মৃত্যু যন্ত্রনা – রোগভোগের সাওয়াব, ওয়াসিয়াতের উৎসাহ

মৃত্যু যন্ত্রনা – রোগভোগের সাওয়াব, ওয়াসিয়াতের উৎসাহ

মৃত্যু যন্ত্রনা – রোগভোগের সাওয়াব, ওয়াসিয়াতের উৎসাহ >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৮, অনুচ্ছেদঃ (১-১১)=১১টি

১. অনুচ্ছেদঃ রোগভোগের সাওয়াব
২. অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখিতে যাওয়া
৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করা নিষেধ
৪. অনুচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে রোগীর জন্য [আল্লাহ তাআলার] আশ্রয় প্রার্থনা করা
৫. অনুচ্ছেদঃ ওয়াসিয়াতের জন্য উৎসাহ দেওয়া
৬. অনুচ্ছেদঃ এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ সম্পদের ওয়াসিয়াত করা
৭. অনুচ্ছেদঃ অন্তিম সময়ের লোককে তালকীন দেয়া এবং তার জন্য দুআ করা
৮. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু যন্ত্রণা প্রসঙ্গে
৯. অনুচ্ছেদঃ [যার আমলনামায় প্রথমে ও শেষে ভাল কাজ পাওয়া যাবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হইবে]
১০. অনুচ্ছেদঃ মুমিনদের মৃত্যুর সময় কপাল ঘামে
১১. অনুচ্ছেদঃ [মৃত্যুর সময় আল্লাহর নিকট কল্যাণের আশা করা]

১. অনুচ্ছেদঃ রোগভোগের সাওয়াব

৯৬৫. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি কোন মুমিন ব্যক্তির দেহে কাঁটা বিদ্ধ হয় অথবা সে যদি এর চেয়ে বেশি কিছুতে আক্রান্ত হয় তবে এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাআলা তাকে তার মর্যাদা এক ধাপ বাড়িয়ে দেন এবং তার একটি গুনাহ মাফ করে দেন।

-সহিহ, রাওযুন নাযীর [৮১৯], মুসলিম, বুখারী, সংক্ষিপ্ত। সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস, আবু উবাইদা ইবনিল জাররাহ, আবু হুরাইরা, আবু উমামা, আবু সাঈদ, আনাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আসাদ ইবনি কুরয, জাবির, ইবনি আব্দুল্লাহ আবদুর রাহমান ইবনি আযহার ও আবু মূসা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আইশা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৬৬. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তির প্রতি যে কোন ধরণের দুঃখ-কষ্ট, দুশ্চিন্তা ও রোগ, এমনকি তুচ্ছ যেকোন চিন্তাই আসুক না কেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ্ তাআলা তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।

-হাসান সহীহ, সহীহাহ [২৫০৩], মুসলিম, বুখারী সংক্ষিপ্ত।বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আনহু সায়্যিয়াতিহির পরিবর্তে মিন সায়্যিয়াতিহী উল্লেখ আছে। আর উহাই সংরক্ষিত। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। ওয়াকী বলেছেন, তিনি এই হাদীসটি ছাড়া আরকোন রিওয়ায়াতে দুশ্চিন্তাও যে গুনাহর কাফফারা হয় এমন কথা শুনেননি। আবু হুরাইরা [রাদি.]-এর সূত্রেও এই হাদীসটি কেউ কেউ বর্ণনা করিয়াছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ

২. অনুচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখিতে যাওয়া

৯৬৭. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন মুসলমান তার কোন [রুগ্ন] মুসলিম ভাইকে দেখিতে গেলে সে [যতক্ষণ সেখানে থাকে ততক্ষণ] যেন জান্নাতের ফল আহরণ করিতে থাকে।

সহীহ, মুসলিম [৮/১৩]। আলী, আবু মূসা, বারাআ, আবু হুরাইরা, আনাস ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সাওবান [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীসটি আবু গিফার ও আসিম আল-আহওয়াল [রঃ] এরকমই বর্ণনা করিয়াছেন আবু কিলাবা হইতে, তিনি আবুল আশআস হইতে, তিনি আবু আসমা হইতে, তিনি সাওবান [রাদি.]-এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে। তিরমিয়ী বলেন, মুহাম্মাদ আল-বুখারী [রঃ]-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, যারা আবুল আশআস হইতে আবু আসমার সূত্রে এই হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন তাহাদের সনদসূত্র অধিকতর সহিহ। মুহাম্মাদ [বুখারী] আরও বলেছেনঃ আবু কিলাবার হাদীসগুলি আবু আমরের সূত্রেই বর্ণিত, কিন্তু এই হাদীসটি আবুল আশ্ আসের বরাতে আবু আসমা হইতেই আমি জানতে পেরেছি। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৬৮. রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[উপরের হাদীসের] এরকমই বর্ণিত আছে। তবে এই বর্ণনাতে আরো আছেঃ প্রশ্ন করা হল, খুরফাতুল জান্নাত কি? তিনি বলেনঃ এটা হচ্ছে জান্নাতের কুড়ানো ফল।

– সহীহ, মুসলিম। উপরোক্ত হাদীসের মতই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আহ্মদ ইবনি আবদা আয-যাববী [রঃ]…সাওবান [রাদি.] সূত্রে বর্ণিত আছে। কিন্তু এই সনদে আবুল-আশআসের উল্লেখ নেই। আবু ঈসা বলেন, হাম্মাদ ইবনি যাইদ হইতেও এই হাদীসকে কেউ কেউ বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তারা মারফূহিসেবে বর্ণনা করেননি। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৬৯. সুওয়াইর [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমার হাত ধরে আলী [রাদি.] বলিলেন, আমার সাথে চল, অসুস্থ হুসাইনকে দেখে আসি। আমরা তার নিকটে গিয়ে মূসা [রাদি.]-কে হাযির পেলাম। আলী [রাদি.] বলিলেন, হে আবু মূসা! আপনি কি রোগী দেখিতে এসেছেন না এমনি বেড়াতে এসেছেন? তিনি বলিলেন, না, রোগী দেখিতে এসেছি। আলী [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি বলিতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান যদি অন্যকোন মুসলিম রোগীকে সকাল বেলা দেখিতে যায় তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত দুআ করিতে থাকে। সে যদি সন্ধ্যায় তাকে দেখিতে যায় তবে সত্তর হাজার ফেরেশতা ভোর পর্যন্ত তার জন্য দুআ করিতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য একটি ফলের বাগান তৈরী হয়।

-সহীহ, তবে হাদীসে বর্ণিত যায়িরাণ শব্দের পরিবর্তে শামিতান শব্দ আছে।-সহীহাহ [১৩৬৭], আর-রা ওয [১১৫৫]। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। এটি একাধিকসূত্রে আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে। এটিকে মারফু না করে কেউ কেউ মাওকূফ হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী আবু ফাখিতার নাম সাঈদ, পিতার নাম ইলাকা। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৩. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু কামনা করা নিষেধ

৯৭০. হারিসা ইবনি মুযাররিব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা খাববাব [রাদি.]-এর নিকট আমি হাযির হলাম। তখন তার পেটে [গরম কিছু দিয়ে] তিনি সেঁক দিচ্ছিলেন। তিনি বলিলেন, আমি যত বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, জানি না, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আর কোন সাহাবী এত বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন কি-না। একটি দিরহামও আমার নিকটে ছিল না [নিঃস্ব ছিলাম] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে। আর এখন চল্লিশহাজার দিরহাম আমার ঘরের কোণে পড়ে আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যদি আমাদেরকে মৃত্যু কামনা করিতে নিষেধ না করিতেন তবে অবশ্যই আমি মৃত্যু কামনা করতাম।

-সহীহ, আহ্কামুল জানায়িয [৫৯], নাসাঈতে শুধুমাত্র মৃত্যু কামনা নিষেধ বর্ণিত আছে। আবু হুরাইরা, আনাস ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। খাববাব [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৭১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন লোক যেন কোন দুঃখ-কষ্টে জড়িয়ে পড়ার কারণে মৃত্যু কামনা না করে। বরং সে যেন বলে,

হে আল্লাহ! যে পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর হয় আমাকে সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখ এবং আমার জন্য যখন মৃত্যু কল্যাণকর হয় তখন আমাকে মৃত্যু দাও।

-সহীহ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৪২৬৫], বুখারী, মুসলিম। হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন আলী ইবনি হুজ্র ইসমাঈল ইবনি ইবরাহীম হইতে, তিনি আব্দুল আযীয ইবনি সুহাইব হইতে, তিনি আনাস ইবনি মালিক হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৪. অনুচ্ছেদঃ ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে রোগীর জন্য [আল্লাহ তাআলার] আশ্রয় প্রার্থনা করা

৯৭২. বিসর ইবনু হিলাল আল বাঁশরি সাওওয়াফ — আব্দুল ওয়ারিস ইবনু সাইদ — আব্দুল আজিজ ইবনু সুহাইব — আবি নাসরাহ –আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে জিবরীল [আঃ] এসে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন জিবরীল [আঃ] পাঠ করলেনঃ arbi

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ وَعَيْنِ حَاسِدٍ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ وَاللَّهُ يَشْفِيكَ

বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীকা, মিন শার্রি কুল্লি নাফসিন ওয়া ‘আইনি হা-সিদিন, বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা ওয়াল্লা-হু য়্যাশফীকা

“আমি আপনাকে আল্লাহ তাআলার নামে ঝাড়ছি এমন সকল কিছু হইতে যা আপনাকে কষ্ট দেয় এবং সকল প্রকার অনিষ্টকর প্রাণী ও সকল হিংসুটে দৃষ্টি হইতে। আল্লাহ তাআলার নামে আমি আপনাকে ঝাড়ছি, আপনাকে আল্লাহ তাআলা সুস্থতা দান করুন।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩৫২৩], মুসলিম। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৭৩. আবদুল আযীয ইবনি সুহাইব [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ও সাবিত আল-বুনানী আনাস [রাদি.]-এর নিকটে গেলাম। সাবিত বলিলেন, হে আবু হামযা! আমি অসুস্থ অনুভব করছি। আনাস [রাদি.] বলিলেন, আমি কি তোমাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ঝাড়ফুঁকের দুআ পাঠ করে ঝাড়ব না? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আনাস [রাদি.] বললেনঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ مُذْهِبَ الْبَاسِ اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شَافِيَ إِلاَّ أَنْتَ شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا

আল্লাহুম্মা রব্বান্নাসি মুজহিবিল বাসি আসফি আন্তাস সাফি লা সাফিয়িয়া ইল্লা আন্তা সাফিয়িয়া লা ইউ গাদিরু সাক্কামা 

“হে আল্লাহ, মানবজাতির প্রভু! কষ্ট-ক্লেশ বিতাড়নকারী, রোগ হইতে আপনি মুক্তি দিন, নিরাময়কারী তো আপনিই, আর কোন সুস্থতা দানকারী নেই আপনি ব্যতীত। এমন সুস্থতা আপনি দান করুন আর কোন রোগ যেন থাকতে না পারে”।

-সহীহ, বুখারী। আনাস ও আইশা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। তিনি বলেন, আবু যুরআকে আমি প্রশ্ন করলামঃ বেশি সহিহ কোনটি, আবদুল আযীয-আবু নাযরা হইতে তিনি আবু সাঈদ [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি না আবদুল আযীয-আনাস [রাদি.]-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি? তিনি উভয় হাদীসকেই সহিহ বলেছেন। আব্দুস সামাদ ইবনি আবদুল ওয়ারিস তার পিতা হইতে আবদুল আযীয ইবনি সুহাইব হইতে, তিনি আবু নাযরা হইতে, তিনি আবু সাঈদ হইতে এবং আব্দুল আযীয ইবনি সুহাইব হইতে, তিনি আনাস [রাদি.] হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫. অনুচ্ছেদঃ ওয়াসিয়াতের জন্য উৎসাহ দেওয়া

৯৭৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যদি ওয়াসিয়াত করার মত সম্পদ কোন মুসলমান ব্যক্তির নিকট থাকে তবে নিজের নিকট ওয়াসিয়াতনামা লিখে না রেখে সেলোক যেন দুই রাতও অতিবাহিত না করে।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [২৬৯৯], বুখারী, মুসলিম। ইবনি আবু আওফা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬. অনুচ্ছেদঃ এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ সম্পদের ওয়াসিয়াত করা

৯৭৫. সাদ ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হলে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে এলেন। তিনি বললেনঃ তুমি কি ওয়াসিয়াত করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ কতটুকু? আমি বললাম, আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় আমার সবটুকু সম্পদ দিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ তোমার সন্তানদের জন্য কি রাখলে? তিনি বলিলেন, তারা বেশ ধনী। তিনি বললেনঃ দশ ভাগের এক অংশ ওয়াসিয়াত কর। সাদ [রাদি.] বলেন, আমি বরাবর “তা খুবই কম” বলিতে লাগলাম। তিনি শেষে বললেনঃ ওয়াসিয়াত কর তিন ভাগের এক অংশ। আর তিন ভাগের এক অংশও বেশি হয়ে যাচ্ছে।

সহীহ, ইরওয়া [৮৯৯], সহীহ আবু দাউদ [২৫৫০], বুখারী, মুসলিম দশভাগের একভাগ ওয়াসিয়াত কর এই অংশ বাদে। এ অংশটুকু যঈফ। আবু আবদুর রাহমান বলেন, আমরা এক-তৃতীয়াংশের কম ওয়াসিয়াত করাকে মুস্তাহাব মনে করি। কেননা, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এক-তৃতীয়াংশও অনেক বেশি। ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন। এটি একাধিকসূত্রে বর্ণিত আছে। কোন কোন বর্ণনায় কাবীর” শব্দ এবং কোন কোন বর্ণনায় কাসীর” শব্দের উল্লেখ রহিয়াছে। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করার কথা বলেছেন। তারা এক তৃতীয়াংশের বেশি পরিমাণ ওয়াসিয়াত করাকে জায়িয মনে করেন না, বরং এক তৃতীয়াংশেরও কম সম্পদ ওয়াসিয়াত করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ এক-চতুর্থাংশের চেয়ে এক-পঞ্চমাংশ এবং এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে এক-চতুর্থাংশ ওয়াসিয়াত করাকে পূর্ববর্তী আলিমগণ মুস্তাহাব মনে করিতেন। এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সম্পত্তি যে লোক ওয়াসিয়াত করিল সে লোক তো আর কিছু রাখল না। তার জন্য এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওয়াসিয়াত করা জায়িয নয়। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য

৭. অনুচ্ছেদঃ অন্তিম সময়ের লোককে তালকীন দেয়া এবং তার জন্য দুআ করা

৯৭৬. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের মাঝে অন্তিম সময়ের ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করে শুনাও।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৪৪, ১৪৪৫], মুসলিম। আবু হুরাইরা, উম্মু সালামা, আইশা, জাবির ও তালহা ইবনি উবাইদুল্লাহ [রাদি.]-এর স্ত্রী সুদা আল-মুরিয়্যা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব সহিহ বলেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৭৭. উম্মু সালামা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কোন অসুস্থ বা মৃত লোকের নিকটে তোমরা হাযির হলে তার সম্বন্ধে ভাল কথা বলবে। কেননা, তোমরা যেসব কথা বল সে প্রসঙ্গে ফেরেশতাগণ আমীন বলে থাকেন। উন্মু সালামা [রাদি.] বলেন, আবু সালামা [রাদি.] মারা যাবার পর আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আবু সালামা মারা গিয়েছে। তিনি বললেনঃ তুমি বল, arbi

“হে আল্লাহ আমাকে এবং তাকে ক্ষমা করে দিন এবং তার পরে আমাকে তার চেয়ে আরও উত্তম পরিণতি দান করুন। উম্মু সালামা [রাদি.] বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ্ তাআলা তার পরবর্তীতে আমাকে তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি দান করিয়াছেন। তিনি হচ্ছেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৪৭], মুসলিম।শাকীক হচ্ছেন ইবনি সালামা আবু ওয়াইল আসাদী। উন্মু সালামা [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহিহ বলেছেন।মুমূর্য রোগীকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর তালকীন করা মুস্তাহাব। একদল আলিম বলেন, এই কালিমা যদি সে একবার পাঠ করে নেয় তবে পরে অন্যকথা না বললে পুনরায় তাকে তালকীন করা অনুচিত এবং বারবার এই বিষয়ে তাকে চাপ প্রয়োগ করা উচিত নয়। ইবনিল মুবারাকের মৃত্যুর সময় হাযির হলে তাঁকে কোন এক লোক লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর তালকীন করিতে থাকে তখন তিনি বলিলেন, আমি একবার তা বলেছি পরে অন্য কোন কথা না বলা পর্যন্ত আমি এই কথার উপরই প্রতিষ্ঠিত আছি। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক [রঃ]-এর এই কথার তাৎপর্য এটাই যা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছেঃ “যে লোকের শেষ কথা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হইবে সে লোক জান্নাতে যাবে”।মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮. অনুচ্ছেদঃ মৃত্যু যন্ত্রণা প্রসঙ্গে

৯৭৮. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে মুমূর্য অবস্থায় দেখেছি একটি পানি ভর্তি বাটি তার সামনে রাখা ছিল। তিনি সেই বাটিতে তার হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন এবং পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মলছিলেন আর বলছিলেনঃ

اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ

আল্লহুম্মা আয়িন্নিহি আলা গামারতিল মাওতি

“হে আল্লাহু! মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।”

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[১৬২৩] আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯৭৯. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু যন্ত্রণা দেখার পর হইতে আমার আর কোন ঈর্ষা হয় না অন্য কোন ব্যক্তির সহজ মৃত্যু হলে।

-সহীহ, মুখতাসার শামায়িল মুহাম্মাদীয়া [৩২৫], বুখারী। ঈমাম তিরমিযী বলেনঃ আমি আবু যুরআকে এ হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম এবং তাকে বললামঃ আব্দুর রাহমান ইবনিল আলা ব্যক্তিটি কে? তিনি বললেনঃ ব্যক্তিটি হলেন আল আলা-ইবনিল লাজলাজ। এই হাদীসটিকে তিনি শুধুমাত্র উল্লেখিত সূত্রেই জেনেছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৮০. আলকামা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেনঃ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনিয়াছি, অবশ্যই মুমিনের আত্মা [মৃত্যুর সময়] ঘামের সাথে বের হয়, আমি গাধার মত মৃত্যুকে পছন্দ করি না, তাকে প্রশ্ন করা হল, গাধার মত মৃত্যু কি? তিনি বলিলেন, হঠাৎ মৃত্যু।

অত্যন্ত দুর্বল। আল-ইলালুল মুতানাহিয়াহ [১৪৮৮] মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

৯. অনুচ্ছেদঃ [যার আমলনামায় প্রথমে ও শেষে ভাল কাজ পাওয়া যাবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হইবে]

৯৮১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন ঃ বান্দার আমল নাম লিপিবদ্ধকারী দুজন ফেরেশতা দিবারাত্রির যখনই আমল নামা নিয়ে আল্লাহর কাছে পৌছে, আর আল্লাহ তাআলা আমল নামার প্রথমে ও শেষে কল্যাণ [দেখিতে] পান তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমাদেরকে এই কথার উপর সাক্ষি রাখছি যে, আমার বান্দার আমল নামার মাঝখানে যা আছে তা আমি ক্ষমা করে দিলাম।

অত্যন্ত দুর্বল,যঈফা [২২৩৯] মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ খুবই দুর্বল

১০. অনুচ্ছেদঃ মুমিনদের মৃত্যুর সময় কপাল ঘামে

৯৮২. আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদা [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কপালের ঘামসহ মুমিনের মৃত্যু হয়।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৪৫২]। ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। একদল মুহাদ্দিস বলেন, কাতাদা [রঃ] আবদুল্লাহ ইবনি বুরাইদা হইতে কোন কিছু শুনেছেন বলে আমাদের জানা নেই। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১১. অনুচ্ছেদঃ [মৃত্যুর সময় আল্লাহর নিকট কল্যাণের আশা করা]

৯৮৩. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক যুবকের নিকট গেলেন। তখন সে মুমূর্ষু অবস্থায় ছিল। তিনি বললেনঃ তোমার কেমন অনুভব হচ্ছে? যুবকটি বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ, আল্লাহ্ তাআলার রাহমাতের আশা করছি, কিন্তু আবার ভয়ও পাচ্ছি আমার গুনাহগুলোর কারণে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ যে বান্দার হৃদয়ে এরকম সময়ে এরূপ দুই বিপরীত জিনিস একত্র হয়, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার কাংক্ষিত জিনিস তাকে দান করেন এবং তাকে তার বিপদাশংকা হইতে নিরাপদ রাখেন।

-হাসান, ইবনি মা-জাহ [৪২৬১]।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান গারীব বলেছেন। হাদীসটিকে কোন কোন বর্ণনাকারী মুরসাল হিসেবে সাবিতের সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। মৃত্যু যন্ত্রনা – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

Comments

Leave a Reply