মৃত্যুর কাছাকাছি ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়

মৃত্যুর কাছাকাছি ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয়

মৃত্যুর কাছাকাছি ব্যক্তির নিকট যা বলতে হয় >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৫, অধ্যায়ঃ ৩

  • অধ্যায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অদ্ধায়ঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ

১৬১৬. আবু সাঈদ ও আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় তাকে কালিমায়ে

 لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ

লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ

[অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই] তালকীন দিও। {১}

{১} সহীহ : মুসলিম ৯১৬, ৯১৭, আত তিরমিজি ৯৭৬, নাসায়ী ১৮২৬, ইবনি মাজাহ ১৪৪৪, ১৪৪৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮৬৪, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৫৯৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৫, ইরওয়া ৬৮৬, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫১৪৮। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬১. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন,রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছে কিংবা কোন মৃত্যু পথযাত্রীর কাছে ভাল ভাল কথা বলবে। কারণ তোমরা তখন যা বলো, [তা শুনে] মালাকগণ [ফেরেশতারা] আমীন আমীন বলেন।

[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ৯১৯, আত তিরমিজি ৯৭৭, আবু দাউদ ৩১১৫, নাসায়ী ১৮২৫, ইবনি মাজাহ ১৪৪৭, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৬০৬৬, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১০৮৪৭, আহমাদ ২৬৪৯৭, ইবনি হিব্বান ৩০০৫, মুসতাদরাক লিল হাকিম ৬৭৫৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৪, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬১, সহীহ আত তারগীব ৩৪৮৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৯১। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬১৮. উম্মুল মুমিনীন সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম [কোন ছোট-বড়] বিপদে পতিত হয় এবং আল্লাহ তাআয়ালার ইচ্ছা হলে এ কথাগুলো বলে,

إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ [البقرة 2 : 156]

“ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলায়হি র-জিঊন

{অর্থাৎ “আমরা আল্লাহ্‌রই জন্য এবং তাহাঁরই কাছে আমাদের প্রত্যাবর্তন”-[সূরাহ্ আল বাক্বারাহ ২ : ১৫৬]]।

اللّهُمَّ أَجِرْنِىْ فِىْ مُصِيْبَتِىْ وَاخْلُفْ لِىْ خَيْرًا مِّنْهَا

“ আল্ল-হুম্মা আজির্‌নী ফী মুসীবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খয়রাম মিন্হা”

[অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমার বিপদের জন্য আমাকে সওয়াব দাও। আর {এ বিপদে] যা আমি হারিয়েছি তার জন্য উত্তম বিনিময় আমাকে দান করো]

আল্লাহ তাআলা তাকে এ জিনিসের উত্তম বিনিময় দান করেন। উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] বলেন, যখন আবু সালামাহ্ [অর্থাৎ তাহাঁর স্বামী] মারা গেলেন, আমি বললাম, “আবু সালামাহ [রাদি.] হইতে উত্তম কোন মুসলিম হইতে পারে? এ আবু সালামাহ্, যিনি সকলের আগে সপরিবারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে হিজরত করিয়াছেন। তারপর আমি উপরোক্ত বাক্যগুলো পড়েছিলাম। বস্তুত আল্লাহ তাআলা আমাকে আবু সালামার স্থলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দান করিয়াছেন [অর্থাৎ তাহাঁর সাথে উম্মু সালামার বিয়ে হয়েছে]

। [মুসলিম]{১}.{১} সহীহ : মুসলিম ৯১৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৭১২৫, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৩, ইরওয়া ১৮১৯, সহীহ আল জামিআস্ সগীর ৫৭৬৪। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬১৯. উম্মু সালামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [আমার প্রথম স্বামী] আবু সালামার কাছে আসলেন যখন তাহাঁর চোখ স্থির হয়ে গিয়েছিল। তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] চোখগুলো বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রুহ কবয করা হয় তখন তার দৃষ্টিশক্তিও চলে যায়। আবু সালামার পরিবার [এ কথা শুনে বুঝল, আবু সালামাহ ইন্তিকাল করিয়াছেন] কাঁদতে ও চিল্লাতে লাগল। তখন রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা মাইয়্যিতের জন্য কল্যাণের দুআ করো। কারণ তোমরা ভাল মন্দ যে দুআই করো [তা শুনে] মালাকগণ [ফেরেশতারা] আমীন বলে। তারপর তিনি এ দুআ পাঠ করিলেন,

اللّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِىْ سَلَمَةَ وَارْفَعْ دَرَجَتَه فِي الْمَهْدِيِّيْنَ وَاخْلُفْهُ فِىْ عَقِبِه فِي الْغَابِرِيْنَ وَاغْفِرْ لَنَا وَلَه يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ وَأَفْسِحْ لَه فِي قَبْرِه وَنَوِّرْ لَه فِيْهِ

“ আল্ল-হুম্মাগফির লিয়াবী সালামাহ, ওয়ারফা দারাজতাহূ ফিল মাহ্দীয়্যিন, ওয়াখ্লুফ্হু ফী আক্বিবিহী ফিল গ-বিরীন, ওয়াগ্ফির লানা-ওয়ালাহূ ইয়া-রব্বাল আ-লামীন, ওয়া আফসিহ লাহূ ফী ক্বব্‌রিহী, ওয়ানাওয়ির লাহূ ফিহী”

[অর্থাৎ হে আল্লাহ! আবু সালামাকে মাফ করে দাও। হিদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দাও। তার ছেড়ে যাওয়া লোকদের জন্য তুমি সহায় হয়ে যাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার ক্ববরকে প্রশস্ত করে দাও। তার জন্য ক্ববরকে নূরের আলোতে আলোকিত করে দাও।]।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৯২০, ইবনি মাজাহ ১৪৫৪, আহমাদ ২৬৫৪৩, ইবনি হিব্বান ৭০৪১, আল কালিমুত্ব ত্বইয়্যিব ১৪৩, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৬৩৪। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২০. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ইন্তিকালের পর তাহাঁর পবিত্র শরীরের উপর ইয়ামিনী চাদর দিয়ে তাঁকে ঢেকে রাখা হয়েছিল।”

[বোখারী,মুসলিম] {১},{১} সহীহ : বোখারী ৫৮১৪, মুসলিম ৯৪২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬১২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৬৯। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অদ্ধায়ঃ ৩. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৬২১. মুআয ইবনি জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তির শেষ কথা,

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ

লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ [অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন ইলাহ নেই] হবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[আবু দাউদ] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১১৬, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১২৯৯, ইরওয়া ৬৮৭, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৬৪৮০। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২২. মাক্বিল ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা মৃত ব্যক্তির সামনে সূরাহ্ ইয়াসীন পড়ো।

[আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ৩১২১, ইবনি মাজাহ ১৪৪৮, সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী ১০৮৪৬, ইবনি হিব্বান ৩০০২, আদ্ দাওয়াতুল কাবীর ৬২০, ইরওয়া ৬৮৮, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৫৮৬১, জইফ আল জামি আস্ সগীর ১০৭২। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬২৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উসমান ইবনি মাযউন-এর মৃত্যুর পর তাঁকে চুমু দিয়েছেন। এরপর অঝোরে কেঁদেছেন, এমনকি তাহাঁর চোখের পানি উসমানের চেহারায় টপকে টপকে পড়েছে।

[তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ] {১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩১৬৩, আত তিরমিজি ৯৮৯, ইবনি মাজাহ ১৪৫৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭০, আহমাদ ২৩৬৪৫। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবু বাক্‌র সিদ্দীক্ব রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যুর পর তাঁকে [চেহারা মুবারাকে] চুমু খেয়েছিলেন।

[তিরমিজি,ইবনি মাজাহ]{১},{১} সহীহ : আত তিরমিজি ৯৮৯, নাসায়ী ১৮৪০, ইবনি মাজাহ ১৪৫৭, বোখারী, ৪৪৫৫, ৫৭০৯, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১২০৬৬, আহমাদ ২০২৬, ইবনি হিব্বান ৩০২৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১৪৭১, শামায়েল ৩২৭, ইরওয়া ৬৯২। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২৫. হুসায়ন ইবনি ওয়াহ্ওয়াহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ত্বলহাহ্ ইবনি বারা অসুস্থ হলে নবী [সাঃআঃ] তাঁকে দেখোতে গেলেন। তিনি তাহাঁর পরিবারের লোকজনকে বললেন, আমার মনে হচ্ছে ত্বলহার মৃত্যুর লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অতএব তার মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাকে খবর দিবে [যাতে আমি জানাযাহ্ আদায়ের জন্য আসতে পারি] আর তোমরা তার দাফন-কাফনের কাজ তাড়াতাড়ি করিবে। কারণ মুসলিমের লাশ তার পরিবারের মধ্যে বেশীক্ষণ ফেলে রাখা ঠিক নয়।

[আবু দাউদ] {১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ৩১৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬৬২০, রিয়াযুস সালিহীন ৯৫১, জইফ আল জামি আস্ সগীর ২০৯৯। কারণ এর সানাদে সাঈদ আল আনসারী এবং তার ছেলে আযরা বা আরওয়াহ দুজন মাজহূল রাবী। আর সাঈদ বিন উসমান [রাদি.] আল বালবী ও মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অদ্ধায়ঃ ৩. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১৬২৬. আবদুল্লাহ ইবনি জাফার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা মৃত্যুপথযাত্রীকে এ কালিমার তালকীন দেবে,

لَا إِلهَ إِلَّا اللّهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيْمُ سُبْحَانَ اللّهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

“লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হুল হালীমুল কারীম, সবুহা-নাল্ল-হি রব্বিল আরশিল আযীম, আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন”।

সাহাবীগণ আরয করিলেন, হে আল্লাহর রসুল! সুস্থ জীবিত ব্যক্তিদেরকে এ কালিমা শিখানো কেমন? তিনি বললেন, খুব উত্তম। খুব উত্তম।

[ইবনি মাজাহ] {১}{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৪৪৬, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৪৩১৭, জইফ আল জামি আস্ সগীর ৪৭০৭। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইসহকব বিন আবদুল্লাহ মাজহূল রাবী যেমনটি হাফিয ইবনি হাজার [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন। আর কাসীর বিন যায়দ সদুক কিন্তু ভুল করেন। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬২৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট [ফেরেশতাগণ] আগমন করেন। যদি সে ব্যক্তি নেক ও সালিহ হয় মালাকগণ বলেন, পবিত্র দেহে অবস্থানকারী হে পবিত্র নাফ্স! বের হয়ে আসো। আল্লাহ ও মাখলূক্বের নিকট তুমি প্রশংসিত হয়েছ। তোমার জন্য আনন্দ ও প্রশান্তির, জান্নাতের পবিত্র রিয্ক্বের, আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের শুভ সংবাদ, আল্লাহ তোমার ওপরে রাগান্বিত নন। তার নিকট মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] অনবরত এ কথা বলিতে থাকিবেন যে পর্যন্ত রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর মালায়িকাহ্ তা নিয়ে আকাশের দিকে চলে যাবেন। আকাশের দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হয়, যেখানে আল্লাহ আছেন। আর যদি লোকটা খারাপ হয় [অর্থাৎ কাফির হয়] তখন রূহ কবয করার মালাক [ফেরেশতা] বলেন, হে খবীস আত্মা যা খবীস শরীরে ছিলে, এ অবস্থায়ই শরীর হইতে বের হয়ে এসো। তোমার জন্য গরম পানি, পুঁজ ও অন্যান্য নিকৃষ্ট আহারের সুসংবাদ। এই মৃত্যুপথযাত্রীর কাছে বার বার মালায়িকাহ্ এ কথা বলিতে থাকিবে, যে পর্যন্ত তার রূহ বের হয়ে না আসবে। তারপর তারা তার রূহকে আসমানের দিকে নিয়ে যাবে। তার জন্য আকাশের দরজা খুলে দেয়া হবে। জিজ্ঞেস করা হবে, এ ব্যক্তি কে? জবাব দেয়া হবে , অমুক ব্যক্তি। এবার বলা হবে, এ খবীস জীবনের জন্য কোন স্বাগতম নেই,যা অপবিত্র দেহে ছিল। তুমি ফিরে চলে যাও, তোমার বদনাম করা হয়েছে। তোমার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হবে না। বস্তুত তাকে আসমান থেকে ছুঁড়ে ফেলা হবে এবং সে ক্ববরের মধ্যে এসে পড়বে ।

[ইবনে মাজাহ] {১}, {১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৪২৬২, আহমাদ ৮৭৭০, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৯৬৮। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন মুমিনদের রূহ [তার শরীর থেকে] বের হয়, তখন দুজন মালাক [ফেরেশতা] তার কাছে আসেন, তাকে নিয়ে আকাশের দিকে রওনা হন। পরবর্তী রাবী হাম্মাদ বলেন, এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অথবা আবু হুরায়রাহ [রাদি.] ঐ ব্যক্তির রূহের খুশবু ও মিস্‌কের কথা উল্লেখ করিলেন। তারপর তিনি রাসূল [সাঃআঃ] বলেন, তখন আকাশবাসীরা বলবে, পাক-পবিত্র রূহ জমিন হইতে এসেছে। তারপর তার রূহকে উদ্দেশ করে বলবে, তোমার ওপর আল্লাহ রহ্‌মাত করুন এবং শরীরের প্রতি, কারণ তুমি একে সঠিকভাবে ব্যবহার করেছ। এরপর এরা একে আল্লাহর কাছে আর্‌শে আযীমে নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ হুকুম দেবেন, তাকে নিয়ে যাও, ক্বিয়ামাত পর্যন্ত তাকে অবকাশ দাও। আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কাফির ব্যক্তির রূহ তার শরীর থেকে বের করে আনা হয়, অতঃপর তিনি তার দুর্গন্ধের কথা উল্লেখ করিলেন। তার প্রতি লানাতের উল্লেখ করিলেন। তারপর বললেন, যখন তাদের রূহ আকাশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে তখন আকাশবাসী বলেন, একটি নাপাক রূহ জমিন হইতে এসেছে, তাকে নিয়ে যাও এবং কিয়ামাত পর্যন্ত তাকে রেখে দাও। আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর চাদরের কোণা তার নাকের উপর টেনে দিলেন [যেন দুর্গন্ধ হইতে বাঁচতে চাইলেন]।

[মুসলিম] {১},{১} সহীহ : মুসলিম ২৮৭২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৫০৪। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬২৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন মুমিনের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়, মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] সাদা রেশমী কাপড় নিয়ে আসেন এবং রূহকে বলেন, তুমি আল্লাহ তাআলার ওপর সন্তুষ্ট, আল্লাহও তোমার ওপর সন্তুষ্ট এ অবস্থায় দেহ হইতে বেরিয়ে এসো এবং আল্লাহ তাআলার করুণা, উত্তম রিয্‌ক্ব ও পরওয়ারদিগারের দিকে চলো। তিনি তোমার ওপর রাগাম্বিত নন। বস্তুতঃ মিস্কের খুশবুর মতো রূহ দেহ হইতে বেরিয়ে আসে। মালাকগণ সম্মানের সাথে তাকে হাতে হাতে নিয়ে চলে। এমনকি আসমানের দরজা পর্যন্ত নিয়ে আসে। ওখানে মালাকগণ পরস্পর বলাবলি করেন, কি পবিত্র খুশবু জমিনের দিক হইতে আসছে। তারপর তাকে মুমিনদের রূহের কাছে [ইল্লয়্যিনে] আনা হয়। ওই রূহগুলো এ রূহটিকে দেখে এভাবে খুশী হয়ে যায়, যেভাবে তোমাদের কেউ [সফর হইতে ফিরে এলে তোমরা] এ সময় খুশী হও। তারপর সব রূহ এ রূহটিকে জিজ্ঞেস করে অমুক কি করে? অমুক কি করে তারা নিজেরা আবার বলাবলি করে, এখন এ রূহকে ছেড়ে দাও [অর্থাৎ কিছু জিজ্ঞেস করো না]। এখন যে দুনিয়ার শোকতাপে আছে। তারপর একটু স্বস্তির পরে [সে নিজেই বলে] অমুক ব্যক্তি যার সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞেস করেছিলে, সে মরে গেছে। সে কি তোমাদের কাছে আসেনি? রূহগুলো বলে, তাকে তো তার [উপযুক্ত স্থান] হাবিয়্যাহ্ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। [ঠিক এভাবে কোন কফিরের মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসলে তার কাছে আযাবের মালাক [ফেরেশতা] শক্ত চটের বিছানা নিয়ে আসেন। আর তার রূহকে বলেন, হে রূহ। আল্লাহর আযাবের দিকে বেরিয়ে এসো। এ অবস্থায় যে, তুমি আল্লাহর ওপর অসন্তুষ্ট ছিলে, তিনিও তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট। তারপর রূহ তার [কাফির ব্যক্তির] দেহ থেকে পচা লাশের দুর্গন্ধ নিয়ে বেরিয়ে আসবে। মালায়িকাহ্ [ফেরেশতারা] একে জমিনের দরজার দিকে নিয়ে যাবে। সেখানে মালায়িকাহ্ বলবে, কত খারাপ এ দুর্গন্ধ। তারপর এ রূহটিকে কাফিরদের রূহের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে।

[আহমাদ, নাসায়ী] {১}, 1] সহীহ : নাসায়ী ১৮৩৩, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ১৩০৯, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ৪৯০, ইবনি হিব্বান ৩০১৪, সহীহ আত তারগীব ৩৫৫৯। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৩০. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একবার আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে এক আনসারীর জানাযায় ক্ববরের কাছে গেলাম। [তখনো ক্ববর তৈরি করা শেষ হয়নি বলে] লাশ ক্ববরস্থ করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক জায়গায় বসে থাকলেন। আমরাও তাহাঁর আশেপাশে [চুপচাপ] বসে আছি এমনভাবে যেন আমাদের মাথার উপর পাখী বসে আছে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাতে ছিল একটি কাঠ। তা দিয়ে তিনি [নিবিষ্টভাবে] মাটি নাড়াচাড়া করছিলেন। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং বললেন, ক্ববরের আযাব থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করো। এ কথা তিনি দুবার কি তিনবার বললেন। তারপর বললেন, মুমিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে [মৃত্যুর কাছাকাছি হয়] তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু মালায়িকাহ্ [ফেরেশতাগণ] তার কাছে যান। তাঁদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য। তাদের সাথে [জান্নাতের রেশমী কাপড়ের] কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্ম। আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সস্তুষ্টির কাছে পৌঁছবার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, এ কথা শুনে মুমিন বান্দার রূহ তার দেহ হইতে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক হইতে পানির ফোটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেবার পর অন্যান্য মালাকগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হইতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তারপর ওই মালায়িকাহ্ [ফেরেশতারা] এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওয়ানা হন [যাবার পথে] সাক্ষাত হওয়া মালায়িকার কোন একটি দলও এ পবিত্র রূহ কার জিজ্ঞেস করিতে ছাড়েন না। তারা বলে অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী মালাকগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যায়। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত , পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। [এ সময়] আল্লাহ তাআলা মালাকগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ইল্লীয়্যিনে লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে [ক্ববরে] পাঠিয়ে দাও [যাতে ক্ববরের] সওয়াল জবাবের জন্য তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি হইতে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হইতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দুজন মালাক [ফেরেশতা] [মুনকির নাকীর] এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব আল্লাহ। আবার তারা দুজন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দ্বীন ইসলাম। আবার তারা দু মালাক প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দিবে, ইনি হলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। তারপর তারা দুজন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাই আমি তাহাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী [আল্লাহ] আহ্বান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দাও। [তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে]। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকিবে। তারপর তার ক্ববরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভাল কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশী করিবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক আমাল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। হে আল্লাহ। তুমি ক্বিয়ামাত কায়িম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, কাফির ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন শেষ করে যখন আখিরাতে পদার্পণ করিবে, আসমান থেকে আযাবের মালায়িকা নাযিল হবেন। তাদের চেহারা নিকষ কালো। তাদের সাথে কাঁটাযুক্ত কাফনের কাপড় থাকিবে। তারা দৃষ্টির শেষ সীমায় এসে বসেন। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন ও তার মাথার কাছে বসেন এবং বলেন, হে নিকৃষ্ট আত্মা আল্লাহর আযাবে লিপ্ত হবার জন্য তাড়াতাড়ি দেহ হইতে বের হও। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, কফিরের রূহ এ কথা শুনে তার গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত তার রূহকে শক্তি প্রয়োগ করে টেনে হেঁচড়ে বের করে নিয়ে আসেন, যেভাবে লোহার গরম শলাকা ভিজা পশম হইতে টেনে বের করা হয় [আর এতে পশম আটকে থাকে]। মালাকুল মাওত রূহ বের করে আনার পর অন্যান্য মালায়িকাহ্ এ রূহকে মালাকুল মাওতের হাতে এক পলকের জন্য থাকতে দেন না বরং তারা নিয়ে [কাফনের কাপড়ে] মিশিয়ে দেন। এ রূহ হইতে মরা লাশের দুৰ্গন্ধ বের হয় যা দুনিয়ায় পাওয়া যেত। মালায়িকাহ্ এ রূহকে নিয়ে আসমানের দিকে চলে যান। যখন মালায়িকার কোন দলের কাছে পৌঁছেন, তারা জিজ্ঞেস করেন, এ নাপাক রূহ কার? মালায়িকাহ্ জবাব দেন, এটা হলো অমুক ব্যক্তির সস্তান অমুক। তাকে খারাপ নাম ও খারাপ বিশেষণে ভূষিত করেন, যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হত। এভাবে যখন আসমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়া হয়, তার জন্য আসমানের দরজা খুলতে বলা হয়। কিন্তু আসমানের দরজা তার জন্য খোলা হয় না। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [দলীল হিসেবে] এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন, [অনুবা-দ] “ওই কাফিরদের জন্য আসমানের দরজা খোলা হবে না, আর না তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যে পর্যন্ত উট সুইয়ের ছিদ্র পথে প্রবেশ করিবে।” এবার আল্লাহ তাআলা বলবেন, তার আমলনামা সিজ্জীনে লিখে দাও যা জমিনের নীচতলায়। বস্তুত কাফিরদের রূহ [নিচে] নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়া হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দলীল হিসেবে এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন, “[অনুবাদ] যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শির্ক করেছে, সে যেন আকাশ হইতে নিক্ষিপ্ত হয়ে পড়েছে। তাকে পশু পাখী ঠুকরিয়ে নেয় [অর্থাৎ ধ্বংস হয়ে যায়]। অথবা ঝড়ো বাতাস তাকে [উড়িয়ে নিয়ে] দূরে নিক্ষেপ করে ফেলে দেয়। [অর্থাৎ আল্লাহর রহ্মাত থেকে দূরে সরে যায়]।” রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তারপর তার রূহকে তার দেহে ফিরিয়ে দেয়া হয়। [এ সময়] দুজন মালাক তার কাছে আসেন। বসিয়ে দিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার রব কে? [সে কাফির ব্যক্তি কোন সদুত্তর দিতে না পেরে] বলবে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।” তারপর তারা দুজন জিজ্ঞেস করিবেন, “তোমার দ্বীন কি?” সে [কাফির ব্যক্তি] বলবে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।” তারপর তারা দুজন জিজ্ঞেস করেন, “এ ব্যক্তি কে, যাকে তোমাদের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল?” সে বলে, “হায়! হায়! আমি কিছু জানি না।” তখন আসমান থেকে একজন আহ্বানকারী আহ্বান করে বলেন, এ ব্যক্তি মিথ্যা বলেছে, অতএব তার জন্য আগুনের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। [তখন সে দরজা দিয়ে তার কাছে] জাহান্নামের গরম বাতাস আসতে থাকিবে। তার ক্ববরকে এত সংকীর্ণ করা হবে যে, [দুপাশ মিলে যাবার পর] তার পাঁজরের এদিকের [হাড়গুলো] ওদিকে, ওদিকেরগুলো এদিকে বের হয়ে আসবে। তারপর তার কাছে একটি কুৎসিত চেহারার লোক আসবে, তার পরনে থাকিবে ময়লা, নোংরা কাপড়। তার থেকে দুর্গন্ধ আসতে থাকিবে। এ কুৎসিত লোকটি [ক্ববরে শায়িত লোকটিকে] বলিতে থাকিবে, তুমি একটি খারাপ খবরের সংবাদ শুনো যা তোমাকে চিন্তায় ও শোকে-দুঃখে কাতর করিবে। আজ ওইদিন, যেদিনের ওয়াদা [দুনিয়ায়] তোমাকে করা হয়েছিল। সে জিজ্ঞেস করে, তুমি কে? তোমার চেহারা এত কুৎসিত যে, খারাপ ছাড়া কোন [ভাল] খবর নিয়ে আসতে পারে না। সে লোকটি বলবে, “আমি তোমার বদ আমাল”৷ এ কথা শুনে ওই মুর্দা ব্যক্তি বলবে, হে আমার পরোয়ারদিগার। “তুমি ক্বিয়ামাত ক্বায়িম করো না।” আর একটি বর্ণনায় এতটুকু বেশী বর্ণিত হয়েছে যে, যখন তার [মুমিনের] রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ তার ওপর রহ্‌মাত পাঠাতে থাকেন। তার জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার মালাক আল্লাহ তাআলার কাছে এ মুমিনের রূহ তার কাছ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাবার আবেদন জানায় [যাতে এ মালাক মুমিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করিতে পারে।] আর কাফিরের রূহ তার রগের সাথে সাথে টেনে বের করা হয়। এ সময় আসমান ও জমিনের সকল মালাক তার ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করিতে থাকেন। আসমানের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। সমস্ত দরজার মালাকগণ [আল্লাহর নিকট] আবেদন জানায়, তার দরজার কাছ দিয়ে যেন তার রূহকে আকাশে উঠানো না হয়।

[আহ্‌মাদ]” {১}, {১} সহীহ : আহমাদ ১৮৫৩৪, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১২০৫৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১০৭, সহীহ আত তারগীব ৩৫৫৮, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ১৬৭৬। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৩১. আবদুর রহমান ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, [আমার পিতা] কাব-এর মৃত্যু আসন্ন হলে ইবনি মারূর-এর কন্যা উম্মু বিশ্র [রাদি.] তার কাছে এলেন এবং বলিতে লাগলেন, হে আবু আবদুর রহমান [কাব-এর ডাক নাম] আপনি মৃত্যুবরণ করার পর [আলামে বারযাখে] অমুক ব্যক্তির সাথে দেখা হলে তাকে আমাদের সালাম বলবেন। এ কথা শুনে কাব বললেন, হে উম্মু বিশ্র! আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। ওখানে আমার সবচেয়ে বেশী ব্যস্ততা থাকিবে। তখন উম্মু বিশ্‌র [রাদি.] বললেন, হে আবু আবদুর রহ্মান। আপনি কি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনেননি? আলামে বারযাখে মুমিনদের রূহ সবুজ পাখির ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ হইতে ফল-ফলাদি খেতে থাকিবে। কাব বললেন, হ্যাঁ, আমি শুনিয়াছি। উম্মু বিশ্র [রাদি.] বললেন, এটাই হলো [তাই আপনি এ মর্যাদা পাবেন বলে আশা করা যায়]

। [ইবনি মাজাহ, বায়হাক্বী- কিতাবুল বাসি ওয়ান্ নুশুর]” {১}, {১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৪৪৯। কারণ এর সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি ইসহক একজন মুদাল্লিস রাবী সে عنعن সূত্রে হাদিস বর্ণনা করে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

১৬৩২. আবদুর রহমান ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন যে, মুমিনের রূহ [আলামে বার্যাখে] পাখীর ক্বালবে থেকে জান্নাতের গাছ থেকে ফল-ফলাদি খেতে থাকিবে যে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা [তাকে উঠাবার দিন] এ রূহ তার শরীরে ফিরিয়ে না দেন [অর্থাৎ ক্বিয়ামাতের দিন]।

” [মালিক, নাসায়ী, বায়হাক্বী- কিতাবুল বাসি ওয়ান্ নুশূর]” {১}, {১} সহীহ : নাসায়ী ২০৭৩, মালিক ৫৬৬, আহমাদ ১৫৭৯২, সহীহ আল জামি আস্ সগীর ২৩৭৩। মৃত্যুর কাছাকাছি -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৬৩৩. মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি [একবার] জাবির ইবনি আবদুল্লাহর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুশয্যায়। আমি তাহাঁর কাছে আরয করলাম, [আপনি আলামে বার্যাখে পৌঁছে] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমার সালাম দেবেন।” [ইবনি মাজাহ] {১}

{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ১৪৫০, আহমাদ ১৯৪৮২। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এর সানাদের সকল রাবী বিশ্বস্ত হলেও আহমাদ ইবনি আযহার সম্পর্কে ঈমাম হাকিম [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, বৃদ্ধ বয়সে তাকে তালকীন দিতে হত। আর ইবনি হিব্বান বলেছেন, সে ভুল করে। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply