কিছু বা যাকাত চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল
কিছু বা যাকাত চাওয়া হালাল নয় এবং যার জন্য হালাল >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৬, অধ্যায়ঃ ৪
- অধ্যায়ঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ৪. প্রথম অনুচ্ছেদ
১৮৩৭. ক্ববীসাহ্ ইবনি মুখারিক্ব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন,আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এলাম। তার কাছে ঋণ আদায়ের জন্য কিছু চাইলাম। তিনি বললেন,অপেক্ষা করো। আমার কাছ যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত আসলে তোমাকে কিছু দেবার জন্য বলে দেব। তারপর তিনি বললেন,ক্বাবীসাহ্! শুধু তিন ধরণের ব্যক্তির জন্য কিছু চাওয়া জায়িয। প্রথমতঃ যে ব্যক্তি অপরের ঋণের যামিনদার। তবে বেশী চাইতে পারবে না। বরং যতটুকুক ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজন শুধু ততটুকু চাইবে। এরপর আর চাইবে না। দ্বিতীয়তঃ ওই ব্যক্তি যে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে [দুর্ভিক্ষ প্লাবন ইত্যাদিতে]। তার সব ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তারও [শুধু খাবার ও পোশাকের জন্য] ততটুকু যাতে প্রয়োজন মিটে যায়। তার জীবনের জন্য অবলম্বন হয়ে যায়। তৃতীয়তঃ ওই ব্যক্তি [যে ধনী,কিন্তু তার এমন কোন কঠিন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যা মহল্লাবাসী জানে। যেমন ঘরের সব মালপত্র চুরি হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে]। [মহল্লার] তিনজন বুদ্ধিমান সচেতন লোক এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে যে, সত্যিই এ ব্যক্তি মুখাপেক্ষী। তার জন্যও সেই পরিমাণ [সাহায্য] চাওয়া জায়িয, যাতে তার প্রয়োজন মিটে। অথবা তিনি বলেছেন এর দ্বারা তার মুখাপেক্ষিতা ও প্রয়োজন দূর হয়, তার জীবনে একটি অবলম্বন আসে। হে ক্ববীসাহ্! এ তিন প্রকারের চাওয়া ছাড়া হালাল নয়। আর হারাম পন্থায় প্রাপ্ত মাল খাওয়া তার জন্য হারাম।
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০৪৪, আবু দাউদ ১৬৪০, নাসায়ী ২৫৮০, দারিমী ১৭২০, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৩৬১, ইবনি হিব্বান ৩৩৯৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩১৯৪, ইরওয়া ৮৬৯, সহীহ আত তারগীব ৮১৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৯৬৫। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৩৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার উদ্দেশে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, সে নিশ্চয় [জাহান্নামের] আগুন কামনা করে। [এটা জানার পর] সে কম বা অধিক চাইতে থাকুক।
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০৪১, ইবনি মাজাহ ১৮৩৮, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৬৭৩, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৭১, সহীহ আল জামে আস্ সগীর ৬২৭৮। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৩৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে হাত পাততে থাকে ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে গোশ্ত থাকিবে না।
[বোখারী, মুসলিম]{১},{১} সহীহ : বোখারী ১৪৭৪, মুসলিম ১০৪০, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ২৩৭৭, সহীহ আত তারগীব ৭৯১, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৬। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪০. মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কিছু চাইতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের যে ব্যক্তিই আমার কাছে [অতিরঞ্জিত করে] কিছু চায় [তখন] আমি তাকে কিছু দিয়ে দেই। [তবে] আমি তা দেয়া খারাপ মনে করি। ফলে এটা কি করে সম্ভব যে, আমি তাকে যা কিছুই দিয়ে দেই তাতে বারাকাত হবে?
[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১০৩৮, নাসায়ী ২৫৯৩, সহীহ আত তারগীব ৮৪০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৪৪৬। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪. যুবায়র ইবনুল আও্ওয়াম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ এক আঁটি লাকড়ি রশি দিয়ে বেঁধে পিঠে বহন করে এবং তা বিক্রি করে। আল্লাহ তাআলা এ কাজের দ্বারা তার ইয্যত সম্মান বহাল রাখেন [যা ভিক্ষা করার মাধ্যমে চলে যায়]। এ কাজ মানুষের কাছে হাত পাতা অপেক্ষা তার জন্য অনেক উত্তম। মানুষ তাকে কিছু দিতে পারে আবার নাও দিতে পারে।
[বোখারী] {১}, ] সহীহ : বোখারী ১৪৭০, ১৪৭১, নাসায়ী ২৫৮৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ২৩৮১, সহীহ আল জামি আস্ সহীহ ৭০৬৯। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪২. হাকীম ইবনি হিযাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে চাইলাম। তিনি আমাকে কিচু দিলেন। আমি পুনরায় চাইলে তিনি আবার দিলেন। তারপর তিনি আমাকে বললেন, হে হাকীম! এ মাল সবুজ সতেজ ও মিষ্ট [অর্থাৎ দেখিতে সুন্দর, হৃদয়কে তৃপ্তি দেয়]। তাই যে ব্যক্তি এ মাল হাত না পেতে ও লোভ-লালসা ছাড়া পায় তাতে বারাকাত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি তা হাত পেতে লোভ লালসা দিয়ে অর্জন করে তাতে বারাকাত দেয়া হয় না। তার অবস্থা ওই ব্যক্তির মতো, যে খাবার খায় কিন্তু পেট ভরে না। [মনে রাখবে] উপরের হাত অর্থাৎ দানকারীর হাত নীচের হাত [দান গ্রহণকারীর হাত] হইতে অনেক উত্তম। হাকীম [রাদি.] বলেন, আমি [তখন] বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ওই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। আজ থেকে আমি মৃত্যু পর্যন্ত কারো মাল থেকে কিছু কামনা করব না। মৃত্যু পর্যন্ত কখনো কারো কাছে কিছু চাইব না।
[বোখারী,মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪৭২, ৬১৪৩, মুসলিম ১০৩৫, আত তিরমিজি ২৪৬৩, নাসায়ী ২৬০৩, আহমাদ ১৫৫৭৪, দারিমী ২৭৯২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৭৩, সহীহ আত তারগীব ৮১২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২২৫০। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে সদাক্বাহ্ এবং [মানুষের কাছে] হাত পাতা হইতে বিরত থাকার বিষয়ে উল্লেখ করে। তিনি বলেন, উপরের হাত নীচের হাত অপেক্ষা উত্তম। উপরের হাত দাতা আর নীচের হাত গ্রহীতা [ভিক্ষুক]।
[বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৪২৯, মুসলিম ১০৩৩, নাসায়ী ২৫৩৩, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৭৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬১৪। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৪. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] কিছু আনসার ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট কিছু চাইলেন। তিনি [সাঃআঃ] তাদেরকে কিছু দিলেন তারা আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন। এমনকি তাহাঁর কাছে যা ছিল তা শেষ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেন, আমার কাছে যে সম্পদ আসবে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে বাঁচিয়ে রেখে ধনের স্তুপ বানিয়ে রাখব না। মনে রাখবে, যে ব্যক্তি মানুষের কাছে চাওয়া হইতে বিরত থাকে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে মানুষের মুখাপেক্ষী হওযা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন, তাকে মানুষের মুখাপেক্ষী করেন না। আর যে ব্যক্তি অপরের সম্পদের অমুখাপেক্ষী হয়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করেন। যে ব্যক্তি সবরের প্রত্যাশী হয়; আল্লাহ তাকে ধৈর্য্যধারণের শক্তি দান করেন। মনে রাখবে, সবরের চেয়ে বেশী উত্তম ও প্রশস্ত আর কোন কিছু দান করা হয়নি।
[বোখারী, মুসলিম] {১},{১} সহীহ : বোখারী ১৪৬৯, মুসলিম ১০৫৩, আবু দাউদ ১৬৪৪, আত তিরমিজি ২০২৪, নাসায়ী ২৫৮৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬৫৮, দারিমী ১৬৮৬, সহীহ আত তারগীব ৮২৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫৮১৯। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৫. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমাকে [যাকাত উসূল করার বিনিময়ে] কিছু দিতে চাইলে আমি নিবেদন করতাম, এটা যে, আমার চেয়ে বেশী অভাবী তাকে দিন। [এ কথার জবাবে] তিনি [সাঃআঃ] বলিতেন, [প্রয়োজন থাকলে] এটাকে তোমার মালের সাথে শামিল করে নাও। [আর যদি প্রয়োজনের বেশী হয়] তাহলে তুমি নিজে তা আল্লাহর পথে দান করে দাও। তিনি [আরো বলেন, লোভ লালসা ও হাত না পেতে] যে জিনিস তুমি লাভ করিবে, তা গ্রহণ করিবে। আর যা এভাবে আসবে না তার পিছে লেগে থেক না
। [বোখারী, মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৭১৬৩, মুসলিম ১০৪৫, মুসলিম ২৬০৮, আহমাদ ১০০, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৩৬৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১২০৪০, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬২৯, সহীহ আত তারগীব ৮৪৫। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৪. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
১৮৪৬. সামুরাহ্ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: পরের কাছে হাত পাতা একটি রোগ, যার দ্বারা মানুষ নিজের মুখকে রোগাক্রান্ত করে। যে ব্যক্তি [নিজের মান সম্মান] অক্ষুণ্ন রাখতে চায় সে যেন [হাত পাততে] লজ্জা অনুভব করে, মান ইয্যত রক্ষা করে। আর যে ব্যক্তি [মান ইয্যত] অক্ষুণ্ন রাখতে চায় না সে মানুষের কাছে হাত পেতে নিজের মান সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করিতে পারে। তবে মানুষ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হাত পাততে পারে। অথবা এমন সময়ে [কারো কাছে] কিছু চাইবে যা চাওয়া খুবই প্রয়োজন
। [আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬৩৯, আত তিরমিজি ৬৮১, নাসায়ী ২৫৯৯, ইবনি হিব্বান ৩৩৯৭, সহীহ আত তারগীব ৭৯২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৬৯৫। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুললাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও মানুষের নিকট হাত পাতে , তাকে ক্বিয়ামাতের দিন এ অবস্থায় উঠানো হবে যে, এ অভ্যাস তার মুখের উপর খুমূশ খুদূশ অথবা কুদূহ রূপে প্রকাশ পাবে। নিবেদন করা হলো , হে আল্লাহর রসূল ! কি পরিমান সম্পদ তাকে অমুখাপেক্ষী করিবে? তিনি বললেন, পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের সোনা।
[আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, দারিমী] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬২৬, আত তিরমিজি ৬৫০, নাসায়ী ২৫৯২, ইবনি মাজাহ ১৮৪০, দারিমী ১৬৮০, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৪৯৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬২৭৯।যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৮. সাহল ইবনি হানযালিয়্যাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অমুখাপেক্ষী থাকার মত সম্পদের মালিক হয়েও যে ব্যক্তি মানুষের কাছে হাত পাতে, সে মূলত বেশী আগুন চায়। এ হাদিসের এক বর্ণনাকারী নুফায়লী অন্য এক স্থানে বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলের কাছে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কি পরিমান সম্পদ থাকলে অন্য কারো কাছে কিছু চাওয়া সমীচীন হবে না। তখন তিনি [সাঃআঃ] বলেন, সকাল সন্ধ্যার পরিমান খাদ্য মজুদ থাকলে। নুফায়লী অন্য এক স্থানে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর বরাতে এভাবে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তার কাছে একদিন অথবা একদিন এক রাতের পরিমান খাদ্য মওজুদ থাকলে। অথবা বর্ণনাকারীর সন্দেহ, তিনি শুধু একদিনের কথা বলেছেন।
[আবু দাউদ] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬২৯, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৩৯১, সহীহ আত তারগীব ৮০৫। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৪৯. আত্বা ইবনি ইয়াসার বানী আসাদ গোত্রের এক ব্যক্তি হইতে বর্ণীতঃ
যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এক উক্বিয়্যাহ্ পরিমাণ [অর্থাৎ চল্লিশ দিরহাম] অথবা এর সমমূল্যের [সোনা ইত্যাদি ] মালিক হওয়ার পরও মানুষের কাছে হাত পাতে, সে যেন বিনা প্রয়োজনে [মানুষের কাছে] হাত পাতল।
[মালিক, আবু দাউদ ও নাসায়ী] {১}, {১} সহীহ লিগায়রিহী : আত তিরমিজি ৬৫৩, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৬২৩, সহীহ আত তারগীব ৮০২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
১৮৫০. হুবশী ইবনি জুনাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কারো কাছে কিছু চাওয়া ধনী, সুস্থ সবল ও সুস্থ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পন্ন লোকের জন্য হালাল নয়। তবে ঐ ফকিরের জন্য তা হালাল, যে ক্ষুধা পিপাসার কারনে মাটিতে পড়ে গেছে। এভাবে ওই ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির জন্যও হাত পাতা হালাল যে ভারী ঋণের বোঝায় জর্জরিত। মনে রাখবে যে ব্যক্তি শূধু সম্পত্তি বাড়াবার জন্য মানুষের কাছে ঋণ চায়, তার এ চাওয়া ক্বিয়ামতের দিন আহইতের চিহ্নরূপে তার মুখে ভেসে উঠবে। তাছাড়াও জাহান্নামে তার খাদ্য হিসেবে গরম পাথর দেয়া হবে। অতএব যার ইচ্ছা সে কম হাত পাতুক অথবা বেশী হাত পাতুক। [তিরমিজি] {১}
{১} জইফ : তবে إِنَّ الْمَسْأَلَةَ….. অংশটুকু সহীহ। আবু দাউদ ১৬৪১, ইবনি মাজাহ ২১৯৮, আহমাদ ১২১৩৪, ইরওয়া ৮৬৭। কারণ এর সানাদে আবু বাকর আল হানাফী একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৫১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন আনসারের এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] এর কাছে এসে তাহাঁর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি বললেন, তোমার ঘরে কি কোন জিনিস নেই? লোকটি বলিল, একটি কমদামী কম্বল আছে। এটার একাংশ আমি গায়ে দেই, আর অপর অংশ বিছিয়ে নিই। এছাড়া কাঠের একটি পেয়ালা আছে। এ দিয়ে আমি পানি পান করি। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বললেনঃ এ দুটো জিনিস আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি এ জিনিস দুটি নবীর কাছে নিয়ে এলো। জিনিসটি নিজের হাতে নিয়ে নবীজী বললেন এ দুটি কে কিনবে? এক ব্যক্তি বলিল, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে কিনতে প্রস্তুত। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]বললেনঃ এক দিরহামের বেশী দিয়ে কে কিনতে চাও? এ কথাটি তিনি দু কি তিনবার বললেন। [এ সময়] এক ব্যক্তি দু দিরহাম বললে তিনি দু দিরহাম নিয়ে আনসারীকে দিয়ে দিলেন। অতঃপর তাকে বললেন, এ এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারের লোকজন কে দিবে। দ্বিতীয় দিরহামটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে আসবে। সে ব্যক্তি কুঠার কিনে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর কাছে এলো। তিনি নিজ হাতে কুঠারের একটি মজবুত হাতল লাগিয়ে দিয়ে তাকে বললেন, এটা দিয়ে লাকড়ী কেটে বিক্রি করিবে। এরপর আমি এখানে তোমাকে পনের দিন যেন দেখিতে না পাই। লোকটি চলে গেল। বন থেকে লাকড়ী কেটে জমা করে [বাজারে] এনে বিক্রি করিতে লাগল। [কিছু দিন পর] সে যখন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর নিকট ফিরে এলো তখন সে দশ দিরহামের মালিক। এ দিরহামের কিছু দিয়ে সে কিছু কাপড়-চোপড় কিনল আর কিছু দিয়ে খাদ্যশস্য কিনল। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] [তার অবস্থার এ পরিবর্তন দেখে]বললেন, ক্বিয়ামতের দিন ভিক্ষাবৃত্তি তোমার চেহারায় ক্ষত চিহ্ন হয়ে ওঠার চেয়ে এ অবস্থা কি উত্তম নয়?[মনে রাখবে], শুধু তিন ধরনের লোক হাত পাততে পারে, ভিক্ষা করিতে পারে। প্রথমতঃ ফকীর যাকে কপর্দকহীনতা মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি যে ভারী ঋণে লাঞ্ছিত হবার পর্য়ায়ে। তৃতীয়তঃ রক্তপন আদায়কারী, যা তার যিম্মায় আছে [অথচ তার সামর্থ্য নেই]।
[আবু দাউদ; ইবনি মাজাহ এ হাদিসটি ইলা-ইয়াওমিল ক্বিয়া-মাহ্ পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।] {১} {১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬৪৫, আত তিরমিজি ২৩২৬, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৭৮৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬০৪১। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৫২. ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কঠিন অভাবে জর্জরিত, সে মানুষের সামনে প্রয়োজন পূরনের ইচ্ছা প্রকাশ করলে এ অভাব দূর হবেনা। আর যে ব্যক্তি তার অভাবের কথা শুধু আল্লাহর কাছে বলে, আল্লাহই তার জন্য যথেস্ট। হয় তাকে তাড়াতাড়ি মৃত্যু দিয়ে অভাব থেকে মুক্তি দিবেন অথবা তাকে কিছুদিনের মধ্যে ধনী বানিয়ে দিবেন। [আবু দাউদ, তিরমিজি] {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬৪৫, আত তিরমিজি ২৩২৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৪৮২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭৮৬৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৪১০৯, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ২৭৮৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬০৪১। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
১৮৫৩. ইবনি ফিরাসী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [আমার পিতা] ফিরাসী[রাদি.] বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এর নিকট আরয করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি মানুষের কাছে হাত পাততে পারি? নবী [সাঃআঃ] বললেন, না। [বরং সর্বাবস্থায়] আল্লাহর উপর ভরসা করিবে। তবে [কোন কঠিন প্রয়োজনে] কিছু চাওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়লে নেক মানুষের কাছে চাইবে।
[আবু দাউদ, নাসায়ী] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৬৪৬, নাসায়ী ২৫৮৭। কারণ এর সানাদে মুসলিম ইবনি মাখশী এবং ইবনুল ফিরাসী উভয়ই অপরিচিত রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
১৮৫৪, ইবনুস্ সাইদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমার [রাদি.] আমাকে যাকাত আদায়কারী নিযুক্ত করিলেন। আমি যাকাত আদায়ের কাজ শেষ করলাম। যাকাতের মাল উমারের কাছে পৌঁছিয়ে দিলে তিনি আমাকে যাকাত আদায়ের বিনিময় গ্রহন করিতে বললেন। [এ কথা শুনে ] আমি বললাম, এ কাজ শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমি করেছি। তাই এ কাজের বিনিময় আল্লাহর যিম্মায়। উমার [রাদি.] বললেন, তোমাকে যা দেয়া হচ্ছে গ্রহন করো। কারণ আমিও রসূল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সময় যাকাত আদায় করেছি। তিনি এর বিনিময় দিতে চাইলে আমিও এ কথাই বলেছিলাম, যা আজ তুমি বলছ। [তখন] রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাকে বলেছিলেন, যখন কোন জিনিস চাওয়া ছাড়া তোমাকে দেয়া হবে, তা গ্রহন করে খাবে। [আর খাবার পর যা তোমার নিকট বেঁচে থাকিবে] তা আল্লাহর পথে খরচ করিবে। [মুসলিম, আবু দাউদ] {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১০৪৫, আবু দাউদ ১৬৪৭, নাসায়ী ২৬০৪, আহমাদ ৩৭১, ইবনি খুযায়মাহ্ ২৩৬৪, ইবনি হিব্বান ৩৪০৫, সুনান আল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৩১৬৯। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৫৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আরাফার দিন এক ব্যক্তিকে লোকজনের কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে শুনলেন। তিনি তাকে বললেন, আজকের এই দিনে এই জায়গায় তুমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে হাত পাতছো? তারপর তিনি তাকে চাবুক দিয়ে মারলেন।
[রযীন], এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
১৮৫৬. উমার ফারূক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে লোকেরা! মনে রাখবে লোভ লালসা এক রকমের মুখাপেক্ষিতা । আর মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষী থাকা, ধনী হবার লক্ষণ। মানুষ যখন অন্যের কাছে কিছু আশা করা ত্যাগ করে , তখন সে স্বনির্ভর হয়
। [রযীন], এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
১৮৫৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার বলেছেন, যে আমার সাথে এ ওয়াদা করিবে যে, সে কারো কাছে ভিক্ষার হাত বাড়াবে না। আমি তার জন্য জান্নাতের ওয়াদা করিতে পারি। সাওবান বলেন, আমি। ফলে তিনি কারো কাছে কোন কিছু চাইতেন না [বস্ততঃ সাওবান যত অভাবেই থাকুন, কারো কাছে আর কোনদিন হাত পাতেননি] {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৬৪৩, নাসায়ী ২৫৯০, সহীহ আত তারগীব ৮১৩। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৮৫৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] [একদিন] ডেকে এনে আমার ওপর শর্তারোপ করে বললেন, তুমি কারো কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। আমি বললাম, আচ্ছা। তারপর তিনি বললেন, এমনকি তোমার হাতের লাঠিটাও যদি পড়ে যায় কাউকে উঠিয়ে দিতে বলবে না। বরং তুমি নিজে নেমে তা উঠিয়ে নেবে।
[আহমাদ] {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ২১৫০৯, সহীহ আত তারগীব ৮১০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৭৩০৭। যাকাত চাওয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply