রমজানের সাওম ওয়াজিব । ঈদের দুই মাস কম হয় না

রমজানের সাওম ওয়াজিব । ঈদের দুই মাস কম হয় না

রমজানের সাওম ওয়াজিব । ঈদের দুই মাস কম হয় না >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

৩০/১. অধ্যায়ঃ রমযানের সওম ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে
৩০/২. অধায়ঃ সাওমের ফযীলত
৩০/৩. অধ্যায়ঃসওম (পাপের) কাফ্‌ফারা (ক্ষতিপূরণ) ।
৩০/৪. অধ্যায়ঃ সওম পালনকারীর জন্য রাইয়্যান ।
৩০/৫. অধ্যায়ঃ রমযান বলা হইবে, না রমযান মাস বলা হইবে? আর যাদের মতে উভয়টি বলা যাবে ।
৩০/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে সংকল্প সহকারে সিয়াম পালন করিবে।
৩০/৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) রমযানে সবচেয়ে বেশী দান করিতেন ।
৩০/৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করে না ।
৩০/৯. অধ্যায়ঃ কাউকে গালি দেয়া হলে সে কি বলবে, আমি তো সায়িম?
৩০/১০. অধ্যায়ঃ অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ব্যাপারে ভয় করে, তার জন্য সওম ।
৩০/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ যখন তোমরা চাঁদ দেখ তখন সওম আরম্ভ কর আবার যখন চাঁদ দেখ তখনই ইফতার কর ।
৩০/১২. অধ্যায়ঃ ঈদের দুই মাস কম হয় না ।
৩০/১৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ আমরা লিপিবদ্ধ করি না এবং হিসাবও করি না ।
৩০/১৪. অধ্যায়ঃ রমযানের একদিন বা দুদিন পূর্বে সওম আরম্ভ করিবে না ।
৩০/১৫. অধায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা । তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক । আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে । সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করিলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন । অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করিতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করিয়াছেন তা কামনা কর ।” (আল-বাকারাহ : ১৮৭)

৩০/১. অধ্যায়ঃ রমযানের সাওম ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে

মহান আল্লাহর বাণীঃ

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ

“হে মুমিনগন! তোমাদের জন্য সিয়াম ফরয করা হল, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হইতে পার।”

(আল-বাকারাহঃ ১৮২)

১৮৯১. তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এলোমেলো চুলসহ একজন গ্রাম্য আরব রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এলেন। অতঃপর বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কত সালাত ফারয্‌ করিয়াছেন? তিনি বললেনঃ পাঁচ (ওয়াক্ত) সালাত; তবে তুমি যদি কিছু নফল আদায় কর তা স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বলিলেন, বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কত সিয়াম ফারয্‌ করিয়াছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ রমযান মাসের সাওম; তবে তুমি যদি কিছু নফল সিয়াম আদায় কর তা হল স্বতন্ত্র কথা। এরপর তিনি বলিলেন, বলুন, আল্লাহ আমার উপর কী পরিমাণ যাকাত ফরয করিয়াছেন? রাবী বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে ইসলামের বিধান জানিয়ে দিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, ঐ সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে সম্মানিত করিয়াছেন, আল্লাহ আমার উপর যা ফরয করিয়াছেন, আমি এর মাঝে কিছু বাড়াব না এবং কমাবও না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ সে সত্য বলে থাকলে সফলতা লাভ করিল কিংবা বলেছেন, সে সত্য বলে থাকলে জান্নাত লাভ করিল।

১৮৯২. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আশূরার দিন সিয়াম পালন করিয়াছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও করিয়াছেন। পরে যখন রমযানের সিয়াম ফরয হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ সিয়াম পালন করিতেন না, তবে মাসের যে দিনগুলোতে সাধারণত সিয়াম পালন করিতেন তার সাথে মিল হলে করিতেন।

১৮৯৩. আয়িশাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জাহিলী যুগে কুরায়শগণ আশূরার দিন সাওম পালন করত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- ও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমযানের সিয়াম ফরয হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ যার ইচ্ছা আশূরার সিয়াম পালন করিবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করিবে না।

৩০/২. অধায়ঃ সাওমের ফযীলত

১৮৯৪. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সিয়াম ঢাল স্বরূপ। সুতরাং অশ্লীলতা করিবে না এবং মূর্খের মত কাজ করিবে না। যদি কেউ তার সাথে ঝগড়া করিতে চায়, তাকে গালি দেয়, তবে সে যেন দুই বার বলে, আমি সাওম পালন করছি। ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই সাওম পালনকারীর মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের সুগন্ধির চাইতেও উৎকৃষ্ট, সে আমার জন্য আহার, পান ও কামাচার পরিত্যাগ করে। সিয়াম আমারই জন্য। তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশ গুণ।

৩০/৩. অধ্যায়ঃসাওম (পাপের) কাফ্‌ফারা (ক্ষতিপূরণ) ।

১৮৯৫. হুযাইফাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা উমার (রাদি.) বলিলেন, ফিতনা সম্পর্কিত নাবী (সাঃআঃ)–এর হাদীসটি কার মুখস্ত আছে? হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনিয়াছি যে, পরিবার, ধন-সম্পদ এবং প্রতিবেশীই মানুষের জন্য ফিতনা। সালাত, সিয়াম এবং সদকা এর কাফ্‌ফারা হয়ে যায়। উমার (রাদি.) বলিলেন, এ ফিতনা সম্পর্কে আমি প্রশ্ন করছি না, আমি তো প্রশ্ন করেছি ঐ ফিতনা সম্পর্কে, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় আন্দোলিত হইতে থাকবে। হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন এ ফিতনার সামনে বন্ধ দরজা আছে। উমার (রাদি.) বলিলেন, এ দরজা কি খুলে যাবে, না ভেঙ্গে যাবে? হুযাইফাহ (রাদি.) বলিলেন, ভেঙ্গে যাবে। উমার (রাদি.) বলিলেন, তাহলে তো তা কিয়ামত পর্যন্ত বন্ধ হইবে না। আমরা মাসরূক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে বললাম, হুযাইফাহ (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করুন, উমার (রাদি.) কি জানতেন, কে সেই দরজা? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তিনি এরূপ জানতেন যেরূপ কালকের দিনের পূর্বে আজকের রাত।

৩০/৪. অধ্যায়ঃ সাওম পালনকারীর জন্য রাইয়্যান ।

১৮৯৬. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ জান্নাতের রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন সাওম পালনকারীরাই প্রবেশ করিবে। তাদের ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হইবে, সাওম পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ব্যতীত আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করিবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেয়া হইবে। যাতে করে এ দরজাটি দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।

১৮৯৭.আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে কেউ আল্লাহর পথে জোড়া জোড়া ব্যয় করিবে তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হইতে ডাকা হইবে, হে আল্লাহর বান্দা! এটাই উত্তম। অতএব যে সালাত আদায়কারী, তাকে সলাতের দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে মুজাহিদ, তাকে জিহাদের দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে সিয়াম পালনকারী, তাকে রাইয়্যান দরজা হইতে ডাকা হইবে। যে সদাকাহ দানকারী, তাকে সদাকাহর দরজা হইতে ডাকা হইবে। এরপর আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, সকল দরজা হইতে কাউকে ডাকার কোন প্রয়োজন নেই, তবে কি কাউকে সব দরজা হইতে ডাকা হইবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আশা করি তুমি তাদের মধ্যে হইবে।

৩০/৫. অধ্যায়ঃ রমযান বলা হইবে, না রমযান মাস বলা হইবে? আর যাদের মতে উভয়টি বলা যাবে ।

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি রমযানে সাওম পালন করিবে” এবং আরো বলেছেনঃ “তোমরা রমযানের আগে সাওম পালন করিবে না”

১৮৯৮. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন রমযান আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

১৮৯৯. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ রমযান আসলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় আর শয়তানগুলোকে শিকলবন্দী করে দেয়া হয়।

১৯০০. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, যখন তোমরা তা (চাঁদ) দেখবে তখন সাওম রাখবে, আবার যখন তা দেখবে তখন ইফ্‌তার করিবে। আর যদি আকাশ মেঘলা থাকে তবে সময় হিসাব করে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করিবে। ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়ার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ব্যতীত অন্যরা লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে উকায়ল এবং ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সুত্রে বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) কথাটি বলেছেন রমযানের চাঁদ সম্পর্কে।

৩০/৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে সংকল্প সহকারে সিয়াম পালন করিবে।

আয়েশা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, কিয়ামাতের দিন নিয়ত অনুযায়ীই লোকদের উঠানো হইবে ।

১৯০১. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি লাইলাতুল ক্বদরে ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রাত জেগে ইবাদাত করে, তার পিছনের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করা হইবে। আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমযানে সিয়াম পালন করিবে, তারও অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ করা হইবে।

৩০/৭. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ) রমযানে সবচেয়ে বেশী দান করিতেন ।

১৯০২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরাঈল (আঃ) যখন তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করিতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করিতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আঃ) তাহাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করিতেন। আর নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে কুরাআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাহাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করিতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করিতেন।

৩০/৮. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি সাওম পালনের সময় মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করে না ।

১৯০৩. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি, তাহাঁর এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।

৩০/৯. অধ্যায়ঃ কাউকে গালি দেয়া হলে সে কি বলবে, আমি তো সায়িম?

১৯০৪. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সাওম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাহাঁর নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢাল স্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাঁকে গালি দেয় অথবা তাহাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন সায়িম। যার কবজায় মুহাম্মাদের প্রাণ, তাহাঁর শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিস্‌কের গন্ধের চাইতেও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রহিয়াছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাহাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করিবে, তখন সওমের বিনিময়ে আনন্দিত হইবে।

৩০/১০. অধ্যায়ঃ অবিবাহিত ব্যক্তি যে নিজের ব্যাপারে ভয় করে, তার জন্য সাওম ।

১৯০৫. আলকামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর সঙ্গে চলতে ছিলাম, তখন তিনি বলিলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম, তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। সাওম তার প্রবৃত্তিকে দমন করে।

আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —— শব্দের অর্থ বিবাহ।

৩০/১১. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ যখন তোমরা চাঁদ দেখ তখন সাওম আরম্ভ কর আবার যখন চাঁদ দেখ তখনই ইফতার কর ।

সেলাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আম্মার (রাদি.) হইতে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে সাওম পালন করিল সে আবুল কাসিম (সাঃআঃ) -এর নাফরমানী করিল ।

১৯০৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম পালন করিবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফ্‌তার করিবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করিবে।

১৯০৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম শুরু করিবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করিবে।

১৯০৮. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (দুহাতের আঙ্গুলি তুলে ইঙ্গিত করে) বলেনঃ মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলিটি বন্ধ করে নিলেন।

১৯০৯. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অথবা বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করিবে এবং চাঁদ দেখে ইফ্‌তার করিবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শাবানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করিবে।

১৯১০.উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক মাসের মত তাহাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা করিলেন। ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সকালে বা সন্ধ্যায় তিনি তাঁদের নিকট গমন করিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।

১৯১১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা করিলেন। এ সময় তাহাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় ঊনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর তিনি নেমে আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।

৩০/১২. অধ্যায়ঃ ঈদের দুই মাস কম হয় না ।

আবু আবদুল্লাহ বলেন, ইসহাক বলেছেন, যদি কম (ঊনত্রিশ) হয় সেটাই পূর্ণ হিসেবে গণ্য । আর মুহাম্মাদ বলেন, (একই বছরে) উভয় ঈদ অপূর্ণ (ঊনত্রিশদিনের) মাস হইবে না ।

১৯১২. আবদুর রহমান ইবনু আবু বাকরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, দুটি মাস কম হয় না। তা হল ঈদের দুমাস- রমযানের মাস ও যুলহাজ্জের মাস। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, রমযান ঘাটতি হলে যুলহাজ্জ পূর্ণ হইবে। আর যুলহাজ্জ ঘাটতি হলে রমযান পূর্ণ হইবে। আবুল হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইসহাক ইবনু রাহওয়াই (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ফাযীলতের দিক হইতে এ দু মাসে কোন ঘাটতি নেই, মাস ঊনত্রিশ দিনে হোক বা ত্রিশ দিনে হোক।

৩০/১৩. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বাণীঃ আমরা লিপিবদ্ধ করি না এবং হিসাবও করি না ।

১৯১৩.ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ আমরা উম্মী জাতি। আমরা লিখি না এবং হিসাবও করি না। মাস এরূপ অর্থাৎ কখনও ঊনত্রিশ দিনের আবার কখনো ত্রিশ দিনের হয়ে থাকে।

৩০/১৪. অধ্যায়ঃ রমযানের একদিন বা দুদিন পূর্বে সাওম আরম্ভ করিবে না ।

১৯১৪. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা কেউ রমযানের একদিন কিংবা দুদিন আগে হইতে সাওম শুরু করিবে না। তবে কেউ যদি এ সময় সিয়াম পালনে অভ্যস্ত থাকে তাহলে সে সেদিন সাওম পালন করিতে পারবে।

৩০/১৫. অধায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ “তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা । তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক । আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সাথে প্রতারণা করছিলে । সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করিলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন । অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করিতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করিয়াছেন তা কামনা কর ।” (আল-বাকারাহ : ১৮৭)

১৯১৫. বারা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)-এর সাহাবীগণের অবস্থা এই ছিল যে, যদি তাঁদের কেউ সাওম পালন করিতেন তাহলে ইফ্‌তারের সময় হলে ইফ্‌তার না করে নিদ্রা গেলে সে রাত্রে এবং পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছুই খেতেন না। কায়স ইবনু সিরমা আনসারী (রাদি.) সাওম করেছিলেন। ইফ্‌তারের সময় তিনি তাহাঁর স্ত্রীর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কাছে কিছু খাবার আছে কি? তিনি বলেলন, না, তবে আমি যাচ্ছি, দেখি আপনার জন্য কিছু খোঁজ করে আনি। তিনি দিনে কাজে নিয়োজিত থাকতেন। তাই ঘুমে তাহাঁর দুচোখ বুজে গেল। এরপর তাহাঁর স্ত্রী এসে যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তাঁকে বলিলেন, হায়, তুমি বঞ্চিত হয়ে গেলে ! পরদিন দুপুর হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। এ ঘটনাটি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উল্লেখ করা হলে কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হয়-

أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ

“সিয়ামের রাতে তোমাদের স্ত্রী সম্ভোগ হালাল করা হয়েছে”- (আল-বাকারাহ: ১৮৭)।

এর হুকুম সম্বন্ধে অবহিত হয়ে সাহাবীগণ খুবই খুশি হলেন। এরপর নাযিল হলঃ

حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ

হাত্তা ইয়াতাবাইনা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদু মিনাল খাইতিল আসওয়াদ,

“আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের সাদা রেখা পরিষ্কার দেখা যায়”- (আল-বাকারাহ: ১৮৭)।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply