মুয়াত্তা মালিক – পবিত্রতা অর্জন
মুয়াত্তা মালিক, এই অধ্যায়ে হাদীস =১১৫ টি ) ৩১-১৪৫ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ২ -পবিত্রতা অর্জন
পরিচ্ছেদঃ ১ অযূর পদ্ধতি
পরিচ্ছেদঃ ২ ঘুম হতে জেগে ওযূ করে নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে
পরিচ্ছেদ ০৩. ওযূর জন্য পবিত্র পানি ব্যবহার করা
পরিচ্ছেদঃ ৪ যাতে ওযূ ওয়াজিব হয় না
পরিচ্ছেদঃ ৫ – আগুনে জ্বাল দেওয়া বস্তু খেয়ে ওযূ না করা
পরিচ্ছেদঃ ৬ – ওযূ সম্পর্কীয় বিবিধ হাদীস
পরিচ্ছেদঃ ৭ – মাথা ও দুই কান মাসেহ-এর বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ৮ – পদাবরণী বা মোজা মাসেহ
পরিচ্ছেদঃ ৯ – মোজা মাসেহ-এর নিয়ম
পরিচ্ছেদঃ ১০- নাক দিয়ে রক্ত ঝরা ও বমি সম্পর্কীয় বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১১ – নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হলে কি করিতে হয় তার বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১২ – জখম অথবা নাক হতে প্রবাহিত রক্ত প্রবল হলে কি করিতে হইবে
পরিচ্ছেদঃ ১৩ – মযী [বের হওয়া]-এর কারণে ওযূ
পরিচ্ছেদঃ ১৪ – মযী নির্গত হওয়ার কারণে ওযূ না করার অনুমতি
পরিচ্ছেদঃ ১৫ – লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করা
পরিচ্ছেদঃ ১৬ – স্বামী কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বনের কারণে ওযূ করা
পরিচ্ছেদঃ ১৭ – জানাবত-এর গোসলের বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ১৮ – দুই লজ্জাস্থানের স্পর্শে গোসল ওয়াজিব হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ১৯- জুনুব ব্যক্তির ওযূ করা গোসলের পূর্বে নিদ্রা অথবা খাদ্য গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করলে
পরিচ্ছেদঃ ২০ – জুনুব ব্যক্তির জানাবত মনে না থাকার কারণে নামায আদায় করলে সে নামায নতুন করে আদায় করা এবং গোসল করা ও কাপড় ধোয়া
পরিচ্ছেদঃ ২১ – পুরুষের মত স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা
পরিচ্ছেদঃ ২২ -জানাবত গোসলের বিবিধ হুকুম
পরিচ্ছেদঃ ২৩ -তাইয়াম্মুম
পরিচ্ছেদঃ ২৪ -তাইয়াম্মুমের কার্যাবলি
পরিচ্ছেদঃ ২৫ -জুনুবী ব্যক্তির তাইয়াম্মুম
পরিচ্ছেদঃ ২৬ -স্ত্রী ঋতুমতী থাকলে স্বামীর জন্য তার কতটুকু হালাল হইবে
পরিচ্ছেদঃ ২৭ -ঋতুমতীর পবিত্রতা
পরিচ্ছেদঃ ২৮ -ঋতু সম্পর্কীয় বিবিধ হুকুম
পরিচ্ছেদঃ ২৯ মুস্তাহাযা
পরিচ্ছেদঃ ৩০ -দুগ্ধপোষ্য বালকের প্রস্রাব সম্পর্কীয় আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩১ -দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা
মুয়াত্তা মালিক পরিচ্ছেদঃ ১ অযূর পদ্ধতি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩১ – ইয়াহইয়া মাযনী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে ওযূ করিতেন আপনি আমাকে দেখাতে পারেন কি? আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ [রাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ পারি। তারপর তিনি পানি আনাইলেন এবং তাহাঁর হাতের উপর পানি ঢাললেন। তিনি দুই দুইবার তাহাঁর উভয় হাত ধুইলেন, তারপর কুলি করিলেন ও নাক পরিষ্কার করিলেন তিনবার। তারপর মুখমণ্ডলকে তিনবার ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধুলেন দুই দুইবার। পরে দুই হাত দ্বারা শির মাসেহ করিলেন, দু হাত দিয়ে সম্মুখ হতে আরম্ভ করে পিছনের দিকে নিলেন এবং পিছনের দিক হতে আরম্ভ করে সামনের দিকে আনলেন। মাসেহ আরম্ভ করিলেন মাথার সামনের দিক হতে। অতঃপর উভয় হাত মাথার পিছনের দিকে নিয়া গেলেন। তারপর উভয় হাত ফিরালেন এবং যে স্থান হতে শুরু করেছিলেন, পুরনায় সেই স্থানেই ফিরিয়ে আনলেন। তারপর তাহাঁর দুই পা ধুলেন।
[বোখারী ১৮৫, মুসলিম ২৩৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩২ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন ওযূ করে, তখন সে যেন তার নাকে পানি দেয়, তারপর নাক পরিষ্কার করে, আর যে কুলুখ গ্রহণ করে সে যেন বেজোড় কুলুখ নেয়।
[বোখারী ১৬২, মুসলিম ২৩৭] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩৩ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ওযূ করে সে যেন নাক পরিষ্কার করে আর যে কুলুখ নেয় সে বেজোড় নেবে।
[বোখারী ১৬১, মুসলিম ২৩৭] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩৪ – ইয়াহইয়া [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এক আজলা পানি দ্বারা যে কুলিও করে এবং নাকও পরিষ্কার করে, তার এইরূপ করাতে কোন ক্ষতি নাই। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৩৫ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
নবি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাঃআ:]-এর নিকট আবদুর রহমান ইবনি আবু বকর [রাঃআ:] উপস্থিত হলেন, যেদিন সাদ ইবনি আবু ওয়াককাস [রাঃআ:] ইন্তিকাল করেন সেদিন। তারপর তিনি ওযূর পানি চাইলেন। আয়েশা [রাঃআ:] তাঁকে বলিলেন, পূর্ণভাবে ওযূ কর, কারণ আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছি وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنْ النَّارِ “পায়ের গিটসমূহের জন্য ধ্বংস নরকাগ্নির।
{১} [সহিহ, মুসলিম ২৪০, আয়েশা [রাঃআ:] থেকে বরাতে বর্ণনা করেন, ইমাম মালিক [রঃ] যে সনদে বর্ণনা করেন সনদটি মুনকাতে মূলত হাদীসটি মুত্তাফাক আলাইহি। বোখারী ৬০, মুসলিম ২৪১] {১} যে ব্যক্তি ওযূতে পায়ের গিট ধৌত করে না তাহাকে নরকাগ্নির ভয় দেখানো হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩৬ – আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি শুনেছেন উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] পানি দ্বারা তাহাঁর ইযারের [পায়জামা বা লুঙ্গী] নিচে ধুতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৩৭ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
প্রশ্ন করা হল এমন এক লোক সম্পর্কে যে ওযূ করেছে এবং ভুলে কুলি করার আগে মুখমণ্ডল ধুয়ে ফেলেছে অথবা মুখমণ্ডল ধোয়ার আগে ধুয়েছে দুই হাত। তিনি [উত্তরে] বলিলেন, কুলি করার আগে যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল ধুয়েছে সে কুলি করে নিবে এবং পুনরায় আর মুখমণ্ডল ধুবে না। আর যে ব্যক্তি মুখমণ্ডল ধোয়ার পূর্বে তাহাঁর হস্তদ্বয় ধুয়েছে সে মুখমণ্ডল ধুবে এবং পুনর্বার উভয় হাত ধুবে, যেন হস্তদ্বয় ধোয়ার কাজ মুখমণ্ডল ধোয়ার পরে হয়। তবে উহা তখন করিবে যখন সে ওযূর স্থানে অথবা উহার নিকটবর্তী স্থানে থাকে।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৩৮ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি ভুলবশত কুলি করেনি অথবা নাক পরিষ্কার করেনি, এই অবস্থায় সে নামায আদায় করেছে। উত্তরে তিনি বলিলেন, সে লোকের পক্ষে নামায পুনরায় আদায় করিতে হইবে না। সে পরে অন্য নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে তবে কুলি করিয়া লইবে এবং নাক পরিষ্কার করিবে। {১}
{১} হে মুমিনগণ, যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথা মাসেহ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২ ঘুম হতে জেগে ওযূ করে নামায আদায়ের ইচ্ছা করলে
৩৯ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ঘুম হতে জেগে উঠলে ওযূর পাত্রে হাত দেওয়ার আগে তাহাঁর হাত ধুয়ে নিবে, কেননা তার জানানাই তার হাত কোথায় রাত্রি যাপন করেছে।
[বোখারী ১৬২, মুসলিম ২৭৮] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৪০- উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তোমাদের কেউ কোন বস্তুর সাথে ঠেস দিয়ে ঘুমালে ওযূ করিবে।
যায়দ ইবনি আসলাম [রা] এই আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,
এটা সে সময়, যখন শয্যা অর্থাৎ নিদ্রা হতে তোমরা ওঠ। [হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৪১ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমাদের ফয়সালা এই নাক দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলে, শরীর হতে খুন নির্গত হলে এবং পুঁজ বহির্গত হলে ওযূ করিতে হইবে না।
হাদস যাহাতে ওযূ নষ্ট হয়, এর কারণে অযূ করিতে হইবে; যা বের হয় গুহ্যদ্বার অথবা জননেন্দ্রীয় হতে অথবা নিদ্রার কারণে।
নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে বর্ণিত; ইবনি উমার [রাঃআ:] বসা অবস্থায় ঘুমাতেন। অতঃপর ওযূ না করে নামায আদায় করিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদ ০৩. ওযূর জন্য পবিত্র পানি ব্যবহার করা
৪২ – মুগীরা ইবনি আবী বুরদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন ঃ এক ব্যক্তি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সাগরে আরোহণ করি [নৌকা বা জাহাজে আরোহণ করি] আর আমাদের সাথে অল্প পানি নিয়ে যাই। যদি আমরা সে পানি দিয়ে ওযূ করি তবে আমরা পিপাসিত থাকব। তাই সমুদ্রের পানি দিয়ে আমরা ওযূ করব কি? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিলেন সাগরের পানি অতি পবিত্র। এর মৃত জীব হালাল।
[সহিহ আবু দাউদ ৮৩, তিরমিজি ৬৯, নাসাঈ ৩৩২, ইবনি মাজাহ ৩৮৬, আহমদ ৭২৩২, নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৩ – কাব্শাহ্ বিনতে কাব ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবু কাতাদা [রাঃআ:] তাহাঁর কাছে এলেন। কাব্সা তাহাঁর জন্য ওযূর পানি ঢালতেছিলেন। এমন সময় একটি বিড়াল উহা হতে পানি পানের জন্য এল। আবু কাতাদা পানির পাত্র এর জন্য কাত করিলেন, বিড়াল পানি পান করিল। কাবসা বলেন, তিনি আমাকে দেখলেন আমি খুব বিস্ময়ের সাথে তাহাঁর দিকে দেখিতেছি। তাই তিনি বলিলেন, হে ভাতিজী! তুমি কি আশ্চর্যবোধ করিতেছ? আমি [উত্তরে] বললাম হ্যাঁ। তারপর তিনি বলিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিড়াল নাপাক নয়, এটা তোমাদের আশেপাশে যাঁরা অধিক ঘোরাফেরা করে, তাহাদের অন্তর্ভুক্ত।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, বিড়ালের মুখে নাজাসত [নাপাকী] না থাকলে উহার মুখ [পাত্রে] দেয়াতে কোন ক্ষতি নেই।
