মুয়াত্তা ইমাম মালিক । কথাবার্তা সম্পর্কিত অধ্যায়
মুয়াত্তা ইমাম মালিক । কথাবার্তা সম্পর্কিত অধ্যায়। এই অধ্যায়ে হাদীস =২৮ টি ( ১৮৪২-১৮৬৯ পর্যন্ত )>> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ৫৬ঃ কথাবার্তা সম্পর্কিত
পরিচ্ছেদ ১: অপছন্দনীয় কথাবার্তা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ২: বুঝেশুনে কথা বলা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ৩: অনর্থক কথা বলার দোষ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ৪: গীবত প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ৫: জিহ্বার গুনাহ প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ৬: একজনকে বাদ দিয়ে দুইজন পরস্পরে কানে কানে কথা বলা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ৭: সত্য ও মিথ্যা কথা বলা প্রসঙ্গে
পরিচ্ছেদ ৮: অপব্যয় ও দোমুখো মানুষ প্রসঙ্গে হাদীস
পরিচ্ছেদ ৯: কয়েকজনের গুনাহের কারণে সকলের ভোগান্তি
পরিচ্ছেদ ১০: তাকওয়াত প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদ ১১: বজ্রপাতের সময় কি পড়তে হয়
পরিচ্ছেদ ১২: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি
পরিচ্ছেদ ১: অপছন্দনীয় কথাবার্তা প্রসঙ্গে
১৭৮৫ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যদি কেউ নিজের কোন ভাইকে কাফের বলে, তবে এতদুভয়ের মধ্যে একজন [নিশ্চয়ই] কাফের হল।
{১} [বুখারি ৬১০৪, মুসলিম ৬০]{১} অর্থাৎ কাউকেও কাফের বলে ফতোয়া দিলে ইহা আর ব্যর্থ বা অনর্থ হয় না। সুতরাং যাকে কাফের বলা হয়েছে সে যদি প্রকৃতপক্ষে কাফের হয়, তবে ফতোয়া ঠিক। অন্যথায় কাফের বলে যে ফতোয়া দিয়েছে ফতোয়া তার দিকে ফিরে আসবে। অতএব, কাফের হওয়ার ফতোয়া দিবার বেলায় অত্যধিক সতর্কতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৮৬ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যদি তুমি কাউকেও এই কথা বলিতে শুনতে পাও যে, মানুষ ধ্বংস হয়েছে, তা হলে সে সবচাইতে অধিক ধ্বংস হয়েছে।
{১} [সহীহ, মুসলিম ২৬২৩]{১} অর্থাৎ নিজেকে ভাল মনে করে অপরকে খারাপ মনে করলে বুঝতে হইবে যে, আসলে সে-ই সর্বাপেক্ষা খারাপ।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৮৭ আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন দাহরকে [যুগ বা জমানাকে] মন্দ না বলে। কেননা আল্লাহই দাহর [যুগ]।
{১} [বুখারি ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬]{১} মুশরিকদের অভ্যাস ছিল যে, তারা কোন মুসিবতে পতিত হলে কাল বা যুগকে মন্দ বলত। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ উহা নিষেধ করিয়াছেন। কেননা যুগ কাউকেও কিছু করিতে পারে না। যা কিছু ভাল বা মন্দ হয়, সব আল্লাহর পক্ষ হইতেই হয়।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৮৮ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
ঈসা ইবনি মারইয়াম [আ]-এর সম্মুখে পথে একটি শূকর এল। তিনি তখন বলিলেন, নিরাপদে তুমি চলে যাও। লোকেরা তাহাকে বলল, আপনি শূকরকে এ কথা বলছেন ? [অথচ এটা সর্বনিকৃষ্ট অশুচি জীব। এটাকে তো মেরে এবং গালমন্দ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া দরকার!] অতঃপর তিনি বলিলেন, এতে আমার মুখ খারাপ কথায় অভ্যস্ত হইবে বলে আমি ভয় করছি।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ২: বুঝেশুনে কথা বলা প্রসঙ্গে
১৭৮৯ বিলাল ইবনি হারিস মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, [অনেক সময়] মানুষ কথা বলে, কিন্তু সেই কথা কোথায় তাকে পৌঁছাবে, সে তা জানে না। অথচ সেই কথার জন্য আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য স্বীয় সন্তুষ্টি কিয়ামত পর্যন্ত লিখে দেন। আবার কোন সময় আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক এমন কথা কেউ বলে, সেই কথা তাকে কোথায় নিয়ে যাবে সে তা জানে না, অথচ সেই কথার জন্য আল্লাহ্ তাআলা তার জন্য কিয়ামত পর্যন্ত স্বীয় অসন্তুষ্টি লিখে দেন।
{১} [বুখারি ৬৪৭৭, মুসলিম ২৯৮৮, তিনি আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করেন]{১} না বুঝে কথা বললে অনেক সময় উহার ফলাফল অত্যন্ত মারাত্মক হয়। তাই কথা বলার আগে চিন্তা করিতে হয়, আমি যা বলিতেছি, উহার কি তাৎপর্য হইতে পারে।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৯০ আবু সালেহ সাম্মান [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু হুরায়রা [রাদি.] বলেছেন যে, [অনেক সময়] মানুষ চিন্তা না করে কথা বলে, পরিণামে সে জাহান্নামে পতিত হয়; আবার চিন্তা না করে [এমন] কথা কেউ বলে, যার ফলে সে বেহেশতে গমন করে।
[সহীহ মারফু, ঈমাম বুখারি ৬৪৭৮, আবু হুরায়রা [রাদি.] থেকে মারফু সনদে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ৩: অনর্থক কথা বলার দোষ প্রসঙ্গ
১৭৯১ যায়দ ইব্নু আসলাম আবদুল্লাহ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
পূর্বদিক হইতে দুইজন লোক আগমন করিল। তারা বক্তৃতা দান করিল এবং তাদের বক্তৃতায় জনসাধারণ আশ্চর্যান্বিত হল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, নিঃসন্দেহে কোন কোন বক্তৃতা যাদুর মতো ক্রিয়া করে।
[সহীহ, বুখারি ৫৭৬৭]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৭৯২ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
ঈসা ইব্নু মরিয়ম [আ] বলিতেন, আল্লাহ্র যিকির ব্যতীত অনর্থক বেশি কথা বলিও না। এতে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে যাবে। আর কঠিন হৃদয়ের ব্যক্তি আল্লাহ্ হইতে দূরে থাকে, অথচ তোমরা তা জান না। আর তোমরা অপরের গুনাহের দিকে [এইভাবে] তাকাইও না যেন তোমরা তাদের প্রভু! তোমরা নিজেদের গুনাহের দিকে [এইভাবে] তাকাও, যেন তোমরা গোলাম। কেননা মানুষ অনেক রকমের হয়। কেউ রোগী আর কেউ সুস্থ। অতএব, রোগীদের প্রতি সদয় হও এবং নিজের সুস্থতার জন্য আল্লাহ্র শোকর আদায় কর।
{১} [বাইহাকী {শাব } {শুয়াইবুন গ্রন্থে ৭/৭২} আলবানী হাদীসটি যয়ীফ বলেছেন {সিলসিলা যয়ীফা ৯০৮}]{১} প্রভু হয়ে থেকো না, বরং বান্দা হয়ে থাক অর্থাৎ যেকোন কাজে নিজেকে বড় মনে করো না, বরং সর্বদা নিজেকে ছোট মনে কর, তা হলে আল্লাহর কাছে তোমার মর্যাদা বড় হইবে।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১৭৯৩ বর্ণণাকারী হইতে বর্ণিতঃ
নবী করীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সহধর্মিণী আয়িশা [রাদি.] ইশার নামাযের পর আপনজনদের কাছে বলে পাঠাতেন যে, লেখক ফেরেশতাদেরকে এখনও আরাম [অবসর] দিবে না ?
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} অর্থাৎ ইশার পর অনর্থক গল্প করো না। সম্মানিত লেখক ফেরেশতাকে অবসর দান কর এবং শুইয়া পড়। অনর্থক বিলম্বে শুইলে সকালে জাগ্রত হইতে পারবে না।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ৪: গীবত প্রসঙ্গে
১৭৯৪ মুত্তালিব ইব্নু আবদুল্লাহ্ মাখযুমী [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ গীবত কি [বা গীবত কাকে বলে]? এতদুত্তরে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, কারো অবর্তমানে তার এমন কথা প্রকাশ করা যা সে শুনলে অসন্তুষ্ট হইবে। অতঃপর লোকটি [আবার] বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কথা যদি সত্য হয় [অর্থাৎ যা বলা হচ্ছে তা যদি মিথ্যা না হয়, বরং সত্য হয় তা হলেও কি উহা গীবত হইবে]? তখন রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, যদি মিথ্যা হয়, [তবে উহাকে গীবত বলা হয় না; বরং] উহা বুহতান [অপবাদ]।
{১} [সহীহ, ঈমাম মুসলিম আবু হুরায়রা থেকে বর্ণনা করেন ২৫৮৯]{১} কোন ব্যক্তির এমন দোষের কথা যা উক্ত ব্যক্তির মধ্যে আছে, তার অবর্তমানে প্রকাশ করার নামই গীবত। অবশ্য সৎ পথে আনার নিয়তে হলে উহা জায়েয আছে, অন্যথায় হারাম। আর যদি উহা মিথ্যা হয় তবে উহা অপবাদ বা বুহ্তান, ইহা গীবতের চাইতেও মারাত্মক।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৫: জিহ্বার গুনাহ প্রসঙ্গে
১৭৯৫ আতা ইব্নু ইয়াসার [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা যাকে দুইটি জিনিসের অনিষ্ট হইতে রক্ষা করিবেন সে বেহেশতে যাবে। [ইহা শুনে] এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! সে দুটি জিনিস কি আপনি আমাদেরকে বলবেন না? অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নীরব হয়ে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সেই প্রথম কথা পুনরাবৃত্তি করলেন। লোকটি আবার বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদেরকে উহা বলবেন না ? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নীরব হয়ে গেলেন। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] পুনরায় সেই কথা বলিলেন। লোকটি আবার বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদেরকে বলবেন না? রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আবার সেই কথা বলিলেন। লোকটিও আবারও একই কথা বলিতে চাইলে লোকটির পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তি তাকে চুপ করাল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] নিজেই বলিলেন, “আল্লাহ্ তাআলা যাকে দুটি জিনিসের অনিষ্ট হইতে রক্ষা করিবেন সে বেহেশতে যাবে। একটি হল দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী বস্তু [জিহ্বা] অপরটি হল দুই রানের মধ্যবর্তী বস্তু” [লজ্জাস্থান]। এই কথাটি তিনবার বলিলেন।
{১} [সহীহ, বুখারি ৬৪৭৪, সাহল বিন সাদ থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন- তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]{১} অর্থাৎ জিহ্বা সংযত রাখ এবং চরিত্রের হিফাযত কর।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৯৬ যাইদ ইব্নু আসলাম [রাদি.] তাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইব্নু খাত্তাব [রাদি.] আবু বাক্র সিদ্দীক [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে দেখলেন যে, আবু বাক্র [রাদি.] স্বীয় জিহ্বা ধরে টানছেন। উমার [রাদি.] বলিলেন, রাখুন [অর্থাৎ এই রকম করিবেন না], আল্লাহ্ আপনাকে ক্ষমা করুন। অতঃপর আবু বাকর [রাদি.] বলিলেন, এই জিহ্বাই তো আমাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ৬: একজনকে বাদ দিয়ে দুইজন পরস্পরে কানে কানে কথা বলা প্রসঙ্গে
১৭৯৭ আবদুল্লাহ্ ইব্নু দীনার [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি ও আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] খালিদ ইব্নু উকবা [রাদি.]-এর সেই ঘরের নিকটে ছিলাম যা বাজারে অবস্থিত ছিল। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি এসে তাঁর সাথে কানে কানে কিছু কথা বলিতে ইচ্ছা করিল। আবদুল্লাহ্ [ইব্নু উমার]-এর সঙ্গে আমি ও সেই ব্যক্তি ব্যতীত, যে তার সাথে কানে কানে কথা বলিতে চেয়েছিল, আর কেউ ছিল না। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] অপর এক ব্যক্তিকে ডেকে নিলেন। এখন আমরা চারজন হলাম এবং তিনি আমাকে ও সেই ব্যক্তিকে একটু সরে যেতে বলিলেন, যাকে ডেকে নিয়েছিলেন এবং বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট শ্রবণ করেছি, তিনি বলেছেন, দুইজন একজনকে একা ছেড়ে কানে কানে কথা বলবে না। [এতে তৃতীয় ব্যক্তি দুঃখিত হয়।]
মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৭৯৮ আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, যদি তিনজন এক সঙ্গে হয়, তবে একজনকে ছেড়ে অবশিষ্ট দুইজন কানে কানে কথা বলবে না।
[বুখারি ৬২৮৮, মুসলিম ২১৮৩]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৭: সত্য ও মিথ্যা কথা বলা প্রসঙ্গে
১৭৯৯ সাফওয়ান ইব্নু সুলাইম [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে মিথ্যা বলিতে পারব কি? এতদুত্তরে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, মিথ্যা কথায় কোন উপকার নেই। লোকটি আবার বলল, আমি তার সাথে ওয়াদা তো করিতে পারব যে, আমি তোমাকে এই জিনিস দিব। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, এতে কোন দোষ নেই।
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} অর্থাৎ পূর্ণ করার নিয়্যাতে ওয়াদা করিতে কোন আপত্তি নেই। তবে কখনোই পূর্ণ করিবেন না এই নিয়্যাতে ওয়াদা করলে নিশ্চয়ই গুনাহগার হইবে। কেননা মিথ্যা ওয়াদা কখনও জায়েয নেই, বরং উহা মুনাফিকের আলামত।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০০ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ [রাদি.] বলিতেন, তোমরা সত্য বলা নিজের উপর ওয়াজিব [অনিবার্য] করে নাও। কেননা সত্য কথা নেকীর দিকে ধাবিত করে এবং নেকী বেহেশতের পথ সুগম করে। আর তোমরা মিথ্যা বলা হইতে সংযত হও। কেননা মিথ্যা কথা গুনাহর দিকে পথ প্রদর্শন করে এবং গুনাহ দোযখের পথ সুগম করে। তুমি কি শোননি, ইহা বলা হয় যে, সত্য বলে নেকী করিল এবং মিথ্যা বলে গুনাহ করিল?
[বুখারি ৬০৯৪, মুসলিম ২৬০৭, আর ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি ঈমাম মালিক-এর নিকট ইবনি মাসঊদ থেকে পৌঁছেছে মর্মে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০১ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
লুকমান [আ]-এর নিকট কেউ জিজ্ঞেস করিল, কিসের কারণে আপনি এই এত বুযুর্গী পেলেন? লুকমান [আ] বলিলেন, সত্য কথা বলা, আমানতদারী এবং অনর্থক কাজ পরিহার করার কারণে।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০২ মালিক [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইব্নু মাসঊদ [রাদি.] বলিতেন, মানুষ মিথ্যা কথা বলে। তার অন্তরে একটা কাল দাগ পড়ে শেষ পর্যন্ত তার গোটা অন্তরই কাল হয়ে যায়। অবশেষে আল্লাহ্র নিকট তার নাম মিথ্যাবাদীদের তালিকায় লিপিবদ্ধ হয়।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০৩ সাফওয়ান ইব্নু সুলাইম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করিল, মুমিন সাহসহীন বা ভীরু হইতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, মুমিন কৃপণ [বখিল] হইতে পারে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হল, মুমিন মিথ্যাবাদী হইতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, না।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ৮: অপব্যয় ও দোমুখো মানুষ প্রসঙ্গে
১৮০৪ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের তিনটি কাজে সন্তুষ্ট হন এবং তিনটি কাজে অসন্তুষ্ট হন।
যেসব কাজে তিনি সন্তুষ্ট হন সেগুলো হলঃ
[১] তোমরা তাঁরই ইবাদত করিবে এবং তাঁর সাথে আর কাউকেও শরীক করিবে না।[২] আল্লাহর রজ্জু [অর্থাৎ কুরআন] মজবুত করে ধরবে।[৩] আল্লাহ্ যাকে শাসনের ভার দিয়েছেন তাকে নসীহত করিবে।যেসব কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন, সেগুলো হলঃ[১] কথা অধিক বলা,[২] অপব্যয় করা,[৩] অধিক যাচনা করা [ভিক্ষা করা]।
[সহীহ, মুসলিম ১৭১৫]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮০৫ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, দোমুখো মানুষই নিকৃষ্টতম মানুষ অর্থাৎ যে এক দলের সঙ্গে এক রকম কথা বলে এবং অপর দলের সঙ্গে আরেক রকম কথা বলে।
[সহীহ, মুসলিম ২৫২৬, এই হাদীসটি বুখারি ও মুসলিমেও বর্ণিত হয়েছে অন্য সনদে আবু হুরায়রা থেকে]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৯: কয়েকজনের গুনাহের কারণে সকলের ভোগান্তি
১৮০৬ নবী করীম [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সহধর্মিণী উম্মে সালমা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমাদের মধ্যে সংলগ্ন থাকা সত্ত্বেও আমরা ধ্বংস হয়ে যাব কি? অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, হ্যাঁ গুনাহ যখন অধিক হয়, তখন [উহার শাস্তি সকলকেই ভোগ করিতে হয়]।
[বুখারি ৩৩৪৬, মুসলিম ২৮৮০, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০৭ উমার ইব্নু আবদুল আযীয [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
বিশেষ লোকের গুনাহের কারণে আল্লাহ্ তাআলা জনসাধারণকে আযাব দেন না। তবে পাপাচার যদি প্রকাশ্যে হইতে থাকে, তখন সকলেই আযাবের যোগ্য হয়।
{১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]{১} যে পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে সে তার পাপের দরুন আযাব ভোগ করিবে। আর যারা পাপাচারে লিপ্ত হয়নি তারা আযাব ভোগ করিবে এইজন্য যে, তারা পাপাচারে বাধা দেয়নি।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ১০: তাকওয়াত প্রসঙ্গ
১৮০৮ আনাস ইব্নু মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমি উমারের সঙ্গে ছিলাম। তিনি একটি বাগানে গেলেন। আমি ও তাঁর মধ্যে বাগানের একটি দেয়াল ছিল। আমি শ্রবণ করছিলাম, তিনি নিজেকেই সম্বোধন করে বলছিলেন, হে উমার! আমীরুল মুমিনীন! বাহ্বা! হে খাত্তাবের পুত্র, হয় তুমি আল্লাহ্কে ভয় কর, না হয় তিনি তোমাকে আযাব দিবেন।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
১৮০৯ কাসিম ইব্নু মুহাম্মাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমি দেখলাম যে, মানুষ কথায় মোহিত হয় না। মালিক [রহঃ] বলেন, এর অর্থ এই যে, তাঁরা কাজের [আমলের] দিকে তাকাতেন, কথার দিকে তাঁদের তেমন দৃষ্টি ছিল না।
[হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ১১: বজ্রপাতের সময় কি পড়তে হয়
১৮১০ আমির ইব্নু আবদুল্লাহ্ ইব্নু যুবাইর [রহঃ] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বজ্রের শব্দ শুনলে কথা বলা বন্ধ করে এই দুআ পাঠ করিতেনঃ
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
বজ্র নির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণও ভয়ে তার প্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে।
অতঃপর তিনি [আমির ইব্নু আবদুল্লাহ্] বলিতেন, যমীনের অধিবাসীদের জন্য এই আওয়াজ অত্যন্ত কঠিন আযাবের সংবাদ। {১} [মাওকুফ, হাদীসটি ঈমাম মালিক একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী ও তিরমিজিতে আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত; ইহুদীগণ রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করিল যে, রাদ কি? এতদুত্তরে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, “রাদ জনৈক ফেরেশতা যিনি মেঘের উপর নিয়োজিত আছেন। তাঁর হাতে আগুনের একটি চাবুক আছে। সেই চাবুক দ্বারা উক্ত ফেরেশতা মেঘখণ্ডগুলোকে আল্লাহ্ যেইদিকে নির্দেশ দেন সেইদিকে নিয়ে যান।” ইহুদীগণ পুনরায় জিজ্ঞেস করিল, এই গর্জন কিসের? রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলিলেন, ইহা সেই রাদ ফেরেশতারই গর্জন। ইহুদীগণ বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
পরিচ্ছেদ ১২: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি
১৮১১ মুমিন জননী আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর ওফাতের পর তাঁর বিবিগণ ইচ্ছা করলেন, উসমান ইব্নু আফফান [রাদি.]-কে আবু বাকর সিদ্দীক [রাদি.]-এর নিকট পাঠিয়ে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদের ওয়ারিস দাবি করিবেন। আয়িশা [রাদি.] তাঁদেরকে বলিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কি এই কথা বলেননি আমাদের কেউ ওয়ারিস হয় না, আমরা যা কিছু মাল রেখে যাই, উহা সাদাকায় পরিণত হয়।
{১} [বুখারি ৬৭৩০, মুসলিম ১৭৫৮]{১} নবী-রসূলগণের পরিত্যক্ত সম্পত্তির কেউ ওয়ারিস হয় না। যা কিছু তাঁরা রেখে যান উহা সদকা হয়। অবশ্য সত্যিকারের উলামা নবীগণের ইলম ও ধর্ম প্রচারের ওয়ারিস হন। নবীর পরে তাঁর ধর্ম প্রচার করার দায়িত্ব উলামাদের উপরেই ন্যস্ত হয়।মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১৮১২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আমার পরে আমার ওয়ারিসগণ আমার সম্পত্তি ভাগ করিবে না। আমি যা কিছু রেখে যাব, উহা হইতে আমার বিবিগণের খাওয়া-পরা ও কর্মচারীর খরচ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকিবে, উহা সাদাকাহ্।
[বুখারি ২৭৭৬, মুসলিম ১৭৬০]মুয়াত্তা ইমাম মালিক – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply