মুযদালিফা এর বর্ণনা, কুরবানী ও মিনায় পাঠানো

মুযদালিফা এর বর্ণনা, কুরবানী ও মিনায় পাঠানো

কুরবানীর দিন, মুযদালিফা য় ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই ফজরের নামাজ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪৮. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিন, মুযদালিফায় ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই ফজরের নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব
৪৯. অধ্যায়ঃ দুর্বল ও বৃদ্ধদের, বিশেষতঃ মহিলাদের ভোর রাতে রাস্তায় ভিড় হবার পূর্বেই মুযদালিফাহ্ থেকে মিনায় পাঠানো এবং অন্যদের ফজর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা মুস্তাহাব

৪৮. অধ্যায়ঃ কুরবানীর দিন, মুযদালিফা য় ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই ফজরের নামাজ আদায় করা মুস্তাহাব

৩০০৭. আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে নির্ধারিত ওয়াক্তেই নামাজ আদায় করিতে দেখেছি। তবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার নামাজ আদায় করিয়াছেন এবং রাতের ভোরে ফজরের নামাজ নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অর্থাৎ ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করেছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮২, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৭৯]

৩০০৮. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এ বর্ণনার শেষাংশ নিম্নরূপঃ “ওয়াক্ত হবার সাথে সাথেই অন্ধকারের মধ্যে তা আদায় করিয়াছেন।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮০]

৪৯. অধ্যায়ঃ দুর্বল ও বৃদ্ধদের, বিশেষতঃ মহিলাদের ভোর রাতে রাস্তায় ভিড় হবার পূর্বেই মুযদালিফাহ্ থেকে মিনায় পাঠানো এবং অন্যদের ফজর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা মুস্তাহাব

৩০০৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাওদাহ্ [রাদি.] মুযদালিফার রাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আগেই এবং রাস্তায় জনতার ভিড় হবার পূর্বেই মিনার উদ্দেশে যাত্রার জন্য তাহাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি ছিলেন স্থূলদেহী। [অধঃস্তন রাবী] আল-ক্বাসিম বলেন, [আরবি] শব্দের অর্থ [আরবি] [ভারী]। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে অনুমতি দিলেন। অতএব তিনি তাহাঁর আগেই রওনা হয়ে গেলেন এবং আমরা ফজর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলাম। তারপর আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রওনা হলাম। আমিও যদি সাওদাহ [রাদি.]-এর মতো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুমতি নিয়ে আগে ভাগে চলে যেতাম, তবে তা আরও আনন্দদায়ক হতো- যে আনন্দ এখন আমি অনুভব করছি, তার তুলনায়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮১]

৩০১০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সাওদাহ্ [রাদি.] ছিলেন ভারী ও স্থূলদেহী। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট মুযদালিফাহ্ থেকে রাত থাকতেই প্রস্থান করার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। আয়িশা [রাদি.] আরও বলেন, হায়! যদি সাওদাহ্ [রাদি.]-এর মতো রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আমিও অনুমতি প্রার্থনা করতাম!

আয়িশা [রাদি.] ইমামের সাথে মুযদালিফাহ্ হইতে রওনা হইতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮২]

৩০১১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম আমিও যদি সাওদাহ্ [রাদি.]-এর অনুরূপ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতাম! তিনি মিনায় পৌঁছে ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করেন এবং লোকদের পৌঁছার পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেন।

আয়িশা [রাদি.]-কে বলা হল, সাওদাহ্ [রাদি.] কি তাহাঁর নিকট অনুমতি চেয়েছিলেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তিনি ছিলেন স্থূলদেহী এবং ভারী, তাই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৩]

৩০১২. আবদুর রহমান ইবনি ক্বাসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৪]

৩০১৩. আসমা [রাদি.]-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আসমা [রাদি.] মুযদালিফাহ্ অবস্থানকালে জিজ্ঞেস করিলেন, চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, না। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ নামাজ আদায় করিলেন। পরে পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, হে বৎস! চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, আমার সাথে রওনা হও। আমরা রওনা হলাম এবং জামরাহ্ [পৌঁছে] তিনি কাঁকর নিক্ষেপ করিলেন, এরপর নিজের তাঁবুতে নামাজ আদায় করিলেন। আমি তাকে বললাম, হে সম্মানিত মহিলা! আমরা খুব ভোরে রওনা হয়েছিলাম। তিনি বলিলেন, কোন অসুবিধা নেই হে বৎস! নবী [সাঃআঃ] মহিলাদের খুব ভোরে রওনা হবার অনুমতি দিয়েছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৫]

৩০১৪. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে আছেঃ “আসমা [রাদি.] বলেন, হে বৎস! নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সহধর্মিণীকে অনুমতি দিয়েছিলেন।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৬]

৩০১৫. [সালিম] ইবনি শাও্‌ওয়াল [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[সালিম] ইবনি শাও্‌ওয়াল [রাদি.] উম্মু হাবীবাহ্‌ [রাদি.]-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে অবহিত করেন যে, নবী [সাঃআঃ] রাত থাকতেই তাকে মুযদালিফাহ্‌ থেকে মিনায় [পাঠিয়ে দেন]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯০, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৭]

৩০১৬. সালিম ইবনি শাও্ওয়াল সূত্রে উম্মু হাবীবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা নবী [সাঃআঃ]-এর আমাল থেকে এরূপ করতাম, অর্থাৎ রাতের অন্ধকারেই মুযদালিফাহ্ থেকে মিনায় চলে আসতাম। নাক্বিদ-এর বর্ণনায় আছে, “মুযদালিফাহ্ থেকে আমরা রাতের অন্ধকারেই রওনা হতাম।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯১, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৮৮]

৩০১৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে মালপত্র নিয়ে অথবা [অপর বর্ণনা অনুযায়ী] দুর্বল লোকদের সাথে রাত থাকতেই মুযদালিফাহ্ থেকে [মিনার উদ্দেশে] পাঠিয়ে দেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯২, ইসলামিক সেন্টার-২৯৮৯]

৩০১৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের যে দুর্বলদের [মুযদালিফাহ্‌ থেকে] সর্বাগ্রে পাঠিয়ে দেন, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯৩, ইসলামিক সেন্টার-২৯৯০]

৩০১৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের যে দুর্বলদের আগেভাগে পাঠিয়ে দেন, আমি তাদের সাথে ছিলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৯১]

৩০২০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর মালপত্র নিয়ে ভোর রাতে মুযদালিফাহ্ থেকে [মিনায়] পাঠিয়ে দেন। আমি [ইবনি জুরায়জ] আত্বাকে বললাম, আপনি জানেন কি ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, “রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে গভীর রাতে পাঠিয়েছেন”? তিনি বলিলেন, না, কেবল ভোর রাতের কথাই আমি জানি। আমি তাঁকে পুনরায় বললাম, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলেছেন, “আমরা ফজরের নামাজের পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেছি।” তাহলে তিনি ফজরের নামাজ কোথায় আদায় করিয়াছেন? আত্বা বলিলেন, না, আমি এতটুকুই জানি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৯২]

৩০২১. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] তার সাথের দুর্বল লোকদেরকে মুযদালিফার নিকটবর্তী স্থান মাশআরুল হারামে রাতে অবস্থানের জন্য আগে ভাগেই পাঠিয়ে দিতেন। অতএব তারা রাতের বেলা যতক্ষণ ইচ্ছা আল্লাহর যিকির করত। ইমামের অবস্থান ও ফিরে আসার পূর্বেই তারা [এখান থেকে] রওনা হতো। অতএব তাদের মধ্যে কেউ ফজরের নামাজের সময় মিনায় পৌঁছত এবং কেউ ফজরের নামাজের পরে। তারা এখানে পৌঁছে জামরায় পাথর নিক্ষেপ করত। ইবনি উমর [রাদি.] বলিতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুর্বল ও বৃদ্ধদের এ অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। {২৪}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৯৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৯৯৩]

{২৪} ফকীহগণের মতে মুযদালিফায় একটি পাহাড়ই হল “মাশআরিল হারাম” আর মুফাসসির এবং সিরাত রচয়িতাদের মতে সারা মুযদালিফাই আশআরিল হারাম এ সকল হাদীস থেকে জানা যায় যে, শিশু ও মহিলাদের জন্য পূর্ব রাত্রিতে মুযদালিফাহ্ থেকে রওনা হওয়া জায়িয, যাতে করে ভিড় হওয়ার আগেই মিনায় পৌঁছে জামরায় কঙ্কর নিক্ষেপ করে মুক্ত হইতে পারে।


Posted

in

by

Comments

One response to “মুযদালিফা এর বর্ণনা, কুরবানী ও মিনায় পাঠানো”

Leave a Reply