ফাই বা বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হুকুম

ফাই বা বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হুকুম

ফাই বা বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হুকুম >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

১৫. অধ্যায়ঃ ফাই বা বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হুকুম

৪৪৬৬. হাম্মান ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে আবু হুরায়রা [রাদি.] যেসব হাদীস আমাদের কাছে বর্ণনা করিয়াছেন তন্মধ্যে একটি হলো, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: তোমরা যে কোন জনপদে এসে অবস্হান করিবে, সেখান থেকে [ প্রাপ্ত ফাই-এর ] এক অংশ পাবে। আর যে কোনো জনপদের অধিবাসীরা আল্লাহ ও তার রসূলের অবাধ্যতা করিবে, [অর্থাৎ- যুদ্ধ করিবে] তবে তার [সম্পদের] এক পঞ্চমাংশ আল্লাহ ও তার রসূলের জন্য। অতঃপর অবশিষ্ট সম্পদ তোমাদের জন্য।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৪]

৪৪৬৭. উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বানী নাযীর গোত্রের সম্পদ এমন সম্পদ যা আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বিনাযুদ্ধে প্রদান করেন। সেখানে মুসলিমরা ঘোড়া এবং উট হাঁকিয়ে যুদ্ধ করেনি। অতএব এ সম্পদ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সুতরাং তিনি তা থেকে স্বীয় পরিবারের এক বছরের ভরণ-পোষণে খরচ করিতেন এবং অবশিষ্ট সম্পদ আল্লাহর পথে যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ঘোড়া ও অস্ত্র ক্রয় খাতে রেখে দিতেন এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৫]

৪৪৬৮. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উল্লিখিত হাদীস একই সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৬]

৪৪৬৯. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

মালিক ইবনি আওস [রাদি.] তাকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যে, উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.] আমাকে ডেকে পাঠালেন। বেলা উঠে গেলে আমি তাহাঁর নিকট এলাম। তখন আমি তাঁকে তাহাঁর ঘরে খাটের উপর বসা অবস্থায় দেখলাম। তাতে বিছানা ছিল চাটাইয়ের। তিনি চামড়ার একটি বালিশের উপর হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, হে মাল! [অর্থাৎ- হে মালিক] তোমার সম্প্রদায়ের কয়েকটি পরিবারের লোকজন আমার কাছে দ্রুত এলো, আমি তাদেরকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তুমি তা গ্রহন করো এবং তাদের মধ্যে বন্টন করে দাও। অতএব আমি বললাম, আপনি যদি এর নির্দেশ আমাকে ব্যতীত অন্য কাউকে দিতেন, তাহলে ভাল হত। তখন তিনি বলিলেন, হে মাল! [অর্থাৎ হে মালিক] তুমি তা গ্রহন করো। এমন সময় ইয়ারফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে বলিল, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার সাথে সাক্ষাৎ করিতে চান উসমান, আবদূর রহমান ইবনি আওফ, যুবায়র এবং সাদ। তখন উমর বলিলেন, হ্যাঁ, তাদেরকে আসতে দাও। তখন সকলেই প্রবেশ করিলেন। এরপর পুনরায় ইয়ারফা এসে বলিল, আব্বাস এবং আলী [রাদি.] আপনার সাথে সাক্ষাৎ করিতে চান। তখন তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তাদেরকেও আসতে দাও। এরপর আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আমার মধ্যে এবং এ মিথ্যাবাদী, পাপী, প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকের মধ্যে মীমাংসা করে দিন। {৩৬} তখন লোকেরা বলিল, হ্যাঁ, হে আমীরুল মুমিনীন! তাঁদের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিন এবং তাদেরকে এ থেকে স্বস্তি দিন। অতএব মালিক ইবনি আওস [রাদি.] বলিলেন, আমার ধারনা হলো যে, তাঁরা দুজন অর্থাৎ- আলী এবং আব্বাস [রাদি.] তাঁদেরকে পূর্বাহ্নে পাঁঠিয়ে ছিলেন এ ব্যাপারটির জন্যেই, যেন তাঁরা উমরকে ব্যাপারটি বুঝিয়ে ফায়সালা করে দেন।

উমর বলিলেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি আপনাদের সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যার নির্দেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থিত। আপনাদের কি জানা নেই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমরা [নবীগণ] কাউকে ওয়ারিস বানিয়ে যাই না, আমরা যা রেখে যাই তা হইবে সদাকাহ। তখন তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ, আমরা তা জানি। এবার তিনি আলী এবং আব্বাস [রাদি.]- এর দিকে লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কেই সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যাঁর নির্দেশে আকাশ এবং পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থিত। আপনারা কি জানেন না যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমরা [নবী সম্প্রদায়] কাউকে উত্তরাধিকার করে যাই না। আমরা যা রেখে যাই, তা হইবে সদাকাহ। তখন তাঁরা উভয়েই বলিলেন, হ্যাঁ। আমরা তা জানি। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য প্রদান করিয়াছেন, যা তাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রদান করেননি। তিনি বলেন, “আল্লাহ তাআলা জনপদ বা নগরবাসীর নিকট থেকে মালে ফাই {৩৭} হিসেবে স্বীয় রসূলকে যা প্রদান করিয়াছেন- তা আল্লাহ ও তদীয় রসূলের জন্য নির্দিষ্ট। আমার জানা নেই যে, তিনি এ পঠিত আয়াতের পূর্বেও কোন আয়াত পাঠ করছিলেন কি-না? অতঃপর উমর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তো তোমাদেরকে বানী নাযীর গোত্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদ বন্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহর শপথ! তিনি সম্পদকে নিজের জন্যে জমা করে রেখে যাননি। আর তিনি এমনও করেননি যে, নিজে সম্পদ নিয়েছেন এবং তোমাদেরকে তা দেননি। পরিশেষে যে সম্পদ রইল তা থেকে আপন পরিবারের এক বছরের ভরণ পোষণের খরচ রেখে অবশিষ্ট সম্পদ বাইতুল মালে জমা দেন। এরপর উমর [রাদি.] বলিলেন, আপনাদেরকে সে মহান আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যার নির্দেশে আকাশ ও পৃথিবী যথাস্থানে অবস্থিত। আপনারা কি সেসব কথা অবগত আছেন। তখন তাঁরা বলেন, হ্যাঁ, আমরা তা জানি। এরপর তিনি আব্বাস এবং আলী [রাদি.] উভয়কে অনুরূপ শপথ প্রদান করিলেন, যেরূপ তিনি ইতোপূর্বে আগত সম্প্রদায়ের লোকদেরকে শপথ প্রদান করেছিলেন। তিনি বলিলেন, আপনারা উভয়ই কি এসব কথা জানেন? তখন তাঁরা উভয়েই বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর উমর [রাদি.] বলিলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ইনতিকাল হলো তখন আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন যে, আমিই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ওয়ালী। আর আপনারা উভয়েই এসেছেন, আপনি আপনার ভাতিজা থেকে মীরাস দাবী করিতে। আর আপনি এসেছেন, আপনার স্ত্রীর [ফাতিমার] পিতা থেকে মীরাস গ্রহন করিতে। এরপর আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের নবীগনের সম্পত্তিতে কোন উত্তরাধিকারিত্ব নেই। আমরা যা রেখে যাই- তা হয় সদাকাহ। আপনারা উভয়েই তো তাকে মিথ্যাবাদী, অপরাধী, বিশ্বাসঘাতক এবং খিয়ানতকারী মনে করবেন। অতঃপর প্রকৃতপক্ষে নিশ্চয়ই তিনি {আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.]} সত্যবাদী, পুণ্যবান, সত্তপথ প্রদর্শক এবং সত্যের অনুসারী যা আল্লাহ জানেন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] মৃত্যুবরণ করিলেন। তখন আমি ওয়ালী হলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ও আবু বাকর [রাদি.]-এর। সুতরাং আপনারা উভয়েই আমাকেও তার মত মিথ্যাবাদী, পাপী, বিশ্বাসঘাতক এবং খিয়ানতকারী মনে করছেন। আল্লাহ অবগত আছেন যে, নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, পুণ্যবান, সত্য পথ-প্রদর্শক এবং সত্যের অনুসারী। আমি সে সম্পদেরও ওলী ও অভিভাবক। অতঃপর আপনি এবং ইনি এসেছেন। আপনারা উভয়েই এক এবং আপনাদের দাবীও এক। সুতরাং আপনারা বলছেন যে, এসব আমাদের কাছে দিয়ে দিন।

আমি বলি- যদি আপনারা চান, তবে আমি তা আপনাদেরকে দিয়ে দেব- এ শর্তে যে, আপনারা এ সম্পদ দ্বারা সে কাজ করবেন, যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] করিতেন। অতএব আপনারা এ শর্তে আমার নিকট থেকে তা গ্রহন করিয়াছেন। এরপর উমর [রাদি.] বলিলেন, আমার কথা কি যথার্থ? তখন উভয়েই বলিলেন, হ্যাঁ। উমর [রাদি.] বলিলেন, তারপরও আপনারা দুজন আমার কাছে এসেছেন, আপনাদের মাঝে [সম্পদের] মীমাংসা করে দেয়ার জন্য। আল্লাহর কসম! আমি আপনাদের উভয়ের মাঝে এটা ছাড়া আর কোন মীমাংসা করিতে পারবো না কিয়ামাত পর্যন্ত। আর যদি আপনারা সে মালের দায়িত্ব পালনে অপারগ হন, তবে তা আপনারা আমার কাছে ফেরত দিয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৭]

{৩৬} এখানে এ শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ উদ্দেশ্য নয়। বরং রূপক অর্থে এ শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়েছে। আলী [রাদি.] -কে ধমক দেয়ার জন্যই আব্বাস [রাদি.] এ কথা বলেছেন।

{৩৭} যুদ্ধবিহীন প্রাপ্ত সম্পদকে মালে ফাই বলে।

৪৪৭০. মালিক ইবনি আওস ইবনি হাদসান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.] আমাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর বলিলেন, তোমার সম্প্রদায়ের কতিপয় পরিবারের লোক আমার কাছে উপস্থিত হলো। … … তারপর মালিক [রাদি.] – এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাছাড়া তাহাঁর হাদীসে রয়েছে যে, “তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের জন্য তা থেকে এক বছরের খরচ দিতেন। অনেক সময় মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন যে, তাহাঁর [সাঃআঃ] পরিবারের জন্য তা থেকে এক বছরের খোরাকী রেখে দিতেন। এরপর অবশিষ্ট সম্পদ বাইতুল মালে জমা দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৪২৮]


Posted

in

by

Comments

One response to “ফাই বা বিনা যুদ্ধলব্ধ সম্পদের হুকুম”

Leave a Reply