কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দোআ
কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দোআ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلۡفُلۡكِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مَا تَرۡكَبُونَ ١٢ لِتَسۡتَوُۥاْ عَلَىٰ ظُهُورِهِۦ ثُمَّ تَذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ رَبِّكُمۡ إِذَا ٱسۡتَوَيۡتُمۡ عَلَيۡهِ وَتَقُولُواْ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣ وَإِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ ١٤﴾ [الزخرف: ١٢، ١٤]
অর্থাৎ “যিনি সব কিছুর যুগলসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন এবং নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তুকে তোমাদের যানবাহনে পরিণত করিয়াছেন। যাতে তোমরা ওদের পিঠে স্থিরভাবে বসে তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ করিতে পার, পবিত্র মহান তিনিই যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন; যদিও আমরা একে বশীভূত করিতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।” [সূরা যুখরুফ ১২-১৪ আয়াত]
১. ইবনি উমার রাঃআঃ হতে বর্ণিত, রসূল সাঃআঃ যখন সফরে বেরিয়ে উটের পিঠে স্থির হয়ে বসতেন, তখন তিনবার
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
পড়ে এই দো‘আ পড়তেন,
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلبُونَ . اَللّهُمَّ إِنَّا نَسأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا البِرَّ وَالتَّقوَى، وَمِنَ العَمَلِ مَا تَرضَى، اَللهم هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اَللهم أنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ . اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ فِي الماَلِ وَالأَهْلِ وَالوَلَدِ
‘সুবহানাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা অত্তাক্বওয়া, অমিনাল আমালি মা তারদ্বা। আল্লাহুম্মা হাওওয়িন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা অত্বওয়ি ‘আন্না বু‘দাহ। আল্লাহুম্মা আন্তাস সা-হিবু ফিস সাফারি অলখালীফাতু ফিল আহল। আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন অ‘সাইস সাফার, অকাআবাতিল মানযার, অসূইল মুনক্কালাবি ফিল মা-লি অল আহলি অল অলাদ।’ অর্থাৎ পবিত্র ও মহান যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা একে বশীভূত করিতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। ওগো আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের এই যাত্রায় পুণ্যকর্ম, সংযমশীলতা এবং তোমার সন্তোষজনক কার্যকলাপ। হে আল্লাহ! আমাদের এ যাত্রাকে আমাদের জন্য সহজ করে দাও। আমাদের থেকে ওর দূরত্ব গুটিয়ে নাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সঙ্গী। আর পরিবার পরিজনের জন্য [আমাদের] প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে, ভয়ংকর দৃশ্য থেকে এবং বাড়ি ফিরে ধন-সম্পদ, পরিবার ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কোন অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর বাড়ি ফিরার সময় উক্ত দো‘আর সাথে এগুলিও পড়তেন,
آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন।
মুসলিম ১৩৪২, তিরমিযী ৩৪৪৭, আবূ দাউদ ২৫৯৯, আহমাদ ৬৩৩৮, দারেমী ২৬৭৩
২. আব্দুল্লাহ ইবনি সার্জিস রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন সফর করিতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ-দো‘আ থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন।
মুসলিম ১৩৪৩, তিরমিযী ৩৪৩৯, নাসায়ী ৫৪৯৮, ৫৪৯৯, ৫৫০০, ইবনু মাজাহ ৩৮৮৮, আহমাদ ২০২৪৭, ২০২৫৭, দারেমী ২৬৭২. الحَور بعد الكون এভাবেই সহীহ মুসলিমে আছে [الكون এ নূন দিয়ে]। ইমাম তিরমিযী ও নাসাঈও ঐভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। তিরমিযী বলেন, الكور [এ নূনের পরিবর্তে] ‘রা’ বর্ণ সহকারে বর্ণনা করা হয়। আর উভয় বর্ণনাই সঠিক। আলেমগণ এ দুয়েরই অর্থ বলেছেন যে, ভালো হওয়ার পর খারাপ হওয়া কিংবা বেশি হওয়ার পর কম হওয়া। তাঁরা বলেন, كور শব্দটি تكرير العمامة [অর্থাৎ পাগড়ী পেঁচানো] থেকে গৃহীত। অর্থাৎ মাথায় পাগড়ী জড়ানো বা গুটানো। আর كون শব্দটি كان يكون كوناً থেকে গৃহীত। তার মানে হচ্ছে অস্তিত্বে আসা, স্থির হওয়া।
৩. আলী ইবনি রাবীআহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনি আবু ত্বালেব রাঃআঃ-এর নিকট হাজির ছিলাম। যখন তাহাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন
‘বিসমিল্লাহ’ বলিলেন। অতঃপর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজাভাবে বসলেন তখন বলিলেন,
الحَمْدُ ِللهِ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ
‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন।’
অতঃপর তিনবার
الْحَمْدُ لِلَّهِ
উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
পড়লেন। অতঃপর তিনবার
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
পড়লেন। অতঃপর পড়লেন,
سُبْحَانَكَ إنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ
‘সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফ্সী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত্।’
অতঃপর তিনি হাসলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বলিলেন, ‘আমি নবী সাঃআঃকে দেখলাম, তিনি তাই করিলেন, যা আমি করলাম। অতঃপর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বলিলেন, ‘‘তোমার মহান প্রতিপালক তাহাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে, ‘ইগফিরলী যুনূবী’ [অর্থাৎ আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও।] সে জানে যে, আমি [আল্লাহ] ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করিতে পারে না।’’
[আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান, কোন কোন কপিতে আছে, ‘হাসান সহীহ’। আবূ দাউদ ২৬০২, তিরমিযী ৩৪৪৬
Leave a Reply