রাসুল (সাঃ) শিশু ও নারীদের যুদ্ধে হত্যা করা নিষেধ করেন
রাসুল (সাঃ) শিশু ও নারীদের যুদ্ধে হত্যা করা নিষেধ করেন >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (১৪৬-১৬৯)=২৪টি
৫৬/১৪৬. অধ্যায়ঃ নৈশকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশু নিহত হলে।
৫৬/১৪৭. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে শিশুদেরকে হত্যা করা।
৫৬/১৪৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে নারীদেরকে হত্যা করা।
৫৬/১৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
৫৬/১৫০. অধ্যায়ঃ (বন্দী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন) তারপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও-যে পর্যন্ত না যুদ্ধবাজ শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (মুহাম্মাদ ৪)
৫৬/১৫১. অধ্যায়ঃ কোন মুসলিম বন্দী বন্দীদশা হইতে মুক্তির জন্য বন্দীকারীকে হত্যা বা কোন কৌশল অবলম্বন করিবে কি?
৫৬/১৫২. অধ্যায়ঃ কোন মুসলিম মুশরিক কর্তৃক আগুনে প্রজ্জ্বলিত হলে তাকেও প্রজ্জ্বলিত করা হইবে কি?
৫৬/১৫৩. অধ্যায়ঃ
৫৬/১৫৪. অধ্যায়ঃ ঘরদোর ও খেজুর বাগ পুড়িয়ে দেয়া।
৫৬/১৫৫. অধ্যায়ঃ নিদ্রিত মুশরিককে হত্যা করা।
৫৬/১৫৬. অধ্যায়ঃ শত্রুর মুখোমখী হওয়ার আকাঙ্খা করো না।
৫৬/১৫৭. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ হল কৌশল।
৫৬/১৫৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে মিথ্যা বলা।
৫৬/১৫৯. অধ্যায়ঃ হারবীকে গোপনে হত্যা করা।
৫৬/১৬০. অধ্যায়ঃ যার নিকট হইতে ক্ষতির আশংকা থাকে তার সঙ্গে কৌশল ও সাবধানতা অবলম্বন করা বৈধ।
৫৬/১৬১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করা ও পরিখা খননকালে আওয়াজ উচ্চ করা।
৫৬/১৬৩. অধ্যায়ঃ চাটাই পুড়িয়ে ক্ষতের চিকিৎসা করা, নারী কর্তৃক পিতার মুখমন্ডল থেকে রক্ত ধেৌত করা এবং ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করা।
৫৬/১৬৪. অধ্যায়ঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের অবাধ্যতা করে তার শাস্তি।
৫৬/১৬৫. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালে শত্রু ভয়ে ভীত হলে।
৫৬/১৬৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি শত্রু দর্শনে চিৎকার দিয়ে বলে, “বিপদ আসন্ন!” যাতে লোকেরা তা শুনতে পায়।
৫৬/১৬৭. অধ্যায়ঃ তীর নিক্ষেপের সময় যে বলেছে, এটা লও; আমি অমুকের পুত্র।
৫৬/১৬৮. অধ্যায়ঃ মীমাংসা মান্য করতঃ শত্রুগণ দূর্গ ত্যাগ করলে।
৫৬/১৬৯. অধ্যায়ঃ বন্দী হত্যা ও হাত-পা বেঁধে হত্যা।
৫৬/১৪৬. অধ্যায়ঃ নৈশকালীন আক্রমণে মুশরিকদের মহিলা ও শিশু নিহত হলে।
পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত —– এবং —– শব্দগুলোর দ্বারা রাতের সময় বুঝানো হয়েছে।
৩০১২.সাব ইবনু জাস্সামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমনে তাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তবে কী হইবে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তারাও তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আর আমি তাকে আরো বলিতে শুনিয়াছি যে, সংরক্ষিত চারণভূমি আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ) ছাড়া অন্য কারো জন্য হইতে পারে না।
৩০১৩. সআব হইতে মুশরিকদের সন্তান সম্পর্কে বর্ণিত আমর ইবনু শিহাবের সূত্রে নাবী হইতে বর্ণিতঃ
.. .. .. .. .. সআব বলেন, তারা তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। আমর একথা বলেননি যে, তারা তাদের পিতামাতাদের অন্তর্ভূক্ত।
৫৬/১৪৭. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে শিশুদেরকে হত্যা করা।
৩০১৪. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নারী ও শিশুদের হত্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
৫৬/১৪৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে নারীদেরকে হত্যা করা।
৩০১৫. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কোন এক যুদ্ধে জনৈকা মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মহিলা ও শিশুদের হত্যা করিতে নিষেধ করেন।
৫৬/১৪৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার শাস্তি দিয়ে কাউকে শাস্তি দেয়া যাবে না।
৩০১৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি অমুক ও অমুক ব্যক্তিকে পাও, তবে তাদের উভয়কে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। অতঃপর আমরা যখন বের হইতে চাইলাম, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আল্লাহ ছাড়া কেউ আগুন দিয়ে শাস্তি দিতে পারবে না। কাজেই তোমরা যদি তাদের উভয়কে পাও, তবে তাদেরকে হত্যা কর।
৩০১৭. ইকরামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আলী (রাদি.) এক সম্প্রদায়কে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন। এ সংবাদ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, যদি আমি হতাম, তবে আমি তাদেরকে জ্বালিয়ে ফেলতাম না। কেননা, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা আল্লাহর আযাব দ্বারা কাউকে আযাব দিবে না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। যেমন নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যে লোক তার দ্বীন বদলে ফেলে, তাকে হত্যা করে ফেল।
৫৬/১৫০. অধ্যায়ঃ (বন্দী সম্পর্কে আল্লাহ বলেন) তারপর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর অথবা মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দাও-যে পর্যন্ত না যুদ্ধবাজ শত্রুপক্ষ অস্ত্র সমর্পণ করে। (মুহাম্মাদ ৪)
এ প্রসঙ্গে সুমামাহ (রাদি.) বর্ণিত হাদীসটি রয়েছে আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ কোন নাবীর পক্ষে সমীচীন নয় বন্দীদেরকে নিজের কাছে রাখা যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশে পুরোপুরিভাবে শত্রুকে পরাভূত করা হয়। তোমরা তো পার্থিব ধন-সম্পদ কামনা কর।
(আল-আনফালঃ ৬৭)
৫৬/১৫১. অধ্যায়ঃ কোন মুসলিম বন্দী বন্দীদশা হইতে মুক্তির জন্য বন্দীকারীকে হত্যা বা কোন কৌশল অবলম্বন করিবে কি?
এ প্রসঙ্গে মিসওয়ার (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে।
৫৬/১৫২. অধ্যায়ঃ কোন মুসলিম মুশরিক কর্তৃক আগুনে প্রজ্জ্বলিত হলে তাকেও প্রজ্জ্বলিত করা হইবে কি?
৩০১৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উক্ল নামক গোত্রের আট ব্যক্তির একটি দল নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এল। মদীনার আবহাওয়া তারা উপযোগী মনে করেনি। তারা বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের জন্য দুগ্ধবতী উটনীর ব্যবস্থা করুন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা বরং সদকার উটের পালের নিকট যাও। তারা সেখানে গিয়ে সেগুলোর পেশাব ও দুধ পান করে সুস্থ এবং মোটাতাজা হয়ে গেল। অতঃপর তারা উটের রাখালকে হত্যা করে উটের পাল হাঁকিয়ে নিয়ে গেল এবং মুসলিম হবার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেল। তখন এক সংবাদ দাতা নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল। নাবী (সাঃআঃ) ঘোড়-সওয়ারদেরকে তাদের সন্ধানে পাঠালেন। তখন পর্যন্ত দিনের আলো প্রকাশ পায়নি সে সময় তাদেরকে নিয়ে আসা হল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদের হাত পা কেটে ফেললেন। অতঃপর তাহাঁর নির্দেশে লৌহ শলাকা গরম করে তাদের চোখে ঢুকানো হয় এবং তাদের উত্তপ্ত ভূমিতে ফেলে রাখা হয়। তারা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। অবশেষে তাদের মৃত্যু ঘটে। আবু কিলাবা (রাদি.) বলেন, তারা হত্যা করেছে, চুরি করেছে, আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে এবং পৃথিবীতে ফাসাদ ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।
৫৬/১৫৩. অধ্যায়ঃ
৩০১৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, কোন একজন নাবীকে একটি পিপীলিকা কামড় দেয়। তিনি পিপীলিকার সমগ্র আবাসটি জ্বালিয়ে দেয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তাআলা তাহাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপীলিকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহর তসবীহকারী একটি জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।
৫৬/১৫৪. অধ্যায়ঃ ঘরদোর ও খেজুর বাগ পুড়িয়ে দেয়া।
৩০২০. জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি আমাকে যুলখালাসার ব্যাপারে শান্তি দিবে না? খাশআম গোত্রের একটি মূর্তি ঘর ছিল। যাকে ইয়ামানের কাবা নামে আখ্যায়িত করা হত। জারীর (রাদি.) বলেন, তখন আমি আহমাসের দেড়শ অশ্বারোহীকে সঙ্গে নিয়ে রওয়ানা করলাম। তারা সূদক্ষ অশ্বারোহী ছিল। জারীর (রাদি.) বলেন, আর আমি অশ্বের উপর স্থির থাকতে পারতাম না। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার বুকে এমনভাবে আঘাত করিলেন যে, আমি আমার বুকে তাহাঁর আঙ্গুলির চিহ্ন দেখিতে পেলাম এবং তিনি আমার জন্য এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং হিদায়াত প্রাপ্ত, পথ প্রদর্শনকারী করুন। অতঃপর জারীর (রাদি.) সেখানে যান এবং যুলখালাসা মন্দির ভেঙ্গে ফেলেন ও জ্বালিয়ে দেন। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে এ খবর দেয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে তাহাঁর নিকট প্রেরণ করেন। তখন জারীর (রাদি.) এর দূত বলিতে লাগল, কসম সে মহান আল্লাহ তাআলার! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, আমি আপনার নিকট তখনই এসেছি যখন যুলখালাসাকে আমরা ধ্বংস করে দিয়েছি। যুলখালাসার মন্দিরটি যে পাঁচড়া যুক্ত উটের মত। জারীর (রাদি.) বলেন, অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আহমাসের অশ্ব ও অশ্বারোহীদের জন্য পাঁচবার বরকতের দুআ করেন।
৩০২১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বনী নাযীরের খেজুর বাগ জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।
৫৬/১৫৫. অধ্যায়ঃ নিদ্রিত মুশরিককে হত্যা করা।
৩০২২. বারআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আনসারদের একটি দল আবু রাফি ইয়াহুদীকে হত্যা করার জন্য প্রেরণ করেন। তাঁদের মধ্য থেকে একজন এগিয়ে গিয়ে ইয়াহুদীদের দূর্গে প্রবেশ করিল। তিনি বলেন, অতঃপর আমি তাদের পশুর আস্তাবলে প্রবেশ করলাম। অতঃপর তারা দূর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। তারা তাদের একটি গাধা হারিয়ে ফেলেছিল এবং তার খোঁজে তারা বেরিয়ে পড়ে। আমিও তাদের সঙ্গে বেরিয়ে গেলাম। তাদেরকে আমি জানাতে চেয়েছিলাম যে, আমি তাদের সঙ্গে গাধার খোঁজ করছি। অবশেষে তারা গাধাটি পেল। তখন তারা দূর্গে প্রবেশ করে এবং আমিও প্রবেশ করলাম। রাতে তারা দুর্গের দরজা বন্ধ করে দিল। আর তারা চাবিগুলো একটি কুলুঙ্গীর মধ্যে রাখল। আমি তা দেখিতে পেলাম। যখন তারা ঘুমিয়ে পড়ল, আমি চাবিগুলো নিয়ে নিলাম এবং দূর্গের দরজা খুললাম। অতঃপর আমি আবু রাফির নিকট পৌঁছলাম এবং বললাম, হে আবু রাফে! সে আমার ডাকে সাড়া দিল। তখন আমি আওয়াজের প্রতি লক্ষ্য করে তরবারীর আঘাত হানলাম, অমনি সে চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি বেরিয়ে এলাম। আমি আবার প্রবেশ করলাম, যেন আমি তার সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছি। আর আমি আমার গলার স্বর পরিবর্তন করে বললাম, হে আবু রাফি! সে বলিল, তোমার কী হল, তোমার মা ধ্বংস হোক। আমি বললাম, তোমার কী অবস্থা? সে বলিল, আমি জানি না, কে বা কারা আমার এখানে এসেছিল এবং আমাকে আঘাত করেছে। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আমার তরবারী তার পেটের উপর রেখে সব শক্তি দিয়ে চেপে ধরলাম, ফলে তার হাড় পর্যন্ত ঠেকার আওয়াজ হল। অতঃপর আমি ভীত-শংকিত অবস্থায় বের হয়ে এলাম। আমি অবতরণের উদ্দেশ্যে তাদের সিঁড়ির নিকট এলাম। যখন আমি পড়ে গেলাম, তখন এতে আমার পায়ে আঘাত লাগল। আমি আমার সাথীদের সঙ্গে এসে মিলিত হলাম। আমি তাদেরকে বললাম, আমি এখান হইতে ততক্ষণ পর্যন্ত যাব না, যতক্ষণ না আমি মৃত্যুর সংবাদ প্রচারকারিণীর আওয়াজ শুনতে পাই। হিজাযবাসী বণিক আবু রাফির মৃত্যুর ঘোষণা না শোনা পর্যন্ত আমি সে স্থান ত্যাগ করলাম না। তিনি বলিলেন, তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম এবং আমার তখন কোন ব্যাথাই ছিল না। অবশেষে আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌঁছে তাঁকে খবর জানালাম।
৩০২৩. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আনসারীদের একদলকে আবু রাফি ইয়াহুদীর নিকট প্রেরণ করেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনু আতীক (রাদি.) রাত্রিকালে তার ঘরে ঢুকে তাকে হত্যা করে যখন সে ঘুমিয়ে ছিল।
৫৬/১৫৬. অধ্যায়ঃ শত্রুর মুখোমখী হওয়ার আকাঙ্খা করো না।
৩০২৪. উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তিনি বলেন, তাহাঁর নিকট আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফাহ (রাদি.) একখানি পত্র লিখেন, যখন তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হন। আমি পত্রটি পাঠ করলাম- তাতে লেখা ছিল যে, শত্রুর সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সূর্য ঢলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করিলেন। অতঃপর তিনি তাহাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করার কামনা করিবে না এবং আল্লাহ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দুআ করিবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সামনা-সামনি হইবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করিবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারির ছায়ায় অবস্থিত। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা চালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাভূতকারী, আপনি কাফিরদেরকে পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে তাদের উপর বিজয় দান করুন।
৩০২৫. উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম আবুন নাযার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
মূসা ইবনু উকবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সালিম আবুন নযর আমাকে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেন, আমি উমর ইবনু উবাইদুল্লাহর লেখক ছিলাম। তখন তার নিকট আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.)-এর একখানা পত্র পৌঁছল এ মর্মে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার কামনা করিবে না।
৩০২৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হবার ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করিবে না। আর যখন তোমরা তাদের মুখোমুখী হইবে তখন ধৈর্য অবলম্বন করিবে।
৫৬/১৫৭. অধ্যায়ঃ যুদ্ধ হল কৌশল।
৩০২৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কিস্রা ধ্বংস হইবে, অতঃপর আর কিস্রা হইবে না। আর কায়সার অবশ্যই ধ্বংস হইবে, অতঃপর আর কায়সার হইবে না এবং এটা নিশ্চিত যে, তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহর পথে বন্টিত হইবে।
৩০২৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) সূত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
আর তিনি যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করেন।
৩০২৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করিয়াছেন। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু বক্র হচ্ছেন বূর ইবনু আসরাম।
৩০৩০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।
৫৬/১৫৮. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে মিথ্যা বলা।
৩০৩১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একবার বলিলেন, কে আছ যে কাব ইবনু আশরাফ-এর (হত্যার) দায়িত্ব নিবে? কেননা সে আল্লাহ তাআলা ও তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-কে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) কাব ইবনু আশরাফের নিকট গিয়ে বলিলেন, এ ব্যক্তি অর্থাৎ নাবী (সাঃআঃ) আমাদের কষ্টে ফেলেছে এবং আমাদের নিকট হইতে সদকা চাচ্ছে। রাবী বলেন, তখন কাব বলিল, এখনই আর কী হয়েছে? তোমরা তো তার থেকে আরো পেরেশান হয়ে পড়বে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আমরা তাহাঁর অনুগত হয়েছি, এখন তাহাঁর শেষ ফল না দেখা পর্যন্ত তাঁকে সম্পূর্ণ ত্যাগ করা পছন্দ করি না। রাবী বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) এভাবে তার সুযোগ না পাওয়া পর্যন্ত কথা বলিতে থাকেন, অতঃপর তাকে হত্যা করে ফেলেন।
৫৬/১৫৯. অধ্যায়ঃ হারবীকে গোপনে হত্যা করা।
৩০৩২. জাবির (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেন, কাব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিবে? তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, আপনি কি পছন্দ করেন যে, আমি তাকে হত্যা করি? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাদি.) বলিলেন, তবে আমাকে অনুমতি দিন, আমি যেন তাকে কিছু বলি। তিনি বলিলেন, আমি অনুমতি দিলাম।
৫৬/১৬০. অধ্যায়ঃ যার নিকট হইতে ক্ষতির আশংকা থাকে তার সঙ্গে কৌশল ও সাবধানতা অবলম্বন করা বৈধ।
৩০৩৩.আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উবাই ইবনু কাব (রাদি.)-কে সঙ্গে নিয়ে ইবনু সাইয়াদের নিকট গমন করেন। তখন লোকেরা বলিল, সে খেজুর বাগানে আছে। যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর নিকট খেজুর বাগানে পৌঁছলেন, তখন তিনি নিজেকে খেজুর গাছের শাখার আড়াল করিতে লাগলেন। ইবনু সাইয়াদ তখন তার চাদর জড়িয়ে গুণগুণ করছিল। তখন ইবনু সাইয়াদের মা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে দেখে বলে উঠল, হে সাফ! (ইবনু সাইয়াদের ডাক নাম) এই যে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)। তখন ইবনু সাইয়াদ লাফিয়ে উঠল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, যদি এ নারী তাকে তার নিজের অবস্থায় ছেড়ে দিত, তবে আসল ব্যাপার প্রকাশিত হয়ে পড়ত।
৫৬/১৬১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে কবিতা আবৃত্তি করা ও পরিখা খননকালে আওয়াজ উচ্চ করা।
এ প্রসঙ্গে সাহল ও আনাস (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণিত আছে, আর ইয়াযিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালামা (রাদি.) থেকেও বর্ণিত আছে।
৩০৩৪. বারা ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে খন্দক যুদ্ধের দিন দেখেছি, তিনি নিজে মাটি বহন করিয়াছেন। এমনকি তাহাঁর সম্পূর্ণ বক্ষের কেশরাজিকে মাটি ঢেকে ফেলেছে আর তাহাঁর শরীরে অনেক পশম ছিল। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাদি.) রচিত কবিতা আবৃত্তি করেছিলেনঃ
ওগো আল্লাহ তুমি না চাইলে আমরা হিদায়াত পেতাম না।
আর আমরা সদকা করতাম না এবং সালাত আদায় করতাম না।।
তুমি আমাদের প্রতি শান্তি অবতীর্ণ কর।
এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদেরকে সুদৃঢ় রাখ।।
শত্রুরা আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে।
তারা ফিতনাহ সৃষ্টির ইচ্ছে করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি।”
আর তিনি এ কবিতাগুলো আবৃত্তি কালে স্বর উচ্চ করেছিলেন।
৫৬/১৬২. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি অশ্বোপরি দৃঢ় হয়ে থাকতে পারে না।
৩০৩৫. জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করেছি তখন থেকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাকে তাহাঁর নিকট প্রবেশ করিতে বাধা দেননি এবং যখনই তিনি আমার চেহারার দিকে তাকাতেন তখন তিনি মুচকি হাসতেন।
৩০৩৬. জারীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আমার অসুবিধার কথা জানালাম যে, আমি অশ্ব পৃষ্ঠে স্থির থাকতে পারি না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমার বক্ষে হাত দিয়ে আঘাত করিলেন এবং এ দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! তাকে স্থির রাখুন এবং তাকে হিদায়াতকারী ও হিদায়াতপ্রাপ্ত করুন।
৫৬/১৬৩. অধ্যায়ঃ চাটাই পুড়িয়ে ক্ষতের চিকিৎসা করা, নারী কর্তৃক পিতার মুখমন্ডল থেকে রক্ত ধেৌত করা এবং ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করা।
এবং মহিলা কত্রিক নিজ পিতার মুখমণ্ডলের রক্ত ধৌত করা, ঢাল ভর্তি করে পানি বহন করে আনা
৩০৩৭. সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাঁকে লোকেরা জিজ্ঞেস করেছিল যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যখম কিভাবে চিকিৎসা করা হয়েছিল? তখন সাহল (রাদি.) বলেন, এখন আর এ ব্যাপারে আমার চেয়ে অধিক জানা কেউ অবশিষ্ট নেই। আলী (রাদি.) তাহাঁর ঢালে করে পানি বহন করে নিয়ে আনছিলেন, আর ফাতিমা (রাদি.) তাহাঁর মুখমন্ডল হইতে রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন এবং একটি চাটাই নিয়ে পোড়ানো হয় আর তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যখমের মধ্যে পুরে দেয়া হয়।
৫৬/১৬৪. অধ্যায়ঃ যুদ্ধক্ষেত্রে ঝগড়া ও মতবিরোধ করা অপছন্দনীয়। কেউ যদি ইমামের অবাধ্যতা করে তার শাস্তি।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “নিজেরা পরস্পর বিবাদ করিবে না; যদি কর তবে তোমরা সাহস হারা হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে”- (আনফাল ৪৬)। ক্বাতাদা (রাদি.) বলেন,——- হলো যুদ্ধ।
৩০৩৮. আবু মূসা আল-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মুআয ও আবু মূসা (রাদি.)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করেন ও আদেশ দেন যে, লোকদের প্রতি কোমলতা করিবে, কঠোরতা করিবে না, তাদের সুখবর দিবে, ঘৃণা সৃষ্টি করিবে না। পরস্পর একমত হইবে, মতভেদ করিবে না।
৩০৩৯. বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উহুদের দিন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.)-কে পঞ্চাশ জন পদাতিক যোদ্ধার উপর আমীর নিয়োগ করেন এবং বলেন, তোমরা যদি দেখ যে, আমাদেরকে পাখীরা ছোঁ মেরে নিয়ে যাচ্ছে, তথাপি তোমরা আমার পক্ষ হইতে সংবাদ পাওয়া ছাড়া স্বস্থান ত্যাগ করিবে না। আর যদি তোমরা দেখ যে, আমরা শত্রু দলকে পরাস্ত করেছি এবং আমরা তাদেরকে পদদলিত করেছি, তখনও আমার পক্ষ হইতে সংবাদ প্রেরণ করা ব্যতীত স্ব-স্থান ত্যাগ করিবে না। অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে দিল। বারাআ (রাদি.) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি মুশরিকদের নারীদেরকে দেখিতে পেলাম তারা নিজ বস্ত্র উপরে উঠিয়ে পলায়ন করছে। যাতে পায়ের অলঙ্কার ও পায়ের নলা উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.)-এর সহযোগীরা বলিতে লাগলেন, লোক সকল! এখন তোমরা গনীমতের মাল সংগ্রহ কর। তোমাদের সাথীরা বিজয় লাভ করেছে। আর অপেক্ষা কেন? তখন আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রাদি.) বলিলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তোমাদেরকে যা বলেছিলেন, তা তোমরা ভুলে গিয়েছো? তাঁরা বলিলেন, আল্লাহর শপথ, আমরা লোকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে গনীমতের মাল সংগ্রহে যোগ দিব। অতঃপর যখন তাঁরা স্বস্থান ত্যাগ করে নিজেদের লোকজনের নিকট পৌঁছল, তখন তাঁদের মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয় আর তাঁরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করিতে থাকেন। এটা সে সময় যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাদেরকে পেছন থেকে ডাকছিলেন। তখন নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বার জন লোক ব্যতীত অপর কেউই বাকী ছিল না। কাফিররা এ সুযোগে মুসলিমদের সত্তর ব্যক্তিকে শহীদ করে ফেলে। এর পূর্বে বদর যুদ্ধে নাবী (সাঃআঃ)-ও তাহাঁর সাথীগণ মুশরিকদের সত্তরজনকে বন্দী ও সত্তরজনকে নিহত করেন। এ সময় আবু সুফিয়ান তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছে? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তার উত্তর দিতে নিষেধ করেন। পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল- লোকদের মধ্যে কি আবু কুহাফার পুত্র জীবিত আছে? পুনরায় তিনবার আওয়াজ দিল, লোকদের মধ্যে কি খাত্তাবের পুত্র জীবিত আছে? অতঃপর সে নিজ লোকদের নিকট গিয়ে বলিল, এরা সবাই নিহত হয়েছে। এ সময় উমর (রাদি.) ধৈয্যধারণ করিতে পারলেন না। তিনি বলে উঠলেন, ওরে আল্লাহর শত্রু! আল্লাহর শপথ, তুই মিথ্যা বলছিস। যাঁদের তুমি নাম উচ্চারণ করছিস তাঁরা সবাই জীবিত আছেন। তোদের জন্য ভয়াবহ পরিনতি অপেক্ষা করছে। আবু সুফিয়ান বলিল, আজ বদরের দিনের প্রতিশোধ। যুদ্ধ তো বালতির মত। তোমরা তোমাদের লোকদের মধ্যে নাক-কান কাটা দেখবে, আমি এর আদেশ দেইনি কিন্তু তা আমি পছন্দও করিনি। অতঃপর বলিতে লাগল, হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক। হে হুবাল! তোমার মাথা উঁচু হোক। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাহাবীগণকে উদ্দেশ্য করে বলিলেন, তোমরা এর উত্তর দিবে না? তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কী বলব? তিনি বলিলেন, তোমরা বল, আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে মর্যাদাবান, তিনিই মহা মহিমান্বিত। আবু সুফিয়ান বলিল, আমাদের জন্য উয্যা রয়েছে, তোমাদের উয্যা নেই। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা কি তার উত্তর দিবে না? বারাআ (রাদি.) বলেন, সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কী বলব? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা বল, আল্লাহ আমাদের সহায়তাকারী বন্ধু, তোমাদের কোন সহায়তাকারী বন্ধু নেই।
৫৬/১৬৫. অধ্যায়ঃ রাত্রিকালে শত্রু ভয়ে ভীত হলে।
৩০৪০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে দানশীল ও সবচেয়ে শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। আনাস (রাদি.) বলেন, একবার এমন হয়েছিল যে, মদীনাবাসী রাতের বেলায় একটি আওয়াজ শুনে ভীত-শংকিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) আবু ত্বলহা (রাদি.)-এর গদীবিহীন ঘোড়ায় আরোহণ করে তরবারী ঝুলিয়ে তাদের সামনে এলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা ভয় করো না, তোমরা ভয় করো না। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমি এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত দ্রুতগামী পেয়েছি।
৫৬/১৬৬. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি শত্রু দর্শনে চিৎকার দিয়ে বলে, “বিপদ আসন্ন!” যাতে লোকেরা তা শুনতে পায়।
৩০৪১. সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি গাবাহ নামক স্থানে যাবার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে বের হলাম। যখন আমি গাবাহর উঁচুস্থানে পৌছলাম, সেখানে আমার সঙ্গে আবদুর রাহমান ইবনু আউফ (রাদি.)-এর গোলামের সাক্ষাৎ ঘটল। আমি বললাম, আশ্চর্য! তোমার কী হয়েছে। সে বলিল, নাবী (সাঃআঃ)-এর দুগ্ধবতী উটনীগুলো ছিনতাই হয়েছে। আমি বললাম, কারা ছিনতাই করেছে? সে বলিল, গাতফান ও ফাযারাহ গোত্রের লোকেরা। তখন আমি বিপদ, বিপদ বলে তিন বার চিৎকার দিলাম। আর মদীনার দুই কঙ্করময় ভূমির মাঝে যত লোক ছিল সবাইকে আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। অতঃপর আমি দ্রুত ছুটে গিয়ে ছিনতাইকারীদের পেয়ে গেলাম। তারা উটনীগুলোকে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করিতে থাকলাম। আর বলিতে লাগলাম,
আমি আকওয়ার পুত্র, আর আজ কমিনাদের ধ্বংসের দিন।
আমি তাদের থেকে উটগুলো উদ্ধার করলাম, তখনও তারা পানি পান করিতে পারেনি। আর আমি তাদের সেগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসছিলাম। এ সময় নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! লোকগুলো তৃষ্ণার্ত। আমি এত তাড়াতাড়ি কাজ সেরেছি যে, তারা পানি পান করার সুযোগ পায়নি। শীঘ্র তাদের পেছনে সৈন্য পাঠিয়ে দিন। তখন তিনি বলিলেন, হে ইবনু আক্ওয়া! তুমি তাদের উপর বিজয়ী হয়েছ, এখন তাদের কথা বাদ রাখ। তারা তাদের গোত্রের নিকট পৌছে গেছে।
৫৬/১৬৭. অধ্যায়ঃ তীর নিক্ষেপের সময় যে বলেছে, এটা লও; আমি অমুকের পুত্র।
আর সালামা বলেছেন, এটাও লও; আমি আকওয়ার পুত্র।
৩০৪২. আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বারাআ ইবনু আযিব (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করিল এবং বলিল, হে আবু উমারাহ! আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিলেন? বারাআ (রাদি.) বলিলেন, [আবু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন], আর আমি তা শুনছিলাম, সেদিন তো আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পালিয়ে যাননি। আবু সুফিয়ান ইবনু হারিস (রাদি.) তাহাঁর খচ্চরের লাগাম ধরেছিলন। যখন মুশরিকগণ তাঁকে ঘিরে ফেলল, তখন তিনি অবতরণ করিলেন এবং বলিতে লাগলেন,
আমি আল্লাহর নাবী, এটা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান।
তিনি (বারা) (রাদি.) বলেন, সেদিন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অপেক্ষা দৃঢ়চেতা আর কাউকে দেখা যায়নি।
৫৬/১৬৮. অধ্যায়ঃ মীমাংসা মান্য করতঃ শত্রুগণ দূর্গ ত্যাগ করলে।
৩০৪৩. আবু সাঈদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন বনী কুরায়যার ইয়াহূদীরা সাদ ইবনু মাআয (রাদি.)-এর ফায়সালা মুতাবিক দূর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তিনি তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। তখন সাদ (রাদি.) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তোমাদের নেতার দিকে দণ্ডায়মান হও। তিনি এসে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বলিলেন, এগিয়ে যাও এরা তোমার ফায়সালায় রাজী হয়েছে। সাদ (রাদি.) বলেন, আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্য হইতে যারা যুদ্ধ করিতে পারে তাদেরকে হত্যা করা হইবে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হইবে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলার ফয়সালার মত ফয়সালাই করেছ।
৫৬/১৬৯. অধ্যায়ঃ বন্দী হত্যা ও হাত-পা বেঁধে হত্যা।
৩০৪৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ মক্কা জয়ের বছর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মাথায় শিরস্ত্রাণ পরা অবস্থায় প্রবেশ করেন। যখন তিনি তা খুলে ফেললেন, এক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনু খাতাল্ কাবার পর্দা ধরে আছে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেন, তাকে কতল কর।
Leave a Reply