যুদ্ধের অস্ত্র – তীর, বর্শা, ঢাল, তরবারি, শিরস্ত্রাণ ও ছুরি সম্পর্কে
যুদ্ধের অস্ত্র – তীর, বর্শা, ঢাল, তরবারি, শিরস্ত্রাণ ও ছুরি সম্পর্কে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫৬, জিহাদ, অধ্যায়ঃ (৭৮-৯২)=১৫টি
৫৬/৭৮. অধ্যায়ঃ তীর চালনায় উৎসাহ দান
৫৬/৭৯. অধ্যায়ঃ বর্শা বা তদ্রুপ কিছু নিয়ে খেলা করা।
৫৬/৮০. অধ্যায়ঃ ঢাল ও যে লোক তার সঙ্গীর ঢাল ব্যবহার করে।
৫৬/৮১. অধ্যায়ঃ চামড়ার ঢাল সম্পর্কিত।
৫৬/৮২. অধ্যায়ঃ কোষে ও স্কন্ধে তরবারি বহন।
৫৬/৮৩. অধ্যায়ঃ তলোয়ার স্বর্ণ-রৌপ্যে খচিতকরণ।
৫৬/৮৪. অধ্যায়ঃ সফরে দ্বিপ্রহরের বিশ্রামকালে তলোয়ার গাছে ঝুলিয়ে রাখা
৫৬/৮৫. অধ্যায়ঃ শিরস্ত্রাণ পরিধাণ।
৫৬/৮৬. অধ্যায়ঃ কারো মৃত্যুকালে তার অস্ত্র বিনষ্ট করা যারা পছন্দ করে না
৫৬/৮৭. অধ্যায়ঃ দুপুরের বিশ্রামকালে ইমাম থেকে তফাতে যাওয়া এবং গাছের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহন করা।
৫৬/৮৮. অধ্যায়ঃ তীর নিক্ষেপ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে।
৫৬/৮৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাহাঁর জামা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
৫৬/৯০. অধ্যায়ঃ সফরে এবং যুদ্ধে জোব্বা পরিধান করা
৫৬/৯১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে রেশমী পরিচ্ছদ পরিধান করা।
৫৬/৯২. অধ্যায়ঃ ছুরি সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে।
৫৬/৭৮. অধ্যায়ঃ তীর চালনায় উৎসাহ দান
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তোমরা প্র্রস্তুত রাখবে তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা কিছু তোমাদের মধ্যে আছে অস্ত্রাদি ও অশ্ববাহিনী থেকে, এসব দিয়ে তোমরা ভীত-সন্ত্রস্ত করিবে আল্লাহর শত্রুকে এবং তোমাদের শত্রুকে।” (আনফাল ৬০)
২৮৯৯. সালামা ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আসলাম গোত্রের একদল লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তারা তীরন্দাজী চর্চা করছিল। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে বনূ ইসমাঈল! তোমরা তীর নিক্ষেপ করিতে থাক। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন এবং আমি অমুক গোত্রের সঙ্গে আছি। রাবী বলেন, এ কথা শুনে দুদলের এক দল তীর নিক্ষেপ বদ্ধ করে দিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমাদের কী হলো যে, তোমরা তীর নিক্ষেপ করছ না? তারা জবাব দিল, আমরা কিভাবে তীর নিক্ষেপ করিতে পারি, অথচ আপনি তাদের সঙ্গে আছেন? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তোমরা তীর নিক্ষেপ করিতে থাক, আমি তোমাদের সকলের সঙ্গে আছি।
২৯০০.আবু উসাইদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বদরের দিন বলেছেন, আমরা যখন কুরাইশদের বিপক্ষে সারিবদ্ধ হয়েছিলাম এবং কুরাইশরা আমাদের বিপক্ষে সারিবদ্ধ হয়েছিল, তখন নাবী (সাঃআঃ) আমাদের বলিলেন, যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হইবে, তখন তোমরা তীর চালনা করিবে। আবু আব্দুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, —— এর অর্থ যখন অধিক সংখ্যক সমবেত হয়।
৫৬/৭৯. অধ্যায়ঃ বর্শা বা তদ্রুপ কিছু নিয়ে খেলা করা।
২৯০১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একবার একদল হাবশী নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্শা নিয়ে খেলা করছিলেন। এমন সময় উমর (রাদি.) সেখানে এলেন এবং হাতে কাঁকর তুলে নিয়ে তাদের দিকে নিক্ষেপ করিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে উমর! তাদের করিতে দাও। আলী……মামার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, (এ ঘটনা) মসজিদে ঘটেছিল।
৫৬/৮০. অধ্যায়ঃ ঢাল ও যে লোক তার সঙ্গীর ঢাল ব্যবহার করে।
২৯০২. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু তাল্হা (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একই ঢাল ব্যবহার করিয়াছেন। আর আবু তাল্হা (রাদি.) ছিলেন একজন ভালো তীরন্দাজ। তিনি যখন তীর ছুঁড়তেন, তখন নাবী (সাঃআঃ) মাথা উঁচু করে তীর যে স্থানে পড়ত তা নযর রাখতেন।
২৯০৩. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল ও তাহাঁর মুখমন্ডল রক্তে ভিজে গেল এবং তাহাঁর সামনের দাঁত ভেঙ্গে গেল, আলী (রাদি.) ঢালে ভরে ভরে পানি আনতেন এবং ফাতিমা (রাদি.) ক্ষতস্থান ধুয়ে দিচ্ছিলেন। যখন ফাতিমা (রাদি.) দেখলেন যে, পানির চেয়ে রক্ত পড়া আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন একখানা চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন এবং তার ছাই ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন, তাতে রক্ত বন্ধ হয়ে গেল।
২৯০৪. উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রাসুল (সাঃআঃ)-কে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে তা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এ সম্পদ থেকে নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করিতেন।
২৯০৫. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-কে সাদ (রাদি.) ব্যতীত আর কারো জন্যও তাহাঁর পিতা-মাতাকে উৎসর্গ করার কথা বলিতে দেখিনি। আমি তাঁকে বলিতে শুনিয়াছি, তুমি তীর নিক্ষেপ কর, তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ (ফিদা) হোক।
৫৬/৮১. অধ্যায়ঃ চামড়ার ঢাল সম্পর্কিত।
২৯০৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) আমার নিকট আসলেন। সে সময় দুটি বালিকা বুআস যুদ্ধের গৌরবগাঁথা গাচ্ছিল। তিনি এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলেন এবং তাহাঁর মুখ ফিরিয়ে রাখলেন। এমন সময় আবু বকর (রাদি.) এলেন এবং আমাকে ধমক দিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর রাসূলের নিকট শয়তানের বাজনা? আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর দিকে ফিরে বলিলেন ওদের ছেড়ে দাও। অতঃপর যখন তিনি অন্য দিকে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমি বালিকা দুটিকে খোঁচা দিলাম। আর তারা বেরিয়ে গেল।
২৯০৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ঈদের দিনে হাবশী লোকেরা ঢাল ও বর্শা নিয়ে খেলা করত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলেছিলাম কিংবা তিনিই আমাকে বলেছিলেন, তুমি কি দেখিতে চাও? আমি বললাম, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি আমাকে তাহাঁর পেছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তাহাঁর গালের উপর ছিল। তিনি বলছিলেন, হে বনূ আরফিদা, চালিয়ে যাও। যখন আমি ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তিনি আমাকে বলিলেন, যথেষ্ট হয়েছে? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহলে যাও। আহমদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে বলেন, তিনি যখন অন্য মনস্ক হলেন।
৫৬/৮২. অধ্যায়ঃ কোষে ও স্কন্ধে তরবারি বহন।
২৯০৮.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সকল লোকের চেয়ে সুশ্রী ও সাহসী ছিলেন। এক রাতে মদীনার লোকেরা ভীত হয়ে শব্দের দিকে বের হলো। তখন নাবী (সাঃআঃ) তাঁদের সামনে এলেন এমন অবস্থায় যে, তিনি শব্দের কারণ অন্বেষণ করে ফেলেছেন। তিনি আবু ত্বলহার জিনবিহীন ঘোড়ার পিঠে সাওয়ার ছিলেন এবং তাহাঁর কাঁধে তরবারি ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা ভীত হয়ো না। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মত গতিশীল পেয়েছি, অথবা তিনি বলিলেন, এটি সমুদ্র।
৫৬/৮৩. অধ্যায়ঃ তলোয়ার স্বর্ণ-রৌপ্যে খচিতকরণ।
২৯০৯. আবু উমামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এই সব বিজয় এমন সব লোকেদের দ্বারা অর্জিত হয়েছিল, যাদের তলোয়ার স্বর্ণ বা রৌপ্য খচিত ছিল না, বরং তাদের তলোয়ার ছিল উঠের গর্দানের চামড়া এবং লৌহ কারুকার্য খচিত।
৫৬/৮৪. অধ্যায়ঃ সফরে দ্বিপ্রহরের বিশ্রামকালে তলোয়ার গাছে ঝুলিয়ে রাখা
২৯১০. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে নাজদের দিকে কোন এক যুদ্ধে বের হয়েছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) ফিরে আসলে তিনিও তাহাঁর সঙ্গে ফিরে আসলেন। তারা যখন কণ্টকময় বৃক্ষরাজীতে আবৃত এক উপত্যকায় উপস্থিত হলেন তখন তাঁদের দিবা বিশ্রামের সময় এলো। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে অবতরণ করেন। লোকেরা ছায়ার আশ্রয়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একটি বাবলা গাছের নিচে অবতরণ করিলেন এবং তাতে তাহাঁর তরবারী ঝুলিয়ে রাখলেন। অতঃপর আমরা সকলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। হঠাৎ এক সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের ডাকতে লাগলেন। দেখলাম তাহাঁর পার্শ্বে একজন গ্রাম্য আরব। তিনি বলিলেন, আমার নিদ্রাবস্থায় এই ব্যক্তি আমারই তরবারী আমারই উপর বের করে ধরেছে। জেগে উঠে দেখিতে পেলাম যে, তার হাতে খোলা তরবারী। সে বলিল, আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করিবে, আমি বললাম, আল্লাহ! আল্লাহ! তিনবার। তারপরও তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি, অথচ সে সেখানে বসে আছে।
৫৬/৮৫. অধ্যায়ঃ শিরস্ত্রাণ পরিধাণ।
২৯১১. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তাকে উহুদের দিনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর মুখমন্ডল আহত হল এবং তাহাঁর সামনের দুটি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাহাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতেমাহ (রাদি.) রক্ত ধুচ্ছিলেন আর আলী (রাদি.) পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখিতে পেলেন যে, রক্ত পড়া বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করিলেন এবং তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর রক্ত পড়া বন্ধ হল।
