মুনাফিকদের প্রদত্ত কষ্টে আল্লাহর নিকট নবী [সাঃ] -এর দুআ ও ধৈর্যধারণ

মুনাফিকদের প্রদত্ত কষ্টে আল্লাহর নিকট নবী [সাঃ] -এর দুআ ও ধৈর্যধারণ

মুনাফিকদের প্রদত্ত কষ্টে আল্লাহর নিকট নবী [সাঃ] -এর দুআ ও ধৈর্যধারণ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৪০. অধ্যায়ঃ মুনাফিক দের প্রদত্ত কষ্টে আল্লাহর নিকট নবী [সাঃআঃ] -এর দুআ ও ধৈর্যধারণ

৪৫৫১. উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] একটি গাধায় আরোহণ করিলেন যার উপর জীন [বসার গদি] ছিল এবং তার নীচে একটি ফদকী মখমল বিছানো ছিল। তিনি তার পশ্চাতে উসামাহ্ [রাদি.]-কে বসালেন। বানী হারিস ইবনি খাযরাজ গোত্রের এলাকায় তিনি সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.]-কে [অসু্স্হ অবস্থায়] দেখিতে যাচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের পূর্বের ঘটনা। তিনি এমন একটি মাজলিস অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, মুশরিক পৌত্তলিক ও ইয়াহূদীরা একত্রে বসা ছিল। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনি উবাইও ছিল এবং মাজলিসে আবদুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাদি.]-ও ছিলেন। যখন মাজলিসটি সাওয়ারীর ধূলায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল, তখন আবদুল্লাহ ইবনি উবাই তার নাক চাদর দিয়ে ঢেকে নিল। এরপর বলিল, আপনারা আমাদের উপর ধূলি উঠাবেন না। তখন নবী [সাঃআঃ] তাদের সালাম দিলেন। তারপর তিনি সেখানে থামলেন এবং নামলেন। আর তাদের আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন এবং তাদের সম্মুখে কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি উবাই বলে উঠলো, ওহে লোক! আপনি যা বলছেন তা যদি সত্য হয় তবে এর চাইতে উত্তম আর কিছু নয়, তবে আমার মাজলিসে এসে আপনি আমাদের কষ্ট দিবেন না। আপনি আপনার বাসস্থানে ফিরে যান। সেখানে আমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি যায় তার কাছে আপনি এসব উপদেশ পরিবেশন করবেন।

তখন আবদুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাদি.] বলে উঠলেন, “[হে আল্লাহ্‌র রসূল!]” আমাদের মাজলিসে [যতখুশি ইচ্ছা] ধূলি উড়াবেন। কেননা, আমরা তা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক, ইয়াহূদীরা পরস্পরে বাদানুবাদ ও গালগালিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। এমনকি রীতিমত একটি দাঙ্গা বাধার উপক্রম হয়। নবী [সাঃআঃ] তাদের নিবৃত করিতে লাগলেন। তারপর তাহাঁর বাহনে সাওয়ার হয়ে সাদ ইবনি উবাদাহ্ [রাদি.]-এর বাড়ীতে গিয়ে প্রবেশ করিলেন এবং বলিলেন, আয় সাদ! তুমি কি শোননি আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনি উবাই কী বলেছে? সে এরূপ এরূপ কথা বলেছে। সাদ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! ওকে ক্ষমা করে দিন এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনাকে যে মর্যাদা দিয়েছেন, তা তো দিয়েছেনই। [কিন্তু তার ব্যাপার?] এ জনপদের লোকজন স্থির করেছিল যে, তাকে রাজ মুকুট ও পাগড়ী পরাবে। [অর্থাৎ -তাকে তাদের বাদশাহ্ বানাবে] কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সত্য দান করিয়াছেন,তা দিয়ে যখন আল্লাহ তাআলা তার চাওয়া পাওয়াকে রুদ্ধ করে দিলেন, তাতে বিদ্বেষপ্রবণ হয়ে পড়ে। তাই সে এরূপ আচরণ করেছে যা আপনি প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। এতে নবী [সাঃআঃ] তাকে মার্জনা করে দিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫১০]

৪৫৫২. ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] -এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তবে তাতে এতটুকু বর্ধিত অংশ উল্লেখ করিয়াছেন, এটি আবদুল্লাহর [বাহ্যতঃ] ইসলাম গ্রহণের পূর্বের কথা।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫১১]

৪৫৫৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা নবী [সাঃআঃ]-কে বলা হলো, [হে আল্লাহ্‌র রসূল!] যদি আপনি আবদুল্লাহ ইবনি উবাইর কাছে যেতেন! তিনি তখন একটি গাধায় চড়ে তার কাছে রওনা হলেন। একদল মুসলিমও তাহাঁর সঙ্গে গেলেন। তাদের পথে পড়লো একটি লোনা ঊষর ভূমি। নবী [সাঃআঃ] যখন তার কাছে উপস্থিত হলেন, তখন সে বলিল, আমার কাছ থেকে দূরে থাকিবেন। আল্লাহর কসম! আপনার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে বিরক্ত করেছে। রাবী বলেন, তখন আনসারদের একজন উঠে [তৎক্ষণাৎ] জবাব দিলেন, “আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর গাধার গন্ধ তোমার দুর্গন্ধের চেয়ে অনেক উত্তম।” রাবী বলেন, তখন আবদুল্লাহর সম্প্রদায়ের একব্যক্তি ক্ষেপে গেল। রাবী বলেন, তারপর উভয় পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। রাবী বলেন, তখন তাদের মধ্যে লাঠি, হাত ও জুতার দ্বারা মারামারি লেগে গেল। তারপর আমরা জানতে পারলাম তাদের উদ্দেশে কুরআনের আয়াত “যদি ঈমানদারদের দুটি দল পরস্পর হানাহানিতে লিপ্ত হয়, তবে তাদের মধ্যে সমঝোতা করে দাও”-[সূরা হুজুরাত ৪৯:৯] নাযিল হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৫১০, ইসলামিক সেন্টার- ৪৫১২]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply