মেহমানদারী হাদিস
মেহমানদারী হাদিস , এই অধ্যায়ে মোট = ৪৩ টি হাদীস (৭৪৫ – ৭৮৭) << আদাবুল মুফরাদ হাদীস কিতাবের মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ১০ মেহমানদারি
৩১০. অনুচ্ছেদঃ মেহমানের সমাদর এবং সশরীরে তাহাদের খেদমত করা।
৩১১. অনুচ্ছেদঃ মেহমানকে প্রদত্ত পাথেয়।
৩১২. অনুচ্ছেদঃ মেহমানদারি তিন দিন।
৩১৩. অনুচ্ছেদঃ মেহমান আপ্যায়নকারীর অসুবিধা করে থাকিবে না।
৩১৪. অনুচ্ছেদঃ মেহমান ভোরবেলা আপনার আপনার উপস্থিত হলে।
৩১৫. অনুচ্ছেদঃ বঞ্চিত অবস্থায় মেহমানের ভোর হলে।
৩১৬. অনুচ্ছেদঃ সশরীরে মেহমানের খেদমত করা।
৩১৭. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি মেহমানের সামনে আহার পরিবেশন করে নিজে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলে।
৩১৮. অনুচ্ছেদঃ কারো নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করা।
৩১৯. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক জিনিসের সওয়াব আছে, এমনকি কোন ব্যক্তির নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়া গ্রাসেও।
৩২০. অনুচ্ছেদঃ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা।
৩২১. অনুচ্ছেদঃ গীবতের উদ্দেশ্যে নয়, বরং পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির এরূপ বলাঃ অমুক কৃষ্ণকায়, খর্বাকৃতি বা দীর্ঘদেহী।
৩২২. অনুচ্ছেদঃ যিনি মনে করেন, ঘটনা বা উপমা বর্ণনা দোষের নয়।
৩২৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ গোপন রাখে।
৩২৪. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির মন্তব্য লোক ধ্বংস হয়ে গেলো।
৩২৫. অনুচ্ছেদঃ মুনাফিককে ‘সায়্যিদ’ [নেতাবারানি] বলে সম্বোধন করিবে না।
৩২৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনলে কি বলবে?
৩২৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে যেন না বলে যে, সে তা জানে নাসায়ী, তা আল্লাহ জানেন।
৩২৮. অনুচ্ছেদঃ রংধনু।
৩২৯. অনুচ্ছেদঃ ছায়াপথ।
৩৩০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি এভাবে বলিতে অপছন্দ করেঃ হে আল্লাহ আমাকে তোমার রহমতের অবস্থান স্থলে রাখো।
৩৩১. অনুচ্ছেদঃ তোমরা কাল-প্রবাহকে গালি দিও না।
৩৩২. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রস্থানকালে তার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে না তাকায়
৩৩৩. অনুচ্ছেদঃ এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির এরূপ বলা, তোমার সর্বনাশ হোক।
৩৩৪. অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা নির্মাণ।
৩৩৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির কথা, “নাসায়ী, তোমার পিতার শপথ”।
৩৩৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারে নিকট কিছু চাইলে চাইবে, তার চাটুকারিতা করিবে না।
৩৩৭. অনুচ্ছেদঃ কারো মন্তব্য, তোমার শত্রু নিপাত যাক।
৩৩৮. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন এভাবে না বলে, আল্লাহ ও অমুক।
৩১০. অনুচ্ছেদঃ মেহমানের সমাদর এবং সশরীরে তাহাদের খেদমত করা।
৭৪৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এলেন। তিনি [খাদ্যের জন্য] তার স্ত্রীগণের নিকট পাঠান। তারা বলেন, আমাদের কাছে পানি ছাড়া আর কিছু নাই। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ কে তার মেহমানদারি করিবে? আনসারদের একজন বলেন, আমি। তিনি তাকে নিয়ে তার স্ত্রীর কাছে গিয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মেহমানকে সম্মান করো। স্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েদের রাতের খাবার ছাড়া আমাদের আর কিছু নাই। আনসারী বলেন, তুমি খাবার তৈরি করো, বাতি ঠিক করো এবং তোমার বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন প্রবোধ দিয়ে তাহাদের ঘুম পাড়িয়ে দিও। মহিলা তার খাবার তৈরি করিলেন, বাতি ঠিকঠাক করিলেন এবং তার বাচ্চাদের ঘুম পাড়ালেন। অতঃপর তিনি উঠে বাতি ঠিক করার ছুতোয় তা নিভিয়ে দিলেন। তারা এমন ভাব দেখালেন যে, তারা যেন মেহমানের সাথে আহার করছেন। অথচ রাতে তারা উপোসই থাকলেন। ভোর হলে তারা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট গেলেন। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের গত রাতের কার্যকলাপে হেসেছেন বা অবাক হয়েছেন এবং আয়াত নাযিল করেছেনঃ “তারা অভাবগ্রস্ত হলেও নিজেদের উপর অন্যদের অগ্রাধিকার দেয়। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম”। [সূরা হাশর : ৯]
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১১. অনুচ্ছেদঃ মেহমানকে প্রদত্ত পাথেয়।
৭৪৬. আবু শুরাইহ আল-আদাবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
যখন নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, তখন আমার দুই কান শুনেছে এবং দুই চোখ দেখেছে। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন পুরস্কারসহ মেহমানের আপ্যায়ন ও সমাদর করে। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তার পুরস্কার কি? তিনি বলেনঃ এক রাত ও এক দিনের জন্য উন্নত খাবার পরিবেশন করা। আর তিন দিন পর্যন্ত সাধারণ মেজবানীই যথেষ্ট। এর চেয়েও বেশী দিন অবস্থান করলে সেই মেহমানদারি হলে বদান্যতা। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন ভালো কথা বলে, অন্যথায় চুপ থাকে।
-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১২. অনুচ্ছেদঃ মেহমানদারি তিন দিন।
৭৪৭. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মেহমানদারি করিতে হইবে তিন দিন। তার অধিক করা হলে তা দান হিসেবে গণ্য হইবে।
[আবু দাউদ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৩. অনুচ্ছেদঃ মেহমান আপ্যায়নকারীর অসুবিধা করে থাকিবে না।
৭৪৮. আবু শুরায়হ আল-কাবী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অন্যথা নীরব থাকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর-ও আখেরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের সমাদর করে। তার বিশেষ মেহমানদারি হচ্ছে এক দিন এক রাত, আর স্বাভাবিক মেহমানদারি হচ্ছে তিন দিন। তার অতিরিক্ত যা করা হইবে তা বদান্যতারূপে গণ্য হইবে। আর মেহমানের পক্ষে মেজবানের বাড়িতে এতো অধিক দিন অবস্থান করা উচিৎ নয় যাতে সে অসুবিধা বোধ করে।
-[আহমাদ, তাহাবী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৪. অনুচ্ছেদঃ মেহমান ভোরবেলা আপনার আপনার উপস্থিত হলে।
৭৪৯. মিকদাম আবু কারীমা আস-সামী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন রাতের বেলা আগত মেহমানের মেহমানদারি করা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য। আর রাতের বেলা তার নিকট মেহমান অবস্থান করলে, সে তার জন্য ঋণস্বরূপ। এখন সে ইচ্ছা করলে এই ঋণ [মেহমানকে পানাহার করানো] পরিশোধ করুক অথবা চাইলে তা ত্যাগ করুক।
-[আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ, দারিমি, হাকিম, তাহাবী, আহমাদ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৫. অনুচ্ছেদঃ বঞ্চিত অবস্থায় মেহমানের ভোর হলে।
৭৫০. উকবা ইবনি আমের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদেরকে বাইরে পাঠিয়ে থাকেন। আমরা এমন সব গোত্রের এলাকায় অবতরণ করি যারা আমাদের মেহমানদারি করে না। এ ব্যাপারে আপনার সিদ্ধান্ত কি? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি তোমরা কোন গোত্রের এলাকায় অবতরণ করো এবং তারা সাধ্যমত তোমাদের জন্য মেহমানদারির ব্যবস্থা করে তবে তা সাদরে গ্রহণ করো। কিন্তু যদি তারা [অনুরূপ কোন ব্যবস্থা] না করে, তবে তাহাদের থেকে এতোটা হক আদায় করে নাও যা দেয়া তাহাদের উচিত ছিল।
-[বোখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজী, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৬. অনুচ্ছেদঃ সশরীরে মেহমানের খেদমত করা।
৭৫১. সাহল ইবনি সাদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
আবু উসাইদ সাইদী [রাঃআঃ] তার বাসর রাতে নাবী [সাঃআঃ]-কে দাওয়াত দিলেন। তার নববধূ সেদিন তাহাদের আহার পরিবেশন করেন। স্ত্রী বলেন, আপনারা কি জানেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য সেদিন আমি ছিলে-চেঁছে কি পরিবেশন করেছিলাম? রাতের বেলা আমি তাহাঁর জন্য টাটকা খেজুর একটি মাটির পাত্রে ভিজিয়ে রেখেছিলাম
-[বোখারী, মুসলিম]। মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৭. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তি মেহমানের সামনে আহার পরিবেশন করে নিজে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলে।
৭৫২. নুআইম ইবনি কানাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি আবু যার [রাঃআঃ]-এর নিকট এসে তাকে ঘরে পেলাম না। আমি তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, আবু যার [রাঃআঃ] কোথায়? তিনি বলেন, কোন কাজে বাইরে গিয়েছেন, এখনই আপনার সাক্ষাতে এসে যাবেন। অতএব আমি তার অপেক্ষায় বসে থাকলাম। তিনি দু’টি উটসহ আসলেন, যার একটির পিছনে অপরটি বাধা এবং প্রতিটির ঘাড়ে ছিল একটি করে মশক। তিনি সেই দু’টি নামালেন, অতঃপর এলেন। আমি বললাম, হে আবু যার! যাদের সাথে আমি দেখা-সাক্ষাত করি তাহাদের মধ্যে আমার কাছে আপনার চেয়ে অধিক প্রিয় কেউ নাই। আবার তাহাদের মধ্যে আপনার চেয়ে অধিক অপ্রিয়ও আমার কাছে কেউ নাই। তিনি বলেন, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কোরবান হোক। এই দু’টি বিপরীত জিনিস একত্র হলো কি করে। তিনি বলেন, আমি জাহিলী যুগে একটি কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিয়েছি। আমার আশংকা হয় যে, আমি আপনার সাথে সাক্ষাত করলেই আপনি বলবেন, তোমার তওবা করার বা নিস্কৃতি লাভের কোন সুযোগ নাই। কিন্তু আমি আকাঙ্খা করতাম যে, আপনি বলবেন, তোমার তওবা করার ও নিস্তার লাভের উপায় আছে। তিনি বলেন, তুমি কি এটি জাহিলী যুগে করেছিলে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেন, অতীতের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করিয়াছেন। তিনি তার স্ত্রীকে বলেন, আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসো। মহিলা অসম্মত হলো। তিনি পুনরায় তাকে আদেশ করলে এবারও সে অস্বীকার করলো। শেষে দু’জনের কথা কাটাকাটির স্বর উচ্চ মাত্রায় পৌঁছলো। তিনি বলেন, এই যে! তোমরা তো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বক্তব্য গণায় ধরো না। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের সম্পর্কে কি বলেছেন? তিনি বলেছেনঃ “নিশ্চয় নারী হচ্ছে পাঁজরের বাঁকা হাড়। তুমি যদি তা সোজা করিতে চাও তবে তাকে খানখান করে ফেলবে। আর তুমি যদি তাহাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করে যাও, তবুও তাহাদের বাঁকা স্বভাব বিদ্যমান থাকিবেই”। মহিলাটি চলে গেলো এবং সারীদ [ঝোলে ভিজানো রুটি] নিয়ে বিড়ালের মত চুপিসারে ফিরে এলো। আবু যার [রাঃআঃ] আমাকে বলেন, তুমি খাও, আমার কথা চিন্তা করো না। আমি রোযা আছি। অতঃপর তিনি নামাযে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ধীরেসুস্থে নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি আহার করিলেন। আমি বললাম, ইন্না লিল্লাহ! আমি কখনও আশংকা করিনি যে, আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলবেন! তিনি বলেন, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কোরবান হোক! তুমি সাক্ষাত করার সময় থেকে আমি তোমাকে কোন মিথ্যা কথা বলিনি। আমি বললাম, আপনি কি আমাকে বলেননি যে, আপনি রোযাদার? তিনি বলেন, হাঁ, আমি এই মাসে তিন দিন রোযা রেখেছি। আমার জন্য তার সওয়াব লেখা হয়েছে এবং আমার জন্য খাদ্য গ্রহণ হালাল হয়ে গেছে।
[নাসায়ী, দারিমি, আহমাদ হা/২১৬৬৫] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩১৮. অনুচ্ছেদঃ কারো নিজ পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করা।
৭৫৩. সাওবান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ “কোন ব্যক্তির ব্যয়কৃত সর্বোত্তম দীনার [মুদ্রা] হলো সেটি যা সে তার পরিবারের জন্য খরচ করে, যা সে আল্লাহর পথের [জিহাদকারী] তার সঙ্গী-সাথীদের জন্য খরচ করে এবং যা সে আল্লাহর পথে [জিহাদে] তার জন্তুযানের জন্য খরচ করে”। অধস্তন রাবী আবু কিলাবা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, [ঊর্ধতন রাবী] পরিবার-পরিজনের কথা প্রথমে উল্লেখ করিয়াছেন। যে ব্যক্তি তার ছোট ছোট সন্তান-সন্ততির জন্য ব্যয় করে মহান আল্লাহ তাহাদেরকে আত্মনির্ভরশীল না করা পর্যন্ত, তার চেয়ে অধিক উত্তম পুরস্কার লাভের যোগ্য আর কে হইতে পারে?
[মুসলিম] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৪. আবু মাসউদ আল-বদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় তার পরিবার-পরিজনের জন্য যে সম্পদ ব্যয় করে তা তার জন্য দান-খয়রাত হিসেবে গণ্য।
-[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৫৫. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমার কাছে একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তুমি নিজের জন্য খরচ করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি দীনার আছে। তিনি বলেনঃ তা তোমার খাদেমের জন্য বা সন্তানের জন্য খরচ করো। সে বললো, আমার কাছে আরো একটি আছে। তিনি বলেনঃ তা আল্লাহর পথে রেখে দাও। আর তা হচ্ছে সর্বনিকৃষ্ট দীনার।
[আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমাদ; আবু হুরাইরা সূত্রে] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
৭৫৬. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি চারটি দীনারের [স্বর্ণ মুদ্রা] মধ্য থেকে একটি দীনার দীন-দুঃখীকে দান করলে, একটি দীনার দ্বারা গোলামকে দাসত্বমুক্ত করলে, একটি দীনার আল্লাহর পথে খরচ করলে এবং একটি দীনার তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করলে। এগুলোর মধ্যে যে দীনারটি তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করেছে সেটিই সবোৰ্ত্তম।
-[মুসলিম, আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমাদ, হাকিম, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩১৯. অনুচ্ছেদঃ প্রত্যেক জিনিসের সওয়াব আছে, এমনকি কোন ব্যক্তির নিজ স্ত্রীর মুখে তুলে দেয়া গ্রাসেও।
৭৫৭. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলেনঃ তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যা-ই খরচ করো, তোমাকে তার সওয়াব অবশ্যই দেয়া হইবে, এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও তার জন্যও।
\[বোখারী, মুসলিম] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২০. অনুচ্ছেদঃ রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দোয়া করা।
৭৫৮. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আমাদের বরকতময় মহামহিম প্রভু রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করিতে থাকেনঃ কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিবো? [কে আছে এমন, যে আমার কাছে দোয়া করিবে এবং আমি তার দোয়া কবুল করবো]? কে আছে এমন, যে আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করিবে এবং আমি তা দান করবো? কে আছে এমন, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে এবং আমি তাকে ক্ষমা করবো।
-[বোখারী, মুসলিম, দারিমি] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২১. অনুচ্ছেদঃ গীবতের উদ্দেশ্যে নয়, বরং পরিচয় দানের উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তির এরূপ বলাঃ অমুক কৃষ্ণকায়, খর্বাকৃতি বা দীর্ঘদেহী।
৭৫৯. আবু রুহম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তিনি ছিলেন বৃক্ষতলে [হুদাইবিয়ায়] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট বাইআতকারী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেন, আমি তাবুকের যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করি। এক রাতে আমি নৈশ প্রহরায় দাঁড়ালাম। আমি তাহাঁর নিকটেই পাহারা দিচ্ছিলাম। আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম এবং জেগে থাকতে চেষ্টা করলাম। আমার জন্তুযান তাহাঁর জন্তুযানের কাছাকাছি এসে পড়লে আমার আশংকা হলো, কখন জানি আমার জন্তুযান আরও কাছাকাছি চলে এলে পাদানিতে রাখা তাহাঁর পায়ে আমার জন্তুযানের ধাক্কায় ব্যাথা পান। তাই আমি আমার জন্তুযানকে হটাতে থাকলাম। শেষে রাতের কোন এক অংশে আমার চোখে তন্দ্রা এলো এবং আমার জন্তুযান রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্তুযানকে ধাক্কা দিলো। তখনো তাহাঁর পা পদানিতে ছিল এবং তা আমার পায়ের সাথে লেগে গেলো। কিন্তু তবুও আমার ঘুম ভাংলো না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ‘সজাগ হও’ কথায় আমার ঘুম ছুটলো। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ সামনে চলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে গিফার গোত্রের কে কে যুদ্ধে যোগদান থেকে পেছনে রয়ে গেছে সেই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে লাগলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেনঃ ঐ যে গৌর বর্ণ দীর্ঘদেহী যাদের চোয়ালে সামান্য দাড়ি আছে তারা কি করেছে? আমি তাহাদের পেছনে থেকে যাওয়ার কথা তাহাঁকে জানালাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ ঐ যে কৃষ্ণবর্ণ খর্বাকৃতির লোকগুলো কি করেছে, শাবকা শাদাখ নামক পানির উৎসে যাদের পশুপাল আছে? আমি গিফার গোত্রের মধ্যে আমার স্মৃতিচারণ করলাম, কিন্তু সেই গোত্রে তেমন কাউকে স্মরণ করিতে পারলাম না। আমার স্মরণ হলো যে, তারা তো আসলাম গোত্রের লোক। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ। তারা তো আসলাম গোত্রের লোক। তিনি বলেনঃ তাহাদের কোন সুচতুর কর্মঠ লোককে তার জন্তুযানে আরোহণ করিয়ে আল্লাহর রাস্তায় পাঠাতে তাহাদের কিসে বাধা দিলো? আমার একথা চিন্তা করিতে কষ্ট হয় যে, কুরাইশ বংশীয় মুহাজিরগণ, আনসারগণ, গিফার গোত্রের লোক এবং আসলাম গোত্রের কেউ যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে পিছনে থেকে যাবে।
[আহমাদ হা/১৯২৮২] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৭৬০. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলো। তিনি বলেনঃ গোত্রের মন্দ লোক। অতঃপর সে ভেতরে প্রবেশ করলে তিনি তার সাথে প্রসন্ন বদনে সাক্ষাত করেন। [পরে] আমি তাহাঁকে বললে তিনি বলেনঃ আল্লাহ অশ্লীলভাষীকে এবং অশ্লীল আচরণকারীকে পছন্দ করেন না।
[বোখারী, মুসলিম] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৬১. আয়েশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
সাওদা [রাঃআঃ] মুযদালিফার রাতে যাত্রা করার জন্য নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। সাওদা [রাঃআঃ] ছিলেন মন্থর গতিসম্পন্ন স্থূলদেহী মহিলা। সুতরাং তিনি [সাঃআঃ] তাকে অনুমতি দিলেন।
-[বোখারী, মুসলিম, ইবনি মাজাহ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২২. অনুচ্ছেদঃ যিনি মনে করেন, ঘটনা বা উপমা বর্ণনা দোষের নয়।
৭৬২. ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন জিরানা নামক স্থানে গনীমতের মাল বন্টন করেন তখন সেখানে লোকজনের প্রচণ্ড ভিড় হয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ তাহাঁর কোন এক বান্দাকে এক সম্প্রদায়ের নিকট পাঠান। তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং নির্যাতন করে আহত করে। তিনি তার কপাল থেকে রক্ত মুছছেন আর বলছেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي، فَإِنَّهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
“হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায়কে তুমি ক্ষমা করো, কেননা তারা অজ্ঞ”।
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআঃ] বলেন, আমি যেন দিব্যি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখিতে পাচ্ছি, তিনি সেই কপাল মোছায় রত ব্যক্তির কাহিনী বর্ণনা করছেন।
-[বোখারী, মুসলিম, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, ইবনি হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ হাসান হাদিস
৩২৩. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ গোপন রাখে।
৭৬৩. আবুল হাইসাম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
একদল লোক উকবা ইবনি আমের [রাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, আমাদের কতক প্রতিবেশী আছে, যারা মদ্যপান করে এবং বদ কাজে লিপ্ত থাকে। আমরা কি তাহাদের বিরুদ্ধে শাসকের নিকট অভিযোগ উত্থাপন করবো? তিনি বলেন, না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ দেখিতে পেয়ে তা গোপন রাখলে সে যেন জীবন্ত প্রোথিত কন্যা সন্তানকে কবর থেকে তুলে জীবন দান করলো।
-[আবু দাউদ, তাবারানি] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২৪. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির মন্তব্য লোক ধ্বংস হয়ে গেলো।
৭৬৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে বলিতে শোন, লোকজন ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে [বুঝবে] সে সর্বাধিক ধ্বংসপ্রাপ্ত।
-[মুসলিম, আবু দাউদ, মালিক, ইবনি হিব্বান, মুসনাদ আবু আওয়ানা, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২৫. অনুচ্ছেদঃ মুনাফিককে ‘সায়্যিদ’ [নেতাবারানি] বলে সম্বোধন করিবে না।
৭৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা মুনাফিককে ‘নেতা’ বলো না। কেননা সে যদি তোমাদের নেতা হয়ে যায়, তাহলে তোমরা তোমাদের মহিমান্বিত প্রভুকে অসন্তুষ্ট করলে।
[আবু দাউদ, হাকিম] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ অন্যের মুখে নিজের প্রশংসা শুনলে কি বলবে?
৭৬৬.l আদী ইবনি আরতাত [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কখনো নাবী [সাঃআঃ]-এর কোন সাহাবীর পূত-পবিত্রতা বর্ণনা করা হলে তিনি বলিতেন,
اللَّهُمَّ لَا تُؤَاخِذْنِي بِمَا يَقُولُونَ، وَاغْفِرْ لِي مَا لَا يَعْلَمُونَ
“হে আল্লাহ! তারা যা বলে সেজন্য আমাকে অভিযুক্ত করো না এবং তারা যে ব্যাপারে জ্ঞাত নয় সে ব্যাপারে আমাকে ক্ষমা করো”।
[বাযযার] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৭. আবু কিলাবা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবু আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] আবু মাসউদ [রাঃআঃ]-কে বলেন অথবা আবু মাসউদ [রাঃআঃ] আবু আবদুল্লাহ [রাঃআঃ]-কে বলেন, “অলিক ধারণা-অনুমান” সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কি বলিতে শুনেছেন? তিনি বলেন, [তাবারানি] লোকটির কতই না মন্দ বাহন।
[আবু দাউদ, আহমাদ, তাবাকাত ইবনি সাদ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৬৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমের [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
হে আবু মাসউদ! “তারা আন্দাজ-অনুমান করেছে” এরূপ কথা সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কি বলিতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমি তাহাঁকে বলিতে শুনেছিঃ তা লোকের অত্যন্ত মন্দ বাহন। আমি তাহাঁকে আরো বলিতে শুনেছিঃ মুমিন ব্যক্তিকে অভিসম্পাত করা তাকে হত্যা করার সমতুল্য।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২৭. অনুচ্ছেদঃ কেউ কোন বিষয়ে অজ্ঞ থাকলে যেন না বলে যে, সে তা জানে নাসায়ী, তা আল্লাহ জানেন।
৭৬৯. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তোমাদের কেউ যেন [তার অজ্ঞাত বিষয়ে মন্তব্য করার পর] না বলে, সে তা জানে নাসায়ী, আল্লাহ তা জানেন। অথচ আল্লাহর জ্ঞানে হয়তো অন্যরূপ আছে। সে যেন [ভাবছে] আল্লাহ যা জানেন না তা তাহাঁকে জানাচ্ছে। আল্লাহর কাছে তা [অর্থাৎ জিজ্ঞাসিত বিষয়ে অজ্ঞ হওয়া সত্বেও উত্তর দিতে চাওয়া] গুরুতর ব্যাপার।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩২৮. অনুচ্ছেদঃ রংধনু।
৭৭০. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
ছায়াপথ হলো আসমানের দরজাসমূহের মধ্যকার একটি দরজা এবং রংধনু হলো নূহ [আঃ]-এর সম্প্রদায় মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত হওয়ার পর নিরাপত্তার প্রতীক।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩২৯. অনুচ্ছেদঃ ছায়াপথ।
৭৭১. আবুত তুফাইল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
ইবনুল কাওয়া [রাহিমাহুল্লাহ] আলী [রাঃআঃ]-কে ছায়াপথ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তা হলো আসমানের প্রবেশদ্বার এবং নৃহের বন্যায় প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের জন্য আকাশের ঐ দ্বারই খুলে দেয়া হয়েছিল [৫৪ : ১১ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত]।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৭২.ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত.
রংধনু হলো পৃথিবীবাসীর জন্য মহাপ্লাবনের পর নিরাপত্তার প্রতীক এবং ছায়াপথ হলো আকাশের একটি দরজা, যা থেকে আকাশ বিদীর্ণ হইবে।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩০. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি এভাবে বলিতে অপছন্দ করেঃ হে আল্লাহ আমাকে তোমার রহমতের অবস্থান স্থলে রাখো।
৭৭৩. আবুল হারিস কিরমানী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আমি এক ব্যক্তিকে আবু রাজা [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট বলিতে শুনিয়াছি, আমি আপনাকে সালাম জানাচ্ছি এবং দোয়া করছি যেন আল্লাহ তাহাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থানে আপনাকে ও আমাকে একত্র করেন। তিনি বলেন, সেই সামর্থ্য কি কারো আছে? তিনি জিজ্ঞেস করেন, তাহাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থান কি? সে বললো, জান্নাত। আবু রাজা [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, তুমি সঠিক বলোনি। লোকটি বললো, তবে তাহাঁর স্থায়ী রহমাতের স্থান কি? তিনি বলেন, আমি বললাম, বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩১. অনুচ্ছেদঃ তোমরা কাল-প্রবাহকে গালি দিও না।
৭৭৪. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, হায় সর্বনাশ কাল। কেননা কাল তো স্বয়ং আল্লাহ [সৃষ্ট]
। [বোখারী, মুসলিম, দারিমি, নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৭৫. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, হায় সর্বনাশ কাল। মহা মহিমান্বিত আল্লাহ বলেন, কাল তো আমিই [সৃষ্টি করেছি]। আমিই রাত ও দিন পাঠাই। যখন আমি চাইবো তাকে কবজা করবো। আর কেউ যেন আঙ্গুরকে কারম না বলে। কেননা কারম হলো মুমিন ব্যক্তি।
-[বোখারী, মুসলিম, আহমাদ, দারিমি, মুসনাদ আবু আওয়া নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩২. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রস্থানকালে তার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে না তাকায়
৭৭৬. মুজাহিদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
কোন ব্যক্তির প্রতি অপর ব্যক্তির তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে তাকানো অথবা তার ফিরে যাবার সময় তার দিকে সন্ধানী দৃষ্টিতে তাকানো অথবা তাকে জিজ্ঞেস করা, তুমি কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় যাবে, এরূপ আচরণ আপত্তিকর।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৩৩৩. অনুচ্ছেদঃ এক ব্যক্তিকে অপর ব্যক্তির এরূপ বলা, তোমার সর্বনাশ হোক।
৭৭৭. আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে কোরবানীর একটি উট হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে দেখে বলেনঃ উটের পিঠে আরোহণ করো। লোকটি বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি পুনরায় বলেন, এর পিঠে আরোহণ করো। সে বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি বলেনঃ তুমি এর পিঠে আরোহণ করো। সে বললো, এটি কোরবানীর উট। তিনি বলেনঃ তোমার অকল্যাণ হোক, তুমি এর পিঠে আরোহণ করো। –
[বোখারী, মুসলিম, তিরমিজী, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ, দারিমি, ইবনি খুজাইমাহ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৭৮. ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি তাকে বললো, আমি রুটি ও গোশত খেয়েছি। আমাকে কি উযু করিতে হইবে? তিনি বলেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়। তুমি কি পাক জিনিস আহার করে উযু করিবে?
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৭৯. জাবের [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হুনাইন যুদ্ধের দিন জিরানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তিনি বিলালের কোলে [কাপড়ের মধ্যে রাখা] সোনা বিতরণ করছিলেন। এক ব্যক্তি তাহাঁর নিকট এসে বললো, ইনসাফ করুন। আপনি ইনসাফ করছেন না। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়। আমি যদি ইনসাফ না করি তবে ইনসাফ আর কে করিবে? উমার [রাঃআঃ] বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাকে অনুমতি দিন আমি এই মুনাফিকের ঘাড়ে আঘাত হানি [হত্যা করি]। তিনি বলেনঃ সে তার সঙ্গী-সাথীসহ এখানে আছে। তারা কুরআন পড়ে কিন্তু তা তাহাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে না। তারা ধনুক থেকে তীর বের হয়ে যাওয়ার গতিতে দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে।
[বোখারী, মুসলিম, মুসনাদ আবু আওয়া নাসায়ী] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৮০. বশীর ইবনি মাবাদ আস-সাদূসী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তার পূর্বনাম ছিল জাহম ইবনি মাবাদ। তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট হিজরত করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেঃ তোমার নাম কি? তিনি বলেন, জাহম [দুর্দশা]। তিনি বলেনঃ তুমি হচ্ছে বশীর [সুসংবাদদাতা]। তিনি বলেন, একদা আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে হাঁটছিলাম। তিনি মুশরিকদের কবরস্থানের নিকট পৌঁছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ হারিয়েছে। তিনি তিনবার এরূপ বলেন। অতঃপর তিনি মুসলমানদের কবরস্থানে পৌছে বলেনঃ এরা প্রভূত কল্যাণ লাভ করেছে। তিনি তিনবার এরূপ বলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর দৃষ্টি এক ব্যক্তির উপর পতিত হলো। সে জুতা পরিহিত অবস্থায় কবরস্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেনঃ হে জুতাধারী! তোমার জুতা খুলে ফেলে দাও। লোকটি তাকালো। সে নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখে তৎক্ষণাৎ তার জুতাজোড়া খুলে ফেলে দিলো।
[আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনি মাজাহ, আহমাদ] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩৪. অনুচ্ছেদঃ দালান-কোঠা নির্মাণ।
৭৮১. মুহাম্মাদ ইবনি হেলাল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
তিনি দেখেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণের হুজরাসমূহে খেজুর পাতার ছাউনি এবং বেড়া শুষ্ক ঘাস বা খড়ের ছিল। আমি মুহাম্মাদ ইবনি হেলালকে আয়েশা [রাঃআঃ]-এর ঘর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলেন, তার ঘরের দরজা ছিল সিরিয়া অভিমুখী। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, দরজার কপাট কি একটি ছিল না দুইটি? তিনি বলেন, একটি। আমি বললাম, তা কি কাঠের ছিল? তিনি বলেন, সাইপ্রাস অথবা সেগুন কাঠের।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৮২. আবু হুরাইরা [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ লোকজন নকশী কাঁথার মত কারুকার্য মণ্ডিত ঘর-বাড়ি তৈরি না করা পর্যন্ত কিয়ামত হইবে না।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩৫. অনুচ্ছেদঃ কোন ব্যক্তির কথা, “নাসায়ী, তোমার পিতার শপথ”।
৭৮৩. আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, ইয়া রসূলাল্লাহ! কোন ধরনের দান সর্বাধিক পুণ্যের? তিনি বলেনঃ তুমি সুস্থ ও অর্থের প্রয়োজন থাকা অবস্থায় এবং দারিদ্র্যের আশংকা করছে, ধনী হওয়ার আশাও পোষণ করছো, এমতাবস্থায় যে দান করিবে। আর ঐ সময় পর্যন্ত বিলম্ব করো না, যখন তোমার প্রাণ হইবে কণ্ঠাগত, আর তুমি বলবে, অমুককে এতো, অমুককে এতো দিলাম। তা তো তখন অপরের হয়েই গেছে।
[বোখারী, মুসলিম, আহমাদ, ইবনি মাজাহ, ইবনি খুজাইমাহ, ইবনি হিব্বান] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ অন্যান্য
৩৩৬. অনুচ্ছেদঃ কেউ কারে নিকট কিছু চাইলে চাইবে, তার চাটুকারিতা করিবে না।
৭৮৪. আবদুল্লাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
তোমাদের কেউ প্রয়োজনে কারো কাছে কিছু চাইলে যেন সহজভাবে চায় [বারংবার না চায়]। কেননা তার তাকদীরে যা নির্ধারিত চাছে তা সে পাবেই। তোমাদের কেউ যেন তার কোন সহযোগীর নিকট গিয়ে তার চাটুকারিতা না করে। তা করলে সে যেন তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিলো।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৭৮৫। আবু আযযা ইয়াসার ইবনি আবদুল্লাহ আল-হুযালী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ যখন তাহাঁর কোন বান্দাকে নির্দিষ্ট কোন স্থানে মৃত্যুদান করিতে চান, তখন সেখানে [যাওয়ার জন্য] সেই বান্দার কোন প্রয়োজন সৃষ্টি করে দেন।
[তিরমিজী, আবু দাউদ, হাকিম] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
৩৩৭. অনুচ্ছেদঃ কারো মন্তব্য, তোমার শত্রু নিপাত যাক।
৭৮৬. আবু আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] রাতে আমাদের এখানে থাকলেন। তিনি একটি উজ্জল তারকার দিকে তাকিয়ে বলেন, সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আবু হুরাইরার প্ৰাণ! কোন কোন সম্প্রদায়ের দখলে পার্থিব শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব আসলে তার চাইবে যে, তারা যদি ঐ তারকার সাথে মিলিত হইতে পারতো এবং শাসন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাহাদের না থাকতো। অতঃপর তিনি আমার দিকে ফিরে বলেন, তোমার শত্রু নিপাত যাক। প্রাচ্যবাসীরা কি তাহাদের সেই প্রাচ্যের রাজত্ব-কর্তৃত্বে বিভোর হয়ে আছে? আমি বললাম, হাঁ, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তাহাদের অমঙ্গল করুন এবং বিহিত ব্যবস্থা করুন। আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] বলেন, সেই সত্তার শপথ যার হাতে আবু হুরাইরার প্রাণ! তাহাদেরকে গৌর বর্ণের প্রশস্ত চেহারাবিশিষ্ট ক্রুর স্বভাবের লোকেরা এমনভাবে হাঁকিয়ে বেড়াবে যে, কৃষকদের তাহাদের খামারে এবং পশু পালকদেরকে তাহাদের পশুপালে পৌঁছিয়ে দিবে।
[মুসনাদ আহমাদ, ইবনি হিব্বান] মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
৩৩৮. অনুচ্ছেদঃ কেউ যেন এভাবে না বলে, আল্লাহ ও অমুক।
৭৮৭। মুগীছ ইবনি উমার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীত
ইবনি উমার [রাঃআঃ] তাকে তার মনিব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আল্লাহ এবং অমুক। ইবনি উমার [রাঃআঃ] বলেন, এভাবে বলো না। তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শামিল করো না। বরং তুমি বলো, আল্লাহর পর অমুক।
মেহমানদারী হাদিস এর তাহকিকঃ দুর্বল মাওকুফ
Leave a Reply