৫৬/৮৬. অধ্যায়ঃ কারো মৃত্যুকালে তার অস্ত্র বিনষ্ট করা যারা পছন্দ করে না
২৯১২. আমর ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কিছুই রেখে যাননি, কেবল তাহাঁর অস্ত্র, একটি সাদা খচ্চর ও এক টুকরো জমি, যা সদকা করে গিয়েছিলেন।
৫৬/৮৭. অধ্যায়ঃ দুপুরের বিশ্রামকালে ইমাম থেকে তফাতে যাওয়া এবং গাছের ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহন করা।
২৯১৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে একটি যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। তাদের দুপুরের বিশ্রামের সময় হল এমন একটি উপত্যকায় যাতে কাঁটাদার প্রচুর বৃক্ষ ছিল। লোকেরা কাঁটাদার বৃক্ষরাজির ছায়ায় বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ল। আর নাবী (সাঃআঃ) একটি বৃক্ষের নীচে অবতরণ করেন এবং একটি বৃক্ষে তাহাঁর তরবারী ঝুলিয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি জেগে উঠলেন এবং হঠাৎ তাহাঁর পার্শ্বে দেখিতে পেলেন যে, জনৈক ব্যক্তি, অথচ তিনি তার ব্যাপারে টের পাননি। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এই ব্যক্তিটি হঠাৎ আমার তরবারীটি উঁচিয়ে বলিল, কে তোমাকে আমার হাত থেকে রক্ষা করিবে? আমি বললাম, আল্লাহ! তখন সে ব্যক্তি তলোয়ারটি খাপে রেখে দিল। আর এই সে ব্যক্তি, এখনো বসা, কিন্তু তিনি তার প্রতিশোধ নেননি।
৫৬/৮৮. অধ্যায়ঃ তীর নিক্ষেপ প্রসঙ্গে যা বলা হয়েছে।
ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে উল্লেখ রয়েছে যে, তীরের ছায়ার নীচে আমার রিয্ক রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি আমার নির্দেশের বিরোধিতা করে, তার জন্য অপমান ও লাঞ্চনা নির্ধারিত আছে।
২৯১৪. আবু ক্বাতাদা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একবার তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলেন। মক্কার পথে কোন এক স্থানে পৌঁছার পর আবু ক্বাতাদা (রাদি.) কয়েকজন সঙ্গীসহ তাহাঁর পেছনে রয়ে গেলেন। সঙ্গীরা ছিলেন ইহরাম অবস্থায় আর তিনি ছিলেন ইহরাম বিহীন। এ সময় তিনি একটি বুনো গাধা দেখিতে পান এবং তাহাঁর ঘোড়ার পিঠে আরোহণ করেন। তিনি তাহাঁর সঙ্গীদের তাহাঁর চাবুকটি উটিয়ে দিতে বলেন; কিন্তু তারা তা দিতে অস্বীকার করিলেন। আবার তিনি তাহাঁর বর্শাটি উটিয়ে দিতে বলেন। তারা তাও দিতে অস্বীকার করিলেন। তখন তিনি নিজেই তা উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর গাধাটির উপর আক্রমণ চালালেন এবং তাকে হত্যা করিলেন। সাথীরা কেউ কেউ এর গোশ্ত খেলেন এবং কেউ কেউ তা খেতে অস্বীকার করিলেন। অতঃপর তারা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে তাহাঁর নিকট জিজ্ঞেস করিলেন। তিনি বলিলেন, এটি একটি আহারের বস্তু, যা আল্লাহ তাআলা তোমাদের আহারের জন্য দিয়েছেন। যায়িদ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু ক্বাতাদা (রাদি.) থেকে আবু নাযর (রাদি.)-এর মতই বুনো গাধা সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এতে আছে, নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের সঙ্গে তার কিছু গোশ্ত আছে কি?
৫৬/৮৯. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর বর্ম এবং যুদ্ধে ব্যবহৃত তাহাঁর জামা সম্পর্কে যা বলা হয়েছে।
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, খালিদ (ইবনু ওয়ালিদ) তো তাহাঁর বর্মগুলো আল্লাহর পথে ওয়াক্ফ করে দিয়েছে।
২৯১৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বদরের দিন একটি গুম্বজওয়ালা তাঁবুতে অবস্থান কালে দুআ করছিলেন, হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হইবে না। এ সময় আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর হাত ধরে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার নত হয়ে আপনার প্রতিপালকের কাছে দুআ করিয়াছেন। সে সময় নাবী (সাঃআঃ) বর্ম আচ্ছাদিত ছিলেন। অতঃপর তিনি এই আয়াত পাঠ করিতে করিতে বেরিয়ে এলেনঃ শীঘ্রই দুশমনরা পরাস্ত হইবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করিবে তদুপরি কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হইবে অধিক কঠিন ও অধিক তিক্ত। (সুরা আল-ক্বামার ৪৫, ৪৬) ওয়াইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, খালিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, বদরের দিন।
২৯১৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর মৃত্যুর সময় তাহাঁর বর্মটি ত্রিশ সা যব-এর বিনিময়ে এক ইয়াহূদীর নিকট বন্ধক ছিল।
মুআল্লাহ আবদুল ওয়াহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সূত্রে আমাশ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর লোহার বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর ইয়ালা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমাশ (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, বর্মটি ছিল লোহার।
২৯১৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ এমন দু ব্যক্তির মত, যারা লৌহ বর্মে আচ্ছাদিত। বর্ম দুটি এত আঁটসাঁট যে, তাদের উভয়ের হাত কব্জায় আবদ্ধ রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করিতে ইচ্ছে করে, তখন বর্মটি তার দেহের উপর প্রসারিত হয়, এমনকি তা তার পায়ের চিহ্ন মুছে ফেলে। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করিতে ইচ্ছে করে তখন বর্মের কড়াগুলো পরস্পর গলে গিয়ে তার শরীরকে আঁকড়ে ধরে এবং তার উভয় হস্ত কন্ঠের সঙ্গে লেগে যায়। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনেছেন, সে হাত দুটিকে প্রসারিত করিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে; কিন্তু প্রসারিত করিতে পারে না।
৫৬/৯০. অধ্যায়ঃ সফরে এবং যুদ্ধে জোব্বা পরিধান করা
২৯১৮. মুগীরাহ ইবনু শুবা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহ রাসুল (সাঃআঃ) একদা হাজত পূরণের জন্য গেলেন। সেখান থেকে ফিরে এলে আমি তাহাঁর নিকট পানি নিয়ে গেলাম। তিনি তা দিয়ে উযূ করেন। তাহাঁর পরিধানে ছিল সিরীয় জোব্বা। তিনি কুলি করেন, নাকে পানি দেন ও মুখমণ্ডল ধৌত করেন। অতঃপর তিনি জামার আস্তিন গুটিয়ে দুটি হাত বের করিতে চাইলেন। কিন্তু আস্তিন দুটি ছিল খুবই আঁটসাঁট। তাই তিনি ভেতরের দিক থেকে হাত বের করে উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মসেহ করিলেন এবং উভয় মোজার উপর মাস্হ করিলেন।
৫৬/৯১. অধ্যায়ঃ যুদ্ধে রেশমী পরিচ্ছদ পরিধান করা।
২৯১৯. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাদি.) ও যুবায়র (রাদি.)-কে তাদের শরীরে চুলকানি থাকায় রেশমী জামা পরিধান করিতে অনুমতি দিয়েছিলেন।
২৯২০. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ও যুবায়র (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উকুনের অভিযোগ করলে তিনি তাদেরকে রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দেন। আনাস (রাদি.) বলেন, আমি যুদ্ধে তাদের দেহে তা দেখেছি।
২৯২১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) আবদুর রাহমান ইবনু আওফ ও যুবায়র ইবনুল আওয়ামকে রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দেন।
২৯২২.আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
শরীরে চুলকানী থাকার কারণে তাদের দুজনকে (আবদুর রাহমান ও যুবায়রকে) রেশমী পোষাক পরার অনুমতি দিয়েছিলেন বা দেয়া হয়েছিল।
৫৬/৯২. অধ্যায়ঃ ছুরি সম্পর্কে যা উল্লেখ করা হয়েছে।
২৯২৩. আমর ইবনু উমায়্যাহ যামরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে (বকরির) হাত কেটে কেটে খেতে দেখেছি। অতঃপর তাঁকে সালাতের জন্য ডাকা হলে তিনি সালাত আদায় করিলেন; কিন্তু তিনি উযূ করিলেন না। আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) শুয়াইব সূত্রে যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন, নাবী (সাঃআঃ) ছুরি রেখে দিলেন।
Leave a Reply