যিকির আযকার প্রসঙ্গে
যিকির তথা আল্লাহকে স্মরণ করার ফযীলত ও উৎসাহ দান >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
যিকির আযকার প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ – ২৪৪: যিকির তথা আল্লাহকে স্মরণ করার ফযীলত ও তার প্রতি উৎসাহ দান
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَلَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
“অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” [সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত]
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ فَٱذۡكُرُونِيٓ أَذۡكُرۡكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٥٢]
“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” [সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত]
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِي نَفۡسِكَ تَضَرُّعٗا وَخِيفَةٗ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَٰفِلِينَ ٢٠٥ ﴾ [الاعراف: ٢٠٥]
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।” [সূরা আ‘রাফ ২০৫ আয়াত]
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [الجمعة: ١٠]
“আল্লাহকে অধিক-রূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” [সূরা জুমআ ১০ আয়াত]
তিনি আরও বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ﴾ إِلَى قَوْله تَعَالَى: ﴿وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥ ﴾ [الاحزاب: ٣٥]
“নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী [মুসলিম] পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী [মুসলিম] নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী [সংযমী] পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী [সংযমী] নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী—এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” [সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত]
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ ذِكۡرٗا كَثِيرٗا ٤١ وَسَبِّحُوهُ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلًا ٤٢ ﴾ [الاحزاب: ٤١، ٤٢]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” [সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত]
এ মর্মে আরও অনেক বিদিত আয়াত রয়েছে।
১৪১৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “দু’টি কলেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ العظيمِ
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।’ অর্থাৎ, , আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিজী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৭. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা
سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أكْبَرُ
(সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার। (অর্থাৎ, , আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান)
পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।” (সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিজী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৮. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ؛ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর।’ অর্থাৎ, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।
যে ব্যক্তি এই দু’আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার একশ’টি গুনাহ মোচন করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে তবে।”
তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে একশবার
سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’
পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।”
(বুখারী – মুসলিম) (সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিজী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবু দাঊদ ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪১৯. আবু আইয়ূব আনসারী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শায়ইন ক্বাদীর’
দিনে দশবার পাঠ করিবে, সে ব্যক্তি ইসমাঈলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করিবে।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪০৪, মুসলিম ২৬৯৩, তিরমিজী ৩৫৫৩, তিরমিজী ৩৫৫৩, আহমাদ ২৩০০৫, ২৩০০৭, ২৩০৩৪, ২৩০৫৬, ২৩০৭১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২০. আবু যার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথা তোমাকে জানাব না কী? আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হল,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ
‘সুবহানাল্লা-হি অবিহামদিহ’ (অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)”
(মুসলিম ২৭৩১, তিরমিজী ৩৫৯৩, আহমাদ ২০৮১৩, ২০৯১৯, ২১০১৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২১. আবু মালেক আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং
سُبْحَانَ اللهِ
‘সুবহানাল্লাহ’ ও
الحَمْدُ للهِ
‘আলহামদু লিল্লাহ’
আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়।”
(মুসলিম ২২৩, তিরমিজী ৩৫১৭, ইবনু মাজাহ ২৮০, আহমাদ ২৩৯৫, ২২৪০১, দারেমী ৬৫৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২২. সা’দ ইবনে আবী অক্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একজন বেদুঈন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সমীপে এসে নিবেদন করল, ‘আমাকে একটি কথা শিখিয়ে দিন, আমি তা বলব।’ তিনি বললেন, “বল,
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، وَالحَمْدُ للهِ كَثيراً، وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَالِمينَ، وَلاَ حَولَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ العَزِيزِ الحَكِيمِ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, আল্লাহু আকবারু কাবীরা, অলহামদু লিল্লাহি কাসীরা, অসুবহানাল্লাহি রাবিবল আ’লামীন, অলা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আযীযিল হাকীম।’ অর্থাৎ, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত সত্য উপাস্য নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহর অতীব প্রশংসা, বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নাড়-চড়া করার (পাপ ও অশুভ জিনিস থেকে বেঁচে থাকা এবং পুণ্যার্জন ও মঙ্গল সাধন করার) ক্ষমতা নেই।”
লোকটি বলল, ‘এ সব কথাগুলি আমার প্রভুর জন্য হল, আমার জন্য কি?’ তিনি বললেন, “তুমি বল,
اَللهم اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِ
‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী অরহামনী অহদিনী অরযুক্বনী।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর। আমার প্রতি দয়া কর। আমাকে সৎপথ প্রদর্শন কর ও আমাকে জীবিকা দাও।”
(মুসলিম ২৬৯৬, আহমাদ ১৫৬৪, ১৬১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৩. সাওবান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামায থেকে সালাম ফিরার পর ঘুরে বসতেন, তখন তিনবার
أستغفر الله
‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা)
করতেন আর পড়তেন,
اَللهم أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَاذَا الجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু অমিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল-জালালি অল-ইকরাম। অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই শান্তি আসে। তুমি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও মহানুভব।
এ হাদীসটির অন্যতম বর্ণনাকারী আওযায়ী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, ‘ইস্তিগফার’ কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, বলবে,
‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ (অর্থাৎ, আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।)
(মুসলিম ৫৯১, তিরমিজী ৩০০, আবু দাঊদ ১৫১২, ইবনু মাজাহ ৯২৮, আহমাদ ২১৯০২, দারেমী ১৩৪৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৪. মুগীরাহ বিন শু‘বাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযান্তে সালাম ফিরতেন, তখন এই দু‘আ পড়তেন:
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللهم لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ্।’ অর্থাৎ, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারী – মুসলিম)
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৪৪, ১৪৭৭, ২৪০৮, ৫৯৭৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসাঈ ১৩৪১-১৩৪৩, আবু দাঊদ ১৫০৫, ৩০৭৯, আহমাদ ১৭৬৭৩, ১৭৬৮১, ১৭৬৯৩, ১৭৭১৪, ১৭৭১৮, ১৭৭৩৪, ১৭৭৬৬, দারেমী ১৩৪৯, ২৭৫১)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৫. আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি প্রতিটি নামাযের পশ্চাতে যখন সালাম ফিরতেন, তখন এই দু‘আটি পড়তেন,
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الحَسَنُ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الكَافِرُونَ
“লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফাদ্বলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বীনা লাহুদ্দীনা অলাউ কারিহাল কা-ফিরূন।” অর্থাৎ, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান। আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার (নড়া-চড়ার) শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। তাঁর ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করিনা, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সুপ্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফের দল তা অপছন্দ করে।
ইবনে যুবাইর রাঃআঃ বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত দু‘আটি প্রত্যেক নামাযের পর পড়তেন।
(মুসলিম ৫৯৪, নাসাঈ ১৩৩৯, ১৩৪০, আবু দাঊদ ১৫০৬, আহমাদ ১৫৬৭৩, ১৫৬৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একদা গরীব মুহাজির (সাহাবাগণ) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে, যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে, যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তাদের উদ্বৃত্ত মাল আছে, ফলে তারা হজ্জ করছে, উমরাহ করছে, জিহাদ করছে ও সাদকাহ করছে, (আর আমরা করতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করিবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করিবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হইতে পারবে না?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করিবে।”
আবু হুরাইরা রাঃআঃ থেকে বর্ণনাকারী আবু সালেহ বলেন, ‘কিভাবে পাঠ করতে হবে, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন,
سُبْحَان اللهِ
‘সুবহানাল্লাহ’,
اللهُ أكْبَرُ
‘আল্লাহু আকবার’
الحَمْدُ للهِ
আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে। যেন প্রত্যেকটি বাক্য ৩৩ বার করে হয়।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৪৩, মুসলিম ৫৯৫, আবু দাঊদ ১৫০৪, আহমাদ ৭২০২, দারেমী ১৩৫৩) মুসলিমের বর্ণনায় এ কথা বাড়তি আছে যে, অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।” হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৭. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয) নামায বাদ
سُبْحَان اللهِ
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ,
الحَمْدُ للهِ
৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ ও
اللهُ أكْبَرُ
৩৩ বার আল্লাহু আকবার
এবং একশত পূর্ণ করতে
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদীর’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়।
(মুসলিম ৫৯৭, আবু দাঊদ ১৫০৪, আহমাদ ৮৬১৬, ৯৮৯৭, মুওয়াত্তা মালিক ৮৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৮. কা‘ব ইবনে উজরাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নামাযান্তে কিছু বাক্য রয়েছে বা কিছু কর্ম রয়েছে, সেগুলি যে পড়বে বা (পাঠ) করিবে, সে আদৌ ব্যর্থ হবে না। তা হচ্ছে প্রত্যেক ফরয নামায বাদ
سُبْحَان اللهِ
৩৩ বার সুবহানাল্লাহ,
الحَمْدُ للهِ
৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও
اللهُ أكْبَرُ
৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।”
(মুসলিম ৫৯৬, তিরমিজী ৩৪১২, নাসাঈ ১৩৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪২৯. সা’দ ইবনে আবী অক্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযসমূহের শেষাংশে এই দু‘আ পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,
اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ العُمُرِ، وَأعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ القَبْرِ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ্দুন্য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাব্র।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৩৬৫, ৬৩৭০, ৬৩৭৪, ৬৩৯০, তিরমিজী ৩৫৬৭, নাসাঈ ৫৪৪৫, ৫৪৪৭, ৫৪৭৮, ৫৪৭৯, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ১৫৮৯, ১৬২৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩০. মুআয রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দু‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করিবে না,
اَللهم أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিক্রিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিক্র (স্মরণ), শুক্র (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।”
(আবু দাঊদ, সহীহ সানাদ) (আবু দাঊদ ১৫২২, ৫৪৮২, ৫৪৮৩, আহমাদ ২১৬২১)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩১. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) তাশাহহুদ (অর্থাৎ, আত্-তাহিয়্যাত) পড়বে, তখন সে এ চারটি জিনিস হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করিবে; বলবে,
اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম, অমিন আযা-বিল ক্বাব্র, অমিন ফিতনাতিল মাহয়্যা অলমামা-ত, অমিন শার্রি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৩৭৭, মুসলিম ৫৮৮, তিরমিজী ৩৬০৪, নাসাঈ ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৯, ৫৫১১, ৫৫১৩-৫৫১৮, ৫৫২০, আবু দাঊদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ ৯০৯, আহমাদ ৭১৯৬, ৭৮১০, ৭৯০৪, ৯০৯৩, ৯১৮৩, ৯৫৪৬, ৯৮২৪, ১০৩৮৯, ২৭৮৯০, ২৭৬৭৪, ২৭২৮০, দারেমী ১৩৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩২. আলী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হইতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ, সালাম ফিরবার আগে) এই দু‘আ পড়তেন,
اَللهم اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ، وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ
“আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখ্খিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই।
(মুসলিম ৭৭১, তিরমিজী ৩৪২২, ৩৪২৩, আবু দাঊদ ৭৬০, ১৫০৯, নাসাঈ ১৬১৯, ইবনু মাজাহ ১৩৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৩. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় (নামাযের) রুকু ও সিজদাতে এই তাসবীহটি অধিক মাত্রায় পড়তেন,
سُبْحَانَكَ اَللهم رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللهم اغْفِرْ لِي
‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিক, আল্লাহুম্মাগফিরলী।’ অর্থাৎ, হে আমাদের প্রভু আল্লাহ! তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৯৪, ৮১৭, ৪২৯৪, ৪৯৬৭, ৪৯৬৮, মুসলিম ৪৮৪, নাসাঈ ১০৪৭, ১১২২, ১১২৩, আবু দাঊদ ৮৭৭, ইবনু মাজাহ ৮৮৯৯, আহমাদ ২৩৬৪৩, ২৩৭০৩, ২৪১৬৪, ২৫০৩৯, ২৫৩৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৪. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় (নামাযের) রুকু ও সিজদাতে পড়তেন,
سبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ المَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ
‘সুব্বূহুন ক্বুদ্দূসুন রাববুল মালা-ইকাতি অর্রূহ।’ অর্থাৎ, অতি নিরঞ্জন, অসীম পবিত্র ফেরেশ্তামন্ডলী ও জিবরীল (আঃ)-এর প্রভু (আল্লাহ) ।
(মুসলিম ৪৮৭, নাসাঈ ১০৪৮, ১১৩৪, আবু দাঊদ ৮৭২, আহমাদ ২৩৫৪৩, ২৪১০৯, ২৪৩২২, ২৪৬২২, ২৪৬৩৮, ২৪৯০৬, ২৫০৭৮, ২৫১১০, ২৫৫৩৯, ২৫৭৬১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৫. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “রুকুতে তোমরা রবের বড়াই বর্ণনা কর
(অর্থাৎ, ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আযীম’ পড়)।
আর সিজদায় দু‘আ করতে সচেষ্ট হও। কারণ, তোমাদের জন্য সে দু‘আ কবুল হওয়ার উপযুক্ত।”
(মুসলিম ৪৭৯, নাসাঈ ১০৪৫, ১১২০, আবু দাঊদ ৮৭৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৯৯, আহমাদ ১৯০৩, দারেমী ১৩২৫, ১৩২৬)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয় তখন, যখন সে সাজদার অবস্থায় হয়। সুতরাং (ঐ সময়) তোমরা বেশি মাত্রায় দু‘আ কর।”
(মুসলিম ৪৮২, নাসাঈ ১১৩৭, আবু দাঊদ ৮৭৫, আহমাদ ৯১৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৭. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিজদা করার সময় এই দু‘আ পড়তেন,
اَللهم اغْفِرْ لي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ
‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী যামবী কুল্লাহ, দিক্বাহু অজিল্লাহ, অআউওয়ালাহু অ আ-খিরাহ, অ আলা-নিয়্যাতাহু অসির্রাহ।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি আমার কম ও বেশী, পূর্বের ও পরের, প্রকাশিত ও গুপ্ত সকল প্রকার পাপকে মাফ করে দাও।
(মুসলিম ৪৮৩, আবু দাঊদ ৮৭৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৮. আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রাত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (বিছানায়) নিখোঁজ পেলাম। কাজেই আমি হাতড়াতে হাতড়াতে তাকে রুকু বা সিজদার অবস্থায় পেলাম। তিনি তাতে পড়ছিলেন,
‘সুবহানাকা অবিহামদিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাঁর নামাযের স্থানে (সিজদায়) ছিলেন। তাঁর দু’টি পায়ের চেটোয় আমার হাত পড়ল। তাঁর পায়ের পাতা দুটো খাড়া ছিল এবং তিনি এই দু‘আ পড়ছিলেন,
اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উকূবাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্কা লা উহ্স্বী সানা-আন ‘আলাইকা আন্তা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক্।’ অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার সন্তুষ্টির অসীলায় তোমার ক্রোধ থেকে, তোমার ক্ষমাশীলতার অসীলায় তোমার শাস্তি থেকে এবং তোমার সত্তার অসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার উপর তোমার প্রশংসা গুনে শেষ করতে পারি না, যেমন তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করেছ।
(মুসলিম ৪৮৬, তিরমিজী ৩৪৯৩, নাসাঈ ১১০০, ১১৩০, ৫৫৩৪, আবু দাঊদ ৮৭৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৪১, আহমাদ ২৩৭৯১, মুওয়াত্তা মালিক ৪৯৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৩৯.সা’দ ইবনে আবু অক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তি প্রত্যহ এক হাজার নেকী অর্জন করতে অপারগ হবে কি?” তাঁর সাথে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করিবে?’ তিনি বললেন, “একশ’বার তাসবীহ
سُبْحَان اللهِ
(সুবহানাল্লাহ)
পড়বে। ফলে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
(মুসলিম ২৬৯৮, তিরমিজী ৩৪৬৩, আহমাদ ১৪৯৯, ১৫৬৬, ১৬১৫)
হুমাইদী বলেন, মুসলিম গ্রন্থে এ রকম يُحَطُّ أَوْ (অথবা — মিটিয়ে দেওয়া হবে) এসেছে। বারক্বানী বলেন, এটিকে শু’বাহ, আবু আওয়ানাহ ও ইয়াহয়্যা আলক্বাত্তান সেই মূসা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন, যাঁর সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন। এঁরা বলেছেন, وَيُحَطُّ (এবং — মিটিয়ে দেওয়া হবে।) অর্থাৎ, তাতে ‘ওয়াও’-এর পূর্বে ‘আলিফ’ বর্ণ নেই। (আর তার মানে হল, তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে এবং এক হাজার গুনাহও মিটিয়ে দেওয়া হবে।)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪০. আবু যার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ
(সুবহানাল্লাহ বলা)
সাদকাহ, প্রত্যেক তাহ্মীদ
(আলহামদু লিল্লাহ বলা)
সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর
(আল্লাহু আকবার বলা)
সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশ্তের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।”
(মুসলিম ৭২০, আবু দাঊদ ১২৮৫, ১২৮৬)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪১. মু’মিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ভোরে ফজরের নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয় জায়নামাযে বসেই রইলেন। তারপর চাশ্তের সময় তিনি যখন ফিরে এলেন, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন। এ দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “তোমার নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ যাবৎ) পঠিত দু‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে এই যে,
سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী, অরিযা নাফসিহী, অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্।’
অর্থাৎ, আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।”
(মুসলিম ২৭২৬, তিরমিজী ৩৫৫৫, নাসাঈ ১৩৫২, ইবনু মাজাহ ৩৮০৮, আহমাদ ২৬২১৮, ২৬৮৭৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪২.আবু মুসা আশ‘আরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে আল্লাহর যিক্র করে আর যে যিক্র করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মত।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪০৭, মুসলিম ৭৭৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪৩. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ, সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করিবেন, তার তওবা কবুল করিবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করিবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৪০৫, ৭৫০৫, ৭৫৩৬, ৭৫৩৬, ৭৫৩৭, মুসলিম ২৬৭৫, তিরমিজী ২৩৮৮, ৩৬০৩, ইবনু মাজাহ ৩৮২২, আহমাদ ৭৩৭৪, ৮৪৩৬, ৮৮৩৩, ৯০০১, ৯০৮৭, ৯৩৩৪, ৯৪৫৭, ১০১২০, ১০২৪১, ১০৩০৬, ১০৩২৬, ১০৪০৩, ১০৫২৬, ১০৫৮৫, ২৭২৭৯, ২৭২৮৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪৪. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “মুফার্রিদগণ অগ্রগমন করেছে।” সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ‘মুফার্রিদ’ কারা, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, “অতিমাত্রায় আল্লাহকে স্মরণকারী নর ও নারী।”
(মুসলিম ২৬৭৬, আহমাদ ৮০৯১, ৯০৭৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৪৫.জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, “সর্বশ্রেষ্ঠ যিক্র হচ্ছে
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”
(তিরমিজী ৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ ৩৮০০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৪৬. আব্দুল্লাহ ইবনে বুস্র রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ইসলামী বিধান তো আমার ক্ষেত্রে অনেক বেশী। সুতরাং আপনি আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন, যেটাকে আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর যিক্রে তোমার রসনা যেন সর্বদা সিক্ত থাকে।”
(তিরমিজী ৩৩৭৫, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৩)হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৪৭. জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمدِهِ، غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الجَنَّةِ
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’
পড়ে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি খেজুর বৃক্ষ রোপণ করা হয়।”
(তিরমিজী ৩৪৬৪, ৩৪৬৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৪৮. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “মি’রাজের রাতে ইব্রাহীম عليه السلام -এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! তুমি তোমার উম্মতকে আমার সালাম পেশ করিবে এবং তাদেরকে বলে দেবে যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও উৎকৃষ্ট, তার পানি মিষ্ট। আর তা বৃক্ষহীন একটি সমতল ভূমি। আর
سُبْحَانَ اللهِ، الحَمْدُ للهِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، اللهُ أَكْبَرُ
‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু লিল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’
হল তার রোপিত বৃক্ষ।”
(তিরমিজী ৩৪৬২)হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৪৯. আবু দার্দা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম কাজের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা সবার চেয়ে বেশি বৃদ্ধিকারী, সোনা-চাঁদি দান করার চেয়ে উত্তম এবং শত্রুর সম্মুখীন হয়ে গর্দান কাটা ও কাটানোর চেয়ে শ্রেয়।” সকলে বলল, ‘অবশ্যই বলে দিন।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ তা‘আলার যিকর।” (তিরমিজী, আবু আব্দুল্লাহ হাকেম বলেছেন, এর সানাদ সহীহ)
(তিরমিজী ৩৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, আহমাদ ২১১৯৫, ২৬৯৭৭, ইবনু মাজাহ ৪৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৫০. সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে জনৈক মহিলার নিকট গেলেন। তার সম্মুখে তখন খেজুরের বিচি বা কাঁকর ছিল। সেগুলোর সাহায্যে তিনি তাসবীহ গণনা করছিলেন। রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাকে আমি কি এমন বিষয়ের কথা জানাবো যা তোমার জন্য এর চেয়ে সহজ বা এর চেয়ে উত্তম? তা হচ্ছে,
سبحان الله عدد ما خلق في السماء
“সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খালাক্বা ফিস্ সামায়ি”
(আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সব জিনিসের সমসংখ্যক যা তিনি আকাশে সৃষ্টি করিয়াছেন)
وسبحان الله عدد ما خلق في الأرض
“ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খালাক্বা ফিল আরযি”
(আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেসব বস্তুর সমসংখ্যক যা তিনি দুনিয়াতে সৃষ্টি করিয়াছেন)
وسبحان الله عدد ما بين ذلك
“ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা বাইনা যালিক”
(পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সকল জিনিসের সমান যা ঐ দু‘টির মাঝে রয়েছে) “ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা হুয়া খালিকুন”
(পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সব জিনিসের সমসংখ্যক তিনি যার স্রষ্টা) আর
الله أكبر
“আল্লাহু আকবার
বাক্যটিও এভাবেই পাঠ করো,
الحمد لله
“আল-হামদু লিল্লাহি”
বাক্যটিও এভাবেই পাঠ কর,
لا إله إلا الله
“লা- ইলা- হা ইল্লাল্লাহু”
বাক্যটিও এভাবেই পাঠ কর,
لا حول ولا قوة إلا بالله
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি”
বাক্যটিও এরূপেই পাঠ কর। (তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
(আমি (আলবানী) বলছিঃ ইমাম তিরমিজী এরূপ বলেছেন, অথচ এর সনদে অজ্ঞতা রয়েছে যেমনটি আমি “আত্ তা‘লীকু আলাল কালিমিত তাইয়্যিব” গ্রন্থে বর্ণনা করেছি (পৃ ২৭) এবং শাইখ হাবাশীর প্রতিবাদ করতে গিয়েও আমি আলোচনা করেছি। ‘নাওয়া’ অথবা ‘হাসা’র সাথে সম্পৃক্ত অংশ উল্লেখ করা ছাড়া হাদীসটির মূল অংশ সহীহ্। এটিকে ইমাম মুসলিম তার সহীহ্ গ্রন্থে (২৭২৬) জুওয়াইরার হাদীস হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
((যদিও ভাষায় ভিন্নতা রয়েছে)।ভিন্ন ভাষায় তিরমিজীতেও(১৫৭৪) সহীহ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে) ।আবু দাঊদ ১৫০০, তিরমিজী ৩৫৬৮) হাদীসটির মানঃ অন্যান্য
১৪৫১. আবু মুসা আশআরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তা হল,
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ
‘ লা হাওলা অলা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৯৯২, ৪২০৫, ৬৩৮৪, ৬৪০৯, ৬৬১০, মুসলিম ২৭০৪, তিরমিজী ৩৩৭৪, ৩৪৬১, আবু দাঊদ ১৫২৬, ইবনু মাজাহ ৩৮২৪, আহমাদ ১৯০২৬, ১৯০৭৮, ১৯০৮২, ১৯১০২, ১৯১০৮, ১৯১৫১, ১৯২৪৬, ১৯২৫৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৪৫ঃ আল্লাহর যিকর সর্বাবস্থায়
১৪৫২. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর যিকর করতেন।’
(মুসলিম ৩৭৩, তিরমিজী ৩৩৮৪, আবু দাঊদ ১৮, ইবনু মাজাহ ৩০২, আহমাদ ২৩৮৮৯, ২৪৬৭৪, ২৫৮৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৫৩. ইবনে আব্বাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন এই দুআ পড়ে,
بِسْمِ الله، اَللهم جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না অজান্নিবিশ শায়ত্বা-না মা রাযাক্বতানা।’
অর্থাৎ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করিবে তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।
তাহলে ওদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪১, ৩২৭১, ৩২৮৩, ৫১৬৫, ৬৩৮৮, ৭৩৯৬, মুসলিম ১৪৩, তিরমিজী ১০৯২, আবু দাঊদ ২১৬১, ইবনু মাজাহ ১৯১৯, আহমাদ ১৮৭০, ১৯১১, ২১৭৯, ২৫৫১, ২৫৯২, দারেমী ২২১২)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৪৬ঃ ঘুমাবার ও ঘুম থেকে উঠার সময় দুআ
১৪৫৪. হুযাইফা ও আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহুমা হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন বিছানায় শোবার জন্য যেতেন, তখন এই দুআ পড়তেন,
بِاسْمِكَ اَللهم أَحْيَا وَأَمُوتُ
‘বিসমিকাল্লাহুম্মা আহ্ইয়া অআমূত।’
(অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি বাঁচি ও মরি)। আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন তখন পড়তেন। ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহয়্যা-না বা‘দা মা আমা-তানা অ ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থাৎ যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মারার পর আবার জীবিত করলেন এবং তাঁরই প্রতি পুনরুত্থান ঘটবে।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৩১৪, ৬৩১২, ৬৩১৪, ৬৩২৪, ৭৩৯৪, তিরমিজী ৩৪১৭, আবু দাঊদ ৫০৪৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৮০, আহমাদ ২২৭৬০, ২২৭৭৫, ২২৮৭, ২২৮৮২, ২২৯৪৯, দারেমী ২৬৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৪৭ঃ যিকিরের মহফিলের ফযীলত
১৪৫৫. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিক&র খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিক&ররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান ক‘রে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে বেহেশ&ত& চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ&তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হইতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ ক‘রে দিলাম।’ ফিরিশ&তাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪০৮, মুসলিম ২৬৮৯, তিরমিজী ৩৬০০, আহমাদ ৭৩৭৬, ৮৪৮৯, ৮৭৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৫৬. আবু হুরাইরা রাঃআঃ ও আবু সাঈদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিক&রে রত হয়, তখনই তাদেরকে ফিরিশ&তাবর্গ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।”
(মুসলিম ২৬৯৯, ২৭০০, তিরমিজী ১৪২৫, ১৯৩০, ২৬৪৬, ২৯৪৫, আবু দাঊদ ৪৯৪৬, ইবনু মাজাহ ২২৫, আহমাদ ৭৩৭৯, ৭৮৮২, ১০১১৮, ১০২৯৮, দারেমী ৩৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৫৭. আবু ওয়াক্বেদ হারেস ইবনে আওফ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও ছিল। ইতোমধ্যে তিনজন লোক আগমন করল। তাদের মধ্যে দু’জন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত হল এবং একজন চলে গেল। নবাগত দু’জন ব্যক্তি রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। তাদের একজন সভার মধ্যে ফাঁক দেখে সেখানে বসে পড়ল। আর অপরজন সভার পিছনে বসে গেল। আর তৃতীয় ব্যক্তি পিঠ ঘুরিয়ে প্রস্থান করল। যখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবসর পেলেন, তখন বললেন, “তোমাদেরকে তিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলব না কি? তাদের একজন তো আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করল, ফলে আল্লাহ তাকে আশ্রয় দান করলেন। আর দ্বিতীয়জন সে (সভার মধ্যে ঢুকে বসতে) লজ্জাবোধ করল, বিধায় আল্লাহও তাঁর ব্যাপারে লজ্জাশীলতা প্রয়োগ (ক‘রে তাকে রহম) করলেন। আর তৃতীয় জন মুখ ফিরিয়ে নিলো, বিধায় আল্লাহও তার দিক থেকে বিমুখ হয়ে গেলেন।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৬, ৪৭৪, মুসলিম ২১৭৬, তিরমিজী ২৭২৪, আহমাদ ২১৪০০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৯১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৫৮. আবু সাঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মুআবিয়াহ রাঃআঃ একবার মসজিদে (কিছু লোকের) এক হালকায় (গোল বৈঠকে) এসে বললেন, ‘তোমরা এখানে কি উদ্দেশ্যে বসেছ?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর যিক&র করার উদ্দেশ্যে বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তোমরা একমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই বসেছ?’ তারা জবাব দিল, ‘(হ্যাঁ,) আমরা একমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘শোন! তোমাদেরকে (মিথ্যাবাদী) অপবাদ আরোপ ক‘রে কসম করাইনি। (মনে রাখবে) কোন ব্যক্তি এমন নেই, যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আমার সমমর্যাদা লাভ করেছে এবং আমার থেকে কম হাদীস বর্ণনা করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একবার) স্বীয় সহচরদের এক হালকায় উপস্থিত হয়ে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা এখানে কি উদ্দেশ্যে বসেছ?” তাঁরা জবাব দিলেন, ‘উদ্দেশ্য এই যে, আমরা আল্লাহর যিক&র করব এবং তাঁর প্রশংসা করব যে, তিনি আমাদেরকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন ও তার মাধ্যমে আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করিয়াছেন।’ এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহর কসম! তোমরা একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই এখানে বসেছ?” তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা কেবল এ উদ্দেশ্যেই বসেছি।’ তিনি বললেন, “শোন! আমি তোমাদেরকে এ জন্য কসম করাইনি যে, আমি তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী ভেবে অপবাদ আরোপ করছি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, জিব্রীল আমার কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে নিয়ে ফিরিশ&তাদের সামনে গর্ব করছেন!”
(মুসলিম ২৭০১, তিরমিজী ৩৩৭৯, নাসাঈ ৫৪২৬, আহমাদ ১৬৩৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৪৮ঃ সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকির
১৪৫৯. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায়
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ
‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’
একশবার পাঠ করিবে, কিয়ামতের দিনে ওর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)।”
(মুসলিম ২৬৯১, ২৬৯২, সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিজী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবু দাঊদ ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৬০. উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! গত রাতে বিছার কামড়ে আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি, (তা বলার নয়) ।’ তিনি বললেন, “শোন! যদি তুমি সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পাঠ করতে,
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’
অর্থাৎ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করিয়াছেন, তার মন্দ হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তাহলে তা তোমার ক্ষতি করতে পারত না।”
(মুসলিম ২৭০৯, আহমাদ ৮৬৬৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৬১. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে এই দুআ পড়তেন,
اَللهم بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ
‘আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহ&না অবিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন।
আর সন্ধ্যায় এই দুআ পড়তেন,
اَللهم بِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ . وَإِلْيَكَ النُّشُورُ
‘আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হল, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন।
(আবু দাঊদ ৫০৬৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৮, আহমাদ ৮৪৩৫, ১০৩৮৪) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৬২. উক্ত রাবী রাঃআঃ , আবু বক&র সিদ্দীক রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু বাক্য বাতলে দিন, যেগুলি সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে থাকব।’ তিনি বললেন, “বল,
اَللهم فَاطِرَ السَّمَاواتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ؛ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَّرِّ نَفْسِي وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ
‘আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি অল আরয্বি আ-লিমাল গায়বি অশশাহা-দাহ, রাব্বা কুলি শাইয়িন অমালীকাহ, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আঊযু বিকা মিন শার্রি নাফসী অশার্রিশ শায়ত্বা-নি অশির্কিহ।’
অর্থাৎ, হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা, উপস্থিত ও অনুপস্থিত পরিজ্ঞাতা, প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও অধিপতি আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আমার আত্মার মন্দ হইতে এবং শয়তানের মন্দ ও শিক© হইতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সকাল-সন্ধ্যা তথা শোবার সময় পাঠ করো।
(তিরিমিযী ৩৩৯২, আহমাদ ৭৯০১, দারেমী ২৬৮৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৬৩. ইবনে মাসঊদ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পড়তেন,
‘আমসাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ, অলহামদু লিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ&দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। রাব্বি আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ খাইরা মা বা’দাহা, অ আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ শার্রি মা বা’দাহা, রাবিব আঊযু বিকা মিনাল কাসালি অ সূইল কিবার, রাবিব আঊযু বিকা মিন আযা-বিন ফিন্না-রি অ আযা-বিন ফিল ক্বাবর।’
অর্থাৎ, আমরা এবং সারা রাজ্য আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাতে বললেন,) তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই জন্য যাবতীয় স্তুতি, এবং তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই রাতে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং তার পরেও যে কল্যাণ আছে তাও প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট এই রাত্রে যে অকল্যাণ আছে তা এবং তারপরেও যে অকল্যাণ আছে তা হইতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট অলসতা এবং বার্ধক্যের মন্দ হইতে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের এবং কবরের সকল প্রকার আযাব হইতে আশ্রয় চাচ্ছি।
তিনি যখন সকালে উঠতেন তখনও এই দুআ পাঠ করতেন; বলতেন ‘আসবাহনা ও আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ——।’
(মুসলিম ২৭২৩, তিরমিজী ৩৩৯০, আবু দাঊদ ৫০৭১, আহমাদ ৪১৮১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৬৪. আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায়
‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) এবং ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবন্নাস’
তিনবার করে পড়। তাহলে প্রতিটি (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে।”
(তিরমিজী ৩৫৭৫, আবু দাঊদ ৫০৮২, নাসাঈ ৫৪২৮, ৫৪২৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৬৫. উসমান ইবনে আফ্ফান রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই দুআ তিনবার করে পড়বে,
بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، إِلاَّ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ
‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা য়্যাযুর্রু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরয্বি অলা ফিসসামা-ই অহুওয়াস সামীউল আলীম।’
অর্থাৎ আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সাথে পৃথিবীর ও আকাশের কোন জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।
কোন জিনিস সে ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না।”
(তিরমিজী ৩৩৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, আহমাদ ৪৪৮, ৫২৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
পরিচ্ছেদ – ২৪৯ঃ ঘুমাবার সময়ের দুআ
১৪৬৬. হুযাইফা ও আবু যর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শোবার সময় এই দুআ পড়তেন,
بِاسْمِكَ اَللهم أَحْيَا وَأَمُوتُ
‘বিসমিকাল্লাহুম্মা আহ্ইয়াহ অ আমূতু।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি বাঁচি ও মরি) ।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৩১২, ৬৩১৪, ৬৩২৪, ৭৩৯৪, তিরমিজী ৩৪১৭, আবু দাঊদ ৫০৪৯, ইবনু মাজাহ ৩৮৮০, আহমাদ ২২৭৩৩, ২২৭৬০, ২২৭৭৫, ২২৮৬০, ২২৯৪৯, দারেমী ২৬৮৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
১৪৬৭. আলী রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা তাঁকে ও ফাতেমাকে বললেন, “যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন
৩৩ বার ‘আল্লাহ আকবার’, ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করিবে।” অন্য এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, আর এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’
পড়তে আদেশ করেছিলেন।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১১৩, ৩৭০৫, ৫৩৬১, ৫৩৬২, ৬৩১৮, মুসলিম ২৭২৭, তিরমিজী ৩৪০৮, ৩৪০৯, আবু দাঊদ ২৯৮৮, ৫০৬২, আহমাদ ৬০৫, ৭৪২, ৮৪০, ৯৯৯, ১১৪৪, ১২৩৩, ১২৫৩, ১৩১৫, দারেমী ২৬৮৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৬৮. আবু হুরাইরা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করিবে, তখন সে যেন নিজ লুঙ্গীর একাংশ দ্বারা তার বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে কি কি জিনিস সেখানে এসেছে। তারপর এই দুআ পড়বে,
بِاسمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ
‘বিসমিকা রাব্বি অয্বা‘তু জানবী অবিকা আরফাউহু ফাইন আমসাকতা নাফসী ফারহামহা অইন আরসালতাহা ফাহফাযহা বিমা তাহফাযু বিহী ইবা-দাকাস স্বা-লিহীন।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমারই নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম এবং তোমারই নামে তা উঠাব। অতএব যদি তুমি আমার আত্মাকে আবদ্ধ করে নাও, তাহলে তার প্রতি করুণা করো। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তাহলে তাকে ঐ জিনিস দ্বারা হিফাযত কর, যার দ্বারা তুমি তোমার নেক বান্দাদের করে থাক।”
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৩২০, ৭৩৯৩, মুসলিম ২৭১৪, তিরমিজী ৩৪০১, আবু দাঊদ ৫০৪০, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৪, আহমাদ ৭৩১৩, ৭৭৫২, ৭৮৭৮, ৯১৭৩, ৯৩০৬, দারেমী ২৬৮৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৬৯.আয়েশা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন শয্যা-গ্রহণ করতেন, তখন নিজ হাত দু’টিতে ‘মুআউবিযাত’ (তিন ক্বুল) পড়ে ফুঁ দিতেন এবং তার দ্বারা নিজ সমগ্র শরীরে বুলাতেন।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৪৩৯, ৫০১৬, ৫০১৮, ৫৭৩৫, ৫৭৪৮, ৫৭৫১, ৬৩১৯, মুসলিম ২১৯২, ৩৯০২, ইবনু মাজাহ ৩৫৯২, আহমাদ ২৪২০৭, ২৪৩১০, ২৪৪০৬, ২৪৮০৭, ২৪৯৫৫, ২৫৬৫৭, ২৫৭৩১, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৫৫)
এক অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রাতে যখন ঘুমাবার জন্য শয্যা গ্রহণ করতেন তখন দু’ হাতের চেটো একত্রে জমা করতেন এবং তাতে তিন ক্বুল পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর তার দ্বারা দেহের ওপর যতদূর সম্ভব বুলাতেন; মাথা, চেহারা ও দেহের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ তিনি তিনবার করতেন। (বুখারী, মুসলিম)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৭০. বারা’ ইবনে আযেব রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করিবে, তখন নামাযের ওজুর ন্যায় ওযু করিবে। তারপর ডানপাশে শুয়ে এই দুআ পড়বে,
اَللهم أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيكَ، وَأَلْجَأتُ ظَهرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيكَ، آمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ
‘আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইক, অ অজ্জাহতু অজহিয়া ইলাইক, অফাউওয়ায্ব তু আমরী ইলাইক, অ আলজা’তু যাহরী ইলাইক, রাগ্বাতাঁঊ অরাহবাতান্ ইলাইক্, লা মাল্জাআ’ অলা মান্জা মিনকা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা অ বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালত্।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণ তোমার প্রতি সমর্পণ করেছি, আমার মুখমণ্ডল তোমার প্রতি ফিরিয়েছি, আমার সকল কর্মের দায়িত্ব তোমাকে সোপর্দ করেছি, আমার পিঠকে তোমার দিকে লাগিয়েছি (তোমার উপরেই সকল ভরসা রেখেছি), এসব কিছু তোমার সওয়াবের আশায় ও তোমার আযাবের ভয়ে করেছি। তোমার নিকট ছাড়া তোমার আযাব থেকে বাঁচতে কোন আশ্রয়স্থল নেই। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার উপর এবং তুমি যে নবী প্রেরণ করেছ তার উপর ঈমান এনেছি।
(সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৭, ৬৩১৩, ৬৩১৫, ৭৪৮৮, মুসলিম ২৭১০, তিরমিজী ৩৩৯৪, ৩৫৭৪, আবু দাঊদ ৫০৫৬, ইবনু মাজাহ ৩৮৭৬, আহমাদ ১৮০৪৪, ১৮০৮৯, ১৮১১৪, ১৮১৪৩, ১৮১৭৭, ১৮২০৫, দারেমী ২৬৮৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৭১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দুআ পড়তেন,
اَلحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا، وَكَفَانَا وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لاَ كَافِيَ لَهُ وَلاَ مُؤْوِيَ
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্বআমানা অ সাক্বা-না অকাফা-না অ আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মাল লা কা-ফিয়া লাহু অলা মু’বী।’
অর্থাৎ, সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ কত এমন লোক আছে যাদের যথেষ্টকারী ও আশ্রয়দাতা নেই।
(মুসলিম ২৭১৫, তিরমিজী ৩৩৯৬, আবু দাঊদ ৫০৫৩, আহমাদ ১২১৪২, ১২৩০১, ১৩২৪১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
১৪৭২.হুযাইফা রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন স্বীয় ডান হাতটি গালের নিচে স্থাপন করতেন, তারপর এই দুআ পাঠ করতেন।
اَللهم قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
‘আল্লাহুম্মা ক্বিনী আযাবাকা য়্যাওমা তাব্আসু ইবাদাকা।’
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! সেই দিনের আযাব থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দাও, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে।
(তিরমিজী ৩৩৯৮, আহমাদ ২২৭৩৩) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
Leave a Reply