মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF । বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা
মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF । বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ণনা , এই পর্বের হাদীস =৬৪ টি (১১২৯-১১৯২) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-৩২ঃ জিহাদ
৩২/১. কাফিরদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর তাহাদেরকে আক্রমণের সংবাদ না দিয়ে আক্রমণ জায়িয।
৩২/৩. সহজ আচরণের নির্দেশ ও অনীহা সৃষ্টি নিষিদ্ধ।
৩২/৪. বিশ্বাসঘাতকতা হারাম।
৩২/৫. যুদ্ধে [শত্রুপক্ষকে] ধোঁকা দেয়া জায়িয।
৩২/৬. শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার ইচ্ছে করা অপছন্দনীয় এবং মোকাবেলার সময় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ।
৩২/৮. যুদ্ধে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হারাম।
৩২/৯. নৈশ আক্রমণে অনিচ্ছায় নারী ও শিশুদের হত্যা জায়িয।
৩২/১০. কাফিরদের বৃক্ষ কর্তন ও জ্বালিয়ে দেয়া জায়িয।
৩২/১১. বিশেষভাবে এ উম্মাতের জন্য গানীমাতের মাল হালাল।
৩২/১২. যুদ্ধলব্ধ সম্পদ।
৩২/১৩. যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির মালামালের অধিকতর হকদার হচ্ছে হত্যাকারী।
৩২/১৫. ফাইয়ের মালের বিধান।
৩২/১৬. নাবী [সাঃআঃ]-এর বাণী [আমাদের সম্পদের কেউ উত্তরাধিকারী হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা হচ্ছে সদাকাহ]।
৩২/১৯. বন্দীকে বেঁধে রাখা এবং তাকে আটকে রাখা এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করা বৈধ।
৩২/২০. হিজাজ থেকে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন।
৩২/২২. চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির মধ্যস্থতায় দূর্গের লোকেদের আত্মসমর্পণ করানো জায়িয।
৩২/২৩. দুটি বিষয়ের মধ্যে অধিক জরুরী বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া।
৩২/২৪. বিভিন্ন এলাকা বিজয়ের মাধ্যমে ধনাঢ্য হওয়ার পর আনসারদের দেয়া বৃক্ষ ও ফলের উপহার মুহাজিরগণ কর্তৃক ফিরিয়ে দেয়া।
৩২/২৫. শত্রুদের ভূমি থেকে খাদ্য নেয়া।
৩২/২৬. ইসলামের দাওয়াত দিয়ে হিরাক্লিয়াসের নিকট নাবী [সাঃআঃ]-এর পত্র।
৩২/২৮. হুনায়নের যুদ্ধ।
৩২/২৯. তায়েফের যুদ্ধ।
৩২/৩২. কাবা গৃহের আশপাশ থেকে মূর্তি সরানো।
৩২/৩৪. হুদাইবিয়াহ্র প্রান্তরে হুদাইবিয়াহ্র সন্ধি।
৩২/৩৭. উহূদের যুদ্ধ।
৩২/৩৮. আল্লাহ্র রসুল [সাঃআঃ] যাকে হত্যা করেন তার উপর আল্লাহ ভীষণ রাগান্বিত হন।
৩২/৩৯. নাবী [সাঃআঃ] মুশরিক ও মুনাফিকদের নিকট থেকে যে দুঃখকষ্ট পেয়েছেন।
৩২/৪০. নাবী [সাঃআঃ]-এর আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ প্রার্থনা এবং মুনাফিকদের [দেয়া] কষ্টের উপর তাহাঁর ধৈর্যধারণ।
৩২/৪১. আবু জাহল হত্যা।
৩২/৪২. ইয়াহূদীদের ত্বাগূত কাব বিন আশ্রাফকে হত্যা।
৩২/৪৩. খায়বারের যুদ্ধ।
৩২/৪৪. আহযাবের যুদ্ধ এবং তা হচ্ছে খান্দাক।
৩২/৪৫. যিকারাদের যুদ্ধ ইত্যাদি।
৩২/৪৭. মহিলাদের পুরুষের পাশে থেকে যুদ্ধ।
৩২/৪৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর যুদ্ধের সংখ্যা।
৩২/৫০. যাতুর রিকার যুদ্ধ।
৩২/১. কাফিরদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পর তাহাদেরকে আক্রমণের সংবাদ না দিয়ে আক্রমণ জায়িয।
১১২৯. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বানী মুস্তালিক গোত্রের উপর অতর্কিতভাবে অভিযান পরিচালনা করেন। তাহাদের গবাদি পশুকে তখন পানি পান করানো হচ্ছিল। তিনি তাহাদের যুদ্ধক্ষমদের হত্যা এবং নাবালকদের বন্দী করেন এবং সেদিনই তিনি জুওয়ায়রিয়া [উম্মুল মুমিনীন]-কে লাভ করেন। {নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন} আবদুল্লাহ ইবনি উমার আমাকে এ সম্পর্কিত হাদীস শুনিয়েছেন। তিনি নিজেও সে সেনাদলে ছিলেন।
[বোখারী পর্ব ৪৯ অধ্যায় ১৩ হাদীস নং ২৫৪১; মুসলিম ৩২ হাঃ ১৭৩০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩. সহজ আচরণের নির্দেশ ও অনীহা সৃষ্টি নিষিদ্ধ।
১১৩০. আবু বুরদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তার দাদা আবু মূসা ও মুআয [রাদি.]-কে নাবী [সাঃআঃ] [শাসক হিসেবে] ইয়ামানে পাঠালেন। এ সময় তিনি বলিলেন, তোমরা লোকজনের সঙ্গে সহজ আচরণ করিবে। কখনো কঠিন আচরণ করিবে না। মানুষের মনে সুসংবাদের মাধ্যমে উৎসাহ সৃষ্টি করিবে। কখনো তাহাদের মনে অনীহা সৃষ্টি করিবে না এবং একে অপরকে মেনে চলবে।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৬১ হাদীস নং ৪৩৪৪-৪৩৪৫; মুসলিম ৩২/৩ হাঃ ১৭৩৩] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৩১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সহজ পন্থা অবলম্বন কর, কঠিন পন্থা অবলম্বন করো না, মানুষকে সুসংবাদ দাও, বিরক্তি সৃষ্টি করো না।
[বোখারী পর্ব ৩ অধ্যায় ১১ হাদীস নং ৬৯; মুসলিম ৩২/৩ হাঃ ১৭৩৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪. বিশ্বাসঘাতকতা হারাম।
১১৩২.ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারীর জন্য ক্বিয়ামাত দিবসে একটা পতাকা স্থাপন করা হইবে। আর বলা হইবে যে, এটা অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।
[বোখারী পর্ব ৭৮ অধ্যায় ৯৯ হাদীস নং ৬১৭৮; মুসলিম ৩২/৪, হাঃ ১৭৬৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, প্রত্যেক ওয়াদা ভঙ্গকারীর জন্য ক্বিয়ামাতের দিন একটি পতাকা হইবে এবং তা দিয়ে তার পরিচয় দেয়া হইবে।
[বোখারী পর্ব ৫৮ অধ্যায় ২২ হাদীস নং ৩১৮৬-৩১৮৭; মুসলিম ৩২/৪ হাঃ ১৭৩৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৫. যুদ্ধে [শত্রুপক্ষকে] ধোঁকা দেয়া জায়িয।
১১৩৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যুদ্ধ হচ্ছে কৌশল।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৭ হাদীস নং ৩০৩০; মুসলিম ৩২/৫ হাঃ ১৭৩৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৩৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যুদ্ধকে কৌশল নামে অভিহিত করিয়াছেন।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৭ হাদীস নং ৩০২৯; মুসলিম ৩২/৫ হাঃ ১৭৪০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৬. শত্রুর সম্মুখীন হওয়ার ইচ্ছে করা অপছন্দনীয় এবং মোকাবেলার সময় ধৈর্য ধারণের নির্দেশ।
১১৩৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেন, তোমরা শত্রুর মুখোমুখী হওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছে পোষণ করিবে না। আর যখন তোমরা তাহাদের মুখোমুখী হইবে তখন ধৈর্য অবলম্বন করিবে।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৬ হাদীস নং ৩০২৬; মুসলিম ৩২/৬ হাঃ ১৭৪১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৩৭. আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু আওফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি হারুরিয়ার দিকে অভিযানে বের হওয়ার সময় উমার ইবনি উবায়দুল্লাহকে একখানি পত্র লিখেন। [তাতে লেখা ছিল যে] শত্রুর সঙ্গে কোন এক মুখোমুখী যুদ্ধে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সূর্য ঢলে যাওয়া অবধি অপেক্ষা করিলেন। অতঃপর তিনি তাহাঁর সাহাবীদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করার কামনা করিবে না এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট নিরাপত্তার দুআ করিবে। অতঃপর যখন তোমরা শত্রুর সামনাসামনি হইবে তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করিবে। জেনে রাখবে, জান্নাত তরবারির ছায়ায় অবস্থিত। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] দুআ করিলেন, কুরআন অবতীর্ণকারী, মেঘমালা চালনাকারী, সৈন্য দলকে পরাভূতকারী হে আল্লাহ্! আপনি কাফিরদেরকে পরাস্ত করুন এবং আমাদেরকে তাহাদের উপর বিজয় দান করুন।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৫৬ হাদীস নং ৩০২৪-৩০২৫; মুসলিম ৩২ হাঃ ১৭৪২] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৮. যুদ্ধে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হারাম।
১১৩৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর এক যুদ্ধে এক নারীকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নারী ও শিশুদের হত্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৪৭ হাদীস নং ৩০১৪; মুসলিম ৩২/৮ হাঃ ১৭৪৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৯. নৈশ আক্রমণে অনিচ্ছায় নারী ও শিশুদের হত্যা জায়িয।
১১৩৯. সাব ইবনি জাস্সামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে আমার কাছ দিয়ে অতিক্রম করেন। তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, যে সকল মুশরিকদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, যদি রাত্রিকালীন আক্রমণে তাহাদের মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তবে কী হইবে? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেন, তারাও তাহাদেরই অন্তর্ভুক্ত।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৪৬ হাদীস নং ৩০১৩; মুসলিম ৩২/৯ হাঃ ১৭৪৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১০. কাফিরদের বৃক্ষ কর্তন ও জ্বালিয়ে দেয়া জায়িয।
১১৪০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বুওয়াইরাই নামক জায়গায় বনু নাযীর গোত্রের যে খেজুর গাছ ছিল তার কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন এবং কিছু কেটে ফেলেছিলেন। এ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ঃ
مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبإِذْنِ اللهِ
“তোমরা যে খেজুর গাছগুলি কেটে ফেলেছ অথবা যেগুলো কান্ডের উপর ঠিক রেখে দিয়েছ, তা তো আল্লাহ্রই অনুমতিক্রমে” [সূরাহ হাশর ৫৯/৫]।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৪০৩১; মুসলিম ৩২/১০, হাঃ ১৭৪৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১১. বিশেষভাবে এ উম্মাতের জন্য গানীমাতের মাল হালাল।
১১৪১.আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] বলেছেন, কোন একজন নাবী [আলাইহি ওয়া সাল্লাম] জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাহাঁর সম্প্রদায়কে বলিলেন, এমন কোন ব্যক্তি আমার অনুসরণ করিবে না, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছে রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরি করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষায় আছে। অতঃপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সলাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ে একটি জনপদের নিকটে আসলেন। তখন তিনি সূর্যকে বলিলেন, তুমিও আদেশ পালনকারী আর আমিও আদেশ পালনকারী। হে আল্লাহ্! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাকে বিজয় দান করেন। অতঃপর তিনি গানীমাত একত্র করিলেন। তখন সেগুলো জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালিয়ে দিল না। নাবী [আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তখন বলিলেন, তোমাদের মধ্যে [গানীমাতের] আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র হইতে একজন যেন আমার নিকট বাইআত করে। সে সময় একজনের হাত নাবী [আলাইহি ওয়া সাল্লাম]র হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার নিকট বাইআত করে। এ সময় দু ব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাহাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বলিলেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎকারী রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর মস্তক পরিমাণ স্বর্ণ উপস্থিত করিল এবং তা রেখে দিল। অতঃপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। অতঃপর আল্লাহ আমাদের জন্য গানীমাত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩১২৪; মুসলিম ৩২/১১, হাঃ ১৭৪৭] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১২. যুদ্ধলব্ধ সম্পদ।
১১৪২. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নাজদের দিকে একটি সেনাদল পাঠালেন, যাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-ও ছিলেন। এ যুদ্ধে গনীমত হিসেবে তাঁরা বহু উট লাভ করেন। তাঁদের প্রত্যেকের ভাগে এগারোটি কিংবা বারটি করে উট পড়েছিল এবং তাঁদেরকে পুরস্কার হিসেবে আরো একটি করে উট দেয়া হয়।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩১৩৪; মুসলিম ৩২/১২, হাঃ ১৭৪৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৩. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] প্রেরিত কোন কোন সেনা দলে কোন কোন ব্যক্তিকে সাধারণ সৈন্যদের প্রাপ্য অংশের চেয়ে অতিরিক্ত দান করিতেন।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৩১৩৫; মুসলিম ৩২/১২, হাঃ ১৭৫০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১৩. যুদ্ধে নিহত ব্যক্তির মালামালের অধিকতর হকদার হচ্ছে হত্যাকারী।
১১৪৪. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, হুনাইনের বছর আমরা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা যখন শত্রুর সম্মুখীন হলাম, তখন মুসলিম দলের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু হল। এমন সময় আমি মুশরিকদের এক ব্যক্তিকে দেখলাম, সে একজন মুসলমানের উপর চেপে বসেছে। আমি ঘুরে তার পেছনের দিক দিয়ে এসে তরবারী দ্বারা তার ঘাড়ের রগে আঘাত করলাম। তখন সে আমার দিকে এগিয়ে এল এবং আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যে, আমি তাতে মৃত্যুর আশংকা করলাম। মৃত্যু তাকেই ধরল এবং আমাকে ছেড়ে দিল। অতঃপর আমি উমার [রাদি.]-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললাম, লোকদের কী হয়েছে? উমার [রাদি.] বলিলেন, আল্লাহ্র হুকুম।
অতঃপর লোকজন ফিরে এলো এবং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বসলেন, তখন তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আবার বলিলেন, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে এবং তার নিকট এর সাক্ষ্য রয়েছে, তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান তারই প্রাপ্য। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কে আছ যে, আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়লাম। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তৃতীয়বার ঐরূপ বলিলেন, আমি আবার দাঁড়ালাম, তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হে আবু ক্বাতাদাহ! তোমার কী হয়েছে? আমি তখন পুরো ঘটনা বললাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আবু ক্বাতাদাহ ঠিক বলেছে। সে ব্যক্তির নিকট হইতে প্রাপ্ত মাল-সামান আমার নিকট আছে। আপনি আমার পক্ষ হইতে একে সম্মত করিয়ে দিন। তখন আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] বলিলেন, কক্ষনো না, আল্লাহ্র কসম! আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] কখনো এমন করবেন না যে, আল্লাহ্র সিংহদের মধ্যে হইতে কোন সিংহ আল্লাহ ও রসূল [সাঃআঃ]-এর পক্ষে যুদ্ধ করিবে আর রসূল [সাঃআঃ] নিহত ব্যক্তির মাল-সামান তোমাকে দিবেন! তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আবু বকর ঠিকই বলেছে। ফলে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তা আমাকে দিলেন। আমি তা হইতে একটি বর্ম বিক্রি করে বানূ সালমায় একটি বাগান কিনি। এটাই ইসলামে প্রবিষ্ঠ হওয়ার পর আমার প্রথম সম্পত্তি, যা আমি পেয়েছিলাম।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩১৪২; মুসলিম ৩২/১৩ হাঃ ১৭৫১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৫. আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন আমি বদর যুদ্ধে সারিতে দাঁড়িয়ে আছি, আমি আমার ডানে বামে তাকিয়ে দেখলাম, অল্প বয়স্ক দুজন আনসার যুবকের মাঝখানে আছি। আমার আকাঙক্ষা ছিল, তাহাদের চেয়ে শক্তিশালীদের মধ্যে থাকি। তখন তাহাদের একজন আমাকে খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করিল, চাচা! আপনি কি আবু জাহ্লকে চিনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তবে ভাতিজা; তাতে তোমার দরকার কী? সে বলিল, আমাকে জানানো হয়েছে যে, সে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে গালাগালি করে। সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ। আমি যদি তাকে দেখিতে পাই, তবে আমার দেহ তার দেহ হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে না যতক্ষণ না আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু আগে নির্ধারিত, সে মারা যায়। আমি তার কথায় আশ্চর্য হলাম। তা শুনে দ্বিতীয়জন আমাকে খোঁচা দিয়ে ঐ রকমই বলিল। তৎক্ষণাৎ আমি আবু জাহলকে দেখলাম, সে লোকজনের মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখন আমি বললাম, এই যে তোমাদের সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে। তারা তৎক্ষণাৎ নিজের তরবারী নিয়ে তার দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং তাকে আঘাত করে হত্যা করিল। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর দিকে ফিরে এসে তাঁকে জানালো। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়ে দাবী করিল, আমি তাকে হত্যা করেছি। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমাদের তরবারি তোমরা মুছে ফেলনি তো? তারা উভয়ে বলিল, না। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাদের উভয়ের তরবারী দেখলেন এবং বলিলেন, তোমরা উভয়ে তাকে হত্যা করেছো। অবশ্য তার নিকট হইতে প্রাপ্ত মালামাল মুআয ইবনি আম্র ইবনি জামূহের জন্য। তারা দুজন হলো, মুআয ইবনি আফরা ও মুআয ইবনি আম্র ইবনি জামূহ। মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তিনি ইউসুফ ও তাহাঁর পিতা ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে সৎ ব্যক্তি হিসেবে শুনেছেন।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩১৪১; মুসলিম ৩২/১৩ হাঃ ১৭৫২] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১৫. ফাইয়ের মালের বিধান।
১১৪৬. উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বনূ নযীরের সম্পদ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে ফায় হিসেবে দান করেছিলেন। এতে মুসলিমগণ অশ্ব বা সাওয়ারী চালনা করেনি। এ কারণে তা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর জন্য নির্দিষ্ট ছিল। এ সম্পদ থেকে নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারকে এক বছরের খরচ দিয়ে দিতেন এবং বাকী আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের প্রস্তুতির জন্য হাতিয়ার ও ঘোড়া ইত্যাদিতে ব্যয় করিতেন।
[বোখারী পর্ব ৩৪ অধ্যায় ৮০ হাদীস নং ২৯০৪; মুসলিম ৩২/১৫ হাঃ ১৭৫৭] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৭. মালিক ইবনি আওস ইবনি হাদাসান নাসিরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
[একদা] উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] তাকে ডাকলেন। এ সময় তার দ্বাররক্ষী ইয়ারফা এসে বলিল, উসমান, আবদুর রাহমান, যুবায়র এবং সাদ [রাদি.] আপনার নিকট আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ তাঁদেরকে আসতে বল। কিছুক্ষণ পরে এসে বলিল, আব্বাস এবং আলী [রাদি.] আপনার নিকট অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বলিলেন, হাঁ। তাঁরা উভয়েই ভিতরে প্রবেশ করিলেন। আব্বাস[রাদি.] বলিলেন, হে, আমীরুল মুমিনীন! আমার এবং তাহাঁর মাঝে [বিবাদের] মীমাংসা করে দিন। বনূ নাযীরের সম্পদ থেকে আল্লাহ্ তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]-কে ফাই [বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পদ] হিসেবে যা দিয়েছিলেন তা নিয়ে তাহাদের উভয়ের মাঝে বিবাদ চলছিল। এ নিয়ে তারা তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন, [এ দেখে আগত] দলের সকলেই বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! তাহাদের মাঝে একটি মীমাংসা করে তাহাদের এ বিবাদ থেকে মুক্তি দিন। তখন উমার [রাদি.] বলিলেন, তাড়াহুড়া করবেন না। আমি আপনাদেরকে আল্লাহ্র নামে শপথ দিয়ে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান ও যমীন স্থির আছে, আপনারা কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] নিজের সম্বন্ধে বলেছেন, আমরা [নাবী [সাঃআঃ]গণ] কাউকে উত্তরাধিকারী রেখে যাই না। যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসাবেই গণ্য হয়। এর দ্বারা তিনি নিজের কথাই বলিলেন। উপস্থিত সকলেই বলিলেন, হাঁ, তিনি এ কথা বলেছেন। উমার [রাদি.] আলী এবং আব্বাসের দিকে লক্ষ্য করে বলিলেন, আমি আপনাদের উভয়কে আল্লাহ্র কসম দিয়ে বলছি, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যে এ কথা বলেছেন, আপনারা তা জানেন কি? তারা উভয়েই বলিলেন, হাঁ। এরপর তিনি বলিলেন, এখন আমি আপনাদেরকে এ বিষয়ে আসল অবস্থা খুলে বলছি। ফাই এর কিছু অংশ আল্লাহ্ তাআলা তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]এর জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, যা তিনি আর অন্য কাউকে দেননি। এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ arbi “আল্লাহ্ ইয়াহূদীদের নিকট হইতে তাহাঁর রসূল কে যে ফায় দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা অশ্ব কিংবা উষ্ট্র চালিয়ে যুদ্ধ করনি; আল্লাহ্ তো তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]কে যার উপর ইচ্ছে তার উপর কর্তৃত্ব দান করেন; আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান” [সূরাহ আনআম ৬/৫৯]। অতএব এ ফাই রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর জন্যই খাস ছিল। আল্লাহ্র কসম! এরপর তিনি তোমাদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য এ সম্পদকে সংরক্ষিতও রাখেননি এবং নিজের জন্য নির্ধারিতও করে যাননি। বরং এ অর্থকে তিনি তোমাদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছেন। অবশেষে এ মাল উদ্বৃত্ত আছে। এ মাল থেকে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবার পরিজনের এক বছরের খোরপোশ দিতেন। এর থেকে যা অবশিষ্ট থাকত তা তিনি আল্লাহ্র পথে খরচ করিতে দিতেন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] তাহাঁর জীবদ্দশায় এরূপই করিয়াছেন। নাবী [সাঃআঃ]-এর ওফাতের পর আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, এখন থেকে আমিই হলাম রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর ওলী। এরপর আবু বকর [রাদি.] তা স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিয়ে এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন তিনিও সে নীতিই অনুসরণ করে চললেন। তিনি আলী ও আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বলিলেন, আজ আপনারা যা বলছেন এ বিষয়ে আপনারা আবু বকরের সঙ্গেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ্র কসম! তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকরের সঙ্গেও এ ধরনেরই আলোচনা করেছিলেন। আল্লাহ্র কসম! তিনিই জানেন, এ বিষয়ে আবু বকর [রাদি.] ছিলেন সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ এবং হকের অনুসারী এক মহান ব্যক্তিত্ব। এরপর আবু বকর[রাদি.] এর ইন্তিকাল হলে আমি বললাম, [আজ থেকে] আমিই হলাম, রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এবং আবু বকরের ওলী। এরপর এ সম্পদকে আমি আমার খিলাফতের দুই বছরকাল আমার তত্ত্বাবধানে রাখি এবং এ বিষয়ে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] ও আবু বকর [রাদি.] এর অনুসৃত নীতিই অনুসরণ করে চলছি। আল্লাহ্ তাআলাই ভাল জানেন, এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আমি সত্যবাদী, ন্যায়পরায়ণ ও হকের একনিষ্ঠ অনুসারী। তা সত্ত্বেও পুনরায় আপনারা দুজনই আমার নিকট এসেছেন। আমি আপনাদের উভয়কেই বলেছিলাম, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমরা [নাবী [সাঃআঃ]গণ] কাউকে উত্তরাধিকারী করি না, আমরা যা রেখে যাই তা সদাকাহ হিসাবেই গণ্য হয়। এরপর এ সম্পদটি আপনাদের উভয়ের তত্ত্বাবধানে দেয়ার বিষয়টি যখন আমার নিকট স্পষ্ট হল তখন আমি বলেছিলাম, যদি আপনারা চান তাহলে একটি শর্তে তা আমি আপনাদের নিকট অর্পণ করব। শর্তটি হচ্ছে আপনারা আল্লাহ্র নির্দেশ ও তাহাঁর দেয়া ওয়াদা অনুযায়ী এমনভাবে কাজ করবেন যেভাবে রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] এবং আবু বকর [রাদি.] করিয়াছেন। আমার তত্ত্বাবধানে আসার পর আমি করেছি। অন্যথায় এ বিষয়ে আপনারা আমার সঙ্গে আর কোন আলোচনা করবেন না। তখন আপনারা বলেছিলেন, এ শর্তেই আপনি তা আমাদের নিকট অর্পণ করুন। আমি তা আপনাদের হাতে অর্পণ করেছি। এখন আপনারা আমার নিকট অন্য কোন ফয়সালা কামনা করেন কি? আমি আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, যাঁর আদেশে আসমান যমীন স্থির আছে ক্বিয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত আমি এর বাইরে অন্য কোন ফয়সালা দিতে পারব না। আপনারা যদি এর দায়িত্ব পালনে অক্ষম হয়ে থাকেন তাহলে আমার নিকট ফিরিয়ে দিন। আপনাদের এ দায়িত্ব পালনে আমিই যথেষ্ট।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৪০৩৩; মুসলিম ৩২/১৫ হাঃ ১৭৫৭] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১৬. নাবী [সাঃআঃ]-এর বাণী [আমাদের সম্পদের কেউ উত্তরাধিকারী হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা হচ্ছে সদাকাহ]।
১১৪৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাদের কোন উত্তরাধিকারী হইবে না। আমরা যা কিছু রেখে যাব সবই হইবে সদাকাহ স্বরূপ।
[বোখারী পর্ব ৮৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৬৭৩০; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৭] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৪৯. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী [সাঃআঃ]-এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.] আবু বকর -এর নিকট রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পরিত্যক্ত সম্পত্তি মাদীনাহ ও ফাদকে অবস্থিত ফাই [বিনা যুদ্ধে প্রাপ্ত সম্পদ] এবং খাইবারের খুমুসের [পঞ্চমাংশ] অবশিষ্ট থেকে মিরাসী স্বত্ব চেয়ে পাঠালেন। তখন আবু বকর [রাদি.] উত্তরে বলিলেন যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলে গেছেন, আমাদের [নাবী [সাঃআঃ]দের] কোন ওয়ারিশ হয় না, আমরা যা ছেড়ে যাব তা সদাকাহ হিসেবে গণ্য হইবে। অবশ্য মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর বংশধরগণ এ সম্পত্তি থেকে ভরণ-পোষণ চালাতে পারবেন। আল্লাহ্র কসম! রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সদাকাহ তাহাঁর জীবদ্দশায় যে অবস্থায় ছিল আমি সে অবস্থা থেকে এতটুকুও পরিবর্তন করব না। এ ব্যাপারে তিনি যেভাবে ব্যবহার করে গেছেন আমিও ঠিক সেভাবেই ব্যবহার করব। এ কথা বলে আবু বকর [রাদি.] ফাতিমাহ [রাদি.]-কে এ সম্পদ থেকে কিছু দিতে অস্বীকার করিলেন। এতে ফাতিমাহ [রাদি.] [মানাবীয় কারণে] আবু বকর [রাদি.]-এর উপর নাখোশ হলেন এবং তাহাঁর থেকে সম্পর্কহীন থাকলেন। তাহাঁর মৃত্যু অবধি তিনি আবু বকর [রাদি.] -এর সঙ্গে কথা বলেননি। নাবী [সাঃআঃ]-এর পর তিনি ছয় মাস জীবিত ছিলেন। তিনি ইন্তিকাল করলে তাহাঁর স্বামী আলী [রাদি.] রাতের বেলা তাঁকে দাফন করেন। আবু বকর [রাদি.]-কেও এ খবর দিলেন না এবং তিনি তার জানাযার সলাত আদায় করে নেন। ফাতিমাহ [রাদি.]-এর জীবিত অবস্থায় লোকজনের মনে আলী [রাদি.]-এর মর্যাদা ছিল। ফাতিমাহ [রাদি.] ইন্তিকাল করলে আলী [রাদি.] লোকজনের চেহারায় অসন্তুষ্টির চিহ্ন দেখিতে পেলেন। তাই তিনি আবু বকর [রাদি.]-এর সঙ্গে সমঝোতা ও তাহাঁর কাছে বাইআতের ইচ্ছে করিলেন। এ ছয় মাসে তাহাঁর পক্ষে বাইআত গ্রহণের সুযোগ হয়নি। তাই তিনি আবু বকর [রাদি.]-এর কাছে লোক পাঠিয়ে জানালেন যে, আপনি আমার কাছে আসুন। [এটা জানতে পেরে] উমার বলিলেন, আল্লাহ্র কসম! আপনি একা একা তাহাঁর কাছে যাবেন না। আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তাঁরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করিবে বলে তোমরা আশঙ্কা করছ? আল্লাহ্র কসম! আমি তাঁদের কাছে যাব। তারপর আবু বকর [রাদি.] তাঁদের কাছে গেলেন। আলী তাশাহ্হুদ পাঠ করে বলিলেন, আমরা আপনার মর্যাদা এবং আল্লাহ আপনাকে যা কিছু দান করিয়াছেন সে সম্পর্কে ওয়াকেবহাল। আর যে কল্যাণ [অর্থাৎ খিলাফাত] আল্লাহ আপনাকে দান করিয়াছেন সে ব্যাপারেও আমরা আপনার উপর হিংসা পোষণ করি না। তবে খিলাফতের ব্যাপারে আপনি আমাদের উপর নিজস্ব মতামতের প্রাধান্য দিচ্ছেন অথচ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটাত্মীয় হিসেবে খিলাফতের কাজে আমাদেরও কিছু পরামর্শ দেয়ার অধিকার আছে। এ কথায় আবু বকর [রাদি.]-এর চোখ থেকে অশ্রু উপচে পড়ল। এরপর তিনি যখন আলোচনা আরম্ভ করিলেন তখন বলিলেন, সেই সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার কাছে আমার নিকটাত্মীয় চেয়েও রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আত্মীয়বর্গ অধিক প্রিয়। আর এ সম্পদগুলোতে আমার এবং আপনাদের মধ্যে যে মতবিরোধ হয়েছে সে ব্যাপারেও আমি কল্যাণকর পথ অনুসরণে পিছপা হইনি। বরং এ ক্ষেত্রেও আমি কোন কাজ পরিত্যাগ করিনি যা আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে করিতে দেখেছি। তারপর আলী [রাদি.] আবু বকর [রাদি.]-কে বললেনঃ যুহরের পর আপনার হাতে বাইআত গ্রহণের ওয়াদা রইল। যুহরের সলাত আদায়ের পর আবু বকর [রাদি.] মিম্বরে বসে তাশাহ্হুদ পাঠ করিলেন, তারপর আলী [রাদি.]-এর বর্তমান অবস্থা এবং বাইআত গ্রহণে তার দেরি করার কারণ ও তাহাঁর পেশকৃত আপত্তিগুলো তিনি বর্ণনা করিলেন। এরপর আলী [রাদি.] দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাশাহ্হুদ পাঠ করিলেন এবং আবু বকর -এর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলিলেন, তিনি যা কিছু করিয়াছেন তা আবু বকর [রাদি.]-এর প্রতি হিংসা কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত তাহাঁর মর্যাদাকে অস্বীকার করার জন্য করেননি। [তিনি বলেন] তবে আমরা ভেবেছিলাম যে, এ ব্যাপারে আমাদেরও পরামর্শ দেয়ার অধিকার থাকিবে। অথচ তিনি {আবু বকর [রাদি.]} আমাদের পরামর্শ ত্যাগ করে স্বাধীন মতের উপর রয়ে গেছেন। তাই আমরা মানসিক কষ্ট পেয়েছিলাম। মুসলিমগণ আনন্দিত হয়ে বলিলেন, আপনি ঠিকই করিয়াছেন। এরপর আলী [রাদি.] আমর বিল মারূফ-এর পানে ফিরে আসার কারণে মুসলিমগণ আবার তাহাঁর নিকটবর্তী হইতে শুরু করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ৪২৪০-৪২৪১; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৮] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫০. উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ফাতিমাহ বিনতে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] আবু বকর [রাদি.] এর নিকট আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] এর ইন্তিকালের পর তাহাঁর মিরাস বন্টনের দাবী করেন। যা আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ] ফায় হিসেবে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁকে প্রদত্ত সম্পদ রেখে গেছেন। অতঃপর আবু বকর [রাদি.] তাঁকে বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, আমাদের পরিত্যক্ত সম্পদ বণ্টিত হইবে না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা সদাকাহ রূপে গণ্য হয়। এতে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এর কন্যা ফাতিমাহ [রাদি.] অসন্তুষ্ট হলেন এবং আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.]-এর সঙ্গে কথাবার্তা বলা ছেড়ে দিলেন। এ অবস্থা তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর ওফাতের পর ফাতিমাহ [রাদি.] ছয়মাস জীবিত ছিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলেন, ফাতিমাহ [রাদি.] আবু বকর সিদ্দীক [রাদি.] -এর নিকট আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] কর্তৃক ত্যাজ্য খায়বার ও ফাদাকের ভূমি এবং মাদীনাহ্র সাদ্কাতে তাহাঁর অংশ দাবী করেছিলেন। আবু বকর [রাদি.] তাঁকে তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানান এবং তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] যা আমল করিতেন, আমি তাই আমল করব। আমি তার কোন কিছুই ছেড়ে দিতে পারি না। কেননা আমি আশংকা করি যে, তাহাঁর কোন কথা ছেড়ে দিয়ে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে না যাই। অবশ্য আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর মাদীনাহ্র সদাকাহ্কে উমার [রাদি.] আলী ও আব্বাস [রাদি.] -এর নিকট হস্তান্তর করেন। আর খায়বার ও ফাদাকের ভূমিকে আগের মত রেখে দেন। উমার [রাদি.] এ প্রসঙ্গে বলেন, এ সম্পত্তি দুটিকে রাসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ] জরুরী প্রয়োজন পূরণ ও বিপদকালীন সময়ে ব্যয়ের জন্য রেখেছিলেন। সুতরাং এ সম্পত্তি দুটি তাহাঁরই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকিবে, যিনি মুসলিমদের শাসক খলীফা হইবেন। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ সম্পত্তি দুটির ব্যবস্থাপনা আজ পর্যন্ত ও রকমই আছে।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩০৯৩; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৫৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫১.আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেন, আমার উত্তরাধিকারীরা কোন স্বর্ণ মুদ্রা ভাগাভাগি করিবে না, বরং আমি যা কিছু রেখে গেলাম তা থেকে আমার স্ত্রীদের খরচ এবং কর্মচারীদের পারিশ্রমিক দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে তা সদাকাহ।
[বোখারী পর্ব ৫৫ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ২৭৭৬; মুসলিম ৩২/১৬ হাঃ ১৭৬০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/১৯. বন্দীকে বেঁধে রাখা এবং তাকে আটকে রাখা এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করা বৈধ।
১১৫২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] একদল অশ্বারোহী সৈন্য নজদের দিকে পাঠিয়েছিলেন। তারা সুমামাহ ইবনি উসাল নামক বনু হানীফার এক লোককে ধরে আনলেন এবং মাসজিদে নববীর একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখলেন। তখন নাবী [সাঃআঃ] তার কাছে গিয়ে বলিলেন, ওহে সুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে উত্তর দিল, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে তো ভালই মনে হচ্ছে। যদি আমাকে হত্যা করেন তাহলে আপনি একজন খুনীকে হত্যা করবেন। আর যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি আপনি অর্থ সম্পদ পেতে চান তাহলে যতটা ইচ্ছে দাবী করুন। নাবী [সাঃআঃ] তাকে সেই অবস্থার উপর রেখে দিলেন। এভাবে পরের দিন আসল। নাবী [সাঃআঃ] আবার তাকে বলিলেন, ওহে সুমামা! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলিল, আমার কাছে সেটিই মনে হচ্ছে যা আমি আপনাকে বলেছিলাম যে, যদি আপনি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপর অনুগ্রহ করবেন। তিনি তাকে সেই অবস্থায় রেখে দিলেন। এভাবে এর পরের দিনও আসল। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, হে সুমামাহ! তোমার কাছে কেমন মনে হচ্ছে? সে বলিল, আমার কাছে তা-ই মনে হচ্ছে যা আমি পূর্বেই বলেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা সুমামাহ্র বন্ধন ছেড়ে দাও। এবার সুমামাহ মাসজিদে নববীতে প্রবেশ করে বলিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]। [তিনি বলিলেন] হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্র কসম! ইতোপূর্বে আমার কাছে যমীনের উপর আপনার চেহারার চেয়ে অধিক অপছন্দনীয় আর কোন চেহারা ছিল না। কিন্তু এখন আপনার চেহারাই আমার কাছে সকল চেহারা অপেক্ষা অধিক প্রিয়। আল্লাহ্র কসম! আমার কাছে আপনার দ্বীন অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত অন্য কোন দ্বীন ছিল না। এখন আপনার দীনই আমার কাছে সকল দ্বীনের চেয়ে প্রিয়তম। আল্লাহ্র কসম! আমার মনে আপনার শহরের চেয়ে অধিক খারাপ শহর অন্য কোনটি ছিল না। কিন্তু এখন আপনার শহরটিই আমার কাছে সকল শহর চেয়ে অধিক প্রিয়। আপনার অশ্বারোহী সৈনিকগণ আমাকে ধরে এনেছে, সে সময় আমি উমরাহ্র উদ্দেশ্যে বেরিয়ে ছিলাম। এখন আপনি আমাকে কী হুকুম করেন? তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাঁকে সু-সংবাদ প্রদান করিলেন এবং উমরাহ্ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি যখন মাক্কায় আসলেন তখন এক ব্যক্তি তাকে বলিল, বেদ্বীন হয়ে গেছ? তিনি উত্তর করিলেন, না, বরং আমি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর আল্লাহ্র কসম! নাবী [সাঃআঃ]-এর অনুমতি ব্যতীত তোমাদের কাছে ইমামাহ্ থেকে গমের একটি দানাও আসবে না।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৭০ হাদীস নং ৪৩৭২; মুসলিম ৩২/১৯, হাঃ ১৭৬৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২০. হিজাজ থেকে ইয়াহূদীদের বিতাড়ন।
১১৫৩. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমরা মসজিদে ছিলাম। হঠাৎ রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে বেরিয়ে এসে বললেনঃ তোমরা ইয়াহূদীদের কাছে চল। আমি তাহাঁর সঙ্গে বের হয়ে পড়লাম এবং বায়তুল-মিদ্রাস নামক শিক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে তাহাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! তোমরা মুসলিম হয়ে যাও, নিরাপদ থাকিবে। তারা বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনি [আপনার দায়িত্ব] পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ এটাই আমি চাই। তারপর দ্বিতীয়বার কথাটি বলিলেন। তারা বলিল, হে আবুল কাসিম! আপনি পৌঁছে দিয়েছেন। এরপর তিনি তৃতীয়বার তা পুনরাবৃত্তি করিলেন। আর বললেনঃ তোমরা জেনে রেখো যে, যমীন কেবল আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের। আমি তোমাদেরকে দেশান্তর করিতে মনস্থ করেছি। তাই তোমাদের যার অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে, তা যেন সে বিক্রি করে নেয়। অন্যথায় জেনে রেখো, যমীন কেবল আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূলের।
[বোখারী পর্ব ৮৯ অধ্যায় ২ হাদীস নং ৬৯৪৪; মুসলিম ৩২/২০, হাঃ ১৭৬৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫৪. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বনু নাযীর ও বনু কুরাইযাহ গোত্রের ইয়াহূদী সম্প্রদায় [মুসলিমদের বিরুদ্ধে] যুদ্ধ শুরু করলে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বনু নাযীর গোত্রকে দেশত্যাগে বাধ্য করেন এবং বনু কুরাইযাহ গোত্রের প্রতি দয়া করে তাহাদেরকে থাকতে দেন। কিন্তু পরে বনূ কুরাইযাহ গোত্র [মুসলিমদের বিরুদ্ধে] যুদ্ধ শুরু করলে কতক লোক যারা নাবী [সাঃআঃ]-এর দলভুক্ত হওয়ার পর তিনি তাহাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছিলেন তারা মুসলিম হয়ে গিয়েছিল তারা ব্যতীত অন্য সব পুরুষ লোককে হত্যা করা হয় এবং মহিলা সন্তান-সন্ততি ও মালামাল মুসলিমদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়। নাবী [সাঃআঃ] মাদীনাহ্র সব ইয়াহূদীকে দেশান্তর করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৪ হাদীস নং ৪০২৮; মুসলিম ৩২/২০, হাঃ ১৭৬৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২২. চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তির মধ্যস্থতায় দূর্গের লোকেদের আত্মসমর্পণ করানো জায়িয।
১১৫৫. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যখন বনী কুরায়যার ইয়াহূদীরা সাদ ইবনি মাআয [রাদি.]-এর ফায়সালা মুতাবিক দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তিনি তখন ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলেন। তখন সাদ একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি কাছে আসলেন, তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা তোমাদের নেতার প্রতি দণ্ডায়মান হও। তিনি এসে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট বসলেন। তখন তিনি তাঁকে বলিলেন, এরা তোমার ফায়সালায় রাজী হয়েছে। সাদ [রাদি.] বলেন, আমি এ রায় ঘোষণা করছি যে, তাহাদের মধ্য নিকট হইতে যারা যুদ্ধ করিতে পারে তাহাদেরকে হত্যা করা হইবে এবং নারী ও শিশুদের বন্দী করা হইবে। আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তাহাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তাআলার ফয়সালার মত ফয়সালাই করেছ।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৬৮ হাদীস নং ৩০৪৩; মুসলিম ৩২/২২ হাঃ ১৭৬৮] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫৬. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সাদ [রাদি.] আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবনি ইরকা নামক এক ব্যক্তি তাহাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। নিকট থেকে তার সেবা করার জন্য নাবী [সাঃআঃ] মাসজিদে নববীতে একটি তাঁবু তৈরি করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খন্দকের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল শেষ করিলেন তখন জিব্রীল [আ.] তাহাঁর মাথার ধূলাবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে হাজির হলেন এবং বলিলেন, আপনি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহ্র কসম! আমি এখনো তা রেখে দেইনি। চলুন তাহাদের প্রতি। নাবী [সাঃআঃ] তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন কোথায়? তিনি বানী কুরাইযা গোত্রের প্রতি ইশারা করিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বনু কুরাইযার মহল্লায় এলেন। অবশেষে তারা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ফয়সালা মান্য করে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সাদ [রাদি.]-এর উপর ন্যস্ত করিলেন। তখন সাদ [রাদি.] বলিলেন, তাহাদের ব্যাপারে আমি এই ফায়সালা দিচ্ছি যে, তাহাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হইবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হইবে এবং তাহাদের ধন-সম্পদ বণ্টন করা হইবে।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১২২; মুসলিম ৩২/২২, হাঃ ১৭৬৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৫৭. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ [রাদি.] আল্লাহ্র কাছে দুআ করেছিলেন, হে আল্লাহ! আপনি তো জানেন, আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোন কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। যে সম্প্রদায় আপনার রসূল [সাঃআঃ]কে মিথ্যাচারী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে, হে আল্লাহ! আমি মনে করি [খন্দক যুদ্ধের পর] আপনি তো আমাদের ও তাহাদের মধ্যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। যদি এখনো কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন, যাতে আমি আপনার রাস্তায় তাহাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করিতে পারি। আর যদি যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষত হইতে রক্ত প্রবাহিত করুন আর তাতেই আমার মৃত্যু দিন। এরপর তাহাঁর ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হইতে লাগল। মসজিদে বানী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাহাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হইতে দেখে তারা বলিলেন, হে তাঁবুবাসীগণ! আপনাদের দিক থেকে এসব কী আমাদের দিকে আসছে? পরে তাঁরা জানলেন যে, সাদ [রাদি.] -এর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ যখমের কারণেই তিনি মারা যান, আল্লাহ তাহাঁর উপর সন্তুষ্ট থাকুন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১২২; মুসলিম ৩২/২২, হাঃ ১৭৬৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৩. দুটি বিষয়ের মধ্যে অধিক জরুরী বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়া।
১১৫৮. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আহযাব যুদ্ধ হইতে ফিরার পথে আমাদেরকে বলিলেন, বনূ কুরাইযা এলাকায় পৌঁছার পূর্বে কেউ যেন আসর সলাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের রাস্তাতেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাহাদের কেউ কেউ বলিলেন, আমরা সেখানে না পৌঁছে সলাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বলিলেন, আমরা সলাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না [বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া] নাবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাঁদের কারোর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেননি।
[বোখারী পর্ব ১২ অধ্যায় ৫ হাদীস নং ৯৪৬; মুসলিম ৩২/২৩, হাঃ ১৭৭০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৪. বিভিন্ন এলাকা বিজয়ের মাধ্যমে ধনাঢ্য হওয়ার পর আনসারদের দেয়া বৃক্ষ ও ফলের উপহার মুহাজিরগণ কর্তৃক ফিরিয়ে দেয়া।
১১৫৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাক্কাহ হইতে মাদীনাহ্ হিজরাতের সময় মুহাজিরদের হাতে কোন কিছু ছিল না। অন্যদিকে আনসারগণ ছিলেন জমি ও ভূসম্পত্তির অধিকারী। তাই আনসারগণ এ শর্তে মুহাজিরদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলেন যে, প্রতি বছর তারা [মুহাজিররা]-এর উৎপন্ন ফল ও ফসলের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ তাহাদের [আনসারদের] দিবেন আর তারা এ কাজে শ্রম দিবে ও দায়-দায়িত্ব নিবে। আনাসের মা উম্মু সুলাইম [রাদি.] ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনি আবু ত্বলহার মা। আনাসের মা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে [ফল ভোগ করার জন্য] কয়েকটি খেজুর গাছ দিয়েছিলেন। আর নাবী [সাঃআঃ] সেগুলো তাহাঁর আযাদকৃত বাঁদী উসমান ইবনি যায়দের মা উম্মু আয়মানকে দান করে দিয়েছিলেন। ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আনাস [রাদি.] আমাকে বলেছেন যে, নাবী [সাঃআঃ] খায়বারে ইয়াহূদীদের বিরুদ্ধে লড়াই শেষে মদিনায় ফিরে এলে মুহাজিরগণ আনসারদেরকে তাহাদের দানের সম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন; যেগুলো ফল ও ফসল ভোগ করার জন্য তারা মুহাজিরদের দান করেছিলেন। নাবী [সাঃআঃ]-ও তাহাঁর [আনাসের] মাকে তার খেজুর গাছগুলো ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উম্মু আয়মানকে ঐ গাছগুলোর পরিবর্তে নিজ বাগানের কিছু অংশ দান করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৫১ অধ্যায় ৩৫ হাদীস নং ২৬৩০; মুসলিম ৩২/২৪, হাঃ ১৭৭১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৬০. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, লোকেরা নাবী [সাঃআঃ]-কে খেজুর গাছ হাদিয়া দিতেন। অতঃপর যখন তিনি বানী নাযীর এবং বানী কুরাইযার উপর জয়লাভ করিলেন তখন আমার পরিবারের লোকেরা আমাকে নির্দেশ দিল, যেন আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর কাছে গিয়ে তাহাদের দেয়া সবগুলো খেজুর গাছ অথবা কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ তাহাঁর নিকট থেকে ফেরত গ্রহণের ব্যাপারে নিবেদন করি। আর নাবী [সাঃআঃ] ঐ গাছগুলো উম্মে আইমান [রাদি.]-কে দান করেছিলেন। উম্মে আইমান [রাদি.] আসলেন এবং আমার গলায় কাপড় লাগিয়ে বলিলেন, এটা কক্ষনো হইতে পারে না। সেই আল্লাহ্র কসম! যিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি ঐ গাছগুলো তোমাকে আর দেবেন না। তিনি এগুলো আমাকে দিয়ে দিয়েছেন। অথবা [রাবীর সন্দেহ] যেমন তিনি বলেছেন। এদিকে নাবী [সাঃআঃ] বলছিলেন, তুমি ঐ গাছগুলোর বদলে আমার নিকট থেকে এত এত পাবে। কিন্তু উম্মে আইমান [রাদি.] বলছিলেন, আল্লাহ্র কসম! এটা কক্ষনো হইতে পারে না। অবশেষে নাবী [সাঃআঃ] তাকে দিলেন। বর্ণনাকারী আনাস [রাদি.] বলেন, আমার মনে হয় নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এর দশগুণ অথবা যেমন তিনি বলেছেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩০ হাদীস নং ৪১২০; মুসলিম ৩২/২৪, হাঃ ১৭৭১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৫. শত্রুদের ভূমি থেকে খাদ্য নেয়া।
১১৬১. আবদুল্লাহ্ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা খাইবার দূর্গ অবরোধ করেছিলাম। কোন এক লোক একটি থলে ফেলে দিল; তাতে ছিল চর্বি। আমি তা নিতে উদ্যত হলাম। হঠাৎ দেখি যে, নাবী [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে আছেন। এতে আমি লজ্জিত হয়ে পড়লাম।
[বোখারী পর্ব ৫৭ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৩১৫৩; মুসলিম ৩২/২৫ হাঃ ১৭৭২] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৬. ইসলামের দাওয়াত দিয়ে হিরাক্লিয়াসের নিকট নাবী [সাঃআঃ]-এর পত্র।
১১৬২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আবু সুফ্ইয়ান [রাদি.] আমাকে সামনাসামনি হাদীস শুনিয়েছেন। আবু সুফ্ইয়ান [রাদি.] বলেন, আমাদের আর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির মেয়াদকালে আমি ভ্রমণে বের হয়েছিলাম। আমি তখন সিরিয়ায় অবস্থান করছিলাম। তখন নাবী [সাঃআঃ]-এর পক্ষ থেকে হিরাক্লিয়াসের নিকট একখানা পত্র পৌঁছান হল। দাহ্ইয়াতুল কালবী এ চিঠিটা বুসরার শাসককে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি হিরাক্লিয়াসের নিকট পৌঁছিয়ে দিলেন। পত্র পেয়ে হিরাক্লিয়াস বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ]র দাবীদার ব্যক্তির গোত্রের কেউ এখানে আছে কি? তারা বলিল, হ্যাঁ আছে। কয়েকজন কুরাইশীসহ আমাকে ডাকা হলে আমরা হিরাক্লিয়াসের নিকট গেলাম এবং আমাদেরকে তাহাঁর সম্মুখে বসানো হল। এরপর তিনি বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ]র দাবীদার ব্যক্তির তোমাদের মধ্যে নিকটতম আত্মীয় কে? আবু সুফ্ইয়ান বলেন, উত্তরে বললাম, আমিই। তারা আমাকে তার সম্মুখে এবং আমার সাথীদেরকে আমার পেছনে বসালেন। তারপর দোভাষীকে ডাকলেন এবং বলিলেন, এদেরকে জানিয়ে দাও যে, আমি নাবী [সাঃআঃ]র দাবীদার ব্যক্তিটি সম্পর্কে [আবু সুফ্ইয়ানকে] কিছু জিজ্ঞেস করলে সে যদি আমার নিকট মিথ্যা বলে তোমরা তার মিথ্যা বলা সম্পর্কে ধরবে। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, যদি তাহাদের পক্ষ থেকে আমাকে মিথ্যুক প্রমাণের আশঙ্কা না থাকত তাহলে আমি আমি মিথ্যা বলতামই। এরপর দোভাষীকে বলিলেন, একে জিজ্ঞেস কর যে, তোমাদের মধ্যে এ ব্যক্তির বংশ মর্যাদা কেমন? আবু সুফ্ইয়ান বলিলেন, তিনি আমাদের মধ্যে অভিজাত বংশের অধিকারী। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন যে, তাহাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ কি রাজা-বাদশাহ ছিলেন? আমি বললাম, না। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তাহাঁর বর্তমানের কথাবার্তার পূর্বে তোমরা তাঁকে কখনো মিথ্যাচারের অপবাদ দিয়েছ কি? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিরা তাহাঁর অনুসরণ করছে, না দুর্বলগণ? আমি বললাম, বরং দুর্বলগণ। তিনি বলিলেন, তাহাদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে। আমি বললাম, বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলিলেন, তাহাঁর ধর্মে প্রবিষ্ট হওয়ার পর তাহাঁর প্রতি বিতৃষ্ণাবশতঃ কেউ কি ধর্ম ত্যাগ করে? আমি বললাম, না। তিনি বলিলেন, তোমরা তাহাঁর বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধ করেছ কি? বললাম, জ্বী হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তাহাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছে? আমি বললাম, আমাদের ও তাহাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল হলঃ একবার তিনি জয়ী হন, আর একবার আমরা জয়ী হই। তিনি বলিলেন, তিনি প্রতিশ্রতি ভঙ্গ করেননি? বললাম, না। তবে বর্তমানে আমরা একটি সন্ধির মেয়াদে আছি। দেখি এতে তিনি কী করেন। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, আল্লাহ্র শপথ! এটি ব্যতীত অন্য কোন কথা ঢুকিয়ে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বলিলেন, তাহাঁর পূর্বে এমন কথা কেউ বলেছে কি? বললাম, না। তারপর তিনি তাহাঁর দোভাষীকে বলিলেন যে, একে জানিয়ে দাও যে, আমি তোমাকে তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তির বংশমর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারপর তুমি বলেছ যে, সে আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত। তদ্রুপ রসূল [সাঃআঃ]গণ শ্রেষ্ঠ বংশেই জন্মলাভ করে থাকেন। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাহাঁর পূর্বপুরুষের কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কিনা? তুমি বলেছ না। তাই আমি বলছি যে, যদি তাহাঁর পূর্বপুরুষদের কেউ রাজা-বাদশাহ থাকতেন তাহলে বলতাম, তিনি তাহাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব ফিরে পেতে চাচ্ছেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, দুর্বলগণ তাহাঁর অনুসারী, না সম্ভ্রান্তগণ? তুমি বলেছ, দুর্বলগণই। আমি বলছি যে, যুগে যুগে দুর্বলগণই রসূল [সাঃআঃ]দের অনুসারী হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, এ দাবীর পূর্বে তোমরা কখনও তাঁকে মিথ্যাবাদিতার অপবাদ দিয়েছিলে কি? তুমি উত্তরে বলেছ যে, না। তাতে আমি বুঝেছি যে, যে ব্যক্তি প্রথমে মানুষদের সঙ্গে মিথ্যাচার ত্যাগ করেন, তারপর আল্লাহ্র সঙ্গে মিথ্যাচারিতা করবেন, তা হইতে পারে না। আমি তোমাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তাহাঁর ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাহাঁর প্রতি বিরক্ত হয়ে কেউ ধর্ম ত্যাগ করে কিনা? তুমি বলেছ, ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি বলছি, ঈমান এভাবেই পূর্ণতা লাভ করে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তোমরা তাহাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছ কি? তুমি বলেছ যে, যুদ্ধ করেছ এবং তাহাঁর ফলাফল হচ্ছে পানি তোলার বালতির মত। কখনো তোমাদের বিরুদ্ধে তারা জয়লাভ করে আবার কখনো তাহাদের বিরুদ্ধে তোমরা জয়লাভ কর। এমনিভাবেই রসূল [সাঃআঃ]দের পরীক্ষা করা হয়, তারপর চূড়ান্ত বিজয় তাহাদেরই হয়ে থাকে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন কিনা? তুমি বলেছ, না। তদ্রূপ রসূল [সাঃআঃ]গণ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন না। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তাহাঁর পূর্বে কেউ এ দাবী উত্থাপন করেছিল কিনা? তুমি বলেছ, না। আমি বলি যদি কেউ তাহাঁর পূর্বে এ ধরনের দাবী করে থাকত তাহলে আমি মনে করতাম এ ব্যক্তি পূর্ববর্তী দাবীর অনুসরণ করছে। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, তারপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি তোমাদের কী কাজের হুকুম দেন? আমি বললাম, সলাত কায়িম করিতে, যাকাত প্রদান করিতে, আত্মীয়তা রক্ষা করিতে এবং পাপকাজ থেকে পবিত্র থাকার হুকুম দেন। হিরাক্লিয়াস বলিলেন, তাহাঁর সম্পর্কে তোমার বক্তব্য যদি সঠিক হয়, তাহলে তিনি ঠিকই নাবী [সাঃআঃ], তিনি আবির্ভূত হইবেন তা আমি জানতাম বটে তবে তোমাদের মধ্যে আবির্ভূত হইবেন তা মনে করিনি। যদি আমি তাহাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছার সুযোগ পেতাম তাহলে আমি তাহাঁর সাক্ষাৎকে অগ্রাধিকার দিতাম। যদি আমি তাহাঁর নিকট অবস্থান করতাম তাহলে আমি তাহাঁর পদযুগল ধুয়ে দিতাম। আমার পায়ের নিচের জমিন পর্যন্ত তাহাঁর রাজত্ব সীমা পৌঁছে যাবে।
আবু সুফ্ইয়ান বলেন, তারপর হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পত্রখানি আনতে বলিলেন। এরপর পাঠ করিতে বলিলেন। তাতে লেখা ছিলঃ
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহ্র নামে, আল্লাহ্র রসূল মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর পক্ষ থেকে রোমের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের প্রতি। হিদায়াতের অনুসারীর প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। এরপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, ইসলাম গ্রহণ করুন, মুক্তি পাবেন। ইসলাম গ্রহণ করুন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে দ্বিগুণ প্রতিদান দেবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে থাকেন তাহলে সকল প্রজার পাপরাশিও আপনার উপর নিপতিত হইবে। হে কিতাবীগণ! এসো সে কথায়, যা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে একই যে, আমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করব না, কোন কিছুতেই তাহাঁর সঙ্গে শরীক করব না। আর আমাদের একে অন্যকে আল্লাহ ব্যতীত প্রতিপালকরূপে গ্রহণ করব না। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম।
যখন তিনি পত্র পাঠ সমাপ্ত করিলেন চতুর্দিকে উচ্চ রব উঠল এবং গুঞ্জন বৃদ্ধি পেল। তারপর তাহাঁর নির্দেশে আমাদের বাইরে নিয়ে আসা হল। আবু সুফ্ইয়ান বলেন, আমরা বেরিয়ে আসার পর আমি আমার সাথীদের বললাম যে, আবু কাবশার সন্তানের তো বিস্তর ঘটেছে। রোমের রাষ্ট্রনায়ক পর্যন্ত তাঁকে ভয় পায়। তখন থেকে আমার মনে এ দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দ্বীন অতি সত্বর বিজয় লাভ করিবে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা আমাকে ইসলামে দীক্ষিত করিলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ৪৫৫৩; মুসলিম ৩২/২৬ হাঃ ১৭৭৩] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৮. হুনায়নের যুদ্ধ।
১১৬৩. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তাকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিল, হে আবু উমারা! হুনায়নের দিন আপনারা কি পলায়ন করেছিলেন? তিনি বলিলেন, না, আল্লাহ্র কসম, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] পলায়ন করেননি। বরং তাহাঁর কিছু সংখ্যক নওজোয়ান সাহাবী হাতিয়ার ছাড়াই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন। তারা বানূ হাওয়াযিন ও বানূ নাসর গোত্রের সুদক্ষ তীরন্দাজদের সম্মুখীন হন। তাহাদের কোন তীরই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। তারা এদের প্রতি এমনভাবে তীর বর্ষণ করিল যে, তাহাদের কোন তীরই ব্যর্থ হয়নি। সেখান থেকে তারা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে উপস্থিত হলেন। নাবী [সাঃআঃ] তখন তাহাঁর সাদা খচ্চরটির পিঠে ছিলেন এবং তাহাঁর চাচাতো ভাই আবু সুফ্ইয়ান ইবনি হারিস ইবনি আবদুল মুত্তালিব তাহাঁর লাগাম ধরে ছিলেন। তখন তিনি নামেন এবং আল্লাহ্র সাহায্য প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ], এক কথা মিথ্যা নয়। আমি আবদুল মুত্তালিবের পুত্র। অতঃপর তিনি সাহাবীদের সারিবদ্ধ করেন।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৯৭ হাদীস নং ২৯৩০; মুসলিম ৩২/২৮ হাঃ ১৭৭৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৬৪. বারআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কাইস গোত্রের এক লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, হুনাইনের দিন আপনারা কি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে পালিয়েছিলেন? তখন তিনি বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিন্তু পালিয়ে যাননি। হাওয়াযিন গোত্রের লোকেরা ছিল সুদক্ষ তীরন্দাজ। আমরা যখন তাহাদের উপর আক্রমণ চালালাম তখন তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। আমরা গনীমত তুলতে শুরু করলাম তখন আমরা তাহাদের তীরন্দাজ বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়লাম। তখন আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর সাদা রংয়ের খচ্চরটির পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখলাম। আর আবু সুফ্ইয়ান [রাদি.] তাহাঁর খচ্চরটির লাগাম ধরেছিলেন। তিনি বলছিলেন “আমি আল্লাহ্র নাবী [সাঃআঃ], এটা মিথ্যা নয়।”
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৪৩১৭; মুসলিম ৩২/২৮, হাঃ ১৭৭৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/২৯. তায়েফের যুদ্ধ।
১১৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তায়িফ অবরোধ করিলেন। কিন্তু তাহাদের নিকট হইতে কিছুই হাসিল করিতে পারেননি। তাই তিনি বলিলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা [অবরোধ উঠিয়ে মাদীনাহ্র দিকে] ফিরে যাব। কথাটি সাহাবীদের মনে ভারী লাগল। তাঁরা বলিলেন, আমরা চলে যাব, তায়িফ বিজয় করব না? বর্ণনাকারী একবার কাফিলুন শব্দের স্থলে নাকফুলো [অর্থাৎ আমরা যুদ্ধবিহীন ফিরে যাব] বর্ণনা করিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে সকালে গিয়ে লড়াই কর। তাঁরা [পরদিন] সকালে লড়াই করিতে গেলেন, এতে তাঁদের অনেকেই আহত হলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল ফিরে চলে যাব। তখন সহাবাদের কাছে কথাটি মনঃপূত হল। এতে নাবী [সাঃআঃ] হাসলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৫৬ হাদীস নং ৪৩২৫; মুসলিম ৩২/২৯, হাঃ ১৭৭৮] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩২. কাবা গৃহের আশপাশ থেকে মূর্তি সরানো।
১১৬৬. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] যখন [বিজয়ীর বেশে] মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন কাবা শরীফের চারপাশে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল। নাবী [সাঃআঃ] নিজের হাতের লাঠি দিয়ে মূর্তিগুলোকে আঘাত করিতে থাকেন আর বলিতে থাকেনঃ “সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, [আয়াতের শেষ পর্যন্ত]” [সূরাহ বানী ইসরা ১৭/৮১]।
[বোখারী পর্ব ৪৬ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ২৪৭৮; মুসলিম ৩২/৩২, হাঃ ১৭৮১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩৪. হুদাইবিয়াহ্র প্রান্তরে হুদাইবিয়াহ্র সন্ধি।
১১৬৭. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] হুদাইবিয়াহ্তে [মক্কাহ্বাসীদের সঙ্গে] সন্ধি করার সময় আলী [রাদি.] উভয় পক্ষের মাঝে এক চুক্তিপত্র লিখলেন। তিনি লিখলেন, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]। মুশরিকরা বলিল, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] লিখবে না। আপনি রসূল [সাঃআঃ] হলে আপনার সঙ্গে লড়াই করতাম না? তখন তিনি আলীকে বলিলেন, ওটা মুছে দাও। আলী[রাদি.] বলিলেন, আমি তা মুছব না। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] নিজ হাতে তা মুছে দিলেন এবং এই শর্তে তাহাদের সঙ্গে সন্ধি করিলেন যে, তিনি এবং তাহাঁর সঙ্গী-সাথীরা তিন দিনের জন্য মাক্কায় প্রবেশ করবেন এবং জুলুব্বান جُلُبَّانُ السِّلاَحِ ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে প্রবেশ করবেন না। তারা জিজ্ঞেস করিল, جُلُبَّانُ السِّلاَحِ মানে কী? তিনি বলিলেন, জুলুব্বান মানে ভিতরে তরবারিসহ খাপ।
[বোখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ৬ হাদীস নং ২৬৯৮; মুসলিম ৩২/৩৪ হাঃ ১৭৮৩] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৬৮. আবু ওয়ায়ল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা সিফফীন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। সে সময় সাহ্ল ইবনি হুনাইফ [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজ মতামতকে সঠিক মনে করো না। আমরা হুদায়বিয়ার দিন রসূলূল্লাহ্ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ছিলাম। যদি আমরা যুদ্ধ করা সঠিক মনে করতাম, তবে আমরা যুদ্ধ করতাম। পরে উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমরা কি হকের উপর নই এবং তারা বাতিলের উপর? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমাদের নিহত ব্যক্তিগণ কি জান্নাতী নন এবং তাহাদের নিহত ব্যক্তিরা জাহান্নামী নয়? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ, আমাদের নিহতগণ অবশ্যই জান্নাতী। উমার [রাদি.] বলিলেন, তবে কী কারণে আমরা আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে হীনতা স্বীকার করব? আমরা কি ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ্ তাআলা আমাদের ও তাহাদের মধ্যে কোন ফায়সালা করেননি? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হে ইবনি খাত্তাব! আমি নিশ্চয়ই আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ], আল্লাহ আমাকে কখনো হেয় করবেন না। অতঃপর উমার [রাদি.] আবু বকর [রাদি.]-এর নিকট গেলেন এবং নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট যা বলেছিলেন, তা তাহাঁর নিকট বলিলেন। তখন আবু বকর [রাদি.] বলিলেন, তিনি আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ], আল্লাহ তাআলা কখনও তাঁকে অপদস্থ করবেন না। অতঃপর সূরা ফাত্হ নাযিল হয়। তখন আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তা শেষ পর্যন্ত উমার [রাদি.]-কে পাঠ করে শোনান। উমার[রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! এটা কি বিজয়? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হ্যাঁ।
[বোখারী পর্ব ৫৮ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩১৮২; মুসলিম ৩২/৩৪, হাঃ ১৭৮৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩৭. উহূদের যুদ্ধ।
১১৬৯. সাহ্ল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তাকে উহূদের দিনে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলিলেন, নাবী [সাঃআঃ]-এর মুখমণ্ডল আহত হল এবং তাহাঁর সামনের দুটি দাঁত ভেঙ্গে গেল, তাহাঁর মাথার শিরস্ত্রাণ ভেঙ্গে গেল। ফাতিমাহ [রাদি.] রক্ত ধুচ্ছিলেন আর আলী [রাদি.] পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তিনি যখন দেখিতে পেলেন যে, রক্ত পড়া বাড়ছেই, তখন একটি চাটাই নিয়ে তা পুড়িয়ে ছাই করিলেন এবং তা ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলেন। অতঃপর রক্ত পড়া বন্ধ হল।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৮৫ হাদীস নং ২৯১১; মুসলিম ৩২/৩৭, হাঃ ১৭৯০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭০. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যেন এখনো নাবী [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যখন তিনি একজন নাবী [আ.]-এর অবস্থা বর্ণনা করছিলেন যে, তাহাঁর স্বজাতিরা তাঁকে প্রহার করে রক্তারক্তি করে দিয়েছে আর তিনি তাহাঁর চেহারা হইতে রক্ত মুছে ফেলছেন এবং বলছেন,
اللهُمَّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ
হে আল্লাহ্! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তারা জানে না।
[বোখারী পর্ব ৬০ অধ্যায় ৫৪ হাদীস নং ৩৪৭৭; মুসলিম ৩২/৩৭, হাঃ ১৭৯২] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩৮. আল্লাহ্র রসুল [সাঃআঃ] যাকে হত্যা করেন তার উপর আল্লাহ ভীষণ রাগান্বিত হন।
১১৭১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর দন্তের প্রতি ইশারা করে বলছেন, যে সম্প্রদায় তাহাদের নাবী [সাঃআঃ]র সঙ্গে এরূপ আচরণ করেছে তাহাদের প্রতি আল্লাহ্র গযব অত্যন্ত ভয়াবহ এবং আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] যে ব্যক্তিকে আল্লাহ্র পথে হত্যা করিয়াছেন তার প্রতিও আল্লাহ্র গযব অত্যন্ত ভয়ানক।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ২৪ হাদীস নং ৪০৭৩; মুসলিম ৩২/৩৮, হাঃ ১৭৯৩] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৩৯. নাবী [সাঃআঃ] মুশরিক ও মুনাফিকদের নিকট থেকে যে দুঃখকষ্ট পেয়েছেন।
১১৭২. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] সাজদাহরত অবস্থায় ছিলেন। অন্য সূত্রে আহমাদ ইবনি উসমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]…..আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ বর্ণনা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ] একদা বাইতুল্লাহ্ র পাশে সলাত আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবু জাহাল ও তার সাথীরা বসা ছিল। এমন সময় তাহাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়িভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সাজদাহ করেন তখন তার পিঠের উপর চাপিয়ে দিতে পারে? তখন গোত্রের বড় পাষণ্ড [উকবাহ] তাড়াতাড়ি গিয়ে তা নিয়ে এল এবং তাহাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখল। নাবী [সাঃআঃ] যখন সাজদাহয় গেলেন, তখন সে তাহাঁর পিঠের উপর দু কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, আমি [এ দৃশ্য] দেখছিলাম কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। হায়! আমার যদি বাধা দেয়ার শক্তি থাকত! তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগল এবং একে অন্যের উপর লুটোপুটি খেতে লাগল। আর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তখন সাজদাহ্য় থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে ফাতিমাহ [রাদি.] এসে সেটি তাহাঁর পিঠের উপর হইতে ফেলে দিলেন। অতঃপর আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] মাথা উঠিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ! আপনি কুরায়শকে ধ্বংস করুন। এরূপ তিনবার বলিলেন। তিনি যখন তাহাদের বদ দুআ করেন তখন তা তাহাদের অন্তরে ভয় জাগিয়ে তুলল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা জানত যে, এ শহরে দুআ কবূল হয়। অতঃপর তিনি নাম ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ! আবু জাহালকে ধ্বংস করুন এবং উতবা ইবনি রবীআ, শায়বা ইবনি রবীআ, ওয়ালীদ ইবনি উতবাহ, উমাইয়াহ খালাফ ও উকবাহ ইবনি আবী মুআইতকে ধ্বংস করুন। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু তিনি স্মরণ রাখতে পারেননি। ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেনঃ সেই সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, তাহাদের আমি বদরের কুপের মধ্যে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি।
[বোখারী পর্ব ৪ অধ্যায় ৬৯ হাদীস নং ২৪০; মুসলিম ৩২/৩৯, হাঃ ১৭৯৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭৩. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, উহুদের দিনের চেয়ে কঠিন কোন দিন কি আপনার উপর এসেছিল? তিনি বলিলেন, আমি তোমার ক্বওম নিকট হইতে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, তা তো হয়েছি। তাহাদের নিকট হইতে অধিক কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছি, আকাবার দিন যখন আমি নিজেকে ইবনি আবদে ইয়ালীল ইবনি আবদে কুলালের নিকট পেশ করেছিলাম। আমি যা চেয়েছিলাম, সে তার জবাব দেয়নি। তখন আমি এমনভাবে বিষণ্ণ চেহারা নিয়ে ফিরে এলাম যে, কারনুস সাআলিবে পৌঁছা পর্যন্ত আমার চিন্তা দূর হয়নি। তখন আমি মাথা উপরে উঠালাম। হঠাৎ দেখিতে পেলাম এক টুকরো মেঘ আমাকে ছায়া দিচ্ছে। আমি সে দিকে তাকালাম। তার মধ্যে ছিলেন জিবরীল [আ.]। তিনি আমাকে ডেকে বলিলেন, আপনার কাওম আপনাকে যা বলেছে এবং তারা উত্তরে যা বলেছে তা সবই আল্লাহ শুনেছেন। তিনি আপনার নিকট পাহাড়ের ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। এদের সম্পর্কে আপনার যা ইচ্ছে আপনি তাঁকে হুকুম দিতে পারেন। তখন পাহাড়ের ফেরেশতা আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে সালাম দিলেন। অতঃপর বলিলেন, হে মুহাম্মদ [সাঃআঃ]! এসব ব্যাপার আপনার ইচ্ছেধীন। আপনি যদি চান, তাহলে আমি তাহাদের উপর আখশাবাইন* কে চাপিয়ে দিব। উত্তরে নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, বরং আশা করি মহান আল্লাহ তাহাদের বংশ থেকে এমন সন্তান জন্ম দেবেন যারা এক আল্লাহর ইবাদাত করিবে আর তাহাঁর সঙ্গে কাউকে শরীক করিবে না।
[বোখারী পর্ব ৫৯ অধ্যায় ৭ হাদীস নং ৩২৩১; মুসলিম ৩২/৩৯, হাঃ ১৭৯৫] *আখশাবাইনঃ দুটি কঠিন শিলার পাহাড়। মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭৪. জুনদাব ইবনি সুফইয়ান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
কোন এক যুদ্ধে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর একটি আঙ্গুল রক্তাক্ত হলে তিনি পড়েছিলেনঃ তুমি একটি আঙ্গুল ছাড়া কিছু নও; তুমি রক্তাক্ত হয়েছ আল্লাহ্রই পথে।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ২৮০২; মুসলিম ৩২/৩৯ হাঃ ১৭৯৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭৫. জুনদাব ইবনি সুফ্ইয়ান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে রসূল [সাঃআঃ] দু বা তিন রাত তাহাজ্জুদের জন্য উঠতে পারেননি। এ সময় এক মহিলা এসে বলিল, হে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]! আমার মনে হয়, তোমার শয়তান তোমাকে ত্যাগ করেছে। দুই কিংবা তিনদিন যাবৎ তাকে আমি তোমার কাছে আসতে দেখিতে পাচ্ছি না। তখন আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করিলেন, শপথ পূর্বাহ্নের,
وَالضُّحى وَاللَّيْلِ إِذَا سَجى مَا وَدَّعَكَ رَبُّكَ وَمَا قَلَى
“শপথ রজনীর যখন তা হয় নিঝুম, তোমার প্রতিপালক তোমাকে পরিত্যাগ করেননি এবং তোমার প্রতি বিরূপও হননি” [সূরাহ ওয়াদ্ দুহা ৯৩/৩]।
[বোখারী পর্ব ৬৫ অধ্যায় ৯৩ হাদীস নং ৪৯৫০; মুসলিম ৩২/৩৯, হাঃ ১৭৯৭] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪০. নাবী [সাঃআঃ]-এর আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ প্রার্থনা এবং মুনাফিকদের [দেয়া] কষ্টের উপর তাহাঁর ধৈর্যধারণ।
১১৭৬. উসামাহ ইবনি যায়দ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একবার নাবী [সাঃআঃ] এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাদর ছিল। তিনি উসামাহ ইবনি যায়দকে নিজের পেছনে বসিয়েছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনি খাযরাজ গোত্রের সাদ ইবনি উবাদাহ [রাদি.]-এর দেখাশোনার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, প্রতিমাপূজক, মুশরিক ও ইয়াহূদী ছিল। তাহাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সালূলও ছিল। আর এ মজলিসে আবদুল্লাহ ইবনি রাওয়াহা [রাদি.]-ও উপস্থিত ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে উড়ন্ত ধূলাবালি মজলিসকে ঢেকে ফেলছিল তখন আবদুল্লাহ ইবনি উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলাবালি উড়িয়ো না। তখন নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের সালাম করিলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাহাদের আল্লাহ্র প্রতি আহ্বান করিলেন এবং তাহাদের কাছে কুরআন পাঠ করিলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনি উবাই ইবনি সালূল বললঃ হে আগত ব্যক্তি! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যদিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মজলিসে এসব বলে আমাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ ঠিকানায় ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য থেকে কেউ আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনি রাওয়াহা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]! আপনি আমাদের মজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে পরস্পর গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমনকি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করিতে উদ্যত হল। তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাদের থামাতে লাগলেন। অবশেষে তিনি তাহাঁর সাওয়ারীতে আরোহণ করে রওয়ানা হলেন এবং সাদ ইবনি উবাদাহ্ র কাছে পৌঁছলেন। তারপর তিনি বলিলেন, হে সাদ! আবু হুবাব অর্থাৎ আবদুল্লাহ ইবনি উবাই কী বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? সাদ [রাদি.] বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহ্র কসম! আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে সব নিয়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করিয়াছেন। পক্ষান্তরে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, তারা তাকে রাজ মুকুট পরাবে। আর তার মাথায় রাজকীয় পাগড়ী বেঁধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা আপনাকে যে দীনে হক দান করিয়াছেন, তা দিয়ে তিনি তাহাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে [ক্ষোভানলে] জ্বলছে। এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা আপনি নিজেই প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। তারপর নাবী [সাঃআঃ] তাকে মাফ করে দিলেন।
[বোখারী পর্ব ৭৯ অধ্যায় ২০ হাদীস নং ৬২৫৪; মুসলিম ৩২/৪০, ১৭৯৮] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৭৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ]-কে বলা হলো, আপনি যদি আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইয়ের নিকট একটু যেতেন। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকট গাধায় চড়ে গেলেন এবং মুসলিমরা তাহাঁর সঙ্গে হেটে চললো। সে পথ ছিল কংকরময়। নাবী [সাঃআঃ] তার নিকট এসে পৌঁছলে সে বলিল, সরো আমার কাছ থেকে। আল্লাহ্র কসম, তোমার গাধার দুর্গন্ধ আমাকে কষ্ট দিচ্ছে। তাঁদের মধ্য হইতে একজন আনসারী বললোঃ আল্লাহ্র কসম, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর গাধা সুগন্ধে তোমার চেয়ে উত্তম। আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাই-এর গোত্রের এক ব্যক্তি রেগে গেল এবং দুজনে গালাগালি করিল। এভাবে উভয়ের পক্ষের সঙ্গীরা রেগে উঠল এবং উভয় দলের সঙ্গে লাঠালাঠি, হাতাহাতি ও জুতা মারামারি হল। আমাদের জানান হয়েছে যে, এ ব্যাপারে এ আয়াত নাযিল হলোঃ
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا
মুমিনদের দুদল বিবাদে লিপ্ত হলে তোমরা তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে [সূরা আল-হুজরাত ৪৯/৯]।
[বোখারী পর্ব ৫৩ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৬৯১; মুসলিম ৩২/৪০, হাঃ ১৭৯৯] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪১. আবু জাহল হত্যা।
১১৭৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, [বাদরের দিন] নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আবু জাহলের কী অবস্থা হল কেউ তা দেখিতে পার কি? তখন ইবনি মাসউদ [রাদি.] বের হলেন এবং দেখিতে পেলেন যে, আফরার দুই পুত্র তাকে এমনিভাবে মেরেছে যে, মুমূর্ষু অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। রাবী বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] তার দাড়ি ধরে বলিলেন, তুমিই কি আবু জাহল? আবু জাহল বললঃ সেই লোকটির চেয়ে উত্তম আর কেউ আছে কি যাকে তার গোত্রের লোকেরা হত্যা করিল অথবা বলিল তোমরা যাকে হত্যা করলে
? [বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৮ হাদীস নং ৩৯৬২; মুসলিম ৩২/৪১, হাঃ ১৮০০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪২. ইয়াহূদীদের ত্বাগূত কাব বিন আশ্রাফকে হত্যা।
১১৭৯. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, কাব ইবনি আশরাফের হত্যা করার জন্য কে প্রস্তুত আছ? কেননা, সে আল্লাহ্ ও তাহাঁর রসূল [সাঃআঃ]কে কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] দাঁড়ালেন, এবং বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]! আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বলিলেন, হাঁ। তখন মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, তাহলে আমাকে কিছু প্রতারণাময় কথা বলার অনুমতি দিন। রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলিলেন, হাঁ বল। এরপর মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] কাব ইবনি আশরাফের নিকট গিয়ে বলিলেন, এ লোকটি [রসূল [সাঃআঃ]] সদাকাহ চায় এবং সে আমাদেরকে বহু কষ্টে ফেলেছে। তাই আমি আপনার নিকট কিছু ঋণের জন্য এসেছি। কাব ইবনি আশরাফ বলিল, আল্লাহ্র কসম পরে সে তোমাদেরকে আরো বিরক্ত করিবে এবং আরো অতিষ্ঠ করে তুলবে। মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, আমরা তাহাঁর অনুসরণ করছি। পরিণাম কী দাঁড়ায় তা না দেখে এখনই তাহাঁর সঙ্গ ত্যাগ করা ভাল মনে করছি না। এখন আমি আপনার কাছে এক ওসাক বা দু ওসাক খাদ্য ধার চাই। বর্ণনাকারী সুফ্ইয়ান বলেন, আমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমার নিকট হাদীসটি কয়েকবার বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি এক ওসাক বা দু ওসাকের কথা উল্লেখ করেননি। আমি তাকে বললাম, এ হাদীসে তো এক ওসাক বা দু ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে, তিনি বলিলেন, মনে হয় হাদীসে এক ওসাক বা দু ওসাকের কথাটি বর্ণিত আছে। কাব ইবনি আশরাফ বলিল, ধারতো পাবে তবে কিছু বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, কী জিনিস আপনি বন্ধক চান। সে বলিল, তোমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখ। মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, আপনি আরবের একজন সুশ্রী ব্যক্তি, আপনার নিকট কিভাবে, আমাদের স্ত্রীদেরকে বন্ধক রাখব? তখন সে বলিল, তাহলে তোমাদের ছেলে সন্তানদেরকে বন্ধক রাখ। তিনি বলিলেন, আমাদের পুত্র সন্তানদেরকে আপনার নিকট কী করে বন্ধক রাখি? তাহাদেরকে এ বলে সমালোচনা করা হইবে যে, মাত্র এক ওসাক বা দু ওসাকের বিনিময়ে বন্ধক রাখা হয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য খুব লজ্জাজনক বিষয়। তবে আমরা আপনার নিকট অস্ত্রশস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান বলেন, লামা শব্দের অর্থ হচ্ছে অস্ত্রশস্ত্র। শেষে তিনি [মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা] তার কাছে আবার যাওয়ার ওয়াদা করে চলে আসলেন। এরপর তিনি কাব ইবনি আশরাফের দুধ ভাই আবু নাইলাকে সঙ্গে করে রাতের বেলা তার নিকট গেলেন। কাব তাহাদেরকে দুর্গের মধ্যে ডেকে নিল এবং সে নিজে উপর তলা থেকে নিচে নেমে আসার জন্য প্রস্তুত হল। তখন তার স্ত্রী বলিল, এ সময় তুমি কোথায় যাচ্ছ? সে বলিল, এই তো মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ এবং আমার ভাই আবু নাইলা এসেছে। আমর ব্যতীত বর্ণনাকারীগণ বলেন যে, কাবের স্ত্রী বলিল, আমি তো এমনই একটি ডাক শুনতে পাচ্ছি যার থেকে রক্তের ফোঁটা ঝরছে বলে আমার মনে হচ্ছে। কাব ইবনি আশরাফ বলিল, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ এবং দুধ ভাই আবু নাইলা, [অপরিচিত কোন লোক তো নয়] ভদ্র মানুষকে রাতের বেলা বর্শা বিদ্ধ করার জন্য ডাকলে তার যাওয়া উচিত। [বর্ণনাকারী বলেন] মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] সঙ্গে আরো দু ব্যক্তিকে নিয়ে সেখানে গেলেন। সুফ্ইয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আমর কি তাহাদের দুজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন? উত্তরে সুফ্ইয়ান বলিলেন, একজনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। আমর বর্ণনা করেন যে, তিনি আরো দুজন মানুষ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছিলেন, যখন সে [কাব ইবনি আশরাফ] আসবে। আমার ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ [মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামার সাথীদের সম্পর্কে] বলেছেন যে [তারা হলেন] আবু আবস ইবনি জাবর হারিস ইবনি আওস এবং আব্বাদ ইবনি বিশর। আমর বলেছেন, তিনি অপর দু লোককে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন এবং তাহাদেরকে বলেছিলেন, যখন সে আসবে তখন আমি তার মাথার চুল ধরে শুঁকতে থাকব। যখন তোমরা আমাকে দেখবে যে, খুব শক্তভাবে আমি তার মাথা আঁকড়ে ধরেছি, তখন তোমরা তরবারি দ্বারা তাকে আঘাত করিবে। তিনি [মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ] একবার বলেছিলেন যে, আমি তোমাদেরকেও শুঁকাব। সে [কাব] চাদর নিয়ে নিচে নেমে আসলে তার শরীর থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছিল। তখন মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, আজকের মত এতো উত্তম সুগন্ধি আমি আর কখনো দেখিনি। আমর ব্যতীত অন্যান্য রাবীগণ বর্ণনা করিয়াছেন যে, কাব বলিল, আমার নিকট আরবের সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন সুগন্ধী ব্যবহারকারী মহিলা আছে। আমর বলেন, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ [রাদি.] বলিলেন, আমাকে আপনার মাথা শুঁকতে অনুমতি দেবেন কি? সে বলিল, হাঁ। এরপর তিনি তার মাথা শুঁকলেন এবং এরপর তার সাথীদেরকে শুঁকালেন। তারপর তিনি আবার বলিলেন, আমাকে আবার শুঁকবার অনুমতি দেবেন কি? সে বলিল, হাঁ। এরপর তিনি তাকে কাবু করে ধরে সাথীদেরকে বলিলেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। তাঁরা তাকে হত্যা করিলেন। এরপর নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে এ খবর দিলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ৪০৩৭; মুসলিম ৩২/৪৩, হাঃ ১৮০১] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪৩. খায়বারের যুদ্ধ।
১১৮০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] খায়বার অভিযানে বের হয়েছিলেন। সেখানে আমরা খুব ভোরে ফাজরের সলাত আদায় করলাম। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] সওয়ার হলেন। আবু ত্বলহা [রাদি.]-ও সওয়ার হলেন, আর আমি আবু ত্বলহা[রাদি.]র পিছনে উপবিষ্ট ছিলাম। নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারীকে খায়বারের পথে চালিত করিলেন। আমার হাঁটু নাবী [সাঃআঃ]-এর উরুতে লাগছিল। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ]-এর উরু হইতে ইযার সরে গেল। এমনকি নাবী [সাঃআঃ]-এর উরুর উজ্জ্বলতা যেন এখনো আমি দেখছি। তিনি যখন নগরে প্রবেশ করিলেন তখন বললেনঃ আল্লাহু আকবার। খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোন কওমের প্রাঙ্গণে অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃতদের ভোর হইবে কতই না মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করিলেন। আনাস [রাদি.] বলেনঃ খায়বারের অধিবাসীরা নিজেদের কাজে বেরিয়েছিল। তারা বলে উঠলঃ মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]! আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ আমাদের কোন কোন সাথী “পূর্ণ বাহিনীসহ” [ওয়াল খামীস] শব্দও যোগ করিয়াছেন। পরে যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা খায়বর জয় করলাম।
[বোখারী পর্ব ৮ অধ্যায় ১২ হাদীস নং ৩৭১; মুসলিম ৩২/৮৫ হাঃ ১৩৬৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮১. সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে খাইবার অভিযানে বেরোলাম। আমরা রাতের বেলা চলছিলাম, তখন দলের এক ব্যক্তি আমির [রাদি.]-কে বলিল, হে আমির! তোমার সমর সঙ্গীত থেকে আমাদেরকে কিছু শোনাবে না কি? আমির [রাদি.] ছিলেন একজন কবি। তখন তিনি সওয়ারী থেকে নামলেন এবং সঙ্গীতের তালে তালে কাফেলাকে এগিয়ে নিয়ে চললেন। তিনি গাইলেন :
হে আল্লাহ! তুমি না হলে আমরা হিদায়াত লাভ করতাম না,
সদাকাহ দিতাম না আর সলাত আদায় করতাম না।
তাই আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন, যতদিন আপনার প্রতি সমর্পিত হয়ে থাকব।
শত্র“র মুকাবিলায় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন
এবং আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন।
আমাদেরকে যখন [কুফরের দিকে] ডাকা হয় আমরা তখন তা প্রত্যাখ্যান করি।
আর এ কারণে তারা চীৎকার করে আমাদের বিরুদ্ধে লোক-লস্কর জমা করে।
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, এ সঙ্গীতের গায়ক কে? তাঁরা বলিলেন, আমির ইবনিল আকওয়া। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। কাফেলার একজন বললঃ হে আল্লাহ্র নাবী [সাঃআঃ]! তার [শাহাদাত] নিশ্চিত হয় গেল। [হায়] আমাদেরকে যদি তার নিকট হইতে আরো উপকার লাভের সুযোগ দিতেন! অতঃপর আমরা খাইবারে পৌঁছলাম এবং তাহাদেরকে অবরোধ করলাম। এক সময় আমরা ভীষণ ক্ষুধায় আক্রান্ত হলাম। কিন্তু পরেই মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাহাদের উপর বিজয় দান করিলেন। বিজয়ের দিন সন্ধ্যায় মুসলিমগণ [রান্নার জন্য] অনেক আগুন জ্বালাতেন। নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃএ সব কিসের আগুন? তোমরা কী রান্না করছ? তারা জানালেন, গোশত। নাবী [সাঃআঃ] জিজ্ঞেস করলেনঃ কিসের গোশত? লোকেরা বলিলেন, গৃহপালিত গাধার গোশত। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এগুলি ঢেলে দাও এবং ডেকচিগুলো ভেঙ্গে ফেল। একজন বলিলেন, হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]! গোশ্তগুলো ঢেলে দিয়ে যদি পাত্রগুলো ধুয়ে নেই? তিনি বলিলেন, তাও করিতে পার। এরপর যখন সবাই যুদ্ধের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িলে গেলেন, আর আমির ইবনিল আকওয়া [রাদি.]-এর তলোয়ারটা ছিল ছোট, তা দিয়ে তিনি এক ইয়াহূদীর পায়ের গোছায় আঘাত করলে তরবারির তীক্ষ্ণ ভাগ ঘুরে এসে তাহাঁর নিজের হাঁটুতে লেগে যায়। এতে তিনি মারা যান। সালামাহ ইবনিল আকওয়া[রাদি.] বলেনঃ তারপর লোকেরা খাইবার থেকে ফিরতে শুরু করলে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে দেখে আমার হাত ধরে বলিলেন, কী খবর? আমি বললামঃ আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক। লোকজন ধারণা করছে, [নিজ আঘাতে মারা যাওয়ায়] আমির [রাদি.]-এর আমাল নষ্ট হয়ে গেছে। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, এ কথা যে বলেছে সে মিথ্যা বলেছে। বরং আমিরের রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর দুটি আঙ্গুল একত্রিত করে দেখালেন। অবশ্যই সে একজন সচেষ্ট ব্যক্তি ও আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদকারী। তাহাঁর মত গুণের অধিকারী আরবে খুব কমই আছে।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৭ হাদীস নং ৪১৯৬; মুসলিম ৩২/৪৩, হাঃ ১৮০২] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪৪. আহযাবের যুদ্ধ এবং তা হচ্ছে খান্দাক।
১১৮২. বারা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আহযাবের দিন আমি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে দেখেছি যে, তিনি মাটি বহন করছেন। আর তাহাঁর পেটের শুভ্রতা মাটি ঢেকে ফেলেছে। সে সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন, [হে আল্লাহ্] ঃ
আপনি না হলে আমরা হিদায়াত পেতাম না;
সদাকাহ দিতাম না এবং সলাত আদায় করতাম না।
তাই আমাদের উপর শান্তি নাযিল করুন।
যখন আমরা শত্র সম্মুখীন হই তখন আমাদের পা সুদৃঢ় করুন।
ওরা আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করেছে।
তারা যখনই কোন ফিতনা সৃষ্টি করিতে চায় তখনই আমরা তা থেকে বিরত থাকি।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ৩৪ হাদীস নং ২৮৩৭; মুসলিম ৩২/৪৪ হাঃ ১৮০৩] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮৩. সাহ্ল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা যখন পরিখা খনন করে আমাদের স্কন্ধে করে মাটি বহন করছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] আমাদের নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহ্! আখিরাতের জীবনই আসল জীবন। মুহাজির ও আনসারদেরকে আপনি মাফ করে দিন।
[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৩৭৯৭; মুসলিম ৩২/৪৪, হাঃ নং ১৮০৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] বলেছেন, হে আল্লাহ্! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।
اللهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الآخِرَهْفَاغْفِرْ لِلْمُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ
হে আল্লাহ্! আনসার ও মুহাজিরদের কল্যাণ করুন।
[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ৯ হাদীস নং ৩৭৯৫; মুসলিম ৩২/৪৪, হাঃ ১৮০৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮৫. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আনসারগণ খন্দকে যুদ্ধের দিন আবৃত্তি করছিলেনঃ
“আমরাই হচ্ছি সে সকল ব্যক্তি, যারা মুহাম্মাদের হাতে জিহাদ করার উপর বায়আত গ্রহণ করেছি,
জিহাদ করার উপর-যতদিন আমরা বেঁচে থাকব।”
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] এর উত্তর দিয়ে বললেনঃ
হে আল্লাহ্! পরকালের সুখ হচ্ছে প্রকৃত সুখ;
তাই তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে সম্মানিত কর।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১১০ হাদীস নং ২৯৬১; মুসলিম ৩২/৪৪, হাঃ ১৮০৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪৫. যিকারাদের যুদ্ধ ইত্যাদি।
১১৮৬.সালামাহ ইবনি আকওয়া[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, [একদা] আমি ফাজরের সলাতের আযানের আগে বাইরে বের হলাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দুধেল উটগুলোকে যি-কারাদ জায়গায় চরানো হতো। সালামাহ [রাদি.] বলেন, তখন আমার সঙ্গে আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.]-এর গোলামের দেখা হলো। সে বলিল, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর দুধেল উটগুলো লুট করা হয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কে ওগুলো লুট করেছে? সে বলিল, গাতফানের লোকেরা। তিনি বলেন, তখন আমি ইয়া সাবাহা বলে তিনবার উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করলাম। আর মাদীনাহর দু পর্বতের মাঝে অবস্থিত মানুষদের কানে আমার আওয়াজ শুনিয়ে দিলাম। তারপর দ্রুত অগ্রসর হয়ে তাহাদেরকে পেয়ে গেলাম। এ সময়ে তারা উটগুলোকে পানি পান করাতে শুরু করেছিল। তখন তাহাদের দিকে তীর নিক্ষেপ করলাম, আমি ছিলাম একজন দক্ষ তীরন্দাজ আর বললাম, আমি হলাম আকওয়া-এর পুত্র, আজকের দিনটি তোমাদের সবচেয়ে খারাপ দিন। এভাবে আমি তাহাদের নিকট হইতে উটগুলোকে কেড়ে নিলাম এবং তাহাদের ত্রিশখানা চাদরও কেড়ে নিলাম। তিনি বলেন, এরপর নাবী [সাঃআঃ] ও অন্যান্য লোক সেখানে আসলে আমি বললাম, হে আল্লাহ্র নাবী [সাঃআঃ]! লোক কটি পিপাসার্ত ছিল, আমি তাহাদেরকে পানি পান করিতেও দেইনি। আপনি এখনই এদের পিছু ধাওয়া করার জন্য সৈন্য পাঠিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন,
হে ইবনিল আকওয়া! তুমি [হারানো উট দখল করিতে] সক্ষম হয়েছ, এখন একটু বিশ্রাম নাও।
সালামাহ [রাদি.] বলেন, এরপর আমরা ফিরে আসলাম। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে তাহাঁর উটনীর পেছনে বসিয়ে নিলেন, এভাবে মদিনায় প্রবেশ করলাম।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩৮ হাদীস নং ৪১৯৪; মুসলিম ৩২/৪৫, হাঃ ১৮০৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪৭. মহিলাদের পুরুষের পাশে থেকে যুদ্ধ।
১১৮৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ওহোদ যুদ্ধের এক সময়ে সহাবায়ে কেরাম নাবী [সাঃআঃ] হইতে আলাদা হয়ে পড়েছিলেন। তখন আবু ত্বলহা ঢাল হাতে নিয়ে নাবী [সাঃআঃ]-এর সামনে প্রাচীরের মত দৃঢ় হয়ে দাঁড়ালেন। আবু ত্বলহা সুদক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন। এক নাগাড়ে তীর ছুঁড়তে থাকায় তাহাঁর হাতে ঐদিন দু বা তিনটি ধনুক ভেঙ্গে যায়। ঐ সময় তীর ভর্তি তীরাধার নিয়ে যে কেউ তাহাঁর নিকট দিয়ে যেতো নাবী [সাঃআঃ] তাকেই বলিতেন, তোমরা তীরগুলি আবু ত্বলহার জন্য রেখে দাও। এক সময় নাবী [সাঃআঃ] মাথা উঁচু করে শত্রদের অবস্থা দেখিতে চাইলে আবু ত্বলহা [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্র নাবী [সাঃআঃ]! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি মাথা উঁচু করবেন না। হয়ত শত্রদের নিক্ষিপ্ত তীর এসে আপনার গায়ে লাগতে পারে। আমার বক্ষ আপনাকে রক্ষার জন্য ঢাল স্বরূপ। আনাস [রাদি.] বলেন, ঐদিন আমি আবু বকর -এর কন্যা আয়েশা [রাদি.]-কে এবং [আমার মাতা] উম্মে সুলায়মকে দেখিতে পেলাম যে, তাঁরা পরনের কাপড় এতটুকু পরিমাণ উঠিয়েছেন যে, তাঁদের পায়ের খাঁড়ু আমি দেখিতে পাচ্ছিলাম। তাঁরা পানির মশক ভরে নিজেদের পিঠে বহন করে এনে আহতদের মুখে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। পুনরায় ফিরে গিয়ে পানি ভরে নিয়ে আহতদেরকে পান করাচ্ছিলেন। ঐ সময় আবু ত্বলহা -এর হাত হইতে [তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে] তাহাঁর তরবারিটি দুবার অথবা তিনবার পড়ে গিয়েছিল।
[বোখারী পর্ব ৬৩ অধ্যায় ১৮ হাদীস নং ৩৮১১; মুসলিম ৩২/৪৭ হাঃ ১৮১০] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৪৯. নাবী [সাঃআঃ]-এর যুদ্ধের সংখ্যা।
১১৮৮. আবু ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি ইয়াযীদ আনসারী [রাদি.] বের হলেন এবং, বারাআ ইবনি আযিব ও যায়দ ইবনি আরকাম [রাদি.] ও তাহাঁর সঙ্গে বের হলেন। তিনি মিম্বার ছাড়াই পায়ের উপরে দাঁড়িয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে বৃষ্টির জন্য দুআ করিলেন। অতঃপর ইস্তিগফার করে আযান ও ইকামাত ব্যতীত সশব্দে কিরাআত পড়ে দু রাকআত সলাত আদায় করেন
[বোখারী পর্ব ১৫ অধ্যায় ১৫ হাদীস নং ১০২২; মুসলিম ৩২/৪৯, হাঃ ১২২৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৮৯. আবু ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনি আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল, নাবী [সাঃআঃ] কয়টি যুদ্ধ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, উনিশটি। আবার জিজ্ঞেস করা হল কয়টি যুদ্ধে তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন? তিনি বলিলেন, সতেরটিতে। বললাম, এসব যুদ্ধের কোন্টি সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল? তিনি বলিলেন, উশায়র বা উশাইরাহ।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ১ হাদীস নং ৩৯৪৯; মুসলিম ৩২/৩৫, হাঃ ১২৫৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯০. বুরাইদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে ষোলটি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৯০ হাদীস নং ৪৪৭৩; মুসলিম ৩২/৪৯, হাঃ ১৮১৪] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১১৯১. সালামাহ ইবনি আকওয়া [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আর তিনি [সাঃআঃ] যেসব অভিযান প্রেরণ করিয়াছেন তন্মধ্যে নয়টি অভিযানে আমি অংশ নিয়েছি। এসব অভিযানে একবার আবু বকর [রাদি.] আমাদের অধিনায়ক থাকতেন, আরেকবার উসামাহ [রাদি.] আমাদের অধিনায়ক থাকতেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৪৬ হাদীস নং ৪২৭০; মুসলিম ৩২/৪৯, হাঃ ১৮১৫] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
৩২/৫০. যাতুর রিকার যুদ্ধ।
১১৯২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন যুদ্ধে আমরা নাবী [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা ছিলাম ছয়জন। আমাদের কাছে ছিল মাত্র একটি উট। পালাক্রমে আমরা এর পিঠে চড়তাম। [হেঁটে হেঁটে] আমাদের পা ফেটে যায়। আমার পা দুখানাও ফেটে গেল, নখগুলো খসে পড়ল। এ কারণে আমরা পায়ে নেকড়া জড়িয়ে নিলাম। এ জন্য একে যাতুর রিকা যুদ্ধ বলা হয়। কেননা এ যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দিয়ে পট্টি বেঁধেছিলাম। আবু মূসা [রাদি.] উক্ত ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন। পরবর্তীকালে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন, আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করি না। সম্ভবত তিনি তার কোন আমাল প্রকাশ করাকে অপছন্দ করিতেন।
[বোখারী পর্ব ৬৪ অধ্যায় ৩২ হাদীস নং ৪১২৮; মুসলিম ৩২/৫০, হাঃ ১৮১৬] মুত্তাফাকুন আলাইহি PDF -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply