যামিন হওয়া এবং দেনা কর্জের ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর আর্থিক দায়

যামিন হওয়া এবং দেনা কর্জের ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর আর্থিক দায় প্রসঙ্গে

যামিন হওয়া এবং দেনা কর্জের ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর আর্থিক দায় প্রসঙ্গে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৩৯, যামিন হওয়া, অধ্যায়ঃ (১-৫)=৫টি

৩৯/১. অধ্যায়ঃ দেনা ও কর্জের ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর আর্থিক দায় প্রসঙ্গে।
৩৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণী: “যাদের সঙ্গে তোমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দিয়ে দিবে।” (আন-নিসা : ৩৩)
৩৯/৩. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির দেনার দায় গ্রহণ করে, তবে তার এ দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার ইখ্‌তিয়ার নেই।
৩৯/৪. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর যামানায় আবু বক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) কর্তৃক (মুশরিকদের) নিরাপত্তা দান এবং তার অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার বর্ণনা।
৩৯/৫. অধ্যায় : ঋণ

৩৯/১. অধ্যায়ঃ দেনা ও কর্জের ব্যাপারে দেহ এবং অন্য কিছুর আর্থিক দায় প্রসঙ্গে।

২২৯০. আবু যিনাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুহাম্মাদ ইবনু হামযা ইবনু আমর আসলামী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে তাহাঁর পিতা হইতে হইতে বর্ণিতঃ

উমার (রাদি.) তাঁকে সাদকা উশুলকারী নিযুক্ত করে পাঠান। সেখানে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীর দাসীর সাথে ব্যভিচার করে বসল। তখন হামযা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কিছু লোককে তার পক্ষ হইতে যামিন স্থির করিলেন। পরে তিনি উমার (রাদি.)-এর নিকট ফিরে আসলেন। উমার (রাদি.) উক্ত লোকটিকে একশ বেত্রাঘাত করিলেন এবং লোকদের বিবরণকে সত্য বলে গ্রহণ করিলেন। তারপর লোকটিকে তার অজ্ঞতার জন্য (স্ত্রীর দাসীর সাথে যৌন সম্ভোগ করা যে অবৈধ তা সে জানত না) অব্যাহতি দেন। জরীর ও আশআস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) মুরতাদ-ধর্মচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আবদুল্লাহ [ইবনু মাসউদ (রাদি.)]-কে বলেন, তাদেরকে তাওবাহ করিতে বলুন এবং গোত্রের লোকেরা তাদের যামিন হয়ে গেল। হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কোন ব্যক্তি যামিন হবার পর মৃত্যুবরণ করে তবে সে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তার উপর দায়িত্ব থেকে যাবে (অর্থাৎ ওয়ারিশদের উপর সে দায়িত্ব বর্তাবে)।

২২৯১. লায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলিল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। সে বলিল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণদাতা) বলিল, তা হলে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলিল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলিল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করিল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করিল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলিল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতে সে রাজী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে সে কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করিল। আর কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করিল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত বা ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠখন্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ঠখন্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দীনার নিয়ে এসে হাযির হল এবং বলিল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলিল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলিল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলিল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হইতে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দীনার নিয়ে ফিরে চলে গেল।

৩৯/২. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণী: “যাদের সঙ্গে তোমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাদেরকে তাদের অংশ দিয়ে দিবে।” (আন-নিসা : ৩৩)

২২৯২. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, —— আয়াতে —— শব্দের অর্থ উত্তরাধিকারী। আর ——- আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে তিনি [ইবনু আব্বাস (রাদি.)] বলেন, —— মদীনায় মুহাজিরদের নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে আগমনের পর নাবী (সাঃআঃ) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করেন, তার ভিত্তিতে মুহাজিররা আনসারদের উত্তরাধিকারী হত, কিন্তু আনসারদের আত্মীয়-স্বজনরা ওয়ারিশ হত না। যখন ——- এ আয়াত নাযিল হল, তখন ———– আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেল। তারপর তিনি আরো বলেন, উপরোক্ত আয়াতের প্রেক্ষিতে মুহাজির ও আনসারদের পারস্পরিক সাহায্য-সহযোগিতা ও আদেশ-উপদেশের হুকুম বাকী রয়েছে। কিন্তু তাদের জন্য মীরাস বা উত্তরাধিকার স্বত্ব রহিত হয়ে গেছে। অবশ্য তাদের জন্য ওসীয়াত করা যেতে পারে।

২২৯৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাদি.) যখন আমাদের নিকট (মদীনায়) আসেন, তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ও সাদ ইবনু রাবী এর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেন।

২২৯৪. আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার নিকট কি এ হাদীস পৌঁছেছে যে, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, ইসলামে হিল্‌ফ (জাহিলী যুগের সহযোগিতা চুক্তি) নেই? তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমার ঘরে কুরাইশ এবং আনসারদের মধ্যে সহযোগীতা চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন।

৩৯/৩. অধ্যায়ঃ যদি কোন ব্যক্তি কোন মৃত ব্যক্তির দেনার দায় গ্রহণ করে, তবে তার এ দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার ইখ্‌তিয়ার নেই।

২২৯৫. সালামা ইবনু আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একদিন নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে সলাতে জানাযা আদায়ের জন্য একটি জানাযা উপস্থিত করা হল। তখন নাবী (সাঃআঃ) জিজ্ঞেস করিলেন, তার কি কোন ঋণ আছে? সাহাবীগণ বলিলেন, না। তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন। তারপর আরেকটি জানাযা উপস্থিত করা হল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তার কি কোন ঋণ আছে? সাহাবীগণ বলিলেন, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তোমাদের সাথীর সলাতে জানাযা তোমরাই আদায় করে নাও। আবু কাতাদাহ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তার ঋণের দায়-দায়িত্ব আমার উপর। তখন তিনি তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন।

২২৯৬. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছিলেন, যদি বাহরাইনের মাল এসে যায় তাহলে আমি তোমাকে এতো এতো দিব। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ)-এর ওফাত পর্যন্ত বাহরাইনের মাল এসে পৌঁছায়নি। পরে যখন বাহরাইনের মাল পৌঁছল, আবু বকর (রাদি.)-এর আদেশে ঘোষণা করা হল, নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট যার অনুকূলে কোন প্রতিশ্রুতি বা ঋণ রয়েছে সে যেন আমার নিকট আসে। আমি তার নিকট গিয়ে বললাম, নাবী (সাঃআঃ) আমাকে এতো এতো দিবেন বলেছিলেন। তখন আবু বকর (রাদি.) আমাকে এক অঞ্জলি ভরে দিলেন, আমি তা গণনা করলাম এতে পাঁচ শ ছিল। তারপর তিনি বলিলেন, এর দ্বিগুণ নিয়ে যাও।

৩৯/৪. অধ্যায় : নাবী (সাঃআঃ)-এর যামানায় আবু বক্‌র সিদ্দীক (রাদি.) কর্তৃক (মুশরিকদের) নিরাপত্তা দান এবং তার অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার বর্ণনা।

২২৯৭. নাবী (সাঃআঃ)-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যেদিন হইতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হইতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীনের আনুসারী হিসাবেই পেয়েছি। আবু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আবু সালিহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) …………. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যেদিন হইতে আমার জ্ঞান বুদ্ধি হয়েছে সেদিন হইতেই আমি আমার আব্বা আম্মাকে দ্বীন ইসলামের অনুসারীরূপে পেয়েছি এবং আমাদের এমন কোন দিন যায়নি, যে দিনের দু প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের নিকট আসেননি। যখন মুসলিমগণ কঠিন বিপদের সম্মুখীন হলেন তখন আবু বকর (রাদি.) হাবশা (আবিসিনিয়া) অভিমুখে হিজরতের উদ্দেশে যাত্রা করিলেন। যখন তিনি বারকূল গিমাদ নামক স্থানে এসে পৌঁছালেন তখন ইবনু …. তার সাক্ষাৎ করিল। সে ছিল কারা গোত্রের নেতা। সে বলিল, হে আবু বকর! আপনি কোথায় যেতে ইচ্ছা করছেন? আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমার গোত্র আমাকে বের করে দিয়েছে, তাই আমি ইচ্ছা করছি যে, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াবো আর আমার প্রতিপালকের ইবাদাত করব। ইবনু দাগিনা বলিল, আপনার মতো লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং আপনার মতো লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। কেননা আপনি নিঃস্বকে সাহায্য করেন, আত্মীয়তার বন্ধনকে রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদারী করেন এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করেন। আমি আপনার আশ্রয়দাতা। কাজেই আপনি মক্কায় ফিরে চলুন এবং নিজ শহরে গিয়ে আপন প্রতিপালকের ইবাদত করুন। তারপর ইবনু দাগিনা আবু বকর (রাদি.)-কে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এল। সে কাফির কুরাইশদের যারা নেতা তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিল এবং তাদেরকে বলিল, আবু বক্‌র (রাদি.)-এর মতো লোক বেরিয়ে যেতে পারে না এবং তার মতো লোককে বহিষ্কার করাও চলে না। আপনারা কি এমন একজন লোককে বহিষ্কার করিতে চান যে, নিঃস্বকে সাহায্য করে, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করে, মেহমানের মেহমানদারী করে এবং দুর্যোগের সময় মানুষকে সাহায্য করে। আবু বকর (রাদি.)-কে ইবনু দাগিনার আশ্রয় প্রদান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তারা আবু বকর (রাদি.)-কে নিরাপত্তা দিয়ে ইবনু দাগিনাকে বলিল, আপনি আবু বকরকে বলে দিন, তিনি যেন নিজ বাড়ীতে তার প্রতিপালকের ইবাদাত করেন, সেখানে যেন সালাত আদায় করেন এবং তাহাঁর যা ইচ্ছা তা যেন পড়েন। এ ব্যাপারে তিনি যেন আমাদেরকে কোন কষ্ট না দেন এবং তিনি যেন প্রকাশ্যে সালাত ও তিলাওয়াত না করেন। কেননা, আমরা আশঙ্কা করছি যে, তিনি (প্রকাশ্যে এসব করে) আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত না করেন। ইবনু দাগিনা এসব কথা আবু বকর (রাদি.)-কে বলিল। আবু বকর (রাদি.) নিজ বাড়ীতেই তাহাঁর প্রতিপালকের ইবাদাত করিতে থাকেন, নিজ বাড়ী ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ্যে সালাত আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করিতেন না। কিছু দিন পর আবু বকর (রাদি.)-এর মনে অন্য এক খেয়াল উদয় হল। তিনি নিজ ঘরের আঙিনায় একটি মসজিদ বানালেন এবং বেরিয়ে এসে সেখানে সালাত আদায় এবং কুরআন তিলাওয়াত করিতে লাগলেন। ফলে মুশরিকদের স্ত্রী-পুত্ররা তাহাঁর কাছে ভিড় জমাতে লাগল। তাদের কাছে তা ভাল লাগত এবং তাহাঁর প্রতি তারা তাকিয়ে থাকত। আবু বকর (রাদি.) ছিলেন অতি ক্রন্দনশীল ব্যাক্তি। যখন তিনি কুরআন তিলাওয়াত করিতেন তখন অশ্রু সংবরণ করিতে পারতেন না। এতে কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ঘাবড়িয়ে গেল। তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠাল। সে তাদের কাছে আসার পর তারা তাকে বলিল, আমরা তো আবু বকর (রাদি.)-কে এই শর্তে আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিয়েছিলাম যে, তিনি নিজ গৃহে তাহাঁর প্রতিপালকের ইবাদাত করবেন। কিন্তু তিনি তা লঙ্ঘন করে নিজ গৃহের আঙিনায় মসজিদ বানিয়েছেন এবং (তাতে) প্রকাশ্যভাবে সালাত আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করছেন। এতে আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তিনি আমাদের স্ত্রী-পুত্রদের ফিতনায় লিপ্ত করবেন। কাজেই আপনি তাঁকে গিয়ে বলুন, তিনি যদি নিজ গৃহে তাহাঁর প্রতিপালকের ইবাদাত সীমাবদ্ধ রাখতে চান তবে তা করিতে পারেন। আর যদি তিনি অস্বীকার করেন এবং প্রকাশ্যে এসব করিতে চান তবে আপনি তাঁকে বলুন, তিনি যেন আপনার যিম্মাদারী ফিরিয়ে দেন। কেননা আমরা যেমন তাহাঁর সাথে আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ পছন্দ করি না, তেমনি আবু বকর (রাদি.)-এর প্রকাশ্যে ইবাদত করাটা মেনে নিতে পারি না, আয়েশা (রাদি.) বলেন, তারপর ইবনু দাগিনা আবু বকর (রাদি.)-এর নিকট এসে বলিল, যে শর্তে আমি আপনার যিম্মাদারী নিয়েছিলাম, তা আপনার জানা আছে। হয়তো আপনি সে শর্তের উপর সীমাবদ্ধ থাকুন, নয়তো আমার যিম্মাদারী আমাকে ফেরত দিন। কেননা, কোন ব্যাক্তির সাথে আমি নিরাপত্তার চুক্তি করার পর আমার পক্ষ হইতে তা ভঙ্গ করা হয়েছে, এমন একটা কথা আরব জাতি শুনতে পাক তা আমি আদৌ পছন্দ করি না। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমি আপনার যিম্মাদারী ফেরত দিচ্ছি এবং আল্লাহর আশ্রয় লাভেই আমি সন্তুষ্ট। এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মক্কায় ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) (মুসলিমগণকে) বলেন, আমাকে (স্বপ্নযোগে) তোমাদের হিজরতের স্থান দেখানো হয়েছে। আমি খেজুর বৃক্ষে পরিপূর্ণ একটি কঙ্করময় স্থান দেখলাম, যা দুটি প্রান্তরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন এ কথা বলিলেন, তখন যারা হিজরত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকেই হিজরত করিলেন। আর যারা আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন তাদের কেউ কেউ মদীনার দিকে ফিরে গেলেন। আবু বকর (রাদি.)- ও হিজরতের জন্য তৈরী হলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, আপনি অপেক্ষা করুন। কেননা, আমি নিশ্চিত ভাবে আশা করছি যে, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেয়া হইবে। আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবানী হোক, আপনি কি এমনটি আশা করেন যে, আপনি অনুমতি পাবেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন আবু বকর (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গী হবার উদ্দেশ্যে নিজেকে (আবিসিনিয়ায় হিজরত হইতে) বিরত রাখলেন এবং তাহাঁর নিকট যে দুটো উট ছিল, সেগুলোকে চার মাস অবধি বাবলার পাতা খাওয়াতে থাকলেন।

৩৯/৫. অধ্যায় : ঋণ

২২৯৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট যখন কোন ঋণী ব্যাক্তির জানাযা উপস্থিত করা হত তখন তিনি জিজ্ঞেস করিতেন, সে তার ঋণ পরিশোধের জন্য অতিরিক্ত মাল রেখে গেছে কি? যদি তাঁকে বলা হত যে, সে তার ঋণ পরিশোধের মতো মাল রেখে গেছে তখন তার জানাযার সালাত আদায় করিতেন। নতুবা বলিতেন, তোমাদের সাথীর জানাযা আদায় করে নাও। পরবর্তীতে যখন আল্লাহ তাহাঁর বিজয়ের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন, তখন তিনি বলিলেন, আমি মুমিনদের জন্য তাদের নিজের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। তাই কোন মুমিন ঋণ রেখে মারা গেলে সে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার। আর যে ব্যাক্তি সম্পদ রেখে যায়, সে সম্পদ তার উত্তারাধিকারীদের জন্য।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply