যাদের কে বিবাহ করা হারাম । আশ্‌-শিগার বা বদল বিয়ে

যাদের কে বিবাহ করা হারাম । আশ্‌-শিগার বা বদল বিয়ে

যাদের কে বিবাহ করা হারাম । আশ্‌-শিগার বা বদল বিয়ে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৬৭, বিয়ে শাদী, অধ্যায়ঃ (২০-৩২)=১৩টি

৬৭/২০. অধ্যায়ঃ চারের অধিক বিয়ে না করা সম্পর্কে।
৬৭/২১. অধ্যায়ঃ (আল্লাহ বলেন,), “তোমাদের জন্য দুধমাকে (বিয়ে) হারাম করা হয়েছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)
৬৭/২২. অধ্যায়ঃ যারা বলে দুবছরের পরে দুধপান করালে দুধের সম্পর্ক স্থাপন হইবে না।
৬৭/২৩. অধ্যায়ঃ দুগ্ধ পানকারী হল দুগ্ধদাত্রীর স্বামীর দুগ্ধ-সন্তান।
৬৭/২৪. অধ্যায়ঃ দুধমার সাক্ষ্য গ্রহণ।
৬৭/২৫. অধ্যায়ঃ কোন কোন মহিলাকে বিয়ে করা হালাল এবং কোন কোন মহিলাকে বিয়ে করা হারাম।
৬৭/২৬. অধ্যায়ঃ “এবং (তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)
৬৭/২৭. অধ্যায়ঃ “দু বোনকে একত্রে বিয়ে করা (হালাল নয়) তবে অতীতে যা হয়ে গেছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)
৬৭/২৮. অধ্যায়ঃ কোন মহিলার আপন ফুফু যদি কোন পুরুষের স্ত্রী হয়, তবে ঐ মহিলা যেন উক্ত পুরুষকে বিয়ে না করে।
৬৭/২৯. অধ্যায়ঃ আশ্‌-শিগার বা বদল বিয়ে।
৬৭/৩০. অধ্যায়ঃ কোন মহিলা কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পন করিতে পারে কিনা?
৬৭/৩১. অধ্যায়ঃ ইহরামকারীর বিয়ে।
৬৭/৩২. অধ্যায়ঃ অবশেষে রাসুল (সাঃআঃ) মুতআহ বিয়ে নিষেধ করিয়াছেন।

৬৭/২০. অধ্যায়ঃ চারের অধিক বিয়ে না করা সম্পর্কে।

আল্লাহ তাআলার বানী: “তোমরা বিয়ে কর দুজন, তিনজন অথবা চারজন।” (সুরা আন-নিসা ৪/২)

আলী ইবনু হুসায়ন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: এর অর্থ হচ্ছে দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজন। আল্লাহ তাআলা বলেন, “(ফেরেশতাদের) দু অথবা তিন অথবা চারখানা পাখা আছে” – (সুরা ফাতির ৩৫/১)– এর অর্থ দু দুখানা, তিন তিনখানা এবং চার চারখানা।

৫০৯৮

 আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যদি তোমরা ভয় কর ইয়াতীমদের মধ্যে পূর্ণ ইনসাফ কায়িম করিতে পারবে না– (সুরা আন-নিসা ৪/৩) – এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আয়াত ঐ সমস্ত ইয়াতীম বালিকাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যাদের অভিভাবক তাদের সম্পদের লোভে বিয়ে করে। কিন্তু তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং তাদের সম্পত্তিকে ইনসাফের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করে না। তার জন্য সঠিক পন্থা এই যে, ঐ বালিকাদের ছাড়া মহিলাদের মধ্য থেকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী দুজন অথবা তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করিতে পারবে।(আঃপ্রঃ- ৪৭২৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৭)

৬৭/২১. অধ্যায়ঃ (আল্লাহ বলেন,), “তোমাদের জন্য দুধমাকে (বিয়ে) হারাম করা হয়েছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)

রক্তের সম্পর্কের কারণে যাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম, দুধের সম্পর্কের কারণেও তাদের সঙ্গে বিয়ে হারাম।

৫০৯৯

নাবী (সাঃআঃ) – এর সহধর্মিণী আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরে বসে ছিলেন। এমন সময় শুনলেন এক ব্যক্তি হাফসাহ (রাদি.) – এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! লোকটি আপনার ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তখন বলেন, আমি জানি, সে ব্যক্তি হাফ্‌সার দুধের সম্পর্কের চাচা। আয়িশা (রাদি.) বলেন, যদি অমুক ব্যক্তি বেঁচে থাকত সে দুধ সম্পর্কে আমার চাচা হত (তাহলে কি আমি তার সঙ্গে দেখা করিতে পারতাম)? নাবী (সাঃআঃ) বলেন, হাঁ, রক্ত সম্পর্কের কারণে যাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ, দুধ সম্পর্কের কারণেও তাদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ।(আঃপ্রঃ- ৪৭২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৮)

৫১০০

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলু্ল্লাহ (সাঃআঃ) – কে বলিল, আপনি কেন হামযাহ (রাদি.) – এর মেয়েকে বিয়ে করছেন না? তিনি বলিলেন, সে আমার দুধ সম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ে। বিশ্‌র … জাবির বিন যায়দ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।(আঃপ্রঃ- ৪৭২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭২৯)

৫১০১

উম্মু হাবীবা বিনতে আবু সুফ্‌ইয়ান (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার বোন আবু সুফিয়ানের কন্যাকে বিয়ে করুন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি এটা পছন্দ কর? তিনি উত্তর করিলেন, হাঁ। এখন তো আমি আপনার একক স্ত্রী নই এবং আমি চাই যে, আমার বোনও আমার সাথে উত্তম কাজে অংশীদার হোক। তখন নাবী (সাঃআঃ) উত্তর দিলেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনতে পেলাম, আপনি নাকি আবু সালামার মেয়েকে বিয়ে করিতে চান। তিনি বলিলেন, তুমি বলিতে চাচ্ছ যে, আমি উম্মু সালামার মেয়েকে বিয়ে করিতে চাই। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, যদি সে আমার প্রতিপালিতা কন্যা না হত, তাহলেও তাকে বিয়ে করা হালাল হত না। কেননা, সে দুধ সম্পর্কের দিক দিয়ে আমার ভাতিজী। কেননা, আমাকে এবং আবু সালামাকে সুওয়াইবা দুধ পান করিয়েছে। সুতরাং, তোমরা তোমাদের কন্যা ও বোনদেরকে বিয়ের জন্য পেশ করো না। উরওয়া (রাদি.) বর্ণনা করেন, সুওয়াইবা ছিল আবু লাহাবের দাসী এবং সে তাকে আযাদ করে দিয়েছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – কে দুধ পান করায়। আবু লাহাব যখন মারা গেল, তার একজন আত্মীয় তাকে স্বপ্নে দেখল যে, সে ভীষণ কষ্টের মধ্যে নিপতিত আছে। তাকে জিজ্ঞেস করিল, তোমার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করা হয়েছে। আবু লাহাব বলিল, যখন থেকে তোমাদের হইতে দূরে আছি, তখন থেকেই ভীষণ কষ্টে আছি। কিন্তু সুওয়াইবাকে আযাদ করার কারণে কিছু পানি পান করিতে পারছি। [৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৩, ৫৩৭২; মুসলিম ১৭/৪, হাদীস ১৪৪৯, আহমাদ ২৭৪৮২](আঃপ্রঃ- ৪৭২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩০)

৬৭/২২. অধ্যায়ঃ যারা বলে দুবছরের পরে দুধপান করালে দুধের সম্পর্ক স্থাপন হইবে না।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, “যে ব্যক্তি দুধপান কাল পূর্ণ করাতে ইচ্ছুক তার জন্য মায়েরা নিজেদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু বৎসরকাল স্তন্য দান করিবে।” – (সুরা আল-বাক্বারাহ ২/২৩৩)

কম-অধিক যে পরিমাণ দুধ পান করলে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হয়।

৫১০২

 আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তার কাছে এলেন। সে সময় এক লোক তার কাছে বসা ছিল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর চেহারায় ক্রোধের ভাব প্রকাশ পেল, যেন তিনি এ ব্যাপারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন। আয়িশা (রাদি.) বলেন, এ আমার ভাই। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেন, যাচাই করে দেখ, তোমাদের ভাই কারা? কেননা দুধের সম্পর্ক কেবল তখনই কার্যকরী হইবে যখন দুধই হল শিশুর প্রধান খাদ্য। [১২] (আঃপ্রঃ- ৪৭২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩১)

[১২] সন্তানের দুবছর বয়সের মধ্যে যদি দুধপান করে থাকে, তবে দুধের সম্পর্ক হইবে, নইলে হইবে না।

৬৭/২৩. অধ্যায়ঃ দুগ্ধ পানকারী হল দুগ্ধদাত্রীর স্বামীর দুগ্ধ-সন্তান।

৫১০৩

 আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হবার পর তাহাঁর [আয়িশার (রাদি.)] দুধ সম্পর্কীয় চাচা আবুল কুআয়াসের ভাই আফলাহ তাহাঁর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। আয়িশা (রাদি.) বলেন, আমি অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানালাম। এরপর রাসুল (সাঃআঃ) এলেন। আমি যা করেছি, সে সম্পর্কে তাঁকে জানালাম। তিনি তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে আমাকে নির্দেশ দিলেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩২)

৬৭/২৪. অধ্যায়ঃ দুধমার সাক্ষ্য গ্রহণ।

৫১০৪

 উক্‌বাহ ইবনু হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বিয়ে করলাম। এরপর একজন কালো মহিলা এসে বলিল, আমি তোমাদের দুজনকে দুধ পান করিয়েছি। এরপর আমি নাবী (সাঃআঃ) – এর কাছে এসে বললাম, আমি অমুকের কন্যা অমুককে বিয়ে করেছি। এরপর এক কালো মহিলা এসে আমাদেরকে বলিল যে, আমি তোমাদের দুজনকে দুধ পান করিয়েছি; অথচ সে মিথ্যাবাদিনী। এ কথা শুনে নাবী (সাঃআঃ) মুখ ফিরিয়ে নিলেন। আমি আবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) – এর সামনে এসে বললাম, সে মিথ্যাচারী। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, কী করে বিয়ে হইতে পারে যখন তোমাদের দুজনকেই ঐ মহিলা দুধ পান করিয়েছে- এ কথা বলছে। কাজেই, তোমার স্ত্রীকে ছেড়ে দাও। রাবী ইসমাঈল শাহাদাত এবং মধ্যমা আঙ্গুল দুটো তুলে ইশারা করেছে যে, তার উর্ধ্বতন রাবী আইউব এমন করে দেখিয়েছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৩)

৬৭/২৫. অধ্যায়ঃ কোন কোন মহিলাকে বিয়ে করা হালাল এবং কোন কোন মহিলাকে বিয়ে করা হারাম।

আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা এবং মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইঝি, ভাগিনী, দুধ মা, দুধ বোন, শ্বাশুরী, তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে– নিশ্চয় আল্লাহ সবিশেষ পরিজ্ঞাত ও পরম কুশলী।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩-২৪)

আনাস (রাদি.) বলেন, (وَالْمُحْصَنَت مِنَ النِّسَاءِ) এ কথা দ্বারা সধবা স্বাধীনা মহিলাদেরকে বিয়ে করা হারাম বোঝানো হয়েছে; কিন্তু ক্রীতদাসীকে ব্যবহার করা হারাম নয়। যদি কোন ব্যক্তি বাঁদীকে তার স্বামী থেকে ত্বলাক্ব নিয়ে পরে ব্যবহার করে, তাহলে দোষ নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণী : “মুশরিকা নারীরা ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা তাদেরকে বিয়ে করো না।” (আল-বাক্বারাহঃ ২২১) ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, চারজনের অধিক বিয়ে করা ঐরূপ হারাম বা অবৈধ যেরূপ তার গর্ভধারিণী মা, কন্যা এবং ভগিনীকে বিয়ে করা হারাম।

৫১০৫

ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত। তিনি বলেন, রক্তের সম্পর্কের সাতজন ও বৈবাহিক সম্পর্কের সাতজন নারীকে বিয়ে করা হারাম। এরপর তিনি এ আয়াত পাঠ করিলেন: “তোমাদের জন্যে তোমাদের মায়েদের বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে।” (সুরা আন-নিসা: ২৪)

আবদুল্লাহ ইবনু জাফর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) একসঙ্গে আলী (রাদি.) – এর স্ত্রী [১৩] ও কন্যাকে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ করেন (তারা উভয়েই সৎ-মা ও সৎ-কন্যা ছিল) ইবনু শিরীন বলেন, এতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু হাসান বসরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রথমত এ মত পছন্দ করেননি; কিন্তু পরে বলেন, এতে দোষের কিছুই নেই। কিন্তু হাসান ইবনু হাসান ইবনু আলী একই রাতে দুই চাচাত বোনকে একই সঙ্গে বিয়ে করেন। জাবির ইবনু যায়দ সম্পর্কচ্ছেদের আশংকায় এটা মাকরূহ মনে করিয়াছেন; কিন্তু এটা হারাম নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “এসব ছাড়া আর যত মেয়ে লোক রহিয়াছে তা তোমাদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।” (আন-নিসা: ২৪) ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, যদি কেউ তার শালীর সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলন করে তবে তার স্ত্রী তার জন্য হারাম হয়ে যায় না। শাবী এবং আবু জাফর বলেন, যদি কেউ কোন বালকের সঙ্গে সমকামে লিপ্ত হয়, তবে তার মা তার জন্য বিয়ে করা হারাম হয়ে যাবে। ইকরামাহ (রাদি.)… ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কেউ যদি শাশুড়ির সঙ্গে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়, তবে তার স্ত্রী হারাম হয় না। আবু নাসর ইবনু আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, হারাম হয়ে যাবে। ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাদি.) জাবির ইবনু যায়দ (রাদি.) আল হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং কতিপয় ইরাকবাসী থেকে বর্ণনা করেন যে, তার স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক হারাম হয়ে যাবে। উপরোক্ত ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাদি.) বলেছেন যে, স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক ততক্ষণ হারাম হয় না, যতক্ষণ না কেউ তার শাশুড়ির সঙ্গে অবৈধ যৌন মিলনে লিপ্ত হয়। ইবনু মুসাইয়িব, উরওয়া (রাদি.) এবং যুহরী এমতাবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখা বৈধ বলেছেন। যুহরী বলেন, আলী (রাদি.) বলেছেন, হারাম হয় না। ওখানে যুহরীর কথা মুরসাল অর্থাৎ এ কথা যুহুরী আলী (রাদি.) থেকে শোনেননি। (আ.প্র. অনুচ্ছেদ, ই.ফা. অনুচ্ছেদ)

[১৩] ফাতিমাহ (রাদি.)-এর জীবদ্দশায় আলী (রাদি.) কাউকে বিয়ে করেননি। পরে তিনি বিয়ে করেন।

৬৭/২৬. অধ্যায়ঃ “এবং (তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে) তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সঙ্গত হয়েছ তার পূর্ব স্বামীর ঔরসজাত মেয়ে যারা তোমাদের তত্ত্বাবধানে আছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)

এ প্রসঙ্গে ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন যে, দুখুল মাসীস ও লিমাস শব্দ তিনটির অর্থ হচ্ছে, যৌন মিলন। যে ব্যক্তি বলে যে, স্ত্রীর কন্যা কিংবা তার সন্তানের কন্যা হারামের ব্যাপারে নিজ কন্যার সমান, সে দলীল হিসেবে নাবী (সাঃআঃ) – এর হাদীস পেশ করে। আর তা হচ্ছেঃ নাবী (সাঃআঃ) উম্মু হাবীবা (রাদি.)-কে বলেন, তোমরা তোমাদের কন্যাদের ও বোনদের আমার সঙ্গে বিয়ের প্রস্তাব করো না। একইভাবে নাতবৌ এবং পুত্রবধু বিয়ে করা হারাম। যদি কোন সৎ-কন্যা কারো অভিভাবকের আওতাধীন না থাকে তবে তাকে কি সৎ-কন্যা বলা যাবে? নাবী (সাঃআঃ) তার একটি সৎ কন্যাকে কারো অভিভাবকত্বে দিয়ে ছিলেন এবং নাবী (সাঃআঃ) স্বীয় দৌহিত্রকে পুত্র সম্বোধন করিয়াছেন।

৫১০৬

উম্মু হাবীবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আবু সুফিয়ানের কন্যার ব্যাপারে আগ্রহী? নাবী (সাঃআঃ) উত্তর দিলেন, তাকে দিয়ে আমার কী হইবে? আমি বললাম, তাকে আপনি বিয়ে করবেন। তিনি প্রশ্ন করিলেন, তুমি কি তা পছন্দ করিবে? আমি বললাম, হাঁ। এখন তো আমি একাই আপনার স্ত্রী নই। সুতরাং আমি চাই, আমার বোনও আমার সঙ্গে কল্যাণে অংশীদার হোক। তিনি বলিলেন, তাকে বিয়ে করা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আমরা শুনিয়াছি যে, আপনি আবু সালামার কন্যা দুররাকে বিয়ে করার জন্য পয়গাম পাঠিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন করিলেন, উম্মু সালামার কন্যা? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলিলেন, সে আমার প্রতিপালিতা সৎ কন্যা যদি নাও হতো তবুও তাকে বিয়ে করা আমার জন্য হালাল হতো না। কেননা সুয়াইবিয়া আমাকে ও তার পিতাকে দুধ পান করিয়েছিলেন। সুতরাং বিয়ের জন্য তোমাদের কন্যা বা বোন কাউকে পেশ করো না।

লায়স বলেন, হিশাম দুররা বিনত আবী সালামার নাম বলেছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৪)

৬৭/২৭. অধ্যায়ঃ “দু বোনকে একত্রে বিয়ে করা (হালাল নয়) তবে অতীতে যা হয়ে গেছে।” (সুরা আন-নিসা ৪/২৩)

৫১০৭

উম্মু হাবীবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি আমার বোন আবু সুফ্‌ইয়ানের কন্যাকে বিয়ে করুন। তিনি বলেন, তুমি কি তা পছন্দ কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি তো আপনার একমাত্র স্ত্রী নই এবং আমি যাকে সবচেয়ে ভালবাসি, তার সঙ্গে আমার বোনকেও অংশীদার বানাতে চাই। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, এটা আমার জন্য হালাল নয়। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমরা শুনিয়াছি যে আপনি আবু সালামার কন্যা দুররাকে বিয়ে করিতে চান। তিনি বলিলেন, তুমি কি উম্মু সালামার কন্যার কথা বলছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম, যদি সে আমার সৎ কন্যা নাও হতো তবুও তাকে বিয়ে করা আমার জন্য হালাল হতো না। কারণ সে হচ্ছে আমার দুধ সম্পর্কীয় ভাইয়ের কন্যা। সুওয়াইবা আমাকে এবং তার পিতা আবু সালামাকে দুধ পান করিয়েছিলেন। সুতরাং তোমাদের কন্যা বা বোনদের বিয়ের ব্যাপারে আমার কাছে প্রস্তাব করো না। (আঃপ্রঃ- ৪৭৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৫)

৬৭/২৮. অধ্যায়ঃ কোন মহিলার আপন ফুফু যদি কোন পুরুষের স্ত্রী হয়, তবে ঐ মহিলা যেন উক্ত পুরুষকে বিয়ে না করে।

৫১০৮

জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন মহিলার আপন ফুফু বা খালা কোন পুরুষের স্ত্রী হলে ঐ মহিলা যেন উক্ত পুরুষকে বিয়ে না করে।

অপর এক সূত্রে এই হাদীসটি আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিত আছে। (আঃপ্রঃ- ৪৭৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৬)

৫১০৯

আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, কেউ যেন ফুফু ও তার ভাতিজীকে এবং খালা এবং তার বোনঝিকে একত্রে বিয়ে না করে। [৫১১০; মুসলিম ১৬/৩, হাদীস ১৪০৮, আহমাদ ১০০০২] (আঃপ্রঃ- ৪৭৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৭)

৫১১০

আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) কাউকে একসঙ্গে ফুফু ও ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং খালা ও তার বোনের মেয়েকে বিয়ে করিতে নিষেধ করিয়াছেন। অধঃস্তন রাবী যুহরী বলেছেন, আমরা স্ত্রীর পিতার খালার ব্যাপারেও এ নির্দেশ জানি।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৮)

৫১১১

 উরওয়া আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে আয়িশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

রক্তের সম্পর্কের কারণে যা হারাম, দুধ পানের কারণেও এসব তোমরা হারাম মনে করো।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৮)

৬৭/২৯. অধ্যায়ঃ আশ্‌-শিগার বা বদল বিয়ে।

৫১১২

ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) আশ্‌শিগার নিষিদ্ধ করিয়াছেন। আশ্‌-শিগার হলো: কোন ব্যাক্তি নিজের কন্যাকে অন্য এক ব্যক্তির পুত্রের সঙ্গে বিবাহ দিবে এবং তার কন্যা নিজের পুত্রের জন্য আনবে এবং দু কন্যাই মাহর পাবে না।[৬৯৬০; মুসলিম ১৬/৬, হাদীস ১৪১৫, আহমাদ ৪৫২৬] ](আঃপ্রঃ- ৪৭৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৩৯)

৬৭/৩০. অধ্যায়ঃ কোন মহিলা কোন পুরুষের কাছে নিজেকে সমর্পন করিতে পারে কিনা?

৫১১৩

হিশামের পিতা উরওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যে সব মহিলা নিজেদেরকে নাবী (সাঃআঃ) – এর নিকট সমর্পণ করেছিলেন, খাওলা বিনতে হাকীম তাদেরই একজন ছিলেন। আয়িশা (রাদি.) বলেন, মহিলাদের কি লজ্জা হয় না যে, নিজেদেকে পুরুষের কাছে সমর্পণ করছে? কিন্তু যখন কুরআনের এ আয়াত অবতীর্ণ হল- “হে মুহাম্মাদ! তোমাকে অধিকার দেয়া হল যে, নিজ স্ত্রীগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা আলাদা রাখতে পার…।” (আল-আহযাব: ৫১) আয়িশা (রাদি.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার মনে হয়, আপনার রব আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। উক্ত হাদীসটি আবু সাঈদ মুয়াদ্দিব, মুহাম্মাদ ইবনু বিশ্‌র এবং আবদাহ হিশাম থেকে আর হিশাম তার পিতা হইতে একে অপরের চেয়ে কিছু বর্ধিতভাবে আয়িশা (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪০)

৬৭/৩১. অধ্যায়ঃ ইহরামকারীর বিয়ে।

৫১১৪

জাবির ইবনু যায়দ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, ইহরাম অবস্থায় নাবী (সাঃআঃ) বিবাহ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪১)

৬৭/৩২. অধ্যায়ঃ অবশেষে রাসুল (সাঃআঃ) মুতআহ বিয়ে নিষেধ করিয়াছেন।

৫১১৫

হাসান ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আলী ও তাহাঁর ভাই আবদুল্লাহ তাঁদের পিতা হইতে বর্ণিতঃ

আলী (রাদি.) ইবনু আব্বাস (রাদি.) – কে বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) খায়বর যুদ্ধে মুতআহ বিয়ে এবং গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত খাওয়া নিষেধ করিয়াছেন।(আঃপ্রঃ- ৪৭৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪২)

৫১১৬

আবু জামরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমি মহিলাদের মুতআহ বিয়ে সম্পর্কে ইবনু আব্বাস (রাদি.)-কে প্রশ্ন করিতে শুনিয়াছি, তখন তিনি তার অনুমতি দেন। তাহাঁর আযাদকৃত গোলাম তাঁকে বলিলেন যে, এরূপ হুকুম নিতান্ত প্রয়োজন ও মহিলাদের স্বল্পতা ইত্যাদির কারণেই ছিল? ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিলেন, হাঁ। (আঃপ্রঃ- ৪৭৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৩)

৫১১৭

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালাম আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা কোন এক সেনাবাহিনীতে ছিলাম এবং রাসুল সাঃআঃ-এর প্রেরিত এক ব্যক্তি আমাদের নিকট এসে বলিলেন, তোমাদেরকে মুতআহ বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা মুতআহ করিতে পার। (আঃপ্রঃ- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪)

৫১১৮

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ এবং সালাম আকওয়া (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আমরা কোন এক সেনাবাহিনীতে ছিলাম এবং রাসুল সাঃআঃ-এর প্রেরিত এক ব্যক্তি আমাদের নিকট এসে বলিলেন, তোমাদেরকে মুতআহ বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সুতরাং তোমরা মুতআহ করিতে পার। (আঃপ্রঃ- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪)

৫১১৯

ইবনু আবু যিব হইতে বর্ণিতঃ

আয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়া তার পিতা সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করেন, যে কোন পুরুষ এবং মহিলা উভয়ে (মুতআহ করিতে) একমত হলে তাদের পরস্পরের এ সম্পর্ক তিন রাতের জন্য গণ্য হইবে। এরপর তারা ইচ্ছে করলে এর চেয়ে অধিক সময় স্থায়ী করিতে পারে অথবা বিচ্ছিন্ন হইতে চাইলে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। (বর্ণনাকারী বলেন) আমরা জানি না এ ব্যবস্থা শুধু আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল, না সকল মানুষের জন্য ছিল।[মুসলিম ১৬/২, হাদীস ১৪০৫] (আঃপ্রঃ- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪)

আবু আবদুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেন, আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে এটা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন, মুতাআ বিবাহ প্রথা রহিত হয়ে গেছে। [মুসলিম ১৬/২, হাদীস ১৪০৫] (আঃপ্রঃ- ৪৭৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৪৪)


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply