মুশরিক ও মুনাফিকদের হাতে নবী [সাঃআঃ]-এর দুঃখ-যাতনা
মুশরিক ও মুনাফিকদের হাতে নবী [সাঃআঃ]-এর দুঃখ-যাতনা >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৩৯. অধ্যায়ঃ মুশরিক ও মুনাফিকদের হাতে নবী [সাঃআঃ]-এর দুঃখ-যাতনা
৪৫৪১. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা নবী [সাঃআঃ] বাইতুল্লাহিল হারামের নিকট নামাজ আদায় করছিলেন। আবু জাহল ও তার সাথীরা অদূরে উপবিষ্ট ছিল। পূর্বদিন সেখানে একটি উট নহর করা হয়েছিল। আবু জাহল বলিল, কে অমুক গোত্রের উটের [নাড়ি-ভূড়িসহ] জরায়ুকে নিয়ে আসবে এবং মুহাম্মদ [সাঃআঃ] যখন সিজদারত হইবে, তখন তার দুকাঁধের মাঝখানে তা রেখে দেবে? তখন সম্প্রদায়ের সবচাইতে হতভাগা দূরাচার লোকটি উঠে দাঁড়াল এবং তা নিয়ে আসলো এবং যখন নবী [সাঃআঃ] সিজ্দায় গেলেন তখন তাহাঁর দুকাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। তখন তারা হাসাহাসি করিতে লাগল এবং একে অপরের গায়ের উপর ঢলে পড়তে লাগল, আর আমি তখন দাঁড়িয়ে তা দেখলাম। যদি আমার প্রতিরোধের সাধ্য থাকতো তবে আমি তা অবশ্যই রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিঠ থেকে ফেলে দিতাম। নবী [সাঃআঃ] সিজ্দায় রইলেন এবং তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। অবশেষে এক ব্যক্তি গিয়ে ফাতিমাহ্কে খবর দিল। ফাতিমাহ্ সাথে সাথে আসলেন। আর তিনি তখন বালিকা। তিনি তা তাহাঁর উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর তাদের দিকে মুখ করে তাদেরকে মন্দাচারের বিষয়ে বলছিলেন। তারপর যখন নবী [সাঃআঃ] নামাজ সম্পন্ন করিলেন তখন উচ্চৈঃস্বরে তাদেরকে বদদুআ দিলেন আর তিনি যখন দুআ করিতেন [সাধারণতঃ] তিনবার করিতেন এবং যখন কিছু প্রার্থনা করিতেন তখন তিনি তিনবার করিতেন। তারপর তিনি তিন তিনবার বলিলেন “ইয়া আল্লাহ্! তোমার উপরেই কুরায়শদের বিচারের ভার ন্যাস্ত করলাম। যখন তারা তাহাঁর আওয়াজ শুনতে পেল তখন তাদের হাসি চলে গেল এবং তারা তাহাঁর বদ দুআয় ভয় পেয়ে গেল। তারপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ্! আবু জাহ্ল ইবনি হিশাম, উত্বাহ্ ইবনি রাবীআহ্, শাইবাহ্ ইবনি রাবীআহ্, ওয়ালিদ ইবনি উক্বাহ্, উমাইয়াহ্ ইবনি খালাফ ও উক্বাহ্ ইবনি আবু মুআয়তের শাস্তির ভার তোমার উপর ন্যস্ত। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম আরেকজনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-কে যে পবিত্র সত্তা সত্যসহ রসূলরূপে প্রেরণ করিয়াছেন, তাহাঁর কসম! তিনি যাদের নাম সেদিন উচ্চারণ করেছিলেন বাদ্রের দিন তাদের পতিত লাশ আমি দেখেছি। তারপর তাদের হেঁচড়িয়ে বাদ্রের একটি নোংরা কূপে নিক্ষেপ করা হয়। আবু ইসহাক্ বলেন, ওয়ালিদ ইবনি উকবার নাম এখানে ভুলে হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০০]
৪৫৪২. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সিজ্দারত ছিলেন এবং তাহাঁর আশেপাশে কুরায়শের কিছু লোকজন জড়ো ছিল। এমন সময় উক্বাহ্ ইবনি আবু মুআয়ত [উটনীর নাড়ি-ভুড়িসহ] জরায়ু নিয়ে এলো এবং তা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিঠে নিক্ষেপ করলো। তিনি মাথা উঠাতে পারছিলেন না। তারপর ফাতিমাহ্ আসলেন এবং তা তাহাঁর পিঠ থেকে সরিয়ে দিলেন এবং যে ব্যক্তি তা করেছে, তাকে বদদুআ করিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইয়া আল্লাহ্! তোমার উপরই কুরায়শ সম্প্রদায়ের আবু জাহ্ল ইবনি হিশাম, উত্বাহ্ ইবনি রাবীআহ্, শাইবাহ্ ইবনি রাবীআ, উক্বাহ্ ইবনি আবু মুআইত, উমাইয়াহ্ ইবনি খালাফ অথবা উবাই ইবনি খালাফ এদের চিনে নাও। তবে রাবী শুবাহ্ [শেষের দু নামের] কোন্টি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছিলেন, সে ব্যাপারে] সন্দেহ করিয়াছেন। রাবী বলেন, এরপর আমি বাদ্রের দিন তাদের দেখেছি যে, তারা সকলে নিহত হয়েছে এবং একটি কূপে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কেবল উমাইয়াহ্ বা উবাই এর লাশ বাদ ছিল। কেননা, তার লাশ জোড়ায় জোড়ায় কেটে ফেলা হয়েছিল বিধায় কূপে নিক্ষেপ করা হয়নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৪৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০১]
৪৫৪৩. আবু ইস্হাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে উক্ত সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। রাবী সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বাড়িয়ে বলেছেন, “এবং তিনি তিনবার বলা পছন্দ করিতেন। তিনি বলেছিলেন, ইয়া আল্লাহ্! কুরায়শের [এদের] বিচারের ভার তোমার উপর ন্যাস্ত। ইয়া আল্লাহ্! কুরায়শদের বিচারের ভার তোমার উপর ন্যস্ত। ইয়া আল্লাহ্! কুরায়শের বিচারের ভার তোমার উপরই ন্যাস্ত। এভাবে তিনবার তিনি বলেন, এবং এদের মধ্যে ওয়ালীদ ইবনি উত্বাহ্ ও উমাইয়াহ্ ইবনি খালাফের কথা তিনি উল্লেখ করেন এবং তাতে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করেননি। রাবী আবু ইসহাক্ বলেন, আমি সপ্তম [অভিশপ্ত] ব্যক্তির নাম ভুলে গেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০২]
৪৫৪৪. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদা বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে কুরায়শের ছয় ব্যক্তির জন্য বদদুআ করিলেন। তাদের মধ্যে আবু জাহ্ল, উমাইয়াহ্ ইবনি খালাফ, উত্বাহ্ ইবনি রাবীআহ্, শাইবাহ্ ইবনি রাবীআহ্, উক্বাহ্ ইবনি আবু মুআয়ত রয়েছে। আল্লাহ্র কসম করে বলছি, আমি তাদের কর্তিত মৃত লাশগুলো বাদ্রে দেখেছি। সূর্যতাপ তাদের বিকৃত করে ফেলেছিল। আর সেদিনটিও ছিল অত্যন্ত গরমের।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০১, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৩]
৪৫৪৫. নবী [সাঃআঃ] সহধর্মিণী আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আপনার জীবনে কি উহুদ দিবসের চেয়েও অধিকতর কঠিন কোন দিন এসেছে? তিনি বলিলেন, তোমার সম্প্রদায়ের হাতে আকাবার দিন যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তা এর চেয়েও অধিকতর কঠিন ছিল। যখন আমি [আল্লাহ্র পানে দাওয়াত দিতে গিয়ে] ইবনি আব্দে ইয়ালীল ইবনি আব্দে কিলালের কাছে নিজেকে পেশ করেছিলাম। কিন্তু সে আমার কাঙ্ক্ষিত ডাকে সাড়া দেয়নি। তখন আমি অত্যন্ত বিষণ্ণ অবস্থায় সম্মুখের দিকে চলতে লাগলাম এবং কারনুস সাআলিব নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত আমি সম্বিৎ ফিরে পাইনি। তারপর যখন আমি মাথা উঠালাম তখন দেখি, একখণ্ড মেঘ আমাকে ছায়াপাত করছে এবং এর মধ্যে জিবরাঈল [আঃ]-কে দেখিতে পেলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বলিলেন, মহা মহিমান্বিত আল্লাহ্ আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের উক্তি এবং আপনার বিরুদ্ধে তাদের উত্তরও শুনেছেন এবং তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশ্তাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যাপারে যেরূপ ইচ্ছা সেরূপ আদেশ তাঁকে করেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশ্তাও আমাকে ডাক দিলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। তারপর বলিলেন, “হে মুহাম্মাদ! আপনার প্রতি আপনার সম্প্রদায়ের লোকজনের উক্তি আল্লাহ্ তাআলা শুনেছেন আর আমি হলাম পাহাড়ের [তত্ত্বাবধানকারী] ফেরেশ্তা। আপনার রব আপনার কাছে আমাকে এজন্যে পাঠিয়েছেন যেন আপনি আপনার ইচ্ছামত আমাকে নির্দেশ দেন। [আপনি বললে] আমি এ পাহাড় দুটিকে তাদের উপর চাপা দিয়ে দিব। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি বরং আশা করি যে, আল্লাহ্ তাআলা হয়তো এদের ঔরস থেকেই এমন ব্যক্তি বের করে আনবেন, যারা তাহাঁর সঙ্গে কিছুকে শরীক না করে এক আল্লাহ্র ইবাদাত করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০২, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৪]
৪৫৪৬. জুন্দুব ইবনি সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একটি আঙ্গুলি কোন একটি অভিযানে রক্তাক্ত হয়। তখন তিনি [উক্ত আঙ্গুলিকে লক্ষ্য করে] বলিলেন, তুমি তো আঙ্গুলি ছাড়া কিছু নও, তুমি আহত হয়েছ এবং তুমি যে কষ্ট পেয়েছ, তা আল্লাহ্র পথেই গণ্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৫]
৪৫৪৭. আসওয়াদ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তাতে বর্ণনাকারী আরও বলেছেন: রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন কোন এক গুহায় ছিলেন, তখন তাহাঁর আঙ্গুলে যখম হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৬]
৪৫৪৮. আসওয়াদ ইবনি কায়স হইতে বর্ণীতঃ
তিনি জুন্দুব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -কে বলিতে শুনেছেন যে, জিবরাঈল [আঃ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে আসতে বিলম্ব করেন। এতে মুশরিকরা বলিতে লাগলো, মুহাম্মাদ পরিত্যক্ত হয়েছেন। তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের,শপথ রজনীর! যখন তা হয় নিঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে ছেড়ে দেননি এবং তোমার প্রতি নারাজও হননি।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৭]
৪৫৪৯. আসওয়াদ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জুনদুব ইবনি সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] –কে বলিতে শুনেছি, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পীড়িত হন বিধায় দুই বা তিন রাত্রি জাগতে পারেননি [তাহাজ্জুদের জন্যে]। তখন একটি মহিলা এসে বলিল, “মুহাম্মাদ, আশা করি, এবার তোমার শাইতান তোমাকে ছেড়ে দিয়েছে। কেননা, দুই বা তিন রাত যাবৎ তোমার নিকটে আগমন লক্ষ্য করছি না।” তখন আল্লাহ তাআলা নাযিল করিলেন, “শপথ পূর্বাহ্নের, শপথ রজনীর! যখন তা হয় নিঝ্ঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি অসন্তুষ্টও হননি।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৮]
৪৫৫০. আবু বাকর ইবনি আবু শাইবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনি মুসান্না ও ইবনি বাশ্শার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এবং ইসহাক্ ইবনি ইব্রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] …সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উভয়ে উক্ত সানাদে আসওয়াদ ইবনি কায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫০৯]
Leave a Reply