[সহিহ, আবু দাউদ ৭৫, তিরমিজি ৯২, নাসাঈ ৬৮, ইবনি মাজাহ ৩৬৭, আহমদ ২২৫৮১, নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন। সহিহ জামে ২৪৩৭] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৪ – ইয়াহইয়া ইবনি আবদুর রহমান ইবনি হাতিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] এক কাফেলার সাথে বের হলেন। কাফেলায় আমর ইবনি আস [রাঃআ:]-ও শরীক ছিলেন। তাঁরা একটি জলাধারের কাছে অবতরণ করিলেন। জলাধারের মালিককে আমর ইবনি আস বলিলেন, হে জলাধারের মালিক! আপনার জলাধারে চতুষ্পদ জন্তু অবতরণ করে কি? উমর ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] জলাধারের মালিককে বলিলেন, আপনি [এই বিষয়ে] আমাদেরকে খবর দিবেন না। কারণ আমরা চতুষ্পদ জন্তুসমূহের নিকট বিচরণ করি এবং তারাও আমাদের কাছে বিচরণ করে। [হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৪৫ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] বলিতেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে নারী-পুরুষ একসাথে ওযূ করিতেন।
[সহিহ, বোখারী ১৯৩] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ৪ যাতে ওযূ ওয়াজিব হয় না
৪৬ – ইবরাহীম ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
উম্মে ওয়ালাদ [তাহাঁর নাম হুমায়দা বলা হয়েছে] হতে বর্ণিত; তিনি নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী উম্মে-সালমা [রাঃআ:]-এর কাছে প্রশ্ন করিলেন আমি একজন স্ত্রীলোক। আমি আমার কাপড়ের ঝুল লম্বা রাখি আর আমি কোন কোন সময় চলাফেরা করি আবর্জনাযুক্ত স্থান দিয়ে। উম্মে-সালমা [রা] বলিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিয়াছেন, কাপড়ের ঝুলকে আবর্জনাযুক্ত রাস্তার পরবর্তী স্থান পবিত্র করে দেবে।
[সহিহ, আবু দাউদ ৩৮৩, তিরমিজি ১৪৩, ইবনি মাজাহ ৫৩১, আহমদ ২৬৫৩১, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন, মিশকাত ৫০৪] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৪৭ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রবীআ ইবনি আবদুর রহমানকে কয়েকবার উদর হতে পানি বমি করিতে দেখেছেন, তখন তিনি ছিলেন মসজিদে। তিনি অতঃপর নামায আদায় করা পর্যন্ত মসজিদ হতে বেরও হতেন না এবং ওযূও করিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হয়েছে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি খাদ্যবস্তু বমি করেছে, তার জন্য ওযূ ওয়াজিব হইবে কি? তিনি বলিলেন, তার জন্য ওযূ ওয়াজিব নহে, এর জন্য সে কুলি করিবে এবং তার মুখ ধুবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৪৮ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] সাঈদ ইবনি যায়দ-এর এক [মৃত] পুত্রকে হানূত [এক প্রকারের খোশবু, যা মৃত ব্যক্তিকে লাগানোর জন্য তৈরি করা হয়।] লাগালেন এবং তাহাঁর লাশ বহন করিলেন, অতঃপর ওযূ না করে মসজিদে প্রবেশ করে তিনি নামায আদায় করিলেন।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল, বমি করলে ওযূ করিতে হইবে কি? তিনি বলিলেন, না। তবে এর জন্য কুলি করিবে এবং তাহাঁর মুখ ধুবে। তার উপর ওযূ ওয়াজিব নয়। [হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৫ – আগুনে জ্বাল দেওয়া বস্তু খেয়ে ওযূ না করা
৪৯ – আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাগের কাঁধের গোশত আহার করার পর ওযূ না করে নামায আদায় করিলেন।
[বোখারী ২০৭, ২০৮, মুসলিম ৩৫৪] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫০ – সুওয়ায়দ ইবনি নুমান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে খায়বরের যুদ্ধের বছর, বের হলেন। যখন তাঁরা সাহ্বা নামক স্থানে পৌঁছালেন সেটা খায়বরের ঢালু অংশে অবস্থিত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [তথায়] অবতরণ করিলেন, তারপর আসর নামায আদায় করিলেন। অতঃপর সফরে খাওয়ার জন্য রাখা খাদ্যবস্তু এবং উহার পাত্রসমূহ আনতে বলিলেন, তাহাঁর নিকট ছাতু ছাড়া অন্য কিছু উপস্থিত করা হল না। তিনি নির্দেশ দিলেন, উহা গুলান হল, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেলেন, আমরাও খেলাম। অতঃপর মাগরিবের নামাযের জন্য উঠিলেন এবং কুলি করিলেন, আমরাও কুলি করলাম। তারপর তিনি নামায আদায় করিলেন, অথচ আর ওযূ করিলেন না।
[সহিহ, বোখারী ২০৯, ৪১৯৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৫১ – রবীআ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হুদায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:]-এর সাথে সন্ধ্যাকালীন খাবার খেলেন, তারপর নামায আদায় করিলেন আর অযূ করিলেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৫২ – বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
উসমান ইবনি আফফান [রাঃআ:] রুটি-গোশত খেলেন, তারপর কুলি করিলেন, উভয় হাত ধুলেন এবং হস্তদ্বয় দ্বারা মুখমণ্ডল মাসেহ করিলেন, তারপর নামায আদায় করিলেন অথচ পুনরায় ওযূ করিলেন না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তিনি জানতে পেরেছেন যে, আলী ইবনি আবি তালিব [রাঃআ:] এবং আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] আগুনে জ্বাল দেওয়া খাদ্যবস্তু খেয়ে অযূ করিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৫৩ – ইয়াহইয়াহ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি আমির ইবনি রবীআ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর কাছে একটি প্রশ্ন করিলেন এমন এক লোক সম্পর্কে, যে নামাযের জন্য ওযূ করে আগুনে রন্ধন করা খাদ্যবস্ত খেল, সে কি ওযূ করিবে? তিনি বলিলেন, আমার পিতাকে দেখেছি তিনি এইরূপ রান্না করা খাদ্য খেতেন কিন্তু ওযূ করিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৫৪ -আবু নুয়াইম ওহাব ইবনি কায়সান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন আমি আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআ:]-কে দেখেছি, তিনি গোশ্ত খেলেন, অতঃপর নামায আদায় করিলেন অথচ ওযূ করিলেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৫৫ – মুহাম্মাদ ইবনি মুনকাদির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে [খানার জন্য] দাওয়াত করা হল, তাহাঁর সামনে রুটি-গোশত পেশ করা হল। তিনি উহা হতে খেলেন, তারপর ওযূ করিলেন ও নামায আদায় করিলেন। অতঃপর সেই খাদ্যের অবশিষ্ট তাহাঁর কাছে আনা হল। তিনি তা হতে খেলেন, তারপর নামায আদায় করিলেন, আর ওযূ করিলেন না।
[সহিহ, আবু দাউদ ১৯১, তিরমিজি ৮০, হাদীসটিকে নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ বলেছেন জাবির বিন আব্দুল্লাহ এর সনদে, সহিহ এবং জঈফ সুনান আবু দাউদ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৬ – আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
ইরাক হতে আগমন করিলেন। তাহাঁর কাছে আবু তালহা ও উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] এলেন। আগুনে রান্না করা হয়েছে এমন খাদ্য তাঁদের দুজনের কাছে পরিবেশন করা হল। সকলে উহা হতে আহার করিলেন, অতঃপর আনাস [রাঃআ:] উঠলেন এবং ওযূ করিলেন। [এটা দেখে] আবু তালহা ও উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] বলিলেন, হে আনাস! এটা কি? এটা কি ইরাকী আমল? আনাস [রা] বলিলেন, আমি যদি এটা না করতাম [তবে ভাল হত]। আবু তালহা ও উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] উঠলেন এবং নামায আদায় করিলেন, তাঁরা ওযূ করিলেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৬ – ওযূ সম্পর্কীয় বিবিধ হাদীস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৫৭ – উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রঃ] হইতে বর্ণিতঃ
ইস্তিতাবা {১} সম্পর্কে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ কি তিনটি পাথরও পায় না [যদ্দারা সে পবিত্রতা লাভ করিতে সক্ষম হয়]? [সহিহ, আবু দাউদ ৪০, আয়েশা [রাঃআ:] বরাত দিয়ে বর্ণনা করিয়াছেন। নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন]
{১} ইস্তিতাবা অর্থ ইস্তিনজা অর্থাৎ পেশাব-পায়খানা হতে পবিত্রতা অর্জন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৮ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [একদা] কবরস্থানের দিকে গেলেন। তিনি সেখানে পৌঁছার পর বলিলেন,
“তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মুমিন সম্প্রদায়ের বাসস্থানে [অর্থাৎ কবরস্থানে] বসবাসকারিগণ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব, ইনশাআল্লাহ।” আমার আকাঙ্ক্ষা, যদি আমার ভাইদেরকে দেখতাম! তাঁরা বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার ভাই নই কি? তিনি বলিলেন, তোমরা আমার আসহাব, আমার ভাই তাঁরা যাঁরা এখনও [ইহজগতে] আসেননি। আমি তাঁদের অগ্রদূত হব হাওযের কাছে। তাঁরা বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাঁরা আপনার পরে আগমন করিবে আপনি তাঁদের পরিচয় পাবেন কিভাবে? তিনি বলিলেন, তোমরা আমাকে বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির কাছে পায়ে ও ললাটে সাদা চিহ্নযুক্ত ঘোড়া থাকে এবং সেগুলি গাঢ় কাল রং-এর ঘোড়ার সাথে একত্র থাকে, তবে সেই ব্যক্তি কি তার [সাদা চিহ্নযুক্ত] ঘোড়া চিনতে পারবে না? তাঁরা বলিলেন, হ্যাঁ, ইয়া রসূলাল্লাহ! চিনতে পারবে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমার উম্মতকে আমি চিনতে পারব। কারণ তাঁরা ওযূর কারণে রোজ কিয়ামতে জ্যোতির্ময় চেহারা এবং জ্যোতির্ময় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে উপস্থিত হইবে। আমি হাওযে তাঁদের অগ্রদূত থাকব। দলভ্রষ্ট উটকে যেভাবে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, আমার হাওয হতে কাউকেও তদ্রুপ তাড়িয়ে দেওয়া হলে আমি তাকে আহ্বান করব, أَلَا هَلُمَّ أَلَا هَلُمَّ أَلَا هَلُمَّ ওহে, [আমার নিকট] আস, [আমার নিকট] আস, [আমার নিকট] আস। তারপর আমাকে বলা হইবে, এরা [আপনার সুন্নতকে] আপনার পরে পরিবর্তন করেছে। আমি বলব, فَسُحْقًا فَسُحْقًا فَسُحْقًا -তবে দূর হও, দূর হও, দূর হও।
[সহিহ, মুসলিম ২৪৯, মূলত হাদীসটি মুত্তাফাক আলাইহ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৫৯ – হুমরান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
উসমান ইবনি আফফান [রাঃআ:] [একদা] বৈঠকখানায় বসলেন। মুয়াযযিন এসে তাঁকে আসরের নামাযের সংবাদ দিলেন। তিনি পানি আনালেন, তারপর ওযূ করিলেন এবং বলিলেন, আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কাছে একটি হাদীস বয়ান করব। কিতাবুল্লাহর [কুরআনের] একটি আয়াত যদি না থাকত তবে আমি তোমাদের নিকট হাদীস বয়ান করতাম না। অতঃপর বলিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলিতে শুনিয়াছি যে ব্যক্তি ওযূ করে আর সে তার ওযূকে উত্তমরূপে সমাধা করার পর নামায পরে তার [পাপ] মার্জনা করা হইবে অর্থাৎ পরবর্তী নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত অর্থাৎ পরবর্তী নামায আদায় করলেই এই মার্জনা পাওয়া যাবে।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, আমার ধারণা, উসমান [রাঃআ:] যেই আয়াতের কথা বলেছেন তা এই
[বোখারী ১৬০, মুসলিম ২২৭] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬০ – আবদুল্লাহ সুনবিহী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিন বান্দা যখন ওযূ করে এবং কুলি করে, তাহাঁর মুখ হতে পাপসমূহ বের হয়ে যায়। সে যখন মুখমণ্ডল ধোয় তাহাঁর মুখমণ্ডল হতে তখন পাপসমূহ বের হয়ে যায়। এমনকি চক্ষুদ্বয়ের পালকের নিচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। তারপর যখন সে তাহাঁর উভয় হাত ধোয় তখন পাপসমূহ হস্তদ্বয় হতে বের হয়ে যায়; এমনকি তাহাঁর উভয় হাতের নখসমূহের নিচ হতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে তাহাঁর মাথা মাসেহ করে তাহাঁর পাপসমূহ তখন তাহাঁর মাথা হতে বের হয়ে যায়; এমনকি তাহাঁর উভয় কান হতেও বেরিয়ে যায়। যখন সে তাহাঁর উভয় পা ধোয় তখন পাপসমূহ তাহাঁর উভয় পা হতে বেরিয়ে যায়; এমনকি তাহাঁর উভয় পায়ের সকল নখের নিচ হতেও গুনাহ বেরিয়ে যায়। তিনি [রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর সেই ব্যক্তির মসজিদে গমন এবং নামায আদায় করা তাহাঁর জন্য নফল [অতিরিক্ত সওয়াবের বস্তু]-স্বরূপ হয়।
[সহিহ, নাসাঈ ১০৩, ইবনি মাজাহ ২৮২, নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ জামে গ্রন্থে ৪৪৯, সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬১ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মুমিন বান্দা অযূ করে এবং তাহাঁর মুখমণ্ডল ধোয় তখন তাহাঁর মুখমণ্ডল হতে সকল গুনাহ যা দেখার কারণে অর্জিত হয়েছে, বাহির হয়ে যায়; পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ কাতরার [ফোঁটা] সঙ্গে অথবা [এর সমার্থবোধক] অনুরূপ কোন বাক্য। তারপর যখন সে তাহাঁর উভয় হাত ধোয় তখন তাহাঁর হস্তদ্বয় হতে হস্তদ্বয় দ্বারা অর্জিত সকল পাপ বেরিয়ে যায়। পানির সঙ্গে অথবা [বলেছেন] পানির শেষ কাতরার সঙ্গে; এমনকি সে যাবতীয় পাপ হতে পবিত্র হয়ে যায়।
[সহিহ, মুসলিম ২৪৪] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬২ – আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমন সময় দেখলাম যখন আসরের নামাযের সময় নিকটবর্তী। লোকজন ওযূর জন্য পানি খোঁজ করিলেন, কিন্তু তাঁরা পানি পেলেন না। পরে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একটি পাত্রে কিছু পানি আনা হল, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের হাত সেই পাত্রে রাখলেন। তারপর লোকজনকে উহা হতে ওযূ করার নির্দেশ দিলেন। আনাস [রাঃআ:] বলেন, আমি নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অঙ্গুলিসমূহের নিচ হতে পানি নির্গত হতে দেখলাম, লোকজন ওযূ করিলেন। এমনকি তাঁদের [দলের] সর্বশেষ ব্যক্তিও ওযূ করিলেন।
[বোখারী ১৬৯, মুসলিম ২৭৭৯] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৩ – নুআয়ম ইবনি আবদুল্লাহ মুজমির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে এবং তাহাঁর ওযূকে উত্তমরূপে সম্পাদন করেছে, অতঃপর নামাযের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, সে নামাযে থাকিবে [সওয়াবের দিক দিয়া নামাযে বলে গণ্য হইবে] যতক্ষণ নামাযের নিয়ত রাখবে এবং তাহাঁর জন্য প্রতিটি প্রথম পদ উত্তোলনে একটি করে সওয়াব লিপিবদ্ধ হইবে, আর প্রতিটি দ্বিতীয় পদ উত্তোলনের পরিবর্তে তাহাঁর পাপ মোচন করে দেওয়া হইবে। তাই তোমাদের কেউ ইকামত শুনতে পেলে দৌড়াবে না, কারণ তোমাদের মধ্যে সেই লোকই বেশি সওয়াবের অধিকারী যার ঘর মসজিদ হতে বেশি দূরে। শ্রোতারা বলিলেন, এইরূপ কেন, হে আবু হুরাইরা? তিনি বলিলেন, পদক্ষেপের আধিক্যের কারণে। [হাদীসটি ইমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে হাদীসটি মারফু হাদীসের ন্যায় করেন অন্যান্য অধ্যায়ে এর সমর্থনে মারফু হাদীস রয়েছে]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৬৪ – ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল, মল-মূত্র ত্যাগের কারণে পানি দ্বারা ইস্তিন্জা [মল-মূত্র ত্যাগের পর বিশেষ স্থান ধৌত করা] করা সম্পর্কে। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, ইহা অবশ্য মেয়েদের ইস্তিন্জা। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৬৫ – আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো পাত্র হতে কুকুর আহার করলে, তবে অবশ্যই সেটাকে সাতবার ধুবে।
[বোখারী ১৭২, মুসলিম ২৭৯] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৬ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে শরীয়ত তোমাদের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে তার উপর তোমরা দৃঢ়তার সাথে থাক, পূর্ণ ইস্তিকামাত বা দৃঢ়তার সামর্থ্য তো তোমাদের নেই। তাই আমল করিতে থাক। তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম আমল হলো নামায। মুমিন ব্যতীত অন্য কেউ ওযূর যথাযোগ্য হিফাযত [পূর্ণঙ্গভাবে ওযূ করার প্রতি লক্ষ্য রাখার নাম মুহাফিযাত] করে না।
[সহিহ, সাওবান [রাঃআ:] থেকে ইবনি মাজাহ বর্ণনা করেন ২৭৭, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ আল জামে গ্রন্থে ৯৫২ সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ৭ – মাথা ও দুই কান মাসেহ-এর বর্ণনা
৬৭ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] তাহাঁর উভয় কানের জন্য দুই আঙ্গুল দ্বারা পানি নিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৬৮ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আনসারী [রাঃআ:]-কে মসহ আলাল ইসাবাহ [পাগড়ির উপর হাত বুলাইয়া যাওয়া] সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলিলেন, না, [এটা যথেষ্ট নয়] যতক্ষণ পানি দ্বারা চুল মাসেহ করা না হয়। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৬৯ – হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তার পিতা উরওয়াহ ইবনি যুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] পাগড়ি খুলে ফেলতেন এবং পানি দ্বারা মাথা মাসেহ করিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৭০ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যখন তিনি বালক তখন আবু উবায়দার কন্যা, আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রা]-এর স্ত্রী, সফিয়্যাকে তাহাঁর ওড়না নামিয়ে পানি দিয়ে মাথা মাসেহ করিতে দেখেছেন।
ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, পাগড়ি ও ওড়নার উপর মাসেহ করা সম্পর্কে মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলিলেন, কোন পুরুষ কোন নারীর পক্ষে [যথাক্রমে] পাগড়ি কিংবা ওড়নার উপর মাসেহ করা জায়েয নয়। তারা দুজনেই তাহাদের মাথা মাসেহ করিবে।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে কিন্তু মাথা মাসেহ করিতে ভুলে গিয়েছে, [এই অবস্থায়] তাহাঁর ওযূর অঙ্গসমূহ শুকিয়ে গিয়েছে, এখন সে কি করিবে? তিনি উত্তরে বলিলেন, আমার মতে সে তাহাঁর মাথা মাসেহ করিবে। আর যদি সে [মাসেহ ব্যতীত] অযূ দ্বারা নামায আদায় করে থাকে তবে সে নামায নতুন করে আদায় করিবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৮ – পদাবরণী বা মোজা মাসেহ
মুয়াত্তা মালিকঃ ৭১ – মুগীরা ইবনি শুবা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তাবুকের যুদ্ধে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রসাব-পায়খানার প্রয়োজনে বাহিরে গেলেন। মুগীরা বলেন, আমি পানি নিয়ে তাহাঁর সাথে চললাম। অতঃপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [তার প্রয়োজন পূর্ণ করে] আসলেন, আমি তাহাঁর হস্তদ্বয়ের উপর পানি ঢাললাম, তিনি তাহাঁর মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তাহাঁর হস্তদ্বয় জুব্বার আস্তিন হতে বের করিতে চেষ্টা করিলেন। জুব্বার আস্তিনের সংকীর্ণতার দরুন তিনি [বাহির করিতে] সক্ষম হলেন না। তাই জুব্বার নিচ দিয়ে উভয় হাত বের করিলেন, তারপর দুই হাত ধুলেন, মাথা মাসেহ করিলেন এবং মোজার উপর মাসেহ করিলেন। তারপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশরীফ আনলেন, তখন আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রাঃআ:] [লোকের] ইমামতি করিতেছিলেন, তিনি এক রাকাত সমাপ্তও করেন। যেই এক রাকাত তাঁদের অবশিষ্ট ছিল, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের সাথে সেই রাকাত আদায় করিলেন। লোকজন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে [তাহাঁর অনুপস্থিতিতে নামায শুরু করায় বেআদবী হয়েছে ভেবে] ঘাবড়ে গেলেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর নামায শেষে বলিলেন, তোমরা ভাল করেছ।
[বোখারী ১৮২, মুসলিম ২৭৪] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭২ – সাদ ইবনি ওয়াক্কাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
যখন কূফার আমীর ছিলেন তখন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] কূফায় সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাঃআ:]-এর কাছে এলেন এবং তাঁকে মোজার উপর মাসেহ করিতে দেখলেন। ইবনি উমার [রাঃআ:] তার এই মাসেহ্-এর প্রতি অস্বীকৃতি জানালেন। সাদ [রাঃআ:] তাঁকে বলিলেন, আপনার পিতার কাছে গেলে এটা তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন। আবদুল্লাহ [রাঃআ:] [মদীনায়] আগমন করিলেন; কিন্তু তাহাঁর পিতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করিতে ভুলে গেলেন। সাদ পরে [মদীনায়] আসলেন এবং ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে প্রশ্ন করিলেন আপনার পিতার কাছে সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করিয়াছেন কি? তিনি বলিলেন, না। অতঃপর আবদুল্লাহ [রাঃআ:] তাহাঁর পিতাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করিলেন। উমার [রাঃআ:] উত্তরে বলিলেন, যদি মোজাদ্বয়ের মধ্যে তোমার উভয় পা পবিত্র অবস্থায় [ওযূর পরে] ঢুকাও তবে [পুনরায় ওযূর সময়] তুমি মোজার উপর মাসেহ কর। আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলিলেন, আমাদের এক ব্যক্তি পায়খানা প্রসাব হতে আসিলে তার জন্যও কি এই হুকুম? উমার [রাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ, তোমাদের কেউ মলমূত্র ত্যাগ করে আসলে তার জন্যও এই হুকুম।
[সহিহ, বোখারী ২০২] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৭৩ – নাফি [রঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] বাজারে [প্রস্রাবের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে] প্রস্রাব করিলেন। তারপর অযূ করিলেন এবং তাহাঁর মুখমণ্ডল ও উভয় হাত ধুলেন এবং মাথা মাসেহ করিলেন। তারপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করার পর তাঁকে জানাযার নামায আদায় করাবার জন্য আহ্বান করা হল, তিনি মোজার উপর মাসেহ করিলেন, তারপর জানাযার নামায আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৭৪ – সাঈদ ইবনি আবদুর রহমান ইবনি রুকাইশ আশআরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ: ক]-কে দেখেছি, তিনি কোবা আসলেন, তারপর প্রস্রাব করিলেন। অতঃপর তাহাঁর কাছে পানি আনা হলে তিনি অযূ করিলেন, মুখমণ্ডল ধুলেন, দুহাত ধুলেন কনুই পর্যন্ত, মাথা মাসেহ করিলেন, আর মোজার উপর মাসেহ করিলেন, তারপর মসজিদে এলেন এবং নামায আদায় করিলেন।
ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি ওযূ করেছে নামাযের ওযূর মত, অতঃপর তার মোজা পরিধান করেছে। সে ব্যক্তি নতুন করে ওযূ করিবে কি? তিনি বলিলেন সে মোজা খুলে নিবে। তারপর ওযূ করিবে এবং দুপা ধুবে। যে ব্যক্তি উভয় পা মোজায় ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় দাখিল করেছে, সে ব্যক্তি মোজায় মাসেহ করিতে পারবে। আর যে ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় উভয় পা মোজায় দাখিল করে নি সে মোজা মাসেহ করিবে না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে তার পরিধানে মোজা থাকা অবস্থায়, কিন্তু সে মোজায় মাসেহ করিতে ভুলে গিয়েছে। [এই অবস্থায়] তার ওযূ [ওযূর অঙ্গসমূহ] শুকিয়ে গিয়েছে এবং সে নামায আদায় করেছে [তার হুকুম কি?]। তিনি বলিলেন, সেই ব্যক্তি মোজার উপর মাসেহ করিবে এবং নামায নতুন করে আদায় করিবে, ওযূ পুনরায় করিতে হইবে না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে তার দুই পা [প্রথম] ধুয়েছে, তারপর মোজা পরেছে, অতঃপর ওযূ শুরু করেছে। তিনি বলিলেন, সে মোজা খুলে ফেলবে, তারপর ওযূ করিবে এবং [যথারীতি] উভয় পা ধুবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৯ – মোজা মাসেহ-এর নিয়ম
৭৫ – আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ: ক]-কে দেখেছি, তিনি কোবা আসলেন, তারপর প্রস্রাব করিলেন। অতঃপর তাহাঁর কাছে পানি আনা হলে তিনি অযূ করিলেন, মুখমণ্ডল ধুলেন, দুহাত ধুলেন কনুই পর্যন্ত, মাথা মাসেহ করিলেন, আর মোজার উপর মাসেহ করিলেন, তারপর মসজিদে এলেন এবং নামায আদায় করিলেন।
ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে ব্যক্তি ওযূ করেছে নামাযের ওযূর মত, অতঃপর তার মোজা পরিধান করেছে। সে ব্যক্তি নতুন করে ওযূ করিবে কি? তিনি বলিলেন সে মোজা খুলে নিবে। তারপর ওযূ করিবে এবং দুপা ধুবে। যে ব্যক্তি উভয় পা মোজায় ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় দাখিল করেছে, সে ব্যক্তি মোজায় মাসেহ করিতে পারবে। আর যে ওযূর মত পবিত্রাবস্থায় উভয় পা মোজায় দাখিল করে নি সে মোজা মাসেহ করিবে না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে ব্যক্তি ওযূ করেছে তার পরিধানে মোজা থাকা অবস্থায়, কিন্তু সে মোজায় মাসেহ করিতে ভুলে গিয়েছে। [এই অবস্থায়] তার ওযূ [ওযূর অঙ্গসমূহ] শুকিয়ে গিয়েছে এবং সে নামায আদায় করেছে [তার হুকুম কি?]। তিনি বলিলেন, সেই ব্যক্তি মোজার উপর মাসেহ করিবে এবং নামায নতুন করে আদায় করিবে, ওযূ পুনরায় করিতে হইবে না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে, যে তার দুই পা [প্রথম] ধুয়েছে, তারপর মোজা পরেছে, অতঃপর ওযূ শুরু করেছে। তিনি বলিলেন, সে মোজা খুলে ফেলবে, তারপর ওযূ করিবে এবং [যথারীতি] উভয় পা ধুবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পিতাকে মোজার উপর মাসেহ করিতে দেখেছেন। তিনি মোজা মাসেহ করার সময় এর অতিরিক্ত কিছু করিতেন না; মোজার উপরের অংশে মাসেহ করিতেন, তলদেশ মাসেহ করিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করিলেন মোজা মাসেহ কিভাবে সম্পাদন করিতে হয় ইবনি শিহাব তাহাঁর এক হাত মোজার নিচে দাখিল করিলেন এবং অপর হাত মোজার উপর স্থাপন করিলেন। অতঃপর উভয় হাত মাসেহ-এর জন্য চালিত করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, মোজা মাসেহ-এর ব্যাপারে আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে ইবনি শিহাবের মতামত আমার কাছে সবচাইতে পছন্দনীয়।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১০- নাক দিয়ে রক্ত ঝরা ও বমি সম্পর্কীয় বর্ণনা
৭৬ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যখন আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর নাক দিয়ে রক্ত বের হত, তখন তিনি নামায হতে ফিরে যেতেন। অতঃপর ওযূ করিতেন এবং পুনরায় এসে অবশিষ্ট নামায আদায় করিতেন, আর তিনি [এই অবস্থায়] কথা বলিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৭৭ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআ:]-এর নাক দিয়া রক্ত নির্গত হলে তিনি বের হতেন এবং রক্ত পরিষ্কার করিতেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করে নামায যতটুকু আদায় করিয়াছেন উহার [উপর ভিত্তি করিয়া] অবশিষ্ট নামায আদায় করিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৭৮ – ইয়াযিদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি কুসাইত লাইসী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে দেখেছেন, তিনি যখন নামায আদায় করিতেছিলেন তখন তাহাঁর নাক দিয়ে রক্ত বের হল। তিনি নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পত্মী উম্মু সালমার ঘরে এলেন। তাহাঁর জন্য পানি আনা হল, তিনি ওযূ করিলেন, তারপর ফিরে গেলেন এবং নামায যতটুকু বাকি ছিল তা আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১১ – নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হলে কি করিতে হয় তার বর্ণনা
৭৯ – আবদুর রহমান ইবনি হারমালা আসলামী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে দেখেছি। নাকসীরের কারণে তাহাঁর নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছিল, এমনকি তাহাঁর নাক হতে বের হওয়া রক্তের দ্বারা তাহাঁর আঙ্গুল রঞ্জিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি নামায আদায় করিলেন অথচ অযূ করিলেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৮০ – আবদুর রহমান ইবনি মুজাব্বার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে দেখেছেন, তাহাঁর নাক হতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, এমনকি [সেই রক্তে] তাহাঁর আঙুলসমূহ লাল হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি নাক মোচড়ালেন, তারপর নামায আদায় করিলেন, অথচ অযূ করিলেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১২ – জখম অথবা নাক হতে প্রবাহিত রক্ত প্রবল হলে কি করিতে হইবে
৮১ – মিসওয়ার ইবনি মাখরামা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যে রাত্রে উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:]-কে ছুরিকাঘাত করা হয়, সেই রাত্রে জনৈক ব্যক্তি [কোন কোন বর্ণনায় বোঝা যায় যে, প্রবেশকারী সেই ব্যক্তি ছিলেন স্বয়ং মিসওয়ার ইবনি মাখরামা।] উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:]-এর কাছে আসল। উমার [রাঃআ:]-কে ফজরের নামাযের জন্য জাগানো হল। উমার [রাঃআ:] বলিলেন হ্যাঁ, আমি এই অবস্থায়ও নামায আদায় করি। যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দেয়, ইসলামে তার কোন স্থান নেই। অতঃপর উমার [রাঃআ:] নামায আদায় করিলেন অথচ তাহাঁর জখম হতে তখন রক্ত বের হচ্ছি। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৮২ – ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, নাকসীরের কারণে যে ব্যক্তির রক্ত প্রবল হয়েছে এবং তার রক্ত পড়া বন্ধ হয় নি সে ব্যক্তি প্রসঙ্গে তোমাদের মতামত কি? ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অতঃপর সাঈদ্ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, আমার মতে সে মাথার দ্বারা কেবল ইশারা করিবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এই বিষয়ে আমি যা কিছু শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটাই আমার কাছে উত্তম।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ পরিচ্ছেদঃ ১৩ – মযী [বের হওয়া]-এর কারণে ওযূ
৮৩ – মিকদাদ ইবনি আসওয়াদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আলী ইবনি আবি তালিব [রাঃআ:] মিকদাদকে নির্দেশ দিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাহাঁর পক্ষে প্রশ্ন করার জন্য। প্রশ্নটি হলো এই যে ব্যক্তি তাহাঁর স্ত্রীর কাছে যাওয়ায় তার লিঙ্গাগ্রে মযী [তরল পদার্থ, শুক্র নয়] বের হয়েছে, সে ব্যক্তির প্রতি কি ওযূ ওয়াজিব হইবে? আলী [রাঃআ:] বলিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা যেহেতু আমার স্ত্রী সেহেতু তাঁকে এই ধরনের প্রশ্ন করিতে আমি লজ্জাবোধ করি। মিকদাদ রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপরিউক্ত প্রশ্ন করলে তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হলে সে নিজের লজ্জাস্থান পানি দ্বারা ধুবে, তারপর নামাযের ওযূর মত করে ওযূ করিবে। [বোখারী ১৩২, মুসলিম, ইবনি আব্বাস ও মিকদাদ [রঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন ৩০৩]
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৪ – আসলাম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] বলেছেন, আমার ভিতর হতে উহা মুক্তাদানার মত নির্গত হতে আমি অনুভব করি। তোমাদের কেউ এই অবস্থায় পরলে সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং নামাযের ওযূর মত ওযূ করিবে। তিনি [উমার] এটা দ্বারা মযীর বিষয় বলিতে চেয়েছেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৮৫ – জুনদাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে মযী বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, তুমি উহা প্রাপ্ত হলে তোমার লজ্জাস্থানকে ধুয়ে নাও এবং নামাযের ওযূর মত ওযূ কর। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৪ – মযী নির্গত হওয়ার কারণে ওযূ না করার অনুমতি
৮৬ – ইয়াহইয়া ইব্নু সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করিতে সে বলিল, আমি নামায আদায় রত অবস্থায় আর্দ্রতা অনুভব করি। তবে আমি কি [নামায ছেড়ে] ফিরে যাব? সাঈদ বলিলেন, আমার রানের উপর দিয়ে ভেসে পড়লেও আমি আমার নামায শেষ না করে ফিরব না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৮৭ – সালত ইবনি যুবায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে আর্দ্রতা বিষয়ে প্রশ্ন করলাম; যা আমি অনুভব করি অর্থাৎ মনে সন্দেহ জাগে হয়তো আর্দ্রতা আছে। তিনি বলিলেন, তোমার কাপড়ের [লুঙ্গি অথবা পায়জামার] নিচে পানি ছিটিয়ে দাও। তারপর ঐ চিন্তা ছেড়ে দাও। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৫ – লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করা
৮৮ – আবদুল্লাহ ইবনি আবু বাকর ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আমর ইবনি হাযম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছেন আমি মারওয়ান ইবনি হাকাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট গেলাম, আমরা দুজনে ওযূ কিসে ওয়াজিব হয় সে বিষয়ে আলোচনা করলাম। মারওয়ান বলিলেন, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করিতে হইবে। উরওয়াহ বলিলেন, আমি তো এটা জানি না। মারওয়ান বলিলেন, বুসরা বিনত সফওয়ান [রাঃআ:] আমাকে খবর দিয়েছেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলিতে শুনেছেন তোমাদের কোন ব্যক্তি লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযূ করিবে। [সহিহ, আবু দাউদ ১৮১, তিরমিজি ৮২, নাসাঈ ১৬৩, ইবনি মাজাহ ৪৭৯, আহমদ ২৭৩৩৪, নাসিরুদ্দিন আলবানি হাদীসটিকে সহিহ বলেছেন
{সিলসিলা সহীহাহ ১২৩৫}] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৮৯ – মুসআব ইবনি সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি সাদ ইবনি আবি ওয়াক্কাস [রাঃআ:]-এর জন্য কুরআন মাজীদ হাত দিয়ে ধরে রেখেছিলাম [যেন তিনি তিলাওয়াত করিতে পারেন], আমি নিজের শরীর চুলকালাম। সাদ বলিলেন, সম্ভবত তুমি তোমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছ। আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তুমি উঠ এবং ওযূ কর; অতঃপর আমি উঠলাম এবং ওযূ করে আবার ফিরে এলাম। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৯০ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] বলিতেন, তোমাদের কেউ যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, তবে সে ওযূ করিবে, কারণ তার উপর ওযূ ওয়াজিব হয়েছে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৯১ – উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
যে তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছে তার উপর ওযূ ওয়াজিব হয়েছে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৯২ – সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আমার পিতা আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে দেখেছি, তিনি গোসল করিতেন, তারপর ওযূ করিতেন। আমি বললাম আব্বাজান! গোসল আপনার ওযূর জন্য কি যথেষ্ট হয় না? [অর্থাৎ গোসল দ্বারা ওযূর কাজ হয়ে যায় না?] তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, যথেষ্ট হয়। কিন্তু আমি কোন কোন সময় লজ্জাস্থান স্পর্শ করি। তাই আমি ওযূ করি। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৯৩ – সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি এক সফরে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে দেখলাম সূর্য উদয়ের পর ওযূ করিলেন, তারপর নামায আদায় করিলেন। আমি তাঁকে বললাম [আজকের দিন ব্যতীত] আপনি এই নামায কখনও এই সময়ে আদায় করেন না। তখন তিনি বলিলেন, আমি ফজরের নামাযের জন্য ওযূ করার পর আমার লজ্জাস্থান স্পর্শ করেছি। অতঃপর আমি ওযূ করিতে ভুলে গিয়েছি। তাই আমি অযূ করলাম এবং পুনরায় নামায আদায় করলাম। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৬ – স্বামী কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বনের কারণে ওযূ করা
৯৪ – আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রা] হইতে বর্ণিতঃ
স্বামী কর্তৃক আপন স্ত্রীকে চুম্বন এবং তাঁকে হাতে ছোঁয়া মুলামাসাত এর অন্তর্ভুক্ত। যে নিজের স্ত্রীকে চুম্বন করে অথবা তাকে হাত দ্বারা স্পর্শ করে তার উপর ওযূ ওয়াজিব হইবে। {১} [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} ওযূর পর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বন করা এবং নামাযের মধ্যে স্ত্রীকে ছোঁয়া হাদীসে বর্ণিত হয়েছে অথচ এইজন্য তিনি পুনরায় ওযূ করেননি।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ৯৫ – মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রা] বলিতেন, পুরুষ নিজের স্ত্রীকে চুমা খাইলে তার ওযূ ওয়াজিব হইবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
৯৬ – মালিক [রা] হইতে বর্ণিতঃ
ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিতেন, পুরুষ কর্তৃক নিজের স্ত্রীকে চুম্বনের কারণে ওযূ করিতে হইবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৭ – জানাবত-এর গোসলের বর্ণনা
৯৭ – উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানাবত {১}-এর গোসল করিতেন, সর্বপ্রথম দু হাত ধুতেন। অতঃপর নামাযের ওযূর মত ওযূ করিতেন। তারপর আঙুলসমূহ পানিতে দাখিল করিতেন, আঙুল দ্বারা চুলের গোড়ায় খিলাল করিতেন। অতঃপর উভয় হাত দিয়ে তিন আঁজলা পানি তাহাঁর মাথায় ঢালতেন। অতঃপর সর্বশরীরে পানি ঢালতেন।
[বোখারী ২৪৮, মুসলিম ৩১৬] {১} جنابت স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সহবাস যা অপবিত্রতা আনে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ৯৮ – উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি পাত্র হতে, যাতে দুই অথবা তিন সা [প্রায় চার অথবা ছয় সের পরিমাণ] পানি ধরত, জানাবতের গোসল করিতেন।
[বোখারী ২৫০, মুসলিম ৩১৯] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] যখন জানাবতের গোসল করিতেন, তিনি সর্বপ্রথম ডান হাতে পানি ঢালতেন এবং উহাকে ধুতেন, অতঃপর লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর কুলি করিতেন এবং নাক পরিষ্কার করিতেন। তারপর মুখমণ্ডল ধুতেন এবং উভয় চক্ষুতে পানি ছিটা দিতেন। অতঃপর পুনরায় ডান হাত, তারপর বাম হাত ও মাথা ধুতেন। তারপর [পূর্ণাঙ্গ] গোসল করিতেন এবং তাহাঁর [দেহের] উপর পানি ঢেলে দিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১০০- মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা [রাঃআ:]-কে মেয়েদের জানাবতের গোসল বিষয়ে প্রশ্ন করা হল। তিনি বলিলেন, স্ত্রীলোক তার মাথায় তিন চুল্লু পানি ঢালবে এবং দুহাত দিয়ে মাথা [মাথার চুল] কচলাবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৮ – দুই লজ্জাস্থানের স্পর্শে গোসল ওয়াজিব হওয়া
১০১ – সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব, উসমান ইবনি আফফান [রাঃআ:] ও নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাঃআ:] বলিতেন, যখন [পুরুষের] লজ্জাস্থান [স্ত্রীর] লজ্জাস্থান স্পর্শ করিল তখন অবশ্য গোসল ওয়াজিব হয়ে গেল। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১০২ – আবু সালমা ইবনি আবদুর রহমান ইবনি আউফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্মী আয়েশা [রাঃআ:]- কে প্রশ্ন করলাম, কোন কাজ গোসলকে ওয়াজিব করে? তিনি বলিলেন, হে আবু সালমা! তুমি জান, তোমার দৃষ্টান্ত কি? তোমার দৃষ্টান্ত হতেছে মুরগীর বাচ্চার মত {১}, যে মোরগকে যখন ডাক দিতে শোনে, তখন সেও মোরগের সহিত ডাক দেয়। শোন, [পুরুষের] লজ্জাস্থান [স্ত্রীর] লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হইবে। [সহিহ, তিরমিজি ১০৮, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ আল জামে ৪৭৫, সহিহ বলেছেন]
{১} আবু সালমা [রা] শুধু মিলনে নয় শুক্র নির্গত হলেই কেবল গোসল ওয়াজিব হইবে এই মত পোষণকারীদের একজন। আয়েশা [রা] তাহাঁর এই মতের জন্য প্রথমে তাঁকে তিরস্কার করিলেন ও পরে প্রশ্নের উত্তর দিলেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৩ – সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবু মূসা আশআরী [রাঃআ:] নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাঃআ:]-এর কাছে উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাদের মতানৈক্য আমার কাছে খুব ভারী ও কষ্টদায়ক হয়েছে এবং তা এমন একটি বিষয় যা আপনার কাছে উল্লেখ করা আমি মহাব্যাপার মনে করি। আয়েশা সিদ্দীকা [রাঃআ:] বলিলেন, কি বিষয় উহা? তুমি যে বিষয় তোমার মাতার কাছে প্রশ্ন করিতে পার, সে বিষয়ে আমার কাছেও প্রশ্ন করিতে পার। তারপর আবু মূসা [রাঃআ:] বলিলেন, কোন লোক তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর সে ক্লান্ত হয়েছে কিন্তু বীর্য নির্গত হয়নি। সে কি করিবে? তিনি বলিলেন, [পুরুষের] লজ্জাস্থান [স্ত্রীলোকের] লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হইবে। আবু মূসা [রা] বলিলেন, আপনাকে জিজ্ঞেস করার পর আমি এই বিষয়ে অন্য করো কাছে আর কখনও জিজ্ঞেস করব না।
[সহিহ {মারফু} ইমাম মুসলিম মারফু সনদে বর্ণনা করিয়াছেন ৩৪৯] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মারফু
১০৪ – মাহমুদ ইবনি লবীদ আনসারী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
যায়দ ইবনি সাবিত আনসারী [রাঃআ:]-এর কাছে প্রশ্ন করিলেন, সেই লোক সম্পর্কে যে লোক নিজের স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছে, তারপর ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, বীর্য বের হয়নি। তিনি বলিলেন, সে গোসল করিবে। মাহমুদ [রাঃআ:] বলিলেন, উবাই ইবনি কাব [রা] গোসল [এই অবস্থায়] জরুরী মনে করিতেন না। যায়দ [রাঃআ:] বলিলেন, মৃত্যুর পূর্বে উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] এই মত প্রত্যাহার করিয়াছেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} মাহমুদ ইবনি লবীদ সাহাবী কিনা এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। ইমাম বোখারী [রঃ]-এর মতে তিনি সাহাবী, ওফাত ৯৬ হিজরী। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১০৫ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] বলিতেন, [পুরুষের] লজ্জাস্থান স্ত্রীলোকের লজ্জাস্থান অতিক্রম করলে গোসল ওয়াজিব হইবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ১৯- জুনুব ব্যক্তির ওযূ করা গোসলের পূর্বে নিদ্রা অথবা খাদ্য গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করলে
১০৬ – আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রা] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমীপে উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] উল্লেখ করিলেন; রাত্রিতে তাহাঁর জানাবত অর্থাৎ অপবিত্রতা হয় [স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সহবাসের দরুন] রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলিলেন, তুমি ওযূ কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল, তারপর ঘুমাও।
[বোখারী ২৯০, মুসলিম ৩০৬] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৭ – আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাস করলে, অতঃপর গোসলের পূর্বে ঘুমাতে ইচ্ছা করলে সে নামাযের ওযূর মত ওযূ না করে ঘুমাবে না।
[বোখারী ২৮৮, মুসলিম ৩০৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ১০৮ – নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রা] জানাবত অবস্থায় ঘুমাতে অথবা আহার করিতে ইচ্ছা করলে তিনি মুখমণ্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুতেন এবং মাথা মাসেহ করিতেন। তারপর আহার করিতেন অথবা ঘুমাতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২০ – জুনুব ব্যক্তির জানাবত মনে না থাকার কারণে নামায আদায় করলে সে নামায নতুন করে আদায় করা এবং গোসল করা ও কাপড় ধোয়া
মুয়াত্তা মালিকঃ ১০৯ – ইসমাঈল ইবনি আবি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আতা ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে বলেছেন, কোন এক নামাযে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলিলেন। অতঃপর হাত দিয়ে তাঁদের [নামাযে শরীক উপস্থিত সাহাবীদের] দিকে ইশারা করিলেন, তোমরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর। তারপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। অতঃপর ফিরে এলেন [এমন অবস্থায় যে], তাহাঁর [পবিত্র] দেহের উপর পানির আলামত বিদ্যমান ছিল।
[বোখারী ২৭৫, মুসলিম ৬০৫, আবু হুরাইরা [রাঃআ:] থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করেন, আর ইমাম মালিক [রঃ]-এর বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল] হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
মুয়াত্তা মালিকঃ ১১০ – যায়ায়দ ইবনি সালত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:]-এর সাথে বের হলাম জুরুফ-এর [মদীনা হতে তিন মাইল দূরের একটি পল্লী] দিকে। তাহাঁর স্বপ্নদোষ হল এবং তিনি গোসল না করে [ভুলে] নামায আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, কসম আল্লাহর! আমার মনে হয়, আমার অবশ্য ইহতিলাম [স্বপ্নদোষ] হয়েছে অথচ আমি খবর রাখি না এবং আমি গোসল না করে নামায আদায় করেছি। তারপর তিনি গোসল করিলেন এবং কাপড়ে যা চিহ্ন দেখলেন তা ধুলেন, যেখানে চিহ্ন নেই সেখানে পানি ছিটা দিলেন। তারপর আযান ও ইকামত বলিলেন। অতঃপর দিনের প্রথম অংশের সূর্য উচ্চতায় পৌঁছার পর নামায আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ১১১ – সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] দিনের প্রথমাংশে জুরুফ নামক স্থানে অবস্থিত তাহাঁর জমির দিকে গমন করিলেন। তিনি তাহাঁর কাপড়ে স্বপ্নদোষের আলামত দেখিতে পেলেন। তিনি বলিলেন, যখন হতে লোকের দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে, তখন হতে আমি ইহতিলামে লিপ্ত হয়েছি। তারপর তিনি গোসল করিলেন এবং তাহাঁর কাপড়ে স্বপ্নদোষের যা আলামত দেখলেন তা ধুলেন। তারপর সূর্য উঠার পর তিনি নামায আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১১২ – সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] লোকের সাথে [জামাতে] ফজরের নামায আদায় করিলেন, অতঃপর সকালবেলা জুরুফ-এ অবস্থিত তাহাঁর জমির দিকে গমন করিলেন। তারপর তাহাঁর কাপড়ে ইহতিলামের চিহ্ন দেখিতে পেলেন। তিনি বলিলেন, আমরা চর্বি [চর্বিযুক্ত খাদ্যদ্রব্য] যখন হতে আহার করিতেছি তখন হতে আমাদের শিরাসমূহ কোমল হয়েছে। তারপর তিনি গোসল করিলেন এবং কাপড় হতে ইহতিলাম [এর চিহ্ন] ধুয়ে ফেললেন এবং নামায নতুন করে আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১১৩ – ইয়াহইয়া ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:]-এর সঙ্গে উমরাহ করিলেন একই কাফেলায় আমর ইবনিল আস [রাঃআ:]-ও ছিলেন। উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] কোন পানির [কূপের] নিকটবর্তী এক রাস্তার পাশে রাত্রের শেষাংশে অবতরণ করিলেন। উমার [রাঃআ:]-এর ইহতিলাম হল। [এইদিকে] ফজর হতে লাগল কিন্তু কাফেলার সাথে পানি পাওয়া গেল না। তিনি সওয়ার হয়ে পানির কাছে এলেন। অতঃপর তিনি ইহতিলামের যা চিহ্ন দেখলেন তা ধুতে লাগলেন, তখন ফরসা হয়ে গিয়েছে। আমর ইবনিল আস [রাঃআ:] তাঁকে বলিলেন, আপনি ভোর করিলেন অথচ আমাদের সাথে কাপড় রয়েছে। আপনি আপনার কাপড় রেখে দিন, [পরে] ধোয়া হইবে। উমার ইবনি খাত্তাব [রাঃআ:] বলিলেন, ইবনিল আস! আশ্চর্য তোমার প্রতি! তোমার যদিও অনেক বস্ত্র আছে, কিন্তু প্রত্যেক ব্যক্তির নিকট কি তদ্রুপ আছে? আল্লাহর কসম, আমি যদি এটা করি তবে এটা সুন্নাতে পরিণত হইবে। আমি বরং যা আলামত দেখব তাই ধুব, আর যা দেখা না যায় তাতে পানি ছিটিয়ে দেব।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যে ব্যক্তি তার কাপড়ে ইহতিলামের আলামত দেখিতে পায়, কোন সময় ইহতিলাম হয়েছে সে তা জানে না, স্বপ্নে যা দেখেছে তার স্মরণ নাই, তবে সে সদ্য যে নিদ্রা হতে জেগেছে তাতে [ইহতিলাম হয়েছে বলে গণ্য করে] গোসল করিবে। যদি সে এই নিদ্রার পর নামায আদায় করে থাকে তবে সে নামায নতুন করে আদায় করিবে। কারণ লোকের [অনেক সময়] ইহ্তিলাম হয় কিন্তু কোন কিছু [স্বপ্নে] দেখ না, আবার কোন সময় স্বপ্ন দেখে কিন্তু ইহতিলাম হয় না। তাই কাপড়ে যদি পানি দেখে [ইহতিলাম স্মরণ না থাকলেও] তবে তার উপর গোসল ওয়াজিব হইবে। কারণ উমার ইবনি খাত্তাব [রা] এই ঘটনায় শেষ বারের নিদ্রা হতে জাগ্রত হবার পর যে নামায আদায় করেছিলেন তিনি সেই নামায নতুন করে আদায় করিয়াছেন, এর পূর্ববর্তী নামায অর্থাৎ ঐ নিদ্রার পূর্বের নামায তিনি কাযা করেননি। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২১ – পুরুষের মত স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে গোসল করা
১১৪ -উরওয়াহ ইবনি যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উম্মু সুলায়ম বিনতে মিলহান [রাঃআ:] বলিলেন, স্ত্রীলোক স্বপ্নে দেখলে যেমন দেখে থাকে পুরুষ [সেই] স্ত্রীলোক গোসল করিবে কি? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলিলেন, হ্যাঁ, সে গোসল করিবে। আয়েশা [রাঃআ:] তাঁকে [উম্মু সুলায়মকে] বলিলেন, উঃ তোমার সর্বনাশ হোক! স্ত্রীলোকও কি তা দেখে? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে {আয়েশা [রা]-কে} বলিলেন, تَرِبَتْ يَمِينُكِ তোমার ডান হাত ধুলিধূসরিত হোক। [স্ত্রীলোকের তা না হলে] তবে [সন্তান-এর মধ্যে মায়ের] সাদৃশ্য আসে কোথা হতে?
[সহিহ, মুসলিম ৩১১] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৫ -উম্মু সালমা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আবু তালহা আনসারী [রাঃআ:]-এর স্ত্রী উম্মু সুলায়ম রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হলেন এবং আরজ করিলেন হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ হক কথা বলিতে লজ্জা করেন না, স্ত্রীলোকের স্বপ্নদোষ হলে তার উপর গোসল ওয়াজিব হইবে কি? হযরত বলিলেন, হ্যাঁ, পানি দেখলে।
[বোখারী ১৩০, মুসলিম ৩১৩] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ২২ -জানাবত গোসলের বিবিধ হুকুম
১১৬ -নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] বলিতেন, স্ত্রীলোকের গোসলের অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করাতে কোন সমস্যা নাই [অর্থাৎ এটা জায়েয] যদি স্ত্রীলোক ঋতুমতী অথবা জুনুবী না হয়। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১১৭ -নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] পরিধানের কাপড়ে ঘর্মাক্ত হতেন অথচ তখন তিনি জুনুবী। অতঃপর সেই কাপড়েই গোসলের পর তিনি নামায আদায় করিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১১৮ -নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-এর বাঁদিগণ তাহাঁর পা দুটো ধুয়ে দিত এবং তাঁকে খুমরা ছোট মুসল্লা বা জায়নামায প্রদান করত, অথচ তারা তখন ঋতুমতী।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এক ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী ও বাঁদী রয়েছে, সে ব্যক্তি গোসলের পূর্বে সকলের [স্ত্রী ও বাঁদীগণের] সাথে সহবাস করিতে পারবে কি? [উত্তরে] তিনি বলিলেন, জানাবতের গোসলের পূর্বে বাঁদীর সাথে সহবাস করা দোষের বিষয় নয় [অর্থাৎ এটা জায়েয]। কিন্তু স্বাধীন স্ত্রীগণের ব্যাপারে মাসআলা এই কোন ব্যক্তির পক্ষে নিজের স্ত্রীর [অধিকারের] দিনে [নিজের] আর এক স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া মাকরূহ। তবে কোন লোকের জন্য [তাহাঁর] এক বাঁদীর সাথে সহবাস করে অতঃপর আর এক বাঁদীর সাথে জুনুব থাকা অবস্থায় মিলিত হওয়া দোষের ব্যাপার নয়।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক জুনুবী ব্যক্তি সম্পর্কে, যে ব্যক্তির জন্য পানি রাখা হয়েছে যা হতে সে ব্যক্তি ফরয গোসল করিবে, তারপর সে ভুলবশত সেই পানিতে তার আঙ্গুল দাখিল করেছে যাতে ঠাণ্ডা ও গরমের [মাত্রা] নির্ণয় করিতে পারে। [উত্তরে] মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, তার আঙুলসমূহে কোন নাপাকী না পৌঁছে থাকেলে তবে তার এই কাজে পানি নাপাক হইবে বলে আমি মনে করি না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২৩ -তাইয়াম্মুম
১১৯ -আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সফরে গেলাম। যখন আমরা বায়দা অথবা [তিনি বলেছেন] যাতুল-জাইশ [নামক স্থান]-এ পৌঁছালাম, তখন আমার একটি মালা হারিয়ে গেল। সেটা খোঁজার জন্য রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম [সেখানে] অবস্থান করিলেন এবং লোকজনও তাহাঁর সাথে অবস্থান করিলেন। তাঁরা কোন পানির [কৃপ বা নহর] কাছে ছিলেন না এবং তাঁদের সাথেও পানি ছিল না। লোকজন আবু বকর সিদ্দীক [রাঃআ:]-এর কাছে আসলেন এবং ঘটনা বিবৃত করিলেন। তাঁরা বলিলেন, আয়েশা [রা] কি করেন তা কি আপনি জানেন না? [তিনি] রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং অন্য লোকদেরকে অবস্থানে বাধ্য করেন। অথচ তাঁরা পানির কাছে নাই এবং তাঁদের সাথে পানিও নাই। আয়েশা [রাঃআ:] বলেন, তারপর আবু বাকর [রাঃআ:] আমার কাছে এলেন। তখন রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাঁর [পবিত্র] শির আমার উরুর উপর স্থাপন করে ঘুমাচ্ছিলেন। তিনি [আবু বাকর [রাঃআ:]] বলিলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং লোকদেরকে তুমি আটকে রেখেছ। অথচ তাঁরা পানির পাশে নাই এবং তাঁদের সাথে পানিও নাই। আয়েশা [রাঃআ:] বলিলেন, তারপর আবু বাকর [রাঃআ:] আমার প্রতি ক্রোধ প্রকাশ করিলেন এবং আমাকে তিরস্কার করিলেন। আর তাহাঁর হাত দিয়ে আমার কোমরে খোঁচা মারতে লাগলেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর [পবিত্র] শির আমার উরুর উপর স্থাপিত থাকার কারণে আমি [খোঁচা মারা সত্ত্বেও] নড়াচড়া করছিলাম না। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লেন এমন কি এই পানিহীন অবস্থায় ভোর হল। তারপর আল্লাহ তাআলা তাইয়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করিলেন। তারপর তাঁরা সকলে তাইয়াম্মুম করিলেন। উসায়দ ইবনি হূযায়র [রাঃআ:] বলিলেন হে আবু বাকরের পরিজন! এটা [অর্থাৎ তাইয়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ হওয়া] আপনাদের প্রথম বরকত নয়। [অর্থাৎ মুসলিমগণ আপনাদের দ্বারা নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন। আয়েশা [রাঃআ:] বলিলেন, তারপর আমি যে উটের উপর আরোহণ করেছিলাম উহাকে তুললাম এবং উহার নিচে মালা পেলাম।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল, যে ব্যক্তি উপস্থিত নামাযের জন্য তাইয়াম্মুম করেছ। অতঃপর পরবর্তী নামাযের সময় হলো, ঐ লোক কি সেই নামাযের জন্য [পুনরায়] তাইয়াম্মুম করিবে, না সেই [পূর্ববর্তী] তাইয়াম্মুম তাহাঁর জন্য যথেষ্ট হইবে? উত্তরে তিনি বলিলেন, প্রত্যেক [ফরয] নামাযের জন্য তাইয়াম্মুম করিবে। কারণ [সময় উপস্থিত হলে] প্রত্যেক নামাযের জন্য পানির খোঁজ করা তার ওয়াজিব। যে ব্যক্তি পানির খোঁজ করিল কিন্তু পানি পেল না সে তাইয়াম্মুম করিবে।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হল এমন, যে ব্যক্তি তাইয়াম্মুম করেছে এবং তার সাথিগণ যারা ওযূ করেন সে তাহাদের ইমামতি করিতে পারবে কি? [উত্তরে] তিনি বলিলেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ ইমামতি করলে তা আমার কাছে পছন্দনীয়, আর যদি সে তাহাদের ইমামতি করে থাকে, তবে তাতেও আমি কোন দোষ দেখি না।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, এক ব্যক্তি পানি না পেয়ে তাইয়াম্মুম করেছে, তারপর সে নামাযে দাঁড়িয়েছে এবং তাকবীর বলে নামায শুরু করেছে। অতঃপর একজন লোক পানিসহ তার কাছে আসলো। তিনি বলিলেন, সে নামায ছাড়বে না, বরং তাইয়াম্মুম দ্বারা সেই নামায পূর্ণ করিবে এবং আগামী নামাযের জন্য ওযূ করিবে।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, যে ব্যক্তি নামাযের [প্রস্তুতির] জন্য দাঁড়িয়েছে: কিন্তু সে পানি না পেয়ে আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক তাইয়াম্মুমের আমল করেছে তবে সেই ব্যক্তি মহান আল্লাহর আনুগত্যই করেছে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পানি পেয়েছে [ও ওযূ করেছে] তা [উপরিউক্ত তাইয়াম্মুমকারী] অপেক্ষা সেই ব্যক্তি বেশি পবিত্র ও নামাযের পূর্ণতাকারী বলে গণ্য হইবে না; কারণ তারা দুজনেই নির্দেশপ্রাপ্ত এবং প্রত্যেকে মহিমান্বিত আল্লাহর পক্ষ হতে যা নির্দেশ পেয়েছে সেই মুতাবিক আমল করেছে। যে ব্যক্তি পানি পেয়েছে সে ব্যক্তির আমল হল ওযূ, যেমন আল্লাহ তাআলা তাকে নির্দেশ করেন, আর যে ব্যক্তি নামায শুরুর পূর্বে পানি পায়নি সে ব্যক্তির জন্য [নির্দেশ] হল তাইয়াম্মুম।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, জুনুবী ব্যক্তি তাইয়াম্মুম করিবে এবং কুরআন হতে তার নির্ধারিত অংশ তিলাওয়াত করিবে এবং নফল নামায আদায় করিবে যতক্ষণ পর্যন্ত পানি না পায়। তবে এটা সেই স্থানের জন্য যে স্থানে তার জন্য তাইয়াম্মুম দ্বারা নামায আদায় বৈধ। [বোখারী ৩৩৪, মুসলিম ৩৬৭]
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ২৪ -তাইয়াম্মুমের কার্যাবলি
১২০ -নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি স্বয়ং এবং আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] যাত্রা শুরু করিলেন। জুরুফ হতে তাঁরা দুজনে মিরবাদ নামক স্থানে পৌঁছার পর আবদুল্লাহ [রাঃআ:] অবতরণ করিলেন এবং পবিত্র মাটি দ্বারা তাইয়াম্মুম করিলেনতাহাঁর মুখমণ্ডল ও হাতদুটি কনুই পর্যন্ত মাসেহ করিলেন। অতঃপর নামায আদায় করিলেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২১ -নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাঃআ:] তাইয়াম্মুমে দুহাতের উভয় কনুই পর্যন্তমাসেহ করিতেন।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল তাইয়াম্মুম কিভাবে এবং [দুহাতে তাইয়াম্মুম করার সময়] কোন স্থান পর্যন্ত তা পৌঁছাবে? তিনি [উত্তরে] বলিলেন, একবার মাটিতে হাত রাখবে মুখমণ্ডলের নিমিত্তে আর একবার রাখবে হস্তদ্বয়ের জন্য এবং দুহাত উভয় কনুই পর্যন্ত মাসেহ করিবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২৫ -জুনুবী ব্যক্তির তাইয়াম্মুম
১২২ -সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
যে তাইয়াম্মুম করার পর পানি পেয়েছে। সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] উত্তরে বলিলেন, পানি পেলে আগামী নামাযের জন্য তার উপর গোসল ওয়াজিব হইবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, এমন এক ব্যক্তি যার ইহতিলাম হয়েছে অথচ সে মুসাফির। কেবল ওযূর পরিমাণ পানি ছাড়া তার কাছে আর পানি নাই এবং পানি পর্যন্ত পৌঁছার পূর্বে সে পিপাসিত হইবে না। তিনি বলিলেন, সেই পানি দ্বারা সে তার লজ্জাস্থান এবং যে স্থানে নাপাকী লেগেছে তা ধুবে। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশ মুতাবিক পবিত্র মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করিবে।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল এমন এক জুনুবী ব্যক্তি প্রসঙ্গে যে তাইয়াম্মুম করিতে ইচ্ছা করেছে; কিন্তু সে লবণাক্ত মাটি ছাড়া অন্য মাটি পেল না। তবে সে কি লবণাক্ত মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করিবে? আরও প্রশ্ন করা হল লবণাক্ত মাটিতে নামায আদায় কি মাকরূহ? [উত্তরে] মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, লবণাক্ত মাটিতে নামায আদায় এবং লবণাক্ত মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করাতে কোন দোষ নেই। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا “তোমরা পবিত্র মাটির দ্বারা তাইয়াম্মুম কর” [সূরা আল-মায়িদাহ, ৬]। ফলে যে কোন পবিত্র মাটি তাইয়াম্মুমের উপযুক্ত বলে গণ্য হইবে। লবণাক্ত হোক অথবা না হোক।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২৬ -স্ত্রী ঋতুমতী থাকলে স্বামীর জন্য তার কতটুকু হালাল হইবে
১২৩ -যায়দ ইবনি আসলাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
একজন সাহাবী রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রশ্ন করিলেন আমার স্ত্রী ঋতুমতী থাকলে আমার জন্য তার কতটুকু হালাল? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করিলেন স্ত্রীলোক তার ইযার [পায়জামা বা পরনের জন্য কাপড়] শক্ত করে বাঁধবে। অতঃপর তোমার জন্য তার উপরের অংশ দ্বারা উপকৃত হওয়া বৈধ। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, তবে এই হাদীসের সমর্থনে অনেক হাদীস রয়েছে]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২৪ -রবিআ ইবনি আবি আবদির রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক চাদরে [আবৃত অবস্থায়] শায়িতা ছিলেন। তখন আয়েশা [রা] তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলিলেন, তোমার কি ঘটেছে? সম্ভবত তোমার নিফাস অর্থাৎ হায়েয হয়েছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তবে তুমি তোমার ইযার [পায়জামা] শক্ত কিরে বাঁধ, তারপর তোমার বিছানায় প্রত্যাবর্তন কর। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন, উল্লেখ্য যে, বোখারী ও মুসলিমে উক্ত ঘটনাটি উম্মে সালামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিত হয়েছে]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২৫ -উবায়দুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ উমার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাঃআ:]-এর কাছে লোক পাঠালেন এই প্রশ্ন করার জন্য, স্ত্রী ঋতুমতী হলে স্বামী সেই স্ত্রীর সাথে মিলিত হইবে কি? তিনি বলিলেন [স্ত্রী] তার নিচের অংশে ইযার [পরিধানের কাপড়] শক্ত করে বাঁধবে, অতঃপর স্বামী ইচ্ছা করলে তার সাথে মিলিত হইবে [কিন্তু সহবাস হতে বিরত থাকিবে, এজন্যই ইযার শক্ত করে বাঁধতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।]। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২৬ -মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
সালিম ইবনি আবদুল্লাহ ও সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাঃআ:]-কে প্রশ্ন করা হল ঋতুমতী স্ত্রীলোক প্রসঙ্গে, সে গোসলের পূর্বে পবিত্রতা লক্ষ করলে তার স্বামী তার সাথে সহবাস করিতে পারবে কি? তাঁরা [দুজনে] বলিলেন, গোসল না করা পর্যন্ত পারবে না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২৭ -ঋতুমতীর পবিত্রতা
১২৭ -মার্জানা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, [ঋতুমতী] স্ত্রীলোকেরা আয়েশা [রাঃআ:]-এর নিকট ঝোলা বা ডিব্বা পাঠাতেন, যাতে নেকড়া বা তুলা থাকত। তাতে পাণ্ডুবর্ণ ঋতুর রক্ত লেগে থাকত। তারা এই অবস্থায় নামায আদায় প্রসঙ্গে তাহাঁর কাছে জানতে চাইতেন। তিনি {আয়েশা [রাঃআ:]} তাঁদেরকে বলিতেন, তাড়াহুড়া করো না, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ সাদা [বর্ণ] দেখিতে না পাও। তিনি এটা দ্বারা ঋতু হতে পবিত্রতা বুঝাতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২৮ -যায়দ ইবনি সাবিত [রাঃআ:]- হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর কাছে খবর এসেছে যে, স্ত্রীলোকেরা [মধ্য রাত্রে] চেরাগ তলব করিতেন, তাঁরা [ঋতু হতে] পবিত্রতা লক্ষ করিতেন। তিনি [যায়দের কন্যা] এর জন্য তাঁদের নিন্দা করিতেন এবং বলিতেন, সাহাবীয়া মেয়েরা [রাঃআ:] এটা করিতেন না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১২৯ -মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]- হইতে বর্ণিতঃ
[ঋতুমতী স্ত্রীলোকের ব্যাপারে] প্রশ্ন করা হল যে স্ত্রীলোক শুচিতাপ্রাপ্ত হয়, কিন্তু পানি পায় না, সে তাইয়াম্মুম করিবে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই তাইয়াম্মুম করিবে। কারণ তাহাঁর দৃষ্টান্ত জুনুবীর মত [জুনুবী ব্যক্তি], যখন পানি না পায় তখন তাইয়াম্মুম করে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ২৮ -ঋতু সম্পর্কীয় বিবিধ হুকুম
১৩০ -মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি জ্ঞাত হয়েছেন যে, যে গর্ভবতী স্ত্রীলোক রক্ত দেখিতে পায় তার সম্পর্কে নবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাঃআ:] বলেছেন, সে নামায আদায় করিবে না। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৩১ -মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করেন, যে গর্ভবতী স্ত্রীলোক রক্ত দেখিতে পায় সে কি করিবে? তিনি বলিলেন, সে নামায হতে বিরত থাকিবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, উক্ত হুকুম আমাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১৩২ -আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শির [মুবারক]-এ চিরুনি করতাম, অথচ তখন আমি ছিলাম ঋতুমতী।
[সহিহ, বোখারী ২৯৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩৩ -আসমা বিনত আবু বাকর সিদ্দীক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক স্ত্রীলোক রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করিলেন আমাদের মধ্যে একজনের কাপড়ে ঋতুস্রাবের রক্ত লাগলে সে কি করিবে? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোমাদের কোন স্ত্রীলোকের কাপড়ে হায়েযের রক্ত লাগলে তা খুচিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলবে। অতঃপর সে কাপড়ে নামায আদায় করিবে।
[বোখারী ৩০৭, মুসলিম ২৯১] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ২৯ মুস্তাহাযা
১৩৪ -আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
ফাতিমা বিনত আবি হুবাইসা [রাঃআ:] বলিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমি পবিত্র হই না [অর্থাৎ রক্তস্রাব বন্ধ হয় না।] আমি নামায আদায় করব কি? রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলিলেন, এটা একটি রোগ [শিরামাত্র], হায়েয নহে। তাই যখন হায়েয আরম্ভ হয় তখন নামায ছেড়ে দাও। হায়েযের [দিবসের] দিন অতিবাহিত হলে তুমি তোমার রক্ত ধুয়ে ফেল, তারপর নামায আদায় কর।
[বোখারী ২২৮, মুসলিম ৩৩৩] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩৫ -উম্মু-সালমা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে জনৈকা স্ত্রীলোকের [রক্তস্রাব বন্ধ হত না], রক্ত প্রবাহিত হত। তাহাঁর সম্পর্কে উম্মু-সালমা [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করিলেন। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, [রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়ার] যে রোগে সে আক্রান্ত হয়েছে, সেই রোগ হওয়ার পূর্বে তার কত দিন কত রাত প্রতি মাসে হায়েয আসত সে উহার প্রতি লক্ষ রাখবে। মাসের সেই কদিন ও রাত্রিতে সে নামায আদায় করিবে না। অতঃপর সেই কদিন অতিবাহিত হলে সে গোসল করিবে, তারপর লজ্জাস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে নিবে, তারপর নামায আদায় করিবে।
[সহিহ, আবু দাউদ ২৭৪, নাসাঈ ২০৮, ইবনি মাজাহ ৬২৩, আহমদ ২৬৭৫৯, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ আল জামে ৫০৭৬-তে হাদসিটি সহিহ বলেছেন] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৩৬ -যায়নাব বিনতি আবি সালমা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবদুর রহমান ইবনি আওফের স্ত্রী [উম্মু হাবিবা] যায়নাব বিনত জাহশকে দেখেছেন, তাহাঁর রক্তস্রাব বন্ধ হত না, তিনি গোসল করে নামায আদায় করিতেন। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১৩৭ -কাকা ইবনি হাকিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এবং যায়দ ইবনি আসলাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁরা দুজনে সুমাইকে সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট পাঠালেন মুস্তাহাযা [স্ত্রীলোকে] গোসল কিভাবে করিবে এই বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করিতে। তিনি বলিলেন, এক যোহর হতে অপর যোহর পর্যন্ত গোসল করিবে এবং প্রত্যেক নামাযের জন্য ওযূ করিবে। আর যদি রক্ত তাহাঁর উপর প্রাধান্য পায় [অর্থাৎ অধিক হয়] তবে [রক্ত প্রবাহের স্থানে] কাপড় বাঁধবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১৩৮ -হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাহাঁর পিতা বলেছেন, মুস্তাহাযার জন্য একবার গোসল করা ব্যতীত অন্য কিছু ওয়াজিব নয়, অতঃপর প্রত্যেক [ফরয] নামাযের জন্য সে ওযূ করিবে। [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হল মুস্তাহাযা নামায আদায়ের পর তার স্বামীর জন্য তার সাথে সহবাস করা বৈধ, অনুরূপই নিফাসওয়ালীর [সন্তান প্রসবের পর যে রক্তস্রাব হয় তাকে নিফাস বলে।] হুকুম। রক্ত স্ত্রীলোকদিগকে [নামায, রোযা ও স্বামীর মিলন হতে] যতদিন বাধা দিয়ে রাখে তার শেষ সীমায় উপনীত হওয়ার পরও যদি সে রক্ত দেখিতে পায় তবে তখন তার স্বামী তাহাঁর সাথে মিলিত হতে পারবে, কারণ সে স্ত্রীলোক মুস্তাহাযা স্ত্রীলোকের মত।
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা হতে মুস্তাহাযা সম্পর্কে যে হাদীসটি বর্ণনা করেন, তদনুযায়ী এই বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত করেছি। এই বিষয়ে আমি যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটাই আমার মনঃপূত।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৩০ -দুগ্ধপোষ্য বালকের প্রস্রাব সম্পর্কীয় আহকাম
১৩৯ -আয়েশা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে একটি শিশুকে আনা হল। সে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাপড়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি তলব করিলেন এবং প্রস্রাব লাগা কাপড়ের উপর পানি ঢেলে দিলেন।
[বোখারী ২২২, মুসলিম ১০১] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৪০ –কায়স বিনত মিহসান [রা] হইতে বর্ণিতঃ
দুগ্ধ ছাড়া অন্য খাদ্য এখনও গ্রহণ করেনি তাহাঁর এমন এক ছোট শিশুকে সাথে নিয়ে তিনি রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই শিশুকে আপন কোলে বসালেন। সে তাহাঁর কাপড়ের উপর প্রস্রাব করে দিল। অতঃপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি তলব করিলেন এবং কাপড়ে পানি ছিটালেন, উহাকে ধুলেন না।
[বোখারী ২২৩, মুসলিম ২৮৬] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
পরিচ্ছেদঃ ৩১ -দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৪১ -ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
জনৈক বেদুইন মসজিদে প্রবেশ করিল, সে প্রস্রাব করার উদ্দেশ্যে লজ্জাস্থান হতে [কাপড়] খুলল। লোকজন তাকে ধমকাতে লাগলেন, এতে লোকের স্বর উচ্চ হল। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তাকে ছেড়ে দাও। তাঁরা সেই লোকটিকে ছেড়ে দিলেন। সে প্রস্রাব করিল। তারপর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েক ডোল পানি আনতে বলিলেন। তারপর উক্ত স্থানে পানি ঢালা হল।
[বোখারী ২২১, মুসলিম ২৮৪, উল্লেখ্য যে, ইমাম মালিক কর্তৃক হাদীসটি [মুরসাল] হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৪২ -আবদুল্লাহ ইবনি দীনার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করিতে দেখেছি। {১} [হাদীসটি ইমাম মালিক [রঃ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে প্রশ্ন করা হল প্রস্রাব-পায়খানা হতে লজ্জাস্থান ধৌত করা সম্পর্কে কোন বর্ণনা এসেছে কি? তিনি বলিলেন, আমি জ্ঞাত হয়েছি, পূর্বের লোকদের [আনসারদের] মধ্য হতে কিছুসংখ্যক লোক মলত্যাগের পর মলদ্বার ধৌত করিতেন, আর আমি প্রস্রাব করার পর লজ্জাস্থান ধৌত করা পছন্দ করি।
{১} প্রয়োজন ব্যতীত দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা অনুচীত। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
পরিচ্ছেদঃ ৩২ -মিসওয়াকের আহকাম
১৪৩ -ইবনি সাব্বাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমআসমূহের কোন এক জুমআয় ইরশাদ করেন হে মুসলিম সম্প্রদায় এটা একটি দিবস, যাকে আল্লাহ ঈদস্বরূপ নির্দিষ্ট করেন। তাই তোমরা গোসল কর, আর যার নিকট সুগন্ধ দ্রব্য থাকে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য। [হাসান, ইবনি মাজাহ ১০৯৮, আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানি সহিহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব ৭০৭, গ্রন্থে হাসান বলেছেন। ইমাম মালিক কর্তক বর্ণিত সনদে ===== তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে]
হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৪৪ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আমার উম্মতের উপর কঠিন হওয়ার আশংকা না করিতাম, তবে তাহাদিগকে বাধ্যতামূলকভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।
[বোখারী ৮৮৭, মুসলিম ২৫২] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
মুয়াত্তা মালিকঃ ১৪৫ -আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি উম্মতের উপর কঠিন হওয়ার আশংকা না করিতেন, তবে তাহাদেরকে বাধ্যতামুলকভাবে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতেন। [হাদীসটি মারফু তবে উল্লেখিত সনদে নয় বরং অন্য সনদে]
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
Leave a Reply