মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে
মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ১২
- অধ্যায়ঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
- অধ্যায়ঃ ১২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
অধ্যায়ঃ ১২. প্রথম অনুচ্ছেদ
২৬৯৬. সাব ইবনি জাসামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আব্ওয়া বা ওয়াদ্দান নামক স্থানে রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে একটি বন্যগাধা [শিকার করে এনে] হাদিয়্যাহ্ [উপহার] দিলেন। কিন্তু তিনি [সাঃআঃ] গাধাটি ফেরত দিলেন। এতে তার মুখমন্ডলে বিমর্ষভাব [মনোকষ্ট হওয়ার নিদর্শন] লক্ষ্য করে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমরা মুহরিম হওয়ার কারণে তা তোমাকে ফেরত দিলাম। [বোখারী, মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৮২৫, মুসলিম ১১৯৩, নাসায়ী ২৮১৯, মুয়াত্ত্বা মালিক ১২৮৯/৩৭১, আহমাদ ১৬৪২৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৯৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৯২৬। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬৯৭. আবু কাতাদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে [উমরা করিতে] বের হয়েছেন এবং পথিমধ্যে তিনি তাহাঁর কিছু সহযাত্রীসহ পিছনে পড়ে গেলেন। সাথীদের সকলেই মুহরিম ছিলেন, কিন্তু আবু কাতাদা তখনও ইহরাম বাঁধেননি। আবু কাতাদার দেখার পূর্বে তার সাথীরা একটি বন্যগাধা দেখলেন। তারা বন্যগাধাটি দেখার পর তাকে [আবু কাতাদা-কে] এভাবেই থাকতে দিলেন। অবশেষে আবু কাতাদাও ওটাকে দেখে ফেললেন। এরপর তিনি [আবু কাতাদা] তার ঘোড়ায় চড়ে সাথীদেরকে তার চাবুকটা দিতে বললেন। কিন্তু সাথীরা তা তাকে দিতে অস্বীকৃতি জানালেন। অতঃপর তিনি নিজেই চাবুক উঠিয়ে নিলেন।
তারপর বন্যগাধাটির ওপর আক্রমণ করে আহত [দুর্বল] করিলেন। অবশেষে [তা যাবাহ করার পর] আবু কাতাদা তা খেলেন এবং তারাও [সাথীরাও] খেলেন কিন্তু এতে তারা অনুতপ্ত হলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট পৌঁছে তাকে বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, তোমাদের সাথে বন্যগাধার কিছু আছে কি? তারা উত্তরে বললেন, আমাদের সাথে [রন্ধনকৃত] এর একটি পা আছে। তখন নবী সাঃআঃ তা গ্রহণ করিলেন ও খেলেন। [বোখারী, মুসলিম]
বোখারী মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে- তারা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে আসলেন। তিনি [সাঃআঃ] তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের কেউ কি আবু কাতাদা-কে বন্যগাধাকে আক্রমণ করার জন্য বলেছিলে? তারা বললেন, জ্বি না। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তবে তোমরা এর অবশিষ্ট গোশ্ত [গোসত/গোশত] খেতে পারো।{১}
{১} সহীহ : বোখারী ২৭৫৪, ১৮২৪, মুসলিম ১১৯৬। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬৯৮. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হারামে কিংবা ইহরাম অবস্থায় পাঁচটি প্রাণী তথা ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর হত্যা করেছে, তার কোন গুনাহ হবে না। [বোখারী, মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৮২৮, মুসলিম ১১৯৯, নাসায়ী ২৮৩৩, আবু দাউদ ১৮৪৬, ইবনি মাজাহ ৩০৮৮, মুয়াত্ত্বা মালিক ১৩০২, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১৪৮২১, আহমাদ ৫১০৭, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৩৬২। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬৯৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেছেনঃ পাঁচটি ক্ষতিকর প্রাণী হিল্ ও হারাম [সর্বস্থানে] যে কোন স্থানেই হত্যা করা যেতে পারে। সেগুলো হলো সাপ, [সাদা কালো] কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর ও চিল। [বোখারী, মুসলিম]{১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩১৪, মুসলিম ১১৯৮, নাসায়ী ২৮৮২, ইবনি মাজাহ ৩০৮৭, আহমাদ ২৪৬৬১, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৬৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৩৬৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ৫৬৩৩, ইরওয়া ১০৩৬। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
অধ্যায়ঃ ১২. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৭০০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ শিকারের গোশ্ত [গোসত/গোশত] ইহরাম অবস্থায়ও তোমাদের জন্য হালাল। যদি না তোমরা নিজেরা তা শিকার করো অথবা তোমাদের জন্য শিকার করা হয়ে থাকে। [আবু দাউদ, তিরমিজি ও নাসায়ী]{১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৮৫১, নাসায়ী ২৮২৭, তিরমিজি ৮৪৬, আহমাদ ১৪৮৯৪, দারাকুত্বনী ২৭৪৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৬৫৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৯২১, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৯৭১, জইফ আল জামি ৩৫২৪। কারণ জাবির [রাদি.] হইতে মুত্ত্বালিব-এর শ্রবণটি প্রমাণিত নয়। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৭০১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাঃআঃ হইতে বর্ণনা করেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ টিড্ডি [ফড়িং] সমুদ্রের শিকারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। [আবু দাউদ ও তিরমিজি]{১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৮৫৩, তিরমিজি ৮৫০, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০০১৫, জইফ আল জামি ২৬৪৭। কারণ এর সনদে মায়মূন ইবনি জাবান একজন মাজহূল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৭০২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী সাঃআঃ হইতে বর্ণনা করেন, তিনি [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি হিংস্র প্রাণী হত্যা করিতে পারে। [তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনি মাজাহ]{১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ১৮৪৮, তিরমিজি ৮৩৮, ইবনি মাজাহ ৩০৮৯। কারণ এর সনদে ইয়াযীদ ইবনি আবী যিয়াদ স্মৃতিশক্তিগত ত্রুটিজনিত কারণে এ কাজ দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৭০৩. আবদুর রহমান ইবনি আবু আম্মার [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনি আব্দুল্লাহ আল আনসারী [রাদি.]-কে যবু [অর্থাৎ- ধারালো নখ ও হিংস্র দাঁতবিশিষ্ট হায়েনা, বেজি, কাঠবিড়ালী এবং মরু অঞ্চলের হিংস্র প্রাণী] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, এটা শিকারী প্রাণী কিনা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তবে যবু কি খাওয়া যায়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এটা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
[তিরমিজি, নাসায়ী ও শাফিঈ; ঈমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহীহ]{১},{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৮০১, নাসায়ী ২৮৩৬, তিরমিজি ৮৫১, মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক্ব ৮৬৮২, আহমাদ ১৪৪২৫, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৬৪৫, দারাকুত্বনী ২৫৪৪, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৬৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৮৭২। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭০৪. জারির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে যবু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম [তা শিকারের অন্তর্গত প্রাণী কিনা]। তিনি বললেন, তা শিকার [জাতীয় প্রাণী]। তাই মুহরিম যবু শিকার করলে ক্ষতিপূরণে [কাফফারাহ হিসেবে] একটি দুম্বা দিতে হবে।
[আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ ও দারিমী]{১}, {১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৮০১, দারিমী ১৯৮৪, ইরওয়া ১০৫০। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭০৫. খুযায়মাহ্ ইবনি জাযী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে যবু [খাওয়ার ব্যাপারে] জিজ্ঞেস করলাম। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যবু কি কেউ খায়? তারপর আমি নেকড়ে বাঘ খাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যার মধ্যে কল্যাণ আছে এমন কেউ কি নেকড়ে খায়? [তিরমিজি; তিনি বলেন, হাদিসটির সানাদ দুর্বল]{১}
{১} জইফ : তিরমিজি ১৭৯২, ইবনি মাজাহ ৩২৩৫, মুজামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ৩৭৯৬। কারণ এর সনদে ইসমাঈল ইবনি মুসলিম একজন সমালোচিত রাবী যেমনটি ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন। আবদুল কারীম ইবনি আবিল মাখারিক্বও একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
অধ্যায়ঃ ১২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৭০৬. আবদুর রহমান ইবনি উসমান আত তায়মী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার আমরা [আমার চাচা] তলহা ইবনি উবায়দুল্লাহ-এর সাথে ছিলাম। আমরা সকলেই ইহরাম অবস্থায় ছিলাম। এ সময় তাঁকে পাখী হাদিয়্যাহ্ দেয়া হল। তখন তিনি [তলহা] ঘুমে ছিলেন। আমাদের কেউ কেউ তার গোশ্ত [গোসত/গোশত] খেলেন, আবার কেউ কেউ খাওয়া থেকে বিরত থাকলেন। তলহা ঘুম থেকে যখন জেগে উঠলেন তখন যারা গোশ্ত [গোসত/গোশত] খেলেন তাদের সমর্থন দিলেন এবং বললেন, আমরা এটা রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে খেয়েছি। [
মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১১৯৭, নাসায়ী ২৮১৭, আহমাদ ১৩৯২, দারিমী ১৮৭১। মুহরিম ব্যক্তি কে শিকার ধরা হতে বিরত থাকতে হবে -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply