যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ , বালকদের নিয়ে যাঅয়া ও খিদমাতের ফযীলত
যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ , বালকদের নিয়ে যাঅয়া ও খিদমাতের ফযীলত >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (৬২-৭৭)=১৬টি
৫৬/৬২. অধ্যায়ঃ নারীদের জিহাদ।
৫৬/৬৩. অধ্যায়ঃ নৌ যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ ।
৫৬/৬৪. অধ্যায়ঃ কয়েকজন স্ত্রীর মধ্যে একজনকে নিয়ে জিহাদে যাওয়া।
৫৬/৬৫. অধ্যায়ঃ নারীদের যুদ্ধে গমন এবং পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
৫৬/৬৬. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে নারীদের মশ্ক নিয়ে লোকদের নিকট যাওয়া।
৫৬/৬৭. অধ্যায়ঃ নারীগণ কর্তৃক যুদ্ধে আহতদের সেবা ও শুশ্রুষা।
৫৬/৬৮. অধ্যায়ঃ নারীদের সাহায্যে হতাহতদের মদীনায় প্রত্যাহার।
৫৬/৬৯. অধ্যায়ঃ দেহ হইতে তীর বহিষ্করণ।
৫৬/৭০.অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান।
৫৬/৭১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে খিদমাতের ফযীলত
৫৬/৭২. অধ্যায়ঃ সফর-সঙ্গীর দ্রব্যাদি বহনের ফযীলত।
৫৬/৭৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় একদিন প্রহরারত থাকার ফযীলত।
৫৬/৭৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি খিদমত গ্রহনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে বালকদের নিয়ে যায়।
৫৬/৭৫. অধ্যায়ঃ সাগর যাত্রা
৫৬/৭৬. অধ্যায়ঃ দুর্বল ও সৎলোকদের (দুআয়) উসিলায় যুদ্ধে সাহায্য চাওয়া।
৫৬/৭৭. অধ্যায়ঃ অমুক লোক শহীদ এ কথা বলবে না।
৫৬/৬২. অধ্যায়ঃ নারীদের জিহাদ।
২৮৭৫. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট জিহাদের অনুমতি চাইলে তিনি বলেন, তোমাদের জিহাদ হলো হজ্জ। আবদুল্লাহ ইবনু অলীদ বলেছেন, সুফিয়ান (রাদি.) এ সম্পর্কে আমাদের হাদীস শুনিয়েছেন।
২৮৭৬. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট তাহাঁর স্ত্রীগণ জিহাদের অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি বলিলেন, (মহিলাদের জন্য) উত্তম জিহাদ হলো হজ্জ।
৫৬/৬৩. অধ্যায়ঃ নৌ যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহণ।
২৮৭৭. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিলহানের কন্যার নিকট গেলেন এবং সেখানে তিনি বিশ্রাম করিলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান (রাদি.)–এর কন্যা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন হাসছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দ্যেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করিবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মত। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট আমার জন্য দুআ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, অতঃপর হেসে উঠলেন। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা তাঁকে একইভাবে জিজ্ঞেস করিলেন অথবা বলিলেন, এ কেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-ও পূর্বের মত জবাব দিলেন। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা বলিলেন, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাদি.) বলেছেন, অতঃপর তিনি উবাদা ইবনু সামিতের সঙ্গে বিবাহ করেন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। অতঃপর ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করিলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে মারা যান।
২৮৭৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিলহানের কন্যার নিকট গেলেন এবং সেখানে তিনি বিশ্রাম করিলেন। অতঃপর তিনি হেসে উঠলেন। মিলহান (রাদি.)–এর কন্যা তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন হাসছেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, আমার উম্মাতের মধ্যে কতিপয় ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দ্যেশে এই সবুজ সমুদ্রে সফর করিবে। তাদের উপমা সিংহাসনে উপবিষ্ট বাদশাহদের মত। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট আমার জন্য দুআ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ, আপনি মিলহানের কন্যাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আবার তিনি বিশ্রাম নিলেন, অতঃপর হেসে উঠলেন। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা তাঁকে একইভাবে জিজ্ঞেস করিলেন অথবা বলিলেন, এ কেন? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-ও পূর্বের মত জবাব দিলেন। মিলহান (রাদি.)-এর কন্যা বলিলেন, আমার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন, যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বলিলেন, তুমি তাদের প্রথম দলে আছ, পেছনের দলে নয়। বর্ণনাকারী বলেন, আনাস (রাদি.) বলেছেন, অতঃপর তিনি উবাদা ইবনু সামিতের সঙ্গে বিবাহ করেন এবং কারাযার কন্যার সঙ্গে সমুদ্র ভ্রমণ করেন। অতঃপর ফেরার সময় নিজের সাওয়ারীতে আরোহণ করিলেন, তখন তা থেকে পড়ে গিয়ে ঘাড় মটকে মারা যান।
৫৬/৬৪. অধ্যায়ঃ কয়েকজন স্ত্রীর মধ্যে একজনকে নিয়ে জিহাদে যাওয়া।
২৮৭৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বাইরে কোথাও যাবার ইচ্ছা করলে তিনি তাহাঁর স্ত্রীদের মধ্যে করআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেন এবং এতে যার নাম আসত তাঁকেই নাবী (সাঃআঃ) সঙ্গে নিয়ে যেতেন। এক যুদ্ধে এভাবে তিনি আমাদের মধ্যে করআর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিলেন। এতে আমার নাম আসল এবং আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বের হলাম। এ ছিল পর্দার আয়াত নাযিল হবার পরবর্তী ঘটনা।
৫৬/৬৫. অধ্যায়ঃ নারীদের যুদ্ধে গমন এবং পুরুষদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ
২৮৮০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উহুদের যুদ্ধে সাহাবীগণ নাবী (সাঃআঃ) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন। আমি দেখলাম, আয়েশা বিনতে আবু বক্র ও উম্মু সুলাইম (রাদি.) তাঁদের আঁচল এতটুকু উঠিয়ে নিয়েছেন যে, আমি তাঁদের উভয় পায়ের গহনা দেখছিলাম। তাঁরা উভয়েই মশক পিঠে বয়ে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। আবার ফিরে গিয়ে মশ্ক ভর্তি করে নিয়ে এসে সাহাবীগণের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন।
৫৬/৬৬. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে নারীদের মশ্ক নিয়ে লোকদের নিকট যাওয়া।
২৮৮১. সালাবাহ ইবনু আবু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) মদীনার কিছু সংখ্যক মহিলার মধ্যে কয়েকখানা (রেশমী) চাদর বন্টন করেন। অতঃপর একটি ভাল চাদর রয়ে গেল। তাহাঁর নিকট উপস্থিত একজন তাঁকে বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এ চাদরটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর নাতনী উম্মু কুলসুম বিনতে আলী (রাদি.) যিনি আপনার নিকট আছেন, তাকে দিয়ে দিন। উমর (রাদি.) বলেন, উম্মু সালীত (রাদি.) এই চাদরটির অধিক হক্দার। উম্মু সালীত (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর হাতে বায়আতকারিণী আনসার মহিলাদের একজন। উমর (রাদি.) বলেন, কেননা, উম্মু সালীত (রাদি.) উহুদের যুদ্ধে আমাদের নিকট মশক বহন করে নিয়ে আসতেন। আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —– অর্থ তিনি সেলাই করিতেন।
৫৬/৬৭. অধ্যায়ঃ নারীগণ কর্তৃক যুদ্ধে আহতদের সেবা ও শুশ্রুষা।
২৮৮২. রুবাইয়ি বিনতু মআববিয (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা (যুদ্ধের ময়দানে) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে থেকে লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের পরিচর্যা করতাম এবং নিহতদের মদীনায় পাঠাতাম।
৫৬/৬৮. অধ্যায়ঃ নারীদের সাহায্যে হতাহতদের মদীনায় প্রত্যাহার।
২৮৮৩. রুবাইয়ি বিনতু মুআববিয (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে শরীক হয়ে লোকদের পানি পান করাতাম ও তাদের পরিচর্যা করতাম এবং আহত ও নিহত লোকদের মদীনায় ফেরত পাঠাতাম।
৫৬/৬৯. অধ্যায়ঃ দেহ হইতে তীর বহিষ্করণ।
২৮৮৪. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (যুদ্ধে) আবু আমিরের হাঁটুতে তীর বিদ্ধ হলো, আমি তাহাঁর নিকট গেলাম। আবু আমির (রাদি.) বলিলেন, এই তীরটি বের কর। তখন আমি তীরটি টেনে বের করলাম। ফলে তাথেকে পানি প্রবাহিত হইতে লাগল। আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে ঘটনাটি জানালাম। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আল্লাহ! আবু আমির উবায়দকে ক্ষমা করুন।
৫৬/৭০.অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধে প্রহরা দান।
২৮৮৫. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (এক রাতে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জেগে কাটান। অতঃপর তিনি যখন মদীনায় এলেন এই আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করিলেন যে, আমার সাহাবীদের মধ্যে কোন যোগ্য ব্যক্তি যদি রাতে আমার পাহারায় থাকত। এমন সময় আমরা অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, ইনি কে? ব্যক্তিটি বলিল, আমি সাদ ইবনু আবু ওয়াক্কাস, আপনার পাহারার জন্য এসেছি। তখন নাবী (সাঃআঃ) ঘুমিয়ে গেলেন।
২৮৮৬. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এই হাদীসটির সনদ ইসরাঈল এবং মুহাম্মাদ ইবনু জুহাদা, আবু হুসাইনের মাধ্যমে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পর্যন্ত পৌছাননি।
২৮৮৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে) কাঁটা বিদ্ধ হলে তা কেউ তুলে দিবে না। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার চুল উস্কু খুস্কু এবং পা ধূলি মলিন। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না এবং কোন বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ কবূল করা হয় না।
———- বলা হয় ——- অর্থাৎ আল্লাহ তাদের অপমানিত করুক।——-অর্থ উত্তম —— এর কাঠামোতে গঠিত। মূলত —— ছিল —— কে —– দ্বারা পরিবর্তন করা হয়েছে।
৫৬/৭১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে খিদমাতের ফযীলত
২৮৮৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমি জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমার খিদমাত করিতেন। যদিও তিনি আনাস (রাদি.)-এর চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন। জাবির (রাদি.) বলেন, আমি আনসারদের এমন কিছু কাজ দেখেছি, যার কারণে তাদের কাউকে পেলেই সম্মান করি।
২৮৮৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)- এর সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে গিয়ে তাহাঁর খিদমত করছিলাম। যখন নাবী (সাঃআঃ) সেখান থেকে ফিরলেন এবং উহুদ পর্বত তাহাঁর দৃষ্টিগোচর হলো, তিনি বলিলেন, এই পর্বত আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। অতঃপর তিনি হাত দ্বারা মদীনার দিকে ইঙ্গিত করে বলিলেন, হে আল্লাহ! ইবরাহীম (আঃ) যেমন মক্কাকে হারাম বানিয়েছিলেন, তেমনি আমিও এ দুই কংকরময় ময়দানের মধ্যবর্তী স্থান (মদীনা)-কে হারাম বলে ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সা ও মুদে বরকত দান করুন।
২৮৯০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা এক সফরে আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তির ছায়াই ছিল সর্বাধিক যে তার চাদর দ্বারা ছায়া গ্রহন করছিল। তাই যারা সিয়াম পালন করছিল তারা কোন কাজই করিতে পারছিল না। যারা সিয়াম রত ছিল না, তারা উটের দেখাশুনা করছিল, খিদমতের দায়িত্ব পালন করছিল এবং পরিশ্রমের কাজ করছিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, যারা সওম পালন করে নি তারাই আজ সওয়াব নিয়ে গেল।
৫৬/৭২. অধ্যায়ঃ সফর-সঙ্গীর দ্রব্যাদি বহনের ফযীলত।
২৮৯১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, শরীরের প্রতিটি জোড়ার উপর প্রতিদিন একটি করে সদকা রয়েছে। কোন ব্যক্তিকে তার সাওয়ারীতে উঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করা, অথবা তার মাল-সরঞ্জাম তুলে দেয়া সদকা। উত্তম কথা বলা ও সালাতের উদ্দেশ্যে গমনের প্রতিটি পদক্ষেপ সদকা এবং রাস্তা বাতলিয়ে দেয়া সদকা।
৫৬/৭৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর রাস্তায় একদিন প্রহরারত থাকার ফযীলত।
মহান আল্লাহর বাণীঃ হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর এবং ধৈর্যধারণে প্রতিযোগিতা কর আর সদা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাক। আর আল্লাহ্কে ভয় কর, তবেই তোমরা সফলকাম হইবে। (আল ইমরান ২০০)
২৮৯২. সাহল ইবনু সাদ সায়ীদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন সীমান্ত প্রহরা দেয়া দুনিয়া ও এর উপর যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম। জান্নাতে তোমাদের কারো চিবুক পরিমিত জায়গা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সমস্ত কিছুর চেয়ে উত্তম। আল্লাহর পথে বান্দার একটি সকাল বা বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া এবং ভূপৃষ্ঠের সব কিছুর চেয়ে উত্তম।
৫৬/৭৪. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি খিদমত গ্রহনের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে বালকদের নিয়ে যায়।
২৮৯৩. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আবু ত্বলহাকে বলেন, তোমাদের ছেলেদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করিতে পারে। এমনকি তাকে আমি খায়বারেও নিয়ে যেতে পারি। অতঃপর আবু ত্বলহা (রাদি.) আমাকে তার সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে চললেন। আমি তখন প্রায় সাবালক। আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর খেদমত করিতে লাগলাম। তিনি যখন অবতরণ করিতেন, তখন প্রায়ই তাকে এই দুআ পড়তে শুনতামঃ হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণভার ও লোকজনের প্রাধান্য থেকে আপনার নিকট পানাহ চাচ্ছি। পরে আমরা খায়বারে গিয়ে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলা তাঁকে দুর্গের উপর বিজয়ী করিলেন, তখন তাহাঁর নিকট সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই ইবনু আখতাবের সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করা হলো, তিনি ছিলেন সদ্য বিবাহিতা; তাহাঁর স্বামীকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে নিজের জন্য মনোনীত করিলেন। অতঃপর তাঁকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন সাদ্দুস্ সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন সফিয়্যাহ (রাদি.) হায়েয থেকে পবিত্র হন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে তাহাঁর সঙ্গে বাসর যাপন করেন। অতঃপর তিনি চামড়ার ছোট দস্তরখানে হায়সা প্রস্তুত করে আমাকে আশেপাশের লোকজনকে ডাকার নির্দেশ দিলেন। এই ছিল আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সাফিয়্যার বিয়ের ওয়ালিমা। অতঃপর আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা দিলাম। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি দেখিতে পেলাম যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর পেছনে চাদর দিয়ে সফিয়্যাকে পর্দা করছেন। উঠানামার প্রয়োজন হলে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর উঠের কাছে হাঁটু বাড়িয়ে বসতেন, আর সাফিয়্যা (রাদি.) তাহাঁর উপর পা রেখে উঠে আরোহণ করিতেন। এভাবে আমরা মদীনার নিকটবর্তী হলাম। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উহুদের দিকে তাকিয়ে বলিলেন, এটি এমন এক পর্বত যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। অতঃপর মদীনার দিকে তাকিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ, এই কঙ্করময় দুটি ময়দানের মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম বলে ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম (আঃ) মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছিলেন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের মুদ এবং সাতে বরকত দান করুন।
৫৬/৭৫. অধ্যায়ঃ সাগর যাত্রা
২৮৯৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মু হারাম (রাদি.) আমাকে বলেছেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) তার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মু হারাম (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বলিলেন, আমি আমার উম্মাতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করিবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। আর তিনি দুবার অথবা তিনবার অনুরূপ বলিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে উবাদা ইবনু সামিত (রাদি.) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে নিয়ে জিহাদে বের হন। তাকে তাহাঁর আরহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়।
২৮৯৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মু হারাম (রাদি.) আমাকে বলেছেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) তার বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। পরে তিনি হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। উম্মু হারাম (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিসে আপনাকে হাসাচ্ছে? তিনি বলিলেন, আমি আমার উম্মাতের একদলের ব্যাপারে বিস্মিত হয়েছি, তারা সিংহাসনে উপবিষ্ট রাজা-বাদশাহদের মত সমুদ্র সফর করিবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠেন। আর তিনি দুবার অথবা তিনবার অনুরূপ বলিলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আল্লাহর নিকট দুআ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি তাদের অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছ। পরে উবাদা ইবনু সামিত (রাদি.) তাঁকে বিয়ে করেন এবং তাঁকে নিয়ে জিহাদে বের হন। তাকে তাহাঁর আরহণের জন্য একটি সাওয়ারীর জানোয়ারের নিকটবর্তী করা হল। কিন্তু তিনি তা থেকে পড়ে যান এবং তাহাঁর ঘাড় ভেঙ্গে যায়।
৫৬/৭৬. অধ্যায়ঃ দুর্বল ও সৎলোকদের (দুআয়) উসিলায় যুদ্ধে সাহায্য চাওয়া।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন যে, আবু সুফিয়ান (রাদি.) আমার নিকট বর্ণনা করিয়াছেন যে, রোম সম্রাট কায়সার আমাকে বলিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছিলাম তাহাঁর অনুসরণ করছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, না তাদের মধ্যে দুর্বলরা? তুমি বলছ যে, তাদের মধ্যকার দুর্বলরা-এরাই রাসুলদের অনুসারী হয়।
২৮৯৬. মুসআব ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন সাদ (রাদি.)-এর ধারণা ছিল অন্যদের চেয়ে তাহাঁর মর্যাদা অধিক। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা দুর্বলদের (দুআয়) ওয়াসীলায়ই সাহায্য প্রাপ্ত ও রিয্ক প্রাপ্ত হচ্ছ।
২৮৯৭. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, এমন এক সময় আসবে যখন একদল লোক আল্লাহর পথে জিহাদ করিবে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের সঙ্গে কি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের কেউ আছেন? বলা হইবে, হ্যাঁ। অতঃপর (তাহাঁর বরকতে) বিজয় দান করা হইবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে, যখন জিজ্ঞেস করা হইবে, নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের সহচরদের মধ্যে কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছেন? বলা হইবে, হ্যাঁ, অতঃপর তাদের বিজয় দান করা হইবে। অতঃপর এক যুগ এমন আসবে যে, জিজ্ঞেস করা হইবে, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন, যিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাহাবীদের সহচরদের সাহচর্য লাভ করেছে, (তাবি-তাবিঈন)? বলা হইবে, হ্যাঁ। তখন তাদেরও বিজয় দান করা হইবে।
৫৬/৭৭. অধ্যায়ঃ অমুক লোক শহীদ এ কথা বলবে না।
আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে কে জিহাদ করছে, তা তিনিই ভাল জানেন এবং কে তাহাঁর পথে আহত হয়েছে আল্লাহই অধিক অবগত আছেন।
২৮৯৮. সাহল ইবনু সাদ সাঈদী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও মুশ্রিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয়পক্ষ ভীষণ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) নিজ সৈন্যদলের নিকট ফিরে এলেন, মুশ্রিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোন মুশ্রিককে একাকী দেখলেই তার পশ্চাতে ছুটত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমণ করত। বর্ণনাকারী (সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করিতে পারেনি। তা শুনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, সে তো জাহান্নামের অধিবাসী হইবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। অতঃপর তিনি তার সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে শীঘ্র চললে তিনিও দ্রুত চলতেন। তিনি বলিলেন, এক সময় সে মারাত্মকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করিতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাঁট মাটিতে রাখল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করিল। অনুসরণকারী ব্যক্তিটি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলেন এবং বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসুল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, কী ব্যাপার? তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তিটি সম্পর্কে আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হইবে, তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করিলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি ব্যক্তিটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাব। অতঃপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম। এক সময় লোকটি মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং সে শীঘ্র মৃত্যু কামনা করিতে থাকে। অতঃপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তখন বলিলেন, মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোন ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করিতে থাকে, আসলে সে জাহান্নামী হয় এবং তেমনি মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোন ব্যক্তি জাহান্নামীর মত আমল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতী হয়।
Leave a Reply