নামাজের এক রাকআত পেলে ও মুক্তাদীরা কখন দাঁড়াবে

নামাজের এক রাকআত পেলে ও মুক্তাদীরা কখন দাঁড়াবে

নামাজের এক রাকআত পেলে ও মুক্তাদীরা কখন দাঁড়াবে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

২৮. অধ্যায়ঃ সলাতে ধীরে-সুস্থে আসা উত্তম এবং দৌঁড়িয়ে আসা নিষেধ
২৯. অধ্যায়ঃ সলাতে মুক্তাদীরা কখন দাঁড়াবে
৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি নামাজের এক রাকআতও পেয়েছে, সে উক্ত নামাজ পেয়েছে

২৮. অধ্যায়ঃ নামাজে ধীরে সুস্থে আসা উত্তম এবং দৌঁড়িয়ে আসা নিষেধ

১২৪৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – কে বলিতে শুনেছি, নামাজ শুরু হয়ে গেলে তোমরা তাতে শারীক হওয়ার জন্য দৌড়াবে না বা তাড়াহুড়া করিবে না। বরং ধীরস্থিরভাবে হেঁটে হেঁটে যাও। তোমাদেরকে গাম্ভীর্য বজায় রাখতে হইবে। এভাবে ইমামের সাথে নামাজের যে অংশ পাবে তাই আদায় করিবে। আর যা পাবে না তা পূর্ণ করে নিবে।{১}

[ই.ফা.১২৩৪, ইসলামিক সেন্টার-১২৪৬]

{১} ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদীসে উল্লেখিত “আর যতটুকু পাবে না তা পূরন করে নিবে” | এর সমব্যাখ্যায় পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহুর উলামা বলেন ,মাসবূক বা পিছনে পড়া ব্যাক্তি ইমামের সাথে যতটুকু পেল তা তার জন্য প্রথম হইবে ছুটে যাওয়াটুকু যা সে সালাম ফিরানোর পর পড়ে নিবে তা তার জন্য পরের অংশ হইবে |

১২৪৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া হয়ে গেলে তোমরা দৌড়াদৌড়ি বা তাড়াহুড়া করে নামাজে এসো না। বরং প্রশান্তিসহ গাম্ভীর্য রেখে নামাজে শারীক হও। অতঃপর ইমামের সাথে যতটা নামাজ পাও তা আদায় করো। আর যতটা না পাবে তা পূরণ করে নাও। কেননা তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নামাজ আদায়ের সঙ্কল্প করে তখন সে নামাজরত থাকে বলেই গণ্য হয়।

[ই.ফা ১২৩৫, ইসলামিক সেন্টার- ১২৪৭]

১২৪৮. হাম্মাদ ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] আমাদের নিকট রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস তিনি এ বলেন বর্ণনা করিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন নামাজের জন্য আহবান করা [আযান দেয়া] হয় তখন তোমরা স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গিয়ে নামাজে শারীক হও। এ সময় তোমাদের উচিত প্রশান্তভাব ও গাম্ভীর্য বজায় রাখা। এভাবে যতটুকু জামাআতের সাথে পাবে আদায় করিবে। আর যতটুকু পাবে না তা পূরণ করে নিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৩৬ ইসলামিক সেন্টার- ১২৪৮]

১২৪৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া হয়ে গেলে তোমাদের কেউ যেন দৌড়িয়ে না যায়। বরং প্রশান্তভাবে গাম্ভীর্য বজায় রেখে হেঁটে হেঁটে যেন যায়। জামাআতে বা ইমামের সাথে যতটুকু পাবে আদায় করিবে। আর যা না পাবে তা পূরণ করে নিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৩৭ ইসলামিক সেন্টার- ১২৪৯]

১২৫০. ক্বাতাদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক সময়ে আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। ইতোমধ্যে তিনি শোরগোল ও কোলাহল শুনতে পেয়ে [নামাজ শেষে] বললেনঃ কি ব্যাপার! তোমরা এরূপ করলে কেন? সবাই বলিল, আমরা নামাজের জন্য তাড়াহুড়া করে আসছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না, এরূপ করিবে না। বরং তোমরা নামাজে আসার সময় শান্তভাবে আসবে এভাবে জামাআতে নামাজের যে অংশ পাবে তা আদায় করে নিবে আর যে অংশ পাবে না তা পরে পূর্ণ করে নিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৩৮ ইসলামিক সেন্টার- ১২৫০]

১২৫১. শায়বান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৩৯ ইসলামিক সেন্টার- ১২৫১]

২৯. অধ্যায়ঃ নামাজে মুক্তাদীরা কখন দাঁড়াবে

১২৫২. আবু ক্বাতাদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নামাজের একামত দেয়া হলেও আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। হাদীসে “যখন ইক্বামত দেয়া হয়” বলা হয়েছে না “যখন আহবান করা হয়” বলা হয়েছে – এ ব্যাপারে ইবনি আবু হাতিম সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন !

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪০, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫২]

১২৫৩. আবু ক্বাতাদাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

পূর্ব বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে ইসহাক্ব তার বর্ণনায় মামার ও শায়বান বর্ণিত হাদীসের “যতক্ষণ আমাকে বের হইতে না দেখো” কথাটি বাড়িয়ে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪১, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৪]

১২৫৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া হলো এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে পৌঁছার আগেই আমরা দাঁডিয়ে কাতার সোজা করে নিলাম। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এসে নামাজের স্থানে দাঁড়ালেন। তখনও তাকবীর বলা হয়নি। ইতোমধ্যে তাহাঁর কিছু স্মরণ হলে তিনি আমাদেরকে বলিলেন, তোমরা নিজ-নিজ স্থানে অপেক্ষা করিতে থাকো। এ কথা বলে তিনি ফিরে গেলেন। আমরা তাহাঁর পুনরায় না আসা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করিতে থাকলাম। ইতোমধ্যে তিনি গোসল করে আসলেন। তখনও তাহাঁর মাথা থেকে পানি ফোঁটা ফোঁটা ঝড়ে পড়ছিল। এবার তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলে আমাদের নামাজ আদায় করালেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪২, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৫]

১২৫৫’ আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া হলে লোকজন কাতার ঠিক করে দাঁড়াল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর জায়গায় দাঁড়িয়ে ইশারা করে তাদের সবাইকে বললেনঃ তোমরা প্রত্যেকে নিজের জায়গায় অপেক্ষা করো। এরপরে তিনি গিয়ে গোসল করে আসলেন। তখন তার মাথার চুল পানি চুইয়ে পড়ছিল। এবার তিনি সবাইকে নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৩, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৬]

১২৫৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর উদ্দেশে নামাজের ইক্বামত দেয়া হত। আর নবী [সাঃআঃ] নিজের স্থানে দাঁড়ানোর পূর্বেই লোকজন কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে যেত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৪, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৭]

১২৫৭. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সূর্য ঢলে পড়লেই বিলাল আযান দিতেন। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বের হয়ে না আসা পর্যন্ত এবং তাকে না দেখা পর্যন্ত ইক্বামত দিতেন না। বের হয়ে আসার পর তিনি তাকে দেখিতেন তখনই কেবল ইক্বামত দিতেন। {১৫}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৫, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৮]

{১৫} উল্লেখিত হাদীসসমূহের আলোচনায় কাজী আয়াজ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অধিকাংশ উলামার মত সম্বন্ধে বলেন, মুসল্লীগণের জন্য মুয়ায্‌যিন ইক্বামত শুরু করিতেই দণ্ডায়মান হওয়া মুস্তাহাব। ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল জমহুর উলামাত মতে মুয়ায্‌যিনের ইক্বামত বলে অবসর হলে ঈমাম তাকবীর বলবেন। [শারহে মুসলিম- ১ম খণ্ড ২২১ পৃষ্ঠা]

৩০. অধ্যায়ঃ যে ব্যাক্তি নামাজের এক রাকআতও পেয়েছে, সে উক্ত নামাজ পেয়েছে

১২৫৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ যদি [জামাআতের সাথে] কোন নামাজের এক রাকআত পেয়ে যায় সে উক্ত নামাজ পেয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৬, ইসলামিক সেন্টার- ১২৫৯]

১২৫৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ইমামের সাথে [জামাআতে] এক রাকআত নামাজ আদায় করিতে পারল সে উক্ত নামাজই ইমামের সাথে আদায় করিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৭, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬০]

১২৬০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে মালিক – এর মাধ্যমে ইয়াহ্‌ইয়া কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে কারোর বর্ণিত হাদীসেই “মাআল ঈমাম” [ইমামের সাথে] কথাটি নেই। তবে উবায়দুল্লাহ বর্ণিত হাদীসে তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সে পুরো নামাজই পেয়ে গেল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৪৮, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬১]

১২৬১. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সূর্যোদয়ের পূর্বে কেউ যদি ফাজ্‌রের এক রাকআত নামাজ আদায় করিতে পারে তাহলে সে ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করিল। আর তেমনি যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আস্‌রের এক রাকআত নামাজ আদায় করিতে পারল সে যেন ঠিক ওয়াক্তেই আস্‌রের নামাজ আদায় করিল।{১৬}

{১৬} হাদীসের মর্ম হল-প্রথমতঃ কোন কাফির মুসলিম হয়ে, পাগল বা অজ্ঞান ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করে, নাবালক-সাবালক হয়ে এবং হায়য বা নিফাসগ্রস্ত মহিলা পবিত্র হয়ে সে সময় চলমান ওয়াক্তের এক রাকআত পেলেও তার উপর ঐ ওয়াক্তের নামাজ অপরিহার্য হইবে। সে তা আদায় করিবে এবং তাতে সে পূর্ণ সাওয়াবপ্রাপ্ত হইবে। দ্বিতীয়তঃ অবহেলা না করে নিতান্ত অপারগ হয়ে কদাচ কোন ওয়াক্তের শেষ সময়ে কেউ এ ওয়াক্তের এক রাকআত পেলেও ওয়াক্ত পাওয়া বলে গণ্য হইবে। তাতে সে নামাজেরই সাওয়াব পাবে। [শরহে মুসলিম -১ম খণ্ড ২২১ পৃষ্ঠা]

১২৬২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

হাদীসটি যায়দ ইবনি আসলাম মালিক – এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫০, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬৩]

১২৬৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আস্‌রের নামাজের একটি সেজদা করিতে পারল কিংবা সূর্যোদয়ের পূর্বে ফাজ্‌রের নামাজের একটি সেজদা করিতে পারল সে উক্ত নামাজ পেয়ে গেল। আর সেজদা অর্থ রাকআত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫১, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬৪]

১২৬৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূর্যাস্তের পূর্বে আস্‌রের এক রাকআত নামাজ আদায় করিল সে ওয়াক্ত মতোই নামাজ আদায় করিল। আবার যে ব্যক্তি সূর্যোদয়ের পূর্বে ফাজ্‌রের এক রাকআত নামাজ আদায় করিল সেও ওয়াক্ত মতোই ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫২, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬৫]

১২৬৫. মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১২৫৩, ইসলামিক সেন্টার- ১২৬৬]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply