রক্ত প্রদর রোগিণী বিষয়ক হাদিস
রক্ত প্রদর রোগিণী বিষয়ক হাদিস >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩, অধ্যায়ঃ ১৩
- অধ্যায়ঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৫৭. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবু হুবায়শ [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি একজন এমন স্ত্রীলোক যে, সব সময় ইস্তিহাযাহ্ রোগে ভূগি। কোন সময়ই পাক হই না। তাই আমি কি সালাত ছেড়ে দিব? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, না। এটা একটি শিরাজনিত রোগ, হায়যের রক্ত নয়। যখন তোমার হায়যের সময় হবে সালাত ছেড়ে দিবে। আর যখন হায়যের নির্দিষ্ট সময় শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমার শরীর হইতে তুমি হায়যের রক্ত ধুয়ে ফেলবে [অর্থাৎ- গোসল করিবে]। অতঃপর সালাত আদায় করিতে থাকিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ২২৮, মুসলিম ৩৩৩, আবু দাউদ ২৮২, নাসায়ী ২১২, তিরমিজি ১২৫, ইবনি মাজাহ ৬২১, দারিমি ৮০৬। রক্ত প্রদর রোগিণী -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৫৮. তাবিঈ উরওয়াহ্ ইব্নু যুবায়র [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবু হুবায়শ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, ফাত্বিমাহ্ সব সময় ইস্তিহাযাহ্ রোগে ভুগতেন। তাই নবী [সাঃআঃ] তাঁকে বলে দিয়েছেন, যখন হায়যের রক্ত আসবে তখন তা কালো হয়, যা সহজে চিনা যায়। এ রক্ত দেখলে সালাত আদায় করিবে না। আর [হায়যের রং] ভিন্ন রকম হলে উযু করে সালাত আদায় করিবে। কারণ এটা রগবিশেষের রক্ত। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ২৮৬, নাসায়ী ২১৫, সহীহুল জামি ৭৬৫। রক্ত প্রদর রোগিণী -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৫৯. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সময়ে জনৈক নারীর ঋতুস্রাব হইতে লাগল। উম্মু সালামাহ তাহাঁর ব্যাপারটি সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ]–কে জিঞ্জেস করিলেন। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, এ অবস্থায় তার দেখিতে হবে গতমাসে যে কয়দিন তার হায়য থাকত,সে কয়দিন সালাত হইতে বিরত থাকিবে। যখন সে পরিমাণ দিন শেষ হয়ে যাবে, সে গোসল করিবে। এরপর কাপড়ের টুকরো দিয়ে নেংটি বেধে সালাত আদায় করিবে। {১}
{১} সহীহ : মালিক ১৩৮, আবু দাউদ ২৭৪, দারিমী ৭৮০, নাসায়ী, সহীহুল জামি ৫০৭৬। রক্ত প্রদর রোগিণী -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৬০. আদী ইবনি সাবিত [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হইতে, ইয়াহইয়া ইব্নু মাঈন বলেন, আদী [রাদি.]–এর দাদার নাম দীনার, তিনি নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করেন। তিনি [সাঃআঃ] মুস্তাহাযাহ্ স্ত্রীলোক সম্পর্কে বলেছেন, সে হায়যগ্রস্ত অবস্থা থাকাকালীন সালাত পরিত্যাগ করিবে। অতঃপর মেয়াদ শেষে গোসল করিবে এবং প্রত্যেক সালাতের সময় উযূ করিবে। আর সিয়াম [রোযা] পালন করিবে ও সালাত আদায় করিবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ২৯৭, তিরমিজি ১২৬, সহীহুল জামি ৬৬৯৮। যদিও হাদিসের সানাদটি দুর্বল কিন্তু তার শাহিদমূলক বর্ণনা থাকায় তা সহীহ-এর স্তরে উন্নীত হয়েছে। রক্ত প্রদর রোগিণী -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৬১. হামনাহ্ বিনতু জাহশ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি গুরুতরভাবে ইস্তিহাযায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। নবী [সাঃআঃ]–এর নিকট এ অবস্থার কথা বলিতে ও এর মাসআলা জানতে আসলাম । আমি তাঁকে আমার বোন যায়নাব বিন্তে যাহাশ [রাদি.]–এর ঘরে পেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি ইস্তিহাযার গুরুতর রোগে ভুগছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে কি নির্দেশ দেন? এ কারণে আমি সালাত- সিয়াম ঠিকমত করিতে পারছি না। উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমি তোমাকে সেখানে পট্টি দিতে উপদেশ দিচ্ছি। তা রক্ত রোধ করিবে। হামনাহ্ [রাদি.] বললেন, তা তো এ দিয়ে থামবে না। নবী [সাঃআঃ] বললেন, তবে তুমি তার উপর কাপড় দিয়ে পট্টি বেধে নিবে। তিনি বলেন, তা এর চেয়েও অধিক। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তাহলে তুমি পট্টির নীচে কাপড়ের লেঙ্গট বেধে নিবে। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল [সাঃআঃ]! এটা আরও বেশী গুরুতর। আমার পানির স্রোতের ন্যায় রক্তক্ষরণ হয়। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তাহলে তোমাকে আমি দুটি নির্দেশ দিচ্ছি। এর যে কোন একটিই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। আর যদি তুমি দুটোই করিতে পার তাহলে তুমিই অধিক বুঝবে। তারপর তিনি তাঁকে বললেন, [চিন্তা করিবে না, এটা শয়ত্বানের অনিষ্ট সাধনের চেষ্টার একটি অনিষ্ট সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রথম নির্দেশ- তুমি তোমার এ সময়ের ছয়দিন অথবা সাতদিন হায়য হিসেবে ধরবে। প্রকৃত বিষয় আল্লাহ্ জানা আছে। অতঃপর গোসল করিবে। শেষে যখন তুমি মনে করিবে, তুমি পাক ও পবিত্র হয়ে গেছ, মাসের বাকী তেইশ রাত-দিন অথবা চব্বিশ রাত-দিন সালাত আদায় করিতে থাকিবে এবং সিয়ামও পালন করিবে। এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। আর এভাবে প্রতি মাসে তুমি হিসাব করে চলবে যেভাবে অন্যান্য স্ত্রীলোকেরা তাদের হায়যের সময়কে হায়য ও তুহুর-এর সময়কে গণ্য করে ।
দ্বিতীয় নির্দেশ- আর তুমি যদি সক্ষম হও, যুহরকে পিছিয়ে দিতে ও আসরকে এগিয়ে আনতে তাহলে এক গোসলে যুহর ও আসরকে একত্রে আদায় করিবে। এভাবে মাগরিবকে পিছিয়ে নিবে ও ইশাকে এগিয়ে আনবে, তারপর একই গোসলের মাধ্যমে উভয় সালাতকে একসাতে আদায় করিবে। আর ফজরের জন্য ও গোসল করে সালাত পূর্ণ করিবে এবং সওম ও রাখবে। সার কথা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তিন গোসলে আদায় করিবে। তারপর দু ওয়াক্ত সালাতকে একত্রে আদায় করিবে। তুমি যদি এ নিয়মে করিতে পারো তাহলে তা-ই করিবে। হামনাহ্ বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আর শেষ নির্দেশটা আমার নিকট তোমার জন্য বেশী পছন্দনীয়।{১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ২৮৭, তিরমিজি ১২৮, ইরওয়া ২০৫, আহমাদ ২৭৪৭৪। এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
অধ্যায়ঃ ১৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৫৬২. আসমা বিনতু উমায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি {রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে] বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল! ফাত্বিমাহ্ বিন্তে আবু হুবায়শ [রাদি.] এর এত দিন ধরে ইস্তিহাযাহ্ হচ্ছে এবং সে [এটাকে হায়য মনে করে] সালাত আদায় করছে না। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সুব্হা-নাল্লা-হ পড়ে আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, সালাত আদায় না করা তো শয়ত্বানের প্ররোচনা। সে যেন একটি গামলায় পানি ভরে ওতে বসে যায়, তারপর যখন পানি পীত রং দেখে, তখন [অন্য পানি দ্বারা] গোসল করে যুহর ও আসরের সালাত আদায় করে। মাগরিব ও ইশার সালাতের জন্য এভাবে একবার গোসল করিবে। আর ফজরের জন্য পৃথক একবার গোসল করিবে। এর মাঝখানে উযু করে নিবে। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ২৯৬, আস্ সামারুল মুস্তাত্বব ৩৫ নং পৃঃ। রক্ত প্রদর রোগিণী -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
৫৬৩. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণীতঃ
মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ফাত্বিমাহ্ [রাদি.]–এর প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করা কঠিন হয়ে পড়লে তিনি [সাঃআঃ] এক গোসলে দুই সালাত একত্রে আদায় করিতে নির্দেশ দিলেন। {১}
{১} মাওকূফ। সহীহ হাদিসের অভ্যন্তরে রয়েছে।এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
Leave a Reply