মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় ও বর্জনীয় -মৃত্যুসংবাদ, গোসল
মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় ও বর্জনীয় -মৃত্যুসংবাদ, গোসল >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ৮, অনুচ্ছেদঃ (১২-২৫)=২৫টি
১২. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যুসংবাদ ফলাও করে প্রচার করা মাকরূহ
১৩. অনুচ্ছেদঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ করা
১৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত লোককে চুমা দেয়া
১৫. অনুচ্ছেদঃ লাশের গোসল দেয়া
১৬. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কস্তুরি ব্যবহার করা
১৭.অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা
১৮. অনুচ্ছেদঃ কাফনের জন্য যেরূপ কাপড় উত্তম
১৯. অনুচ্ছেদঃ [উত্তম কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া]
২০. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কি পরিমাণ কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়েছিল?
২১. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনদের জন্য খাবার তৈরী করে পাঠানো
২২. অনুচ্ছেদঃ বিপদের সময় কপালে হাত চাপড়ানো ও জামার বুক ছেঁড়া নিষেধ
২৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা মাকরূহ্
২৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা মাকরূহ
২৫. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করার অনুমতি
১২. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যুসংবাদ ফলাও করে প্রচার করা মাকরূহ
৯৮৪. আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সাবধান! তোমরা মৃত্যুর খবর ঘোষণা থেকে নিবৃত্ত থাক। যেহেতু এটা জাহিলী যুগের কাজ। আবদুল্লাহ্ [রাদি.] বলেন, নাঈ শব্দের অর্থ মৃত্যুর খবর ঢালাও করে ঘোষণা করা।
যঈফ, তাখরীজু ইসলাহিল মাসাজিদ [১০৮] এই অনুচ্ছেদে হুযাইফা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৯৮৫. আব্দুল্লাহ ইবনিল ওয়ালীদ হইতে বর্ণীতঃ
সাঈদ ইবনি আব্দুর রহমান আল-মাখযুমী আব্দুল্লাহ ইবনিল ওয়ালীদ হইতে তিনি সুফিয়ান সাওরী হইতে তিনি আবু হামযাহ হইতে তিনি আল-কামা হইতে তিনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে একই রকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তা মারফুরূপে বর্ণনা করা হয়নি এবং তাতে আন-নাইউ আযানুন বিলমায়্যিত” এই কথারও উল্লেখ নেই।
যঈফ। আবু ঈসা বলেন, আবু হামযা হইতে আনবাসার রিওয়ায়াতের তুলনায় এই রিওয়ায়াতটি অনেক বেশী সহীহ। আৰূ হামযার নাম মাইমূন আল-আওয়ার। হাদীস বিশেষজ্ঞগণের মতে তিনি নির্ভরযোগ্য রাবী নন। আবু ঈসা বলেন, আবদুল্লাহ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি গরীব। একদল আলিম নাঈ মাকরুহ বলেছেন। তাহাদের মতে নাঈ হল লোকদের মাঝে এই বলে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যে, অমুক ব্যক্তি মারা গেছে। অতএব তারা যেন তার জানাযায় উপস্থিত হয়। কিছু আলিম বলেছেন, মৃতের ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনকে তার মৃত্যুর সংবাদ দেয়াতে কোন অপরাধ নেই। ইবরাহীম নাখঈ বলেন, আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যুসংবাদ দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
৯৮৬. হুযাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমার মৃত্যু হলে এই বিষয়ে তোমরা কোন ঘোষণা দিবে না। আমার ভয় হয় যে, এটা মৃত্যুর সংবাদ প্রচার বলে ধরা হইবে। আমি মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে নিষেধ করিতে শুনিয়াছি।
-হাসান, ইবনি মা-জাহ [১৪৭৬]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১৩. অনুচ্ছেদঃ প্রথম আঘাতেই ধৈর্যধারণ করা
৯৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রকৃত ধৈর্য হচ্ছে বিপদের প্রথম ধাক্কাতেই ধৈর্যধারণ করা।
সহীহ, আহকা-মুল জানা-য়িজ [২২ পৃঃ], বুখারী, মুসলিম। আবু ঈসা হাদীসটিকে এই সূত্রে গারীব বলেছেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৮৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ বিপদের প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধরতে হইবে।
এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত লোককে চুমা দেয়া
৯৮৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উসমান ইবনি মাযউন [রাদি.]-কে মৃত অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] চুম্বন করেছিলেন আর কাঁদছিলেন। অথবা বর্ণনাকারী বলেন, তার দুচোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছিল।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৫৬]।ইবনি আব্বাস, জাবির ও আইশা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। তারা বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মারা যাবার পর আবু বাকার [রাদি.] তাকে চুমা দিয়েছেন।আইশা [রাদি.]-এর বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৫. অনুচ্ছেদঃ লাশের গোসল দেয়া
৯৯০. উম্মু আতিয়্যা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর এক কন্যা [যাইনাব] মারা গেলে তিনি বললেনঃ তোমরা বেজোড় সংখ্যায় তিন বার বা পাঁচ বার অথবা প্রয়োজনে এর চেয়েও অধিক বার তাকে গোসল দিতে পার। বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও। আর শেষবার পানিতে কর্পূর বা কিছু পরিমাণ কর্পূর ঢেলে দাও। তোমাদের গোসল করানো শেষ হয়ে গেলে আমাকে জানিয়ে দিও। অতএব, তার গোসল শেষ করে আমরা তাঁকে জানালাম। তিনি তাহাঁর লুঙ্গি আমাদের দিকে ছুড়ে দিলেন এবং বললেনঃ তাহাঁর শরীরে এটিকে জড়িয়ে দাও। হুশাইম বলেন, এদের [খালিদ, মানসূর] ব্যতীত অন্যদের, হয়ত হিশামও তাহাদের একজন, বর্ণনায় আছে যে, উম্মু আতিয়্যা [রাদি.] বলেন, আমরা তাহাঁর চুলকে তিন ভাগে বিন্যস্ত করলাম। হুশাইম বলেন, আমার ধারণায় তিনি এও বলেছেনঃ তাহাঁর চুলগুলোকে আমরা তাহাঁর পিছন দিকে ছেড়ে দিলাম।
হুশাইম বলেন, এদের মধ্যে খালিদ আমাকে হাফসা ও মুহাম্মাদ-উম্মু আতিয়্যা [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বললেনঃ তাহাঁর ডান পাশ দিযে তার ওযুর স্থানসমূহ হইতে গোসল শুরু কর।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৫৮], বুখারী, মুসলিম। উম্মু সুলাইম [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উম্মু আতিয়্যা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। ইবরাহীম নাখঈ [রঃ] বলেন, নাপাক ব্যক্তির গোসলের নিয়মের মতই মৃতের গোসল করানোর নিয়ম। ঈমাম মালিক [রঃ] বলেন, আমাদের মতে মৃত ব্যক্তির গোসল করানোর ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। আসল কাজ হচ্ছে তাকে পাকসাফ করা। ঈমাম শাফি [রঃ] বলেন, মালিক [রঃ] একটি অস্পষ্ট কথা বলেছেন যে, মৃত ব্যক্তিকে পরিষ্কার পানি বা অন্য কোন পানি দ্বারা গোসল করিয়ে তার দেহ হইতে ময়লা দূর করে দিলেই যথেষ্ট। কিন্তু আমার মতে মৃত ব্যক্তিকে তিন বা ততোধিক বার বেজোড় সংখ্যায় গোসল করানো মুস্তাহাব। তবে যেন তিন হইতে কম না হয়। কেননা, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তাকে তোমরা তিনবার অথবা পাঁচবার গোসল করাও। যদি তিনবারের কমেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে যায় এবং তাই যথেষ্ট হয়। তবে তাহাঁর এই বক্তব্য তিন বার বা পাঁচ বার-এর কোন অর্থ হয়না। এই বিষয়ে তিনি কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারিত করে দেননি একথা বলা যায়না। ফকীহগণও এরকম কথা বলেছেন। হাদীসের প্রকৃত মর্ম তারাই হৃদয়ংগম করিতে পারেন। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] বলেন, বরই পাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে হইবে এবং শেষবারে কর্পূর মিশ্রিত পানি দিয়ে। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৬. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কস্তুরি ব্যবহার করা
৯৯১. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কস্তুরি সবচাইতে উত্তম সুগন্ধি।
-সহীহ, মুসলিম।
এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৯২. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কস্তুরি প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বললেনঃ তোমাদের সুগন্ধিগুলোর মধ্যে এটা হলো সবচাইতে উত্তম সুগন্ধি।
-সহীহ, মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। এই অভিমত আহমাদ ও ইসহাকের। মৃতের জন্য কণ্ডুরি ব্যবহারকে অন্য একদল আলিম মাকরূহ বলেছেন। এই হাদীস আল-মুস্তামির ইবনির রাইয়্যানও আবু নাযরা হইতে, তিনি আবু সাঈদ [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইয়াহইয়া ইবনি সাইদ বলেন; আল-মুসতামির ইবনির রাইয়্যান ও খুলাইদ ইবনি জাফর দুজনেই নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭.অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করা
৯৯৩. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসল করিতে হইবে এবং লাশ বহন করার পর ওযু করিতে হইবে।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৬৩]। আলী ও আইশা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এটি মাওকূফ হিসেবেও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে। আলিমদের মাঝে লাশকে গোসল করানোর পর গোসল করার বিষয়ে মতের অমিল রহিয়াছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল সাহাবী ও অপরাপর আলিম বলেন, মৃত ব্যক্তিকে কোন লোক গোসল করানোরপরে তাকেও গোসল করিতে হইবে। কেউ কেউ বলেন, তাকে ওযু করিতে হইবে। মালিক ইবনি আনাস [রঃ] বলেন, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর নিজে গোসল করা মুস্তাহাব, আমি এটাকে বাধ্যতামূলক বলে মনে করি না। একই মত দিয়েছেন ঈমাম শাফিও। ঈমাম আহমাদ [রঃ] বলেন, মৃত ব্যক্তিকে যে লোক গোসল করাবে আমার ধারণা মতে তার উপর গোসল ওয়াজিব নয়, ওযুই তার জন্য যথেষ্ট হইবে। ইসহাক [রঃ] বলেন, অবশ্যই তাকে ওযু করিতে হইবে। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক [রঃ] বলেন, মৃত ব্যক্তিকে গোসল করানোর পর গোসলদানকারীর জন্য ওযু বা গোসল কোনটাই ওয়াজিব নয়। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮. অনুচ্ছেদঃ কাফনের জন্য যেরূপ কাপড় উত্তম
৯৯৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সাদা রঙ্গের পোশাক পর। কেননা, তোমাদের জন্য তা সবচাইতে উত্তম পোশাক। তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের এটা দিয়েই কাফন দাও।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৭২]। সামুরা, ইবনি উমার ও আইশা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। আলিমগণও এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। ইবনিল মুবারাক বলেন, যে পোশাক পরিধান করে মৃত ব্যক্তি নামাজ আদায় করত তাকে তা দিয়ে কাফন দেয়াই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়। ঈমাম আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] বলেন, সাদা কাপড়ে কাফন দেয়াই আমরা পছন্দ করি। উত্তম কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়াই মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৯. অনুচ্ছেদঃ [উত্তম কাপড় দিয়ে কাফন দেওয়া]
৯৯৫. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি তোমাদের মাঝে কোন লোক তার কোন ভাইয়ের ওয়ালী হয় তবে সে যেন তার জন্য উত্তম কাফনের ব্যবস্থা করে।
-সহীহ, সহীহাহু [১৪২৫], আহকামুল জানা-য়িজ [৫৮], মুসলিম জাবির হইতে। জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। ইবনিল মুবারাক বলেনঃ “সে যেন তার জন্য উত্তম কাফনের ব্যবস্থা করে” সাল্লাম ইবনি আবু মুতী এই কথার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে এটা অতি উত্তম হইতে হইবে, কাফনের কাপড় অধিক মূল্যের হইতে হইবে তা নয়। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২০. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কি পরিমাণ কাপড় দিয়ে কাফন দেয়া হয়েছিল?
৯৯৬. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তিনটি ইয়ামানী সাদা কাপড় দিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কাফন দেওয়া হয়েছিল। এতে জামা ও পাগড়ী ছিল না। বর্ণনাকারী [উরওয়া] বলেন, লোকেরা আইশা [রাদি.]-কে বলিল, কেউ কেউ বলেন, দুটি কাপড় ও একটি লম্বা রেখাযুক্ত চাদর দ্বারা তাকে কাফন দেওয়া হয়েছে। আইশা [রাদি.] বলেন, একটি চাদর আনা হয়েছিল কিন্তু তাঁরা তা ফিরিয়ে দেন এবং তাঁকে সেটা দিয়ে কাফন দেননি।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৬৯],বুখারী, মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৯৯৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
শুধুমাত্র একটি পশমী চাদর দ্বারা হামযা ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.]-কে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাফন দিয়েছিলেন।
-হাসান, আল-আহকাম [৫৯,৬০]। আলী, ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফফাল ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাফনের প্রসঙ্গে বিভিন্ন রকম হাদীস আছে। আইশ [রাদি.]-এর হাদীস তন্মধ্যে সবচাইতে সহিহ। এই হাদীস অনুযায়ী রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অপরাপর আলিমগণ আমল করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী বলেন, পুরুষদেরকে তিনটি কাপড়ে কাফন দেওয়া হইবে- দুটি চাদর ও একটি জামা বা তিনটি চাদরেই কাফন দেওয়া যায়। দুটো কাপড় না পাওয়া গেলে একটিতেই যথেষ্ট হইবে। আর তিনটি না পাওয়া গেলে দুটিই যথেষ্ট। তিনটি পাওয়া গেলে তা বেশি উত্তম। এই অভিমত ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]-এর। তারা বলেন, মহিলাদেরকে পাঁচটি কাপড়ে কাফন দেওয়া হইবে। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২১. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির পরিবার-পরিজনদের জন্য খাবার তৈরী করে পাঠানো
৯৯৮. আবদুল্লাহ্ ইবনি জাফর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, জাফর [রাদি.]-এর শহীদ হওয়ার খবর এলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরী কর। কেননা, এমন খবর তাহাদের নিকটে এসেছে যা তাহাদেরকে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে।
-হাসান, ইবনি মা-জাহ [১৬১০], মিশকাত [১৭৩৯]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত ব্যক্তির পরিবারের দুঃখ-কষ্ট জনিত ব্যস্ততার কারণে তাহাদেরকে কিছু পাঠানোকে একদল আলিম মুস্তাহাব বলেছেন। এই অভিমত ঈমাম শাফির। জাফর ইবনি খালিদ হচ্ছেন ইবনি সা-রাহ, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী। ইবনি জুরাইজও তার বরাতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২২. অনুচ্ছেদঃ বিপদের সময় কপালে হাত চাপড়ানো ও জামার বুক ছেঁড়া নিষেধ
৯৯৯. আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যেসব লোক [মৃত্যুশোকে] জামার বুক ছিড়ে, গাল চাপড়ায় ও জাহিলী যুগের ন্যায় হা-হুতাশ করে সেসব লোক আমাদের দলভুক্ত নয়।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৮৪], বুখারী, মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা মাকরূহ্
১০০০. আলী ইবনি রাবীআ আল-আসাদী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কারাযা ইবনি কাব নামক এক আনসারী মারা গেলে তার জন্য বিলাপ করে কান্নাকাটি শুরু হয়। এমতাবস্থায় মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] এসে মিম্বারে উঠলেন এবং আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলিলেন, ইসলামে বিলাপ করে কাঁদার বিধান কোথায়? সাবধান! রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তির জন্য বিলাপ করে কাঁদা হয় তাকে বিলাপের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।
-সহীহ, আল আহকাম [২৮, ২৯], বুখারী, মুসলিম। উমার, আলী, আবু মূসা, কাইস ইবনি আসিম, আবু হুরাইয়া, জুনাদা ইবনি মালিক, আনাস, উম্মু আতিয়্যা, সামুরা ও আবু মালিক আল-আশআরী [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। মুগীরা [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০১. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার উম্মাতদের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি [খারাপ] বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো [পুরোপুরি] ছাড়বে নাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্ৰন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, সংক্রামক রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা, একটি উট সংক্রমিত হলে একশটি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো।
-হাসান, সহীহাহ্ [৭৩৫]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৪. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা মাকরূহ
১০০২. উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।
-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৫৯৩], বুখারী, মুসলিম। ইবনি উমার ও ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীসের ভিত্তিতে একদল আলিম, মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা অপছন্দ করিয়াছেন। তারা বলেন, তাকে তার পরিবারের কান্নাকাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। উক্ত হাদীসকে তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করিয়াছেন। ইবনিল মুবারাক বলেন, আমি আশা করি যদি মৃত ব্যক্তি তার পরিবারের লোকদেরকে তার জীবিতাবস্থায় কাঁদতে বারণ করে যায় তাহলে তাহাদের কান্নার কারণে তার কিছু হইবে না। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০৩. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার জন্য ক্ৰন্দনকারীরা যখন কাঁদে আর বলে, হায় আমাদের পাহাড়! হে আমাদের নেতা বা অনুরূপ কোন কথা, তখন দুইজন ফেরেশতা ঐ মৃত ব্যক্তির জন্য নিয়োগ করা হয়। তারা তার বুকে ঘুষি মারে আর বলিতে থাকে, তুমি কি এরূপ ছিলে?
হাসান, ইবনি মা-জাহ [১৫৯৪] এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
২৫. অনুচ্ছেদঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করার অনুমতি
১০০৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তির জন্য তার পরিবারের লোকদের কান্নাকাটির কারণে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। আইশা [রাদি.] বলেন, আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে [ইবনি উমারকে] রহম করুন। তিনি মিথ্যা বলেননি, বরং ভুল বুঝেছেন। এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেন, যে ইয়াহুদী অবস্থায় মারা গিয়েছিলঃ মৃত ব্যক্তিকে [তার গুনাহের কারণে] শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, আর তার জন্য তার পরিবারের লোকেরা কাঁদছে।
-সহিহ, আহকা-মুল জানা-য়িজ [২৮], বুখারী, মুসলিম৷ ইবনি আব্বাস, কারাযা ইবনি কাব, আবু হুরাইরা, ইবনি মাসউদ ও উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এই হাদীস আইশা [রাদি.] হইতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন। তারা “ওয়ালা তাযিরু ওয়াযিরাতুন বিযরা উখরা” [একজন অপরজনের বোঝা বহন করিবে না] আয়াত দলীল হিসাবে উপস্থাপন করিয়াছেন। এই অভিমত ঈমাম শাফিরও। মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবদুর রাহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর হাত ধরে তাকে নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজ পুত্র ইবরাহীম [রাদি.]-এর নিকটে গেলেন। তাঁকে তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় দেখিতে পেলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে কোলে তুলে নিলেন এবং কাঁদলেন। আবদুর রাহমান [রাদি.] তাকে বলিলেন, আপনিও কাঁদছেন? আপনি কি কান্না করিতে বারণ করেননি? তিনি বললেনঃ না, বরং আমি দুইটি নির্বোধ সুলভ ও পাপাচারমূলক চিৎকার নিষেধ করেছিঃ বিপদের সময় চিৎকার করা, মুখমণ্ডলে আঘাত করা এবং জামার সম্মুখভাগ ছিড়ে ফেলা আর শাইতানের মত [চিৎকার] কান্নাকাটি করা।
-হাসান, হাদীসটিতে আরো অনেক বক্তব্য আছে। এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস
১০০৬. আমর [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আইশা [রাদি.]-এর নিকট শুনেছেন যে, তার নিকট উল্লেখ করা হল যে, ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, মৃত ব্যক্তিকে জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয় [এ কথা শুনে] আইশা [রাদি.] বলিলেন, আবদুর রাহমানের বাবাকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন। তিনি মিথ্যা বলেননি। তবে তিনি হয়ত ভুলে গেছেন বা সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি। [প্রকৃত বিষয় এই যে,] কোন এক ইয়াহুদী নারীর লাশের বা কবরের পাশ দিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যাচ্ছিলেন। তখন তার জন্য কান্নাকাটি করা হচ্ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন বললেনঃ তার জন্য তো এরা কান্নাকাটি করছে, অথচ তাকে কবরের মাঝে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।
-সহীহ, আল-আহকাম [২৮], বুখারী, মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।মৃত ব্যক্তির জন্য কি করনীয় – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply