যে সকল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা নিষেধ ও মুস্তাহাব

যে সকল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা নিষেধ ও মুস্তাহাব

যে সকল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা নিষেধ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৯. অধ্যায়ঃ যে সকল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা নিষেধ
২০. অধ্যায়ঃ আমর ইবনি আবাসাহ্ [রাদি.]-এর ইসলাম গ্রহণ
২১. অধ্যায়ঃ সূর্যোদয় ও অস্তকালে নামাজ আদায় না করা
২২. অধ্যায়ঃ আস্‌র নামাজের পর নবী [সাঃআঃ]-এর পঠিত দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য
২৩. অধ্যায়ঃ মাগরিবের [ফার্‌য] নামাজের পূর্বক্ষণে দু রাকআত আদায় করা মুস্তাহাব
২৪. অধ্যায়ঃ প্রত্যেক দুআযানের [আযান ও ইক্বামাত] মাঝে রয়েছে নামাজ
২৫. অধ্যায়ঃ শঙ্কার [ভয়ের] সময় নামাজ

১৯. অধ্যায়ঃ যে সকল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করা নিষেধ

১৮০৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। {৩৯}

[ই.ফা, ১৭৯০.ইসলামিক সেন্টার- ১৭৯৭]

{৩৯} এ সময়ে ফার্যের ক্বাযা আদায় করা যাবে এ মর্মে উলামাদের ঐকমত্য রয়েছে। কারণগত নামাজ যেমন তাহ্ইয়্যাতুল মাসজিদ, তিলাওয়াতের সাজদাহ্ ও শুক্রের সাজদাহ্, চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের নামাজ, জানাযাহ্ আদায় করার ব্যাপারে আবু হানীফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বিপরীত মত পোষণ করলেও অধিকাংশ উলামাগণ এ সময়ে এ সকল নামাজ আদায়ের পক্ষে জোরালো মত পোষণ করিয়াছেন। আর ছুটে যাওয়া ফাজ্রের সুন্নাতও আদায় করা যাবে যেমনটি নবী [সাঃআঃ]-যুহরের পরের দু রাকআত সুন্নাত আসরের পরে আদায় করেছিলেন-যার স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খণ্ড ২৭৫ পৃষ্ঠা]

১৮০৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]- এর একাধিক সহাবীর নিকট শুনেছি, যাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.]- ও অন্তর্ভুক্ত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-আসরের নামাজের পর থেকে সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ই.ফা, ১৭৯১.ইসলামিক সেন্টার- ১৭৯৮]

১৮০৭. যুহায়র ইবনি হারব, আবু গাস্সান মিসমাঈ, ইসহাক্ব ইবনি ইব্রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]…সকলে ক্বাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে সাঈদ ও হিশাম [রাদি.]- এর বর্ণনায় আছে : ফজরের নামাজের পর সূর্য আলোকজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত। 

[ই.ফা, ১৭৯২.ইসলামিক সেন্টার- ১৭৯৯] [আরবী]

১৮০৮. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-বলেছেনঃ আসরের নামাজের পর থেকে সূর্য অস্তমিত না হওয়া পর্যন্ত কোন নামাজ নেই এবং ফজরের নামাজের পর থেকে সূর্যোদয় না হওয়া পর্যন্ত।

[ই.ফা, ১৭৯৩.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০০]

১৮০৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: কেউ যেন সূর্যোদয়কালে এবং সূর্যাস্তের সময় নামাজ আদায় করার সঙ্কল্প না করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৮০১]

১৮১০. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় তোমাদের নামাজের সঙ্কল্প করো না। কারণ সূর্য শাইত্বনের দু শিং –এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয়। {৪০}

[ই.ফা, ১৭৯৫.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০২]

{৪০} “দু শিং” অর্থ হল মাথার দু প্রান্ত। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকালে শাইত্বন তার মাথা সূর্যের নিকটবর্তী করে দেয় যাতে সূর্য ও মূর্তি পূজারী কাফিরদের সাজদাহ্গুলো শাইত্বনের জন্যে হয়। [মুসলিম শারহে নাবাবী-১ম খণ্ড ২৭৫ পৃষ্ঠা]

১৮১১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সূর্যের কিনারা যখন প্রকাশিত হয় তখন সম্পূর্ণ প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা নামাজ বিলম্বিত কর। আবার সূর্যের কিনারা যখন অদৃশ্য হয়ে যায় তখন সম্পূর্ণ অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত তোমরা নামাজ বিলম্বিত কর।

[ই.ফা, ১৭৯৬.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৩]

১৮১২. আবু বাস্‌রাহ্‌ আল গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুখাম্মাস নামক স্হানে আমাদের নিয়ে আসরের নামাজ আদায় করিলেন। তিনি বললেনঃ এ নামাজ তোমাদের পূর্ববর্তীদের নিকট পেশ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা এ নামাজ ধ্বংস করে দিল। যে ব্যক্তি এ নামাজের প্রতি যত্নবান হইবে তাকে দ্বিগুণ সাওয়াব দেয়া হইবে। এ নামাজের পর শাহিদ অর্থাৎ তারকা উদিত না হওয়া পর্যন্ত কোন নামাজ নেই।

[ই.ফা, ১৭৯৭.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৪]

১৮১৩. আবু বাস্‌রাহ্‌ আল গিফারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সাথে আসরের নামাজ আদায় করিলেন ….পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।

[ই.ফা, ১৭৯৮.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৫]

১৮১৪. উলাইয়্যি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি উক্ববাহ্ ইবনি আমির আল জুহানী [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তিনটি সময়ে আমাদেরকে নামাজ আদায় করিতে এবং আমাদের মৃতদেরকে দাফন করিতে নিষেধ করিয়াছেন : [১]সূর্য যখন আলোকোদ্ভাসিত হয়ে উদয় হইতে থাকে তখন থেকে তা পরিস্কারভাবে উপরে উঠা পর্যন্ত, [২] সূর্য যখন ঠিক দ্বিপ্রহরের সময় থেকে হেলে যাওয়া পর্যন্ত, [৩] সূর্য ক্ষীণ আলোক হওয়া থেকে তা সম্পুর্ণ অস্ত যাওয়া পর্যন্ত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৭৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৬]

২০. অধ্যায়ঃ আমর ইবনি আবাসাহ্ [রাদি.]-এর ইসলাম গ্রহণ

১৮১৫. ইকরামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

শাদ্দাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি], আবু উমামাহ্ ও ওয়াসিলাহ্ [রাদি.]–এর সাক্ষাৎ লাভ করেছে এবং সিরিয়ায় আনাস [রাদি.]-এর সাহচর্য লাভ করেছে এবং তার উচ্ছসিত প্রশংসা ও গুণগান করেছে। আবু উসামাহ্ [রাদি.] বলেন, আম্‌র ইবনি আবাসাহ্ আস্ সুলামী [রাদি.] বলেছেন, আমি জাহিলী যুগে ধারণা করতাম যে, সব লোকই পথভ্রষ্ট ও তাদের কোন ধর্ম নেই। তারা দেব-দেবীর পূজা করত। এ অবস্হায় আমি শুনতে পেলাম যে, মাক্কায় জনৈক ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয় বর্ণনা করিয়াছেন। আমি আমার বাহনে উপবিষ্ট হয়ে তাহাঁর নিকট এসে পৌঁছে দেখলাম যে, তিনি [সাঃআঃ] নিজেকে জনসমাগম থেকে সরিয়ে রাখেন, তাহাঁর সম্প্রদায় তাঁকে অত্যাচার-নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মাক্কায় তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলাম।

আমি তাঁকে বললাম, আপনি কে? তিনি বলেনঃ আমি একজন নবী : আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। আমি বললাম, তিনি আপনাকে কোন্ জিনিস দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, তিনি আমাকে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে, মূর্তিসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ করিতে, আল্লাহ এক বলে –ঘোষণা করিতে এবং তাহাঁর সাথে কোন কিছু শারীক না করিতে পাঠিয়েছেন। আমি তাঁকে বললাম, এ ব্যাপারে আপনার সাথে কারা আছে? তিনি বলেনঃ স্বাধীন ও দাসেরা। বর্ণনাকারী বলেন, সেকালে তাহাঁর সাথে ছিলেন তাহাঁর ওপর ঈমান আনয়নকারী আবু বকর [রাদি.], বিলাল [রাদি.] প্রমুখ। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হইতে চাই। তিনি বলেনঃ বর্তমান পরিস্হিতিতে তুমি তাতে সক্ষম হইবে না। তুমি কি আমার অবস্হা এবং [ঈমান আনয়নকারী] অন্যদের অবস্হা দেখছ না? বরং তুমি তোমার পরিবারে ফিরে যাও, যখন তুমি শুনতে পাবে যে, আমি বিজয়ী হয়েছি তখন আমার নিকট এসো। বর্ণনাকারী বলেন, তাই আমি আমার পরিবারে ফিরে এলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাদীনায় আগমন করিলেন, আমি তখন আমার পরিবারের সাথে ছিলাম। তিনি মাদীনায় আসার পর থেকে আমি খবরাখবর নিতে থাকলাম এবং লোকজনের নিকট জিজ্ঞেস করিতে থাকলাম। শেষে আমার নিকট ইয়াস্রিব- এর একদল লোক অর্থাৎ একদল মাদীনাহ্বাসী এলে আমি জিজ্ঞেস করলাম, যে ব্যক্তি মাদীনায় এসেছেন তিনি কি করেন? তারা বলেন, লোকজন অতি দ্রুত তাহাঁর অনুসারী হচ্ছে, অথচ তাহাঁর জাতি তাঁকে হত্যা করিতে বদ্ধ পরিকর, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি।

অতএব, আমি মাদীনায় এসে তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল ! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ, তুমি তো মাক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম : হ্যাঁ। আমি আরো বললাম, হে আল্লাহর নবী! আল্লাহ আপনাকে যা শিখিয়েছেন এবং যে সম্পর্কে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ তা আমাকে শিক্ষা দিন , আমাকে নামাজ সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ ফজরের নামাজ আদায় কর, অতঃপর সূর্য উদিত হয়ে উপরে না ওঠা পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাক। কারণ সূর্য উদিত হওয়ার সময় শাইত্বনের দু শিং–এর মাঝখান দিয়ে উদিত হয় এবং তখন কাফিররা সূর্যকে সাজদাহ্ করে। অতঃপর তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত তুমি নামাজ আদায় কর, কারণ এ নামাজে মালায়িকাহ্ উপস্হিত হন। অতঃপর নামাজ থেকে বিরত থাক, কারণ তখন জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। অতঃপর সূর্য যখন ঢলে যায় তখন থেকে নামাজ আদায় কর, এবং আসরের নামাজ আদায় করা পর্যন্ত মালাকগণ [ফেরেশতামন্ডলী] উপস্হিত থাকেন। অতঃপর সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত নামাজ থেকে বিরত থাক। কারণ তা শাইত্বনের দু শিং–এর মাঝখান দিয়ে অস্ত যায় এবং তখন কাফিররা সূর্যকে সাজদাহ্ করে।

বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী ! ওযূ সম্পর্কে আমাকে বলুন। তিনি বলেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির নিকট ওযুর পানি পেশ করা হলে সে যেন কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে তা পরিস্কার করে, এতে তার মূখমন্ডলের ও নাক গহবরের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশ মতো মূখমন্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে তার মূখমন্ডল থেকে, এমনকি দাড়ির আশপাশের সমস্ত পাপ ঝরে যায়। অতঃপর তার দু হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়ার সাথে সাথে তার আঙ্গুলসমূহ থেকে পানির সাথে গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পদদ্বয় ধৌত করে তখন তার আঙ্গুলসমূহ দিয়ে তার পাপসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে, আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করে, তাহাঁর যথাযোগ্য মর্যাদা বর্ণনা করে এবং আল্লাহর জন্য নিজের অন্তরকে পৃথক করে নেয় তাহলে সে তার জন্মদিনের মতো গুনাহমুক্ত হয়ে যায়।

আম্‌র ইবনি আবাসাহ্ [রাদি.] এ হাদীসে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহচর আবু উমামাহ্ [রাদি.]-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি তাকে বলেন, হে আম্‌র ইবনি আবাসাহ্! লক্ষ্য করুন আপনি বলেছেন, এক স্হানেই লোকটিকে এত সাওয়াব দেয়া হইবে! আম্‌র [রাদি.] বলেন, হে আবু উমামাহ্ ! আমি বার্ধক্যে পৌছে গেছি, আমার হাড়গোড় দূর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যু সন্নিকটে। এ অবস্হায় আল্লাহ ও রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতি মিথ্যারোপে আমার কি ফায়দাহ্। আমি যদি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এ হাদীস একবার, দু বার, তিনবার, এমনকি সাতবার গুণতাম তাহলে কখনো তা বর্ণনা করতম না, কিন্তু এর অধিক সংখ্যক বার তাহাঁর নিকট শুনেছি।

[ই.ফা, ১৮০০.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৭]

২১. অধ্যায়ঃ সূর্যোদয় ও অস্তকালে নামাজ আদায় না করা

১৮১৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমর [রাদি.] ধারণা করেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তকালে নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন।

[ই.ফা, ১৮০১.ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৮]

১৮১৭. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আস্‌রের নামাজের পর দু রাকআত [নাফ্‌ল] নামাজ [আদায় করা] ত্যাগ করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, আয়েশাহ [রাদি.] আরো বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের অপেক্ষায় থেক না যে, তখন নামাজ আদায় করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০২, ইসলামিক সেন্টার- ১৮০৯]

২২. অধ্যায়ঃ আসর নামাজ এর পর নবী [সাঃআঃ]-এর পঠিত দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য

১৮১৮. কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস, আবদুর রহমান ইবনি আযহার ও মিস্‌ওয়ার ইবনি মাখরামাহ্‌ [রাদি.] প্রমুখ তাকে মহানবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন। তারা বলিলেন, তুমি তাকে {আয়েশাহ [রাদি.]-কে} আমাদের পক্ষ থেকে সালাম জানাবে এবং আস্‌রের নামাজের পর দু রাকআত [নাফ্‌ল] নামাজ আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিবে এবং বলবে যে, আমাদের অবহিত করা হয়েছে যে, আপনি সে দু রাকআত আদায় করেন, অথচ আমরা জানতে পেরেছি যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেন, আমিও উমর ইবনিল খাত্ত্বাব [রাদি.]-এর সাথে লোকজনকে এ নামাজ থেকে বিরত রাখতাম। আবু কুরায়ব [রাদি.] বলেন, তারা আমাকে যে বিষয়সহ পাঠিয়েছিলেন, আমি তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করে তা তাকে পৌছে দিলাম। তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস কর। আমি বের হয়ে তাদের নিকট এসে আয়েশাহ [রাদি.]-এর কথা তাদেরকে অবহিত করলাম। অতঃপর তারা আমাকে যে বিষয়সহ আয়েশাহ [রাদি.]-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন, সেই একই বিষয়সহ উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.]-এর নিকট পাঠালেন। উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সে নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিতে শুনেছি, তা সত্ত্বেও পরে আমি তাকে তা আদায় করিতে দেখেছি। তিনি যখন এ নামাজ আদায় করিয়াছেন তার বিবরণ এই যে, তিনি আস্‌রের নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর আমার নিকট প্রবেশ করিলেন, তখন আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত বানূ হারাম-এর কতক মহিলা আমার নিকট উপস্থিত ছিল। তিনি দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। আমি এক দাসীকে তাহাঁর নিকট পাঠিয়ে বললাম, তুমি গিয়ে তাহাঁর এক পাশে দাঁড়াবে, তারপর তাঁকে বলবে, উম্মু সালামাহ্‌ [রাদি.] বলেছেন, হে আল্লাহর রসূল ! এ দু রাকআত নামাজ আদায় করিতে আপনি নিষেধ করিয়াছেন তা আমি শুনেছি, আর এখন দেখছি, আপনি তা আদায় করছেন। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে ইশারা করলে সে তাহাঁর জন্য অপেক্ষা করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দাসী তাই করিল। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে ইশারা করলে সে তাহাঁর জন্য অপেক্ষায় থাকে। তিনি নামাজ থেকে অবসর হয়ে বলেনঃ হে আবু উমাইয়্যাহ্‌-এর কন্যা ! তুমি আস্‌রের নামাজের পর দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছ। তার বিবরণ এই যে, আবদুল ক্বায়স গোত্রের কতক লোক স্বগোত্রের পক্ষ থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহনের উদ্দেশে আমার নিকট আসে। [তাদের নিয়ে] ব্যস্ত থাকার কারণে আমি যুহরের নামাজের পরবর্তী দু রাকআত নামাজ আদায় করিতে পারিনি। এ হল সে দু রাকআত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১০]

১৮১৯. আবু সালামাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আয়েশাহ [রাদি.]-কে দু রাকআত নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আস্‌র নামাজের পর আদায় করেছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আস্‌র নামাজের আগে ঐ দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। অতঃপর ব্যস্ততার কারণে অথবা ভুলে গিয়ে তিনি তা আদায় করেননি। সে দু রাকআতই তিনি আস্‌র নামাজের পর আদায় করিয়াছেন, অতঃপর তা নিয়মিত পড়তে থাকেন। তিনি কোন নামাজ আদায় করলে তা নিয়মিত আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১১]

১৮২০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট [অবস্থানকালে] আস্‌র নামাজের পরের দু রাকআত কখনো ত্যাগ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১২]

১৮২১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার ঘরে অবস্থানকালে দুটি নামাজ প্রকাশ্যে বা গোপনে কখনো ত্যাগ করেননিঃ ফাজ্‌রের নামাজের পূর্বে দু রাকআত এবং আস্‌র নামাজের পর দু রাকআত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৩]

১৮২২. আসওয়াদ ও মাসরূক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা আয়িশাহ্ [রাদি.] সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার পালার দিন আমার ঘরে অবস্থানকালে আস্র নামাজের পর দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৪]

২৩. অধ্যায়ঃ মাগরিবের ফরজ নামাজ এর পূর্বক্ষণে দু রাকআত আদায় করা মুস্তাহাব

১৮২৩. মুখতার ইবনি ফুলফুল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-এর নিকট আস্‌র নামাজের পর দু রাকআত নামাজ আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেন, উমর [রাদি.] আস্‌রের নামাজের পর নামাজ আদায় করার অপরাধে লোকদের হাতে আঘাত করিতেন। আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজের পূর্বে দু রাকআত নামাজ আদায় করতাম। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি তা আদায় করিতেন? তিনি বলেন, তিনি আমাদেরকে এ নামাজ আদায় করিতে দেখিতেন, কিন্তু তিনি তা আদায় করিতে আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করিতেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৫]

১৮২৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মাদীনায় ছিলাম। মুয়ায্‌যিন মাগরিবের নামাজের আযান দিলে তারা তাড়াহুড়া করে স্তম্ভের নিকট গিয়ে দু রাকআত নামাজ আদায় করিতেন। এমনকি কোন আগন্তুক মাসজিদে প্রবেশ করলে অধিক সংখ্যক নামাজ আদায়কারীর কারণে মনে হত যে, [ফারয্‌] নামাজ শেষ হয়ে গেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮০৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৬]

২৪. অধ্যায়ঃ প্রত্যেক দুআযানের [ আযান ও ইক্বামাত]  মাঝে রয়েছে নামাজ

১৮২৫. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্‌ফাল আল মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতি দুআযানের মাঝখানে নামাজ আছে। তিনি কথাটি তিনবার বলেন। তৃতীয়বারে তিনি বলেনঃ যে তা আদায় করিতে চায় তার জন্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১০, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৭]

১৮২৬. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি চতুর্থবারে বলেছেনঃ যার ইচ্ছা হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১১, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৮]

২৫. অধ্যায়ঃ শঙ্কার  ভয়ের সময় নামাজ

১৮২৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি দলের এক দলের সাথে এক রাকআত সলাতুল খাওফ আদায় করেন, তখন অপর দলটি শত্রুবাহিনীর মুকাবিলায় রত ছিলেন। অতঃপর প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলের স্থানে গিয়ে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থান গ্রহন করে এবং শেষোক্ত দলটি আসলে নবী [সাঃআঃ] তাদের সাথে এক রাকআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরান। অতঃপর উভয় দল পৃথক পৃথকভাবে এক রাকআত করে নামাজ আদায় করে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১২, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৯]

১৮২৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সলাতুল খাওফ সম্পর্কে বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে এ নামাজ আদায় করেছি ….. পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২০]

১৮২৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক যুদ্ধে সলাতুল খাওফ [শঙ্কাকালীন নামাজ] আদায় করিলেন। সামরিক বাহিনীর একাংশ তাহাঁর সাথে নামাজে দাঁড়াল এবং অপরাংশ শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থানে ছিল। তিনি তাহাঁর সঙ্গের দলটিকে নিয়ে এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তারা চলে গেল এবং অপর দলটি আসার পর তিনি তাদের নিয়ে আর এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর উভয় দল স্বতন্ত্রভাবে এক রাকআত করে নামাজ আদায় করে নিল। ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, ভয়-ভীতি বা বিপদাশঙ্কা অধিক বৃদ্ধি পেলে আরোহী অবস্থায় বা দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় নামাজ আদায় করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২১]

১৮৩০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেছি। তিনি আমাদেরকে দু দলে বিভক্ত করিলেন। একদল ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে আর শত্রুবাহিনী ছিল আমাদের ও ক্বিবলার মাঝখানে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমা বললে আমরাও সকলে তাকবীরে তাহরীমা বললাম। তিনি রুকূ করলে আমরা সকলেই রুকূ করলাম অতঃপর তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালে আমরা সকলেই মাথা উঠালাম। অতঃপর তিনি সাজদায় গেলেন এবং তার নিকটস্থ কাতারের লোকজনও, আর খানিক দূরের কাতারটি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নবী [সাঃআঃ] যখন সাজদাহ্‌ সমাপ্ত করিলেন এবং তাহাঁর নিকটস্থ কাতারও দাঁড়িয়ে গেল, তখন খানিক দূরের কাতারটি সাজাদায় গেল। আর এরা দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর পিছনের দলটি সামনে আসল এবং সামনের দলটি পিছনে সরে গেল। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] রুকূ করলে আমরাও সকলে রুকূ করলাম। অতঃপর তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালে আমরাও সকলে মাথা উঠালাম। অতঃপর তিনি সাজদায় গেলেন এবং তাহাঁর নিকটবর্তী দলটি যারা প্রথম রাকআতে পিছনে ছিল, তারাও। আর খানিক দূরের দলটি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকটবর্তী দলটিসহ সাজদাহ্‌ সমাপ্ত করার পর খানিক দূরের দলটি সাজদায় গেল। এবং এভাবে নামাজ আদায় করিল। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] সালাম ফিরালে আমরাও সালাম ফিরালাম। জাবির [রাদি.] বলেন, যেমন তোমাদের প্রহরীগণ তাদের আমীরগণকে পাহারা দেয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২২]

১৮৩১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে জুহায়নাহ্‌ গোত্রের একদল লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলাম। তারা আমাদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হল। আমরা যখন যুহরের নামাজ আদায় করলাম তখন মুশরিকরা বলিল, আমরা যদি একযোগে আক্রমন করতাম তাহলে মুসলিমদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতাম। জিব্‌রীল [আঃ] বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে অবহিত করলে তিনিও আমাদের অবহিত করেন। তিনি বলেনঃ মুশরিকরা আরো বলেছে যে, মুসলিমদের নিকট শীঘ্রই এমন একটি নামাজের ওয়াক্ত উপস্থিত হচ্ছে যা তাদের নিকট তাদের সন্তানের চেয়েও অধিক প্রিয়। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, আস্‌র নামাজের ওয়াক্ত উপস্থিত হলে তিনি আমাদের দু কাতারে বিভক্ত করেন। আর মুশরিকরা আমাদের ও ক্বিবলার মধ্যখানে অবস্থানরত ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমাহ্‌ বললে আমরাও তাকবীর বললাম এবং তিনি রুকূ করলে আমরাও রুকূ করলাম। অতঃপর তিনি সাজদাহ্‌ করলে প্রথম কাতারটি সাজদায় গেল। অতঃপর তারা যখন দাঁড়াল তখন দ্বিতীয় কাতারটি সাজদায় গেল। অতঃপর প্রথম কাতার পিছনে সরে গেল এবং পিছনের কাতার সামনে এগিয়ে এসে প্রথম কাতারের স্থানে দাঁড়াল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীর দিলে আমরাও তাকবীর দিলাম এবং তিনি রুকূ করলে আমরাও রুকূ করলাম। অতঃপর প্রথম কাতার তাহাঁর সাথে সাজদায় গেল এবং দ্বিতীয় কাতার দাঁড়িয়ে থাকল। দ্বিতীয় কাতার সাজদাহ্‌ করার পর সকলে বসে গেল এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করিলেন। আবুয্‌ যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরপর জাবির [রাদি.] বিশেষভাবে বলেন, যেমন তোমাদের বর্তমান কালের শাসকগণ নামাজ আদায় করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৩]

১৮৩২. সাহ্‌ল ইবনি আবু হাসমাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহচরদের নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায়ের উদ্দেশে তাদেরকে তাহাঁর পিছনে দু কাতারে কাতারবন্দী করেন। তাহাঁর নিকটবর্তী কাতারের সাথে তিনি [সাঃআঃ] এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর দাঁড়ালেন। তিনি [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে থাকলেন যতক্ষণ যাবৎ না তাহাঁর পিছনের কাতার এক রাকআত নামাজ আদায় করিল, অতঃপর সামনে এগিয়ে আসল এবং তাহাঁর নিকটবর্তী দল পেছনে সরে গেল। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] এদের নিয়ে আরেক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বসে থাকলেন যতক্ষণ যাবৎ না পিছনে সরে যাওয়া কাতার এক রাকআত নামাজ আদায় করিল। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] সালাম ফিরান।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৪]

১৮৩৩. সালিহ ইবনি খাও্‌ওয়াত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যাতুর্‌ রিক্বা যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায়কারী এক সহাবীর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

একটি দল কাতারবন্দী হয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করিল এবং অপর দল শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকল। তাহাঁর সাথের দলটিকে নিয়ে তিনি [সাঃআঃ] এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং তারা নিজস্বভাবে আরেক রাকআত আদায় করিল। অতঃপর তারা সরে গিয়ে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াল। অতঃপর পরবর্তী দলটি এগিয়ে আসলে তিনি [সাঃআঃ] তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর বসে থাকলেন এবং তারা নিজস্বভাবে আরো এক রাকআত আদায় করিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৫]

১৮৩৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রওয়ানা হয়ে যাতুর্‌ রিক্বা নামক স্থানে পৌছে গেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা কোন ছায়াদার গাছের নিকট পৌছলে তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য [বিশ্রামের] ছেড়ে দিতাম। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তরবারিখানা একটি গাছের সাথে ঝুলন্ত থাকা অবস্থায় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে তাহাঁর তরবারিখানা হস্তগত করে তা কোষমুক্ত করিল। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিল, তুমি কি আমাকে ভয় কর? তিনি বলেনঃ না। সে বলিল, কে তোমাকে আমার [আক্রমনের] থেকে রক্ষা করিবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে তোমার থেকে রক্ষা করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ লোকটিকে হুমকি দিলে সে তরবারিখানা খাপের মধ্যে ঢুকিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নামাজের জন্য আযান দেয়া হলে তিনি [সাঃআঃ] এক দলের সাথে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর এ দলটি পিছনে সরে গেল এবং তিনি [সাঃআঃ] অপর দলের সাথে আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হল চার রাকআত এবং লোকদের হল দু রাকআত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৬]

১৮৩৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দু দলের একটির সাথে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর অপর দলের সাথে দু রাকআত আদায় করিলেন। অতএব, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদায় করিলেন চার রাকআত এবং অন্য সকলে আদায় করিলেন দু রাকআত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮২০, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৭]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply