাড়া সারা মাস সিয়াম [রোযা] পালন করিয়াছেন এমনটি আমি কখনো দেখিনি। সাদ ইবনি হিশাম ইবনি আমির বর্ণনা করিয়াছেন পরে আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কাছে এসে আয়িশা [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তিনি সঠিক বলেছেন। আমি যদি তাহাঁর কাছে থাকতাম বা তাহাঁর কাছে যেতাম তাহলে নিজে তাহাঁর মুখ থেকে হাদীসটি শুনতে পেতাম। সাদ ইবনি হিশাম বললেনঃ আমার যদি জানা থাকত যে, আপনি তাহাঁর কাছে যান না, তাহলে আপনাকে আমি তাহাঁর কথা বলতাম না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬০৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৬]

১৬২৫. সাদ ইবনি হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তার স্ত্রীকে ত্বলাক্ব দিয়ে নিজের জমিজমা বিক্রি করার জন্য মদীনায় আসলেন ….. পুর্বোক্ত হাদীসের মতো বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬১০, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৭]

১৬২৬. সাদ ইবনি হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর কাছে গিয়ে তাঁকে রসুলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর বিত্‌র নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর তিনি হাদীসটি হুবহু পূর্বে বর্ণিত হাদীসের মতো বর্ণনা করিলেন। তবে এতে তিনি এ কথাও বর্ণনা করিয়াছেন যে, আয়েশাহ [রাদি.] বললেনঃ কোন্‌ হিশাম? তখন আমি বললাম আমির-এর পুত্র হিশাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ আমির কত উত্তম মানুষ ছিলেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত লাভ করেছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬১১, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৮]

১৬২৭. যুরারাহ্ ইবনি আওফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

সাদ ইবনি হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ছিলেন তাহাঁর প্রতিবেশী। তিনি যুরারাহ্‌কে স্বীয় স্ত্রীকে ত্বলাক দেয়ার কথা জানালেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি সাঈদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিলেন যাতে এ কথাও বর্ণিত হয়েছে যে, আয়িশা [রাদি.] জিজ্ঞেস করিলেন : কোন্ হিশাম-এর কথা বলছ? তখন হাকীম ইবনি আফ্‌লাহ বললেনঃআমিরের পুত্র হিশামের কথা বলছি। এ কথা শুনে আয়েশাহ বলে উঠলেন- আমির কত ভাল লোক ছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে উহুদ যুদ্ধে শারীক হয়ে শাহাদাত বরণ করিয়াছেন। এ হাদীসে এ কথাও বর্ণিত হয়েছে যে, হাকীম ইবনি আফ্‌লাহ বললেনঃযদি আমার জানা থাকত যে, আপনি আয়িশা [রাদি.]-এর কাছে যান না তাহলে আমি আপনাকে তার সম্পর্কে বলতাম না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬১২, ইসলামিক সেন্টার- ১৬১৯]

১৬২৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন কারণে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর রাত্রিকালীন কোন নামাজ ক্বাযা হয়ে গেলে দিনের বেলা তিনি বারো রাকআত নামাজ আদায় করে নিতেন।

[ই,ফা. ১৬১৩, ইসলামিক সেন্টার-১৬২০]

১৬২৯. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন আমাল বা কাজ করলে তা সর্বদা অর্থাৎ নিয়মিতভাবে করিতেন। আর রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়লে বা অসুস্থ হলে পরিবর্তে দিনের বেলা বারো রাকআত নামাজ আদায় করে নিতেন। আয়িশা [রাদি.] বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কখনো ভোর পর্যন্ত সারারাত জেগে ইবাদাত করিতে বা রমাযান মাস ছাড়া এক নাগাড়ে পুরো মাস সিয়াম পালন করিতে দেখেনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬১৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৬২১]

১৬৩০. উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ তার [রাতের বেলার] অযীফাহ্ বা করণীয় কাজ কিংবা তার কিছু অংশ করিতে ভুলে গেলে তা যদি সে ফাজ্‌র ও যুহরের নামাজের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আদায় করে নেয় তাহলে তা এমনভাবে তার জন্য লিখে নেয়া হইবে যেন সে তা রাতের বেলায়ই সম্পন্ন করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৬১৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৬২২]


Posted

in

by

Comments

One response to “রাতের নামাজ রাকাত। নফল সালাত বসে পড়া”

Leave a Reply