সম্পর্ক ছিন্ন করা, গালি দেওয়া ও যুলুম হারাম

সম্পর্ক ছিন্ন করা, গালি দেওয়া ও যুলুম হারাম

সম্পর্ক ছিন্ন করা, গালি দেওয়া ও যুলুম হারাম >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন

সম্পর্ক ছিন্ন করা, গালি দেওয়া ও যুলুম হারাম

আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর বাণী: كَذَّبني ابنُ آدَمَ وشَتَمَني ابنُ آدمَ
যুগকে গালি দেওয়া হারাম
অহংকার হারাম
যুলুম হারাম
জীবের ছবি অঙ্কন করা হারাম ও চিত্রকরোদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি
ঝগড়াকারীদের শাস্তি

৮১. অনুচ্ছেদঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা হারাম

হাদীসঃ ১৩৭ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা মখলুক সৃষ্টি করিয়াছেন, অতঃপর যখন তিনি তার সৃষ্টি সম্পন্ন করেন তখন রাহেম’  বলেঃ এ হচ্ছে তোমার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয় চাওয়ার স্থান, তিনি বলেনঃ হ্যাঁ। তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে রক্ষা করিবে আমি তাকে রক্ষা করব, তোমাকে যে ছিন্ন করিবে আমি তাকে ছিন্ন করব? রাহেম’ বলিলঃ অবশ্যই হে রব, তিনি বলেনঃ এটাই তোমার জন্য”। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ “যদি তোমরা চাও তাহলে তিলাওয়াত করঃ

﴿فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ ﴾ (محمد ঃ ٢٢)

“সুতরাং অবাধ্য হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলে সম্ভবত তোমরা যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করিবে।”?। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮২. অনুচ্ছেদঃ হাদিসে কুদসিতে আল্লাহর বাণীঃ

হাদীসঃ ১৩৮ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ বনি আদম আমার উপর মিথ্যারোপ করেছে, অথচ এটা তার অধিকার ছিল না। সে আমাকে গালি দিয়েছে অথচ এটা তার অধিকার ছিল না। আমাকে তার মিথ্যারোপ করার অর্থ তার বলাঃ তিনি আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন না যেরূপ প্রথম সৃষ্টি করিয়াছেন, অথচ প্রথমবার সৃষ্টি করা পুনরায় সৃষ্টি করা থেকে সহজ নয়। আমাকে তার গালি হচ্ছে তার কথাঃ আল্লাহ সন্তান গ্রহণ করিয়াছেন, অথচ আমি এক ও অমুখাপেক্ষী, আমি জন্ম দেই-নি আমাকে জন্ম দেয়া হয় নি, আর আমার সমকক্ষ কেউ নয়”। (সহিহ বুখারি ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮৩. অনুচ্ছেদঃ যুগকে গালি দেয়া হারাম

হাদীসঃ ১৩৯ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ বনি আদম আমাকে কষ্ট দেয়, সে যুগকে গালি দেয় অথচ আমিই যুগ , আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি”। (সহিহ মুসলিম, সুনান আবু দাউদও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮৪. অনুচ্ছেদঃ অহংকার হারাম

হাদীসঃ ১৪০ – আবু সায়িদ খুদরি ও আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তারা বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “ইজ্জত তার লুঙ্গি ও অহংকার তার চাদর, অতএব যে আমার সাথে টানাহেঁচড়া করিবে আমি তাকে শাস্তি দিব”। (সহিহ মুসলিম,ইবনু মাজাহ ও আবু দাউদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮৫. অনুচ্ছেদঃ যুলম হারাম

হাদীসঃ ১৪১ – আবু যর (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “হে আমার বান্দাগণ! নিশ্চয় আমি আমার ওপর যুলম হারাম করেছি, আমি তোমাদের মাঝেও তা হারাম করেছি অতএব তোমরা যুলম কর না। হে আমার বান্দাগণ! তোমাদের প্রত্যেকেই গোমরাহ তবে আমি যাকে হিদায়েত দেই, অতএব আমার কাছে হিদায়েত তলব কর আমি তোমাদেরকে হিদায়েত দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে ক্ষুধার্ত তবে আমি যাকে খাদ্য দেই, অতএব আমার নিকট খাদ্য তলব কর আমি তোমাদেরকে খাদ্য দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা সকলে বিবস্ত্র তবে আমি যাকে বস্ত্র দান করি, অতএব আমার নিকট বস্ত্র তালাশ কর আমি তোমাদেরকে বস্ত্র দিব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা রাত ও দিনে ভুল কর, আমি তোমাদের সকল পাপ মোচন করি, অতএব আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করব। হে আমার বান্দাগণ! তোমরা আমার ক্ষতি পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না যে আমার ক্ষতি করিবে। আর না তোমরা আমার উপকার পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে যে আমার উপকার করিবে। যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে নেককার ব্যক্তির মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য বৃদ্ধি করিবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন সকলে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোকের মত হয়ে যাও, তাও আমার রাজত্ব সামান্য হ্রাস করিবে না। হে আমার বান্দাগণ! যদি তোমাদের পূর্বপুরুষ ও পরবর্তী পুরুষ এবং মানুষ ও জিন এক ময়দানে দাঁড়িয়ে আমার নিকট প্রার্থনা করে, অতঃপর আমি প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু প্রদান করি, তাও আমার নিকট যা রহিয়াছে তা হ্রাস করতে পারবে না, তবে সুই যে পরিমাণ পানি হ্রাস করে যখন তা সমুদ্রে প্রবেশ করানো হয়। হে আমার বান্দাগণ! এ তো তোমাদের আমল যা আমি তোমাদের জন্য সংরক্ষণ করি, অতঃপর তোমাদের তা পূর্ণ করে দেব। অতএব যে ভাল কিছু পেল সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে, যে অন্য কিছু পেল সে যেন নিজেকে ভিন্ন কাউকে দোষারোপ না করে”। (সহিহ মুসলিম, সুনান তিরমিযি ওইবনু মাজাহ) হাদিসটি সহিহ।

আবু সায়িদ বলেনঃ আবু ইদরিস খাউলানি যখন এ হাদিস বলিতেনঃ হাঁটু গেড়ে বসতেন।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ১৪২ – জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমার নিকট একটি হাদিসের সংবাদ পৌঁছেছে, যা কোন এক ব্যক্তির নিকট রহিয়াছে যে তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে শুনেছে। অতঃপর আমি একটি উট খরিদ করি ও তাতে সফর করি, অতঃপর একমাস সফর করে শামে গিয়ে তার সাক্ষাত লাভ করি, দেখলাম তিনি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উনাইস।

আমি দারোয়ানকে বললামঃ তাকে বলঃ জাবের দরজায় অপেক্ষা করছে। তিনি বললেনঃ (জাবের) ইব্‌ন আব্দুল্লাহ? আমি বললামঃ হ্যাঁ, তিনি নিজ কাপড় হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হলেন, অতঃপর আমার সাথে আলিঙ্গন করিলেন, আমিও তার সাথে আলিঙ্গন করলাম। আমি বললামঃ আপনার কাছ থেকে আমার নিকট কিসাস সম্পর্কে একটি হাদিস পৌঁছেছে যে, আপনি তা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শ্রবণ করিয়াছেন, আমি আশঙ্কা করছিলাম, হয় আপনি মারা যাবেন, অথবা আমিই মারা যাব তা শ্রবণ করার আগে। তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “কিয়ামতের দিন মানুষদের অথবা বলেছেনঃ বান্দাদের, হাজির করা হইবে, (উরাত) উলঙ্গ, (গুরলান) খৎনা বিহীন, (বুহমান) খালি হাত অবস্থায়”। তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ বুহমান কি? তিনি বললেনঃ “তাহাদের সাথে কিছু থাকিবে না। অতঃপর তিনি তাহাদেরকে নির্দিষ্ট আওয়াজ দ্বারা ডাক দিবেন যা নিকট থেকে শুনা যাবেঃ আমিই বাদশাহ, আমি প্রতিদান দানকারী, কোন জাহান্নামী যার কোন জান্নাতির নিকট হক রহিয়াছে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না আমি তার থেকে তাকে কিসাস পাইয়ে দিব। কোন জান্নাতি যার নিকট কোন জাহান্নামীর হক রহিয়াছে জান্নাতে প্রবেশ করিবে না যতক্ষণ না আমি তার থেকে তাকে কিসাস পাইয়ে দিব, এমনকি চড় পর্যন্ত”। তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ কিভাবে তা সম্ভব হইবে, আমরা তো তখন আল্লাহর নিকট উলঙ্গ, গুরলান বুহমান হাজির হব? তিনি বললেনঃ নেকি ও পাপের মাধ্যমে”। (মুসনাদে আহমদ, সহিহ বুখারি ফিল আদাবুল মুফরাদ, আবু আসেম, হাকেম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান লিগাইরিহি

৮৬. অনুচ্ছেদঃ  জীবের ছবি অঙ্কন করা হারাম ও চিত্রকরদের প্রতি কঠোর হুশিয়ারি

হাদীসঃ ১৪৩ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তার চেয়ে বড় জালেম কে যে আমার সৃষ্টির ন্যায় সৃষ্টি করে, সে যেন একটি অণু অথবা শস্য দানা অথবা গমের দানা সৃষ্টি করে”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮৭. অনুচ্ছেদঃ ঝগড়াকারীদের শাস্তি

হাদীসঃ ১৪৪ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজা খোলা হয়”। মামার বলেনঃ সুহাইল ব্যতীত অন্যরা বলেছেনঃ “প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার আমল পেশ করা হয়, অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে না, তবে ঝগড়াকারী দুই ব্যক্তি ব্যতীত, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাহাদের বলেনঃ এদেরকে অবকাশ দাও, যতক্ষণ না তারা মীমাংসা করে নেয়”। (মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

Comments

Leave a Reply