রসূলুল্লাহ সাঃএর নামসমূহ, ফযীলত ও অনুসরণ
রসূলুল্লাহ সাঃএর নামসমূহ, ফযীলত ও অনুসরণ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৩৪. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নামসমূহ
৩৫. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর আল্লাহ সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তাঁকে অত্যধিক ভয় করা
৩৬. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর অনুসরণ ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
৩৭. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে সম্মান প্রদর্শন করা এবং অকারণে বেশি প্রশ্ন করা বা কষ্ট দেয়া ও অবাঞ্চিত ইত্যাদি বিষয় থেকে বিরত থাকা
৩৮. অধ্যায়ঃ শারীয়াত হিসেবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা আদেশ করিয়াছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন তা পালন করা ওয়াজিব নয়
৩৯. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে দেখার ফযীলত ও এর আকাঙ্ক্ষা
৩৪. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ সাঃএর নামসমূহ
৫৯৯৯. জুবায়র ইবনি মুতইম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি মুহাম্মাদ [প্রশংসিত], আমি আহ্মাদ [অত্যধিক প্রশংসাকারী], আমি আল-মাহী [বিলুপ্তকারী] এমন লোক যে, আমার মাধ্যমে কুফ্রকে নিঃশেষ করা হইবে। আমি আল-হাশির [একত্রকারী] এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকেদের একত্রিত করা হইবে। আমি আল-আকিব [সর্বশেষ]; আর আল-আকীব, ঐ লোক যার পর আর কোন নবী নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩১]
৬০০০. জুবায়র ইবনি মুতইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার বহু নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহ্মাদ, আমি আল-মাহী [বিলোপ সাধনকারী] ঐ লোক যে, আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফ্রকে নিঃশেষ করবেন, আমি আল-হাশির [একত্রকারী] এমন লোক যে, আমার পায়ের নিকট লোকেদের একত্রিত করা হইবে। আমি আল-আকীব [শেষ]; এমন লোক যার পর কেউ [নবী] নেই এবং আল্লাহ তাহাঁর নাম রেখেছেন রঊফ ও রহীম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩২]
৬০০১. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। শুআয়ব এবং মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসে আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে শুনেছি তিনি বর্ণনা করিয়াছেন। আর মামারের হাদীসে আছে, তিনি বলেন, আমি যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করলাম, আল-আকিব কী? তিনি বলিলেন, এমন লোক যার পর আর নবী নেই।
মামার ও উকায়ল-এর হাদীসে রয়েছে আল-কাফারাতা, আর শুআয়ব-এর হাদীসে আছে আল-কুফ্র।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৩]
৬০০২. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট তাহাঁর নিজের নামগুলো রিওয়ায়াত করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহ্মাদ, আল-মুকাফ্ফী [সর্বশেষ], আল-হাশির [একত্রকারী], তাওবার নবী ও রহ্মাতের নবী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৪]
৩৫. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর আল্লাহ সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তাঁকে অত্যধিক ভয় করা
৬০০৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একটি কাজ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিলেন এবং এটি জারি রাখলেন। এ খবর তাহাঁর কিছু সহাবার নিকট পৌঁছলে তারা এ কাজটি পছন্দ করিলেন না এবং এ থেকে বিরত রইলেন। এ কথা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জানতে পেরে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলেন। তিনি বললেনঃ জনগণের কী হলো, তাদের নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, একটা কাজে আমি সম্মতি দিয়েছি, তারপরও তারা একে নিকৃষ্ট মনে করছে এবং এ থেকে বিরত থাকছে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী জানি এবং আল্লাহকে তাদের তুলনায় অত্যধিক ভয় করি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৫]
৬০০৪. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে জারীর [রাদি.]-এর হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৮৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৬]
৬০০৫. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি কাজকে জায়িয করিলেন, অন্য কিছু লোক তা খারাপ মনে করিল। এ কথা নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছলে তিনি রেগে গেলেন; এমনকি তাহাঁর মুখায়বে রাগ প্রকাশ পেল। তখন তিনি বললেনঃ লোকদের কী হলো যে, আমার জন্য বৈধ একটা কাজে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই আল্লাহ সম্পর্কে তাদের চেয়ে অধিক জানি এবং তাঁকে অধিক ভয় করি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০০, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৭]
৩৬. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর অনুসরণ ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে
৬০০৬. আবদুল্লাহ ইবনি যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আনসারদের জনৈক লোক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সম্মুখে যুবায়র [রাদি.]-এর সাথে পানি সেচের নালা নিয়ে বিতর্ক করিল যা থেকে তারা খেজুর গাছে পানি দিত। আনসার ব্যক্তিটি বলিলেন, পানি ছেড়ে দাও, তা প্রবাহিত হইতে থাকুক। যুবায়র [রাদি.] তা মানলেন না। শেষ অবধি সকলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সম্মুখে তর্ক করলে তিনি যুবায়রকে বলিলেন, হে যুবায়র! তোমার পানি নেয়া হলে তোমার প্রতিবেশীর জন্য ছেড়ে দাও। সে সময় আনসার ব্যক্তিটি রাগান্বিত স্বরে বলিল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যুবায়র তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে নবী [সাঃআঃ]-এর চেহারার রং পাল্টে গেলো। তিনি বলিলেন, হে যুবায়র! নিজের বৃক্ষগুলোকে পানি দাও এবং পানি আটকিয়ে রাখো, যে পর্যন্ত না পানি বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যুবায়র [রাদি.] বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার ধারণা হয় এ আয়াত সে ব্যাপারেই নাযিল হয় :
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا
“তোমার প্রতিপালকের কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুমিন হইতে পারবে না ……”- [সুরা আন্ নিসা ৪ : ৭৫]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০১, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৮]
৩৭. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে সম্মান প্রদর্শন করা এবং অকারণে বেশি প্রশ্ন করা বা কষ্ট দেয়া ও অবাঞ্চিত ইত্যাদি বিষয় থেকে বিরত থাকা
৬০০৭. আবদুর রহমান ও সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তাঁরা দুজনে বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলিতেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, আমি তোমাদের যা বারণ করেছি তা হইতে বিরত থাকো এবং যা তোমাদের নির্দেশ করেছি তা যা সম্ভব পালন করো। কেননা, অধিক জিজ্ঞাসা ও স্বীয় নবীগণের সঙ্গে মতবিরোধ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০২, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৩৯]
৬০০৮. ইবনি শিহাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪০]
৬০০৯. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ “আমি তোমাদের জন্য যা ছেড়ে দিয়েছি তোমরাও আমাকে সে বিষয়ে ছেড়ে দাও” [অর্থাৎ সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না]। হাম্মাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসে আছে, “যে বিষয়ে তোমাদের ছাড় দেয়া হয়েছে।” কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে, এরপর তাঁরা আবু হুরায়রা হইতে যুহরী এবং আবু সালামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪১]
৬০১০. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিমদের মাঝে সর্বাধিক দোষী ঐসব লোক, যে এমন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, যা মুসলিমদের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ ছিল না। আর তাহাঁর জিজ্ঞেস করার কারণে সে ব্যাপারটি মুসলিমদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪২]
৬০১১. সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিমদের মধ্যে সর্বাধিক অপরাধী মুসলিম সে-ই, যে মুসলিমদের জন্য যা অবৈধ নয়, এমন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, আর সে ব্যাপারটি তার জিজ্ঞেস করার কারণে লোকদের উপর অবৈধ ঘোষণা দেওয়া হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৩]
৬০১২. হারমালাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইউনুস থেকে এবং আবদ ইবনি হুমায়দ মামার হইতে বর্ণীতঃ
উভয়ে উক্ত সানাদে যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে রিওয়ায়াত করেন। তবে মামার-এর হাদীসে যুহরীর রিওয়ায়াতে বর্ধিত আছে- “কোন লোক কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে এবং তৎসম্পর্কে অধিক জিজ্ঞেস করে”। ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীত ইউনুসের হাদীসে আছে যে, যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তিনি আমির ইবনি সাদ হইতে শুনেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৪]
৬০১৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তাহাঁর সহাবীদের কোন কথা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট পৌঁছল। তখন তিনি এক বক্তৃতা দিলেন এবং বললেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উপস্থিত করা হয়। আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি আর কখনো দেখিনি। আমি যা জানতে পেরেছি, তা যদি তোমরা জানতে, তবে তোমরা অবশ্যই খুবই কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে। আনাস [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবীদের উপর এর চাইতে বিভীষিকাময় কোন দিন আর আসেনি। তাঁরা নিজেদের মাথা আবৃত করিল এবং তাঁদের ভেতর হইতে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল। আনাস [রাদি.] বলেন, তারপর উমর [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, আমরা সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে নবী হিসেবে মেনে নিলাম। অতঃপর এক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। তখন এ আয়াত নাযিল হলোঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَسْأَلُوا عَنْ أَشْيَاءَ إِنْ تُبْدَ لَكُمْ تَسُؤْكُمْ
“হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না, যা উন্মোচিত হলে তোমরা বেদনার্ত হইবে”- [সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১০১]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৫]
৬০১৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জনৈক লোক বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। আর তখনই নাযিল হয়ঃ হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না যা উন্মোচিত হলে তোমরা বেদনার্ত হইবে … আয়াতের শেষাংশ পর্যন্ত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৬]
৬০১৫.আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্য ঢলে যাওয়ার পর বের হলেন এবং লোকদের নিয়ে যুহরের নামাজ আদায় করিলেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন মিম্বারে দাঁড়িয়ে কিয়ামাতের আলোচনা করে বর্ণনা করিলেন যে, এর পূর্বে বহু বড় বড় বিষয় ঘটবে। তারপর বললেনঃ তোমাদের মাঝে যে লোক আমাকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিতে চায় সে যেন ঐ সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহর শপথ! যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এ স্থানে রয়েছি ততক্ষণ তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞেস করিবে আমি তা বলে দিব।
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, এ কথা শুনে লোকেরা অনেক চিৎকার আরম্ভ করে দিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বারবার বলিতে থাকলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো। তখন আব্দুল্লাহ ইবনি হুযাফাহ্ [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, আমার পিতা কে? হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ্। তারপর যখন রসূল [সাঃআঃ] বারবার বলিতে থাকলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো। তখন উমর [রাদি.] হাঁটু গেড়ে বসে বলিলেন, সন্তুষ্টচিত্তে আমরা আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে রসূল হিসেবে মেনে নিয়েছি। আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] বলেন, যখন উমর [রাদি.] এ কথা বলিলেন, তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেমে গেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ বিপদ সন্নিকটবর্তী। মুহাম্মাদের জীবন যাঁর হাতে তাহাঁর শপথ! এ দেয়ালটির পাশে এখনই আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। অতএব, আজকের মতো ভাল এবং খারাবী আমি আর দেখিনি।
ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উবাইদুল্লাহ ইবনি আব্দুল্লাহ ইবনি উত্বাহ্ আমাকে বলেছেন, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনি হুযাফার মা আব্দুল্লাহ ইবনি হুযাফাহ্কে বলেছেন, তোর চাইতে অধিক অবাধ্য কোন সন্তানের ব্যাপারে আমি শুনিনি। তুই কি এ কথা হইতে নিশ্চিন্ত ছিলি যে, তোর মাও হয়ত এমন কোন পাপ করে বসেছে যা জাহিলী যুগের নারীরা করত, আর তুই তোর মাকে লোকদের সম্মুখে অপমান করতিস? আব্দুল্লাহ ইবনি হুযাফাহ্ [রাদি.] জবাবে বলিলেন, আল্লাহর শপথ! আমাকে যদি একটা কালো হাবশীর সঙ্গেও সম্পর্কিত করিতেন তাহলে আমি তা মেনে নিতাম
। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৭]
৬০১৬. আনাস [রাদি.]-এর সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] হইতে এ হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। উবাইদুল্লাহ হাদীসটিও এর সাথে রয়েছে, তবে শুআয়ব যুহরীর সূত্রে তিনি আবদুল্লাহ থেকে, তিনি জনৈক আহলে ইল্ম থেকে শুনেছেন- আবদুল্লাহ ইবনি হুযাফার মা ইউনুসের হাদীসের অনুরূপ বলেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১০, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৮]
৬০১৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
লোকেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিতে লাগল। এমনকি তারা তাঁকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলল, একদা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে এসে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন করো, যে কোন ব্যাপারে তোমরা আমাকে প্রশ্ন করিবে, আমি অবশ্যই তোমাদের নিকট তা বর্ণনা করে দিব। লোকেরা এ কথা শুনে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হইতে মুখ বন্ধ রাখল এবং ঘাবড়িয়ে গেল, না জানি সামনে কোন ঘটনা সামনে এসে পড়ে।
আনাস [রাদি.] বলেন, আমি ডানে বামে দেখিতে লাগলাম। সকল লোক স্ব স্ব মাথা আবৃত করে কান্নাকাটি করছিল। তখন মাসজিদ হইতে জনৈক ব্যক্তি উঠল যার সাথে ঝগড়া লাগলে তাহাঁর পিতা ছাড়া অন্যের দিকে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। সে বলিল, হে আল্লাহর নবী! কে আমার পিতা? তিনি বলিলেন, তোমার পিতা হুযাফাহ্। তারপর উমর [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, [আমরা আন্তরিকতার সাথে] আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ [সাঃআঃ] -কে রসূল হিসেবে মেনে নিলাম। আর আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি ফিতনার অকল্যাণ থেকে। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আজকের মতো ভাল এবং খারাপ আমি কক্ষনো দেখিনি। আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাই আমি উভয়টিকে এ দেয়ালের পাশে দেখিতে পাই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১১, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৪৯]
৬০১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ বিবরণই রিওয়ায়াত করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১২, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫০]
৬০১৯. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-কে এমন কতক ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো যা তিনি অপছন্দ করেন। যখন এ রকম প্রশ্ন বারবার করা হলো, তিনি রাগান্বিত হয়ে লোকদেরকে বললেনঃ যা ইচ্ছে তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো। জনৈক লোক বলিল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ্। আরেক লোক দাঁড়িয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শাইবার গোলাম সালিম। উমর [রাদি.] যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মুখমণ্ডলে রাগের লক্ষণ দেখিতে পেলেন, তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ করছি। আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় [কেবল এটুকু] আছে, বলিল, কে আমার পিতা, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বলিলেন, তোমার পিতা শাইবার দাস সালিম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫১]
৩৮. অধ্যায়ঃ শারীয়াত হিসেবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যা আদেশ করিয়াছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন তা পালন করা ওয়াজিব নয়
৬০২০. তাল্হাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে খর্জুর বৃক্ষের মাথায় দাঁড়ানো একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এরা কি করছে? মানুষেরা বলিল, এরা খেজুর গাছের পরাগায়ণ করছে। নরকে মাদীর [কেশর] সংমিশ্রণ করে, ফলে তা গর্ভ ধারণ করে। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার মনে হয় না এতে কোন লাভ হয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বক্তব্য সাহাবাদের নিকট পৌঁছলে তাঁরা প্রজনন কর্ম থেকে বিরত থাকেন। তারপর এ সংবাদ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেয়া হলো। তিনি বলিলেন, এতে যদি তাদের লাভ হয়ে থাকে তবে তাঁরা করুক। আমি তো ধারণাপ্রসুত- এ কথা বলেছি। তাই তোমরা আমার অনুমানকে ধরে রেখো না। কিন্তু আমি যদি আল্লাহর তরফ হইতে কোন কথা বলি, তবে সেটার উপর আমাল করো। কারণ আমি আল্লাহর উপর কখনই মিথ্যা অপবাদ দেই না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫২]
৬০২১. রাফি ইবনি খাদীজ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনায় আসলেন। সে সময় লোকেরা খেজুর বৃক্ষ তাবীর করত। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ- খেজুর বৃক্ষকে পরাগায়ন করাত। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কি করছ? তাঁরা বলিল, আমরা তো এমন করে আসছি। তিনি বলিলেন, [আমার মনে হয়] তোমরা এমন না করলেই ভাল হয়। তাই তাঁরা তা ছেড়ে দিল। আর এতে করে খেজুর ঝরে পড়ল কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার উৎপাদন হ্রাস পেল। বর্ণনাকারী বলেন, মানুষেরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এ ঘটনা ব্যক্ত করিল। তখন তিনি বলিলেন, আমি তো একজন মানুষ মাত্র এতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বীনের ব্যাপারে যখন তোমাদের আমি কোন নির্দেশ দেই তোমরা তখন তা পালন করিবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার ধ্যান-ধারণা থেকে বলি, তখন [বুঝতে হইবে] আমি একজন মানুষ মাত্র।
বর্ণনাকারী ইকরামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, নবী [সাঃআঃ] অনুরূপ বলেছেন।
আর মাকিরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নিঃসন্দেহে শুধু নাফাযাত [ঝড়ে পড়ল] বলেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫৩]
৬০২২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] যারা খেজুর বৃক্ষ তাবীর করত এদের কতক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বলিলেন, এটি যদি না করিতে তাহলে তোমাদের ভাল হতো। লোকেরা বিরত থাকল। এতে চিটা খেজুর উৎপন্ন হলো। তারপরে কোন এক সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি প্রশ্ন করিলেন, তোমাদের খেজুর বৃক্ষের কি হলো? ব্যক্তিরা বলিল, আপনি এরূপ এরূপ বলেছিলেন [সেটি করায় এমন হয়েছে]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের দুনিয়াবী ব্যাপারে তোমরাই ভাল জানো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫৪]
৩৯. অধ্যায়ঃ রসূলুল্লাহ সাঃ কে দেখার ফযীলত ও এর আকাঙ্ক্ষা
৬০২৩. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু হুরায়রা্ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে আমাদের নিকট রিওয়ায়াত করিয়াছেন, তার মাঝ হইতে একটি হাদীস হলো এই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাহাঁর শপথ! তোমাদের উপর এমন এক মুহূর্ত আসবে যখন তোমরা আমার সাক্ষাৎ পাবে না; আর আমার সাক্ষাৎ লাভ তোমাদের নিকট তখন তোমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের চেয়েও অধিক আকাঙ্খার বস্তু হইবে।
আবু ইসহাক্ বলেন, হাদীসের শব্দের মধ্যে কিছু তাক্দীম ও তাখীর হয়েছে। আমার মতে, হাদীসের অর্থ হল “আমাকে তাদের সাথে দেখিতে পাওয়াটা তাদের নিকট তাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়ে অধিক প্রিয় হইবে।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৫৯৫৫]
Leave a Reply