অগ্নিকুণ্ডের অধিপতি যাদুকর, ধর্মযাজক ও যুবকের ঘটনা
অগ্নিকুণ্ডের অধিপতি যাদুকর, ধর্মযাজক ও যুবকের ঘটনা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১৭. অধ্যায়ঃ অগ্নিকুণ্ডের অধিপতি যাদুকর, ধর্মযাজক ও যুবকের ঘটনা
৭৪০১ সুহায়ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় এক বাদশাহ ছিল। তার ছিল এক যাদুকর। বার্ধ্যক্যে পৌঁছে সে বাদশাহ্কে বলিল, আমি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি, সুতরাং একজন যুবককে আপনি আমার কাছে প্রেরণ করুন, যাকে আমি যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিব। অতঃপর যাদুবিদ্যা শিক্ষা দেয়ার জন্য বাদশাহ তার কাছে এক যুবককে প্রেরণ করিল। বালকের যাত্রাপথে ছিল এক ধর্মযাজক। যুবক তার কাছে বসল এবং তার কথা শুনল। তার কথা যুবকের পছন্দ হলো। তারপর যুবক যাদুকরের কাছে যাত্রাকালে সর্বদাই ধর্মযাজকের কাছে যেত এবং তার নিকট বসত। তারপর সে যখন যাদুকরের কাছে যেত তখন সে তাকে মারধর করত। ফলে যাদুকরের ব্যাপারে সে ধর্মযাজকের কাছে অভিযোগ করিল। তখন ধর্মযাজক বলিল, তোমার যদি যাদুকরের ব্যাপারে ভয় হয় তবে বলবে, আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে আসতে দেয়নি। আর যদি তুমি তোমার গৃহকর্তার ব্যাপারে আশঙ্কাবোধ করো তবে বলবে, যাদুকর আমাকে বিলম্বে ছুটি দিয়েছে। এমনিভাবে চলতে থাকাবস্থায় একদিন হঠাৎ সে একটি ভয়ানক হিংস্র প্রাণীর সম্মুখীন হলো, যা লোকেদের পথ আটকিয়ে রেখেছিল। এ অবস্থা দেখে সে বলিল, আজই জানতে পারব, যাদুকর উত্তম না ধর্মযাজক উত্তম। অতঃপর একটি পাথর হাতে নিয়ে সে বলিল, হে আল্লাহ! যদি যাদুকরের চাইতে ধর্মযাজক আপনার কাছে পছন্দনীয় হয়, তবে এ পাথরাঘাতে এ হিংস্র প্রাণীটি নিঃশেষ করে দিন, যেন লোকজন চলাচল করিতে পারে। অতঃপর সে সেটার প্রতি পাথর ছুঁড়ে দিল এবং সেটাকে মেরে ফেলল। ফলে লোকজন আবার যাতায়াত শুরু করিল। এরপর সে ধর্মযাজকের কাছে এসে তাকে সম্পূর্ন ঘটনা বলিল। ধর্মযাজক বলিল, বৎস! আজ তুমি আমার থেকেও শ্রেষ্ঠ। তোমার মর্যাদা এ পর্যন্ত পৌঁছেছে যা আমি দেখিতে পাচ্ছি। তবে শীঘ্রই তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। যদি পরীক্ষার মুখোমুখি হও তবে আমার কথা গোপন রাখবে। এদিকে যুবক আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করিতে লাগল এবং লোকদের সমুদয় রোগ-ব্যাধির নিরাময় করিতে লাগল। বাদশাহ্র পরিষদবর্গের এক লোক অন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার সংবাদ সে শুনতে পেয়ে বহু হাদিয়া ও উপঢৌকন নিয়ে তার নিকট আসলো এবং তাকে বলিল, তুমি যদি আমাকে আরোগ্য দান করিতে পার তবে এসব মাল আমি তোমাকে দিয়ে দিব। এ কথা শুনে যুবক বলিল, আমি তো কাউকে আরোগ্য দান করিতে পারিনা। আরোগ্য তো দেন আল্লাহ তাআলা। তুমি যদি আল্লাহর উপর ঈমান আনো তবে আমি আল্লাহর কাছে দুআ করব, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। তারপর সে আল্লাহর উপর ঈমান আনলো। আল্লাহ তায়ালা তাকে রোগ মু্ক্ত করে দিলেন। এরপর সে বাদশাহ্র কাছে এসে অন্যান্য দিনের ন্যায় এবারও বসল। বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করিল, কে তোমর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছে? সে বলিল, আমার পালনকর্তা। এ কথা শুনে বাদশাহ্ তাকে আবার প্রশ্ন করিল, আমি ছাড়া তোমার অন্য কোন পালনকর্তাও আছে কি? সে বলিল, আমার ও আপনার সকলের প্রতিপালকই মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন। অতঃপর বাদশাহ্ তাকে পাকড়াও করে অবিরতভাবে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ঐ বালকের অনুসন্ধান দিল, অতঃপর বালককে নিয়ে আসা হলো। বাদশাহ্ তাকে বলিল, হে প্রিয় বৎস! তোমার যাদু এ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তুমি অন্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকেও নিরাময় করিতে পার। বালক বলিল, আমি কাউকে নিরাময় করিতে পারিনা। নিরাময় করেন আল্লাহ। ফলে বাদশাহ্ তাকে শাস্তি দিতে লাগল, অবশেষে সে ধর্মযাজকের [দরবেশের] কথা বলে দিল। এরপর ধর্মযাজককে ধরে আনা হলো এবং তাকে বলা হলো তুমি তোমার দ্বীন থেকে ফিরে এসো। সে অস্বীকার করিল, ফলে তার মাথার তালুতে করাত রেখে সেটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলা হলো। এতে তার মাথাও দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। অবশেষে ঐ যুবকটিকে আনা এবং তাকেও বলা হলো। তুমি তোমার দ্বীন থেকে ফিরে এসো। সেও অস্বীকার করিল। অতঃপর বাদশাহ তাকে তার কিছু সহচরের হাতে তাকে অর্পণ করে বলিল, তোমরা তাকে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও এবং তাকেসহ পাহাড়ে আরোহণ করো। পর্বত শৃঙ্গে পৌঁছার পর সে যদি তার ধর্ম থেকে ফিরে আসে তবে ভাল। নতুবা তাকে সেখান থেকে ছুঁড়ে মারবে। তারপর তারা তাকে নিয়ে গেল এবং তাকেসহ পর্বতে আরোহণ করিল। তখন সে দুআ করে বলিল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষ করো। তৎক্ষণাৎ তাদেরকেসহ পাহাড় কেঁপে উঠল। ফলে তারা পাহাড় হইতে গড়িয়ে পড়ল। আর সে হেঁটে হেঁটে বাদশাহ্র কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে প্রশ্ন করিল, তোমার সাথীরা কোথায়? সে বলিল, আল্লাহ আমাকে তাদের চক্রান্ত হইতে সংরক্ষণ করিয়াছেন। আবারো বাদশাহ্ তাকে তার কতিপরয় সহচরের হাতে সমর্পণ করে বলিল, তোমরা তাকে নিয়ে নাও এবং নৌকায় উঠিয়ে তাকে মাঝ সমুদ্রে নিয়ে যাও। অতঃপর সে যদি তার দ্বীন [ধর্ম] হইতে ফিরে আসে তবে ভাল, নতুবা তোমরা তাকে সমু্দ্রে ফেলে দাও। তারা তাকে সমুদ্রে নিয়ে গেল। এবারও সে দুআ করে বলিল, হে আল্লাহ! তোমার যেভাবে ইচ্ছা তুমি আমাকে তাদের চক্রান্ত থেকে রক্ষা করো। তৎক্ষণাৎ নৌকাটি তাদেরসহ উল্টে গেল। ফলে তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল। আর যুবক হেঁটে হেঁটে বাদশাহ্র কাছে চলে এলো। এ দেখে বাদশাহ্ তাকে আবার প্রশ্ন করিল, তোমার সঙ্গীগণ কোথায়? সে বলিল, আল্লাহ আমাকে তাদের ষড়যন্ত্র হইতে রক্ষা করিয়াছেন। অতঃপর সে বাদশাহকে বলিল, তুমি আমাকে হত্যা করিতে পারবে না যে পর্যন্ত না তুমি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করিবে। বাদশাহ্ বলিল, সে আবার কি? যুবক বলিল, একটি ময়দানে তুমি লোকদেরকে জমায়েত করো। অতঃপর একটি কাষ্ঠের শূলীতে আমাকে উঠিয়ে আমার তীরদানী হইতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রাখে। এরপর …………. “বালকের প্রভুর নামে” বলে আমার দিকে তীর নিক্ষেপ কর। এ যদি করো তবে তুমি আমাকে মেরে ফেলতে পারবে। তার কথা অনুসারে বাদশাহ্ লোকদেরকে এক মাঠে জমায়েত করিল এবং তাকে একটি কাষ্ঠের শূলীতে চড়ালো। অতঃপর তার তীরদানী হইতে একটি তীর নিয়ে সেটাকে ধনুকের মাঝে রেখে ……………… “বালকের প্রভুর নামে” বলে তার দিকে তা নিক্ষেপ করিল। তীর তার কানের নিম্নাংশে গিয়ে বিঁধল। অতঃপর সে তীরবিদ্ধ স্থানে নিজের হাত রাখল এবং সাথে সাথে প্রাণ ত্যাগ করিল। এ দৃশ্য দেখে রাজ্যের লোকজন বলে উঠল, …………………… আমরা এ যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান আনলাম।
এ সংবাদ বাদশাহ্কে জানানো হলো এবং তাকে বলা হলো, লক্ষ্য করিয়াছেন কি? আপনি যে পরিস্থিতি হইতে আশঙ্কা করছিলেন, আল্লাহর শপথ! সে আশঙ্কাজন পরিস্থিতিই আপনার মাথার উপর চেপে বসেছে। সকল মানুষই যুবকের পালনকর্তার উপর ঈমান এনেছে। এ দেখে বাদশাহ্ সকল রাস্তার মাথায় গর্ত খননের নির্দেশ দিল। গর্ত খননকরা হলো এবং ওগুলোতে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করা হলো। অতঃপর বাদশাহ্ আদেশ করিল যে, যে লোক তার ধর্মমত বর্জন না করিবে তাকে ওগুলোতে নিপতিত করিবে। কিংবা সে বলিল, তাকে বলবে, যেন সে অগ্নিতে প্রবেশ করে। লোকেরা তাই করিল। পরিশেষে এক মহিলা একটি শিশু নিয়ে অগ্নিগহ্বরে পতিত হবার ব্যাপারে ইতস্তত করছিল। এ দেখে দুধের শিশু তাকে [মাকে] বলিল, ওহে আম্মাজান! সবর করুন, আপনি তো সত্য দ্বীনের [ধর্মের] উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২৩৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯৩]
Leave a Reply