যুল খালাসার যুদ্ধ

যুল খালাসার যুদ্ধ

যুল খালাসার যুদ্ধ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৩, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ৬৩

৬৪/৬৩. অধ্যায়ঃ যুল খালাসার যুদ্ধ

৪৩৫৫

জারীর (ইবনু আবদুল্লাহ বাজালী) (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জাহিলিয়্যাতের যুগে একটি ঘর ছিল যাকে বলে যুল খালাসা, ইয়ামানী কাবা এবং সিরীয় কাবা [৭৯] বলা হত। নাবী (সাঃআঃ) আমাকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তুমি কি যুল-খালাসা থেকে আমাকে স্বস্তি দেবে না? এ কথা শুনে আমি একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী নিয়ে ছুটে চললাম। আর এ ঘরটি ভেঙ্গে টুকরা করে দিলাম এবং যাদেরকে পেলাম তাদের হত্যা করে ফেললাম। অবশেষে নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে এ সংবাদ জানালাম। তিনি আমাদের জন্য এবং (আমাদের গোত্র) আহমাসের জন্য দুআ করিলেন। [৩০২০] (আ.প্র. ৪০০৯, ই.ফা. ৪০১৩)

[৭৯] এটি একটি মাসজিদের মত। সম্ভবত মক্কার বাইতুল্লাহর ঘরটি তৈরী করা হয়েছিল। সেখানে আল্লাহর মুকাবালায় দেবদেবীর পূজা হোত। ইয়ামনী কাবা বলার অর্থ হচ্ছে এটির অবস্থান ছিল ইয়ামানে আর সিরীয় কাবা বলার অর্থ ছিল এর দরজা খুলতো সিরিয়ার দিকে। কাযী ইয়ায বলেন, কোন বর্ণনায় কাবা ইয়ামানী ও কাবা সিরীয় এর মাঝখানে ওয়াও হরফটি নেই। এর অর্থ হচ্ছে একে কখনো ইয়ামানী কাবা আবার কখনো সিরীয় কাবা বলা হয়তো।

৪৩৫৬

ক্বায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, জারীর (রাদি.) থেকে আমাকে বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, তুমি কি আমাকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? যুল খালাসা ছিল খাসআম গোত্রের একটি ঘর, যার নাম দেয়া হয়েছিল ইয়ামানী কাবা। এ কথা শুনে আমি আহমাস গোত্র থেকে একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে চললাম। তাঁদের সকলেই অশ্ব পরিচালনায় পারদর্শী ছিল। আর আমি তখন ঘোড়ার পিঠে স্থিরভাবে বসতে পারছিলাম না। কাজেই নাবী (সাঃআঃ) আমার বুকের উপর হাত দিয়ে আঘাত করিলেন। এমন কি আমি আমার বুকের উপর তার আঙ্গুলগুলোর ছাপ পর্যন্ত দেখিতে পেলাম। তিনি দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াত দানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। এরপর জারীর (রাদি.) সেখানে গেলেন এবং ঘরটি ভেঙ্গে দিলেন আর তা জ্বালিয়ে দিলেন। এরপর তিনি [জারীর (রাদি.)] রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর কাছে দূত পাঠালেন। তখন জারীদের দূত [রাসুল (সাঃআঃ)- কে] বলিল, সেই মহান সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, আমি ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত কাল উটের মতো রেখে আপনার কাছে এসেছি। রাবী বলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীর জন্য পাঁচবার বারাকাতের দুআ করিলেন। [৩০২০] (আ.প্র. ৪০১০, ই.ফা. ৪০১৪)

৪৩৫৭

জারীর (রা.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি আমকে যুল খালাসা থেকে স্বস্তি দেবে না? আমি বললামঃ অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশ পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিল অভিজ্ঞ অশ্বচালক। কিন্তু আমি ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। এ সম্পর্কে নাবী (সাঃআঃ)- কে জানালাম। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করিলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাহাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখিতে পেলাম। তিনি দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! একে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতদানকারী ও হিদায়াত লাভকারী বানিয়ে দিন। জারীর (রাদি.) বলেনঃ এরপর আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল খালাসা ছিল ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি ছিল যেগুলোর পূজা করা হত এবং এ ঘরটিকে বলা হত কাবা। রাবী (কায়স্‌) বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর একে ভেঙ্গে চুরে ফেললেন। রাবী আরও বলেন, আর যখন জারীর (রাদি.) ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্ণয় করত। লোকটিকে বলা হল, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)- এর প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করেন তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর যখন সে ভাগ্য নির্ণয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই অবস্থায় জারীর (রাদি.) সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বলিলেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করিল। এরপর জারীর (রাদি.) আবু আরতাত ডাক নাম বিশিষ্ট আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে নাবী (সাঃআঃ)- এর নিকট পাঠালেন এ সংবাদ শোনানোর জন্য। লোকটি নাবী (সাঃআঃ)- এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! সে সত্তার কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী সহকারে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে চর্মরোগে আক্রান্ত উটের মতো আমি কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের বারাকাতের জন্য পাঁচবার দুআ করিলেন। [৩০২০] (আ.প্র. ৪০১১, ই.ফা. ৪০১৫)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply