যাকাত দেয়ার নিয়ম । রূপা পশু ফল শস্য ইত্যাদি
যাকাত দেয়ার নিয়ম । রূপা পশু ফল শস্য সা দান সাদকা ইত্যাদি >> সুনানে নাসাই শরিফের মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২৩, যাকাত, হাদীস (২৪৩৫-২৪৯৯)
১.পরিচ্ছেদঃ: যাকাত ফরয হওয়া
২.পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদান না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্ক বাণী
৩.পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতি প্রদানকারী
৪.পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদান অস্বীকারকারীর শাস্তি
৫.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত
৬.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত প্রদান অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
৭.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত থেকে অব্যাহতি- যদি তা তার মালিকদের দুধের জন্য এবং পরিবহণের জন্য হয়
৮.পরিচ্ছেদঃ গরুর যাকাত
৯.পরিচ্ছেদঃ গরুর যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
১০.পরিচ্ছেদঃ ছাগলের যাকাত
১১.পরিচ্ছেদঃ বিভিন্ন [পশু]-কে একত্রিত এবং একত্রিতকে বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে
১১.পরিচ্ছেদঃ যাকাত দাতার জন্য ইমামের দুআ করা
১৩.পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায়কারীর সীমালংঘন করা প্রসঙ্গে
১৪.পরিচ্ছেদঃ যাকাত উসূলকারীর বাছাই করে নেয়া ব্যতীত সম্পদের মালিকের উত্তম মাল দান করা প্রসঙ্গে
১৪.পরিচ্ছেদঃ ঘোড়ার যাকাত
১৬.পরিচ্ছেদঃ গোলামের যাকাত
১৭.পরিচ্ছেদঃ রূপার যাকাত
১৮.পরিচ্ছেদঃ অলংকারের যাকাত
১৯.পরিচ্ছেদঃ নিজ সম্পদের যাকাত অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
২০.পরিচ্ছেদঃ খেজুরের যাকাত
২১.পরিচ্ছেদঃ গমের যাকাত
২২.পরিচ্ছেদঃ শস্য দানার যাকাত
২৩.পরিচ্ছেদঃ যে পরিমাণে [সম্পদে] যাকাত ওয়াজিব হইবে
২৪.পরিচ্ছেদঃ কোন্ শস্যে উশর এবং কোন্ শস্যে উশরে অর্ধেক ওয়াজিব হইবে?
২৫.পরিচ্ছেদঃ আগাম পরিমাণ নির্ধারণকারী কি পরিমাণ ছাড় দেবে?
২৬.পরিচ্ছেদঃ খনিজ দ্রব্যের যাকাত প্রসঙ্গে
২৭.পরিচ্ছেদঃ মধুর যাকাত
১.পরিচ্ছেদঃ: যাকাত ফরয হওয়া
২৪৩৫. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মুআয [রাঃআঃ]-কে ইয়ামানে পাঠিয়েছিলেন তখন তিনি তাঁকে বলেছিলেন যে, তুমি এমন এক জাতির কাছে যাচ্ছো যারা [আসমানী] কিতাবধারী, যখন তুমি তাহাদের কাছে পৌছবে তখন তাহাদের তুমি এ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহবান করিবে যে, “আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর রাসুল।” যদি তারা তোমার এই আহবানে সাড়া দেয় তবে তাহাদের তুমি অবহিত করিবে যে, আল্লাহ তাআলা তাহাদের উপর দিনরাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয করিয়াছেন। যদি তারা অর্থাৎ তোমার এই আহবানে সাড়া দেয় তবে তাহাদের তুমি অবহিত করিবে যে, আল্লাহ্ তাআলা তাহাদের উপর যাকাত ফরয করিয়াছেন যা তাহাদের মধ্যকার বিত্তবানদের থেকে নেয়া হইবে এবং বিত্তহীনদের মধ্যে ফিরিয়ে দেয়া [বন্টন করা] হইবে। যদি তারা তোমার এই দাওয়াতে সাড়া দেয় তবে তুমি নিজকে অত্যাচারিতের ফরিয়াদ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৩৬. বাহয্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি বললাম ঃ হে আল্লাহর নাবী [সাঃআঃ]! আমি আপনার কাছে এসেছি আমার দুহাতের আংগুলসমূহের সংখ্যারও অধিক এ শপথ করার পরেই যে, আমি আপনার কাছেও আসব না আর আপনার ধর্মও গ্রহন করব না। আর এখন আমি এমন হইয়াছি যে, আল্লাহ তাআলা এবং তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ] আমাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তাছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি আল্লাহ্ তাআলার ওহী সম্পর্কে, কি দিয়ে আপনার রব আপনাকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন ? তিনি বলিলেন , ইসলাম দিয়ে। আমি বললাম, ইসলামের চিহ্ন কি কি ? তিনি বলিলেন, তোমার এ কথা বলা যে, আমি আমার চেহারাকে [নিজকে] আল্লাহ তাআলার সমীপে সমর্পন করলাম, অন্য সব কিছু থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করে ফেললাম। আরও হলো, তোমার নামাজ আদায় করা এবং যাকাত প্রদান করা।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৪৩৭. আবু মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পূর্ণাংগ রূপে উযু করা ঈমানের অর্ধেক। আর আলহামদু লিল্লাহ্ মীযানকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে, তাসবীহ্ এবং তাকবীর আসমানসমূহ এবং যমীনকে পরিপূর্ণ করে ফেলবে। নামাজ হল নূর [আলো] আর যাকাত হল দলীল, ধৈর্য [সাওম] হল জ্যোতি এবং কুরআন হল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৩৮. আবু হুরাইরা এবং আবু সাইদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা বলেন যে, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে সম্বোধন করে তিনবার বলিলেন ঃ ঐ সত্তার শপথ যাঁহার হাতে আমার প্রাণ। তিনবার বলার পর তিনি উপুড় হইয়া পড়ে গেলেন। আমাদের প্রত্যেকেই উপুড় হইয়া পড়ে গিয়ে ক্রন্দন করিতে লাগল। আমরা বুঝতেই পারলাম না যে, তিনি কোন কথার উপর শপথ করিলেন। এরপর তিনি তাহাঁর মাথা উত্তোলন করিলেন। তাহাঁর চেহারায় তখন আনন্দের বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল, যা আমাদের কাছে লাল বর্ণের উট [সব রকমের নিয়ামত] অপেক্ষা অধিক প্রিয় ছিল। তারপর তিনি বলিলেন ঃ যে বান্দা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রমাযান মাসে সাওম পালন করে, যাকাত প্রদান করে এবং সাতটি কবিরা গুনাহ্ পরিত্যাগ করে থাকে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হইবে এবং তাকে বলা হইবে যে, তুমি প্রশান্ত চিত্তে জান্নাতে প্রবেশ কর।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৪৩৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় যে কোন জিনিসের এক জোড়া বস্তুও দান করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হইতে আহবান করা হইবে ঃ হে আল্লাহর বান্দা, এ [দরজা] তোমার জন্য উত্তম। [বস্তুতঃ] জান্নাতের অনেক দরজা আছে। যে নামাজ আদায়কারী হইবে তাকে সালাতের দরজা হইতে ডাকা হইবে, যে ব্যক্তি জিহাদকারী হইবে তাকে জিহাদের দরজা হইতে আহবান করা হইবে। যে ব্যক্তি যাকাত প্রদানকারী হইবে তাকে যাকাতের দরজা হইতে আহবান করা হইবে। যে ব্যক্তি সাওম পালনকারী হইবে তাকে রাইয়্যান [পরিতৃপ্তি] নামক দরজা হইতে আহবান করা হইবে। আবু বকর [রাঃআঃ] জিজ্ঞাসা করিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ! যাকে ঐসব দরজা দিয়ে আহবান করা হইবে, তার তো কোন সংকটই নেই। তবে কাউকে কি প্রত্যেক দরজা দিয়েই আহবান করা হইবে ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ এবং আমি আশা করি যে, তুমি তাহাদের মধ্য থেকেই হইবে অর্থাৎ আবু বকর [রাঃআঃ]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২.পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদান না করার ব্যাপারে কঠোর সতর্ক বাণী
২৪৪০. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আসলাম; তখন তিনি কাবার ছায়ায় বসা ছিলেন। তিনি আমাকে অগ্রসর হইতে দেখে বলিলেন, কাবার রবের শপথ, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমি [মনে মনে] বললাম, আমার সর্বনাশ, মনে হয় আমার সম্পর্কে কোন বিষয় অবতীর্ণ হইয়াছে। আমি বললাম, আপনার উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। তারা কারা ? তিনি বলিলেন, তারা হল অধিক সম্পদশালী ব্যক্তিরা, কিন্তু যারা এরূপে, এরূপে দান-খয়রাত করে এমনকি তাহাদের সামনে, ডানে এবং বামে [কল্যাণের বিভিন্ন খাতে] দান-খয়রাত করে। এরপর তিনি বলিলেন যে, ঐ সত্তার শপথ, যাঁহার হাতে আমার জীবন, যে ব্যক্তি উট কিংবা গরুর যাকাত প্রদান না করে মারা যায় কিয়ামতের দিন সেগুলোকে পূর্বাপেক্ষা বিরাট এবং বলিষ্ঠাকারে তার সামনে আনা হইবে; সেগুলো [পালাক্রমে] চক্রাকারে তাকে ক্ষুর দ্বারা পদদলিত করিতে থাকিবে এবং শিং দ্বারা আঘাত করিতে থাকিবে। যখন [সারির] শেষটি পার হইয়া যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে। এরূপ চলতে থাকিবে লোকজনের মাঝে বিচার কার্য নিষ্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪১. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির ধন সম্পদ রয়েছে অথচ সে তার সম্পদের হক [যাকাত] প্রদান করছে না, সেগুলো দিয়ে তার গলায় দুর্দান্ত ও অতি বিষাক্ত সাপ রূপে বেড়ি দেওয়া হইবে, সেই ব্যক্তি সর্প থেকে পলায়ন করিতে থাকিবে কিন্তু সর্প তার পশ্চাদ্ধাবন করিতে থাকিবে। এরপর তিনি কুরআন থেকে তার প্রমাণ পাঠ করিলেন
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
[এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাহাদের দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তাহাদের জন্য তা মঙ্গল, ইহা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। বরং ইহা তাহাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করে কিয়ামতে দিন তাই তাহাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে দেয়া হইবে। [৩ঃ ১৮০]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ যে ব্যক্তির উট রয়েছে কিন্তু সে অনটন ও প্রাচুর্যের অবস্থায় সেগুলোর যাকাত প্রদান করে না, সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করিলেন যে, সেগুলোর অনটন ও প্রাচুর্যের অর্থ কি ? তিনি বলিলেন ঃ সেগুলোর [মালিকের] দুর্দিনে কিংবা সুদিনে থাকা। কেননা সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অধিক দুর্বিনীতরূপে উপস্থিত হইবে। সেই ব্যক্তিকে ঐ উটগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হইবে। সেগুলো তাকে তাহাদের ক্ষুর দ্বারা [চক্রাকারে] দলন করিতে থাকিবে। যখন শেষ উটটি পার হইয়া যাবে তখন প্রথম উটটি ফিরে আসবে। [এই শাস্তি] এমন একদিন [দেওয়া হইবে] যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমপরিমাণ হইবে, এই শাস্তি লোকদের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হইবে। এরপর সে [জান্নাতে কিংবা জাহান্নামের দিকে] তার পথ দেখে নেবে। আর যে ব্যক্তির গরু রয়েছে কিন্তু সে সেগুলোর অনটন বা সচ্ছলতার অবস্থায় যাকাত প্রদান করে না, সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতসম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অধিক দুর্বিনীত রূপে উপস্থিত হইবে। সে ব্যক্তিকে ঐ গরুগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হইবে। তাকে প্রত্যেক শিং বিশিষ্ট জন্তু তার শিং দ্বারা আঘাত করিতে থাকিবে এবং প্রত্যেক ক্ষুর বিশিষ্ট জন্তু তার ক্ষুর দ্বারা দলন করিতে থাকিবে। যখন তাহাদের শেষটি পার হইয়া যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে, এমন একদিন [এই শাস্তি দেওয়া হইবে] যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমপরিমাণ হইবে। এই শাস্তি লোকজনের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেওয়া হইবে। এরপর সে [জান্নাত কিংবা জাহান্নামের দিকে] তার পথ দেখে নেবে। আর যে ব্যক্তির ছাগল রয়েছে কিন্তু সে সেগুলোর যাকাত প্রদান করে না অনটন ও সচ্ছলতার অবস্থায়, সেগুলো কিয়ামতের দিন পূর্বাপেক্ষা অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন, অধিক হৃষ্টপুষ্ট এবং অতি বীভৎস আকৃতিতে উপস্থিত হইবে। এরপর সেই ব্যক্তিকে ঐ ছাগলগুলোর সামনে একটি প্রশস্ত এবং সমতল ভূমিতে উপুড় করে রাখা হইবে। তখন প্রত্যেক ক্ষুর বিশিষ্ট জন্তু তাকে তার ক্ষুর দ্বারা দলন করিতে থাকিবে এবং প্রত্যেক শিং বিশিষ্ট জন্তু তাকে তার শিং দ্বারা আঘাত করিতে থাকিবে। [কিয়ামতের দিন] সেগুলোর কোনটি বাঁকা শিং বিশিষ্ট বা ভাঙ্গা শিং বিশিষ্ট হইবে না। যখন শেষটি পার হইয়া যাবে তখন প্রথমটি ফিরে আসবে। [এই শাস্তি] এমন একদিন দেওয়া হইবে, যেই দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সম পরিমাণ হইবে। এই শাস্তি লোকজনের মাঝে বিচার কার্য সম্পন্ন না হওয়ার পর্যন্ত দেওয়া হইবে। এরপর সে তার গন্তব্য স্থান দেখে নেবে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩.পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায়ে অস্বীকৃতি প্রদানকারী
২৪৪৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ওফাত হইয়া গেল এবং তাহাঁর পরে আবু বকর [রাঃআঃ] খলীফা মনোনীত হলেন আর আরবের যারা কাফির হওয়ার ছিল তারা কাফির হইয়া গেল। [একটি দল যাকাত দিতে অস্বীকার করিল] তখন উমার [রাঃআঃ] আবু বকর [রাঃআঃ]-কে বলিলেনঃ আপনি লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যতক্ষন পর্যন্ত লোকজন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ ” না পড়বে ততক্ষন পর্যন্ত আমি তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিতে আদিষ্ট হইয়াছি। তবে যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” বলবে তার জানমাল আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ হইয়া যাবে, তবে আইনগত কারণে [অপরাধের শাস্তি তাকে পেতে হইবে] তার [বাস্তব] হিসাব আল্লাহর কাছে সোর্পদ। তখন আবু বকর [রাঃআঃ] বলিলেনঃ আমি অবশ্যই তাহাদের বিরুদ্ধেও জিহাদ করব যে নামাজ এবং যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করিবে। কেননা যাকাত হল [শরীআত নির্ধারিত] সম্পদের হক। আল্লাহর শপথ, যদি লোকজন আমার কাছে এমন একটি রশিও প্রদান না করে যা তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রদান করত, তাহলে তা প্রদান না করার কারণেও আমি তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করব। উমার [রাঃআঃ] বলেন যে, আল্লাহর শপথ, আমি আবু বকর [রাঃআঃ] এর সিদ্ধান্তের সাথে এই কারণে ঐকমত্য পোষন করলাম যে, আমি দেখলাম, আল্লাহ তাআলা আবু বকর [রাঃআঃ]-এর অন্তর জিহাদের জন্য উম্মুক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, তা-ই সঠিক [সিদ্ধান্ত]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৪.পরিচ্ছেদঃ যাকাত প্রদান অস্বীকারকারীর শাস্তি
২৪৪৪. বাহ্য্ ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রত্যেক অবাধে বিচরণকারী উটের ব্যাপারে বলিতে শুনিয়াছিঃ প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনত্ লাবূন [তিন বছর বয়সী মাদী উট] দিতে হইবে [যখন উটের সংখ্যা এক শত বিশের অধিক হইবে]। এই হিসাব থেকে কোন উট বাদ যাবে না। যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়্যতে তা প্রদান করিবে তাকে তার সওয়াব প্রদান করা হইবে। আর যে ব্যক্তি তা প্রদানে অস্বীকার করিবে আমিই তার থেকে তা উসূল করে নেব এবং তার আরো অর্ধেক মাল [উট] উসূল করে নেব। এটা আল্লাহ্ তাআলার [অবশ্য পালনীয়] ওয়াজিবসমূহের এক ওয়াজিব। যাকাতের কোন বস্তু মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর বংশধরদের জন্য বৈধ নয়। {১}
{১} সম্ভবতঃ বিধানটি আর্থিক দন্ড [জরিমানা] বৈধ থাকার সময়ের। যা পরে রহিত [মানসুখ] হইয়াছে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৫.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত
২৪৪৫. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াসাক [এক হাজার কেজি বা ১ টন]-এর কম মালে [শষ্যে] যাকাত ওয়াজিব হয় না। পাঁচ উটের কমেও যাকাত ওয়াজিব হয় না এবং পাঁচ ওকিয়া [দুই শত দিরহাম-সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা]-এর কমেও যাকাত ওয়াজিব হয় না।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪৬. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচটির কম উটে যাকাত নেই, পাঁচ ওকিয়ার কমে [রূপায়] যাকাত নেই আর পাঁচ ওয়াসাকের কম [ফসলেও] কোন যাকাত নেই।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৪৭. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বকর [রাঃআঃ] তাহাদেরকে [যাকাত আদায়কারীদের] লিখলেন যে, মহান মহিয়ান আল্লাহ তাআলার নির্দেশক্রমে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুসলমানদের উপর এ ফরয যাকাত ধার্য করিয়াছেন। অতএব, যে মুসলমানকে নিয়ম মাফিক যাকাত আদায় করিতে বলা হইবে সে আদায় করে দেবে, আর যে ব্যক্তিকে এর চেয়ে বেশি আদায় করিতে বলা হইবে সে তা আদায় করিবে না। পঁচিশটির কম উট হলে প্রত্যেক পাঁচ উটে একটি বকরী দিতে হইবে। পঁচিশ হইতে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত বিনত্ মাখায [দুই বছরী উট] দিতে হইবে। দুই বছরী উট না থাকলে একটি ইবনি লাবূন [তিন বছরী পুরুষ উট] দিবে। ছত্রিশ হইতে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি তিন বছরী উট, ছেচল্লিশ হইতে ষাট পর্যন্ত একটি আরোহণের উপযোগী [চার বছরী মাদী উট], একষট্টি হইতে পঁচাত্তর পর্যন্ত একটি জাযামা [পাঁচ বছরী মাদী উট], ছিয়াত্তর হইতে নব্বই পর্যন্ত দুইটি তিন বছরী উট, একানব্বই হইতে একশত বিশ পর্যন্ত আরোহণের উপযোগী দুইটি চার বছরী উট দিতে হইবে। যখন একশত বিশটি উটের বেশি হইবে তখন প্রত্যেক চল্লিশে একটি তিন বছরী উট এবং প্রত্যেক পঞ্চাশে একটি চার বছরী উট ওয়াজিব হইবে। যখন যাকাত আদায়কালীন সময় উটের বয়সের বিভিন্নতা দেখা দেয়, যেমন কারো উপর একটি পাঁচ বছরী মাদী উট ওয়াজিব হইয়াছে কিন্তু তার কাছে কোন পাঁচ বছরী মাদী উট নেই বরং তার কাছে চার বছরী উট আছে তখন তার কাছ খেকে চার বছরী উট আদায় করে আরো দুটি ছাগল ধার্য করা [আদায় করা] হইবে- যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম আদায় করিবে। যাহার উপর একটি চার বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হইয়াছে অথচ তার কাছে পাঁচ বছর বয়সী মাদী উটই আছে তখন তার কাছ থেকে তাই আদায় করে নেবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশটি দিরহাম অথবা দুইটি ছাগল যা সহজ হয় ফিরিয়ে দেবে। যাহার উপর চার বছরী মাদী উট ওয়াজিব হইয়াছে কিন্তু তার কাছে চার বছর বয়সী মাদী উট নেই বরং তিন বছর বয়সী উট আছে, তখন তার কাছে থেকে তাই আদায় করা হইবে এবং দুইটি ছাগল যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম তার সাথে আদায় করে নেবে। আর যাহার উপর তিন বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হইয়াছে কিন্তু তার কাছে শুধুমাত্র চার বছর বয়সী উট রয়েছে, তাহলে তার কাছে থেকে তাই আদায় করিবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশটি দিরহাম বা দুইটি ছাগল ফিরিয়ে দেবে। আর যাহার উপর তিন বছর বয়সী মাদী উট ওয়াজিব হইয়াছে কিন্তু তার কাছে তিন বছর বয়সী উট নেই বরং তার কাছে দুই বছর বয়সী উট আছে তাহলে তার কাছ থেকে তাই উসূল করে নেবে এবং তার সাথে দুইটি ছাগল যদি তা সহজ হয়। অন্যথা বিশটি দিরহাম নেবে। আর যাহার উপর দুই বছরী মাদী উট ওয়াজিব হইয়া যায় অথচ তার কাছে শুধুমাত্র তিন বছর বয়সী পুরুষ উট থাকে তাহলে তার কাছ থেকে তাই উসূল করে নেবে এবং তার সাথে অন্য কোন কিছু নেবে না এবং দিবে না। আর যাহার কাছে শুধুমাত্র চারটি উট আছে তার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হইবে না। তবে হ্যাঁ, তার মালিক যদি কিছু প্রদান করিতে চায় [তবে সেটা ভিন্ন কথা]। আর চল্লিশটি হইতে একশত বিশটি পর্যন্ত অবাধে বিচরণকারী ছাগলে যাকাত হিসাবে একটি ছাগল ওয়াজিব হইবে। একশত একুশ হইতে দুইশত পর্যন্ত ছাগলে দুটি ছাগল ওয়াজিব হইবে। দুইশত এক হইতে তিনশত পর্যন্ত ছাগলে তিনটি ছাগল ওয়াজিব হইবে। যখন এরও অধিক হইয়া যাবে তখন প্রত্যেক একশত ছাগলে একটি ছাগল ওয়াজিব হইবে। আর অতি বৃদ্ধ [খুঁত বিশিষ্ট] এবং পাঠা ছাগলও আদায় করিবে না। তবে হ্যাঁ, উসূলকারী যদি ইচ্ছা করে তবে আদায় করিতে পারবে। যাকাতের ভয়ে বিচ্ছিন্ন পশু কখনো একত্রিত করিবে না এবং একত্রিত পশুও কখনো বিচ্ছিন্ন করিবে না। আর শরিকী মালে যাকাত উভয় মালে সমভাবে প্রযোজ্য হইবে। কারো বিচরণকারী ছাগল যদি চল্লিশটি থেকে একটিও কম হয়, তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হইবে না, অবশ্য মালিক যদি যাকাত দিতে ইচ্ছে করে [তবে সেটা ভিন্ন কথা]। রূপায় চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত ওয়াজিব হইবে। কারো কাছে যদি শুধু একশত নব্বই দিরহাম থাকে তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হইবে না, অবশ্য মালিক যদি যাকাত ইচ্ছা করে [তবে সেটা ভিন্ন কথা]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৬.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত প্রদান অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
২৪৪৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উটের মালিক তাতে প্রাপ্য হক [ও ধার্যকৃত] যাকাত আদায় না করলে তা তার কাছে পূর্বাপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠাকারে উপস্থিত হইবে। তাকে তাহাদের ক্ষুর দ্বারা দলন করিতে থাকিবে। আর ছাগলের মালিকও তাতে প্রাপ্য হক [যাকাত] আদায় না করলে তা তার সামনে পূর্বাপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠাকারে উপস্থিত হইবে; তাকে স্বীয় ক্ষুর দ্বারা দলন করিতে থাকিবে এবং তাহাদের শিং দ্বারা আঘাত করিতে থাকিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরো বলেছেন যে, জীব-জন্তুতে প্রাপ্য হক-এর অন্যতম হল পানির কাছে তার দুধ দোহন করা।{১} সাবধান, কেউ যেন কিয়ামতের দিন তার কাঁধে কোন উট নিয়ে উপস্থিত না হয়, যা চিৎকার করিতে থাকিবে। আর ঐ ব্যক্তি বলিতে থাকিবেঃ হে মুহাম্মাদ [সাহায্য করুন]। আমি বলবঃ আমি তোমার জন্য কিছুই করিতে পারব না। আমি তো আগেই [আল্লাহর হুকুম] পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। সাবধান, তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন তার কাঁধে কোন ছাগল নিয়ে উপস্থিত না হয়, যা চিৎকার করিতে থাকিবে। আর ঐ ব্যক্তি বলিতে থাকিবে, হে মুহাম্মাদ। তখন আমি বলব ঃ আমি তো আগেই [আল্লাহর হুকুম] পৌছিয়ে দিয়েছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরো বলেছেনঃ তাহাদের কারো কারো সম্পদ [যে সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হওয়া স্বত্ত্বেও যাকাত আদায় করা হয় না] কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের আকার ধারণ করিবে। আর তার মালিক তা থেকে পলায়ন করিতে থাকিবে। কিন্তু সে তার পিছনে ধাওয়া করিতে থাকিবে। [এবং বলিতে থাকিবেঃ] আমি তো তোমার সম্পদ। [এইরূপ পিছু নিতে নিতে] অবশেষে সে [ব্যক্তি] বাধ্য হইয়া তার আংগুল তার [সাপের] মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিবে এবং ঐ সাপ তার অঙ্গুলী এবং পর্যায়ক্রমে সমস্ত দেহ গিলে ফেলবে।
১. আরবের লোকদের মধ্যে এই প্রথা চালু ছিল যে, দুগ্ধবর্তী পশুকে কোথাও পানি পান করাতে নেওয়া হলে দুধ দোহন করার পর উপস্থিত গরীব লোকদের কিছু দুধ পান করা হত। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ প্রথাকে মুস্তাহাব হিসেবে বহাল রেখেছেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৭.পরিচ্ছেদঃ উটের যাকাত থেকে অব্যাহতি- যদি তা তার মালিকদের দুধের জন্য এবং পরিবহণের জন্য হয়
২৪৪৯. বাহয্ ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি ঃ প্রত্যেক অবাধে বিচরণকারী উটের যাকাত হল প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী]। উটের হিসাব থেকে কোন উটকে বাদ দেওয়া হইবে না। যে ব্যক্তি সওয়াবের নিয়্যতে তা দান করিবে তার জন্য তার সওয়াব রয়েছে আর যে ব্যক্তি তা আদায় করিতে অস্বীকার করিবে আমরা অবশ্যই তার থেকে তা এবং সাথে সাথে তার অর্ধেক উট নিয়ে নেব। এটা আমার আল্লাহর অবশ্য পালনীয় বিধানসমূহ থেকে একটি বিধান। মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর বংশধরদের জন্য এর কোন কিছু বৈধ নয়।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
৮.পরিচ্ছেদঃ গরুর যাকাত
২৪৫০. মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে ইয়ামানে পাঠালেন এবং তাঁকে আদেশ দিলেন যেন, তাহাদের প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার করে আদায় করেন অথবা তার সমমূল্যের মাআফির ইয়ামানী চাদর আদায় করেন। আর গরুর যাকাত হিসেবে প্রত্যেক ত্রিশে একটি তাবী [দুই বছর বয়সী] বৃষ বা গাভী এবং প্রত্যেক চল্লিশে একটি মুসিন্না [তিন বছর বয়সী গাভী] আদায় করেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৫১. মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রাসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়ামানে পাঠালেন এবং আমাকে আদেশ দিলেন যেন, আমি প্রত্যেক চল্লিশটি গরু থেকে একটি তিন বছর বয়সী গাভী এবং প্রত্যেকটি ত্রিশটি থেকে একটি তাবী [দুই বছর বয়সী] গরু আর প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার অথবা তার সমমূল্যের মাআফির [ইয়ামানী কাপড়] আদায় করি।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২৪৫২. মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে ইয়ামানে পাঠান তখন তাঁকে আদেশ করেন যেন, তিনি প্রত্যেক ত্রিশটি গরুতে একটি তাবী [দুই বছর বয়সী গরু বা গাভী] এবং প্রত্যেক চল্লিশটি গরুতে একটি মুসিন্না [তিন বছর বয়সী গাভী] আর প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি থেকে এক দীনার অথবা তার মাআফির সমমূল্যের [ইয়ামানী চাদর] আদায় করেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৫৩. মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইয়ামানে পাঠানোর সময় আদেশ দিয়েছিলেন যেন, আমি গরুর সংখ্যা ত্রিশ না হওয়া পর্যন্ত তার থেকে কিছু [যাকাত] আদায় না করি। যখন ত্রিশ হইয়া যাবে তখন একটি তাবী [দুই বছর বয়সী] পুরুষ অথবা স্ত্রী বাছুর [এঁড়ে বা বকনা দিতে হইবে]। এ হুকুম চল্লিশ পর্যন্ত [ত্রিশের বেশী কিন্তু চল্লিশের কম]। চল্লিশ হইয়া গেলে তাতে একটি মুসিন্না [তিন বছর বয়সী গাভী ওয়াজিব হইবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
৯.পরিচ্ছেদঃ গরুর যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
২৪৫৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগলের প্রাপ্য আদায় না করিবে তাকে কিয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে থামিয়ে [স্থির করে] রাখা হইবে। তাকে ক্ষুর বিশিষ্ট [জন্তু]রা ক্ষুর দ্বারা দলন করিতে থাকিবে এবং শিং বিশিষ্ট [জন্তু]রা শিং দ্বারা আঘাত করিতে থাকিবে। সে দিন সেগুলোর মধ্যে কোন শিং বিহীন বা ভগ্ন শিং বিশিষ্ট থাকিবে না। আমরা প্রশ্ন করলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! জন্তুতে [মুস্তাহাব] প্রাপ্য কি ? তিনি বলিলেন, প্রজননের জন্য ষাঁড় গরু ধার দেওয়া, ডোল [বালতি] পানি সেচের জন্য ধার দেওয়া এবং পশুর উপর আল্লাহর রাস্তায় ভার বহন করা।{১} [আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য পশু ধার দেওয়া] আর যে ধনবান ব্যক্তি ধন সম্পদের যাকাত আদায় না করিবে কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত ধন-সম্পদ তার সামনে বিষাক্ত সাপের আকৃতিতে উপস্থিত হইবে। তার মালিক তার থেকে পলায়ন করিবে কিন্তু তা [সাপ] তার পশ্চাদ্ধাবন করিতে থাকিবে এবং বলবে যে, এতো তোমার ধন-সম্পদ যা থেকে তুমি কৃপণতা করিতে [প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করিতে না]। যখন সে ব্যক্তি দেখবে যে, তার [সাপের] হাত থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই তখন সে তার হাত তার মুখে প্রবেশ করিয়ে দেবে আর সাপ তা কামড়াতে থাকিবে যে রূপ ষাঁড় কামড়াতে থাকে।
১. প্রশ্নকারিগণ মুস্তাহাব প্রাপ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তাই মানবিক কারণে যা করণীয় তাই বলেছেন। ফরয প্রাপ্য তারা অবগত ছিলেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০.পরিচ্ছেদঃ ছাগলের যাকাত
২৪৫৫. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু বকর [রাঃআঃ] তাঁকে লিখেছিলেনঃ এ হলো ফরয যাকাত যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আল্লাহর নির্দেশে মুসলমানদের উপর ধার্য করিয়াছেন। তাই যে কোন মুসলমানের কাছে তা নিয়ম মাফিক চাওয়া হইবে সে তা দিয়ে দেবে। আর যাহার কাছে অধিক দাবী করা হইবে সে তাকে দিবে না। উট, পঁচিশের কম হলে প্রত্যেক পাঁচ উটে একটি বকরী। পঁচিশ হইয়া গেলে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত একটি বিনত্ মাখায [দুই বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব]। বিনত্ মাখায [দুই বছর বয়সী উটনী] না পেলে ইবনি লাবুন [তিন বছর বয়সী ] পুরুষ উট দিতে হইবে। ছত্রিশ হইয়া গেলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব]। ছেচল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত উটে হিককা [চার বছর বয়সী] আরোহণের উপযোগ্য একটি উটনী ওয়াজিব। একষট্টি থেকে পঁচাত্তর পর্যন্ত উটে একটি জাযআ [পাঁচ বছর বয়সী উটনী দিতে হইবে]। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তর থেকে নব্বই পর্যন্ত হলে তাতে দুটি বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী ওয়াজিব হইবে]। উটের সংখ্যা একানব্বই থেকে একশত বিশ পর্যন্ত হলে তাতে আরোহণের উপযোগী [চার বছর বয়সী] দুটি [উটনী ওয়াজিব হইবে]। একশত বিশের অধিক হইয়া গেলে প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী] এবং প্রত্যেক পঞ্চাশে একটি হিককা [চার বছর বয়সী উটনী দিতে হইবে]। যদি ফরয যাকাত আদায়কালে উটের বয়সের তারতম্য হইয়া যায়- যেমন, কারো উপর একটি জাযআ [পাঁচ বছর বয়সী উট] ওয়াজিব হইয়া গেল অথচ তার কাছে জাযআ [পাঁচ বছর বয়সী উট] নেই বরং [চার বছর বয়সী] উট রয়েছে তাহলে তার কাছ থেকে তাই আদায় করা হইবে এবং তার সাথে যদি সহজ সাধ্য হয় দুটি ছাগল দিয়ে দিবে অথবা বিশটি দিরহাম দিয়ে দিবে। আর কারো উপর একটি হিক্কা [চার বছরের উটনী]-র যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তার কাছে জাযাআ [পাঁচ বছরের] ব্যতীত অন্যটি নেই তবে তার কাছ থেকে তা [জাযআ]-ই গ্রহন করা হইবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে বিশ দিরহাম দিবে, অথবা দুটি ছাগল। আর যাহার উপর একটি হিককা যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তা তার কাছে নেই, বরং তার কাছে বিনত্ লাবুন [তিন বছরের মাদী] আছে তবে তা-ই তার কাছ থেকে গ্রহন করা হইবে এবং সে তার সংগে দুটি ছাগল দিবে। যদি তা সহজ সাধ্য হয়। অন্যথা বিশ দিরহাম [দিবে]। আর যাহার উপর একটি বিনত্ লাবুন যাকাত ওয়াজিব হল, কিন্তু তার কাছে হিককা ব্যতীত অন্য কিছু নেই তবে তার কাছ থেকে তা-ই গ্রহন করা হইবে এবং যাকাত উসূলকারী তাকে [যাকাতদাতাকে] বিশ দিরহাম অথবা দুটি ছাগল [ফিরিয়ে] দিবে। আর কারো উপর একটি বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী] ওয়াজিব হইয়া গেলে কিন্তু তার কাছে বিনত্ লাবুন [তিন বছর বয়সী উটনী] নেই এবং বিনত্ মাখায [দুই বছর বয়সী উটনী] আছে, তাহলে তার কাছ থেকে তাই আদায় করা হইবে এবং তার সাথে [যাকাত প্রদানকারী যাকাত উসূলকারীকে] যদি সহজ সাধ্য হয় দুটি ছাগল দিবে অথবা বিশটি দিরহাম [দিয়ে দিবে]। আর কারো উপর বিনত্ মাখায [দু বছর বয়সী উটনী] ওয়াজিব হইয়া গেল। অথচ তার কাছে শুধুমাত্র ইবনি লাবুন [তিন বছর বয়সী উট] রয়েছে তাহলে তার থেকে তাই গ্রহন করা হইবে এবং তার সাথে আর কিছু লেনদেন করিতে হইবে না। আর যাহার কাছে শুধুমাত্র চারটি উট রয়েছে তার উপর কোন যাকাত ওয়াজিব হইবে না। অবশ্য তার মালিক যদি কিছু আদায় করিতে ইচ্ছে করে [তবে সেটা ভিন্ন কথা]। ছাগলের যাকাত অবাধে চরে বেড়ানো চল্লিশটি হইতে একশত বিশটি পর্যন্ত একটি ছাগল। যদি [একশত বিশটির উপর] একটি ছাগলও বেশী হয় তবে দুটি ছাগল [ওয়াজিব হইবে] দুইশত পর্যন্ত। যদি তার থেকে একটি বেশী হইয়া যায় তাহলে তিনশত পর্যন্ত তিনটি ছাগল [দিতে হইবে]। যদি তার থেকে একটিও বেশী হইয়া যায় তবে প্রতি একশতে একটি করে ছাগল ওয়াজিব হইবে। আর যাকাত আদায়কালে অতি বৃদ্ধ এবং ত্রুটিযুক্ত ও পাঁঠা ছাগল গ্রহন করা হইবে না। অবশ্য যাকাত উসূলকারী যদি ভাল মনে করে [তবে তা গ্রহন করিতে পারবে]। যাকাত আদায়ের ভয়ে বিচ্ছিন্ন পশু একত্রিত করা যাবে না আর একত্রিত পশুও বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। শরীকী মালে দুজন [শরীকরা] সমহারে লেনদেন করে নিবে। কারো বিচরণকারী যদি চল্লিশটি ছাগলের থেকে একটিও কম হয় তবে তাতে যাকাত ওয়াজিব হইবে না,অবশ্য তার মালিক যদি আদায় করিতে ইচ্ছা করে [তবে সেটা ভিন্ন কথা]। আর রূপার যাকাত হল [দুশ দিরহাম হলে] চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। [প্রতি শতে আড়াই ভাগ] যদি কারো কাছে একশত নব্বইটি দিরহাম [দুশ-এর কম] থাকে তাহলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হইবে না, অবশ্য তার মালিক যদি আদায় করিতে ইচ্ছা করে [তবে সেটা ভিন্ন কথা]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৫৬. আবু যর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগলের মালিক হইয়াও তার যাকাত আদায় না করিবে, কিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত পশু পূর্বাপেক্ষা বিশালদেহী এবং মোটা-তাজা আকারে তার কাছে উপস্থিত হইবে তারা তাকে তাহাদের শিং দ্বারা আঘাত এবং তাহাদের ক্ষুর দ্বারা [চক্রাকারে] দলন করিতে থাকিবে। যখনই তাহাদের শেষেরটি পার হইয়া যাবে তখনই পূর্বেরটা ফিরিয়ে আনা হইবে। এ রকমই চলতে থাকিবে লোকজনের বিচার কার্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১.পরিচ্ছেদঃ বিভিন্ন [পশু]-কে একত্রিত এবং একত্রিতকে বিচ্ছিন্ন করা প্রসঙ্গে
২৪৫৭. সুওয়াইদ ইবনি গাফালাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার কাছে নাবী [সাঃআঃ]-এর যাকাত উসূলকারী আসলে আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। আমি তাঁকে বলিতে শুনলামঃ “আমার অঙ্গীকারের [আদেশ-এর] মধ্যে আছে আমি যেন দুগ্ধবতী পশু না নেই এবং বিচ্ছিন্ন পশুগুলো একত্রিত না করি, একত্রিত [পশু] গুলো বিচ্ছিন্ন না করি। [রাবী বলেন,] ইতিমধ্যে তাহাঁর কাছে এক ব্যক্তি উঁচু কুঁজ বিশিষ্ট একটি উট নিয়ে এসে বলিল যে, এটা আপনি গ্রহণ করুন, কিন্তু তিনি গ্রহণ করিতে অস্বীকৃতি জানালেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৪৫৮. ওয়ায়িল ইবনি হুজ্র [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] একজন যাকাত উসূলকারীকে পাঠালেন। তিনি এক ব্যক্তির কাছে গেলে সে তাকে উটের একটি দুর্বল [কৃষ] বাচ্চা দিল। [বিষয়টি অবগত হলে] রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমি আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ]-এর পক্ষ থেকে যাকাত উসূলকারীকে পাঠালাম, অথচ অমুক ব্যক্তি তাকে একটি উটের দূর্বল বাচ্চা দিল। হে আল্লাহ; তুমি তাকে এবং তার উটে বরকত দিও না। এ সংবাদ তার কাছে পৌঁছলে সে একটি উত্তম উটনী নিয়ে আসল এবং বললঃ আমি আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ]-এর কাছে তওবা করছি। তখন নাবী [সাঃআঃ] বললেনঃ আল্লাহ তুমি তাকে এবং তার উটের বরকত দান কর। {১}
{১} পবিত্র কুরআনের নির্দেশ পালনার্থে তিনি এ দুআ করিলেন। কেননা আল্লাহ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে নির্দেশ দিয়েছেনঃ [আর-বি] আপনি তাহাদের জন্য দোয়া করুন, কেননা আপনার দুআ তাহাদের জন্য প্রশান্তিদায়ক হইবে। যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১২.পরিচ্ছেদঃ যাকাত দাতার জন্য ইমামের দুআ করা
২৪৫৯. আবদুল্লাহ্ ইবনি আওফা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে যখন সমাজের কেউ যাকাত নিয়ে আসত তখন তিনি বলিতেনঃ হে আল্লাহ; অমুকের বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ কর। [রাবী বলেন]ঃ আমার পিতা তাহাঁর কাছে যাকাত নিয়ে আসলে তিনি দুআ করিলেন, হে আল্লাহ! তুমি আবু আওফার বংশধরদের উপর রহমত বর্ষণ কর।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৩.পরিচ্ছেদঃ যাকাত আদায়কারীর সীমালংঘন করা প্রসঙ্গে
২৪৬০. জারীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে কয়েকজন বেদুঈন এসে বললঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমাদের কাছে আপনার পক্ষ থেকে কোন কোন যাকাত উসূলকারী আসে; যারা জুলুম [সীমালংঘন] করে। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখবে। তারা বলিল [যাকাত উসূলকারী], জুলুম করলেও? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদের সন্তুষ্ট রাখবে। তারা আবারও বলিল, যাকাত উসূলকারী জুলুম করলেও? রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তোমাদের যাকাত উসূলকারীদের সন্তুষ্ট রাখবে। জারীর [রাঃআঃ] বলেন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছ থেকে [এ কথা] শোনার পর হইতে কোন যাকাত উসূলকারী আমার কাছ থেকে অসন্তুষ্ট হইয়া ফিরে যায়নি।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬১. জারীর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমাদের কাছে যাকাত উসূলকারী আসবে তখন [তোমরা তার সাথে এমন ব্যবহার করিবে,] সে যেন তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হইয়া ফিরে যায়।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪.পরিচ্ছেদঃ যাকাত উসূলকারীর বাছাই করে নেয়া ব্যতীত সম্পদের মালিকের উত্তম মাল দান করা প্রসঙ্গে
২৪৬২. মুসলিম ইবনি ছাফিনা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ইবনি আলকামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমার পিতাকে তাহাঁর গোত্রের [অবস্থা দেখাশুনার জন্য] প্রতিনিধি নিযুক্ত করিলেন এবং তাঁকে তাহাদের থেকে যাকাত উসূল করার আদেশ দিলেন। আমার পিতা আমাকে একটি ছোট গোত্রের নিকট পাঠালেন, যাতে আমি তাহাদের থেকে যাকাত উসূল করে তাহাঁর কাছে নিয়ে আসি। আমি বের হইয়া গেলাম এবং সার নামক একজন বৃদ্ধ লোকের কাছে গেলাম। আমি তাকে বললাম যে, আমার পিতা আপনার ছাগলের যাকাত উসূল করার জন্য আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন। তিনি বলিলেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র, তোমরা কিরূপ [ছাগল] নিয়ে থাক? আমি বললাম যে, আমরা পছন্দ করে উসূল করে থাকি, এমনকি আমরা বকরীর দুধের স্তনও পরিমাণ করে নেই। তিনি বলিলেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি, [শুন] আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর যুগে উপত্যকাসমূহের কোন এক উপত্যকায় আমার ছাগল নিয়ে থাকতাম, তখন উটের উপর আরোহণ করে দুইজন লোক আমার কাছে এসে বললেনঃ আমরা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর [প্রেরিত প্রতিনিধি]। আপনার কাছে এসেছি আপনার ছাগলের যাকাত উসূল করার জন্য। তিনি বলেন, আমি বললাম যে, আমার এ [সমস্ত ছাগলের জন্য] কিরূপ [যাকাত] ওয়াজিব হইবে? তারা বলিলেন, একটা বকরী [ওয়াজিব হইবে]। তখন আমি এমন একটি বকরী দেওয়ার ইচ্ছা করলাম যাহার সম্পর্কে আমার জানা ছিল যে, সেটা অত্যধিক দুগ্ধবতী এবং বলিষ্ঠদেহী। আমি সেটাই তাহাদেরকে বের করে দিলাম। তারা বলিলেন যে, এটাতো শাফি গর্ভবতী। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদেরকে গর্ভবতী বকরী নিতে নিষেধ করিয়াছেন। তখন আমি তাহাদেরকে এমন একটি উত্তম বকরী দিতে ইচ্ছা করলাম, যা এখনো গর্ভবতী হয়নি, তবে অচিরেই গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা আছে। [গর্ভবতী হওয়ার বয়সে পৌঁছেছে।] আমি তা তাহাদের সামনে বের করে দিলে তারা বলিলেন, এটা আমাদের কাছে তুলে দিন। আমি তা তাহাদেরকে তুলে দিলাম। তারা সেটাকে তাহাদের সাথে তাহাদের উটের উপর উঠিয়ে নিলেন এবং প্রস্থান করিলেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৪৬৩. মুসলিম ইবনি ছাফিনা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আলকামা [রাঃআঃ] তাহাঁর পিতাকে [মুসলিম এর পিতা ছাফিনাকে] তার গোত্রের যাকাত উসূল করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। রাবী পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৪৬৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, উমার [রাঃআঃ] বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যাকাত আদায় করিতে আদেশ করিলেন। [একসময়] তাঁকে বলা হল যে, ইবনি জামিল, খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাঃআঃ] এবং আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাঃআঃ] যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, [হ্যাঁ], জামীলের যাকাত প্রদানে অসম্মতির[ও অস্বীকৃতি]-র কারণ শুধু এই যে, সে একজন দরীদ্র লোক ছিল, তারপর আল্লাহ তাআলা তাকে সম্পদশালী করিয়াছেন। আর খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাঃআঃ]-এর উপর তোমরা অবিচার করছ। কেননা সে তার বর্মসমূহ এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র আল্লাহর রাস্তায় ওয়াক্ফ করে দিয়েছে। আর আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাঃআঃ], রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর চাচা; তাহাঁর উপরে তো যাকাত প্রযোজ্য হইবেই, বরং তার সাথে তার সমপরিমাণ [আরো কিছু তাঁকে দান করিতে হইবে]। [যেহেতু তিনি সন্মানিত ব্যক্তি।] {১}
{১} একটি বর্ণনামতে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] সরকারী বিশেষ প্রয়োজনে আব্বাস [রাঃআঃ]-এর নিকট হইতে দুই বছরের যাকাত [পরিমাণ] আগাম [বা ধার রূপে] নিয়েছিলেন। সুতরাং দু বছরের যাকাত তার নিকট দাবী করার সুযোগ ছিল না।যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যাকাত উসূল করার আদেশ দিলেন। রাবী হুবহু পূর্বের ন্যায় বর্ণনা করিয়াছেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৬. আবদুল্লাহ্ ইবনি হিলাল সাকাফী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাবী করীম [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে বলিল, মনে হয় যেন, [পরিস্থিতি এই যে,] আপনার তিরোধানের পরে আমাকে যাকাতের ছাগল ছানা অথবা বকরীর জন্য হত্যা করা হইবে, [যাকাতের ব্যাপারে আপনার জীবদ্দশায়ই যখন এত কষাকষি, না জানি আপনার তিরোধানের পর কত কষাকষি করা হয়] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, যদি সেগুলো গরীব মুহাজিরদের মাঝে দান করে দেয়া না হত, [অর্থাৎ প্রয়োজন না থাকত] তাহলে তা আমি গ্রহণই করতাম না।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
১৫.পরিচ্ছেদঃ ঘোড়ার যাকাত
২৪৬৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলমানের উপর তার [খিদমতের] গোলাম এবং [আরোহণের] ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপরে তার [খিদমতের] গোলাম এবং [আরোহণের] ঘোড়ার জন্য কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৬৯. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নাবী [সাঃআঃ] থেকে মারফূ রূপে বর্ণনা করে বলেন যে, মুসলমানের উপরে তার [খিদমতের] গোলামে এবং [আরোহণের] ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হয় না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭০. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, মুসলমানের [আরোহণের] ঘোড়ায় এবং [খিদমতের] গোলামে এর কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬.পরিচ্ছেদঃ গোলামের যাকাত
২৪৭১. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, মানুষের উপরে তার [খিদমতের] গোলামে এবং [আরোহণের] ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুসলমানের উপরে তার খিদমতের গোলামে এবং আরোহণের ঘোড়ায় কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.পরিচ্ছেদঃ রূপার যাকাত
২৪৭৩. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় {১} কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]। পাঁচটি উটের কম উটে কোন যাকাত নেই। পাঁচ ওসকের {২} কম ফসলেও কোন যাকাত নেই।
১. সাড়ে বায়ান্ন তোলার কম রূপায় যাকাত ওয়াজিব হইবে না।
২. বাংলাদেশীয় হিসাবে এক ওসক এ প্রায় ৫ মন ২১ সের ৪ ছটাক। সুতরাং পাঁচ ওসকে এ ২৭ মন ২৬ সের ৪ ছটাক [বা এক টন] বর্তমানে প্রচলিত হিসাব অনুসারে ১০০০ [এক হাজার] কে.জি. বলা যেতে পারে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭৪. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওসকের কম খেজুরে কোন যাকাত নেই; পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের কম উটেও কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
২৪৭৫. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেন, পাঁচ ওসকের কম খেজুরে কোন যাকাত নেই, পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটি উটের [কম উটেও] কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭৬. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি রাসূ্লুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায় কোন যাকাত নেই; পাঁচটি উটের কম উটে কোন যাকাত নেই এবং পাঁচ ওসকের কম ফসলেও কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭৭. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি [আরোহণের] ঘোড়া এবং [খিদমতের] ক্রীতদাসের যাকাত থেকে তোমাদেরকে অব্যাহতি দিলাম। এখন তোমরা তোমাদের মালের প্রত্যেক দুইশততে [দিরহামে] পাঁচ [দিরহাম] হারে যাকাত আদায় কর। {১}
{১} অর্থাৎ চল্লিশ ভাগের একভাগ।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৭৮. আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমি [আরোহণের] ঘোড়া এবং [খিদমতের] ক্রীতদাসের [যাকাত] থেকে তোমাদেরকে অব্যাহতি দিলাম। আর দুশত এর কমে [রূপায়]ও কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮.পরিচ্ছেদঃ অলংকারের যাকাত
২৪৭৯. আমর ইবনি শুআয়ব তার পিতা তার [রাঃআঃ] দাদা হইতে বর্ণিতঃ
এক ইয়ামানী মহিলা এবং তার কন্যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আসল। তার কন্যার হাতে স্বর্ণের দুটি পুরু কাঁকন ছিল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত আদায় করে থাক? সে বলিল, না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি এটা পছন্দ করো যে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তোমাকে এ দুটি কাঁকনের পরিবর্তে আগুনের দুটি কাঁকন পরাবেন? রাবী বলেন, তখন সে দুটি [কাঁকনই] খুলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দিয়ে দিল এবং বলিল যে, এ দুটিই আল্লাহ এবং তাহাঁর রাসূল [সাঃআঃ] – এর জন্য।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৪৮০. আমর ইবনি শুআয়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, এক মহিলা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর খিদমতে আসল তার সঙ্গে তার একটি মেয়ে ছিল এবং তার কন্যার হাতে দুটি কাঁকন ছিল। এরপর রাবী পূর্ব বর্ণনার ন্যায় মুরসাল রূপে বর্ণনা করিয়াছেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি
১৯.পরিচ্ছেদঃ নিজ সম্পদের যাকাত অস্বীকারকারী প্রসঙ্গে
২৪৮১. ইবনি উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার মালের যাকাত আদায় করে না কিয়ামতের দিন তার মাল তার কাছে এক বিষধর সাপের আকৃতিতে উপস্থিত করা হইবে, যাহার চোখের উপর দুটি কালো [বিন্দু] থাকিবে। রাবী বলেন, সে সাপ তাকে জড়িয়ে ধরবে অথবা গলায় বেড়ি রূপে পেঁচিয়ে ধরবে। রাবী বলেন, সে সাপ বলিতে থাকিবে যে, আমি তোমার ধন ভাণ্ডার, আমি তোমার ধন ভাণ্ডার।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৮২. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন মহান মহীয়ান আল্লাহ তাআলা যাকে ধন-সম্পত্তি দান করিলেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করলো না, কিয়ামতের দিন সে ধন-সম্পত্তিগুলোকে বিষধর সাপের আকার করে দেয়া হইবে যাহার চোখের উপর দুটি কাল দাগ [বিন্দু] থাকিবে। কিয়ামতের দিন সে সাপ তার চোয়ালদ্বয়ে আঁকড়িয়ে [কামড়ে] ধরবে এবং বলবে, আমি তোমার ধন-সম্পদ, আমি তোমার ধন-ভাণ্ডার। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ ১
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ [آل عمران: 180]
{১} অনুবাদঃ এবং আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাহাদেরকে দিয়েছেন তাতে যারা কৃপণতা করে তাহাদের জন্য তা মঙ্গল, এটা যেন তারা কিছুতেই মনে না করে। বরং এটা তাহাদের জন্য অমঙ্গল। যাতে তারা কৃপণতা করিবে কিয়ামতের দিন তা তাহাদের গলার বেড়ি বানিয়ে দেওয়া হইবে। [সূরাঃআঃ আল-ইমরানঃ ১৮০] যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০.পরিচ্ছেদঃ খেজুরের যাকাত
২৪৮৩. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওসকের কম শস্যে এবং খেজুরে যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২১.পরিচ্ছেদঃ গমের যাকাত
২৪৮৪. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, পাঁচ ওসক না হওয়া পর্যন্ত গমে যাকাত সাব্যস্ত [ওয়াজিব] হইবে না। আর পাঁচ ওকিয়া না হওয়া পর্যন্ত রূপায় যাকাত সাব্যস্ত [ওয়াজিব] হইবে না। পাঁচটি উট না হওয়া পর্যন্ত উটেও যাকাত সাব্যস্ত [ওয়াজিব] হইবে না।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২২.পরিচ্ছেদঃ শস্য দানার যাকাত
২৪৮৫. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওসক না হওয়া পর্যন্ত শস্য দানায় এবং খেজুরে কোন যাকাত নেই। আর পাঁচটির কম উটে এবং পাঁচ ওকিয়ার কম রূপায়ও কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩.পরিচ্ছেদঃ যে পরিমাণে [সম্পদে] যাকাত ওয়াজিব হইবে
২৪৮৬. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওকিয়ার কমে [রূপায়] কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৮৭. আবু সাইদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন পাঁচ ওকিয়ার কমে [রূপায়] কোন যাকাত নেই এবং পাঁচটির কম উটেও কোন যাকাত নেই। আর পাঁচ ওসকের কমে [শস্যেও] কোন যাকাত নেই [ওয়াজিব হইবে না]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪.পরিচ্ছেদঃ কোন্ শস্যে উশর এবং কোন্ শস্যে উশরে অর্ধেক ওয়াজিব হইবে?
২৪৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি ওমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যা [যে শস্যক্ষেত্র] বৃষ্টির পানি, খাল-বিল, ও পুকুর-ঝর্ণা দ্বারা [প্রাকৃতিক উপায়ে] সেচপ্রাপ্ত হইয়া অথবা মাটিতে সিঞ্চিত পানি দ্বারা [স্বয়ংক্রিয়] সেচপ্রাপ্ত হয় তাতে উশর [এক-দশমাংশ] যাকাত ওয়াজিব হইবে। আর যা সেচের উট [পশু] বা বালতি ইত্যাদি দ্বারা অথবা যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সেচপ্রাপ্ত হয় তাতে উশরের অর্ধেক [বিশ ভাগের এক ভাগ] যাকাত [ওয়াজিব হইবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৮৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বৃষ্টির পানি, নদীর পানি এবং ঝরনার পানি দ্বারা সেচকৃত [জমিতে] [শস্যে] উশর এবং সেচের পশু দ্বারা সেচকৃত [জমিতে চাষ] উশরের অর্ধেক [যাকাত ওয়াজিব হইবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৯০. মুআয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে ইয়ামানে পাঠালেন এবং নির্দেশ দিলেন যে, আমি বৃষ্টির পানি দ্বারা সেচকৃত [শস্য] থেকে উশর ১/১০ এবং বালতি [ইত্যাদি যন্ত্রের] দ্বারা সেচকৃত [শস্য] থেকে উশর এর অর্ধেক ১/২০ [যাকাত আদায় করি]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
২৫.পরিচ্ছেদঃ আগাম পরিমাণ নির্ধারণকারী কি পরিমাণ ছাড় দেবে?
২৪৯১. সাহ্ল ইবনি আবু হাছামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসলেন তখন আমরা বাজারে ছিলাম। তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন তোমরা আনুমানিক পরিমাণ নির্ধারণ করিবে তখন [নির্ধারিত পরিমাণের যাকাত] নিয়ে নেবে এবং এক-তৃতীয়াংশ ছাড় দেবে। আর যদি তোমরা তা না নাও অথবা তিনি বলেছেন, এক-তৃতীয়াংশ ছাড় না দাও তাহলে এক-চতুর্থাংশ ছাড় দাও। “যদি তোমরা তা না নাও।” “[যদি তোমরা এক-তৃতীয়াংশ] ছাড় না দাও।” এ বাক্য দুটির মধ্যে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোনটি বলেছেন শুবা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] নিশ্চয়তার সাথে তা বলিতে পারেন নি।
মহান মহীয়ান আল্লাহ তাআলার বানীঃ [আরবী] ১
{১} তোমাদের উপার্জিত ধন-সম্পদ [শস্য ইত্যাদি] হইতে তার উত্তম অংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করিবে এবং তার নিকৃষ্ট অংশ ব্যয় করার সংকল্প করিবে না।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ জইফ হাদীস
২৪৯২. আবু উমামা ইবনি সাহল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ তাআলার বানীঃ
وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنْفِقُونَ} [البقرة: 267]
– এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন যে, তা হল জুরুর এবং লাতুন হুবায়ক [নামক দুপ্রকার নিম্নমানের খেজুর]। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাকাত আদায়কালে নিকৃষ্ট দ্রব্য উসূল করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৯৩. আউফ ইবনি মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার বের হলেন। তখন তাহাঁর হাতে একটি লাঠি ছিল। ইতিপূর্বে এক ব্যক্তি এক ছড়া নিকৃষ্ট খেজুর লটকিয়ে রেখেছিল [দান করার জন্য]। তিনি লাঠি দ্বারা তাতে গুঁতো দিচ্ছিলেন এবং বলছিলেন যে, যদি এ সাদকার মালিক ইচ্ছা করত তা হলে এর চেয়ে উত্তম খেজুর সাদকা আদায় করিতে পারত। এ সাদকার মালিক কিয়ামতের দিন এ রকম নিকৃষ্ট খেজুরই পাবে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৬.পরিচ্ছেদঃ খনিজ দ্রব্যের যাকাত প্রসঙ্গে
২৪৯৪. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–কে কুড়িয়ে পাওয়া মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, যা চলাচলের রাস্তা এবং জন অধ্যুষিত জনপদে কুড়িয়ে পাবে এক বছর পর্যন্ত তার প্রচার করিতে থাকিবে। যদি তার মালিক এসে পড়ে [তাহলে তাকে তা দিয়ে দিবে]। অন্যথা তা তোমার অধিকারে এসে যাবে। আর চলাচলের রাস্তা এবং জনবসতি সম্পন্ন জনপদে না হলে তাতে [কুড়িয়ে পাওয়া দ্রব্যে] এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে [খনিজ দ্রব্যে] এক-পঞ্চমাংশ [যাকাত আদায় করিবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৪৯৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, চতুষ্পদ জন্তু [জন্তুর আঘাতজনিত মৃত্যু] ক্ষতিপূরণমুক্ত। কুয়া [কুয়ায় পড়ে মৃত্যুবরণ করলে] ক্ষতিপূরণমুক্ত। আর খনি [খনিতে পড়ে মৃত্যুবরণ করলেও] ক্ষতিপূরণমুক্ত এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে [খনিজ দ্রব্যে] এক-পঞ্চমাংশ [যাকাত ওয়াজিব হইবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৯৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
[সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ বর্ণিত।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
২৪৯৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ চতুষ্পদ জন্তু[র আঘাত জনিত মৃত্যুতে কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত। কুয়া[য় পড়ে মৃত্যু বরন করলে তার কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত, খনি[তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত এবং মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে [খনিজ দ্রব্যে] এক-পঞ্চমাংশ [যাকাত ওয়াজিব হইবে।]
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৪৯৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুয়া [তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত, চতুষ্পদ জন্তু[র আঘাতজনিত মৃত্যুতে কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত, খনি[তে পড়ে মৃত্যুবরণ করলে তার কোন] ক্ষতিপূরণমুক্ত আর মাটির তলায় প্রাপ্ত সম্পদে [খনিজ দ্রব্যে] এক-পঞ্চমাংশ [যাকাত ওয়াজিব হইবে]।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৭.পরিচ্ছেদঃ মধুর যাকাত
২৪৯৯. আমর ইবনি শুআয়ব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে তাহাঁর কিছু মধুর উশর [১/১০ অংশ] নিয়ে আসলেন এবং “সালাবাহ্” নামক উপত্যকা সমভূমি তাকে বরাদ্ধ প্রদানের [তাহাঁর তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দিতে] আবেদন জানালেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা তাকে বরাদ্ধ [খাসরূপে ছেড়ে] দিলেন। যখন উমার [রাঃআঃ] খলীফা হলেন, তখন সুফইয়ান ইবনি ওয়াহাব উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআঃ]- এর কাছে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে লিখে পাঠালেন। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআঃ] [উত্তরে] লিখলেন যে, যদি সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]–এর কাছে তাহাঁর মধুর যে উশর [১/১০] আদায় করত তা যদি আমার কাছেও আদায় করে তাহলে “সালাবাহ” তাহাঁর জন্য খাসভুমি রূপে [তার তত্ত্বাবধানেই] রেখে দাও। অন্যথা তা ফুলে ফুলে বিচরণকারী মধু-মক্ষিকা। যাহার—ইচ্ছা সেই [ঐ মধু-মক্ষিকার আহরিত মধু] খেতে পারবে।
যাকাত দেয়ার নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদীস
Leave a Reply