যাকাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে এবং যথাস্থানে ধন-সম্পদ খরচ করা

যাকাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে এবং যথাস্থানে ধন-সম্পদ খরচ করা

যাকাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে এবং যথাস্থানে ধন-সম্পদ খরচ করা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ২৪, যাকাত, অধ্যায়ঃ (১-৫)=৫টি

২৪/১. অধ্যায়ঃ যাকাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে।
২৪/২. অধ্যায়ঃ যাকাত দেয়ার উপর বায়আত
২৪/৩. অধ্যায়ঃ যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীর গুনাহ।
২৪/৪. অধ্যায়ঃ যে সম্পদের যাকাত দেয়া হয় তা কানয (জমাকৃত সম্পদ) নয়।
২৪/৫. অধ্যায়ঃ যথাস্থানে ধন-সম্পদ খরচ করা

২৪/১. অধ্যায়ঃ যাকাত ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “সালাত কায়িম কর ও যাকাত আদায় কর”। (আল-বাকারাঃ ৪৩, ৮৩, ১১০)

ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ আবু সুফিয়ান (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ)-এর হাদীস উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদেরকে সালাত (প্রতিষ্ঠা করা), যাকাত (আদায় করা), আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা ও পবিত্রতা রক্ষা করার আদেশ দেন।

১৩৯৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) মুআয (রাদি.)-কে ইয়ামান দেশে (শাসক হিসেবে) প্রেরণ করেন। অতঃপর বলিলেন, সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ সাক্ষ্য দানের প্রতি আহবান করিবে যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর প্রতি দিনে ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করিয়াছেন। যদি সেটাও তারা মেনে নেয় তবে তাদেরকে অবগত কর যে, আল্লাহ তাআলা তাদের উপর তাদের সম্পদের মধ্য থেকে সদকা (যাকাত) ফরয করিয়াছেন। যেটা ধনীদের নিকট থেকে গৃহীত হইবে আর দরিদ্রদের মাঝে প্রদান করা হইবে।

[১] ১৩৯৫ নং হাদীস নম্বর থেকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর তৃতীয় খন্ড এপ্রিল ২০০২ সংষ্করণ অবলম্বনে করা হয়েছে

১৩৯৬. আবু আইয়ূব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

জনৈক সাহাবী নাবী (সাঃআঃ)-কে বললেনঃ আমাকে এমন একটি আমালের কথা বলুন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ তার কী হয়েছে! তার কী হয়েছে! এবং বললেনঃ তার দরকার রয়েছে তো। তুমি আল্লাহর ইবাদত করিবে, তাহাঁর সঙ্গে অপর কোন কিছুকে শরীক করিবে না। সালাত আদায় করিবে, যাকাত আদায় করিবে, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখবে।

(আ.প্র. ১৩০৬).আর বাহয শুবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনু উসমান ও তাহাঁর পিতা উসমান ইবনু আবদুল্লাহ হইতে তারা উভয়ে মূসা ইবনু তালহা (রাদি.)-কে আবু আইউব (রাদি.)-এর সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করিতে শুনেন। আবু আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন: (শুবাহ রাবীর নাম বলিতে ভুল করিয়াছেন) আমার আশংকা হয় যে, মুহাম্মদ ইবনু উসমান-এর উল্লেখ সঠিক নয়, বরং রাবীর নাম এখানে আমর ইবনু উসমান হইবে।

১৩৯৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক বেদুইন নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বলিল, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যদি আমি তা সম্পাদন করি তবে জান্নাতে প্রবেশ করবো। রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহর ইবাদত করিবে আর তার সাথে অপর কোন কিছু শরীক করিবে না। ফরয সালাত আদায় করিবে, ফরয যাকাত প্রদান করিবে, রমযান মাসে সিয়াম, পালন করিবে। সে বলিল, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ করে বলছি, আমি এর চেয়ে বেশী করবো না। যখন সে ফিরে গেল, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ যে ব্যক্তি কোন জান্নাতী ব্যক্তিকে দেখিতে পছন্দ করে সে যেন এই ব্যক্তি দেখে নেয়। (আ.প্র. ১৩০৭, ই.ফা. ১৩১২)

আবু যুরআ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যম নাবী (সাঃআঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন।

১৩৯৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবদুল কায়স গোত্রের প্রতিনিধি দল নাবী (সাঃআঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে আরয করলো, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা রাবীআ গোত্রের লোক, আমাদের ও আপনার (মদীনার) মধ্যে মুযার গোত্রের কাফিররা বাধা হয়ে রয়েছে। আমরা আপনার কাছে কেবল নিষিদ্ধ মাস (যুদ্ধ বিরতির মাস) ব্যতীত নির্বিঘ্নে আসতে পারি না। কাজেই এমন কিছু, আমলের আদেশ করুন যা আমরা আপনার কাছ থেকে শিখে (আমাদের গোত্রের) অনুপস্থিতদেরকে সেদিকে আহবান করিতে পারি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমাদেরকে চারটি বিষয়ের আদেশ করছি ও চারটি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। (পালনীয় বিষয়গুলো হলোঃ) আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা তথা সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই। (রাবী বলেন) এ কথা বলার সময় নাবী (সাঃআঃ) (একক নির্দেশক) তাহাঁর হাতের অঙ্গুলি বন্ধ করেন, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা ও তোমরা গনীমতের এক-পঞ্চমাংশ আদায় করিবে। আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি শুষ্ক কদুর খোলস, সবুজ রং প্রলেপযুক্ত পাত্র, খেজুর কান্ড নির্মিত পাত্র, তৈলজ পদার্থ প্রলেপযুক্ত মাটির পাত্র ব্যবহার করিতে। সুলায়মান ও আবু নুমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত হাদীসে ঈমান বিল্লাহ অর্থাৎ (আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোনো ইলাহ নেই একথার সাক্ষ্য দেয়া) এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন — (ব্যতীত)।

১৩৯৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর মৃত্যুর পর আবু বকর (রাদি.)-এর খিলাফতের সময় আরবের কিছু লোক মুরতাদ হয়ে যায়। তখন উমর (রাদি.) [আবু বকর (রাদি.)-কে লক্ষ্য করে] বলিলেন, আপনি (সে সব) লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন (যারা সম্পূর্ণ ধর্ম পরিত্যাগ করেনি, বরং যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে মাত্র)? অথচ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেছেনঃ

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার পূর্ব পর্যন্ত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে, যে কেউ তা বললো, সে তার সম্পদ ও জীবন আমার পক্ষ থেকে নিরাপদ করে নিলো। তবে ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করলে (শাস্তি দেয়া যাবে), আর তার অন্তরের গভীর (হৃদয়াভ্যন্তরে কুফরী বা পাপ লুকানো থাকলে এর) হিসাব-নিকাশ আল্লাহর যিম্মায়।

১৪০০. Read previous Hadith. আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর শপথ! তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই আমি যুদ্ধ করবো যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করিবে, কেননা যাকাত হল সম্পদের উপর আরোপিত হক্ব। আল্লাহর কসম। যদি তারা একটি মেষ শাবক যাকাত দিতেও অস্বীকৃতি জানায় যা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর কাছে তারা দিত, তাহলে যাকাত না দেয়ার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই যুদ্ধ করবো। উমর (রাদি.) বলেনঃ আল্লাহর কসম, আল্লাহ আবু বকর (রাদি.)-এর হৃদয় বিশেষ জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করিয়াছেন বিধায় তাহাঁর এ দৃঢ়তা, এতে আমি বুঝতে পারলাম তাহাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।

২৪/২. অধ্যায়ঃ যাকাত দেয়ার উপর বায়আত

(মহান আল্লাহর বাণী) : “যদি তারা তওবা করে এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই”। (আল- ইমরানঃ ১১)

১৪০১. জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট সালাত কায়েম করা, যাকাত দেয়া ও সকল মুসলমানের কল্যাণ কামনা করার উপর বায়আত করি।

২৪/৩. অধ্যায়ঃ যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীর গুনাহ।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “যারা সোনা-রূপা সঞ্চয় করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা খরচ করে না; অতএব, আপনি তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন, অতি যন্ত্রণাময় শাস্তির। যা সেদিন ঘটবে, যেদিন জাহান্নামের অগ্নিতে সেগুলোকে উত্তপ্ত করা হইবে, অতঃপর সেগুলো দ্বারা তাদের ললাটসমূহে এবং তাদের পার্শ্বদেশসমূহে এবং তাদের পৃষ্ঠসমূহে দাগ দেয়া হইবে, এটা তাই যা তোমরা নিজেদের জন্য সঞ্চয় করে রেখেছিলে, সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ কর নিজেদের সঞ্চয়ের”। (আত-তওবাঃ ৩৪-৩৫)

১৪০২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের উটের (উপর দরিদ্র, বঞ্চিত, মুসাফিরের) হক আদায় না করিবে, (ক্বিয়ামত দিবসে) সেই উট দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে এসে খুর দিয়ে আপন মালিককে পিষ্ট করিবে এবং যে ব্যক্তি নিজের বকরীর হক আদায় না করিবে, সে বকরী দুনিয়া অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে এসে মালিককে খুর দিয়ে পদদলিত করিবে ও শিং দিয়ে আঘাত করিবে। উট ও বকরীর হক হলো পানির নিকট অর্থাৎ (ঘাটে) জনসমাগম স্থলে-ওদের দোহন করা (ও দরিদ্র বঞ্চিতদের মধ্যে দুধ বন্টন করা)। নাবী (সাঃআঃ) আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন কিয়ামত দিবসে (হক্ব অনাদায়জনিত কারণে শাস্তি স্বরূপ) কাঁধের উপর চিৎকাররত বকরী বহন করে (আমার নিকট) না আসে এবং বলে, হে মুহাম্মদ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলবঃ তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আমি তো (হক্ব অনাদায়ের পরিণতির কথা) পৌছে দিয়েছি। আর কেউ যেন চিৎকাররত উট কাঁধের উপর বহন করে এসে না বলে, হে মুহাম্মদ! (আমাকে রক্ষা করুন)। তখন আমি বলবঃ তোমাকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমার কোন ক্ষমতা নেই। আমি তো (শেষ পরিণতির কথা) পৌছে দিয়েছি।

১৪০৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যাকে আল্লাহ সম্পদ দান করিয়াছেন, কিন্তু সে এর যাকাত আদায় করেনি, ক্বিয়ামাতের দিন তার সম্পদকে টেকো (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথা বিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হইবে। সাপটি তার মুখের দুপার্শ্ব কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত মাল। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তিলাওয়াত করেনঃ

مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالاً، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، لَهُ زَبِيبَتَانِ، يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ ـ يَعْنِي شِدْقَيْهِ ـ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ، أَنَا كَنْزُكَ

“আল্লাহ যাদেরকে সম্পদশালী করিয়াছেন অথচ তারা সে সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে, তাদের ধারণা করা উচিত নয় যে, সেই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর হইবে। অচিরেই ক্বিয়ামত দিবসে, যা নিয়ে কার্পণ্য করছে তা দিয়ে তাদের গলদেশ শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হইবে” –

(আল-ইমরানঃ ১৮০)।

২৪/৪. অধ্যায়ঃ যে সম্পদের যাকাত দেয়া হয় তা কানয (জমাকৃত সম্পদ) নয়।

নাবী (সাঃআঃ)-এর এ উক্তির কারণে যে, পাঁচ উকিয়ার ‎[১] ‎ কম পরিমাণ সম্পদের যাকাত নেই।

‎[১] ‎ ৫ উকিয়া সমান প্রতি উকিয়া ৪০ দিরহাম হিসাবে ৫ উকিয়া সমান ২০০ দিরহাম। বর্তমান ওজন অনুযায়ী ৫৯৫ গ্রাম (১ উকিয়া=১১৯ গ্রাম)। (মুজামু লুগাতুল ফুকাহা পৃষ্ঠা ৪৪৯)

১৪০৪. খালিদ ইবনু আসলাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.)-এর সাথে বের হলাম। এক মরুবাসী তাঁকে বললো, আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

‏وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ

“যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে আর আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না”-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। ইবনু উমর (রাদি.) বলিলেন, যে ব্যক্তি সম্পদ জমা করে রাখে আর এর যাকাত আদায় করে না, তার জন্য রয়েছে শাস্তি- এ তো ছিল যাকাত বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগের কথা। এরপর যখন যাকাত বিধান অবতীর্ণ হলো তখন একে আল্লাহ ধন-সম্পদের পবিত্রতা অর্জনের উপার করে দিলেন।

১৪০৫. আবু সাঈদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, পাঁচ উকিয়ার কম সম্পদের উপর যাকাত (ফরয) নেই এবং পাঁচটি উটের কমের উপর যাকাত নেই। পাঁচ ওয়াসাক [১] এর কম উৎপন্ন দ্রব্যের উপর যাকাত নেই।

[১] ১ ওয়াসাক সমান ৬০ সা। এ হিসেবে সাহাবীর পাওয়া পাত্রের হিসেবে ১২২ কেজি ৪০০ গ্রাম। – পৃষ্ঠা ১৩৮, – পৃষ্ঠা ৭৬, লেখক সালিহ আল উসাইমীন আর আরাবী অভিধানের বর্তমানে প্রচলিত হিসেব অনুযায়ী ১৩০ কেজি ৩২০ গ্রাম। (মুজামু লুগাতুল ফুকাহা পৃষ্ঠা ৪৫০) সাহাবীর পাওয়া পাত্রে উৎকৃষ্ট মানের গম ভর্তি করে তার ওজন হয়েছে ২ কেজি ৪০ গ্রাম। এক্ষণে এই পাত্রে আপন আপন খাদ্য ভর্তি করলে খাদ্যের প্রকার অনুযায়ী ওজন কম বা বেশী হইবে।

১৪০৬. যায়দ ইবনু অহব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাবাযাহ নামক স্থান দিয়ে চলার পথে আবু যার (রাদি.)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এখানে কী কারণে আসলেন? তিনি বলিলেন, আমি সিরিায়ায় অবস্থানকালে নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে মুআবিয়া (রাদি.)-এর সাথে আমার মতানৈক্য হয়ঃ

“যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় তা ব্যয় করে না…….”-(আত-তাওবাঃ ৩৪)। মুআবিয়া (রাদি.) বলেন, এ আয়াত কেবল আহলে কিতাবদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি বললাম, আমাদের ও তাদের সকলের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক সময় মুআবিয়া (রাদি.) উসমান (রাদি.)-এর নিকট আমার নামে অভিযোগ করে পত্র পাঠালেন। তিনি পত্রযোগে আমাকে মদীনায় ডেকে পাঠান। মদীনায় পৌছলে আমাকে দেখিতে লোকেরা এত ভিড় করলো যে, এর পূর্বে যেন তারা কখনো আমাকে দেখেনি। উসমান (রাদি.)-এর নিকট ঘটনা বিবৃত করলে তিনি আমাকে বলিলেন, ইচ্ছা করলে আপনি মদীনার বাইরে নিকটে কোথাও থাকতে পারেন। এ হল আমার এ স্থানে অবস্থানের কারণ। খলীফা যদি কোন হাবশী লোককেও আমার উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেন, তবুও আমি তাহাঁর কথা শুনব এবং আনুগত্য করবো।

১৪০৭. আহনাফ ইবনু কায়স (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি কুরাইশ গোত্রীয় একদল লোকের সাথে বসেছিলাম, এমন সময় রুক্ষ্ম চুল, মোটা কাপড় ও খসখসে শরীর বিশিষ্ট এক ব্যক্তি তাদের নিকট এসে সালাম দিয়ে বললো, যারা সম্পদ জমা করে রাখে তাদেরকে এমন গরম পাথরের সংবাদ দাও, যা তাদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হইবে। তা তাদের স্তনের বোঁটার উপর স্থাপন করা হইবে আর তা কাঁধের পেশী ভেদ করে বের হইবে এবং কাঁধের চিকন হাড্ডির ওপর স্থাপন করা হইবে, তা নড়াপড়া করে সজোরে স্তনের বোঁটা ছেদ করে বের হইবে। এরপর লোকটি ফিরে গিয়ে একটি স্তম্ভের পাশে বসল। আমিও তাহাঁর অনুগমন করলাম ও তাহাঁর কাছে বসলাম। অথচ আমি জানতাম না সে কে। আমি তাকে বললাম, আমার মনে হয় যে, আপনার বক্তব্য লোকেরা পছন্দ করেনি। তিনি বলিলেন, তারা কিছুই বুঝে না।

১৪০৮. Read previous Hadith. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

কথাটি আমাকে আমার বন্ধু বলেছেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, আপনার বন্ধু কে? সে বলিল, তিনি হলেন নাবী (সাঃআঃ)। তিনি আমাকে বলেন, হে আবু যার! তুমি কি উহুদ পাহাড় দেখেছ? তিনি বলেন, তখন আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে দেখলাম দিনের কতটুকু অংশ বাকি রয়েছে। আমার ধারণা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর কোন প্রয়োজনে আমাকে পাঠাবেন। আমি জবাব বললাম, জী-হাঁ। তিনি বললেনঃ আমি পছন্দ করি না যে, আমার জন্য উহুদ পর্বত পরিমাণ স্বর্ণ হোক আর তা সমুদয় আমি নিজের জন্য ব্যয় করি তিনটি দীনার ব্যতীত। [আবু যার (রাদি.) বলেন] তারা তো বুঝে না, তারা শুধু দুনিয়ার সম্পদই একত্রিত করছে। আল্লাহর কসম, না! না! আমি তাদের নিকট দুনিয়ার কোন সম্পদ চাই না এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত দ্বীন সম্পর্কেও তাদের নিকট কিছু জিজ্ঞেস করবো না।

২৪/৫. অধ্যায়ঃ যথাস্থানে ধন-সম্পদ খরচ করা

১৪০৯. ইবনু মাসঊদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি কেবল মাত্র দুধরনের ব্যক্তির প্রতি ঈর্ষা রাখা যেতে পারে, একজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন এবং ন্যায় পথে তা ব্যয় করার মত ক্ষমতাবান করিয়াছেন। অপরজন এমন ব্যক্তি যাকে আল্লাহ দ্বীনের জ্ঞান দান করিয়াছেন (আর তিনি) সে অনুযায়ী ফয়সালা দেন ও অন্যান্যকে তা শিক্ষা দেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply