রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মোহরে নবুওয়াত

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মোহরে নবুওয়াত

রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মোহরে নবুওয়াত , এই অধ্যায়ে হাদীস ৭ টি ( ১২-১৮ পর্যন্ত ) << শামায়েলে তিরমিযী হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন 

অধ্যায়-২ঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মোহরে নবুওয়াত

১।পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] এর দুকাঁধের মধ্যভাগে মোহরে নবুওয়াত ছিল
২।পরিচ্ছেদঃ তা ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড
৩।পরিচ্ছেদঃ সেটি ছিল এক গুচ্ছ কেশের মত
৪।পরিচ্ছেদঃ সালমান ফারসি [রাদি.] মোহরে নবুওয়াত দেখে ঈমান এনেছিলেন
৫।পরিচ্ছেদঃ এটি ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত
৬।পরিচ্ছেদঃ এটি ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায়, আর এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক ছিল

১।পরিচ্ছেদঃ নাবী [সাঃআঃ] এর দুকাঁধের মধ্যভাগে মোহরে নবুওয়াত ছিল

خاتم অর্থ- আংটি, মোহর, সীল। মোহরে নবুওয়াত হলো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দুকাঁধের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত একটি গোশতের টুকরা। এটি ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নবুওয়াতের নিদর্শন; আর এ নিদর্শনের কথা পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহেও বর্ণিত ছিল।

১২. সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমার খালা আমাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে গেলেন। এরপর তিনি আরয করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাগ্নে অসুস্থ। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার কল্যাণের জন্য দুআ করিলেন। তারপর তিনি ওযু করিলেন। আমি তার ওযুর অবশিষ্ট পানি পান করলাম এবং তার পেছনে গিয়ে দাড়ালাম। সহসা তার দুকাঁধের মধ্যস্থ মোহরে নবুওয়াতের প্রতি আমার দৃষ্টি পড়ে, যা দেখিতে পাখির [কবুতরের] ডিমের মতো। {১২}

{১২} সহিহ বোখারী, হাদিস নং/১৯০; সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৬২৩৩; মুজামুল কাবীর, হাদিস নং/৬৫৪০ঃ শারহুস সুন্নাহ, হাদিস নং/৩৬২২ মিশকাত, হাদিস নং/৪৭৬। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২।পরিচ্ছেদঃ তা ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড

১৩. জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখেছি। আর তা যেন ছিল ডিমের ন্যায় লাল গোশতপিণ্ড। {১৩}

{১৩} সহিহ মুসলিম, হাদিস নং/৬২৩০; মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২১০৩৬ মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং/৪১৯৭; সহিহ ইবনি হিব্বান, হাদিস নং/৬৩০১ জামেউস সগীর, হাদিস নং/৮৯৩৯ মিশকাত, হাদিস নং/৫৭৭৯ ৷ মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৪. রুমায়সা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাদ ইবনি মুয়ায [রাদি.] এর ওফাতের দিন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনিয়াছি যে, তার মৃত্যুতে রহমান [আল্লাহ তাআলা] এর আরশ কেঁপে উঠেছিল। রুমায়ছা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন এ উক্তি করেন তখন আমি তার এত নিকটে ছিলাম যে, ইচ্ছে করলে তার মোহরে নবুওয়াত চুম্বন করিতে পারতাম। {১}

{১} মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২৬৮৩৬; মুজামুল কাবীর, হাদিস নং/২০১৬৫; মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস নং/৭০০৫। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩।পরিচ্ছেদঃ সেটি ছিল এক গুচ্ছ কেশের মত

১৫. আবু যায়েদ আমর বিন আখতাব আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, হে আবু যায়েদ! আমার কাছে এসো এবং আমার পৃষ্ঠদেশে হাত বুলাও। তখন আমি তার পিঠে হাত বুলাতে থাকলাম। এক পর্যায়ে আমার আঙ্গুলগুলো মোহরে নবুওয়াতের উপর লেগে গেল। বর্ণনাকারী আমর বিন আখতাব [রাদি.] কে বলিলেন, খাতাম [মোহরে নবুওয়াত] কী জিনিস? তিনি বলিলেন, এক গুচ্ছ কেশ। {১৫}

{১৫} মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২২৯৪০ঃ মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদিস নং/৪১৯৮। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪।পরিচ্ছেদঃ সালমান ফারসি [রাদি.] মোহরে নবুওয়াত দেখে ঈমান এনেছিলেন

১৬. আবু বুরায়দা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মদিনায় হিজরতের পর একবার সালমান ফারসী [রাদি.] একটি পাত্রে কিছু কাচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সামনে রাখলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে সালমান! এগুলো কিসের খেজুর? [অর্থাৎ হাদিয়া না সাদাকা?] তিনি বলিলেন, এগুলো আপনার ও আপনার সাধীদের জন্য সাদাকা। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ বলিলেন, এগুলো তুলে নাও। আমরা সাদাকা খাই না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি তা তুলে নিলেন। পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সামনে পেশ করেন। তখন তিনি বলিলেন, সালমান! এসব কিসের খেজুর? সালমান [রাদি.] বলিলেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার সাহাবীগণকে বলিলেন, তোমরা হস্ত প্রসারিত করো [হাদিয়া গ্রহণ করো]। এরপর সালমান [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখিতে পেলেন; অতঃপর ঈমান আনলেন। [বর্ণনাকারী বলেন] সালমান [রাদি.] জনৈক ইয়াহুদির গোলাম ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে এত এত দিরহামের বিনিময়ে এবং এ শর্তে খরিদ করেন যে, সালমান তার ইয়াহুদি মনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবে এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করিতে থাকিবে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার নিজ হাতে একটি চারা ছাড়া সবগুলো রোপণ করিলেন এবং একটি চারা গাছ ওমর [রাদি.] রোপণ করেছিলেন। সে বছরই সকল গাছেই খেজুর আসল কিন্তু একটি গাছে খেজুর আসল না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্ন বলিলেন, এ গাছটির এ অবস্থা কেন? উমর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এটি রোপণ করেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ চারাটি উপড়িয়ে আবার রোপণ করিলেন। ফলে সে বছরই তাতে খেজুর আসল। {১৬}

ব্যাখ্যা ঃ [আরবী] আমরা সাদাকা ভক্ষণ করি না এ বাক্যের মধ্যে আমরা দ্বারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং তার ঐ সমস্ত আত্মীয়-স্বজনকে বুঝানো হয়েছে, যাদের জন্য সাদাকা খাওয়া হারাম। {১৬} মুসনাদে আহম্মদ, হাদিস নং/২৩০৪৭ শারহুল মাআনী, হা|২৯৮৬; মুসনাদুল বাযযার, হাদিস নং/৪৪০৭। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫।পরিচ্ছেদঃ এটি ছিল এক টুকরো বাড়তি গোশত

১৭. আবু নজর আওয়াকী [রহ.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.]-কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর মোহরে নবুওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বলিলেন, তা ছিল তার পৃষ্ঠদেশের উপর এক টুকরো বাড়তি গোশত। {১৭}

{১} জামেউস সগীর, হাদিস নং/৮৯৩৯; সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস নং/২০৯৩। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬।পরিচ্ছেদঃ এটি ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায়, আর এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক ছিল

১৮. আবদুল্লাহ ইবনি সারজিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাহাঁর সাহাবীগণের মাঝে ঘুরতেছিলেন। এক পর্যায়ে আমি তার পিছু ধরলাম। তিনি আমার মনোবাঞ্ছনা বুঝতে পেরে পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেলেন। তখন আমি তার দুকাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে মোহরে নবুওয়াত দেখিতে পাই। আর তা ছিল মুষ্টিবদ্ধ আঙ্গুলীর ন্যায় এবং এর চারপার্শ্বে আচিলের মতো কতগুলো তিলক শোভা পাচ্ছিল। এরপর আমি তার সামনে এসে দাড়ালাম এবং বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন। তখন তিনি বলিলেন, তোমাকেও ক্ষমা করুন। তারপর লোকে আমাকে বলিতে লাগল, তুমি বড়ই সৌভাগ্যবান। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমার মাগফিরাত কামনা করিয়াছেন। তখন তিনি বলিলেন, হ্যা- তিনি তোমাদের জন্যও দুআ করিয়াছেন। এরপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন – [হে রাসূল] আপনি আপনার জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। [সূরা মুহাম্মাদ- ১৯]{১৮}

{১৮} সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হাদিস নং/১১৪৩২ মারেফাতুস সাহাবা, হাদিস নং/৩৭৩১। মোহরে নবুওয়াত হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

Comments

One response to “রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর মোহরে নবুওয়াত”

Leave a Reply