মুজদালিফা মিনা , বিদায় হাজ্জ, আরাফা, কংকর, চুল কামানো

আরাফার ময়দান , মিনা, মুযদালিফা, কংকর, চুল কামানো

আরাফার ময়দান , মিনা, মুযদালিফা, কংকর, চুল কামানো >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ১১, অনুচ্ছেদঃ ৫৮-৮০=২৩টি

অনুচ্ছেদ–৫৮ঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর বিদায় হাজ্জের বিবরণ
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ আরাফাহ ময়দানে অবস্থান সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৬০ঃ মিনায় গমন প্রসঙ্গ
অনুচ্ছেদ–৬১ঃ আরাফাহ্ ময়দানে গমন
অনুচ্ছেদ–৬২ঃ আরাফাহ্ অভিমুখে রওয়ানা হওয়া
অনুচ্ছেদ–৬৩ঃ আরাফাহ্‌ ময়দানে খুত্ববাহ
অনুচ্ছেদ–৬৪ঃ আরাফাহ্য় অবস্থানের জায়গা
অনুচ্ছেদ–৬৫ঃ আরাফাহ হইতে প্রত্যাবর্তন
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ মুযদালিফায় সলাত আদায়
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ মুযদালিফা থেকে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করা
অনুচ্ছেদ–৬৮ঃ বড় হাজ্জের দিন
অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ হারাম [সম্মানিত] মাসসমূহ
অনুচ্ছেদ-৭০ঃ যে ব্যক্তি [নয় তারিখে] আরাফাহ্‌য় উপস্থিত হইতে পারেনি
অনুচ্ছেদ-৭১ঃ মিনায় অবতরণ
অনুচ্ছেদ-৭২ঃ মিনায় কোন দিন খুত্ববাহ দিতে হইবে?
অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ যিনি বলেন তিনি [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন খুত্ববাহ দিয়েছেন
অনুচ্ছেদ–৭৪ঃ কুরবানীর দিন কখন খুত্ববাহ প্রদান করিবে?
অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ মিনার খুত্ববাহ্‌য় ঈমাম কি আলোচনা করবেন
অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ মিনার রাতগুলো মাক্কাহ্‌য় যাপন করা
অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ মিনাতে সলাত আদায়
অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ মাক্কাহবাসীর জন্য সলাত ক্বাসর করার অনুমতি প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ–৭৯ঃ জামরাতে কংকর মারা
অনুচ্ছেদ–৮০ঃ মাথার চুল কামানো এবং ছোট করা সম্পর্কে

অনুচ্ছেদ–৫৮ঃ নাবী [সাঃআঃ]-এর বিদায় হাজ্জের বিবরণ

১৯০৫. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] এর নিকট যাই। আমরা তার নিকটবর্তী হলে তিনি [অন্ধ হওয়ার কারণে] আগন্তুকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন এবং এক পর্যায়ে আমার কাছাকাছি এলে আমি বলিলাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনি আলী ইবনি হুসাইন ইবনি আলী [রাদি.]। আমার কথা শুনে তিনি আমার মাথার দিকে হাত বাড়ান, আমার জামার উপরের ও নিচের বোতাম খুলে তার হাতের তালু আমার বুকের উপর রাখলেন। তখন আমি ছিলাম যুবক। তিনি বলিলেন, মারহাবা! মোবারক হোক তোমার আগমণ, স্বাগতম হে ভ্রাতুষ্পুত্র! যা ইচ্ছে জিজ্ঞেস করিতে পারো। এরপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি ছিলেন অন্ধ। সলাতের সময় উপস্থিত হলে তিনি কাপড় পেঁচিয়ে নিজের জায়নামাযের উপর সলাতে দাঁড়ালেন। কিন্তু তার কাপড় ছোট হওয়ায় তিনি যখনই তা কাঁধের উপর রাখছিলেন তখনই এর দু পাশ তার দিকে ফিরে আসছিলো। তিনি আমাদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করিলেন, অথচ তার [বড়] চাদরটি আলনার উপর রক্ষিত ছিলো। আমি বলিলাম, আমাকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাজ্জ সম্বন্ধে বলুন। তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে নয় সংখ্যাটির কথা বলিলেন, অতঃপর বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নয় বছর মদিনায় ছিলেন, এ সময় একবারও হাজ্জ করেননি। অতঃপর দশম বছরে লোকদের মধ্যে ঘোষণা করিলেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হাজ্জ করবেন। ফলে অসংখ্য লোক মাদীনাহয় আসলো এবং প্রত্যেকেই চাইলো যে, তারা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] অনুসরণ করিবে এবং তিনি যেসব কাজ করেন তারাও তাই করিবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রওয়ানা হলে আমরাও তাহাঁর সাথে রওয়ানা হই। যুল-হুলাইফা পর্যন্ত পৌঁছলে আসমা বিনতু উমাইস [রাদি.] মুহাম্মাদ ইবনি আবু বাক্‌রকে প্রসব করেন। কাজেই তিনি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] কাছে লোক মারফত জানতে চাইলেন, এখন আমার কি করণীয়? তিনি বলিলেনঃ তুমি গোসল করে [লজ্জাস্থানে] কাপড় বেঁধে ইহরাম বেঁধে নাও। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে সলাত আদায় করেন, অতঃপর উষ্ট্রী কাসওয়ার উপর চড়েন। উষ্ট্রীটি যখন আল-বায়দা উপত্যকায় দাঁড়ালো তখন জাবির [রাদি.] বলেন, তাহাঁর সম্মুখে আমার চোখের দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত দেখিতে পেলাম শুধু আরোহী ও পদাতিক জনসমুদ্র, তাহাঁর ডানে, বামে এবং পিছনে সর্বত্রই একই অবস্থা। এ সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের মাঝে ছিলেন এবং তখন তাহাঁর ওপর আহকাম সম্বলিত কুরআনের আয়াত নাযিল হচ্ছিল আর তিনিই এর ব্যাখ্যা জানতেন। তিনি যা কিছু করিতেন আমরাও অনুরূপ করতাম। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মহান আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে ইহরাম বেঁধে উচ্চস্বরে পড়লেন ঃ “লাব্বায়িক আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক। লা শারীকা লাকা লাব্বায়িক ইন্নাল- হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল-মুলক লা শারীকা লাকা”। তিনি যেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়েছেন, লোকেরাও সেভাবে ইহরাম বেঁধে তালবিয়া পড়লো। তাহাদের কোনো কাজকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অস্বীকৃতি দেননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তালবিয়া পাঠ অব্যাহত রাখলেন।

জাবির [রাদি.] বলেন, আমরা শুধু হাজ্জের নিয়্যাত করেছিলাম। উমরা সম্পর্কে আমরা জানতাম না। পরে আমরা তাহাঁর সাথে বায়তুল্লাহয় এসে পৌঁছলে তিনি রুকন অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদে চুমু খেলেন এবং তিনবার রমল এবং চারবার স্বাভবিক গতিতে হেঁটে [তাওয়াফ] সম্পন্ন করিলেন। অতঃপর মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হয়ে পড়লেন ঃ “এবং ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থানকে তোমরা সলাতের স্থানরূপে নির্ধারণ করো” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ ঃ ১২৫] এবং তিনি মাকামে ইবরাহীম ও বায়তুল্লাহকে সামনে রাখলেন। জাফর ইবনি মুহাম্মাদ বলেন, আমার পিতা বলিয়াছেন, ইবনি নুফাইল এবং উসমান বলিয়াছেন, আমার মনে হয়, এ কথাটি নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেন। সুলাইমান বলেন, আমার ধারণা, জাবির বলিয়াছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুই রাকআত সলাত কুল হুআল্লাহু আহাদ এবং কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন দিয়ে পড়েছেন। আবার তিনি বায়তুল্লাহর নিকট গিয়ে রুকনে [হাজরে আসওয়াদ] চুমু খেলেন। অতঃপর [বায়তুল্লাহর] দরজা দিয়ে বেরিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে গেলেন। তিনি সাফার কাছে গিয়ে পাঠ করিলেন ঃ “নিশ্চয় সাফা ও মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত” [সূ-রাহ আল-বাক্বারাহ ঃ ১৫৯]। সুতরাং আমরা সেখান থেকে সাঈ শুরু করবো আল্লাহ যেখান থেকে শুরু করেছেন [অর্থাৎ প্রথমে সাফা হইতে এবং পরে মারওয়া হইতে] এ বলে তিনি সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন। সেখান থেকে বায়তুল্লাহ দেখে তাকবীর বলিলেন এবং তাহাঁর তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে বলিলেনঃ “তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব তাহাঁর। তিনিই জীবন-মৃত্যু দানকারী। তিনিই সকল প্রশংসার প্রকৃত হকদার এবং তিনি সবকিছু করিতে সক্ষম ও ক্ষমতাবান। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একাই তাহাঁর ওয়াদা পূর্ণ করে দেখিয়েছেন, তাহাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল [বিদ্রোহী] বাহিনীকে বিতাড়িত ও পরাভূত করেছেন”।

তিনি এর মধ্যে অনুরূপ তিনবার দুআ করিলেন। অতঃপর সেখান থেকে নেমে মারওয়ায় গেলেন, তাহাঁর পদদ্বয় নিম্নভূমি স্পর্শ করিল, তিনি সমতল ভূমিতে রমল করিলেন। সমতল ভূমি অতিক্রম করে মারওয়া পাহাড়ের নিকটে এসে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেন। তারপর মারওয়া পাহাড়ে উঠে তাই করিলেন যেরূপ করেছিলেন সাফা পাহাড়ে। পরে মারওয়ার সর্বশেষ তাওয়াফ সম্পন্ন করে বলিলেনঃ আমি যা পরে জেনেছি তা যদি আগে জানতাম তাহলে কুরবানীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসতাম না এবং [হাজ্জের] ইহরামকে উমরাহ্‌য় পরিণত করতাম। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই, তারা যেন উমরাহ করার পর ইহরাম খুলে ফেলে এবং [তাওয়াফ, সাঈ ইত্যাদিকে] উমরাহ্‌র কাজ হিসেবে করে নেয়। ফলে নাবী [সাঃআঃ] এবং যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলো তারা ব্যতীত সকল লোক তাহাদের ইহরাম খুলে মাথার চুল ছেঁটে ফেললো। এ সময় সুরাক্বাহ ইবনি জশুম [রাদি.] দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরূপ কি শুধু আমাদের এ বছরের জন্য প্রযোজ্য, নাকি সর্বকালের জন্য? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে ঢুকিয়ে বলিলেনঃ উমরাহ হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে, এভাবে তিনি দুবার বলিলেন, সর্বকালের জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, এ সময় আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] এর কুরবানীর পশু নিয়ে ইয়ামান থেকে এলেন। তিনি দেখলেন, ফাত্বিমাহ [রাদি.] ইহরাম খুলে রঙ্গিন পোশাক পরে সুরমা লাগিয়েছেন। আলী [রাদি.] এটা অপছন্দ করে বলিলেন, তোমাকে এরূপ করিতে কে বলেছে? তিনি বলিলেন, আমার পিতা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। বর্ণনাকারী বলেন, এক সময় আলী [রাদি.] ইরাকে একথা বলিয়াছেন, আমি ফাত্বিমাহ্‌র কৃতকর্মের জন্য রাগ করে রাসূলুল্লাহ্‌র [সাঃআঃ] নিকট গিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলাম। আমি তাঁকে জানালাম, আমি ফাত্বিমাহর এ কাজ অপছন্দ করেছি এবং সে বলেছে, আমার পিতা আমাকে এরূপ করিতে আদেশ করেছেন। তিনি আমার কথা শুনে বলিলেনঃ সে সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। [হে আলী!] তুমি হাজ্জ ও উমরাহ্‌র ইহরাম বাঁধার সময় কি বলেছিলে? তিনি বলেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন, আমার ইহরামও অনুরূপ। তিনি বলিলেনঃ আমার সাথে কুরবানীর পশু আছে। সুতরাং [আমার মত] তুমিও ইহরাম খুলে হালাল হইতে পারবে না। অপরদিকে আলী [রাদি.] এর ইয়ামান থেকে নিয়ে আসা কুরবানীর পশু এবং মাদীনাহ থেকে নাবী [সাঃআঃ] এর নিয়ে আসা কুরবানীর পশু, এগুলো মোট সংখ্যা ছিলো একশটি। নাবী [সাঃআঃ] এবং তাহাঁর ঐসব সাহাবী যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিলো তারা ব্যতীত সকলেই ইহরাম খুলে হালাল হয়ে মাথার চুল খাট করলো। বর্ণনাকারী বলেন, তারা যখন [অষ্টম তারিখ] তারবিয়ার দিনে মিনার দিকে রওয়ানা হলেন, তখন তারা হাজ্জের উদ্দেশ্যে ইহরাম বাঁধলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সওয়ারীতে চড়লেন এবং মিনায় পৌঁছে আমাদেরকে যুহর, আসর, মাগরিব, ইশা এবং ফাজ্‌র, মোট পাঁচ ওয়াক্ত সলাত সেখানে আদায় করিলেন এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করিলেন। তিনি তাহাঁর জন্য একখানা পশমের তাঁবু টানাতে নির্দেশ দিলেন এবং নামিরা নামক স্থানে তা টানান হলে নাবী [সাঃআঃ] সেখানে গেলেন। যাতে কুরাইশদের এরূপ সংশয় না করে যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাশআরুল হারামের নিকটবর্তী মুযদালিফায় অবস্থান করবেন, যেরূপ কুরাইশরা জাহিলিয়াতের যুগে করতো। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে আরাফাতে আসলেন। এখানে এসে দেখলেন নামিরায় তাহাঁর জন্য তাবু টানান হয়েছে। পশ্চিমাকাশে সূর্য ঢলে পড়া পর্যন্ত তিনি ঐ তাবুতে অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীটি উপস্থিত করার নির্দেশ দিলেন। তা আনা হলে তিনি তাতে চড়ে বাতনুল ওয়াদীতে আসলেন এবং লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন।

তিনি বলিলেনঃ নিশ্চয় তোমাদের রক্ত ও সম্পদ [পরষ্পরের জন্য] আজকের এই দিন, এই মাস এবং এই শহরের মতই সম্মানিত। সাবধান! জাহিলী যুগের সমস্ত কাজ ও প্রথা আমার দুই পায়ের নিচে পতিত হলো। জাহিলী যুগের রক্তের সকল দাবি বাতিল। আমি সর্বপ্রথম আমাদের [বনী হাশিমের] রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম। বর্ণনাকারী উসমানের বর্ণনায় রয়েছে ঃ আমি ইবনি রবীআহ্‌র রক্তের দাবি আর সুলইমানের বর্ণনায় রয়েছে ঃ আমি রবীআহ ইবনি হারিস ইবনি আবদুল মুত্তালিবের রক্তের দাবি পরিত্যাগ করলাম। আর রবীআহ সাদ গোত্রে দুগ্ধপুষ্য থাকাকালীন হুযাইল গোত্রের লোকেরা তাহাকে হত্যা করেছিলো। জাহিলী যুগের সুদও বাতিল হলো। আমি সর্বপ্রথম আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিবের সুদের দাবি পরিহার করলাম। তা সম্পূর্ণরূপে বাতিল হলো। তোমরা নারীদের সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করো। কেননা তাহাদেরকে তোমরা আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছো এবং আল্লাহর বিধান মোতাবেক তোমরা তাহাদের লজ্জাস্থানকে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। তাহাদের উপর তোমাদেরও অধিকার আছে, তারা যেন তোমাদের অপছন্দনীয় ব্যক্তিকে তোমার ঘরে স্থান না দেয়। তারা এরূপ করলে তাহাদেরকে খুবই হালকা মারধর করো। তাহাদের ভরণ-পোষনের দায়িত্বও তোমাদের উপর। তোমরা তা স্বাভাবিকভাবে আদায় করিবে। সর্বোপরি আমি তোমাদের মধ্যে এমন একটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো পথভ্রষ্ট হইবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব। [ক্বিয়ামাতের দিন] তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তখন তোমরা কি বলবে? তারা বলিলেন, আমরা সাক্ষ্য দিবো, আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পৌঁছিয়েছেন, আপনার আমানাতের হক্ব আদায় করেছেন এবং ভালো কাজের উপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে তর্জনী তুলে ধরেন এবং মানুষের প্রতি ইঙ্গিত করে [তিনবার] বলিলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন, হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।

অতঃপর বিলাল [রাদি.] আযান অতঃপর ইক্বামাত দিলেন। তিনি যুহরের সলাত আদায় করিলেন, পুনরায় ইক্বামাত দিলে আসরের সলাত আদায় করিলেন। কিন্তু এ দুইয়ের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অন্য [নফল] সলাত পড়েননি। অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীতে আরোহণ করে আরাফাতে অবস্থানের স্থানে এলেন এবং কাসওয়া উষ্ট্রীকে জাবালে রহমাতের পাদদেশে ঘুরিয়ে দাঁড় করিয়ে তিনি পাহাড়কে সামনে রেখে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্য ডুবে আকাশের লালিমা কিছুটা মুছে যাওয়া পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করিলেন। সূর্যের লালিমা বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি উসামাকে তাহাঁর পেছনে সওয়ারীতে বসিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সেখান থেকে রওয়ানা হলেন এবং উষ্ট্রীর লাগাম শক্ত করে ধরলেন, ফলে উটের মাথা হাওদার সম্মুখভাগের সাথে ছুটতে লাগলো। এ সময় তিনি ডান হাতের ইশারায় বলিতে লাগলেন ঃ ধীরস্থিরভাবে পথ চলো, হে লোকেরা, ধীরস্থিরভাবে চলো, হে লোকজন! তিনি কোন বালির টিলার নিকট এলে উষ্ট্রীর লাগাম সামান্য ঢিলা করিতেন যাতে তা সহজে টিলায় উঠে সামনে অগ্রসর হইতে পারে। অবশেষে তিনি মুযদালিফায় উপস্থিত হলেন। এখানে এসে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রে আদায় করেন। এ দুই সলাতের মাঝখানে তিনি অন্য কোনো [নফল] সলাত পড়েননি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ স্থানে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করেন। ফাজ্‌রের সময় হলে তিনি ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেন। তিনি এ সলাত আদায় করেছেন এক আযান ও এক ইক্বামাতে।

অতঃপর তিনি কাসওয়া উষ্ট্রীর উপর চড়ে মাশআরুল হারামে এসে তার উপর উঠেন। তারপর তিনি ক্বিবলাহকে সামনে রেখে মহান আল্লাহর প্রশংসা, তাকবীর এবং তাহলীল পাঠ করেন। তিনি আল্লাহর একত্ববাদেরও ঘোষণা করেন এবং তিনি ভোর হওয়া পর্যন্ত এ স্থানে অবস্থান করেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্বেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাদল ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে তাহাঁর বাহনের পেছনে বসিয়ে রওয়ানা হলেন। ফাদল ছিলেন কালো চুল ও সুন্দর চেহারার অধিকারী যুবক। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর চলার পথে জন্তুযানের অবস্থানকারী একদল মহিলাও তাহাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলো। আর ফাদল বারবার তাহাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাদলের মুখের উপর হাত রাখলেন। ফাদল অন্যদিকে ঘুরে তাহাদের দিকে দেখছিলেন। ফলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাদলের মুখের উপর হাত দিয়ে তা অন্যদিকে ফিরালেন। এবার তিনি মুহাসসার নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং তিনি উষ্ট্রীকে কিছুটা দ্রুত চালালেন। অতঃপর এখান থেকে রওয়ানা হয়ে জামরাতুল কুবরার দিকের মধ্যবর্তী পথ ধরে চললেন এবং সেখানে বৃক্ষের নিকটবর্তী জামরায় এসে উপস্থিত হয়ে তাতে সাতটি কংকর মারলেন আর প্রত্যেক কংকর নিক্ষেপের সময় তাকবীর বলিলেন। কংকরগুলো ছিলো পাথরের ক্ষুদ্র টুকরার মতো এবং তা সমতল ভূমি থেকে নিক্ষেপ করেছেন।

অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পশু কুরবানীর স্থানে উপস্থিত হলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি উট কুরবানী করিলেন। অতঃপর আলী [রাদি.]-কে নির্দেশ দিলেন তিনি অবশিষ্টগুলো যাবাহ করিলেন। তিনি আলী [রাদি.]-কে তাহাঁর কুরবানীতে অংশীদারও করেন। অতঃপর তিনি প্রত্যেকটি যাবাহকৃত পশু হইতে এক টুকরো করে গোশত তাঁকে দেয়ার আদেশ করিলেন। সুতরাং তা নিয়ে একটি হাঁড়িতে পাকানো হলো। তাঁরা দুজনেই এ গোশত খেলেন এবং এর ঝোল পান করিলেন।

অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উষ্ট্রীতে চড়ে খুব তাড়াতাড়ি রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ্‌য় উপস্থিত হলেন। তিনি মক্কায় এসেই যুহরের সলাত আদায় করিলেন। পরে তিনি বনি আবদুল মুত্তালিবের নিকট গেলেন। এসময় তারা [লোকদের] যমযমের পানি পান করাচ্ছিলেন। তিনি তাহাদেরকে বলিলেনঃ হে বনি আবদুল মুত্তালিব! পানি উত্তোলন করিতে থাকো। লোকদের অত্যাধিক ভিড় হওয়ার আশংকা যদি না থাকতো তাহলে আমিও তোমাদের সাথে পানি উত্তোলনে অংশগ্রহণ করতাম। এরপর লোকেরা তাঁকে পানির বালতি সরবরাহ করলে তিনি [সাঃআঃ] তা থেকে পান করেন। {১৯০৫}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯০৬. জাফর ইবনি মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] আরাফাহর ময়দানে এক আযান ও দুই ইক্বামাতে যুহর ও আসরের সলাত আদায় করেছেন। কিন্তু এ দুই সলাতের মধ্যখানে কোনো তাসবীহ পড়েননি। অনুরূপভাবে তিনি মুযদালিফায় এক আযান ও দুই ইক্বামাতে মাগরিব ও ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং দুই সলাতের মাঝখানে কোন তাসবীহ পড়েননি। {১৯০৬}

সহিহ ঃ মুসলিম, জাবির সূত্রে। এটাই সঠিক। এর পূর্বের ১৯০৫ নং হাদিস। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, জাবির হইতে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে ঃ “অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] মাগরিব ও ইশা এক আযান ও এক ইক্বামাতে আদায় করেছেন”। দুর্বল।হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

১৯০৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি। আর মিনার পুরো এলাকাই কুরবানীর স্থান। তিনি আরাফার এক স্থানে অবস্থান করেছেন এবং বলিয়াছেনঃ আমি এ স্থানে অবস্থান করেছি, আর আরাফার সম্পূর্ণ এলাকাই অবস্থানের স্থান। তিনি মুযদালিফার এক স্থানে অবস্থান করেছেন এবং বলিয়াছেনঃ আমি এ স্থানে অবস্থান করেছি, আর মুযদালিফার পুরো এলাকাই অবস্থানের স্থান। {১৯০৭}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯০৮. জাফর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সনদ হইতে বর্ণীতঃ

এতে আরো আছে সুতরাং ঃ তোমরা নিজ নিজ অবস্থান স্থলে কুরবানী করো।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯০৯. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ এ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার হাদিসে একথাও রয়েছে ঃ “আর তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে দাঁড়াবার স্থানকে সলাতের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো”। জাফর ইবনি মুহম্মাদ বলেন, নাবী [সাঃআঃ] এ স্থানে সলাত আদায়কালে সূরাহ ইখলাস ও সূরাহ কাফিরুন পাঠ করেছেন। {১৯০৯}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ আরাফাহ ময়দানে অবস্থান সম্পর্কে

১৯১০. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরাইশরা এবং তাহাদের ধর্মের অনুসারীরা মুযদালিফায় অবস্থান করতো এবং নিজেদের এরূপ আচরণকে বীরত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করতো। অথচ আরবের অন্যান্য লোকেরা আরাফাহ্য় অবস্থান করতো। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, ইসলামের আবির্ভাবের পর মহান আল্লাহ তাহাঁর নাবী [সাঃআঃ]-কে আরাফাহ্য় গমনের ও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণী ঃ “তোমরাও সেখান থেকে ফিরে যাও যেখান থেকে অন্যান্য লোক ফিরে আসে। {১৯১০}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬০ঃ মিনায় গমন প্রসঙ্গ

১৯১১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তারবিয়ার দিনে যুহরের সলাত এবং আরাফাহর দিনে ফজরের সলাত মিনাতেই পড়েছেন। {১৯১১}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯১২. আবদুল আযীয ইবনি রুফাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.]-কে বলিলাম, আপনি আমাকে এমন কিছু জানান যা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে শুনে স্মরণ রেখেছেন। তারবিয়ার দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যুহরের সলাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বলিলেন, মিনাতে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি [মিনা থেকে] প্রত্যাবর্তনের দিন আসরের সলাত কোথায় পড়েছিলেন? তিনি বলিলেন, আল-আবতাহ উপত্যকায়। অতঃপর বলিলেন, তোমাদের আমীরগণ যেরূপ করেন তোমরাও অনুরূপ করো। {১৯১২}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৬১ঃ আরাফাহ্ ময়দানে গমন

১৯১৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফার দিন ভোরে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেই [মিনা হইতে] রওয়ানা করে আরাফাহ্তে এসে পৌঁছে নামিরাহ নামক স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন। এটা আরাফার সেই স্থান যেখানে ঈমাম [আরাফার দিন] অবস্থান গ্রহণ করেন। অতঃপর যুহর সলাতের ওয়াক্ত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাড়াতাড়ি সলাতের জন্য রওয়ানা হলেন এবং যুহর ও আসরের সলাত একত্রে আদায় করে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, তারপর সেখান থেকে প্রস্থান করে আরাফাহ্‌র ময়দানের অবস্থান স্থলে অবস্থান গ্রহণ করেন। {১৯১৩}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ–৬২ঃ আরাফাহ্ অভিমুখে রওয়ানা হওয়া

১৯১৪.সাঈদ ইবনি হাস্সান হইতে ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, হাজ্জাজ যে বছরে আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর [রাদি.]-কে শহীদ করলো, তখন হাজ্জাজ ইবনি উমার [রাদি.] এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলো যে, আজকের এই [আরাফার] দিনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন সময় আরাফার দিকে রওয়ানা করেছেন? তিনি বলিলেন, যাত্রার সময় হলে রওয়ানা করবো। অতঃপর ইবনি উমার [রাদি.] যখন রওয়ানা করার ইচ্ছা করিলেন, তখন লোকেরা তাহাকে বললো, এখনো সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েনি। অতঃপর ইবনি উমার আবার জিজ্ঞেস করিলেন, সূর্য ঢলে পড়েছে কি? তার সাথীরা বললো, এখনো ঢলে পড়েনি। সাঈদ বলেন, যখন তার সাথীরা বললো, এখন সূর্য [পশ্চিমাকাশে] ঢলে পড়েছে, তখন তিনি রওয়ানা হলেন। {১৯১৪}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ–৬৩ঃ আরাফাহ্‌ ময়দানে খুত্ববাহ

১৯১৫.দামরাহ গোত্রীয় জনৈক ব্যক্তি হইতে তার পিতা অথবা চাচার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলিয়াছেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আরাফার ময়দানে মিম্বারের উপর [খুত্ববাহ দিতে] দেখেছি। {১৯১৫}

{১৯১৫} আহমাদ।ঃ আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯১৬. নুবাইত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে আরাফার ময়দানে একটি লাল রংয়ের উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুত্ববাহ দিতে দেখেছেন। {১৯১৬}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯১৭. খালিদ ইবনিল আদ্দাআ ইবনি হাওযাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আরাফার দিন একটি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে তার দুই পাদানীতে পা রেখে দাঁড়িয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। {১৯১৭}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯১৮. আবু আমর আবদুল মাজীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তিনি আল-আদ্দাআ ইবনি খালিদ [রাদি.] হইতে এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসটির ভাবার্থে বর্ণনা করেছেন।{১৯১৮}

আমি এটি সহিহ এবং যঈফে পাইনি। {১৯১৮} আহমাদ।আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ–৬৪ঃ আরাফাহ্য় অবস্থানের জায়গা

১৯১৯. ইয়াযীদ ইবনি শাইবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি মিরবা আল-আনসারী [রাদি.] আমাদের কাছে আসলেন, তখন আমরা আরাফার এই স্থানে অবস্থান করছিলাম। আমর বলেন, তাহাদের অবস্থান স্থলটি ইমামের হইতে কিছু দূরে ছিলো। তিনি এসে বলিলেন, আমি তোমাদের কাছে রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] একজন দূত। তিনি তোমাদের জন্য ফরমান দিয়েছেন, তোমরা তোমাদের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে অবস্থান গ্রহণ করো। কারণ তোমরা ইবরাহীম [আঃ]-এর উত্তরাধিকারী ও বংশধর। {১৯১৯}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৬৫ঃ আরাফাহ হইতে প্রত্যাবর্তন

১৯২০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ধীরস্থিরভাবে প্রশান্ত অবস্থায় আরাফাহ হইতে ফিরে আসেন। তাহাঁর সওয়ারীর পেছনে বসা ছিলেন উসামাহ [রাদি.]। তিনি লোদেরকে বলিলেনঃ হে লোক সকল! ধীরস্থিরভাবে চলো! কেননা ঘোড়া ও উটকে দ্রুত চালনার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ঘোড়া ও উটগুলোকে তাহাদের দুই হাত [অর্থাৎ সামনের পা] তুলে দ্রুত চলতে দেখিনি। এভাবে তিনি মুযদালিফায় আসলেন। ওয়াহব ইবনি বায়ানের বর্ণনায় রয়েছে ঃ পথিমধ্যে তিনি ফাদল ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে নিলেন। এখানেও তিনি বলিলেনঃ হে লোকেরা! ঘোড়া ও উটকে দ্রুত চালনার মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। কাজেই তোমরা ধীরস্থিরভাবে চলো। বর্ণনাকারী বলেন, এখানেও আমি পশুগুলোকে তাহাদের হাত [পা] তুলে দ্রুত চলতে দেখিনি। এভাবেই তিনি মিনায় পৌঁছেন। {১৯২০}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২১. কুরাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একদা তিনি উসামাহ ইবনি যায়িদ [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেন, যে দিন সন্ধ্যায় আপনি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] পেছনে আরোহণ করে ফিরছিলেন, তখন আপনারা কি করেছিলেন? তিনি বলিলেন, আমরা ঐ পাহাড়ী পথে যাই যেখানে রাত যাপনের জন্য লোকেরা অবতরণ করে। সেখানে পৌঁছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উষ্ট্রী বসিয়ে পেশাব করিলেন। বর্ণনাকারী এখানে পানি প্রবাহের কথা বলেননি। অতঃপর উযুর পানি চাইলেন, তিনি হালকাভাবে উযু করিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি বলিলেনঃ সলাত সামনে গিয়ে [পড়বো]। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সওয়ারীতে চড়ে মুযদালিফায় আসেন এবং ইক্বামাত হলে মাগরিবের সলাত আদায় করেন। এদিকে লোকেরা উটের পিঠ থেকে মালপত্র না নামিয়েই তাহাদের উটগুলো নিজ নিজ তাঁবুতে বসিয়ে দিলেন। এরপর ইক্বামাত দিয়ে ইশার সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর লোকেরা তাহাদের উটের পিঠের মালপত্র নামালো। মুহাম্মাদ ইবনি কাসীর তার হাদিসে বৃদ্ধি করেছেন যে, আমি [কুরাইব] জিজ্ঞেস করলাম, পরবর্তী সকালে আপনারা কি করেছেন? উসামাহ বলেন, আজ ফাদল তাহাঁর বাহনের পেছনে চড়লেন এবং আমি কুরাইশদের অগ্রগামী দলটির সাথে পায়ে হেঁটে রওয়ানা হলাম। {১৯২১}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, অতঃপর তিনি উসামাকে বাহনের পেছনে বসিয়ে মধ্যম গতিতে উষ্ট্রী চালিয়ে গেলেন। এ সময় লোকেরা তাহাদের উটকে ডানে-বামে মারধর করে হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তিনি তাহাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বলিতে লাগলেন শান্ত গতিতে চলো হে লোকেরা! অতঃপর সূর্য ডুবার পরই তিনি আরাফাহ থেকে প্রত্যাবর্তন করেন। {১৯২২}

হাসান, তার এ কথাটি বাদে ঃ তিনি ভ্রুক্ষেপ করিলেন না। মাহফূয হলো ঃ তিনি লক্ষ্য করিলেন। ঈমাম তিরমিজি একে সহিহ বলিয়াছেন। আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

১৯২৩. হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি উসামাহ্র [রাদি.] কাছে বসা ছিলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হাজ্জে কিভাবে পথ চলেছেন সে সম্পর্কে তাহাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মধ্যম গতিতেই চলেছেন। তিনি প্রশস্ত পথে উপনীত হলে একটু দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম করিতেন। হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরূপ গতিকে আন-নাচ্ছ আনাক্ব বলে। {১৯২৩}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২৪. উসামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর বাহনের পেছনে ছিলাম। যখন সূর্য অস্ত গেলো তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাত থেকে রওয়ানা হলেন। {১৯২৪}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৯২৫. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর মুক্তদাস কুরাই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি উসামাহ ইবনি যায়িদ [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাহ হইতে রওয়ানা করিলেন। তিনি পাহাড়ী পথে পৌঁছে পেশাব করার পর হালকা উযু করিলেন, পূর্নাঙ্গ উযু করিলেন না। উসামাহ ইবনি যায়িদ [রাদি.] বলেন, আমি তাহাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি বলিলেন, আরো সামনে এগিয়ে সলাত আদায় করবো। তিনি পুনরায় বাহনে চড়লেন এবং মুযদালিফায় এসে বাহন থেকে নেমে উত্তমরূপে উযু করিলেন। তারপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তিনি মাগরিবের সলাত আদায় করিলেন। অতঃপর সকল লোক নিজ নিজ স্থানে নিজেদের উট বসালো। অতঃপর ইশার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তিনি ইশার সলাত পড়লেন, কিন্তু এ দুই সলাতের মাঝখানে আর কোনো সলাত পড়েননি। {১৯২৫}

আরাফার ময়দান -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ মুযদালিফায় সলাত আদায়

১৯২৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুযদালিফায় মাগরিব এবং ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছেন। {১৯২৬}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২৭. আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার নিজস্ব সনদ হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদিসের সমার্থক হাদিস বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক সলাতের জন্য পৃথক ইক্বামাত দ্বারা উভয় সলাত একত্রে আদায় করেছেন। আহমাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিয়াছেন, প্রতিটি সলাত আদায় করেছেন এক ইক্বামাতে।

ওয়াকীর বর্ণনাটি সহিহ। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২৮. আহমাদ ইবনি হাম্বালের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আহমাদ ইবনি হাম্বালের [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সনদ দ্বারা আয যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে হাম্মাদ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের সমার্থক হাদিস বর্ণিত। বর্ণনাকারী উসমান ইবনি উমার বলিয়াছেন, প্রত্যেক সলাতের জন্য এক ইক্বামাত দিয়ে এবং প্রথম সলাতে আযান দেয়া হয়নি। আর এ উভয় সলাতের কোনটির পরে অন্য কোন সলাত আদায় করেননি। মাখ্লাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উভয় সলাতের কোনটির জন্য আযান দেননি।

সহিহ ঃ তার এ কথাটি বাদে ঃ “আযান দেয়া হয়নি…।” এটাই সঠিক। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯২৯. আবদুল্লাহ ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমারের [রাদি.] সাথে মাগরিবের তিন এবং ইশার দুই রাকআত সলাত আদায় করেছি। মালিক ইবনিল হারিস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাকে বলিলেন, এ আবার কেমন সলাত? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে আমি এ দুটি সলাত এই স্থানে এক ইক্বামাতে আদায় করেছি। {১৯২৯}

সহিহ “প্রত্যেক সলাত” অতিরিক্তসহ। যেমন পূর্বের হাদিসে রয়েছে। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩০. ঈত ইবনি যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবনি মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তারা উভয়ে বলিয়াছেন, আমরা ইবনি উমারের [রাদি.] সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সলাত এক ইক্বামাতে আদায় করেছি। অতঃপর ইবনি কাসীর বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। {১৯৩০}

সহিহ “প্রত্যেক সলাত” অতিরিক্তসহ। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩১. সাঈদ ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইবনি উমারের [রাদি.] সাথে আরাফাহ হইতে ফিরে যখন মুযদালিফায় আসলাম তখন তিনি এক ইক্বামাতে মাগরিব ও ইশার সলাত যথাক্রমে তিন ও দুই রাকআত পড়ালেন। সলাত শেষে ইবনি উমার [রাদি.] আমাদেরকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে এ স্থানে এভাবেই সলাত পড়িয়েছেন। {১৯৩১}

সহিহ। কিন্তু “প্রত্যেক সলাতের জন্য কথাটি বৃদ্ধি না করে “এক ইক্বামাতে” বলাটা শায। যেমন গত হয়েছে। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩২. সালামাহ ইবনি কুহাইল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি সাঈদ ইবনি জুবাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে দেখেছি, তিনি মুযদালিফায় ইক্বামাত দিয়ে মাগরিবের তিন রাকআত এবং ইশার দুই রাকআত সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার [রাদি.]-কে এ স্থানে এমনটি করিতে দেখেছি। আর তিনি বলিয়াছেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এখানে এরূপ করিতে দেখেছি। {১৯৩২}

সহিহ। তবে এতে শুযুয বিদ্যমান। যা ১৯৩১ নং হাদিসে উল্লেখ রয়েছে। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩৩. আশ্‌আস ইবনি সুলাইম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমারের [রাদি.] সাথে আরাফাহ হইতে মুযদালিফা পর্যন্ত আসি। মুযদালিফায় আসা পর্যন্ত তিনি তাকবীর ও তাহলীল পাঠ করেছেন। এরপর তিনি আযান ও ইক্বামাত দেন অথবা এক ব্যক্তিকে নির্দেশ করলে সে আযান ও ইক্বামাত দিলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে মাগরিবের তিন রাকআত সলাত আদায় করিলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বলিলেন, সলাত। অতঃপর আমাদেরকে নিয়ে তিনি দুই রাকআত ইশার সলাত আদায় করিলেন। এরপর রাতের খাবার আনতে বলিলেন। বর্ণনাকারী আশআস বলেন, ইলাজ ইবনি আমর, ইবনি উমার [রাদি.] সূত্রে আমার পিতা বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করেছেন। পরবর্তীতে ইবনি উমার [রাদি.]-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সাথে এভাবেই সলাত আদায় করেছি। {১৯৩৩}

সহিহ। তবে তার কথা ঃ “তিনি বলিলেন, সলাত”- এটি শায। মাহফূয হচ্ছে ঃ “অতঃপর ইক্বামাত দিলেন।” যেমন পূর্বের ১৯২৭ ও ১৯২৮ নং হাদিসদ্বয় রয়েছে। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩৪. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইশা ও মাগরিবের সলাতকে মুযদালিফায় একত্রে আদায় করা এবং পরের দিন ফাজ্‌রের সলাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করে নেয়া, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এই দুই সলাত ছাড়া কোন সলাত ওয়াক্তের পূর্বে আদায় করিতে দেখিনি। {১৯৩৪}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩৫. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মুযদালিফায় রাত যাপনের পর সকালে কুযাহ পাহাড়ে অবস্থান করেন এবং বলিলেনঃ এটি কুযাহ এবং এটাই অবস্থানস্থল। মুযদালিফার গোটা এলাকাই অবস্থানের স্থান। [তারপর মিনায় এসে বলিলেন] আমি এ স্থানে কুরবানী করেছি। মিনার পুরো এলাকাই কুরবানী স্থান। সুতরাং তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে কুরবানী করো। {১৯৩৫}

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৯৩৬.জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আমি আরাফাহ্‌র এ স্থানে অবস্থান করেছি। কিন্তু পুরো আরাফাহই অবস্থানের স্থান। আর আমি মুযদালিফার এ স্থানে অবস্থান করেছি। তবে মুযদালিফার পুরো এলাকাটিই অবস্থান স্থল। আমি মিনার এ স্থানে কুরবানী করেছি। মিনার পুরো এলাকাই কুরবানীর স্থান। কাজেই তোমরা তোমাদের নিজ নিজ অবস্থানে কুরবানী করো। {১৯৩৬}

সহিহ। এটি গত হয়েছে [হা/১৯০৭ ও ১৯০৮]। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৩৭. আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] আমাকে বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ আরাফাহ্‌র পুরো এলাকাই অবস্থানের জায়গা। মিনার সম্পূর্ণ এলাকা কুরবানীর স্থান এবং মুযদালিফার বিস্তৃত এলাকা অবস্থানের স্থান এবং মক্কার প্রতিটি অলি-গলি চলাচলের পথ এবং কুরবানীর স্থান। {১৯৩৭}

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

১৯৩৮. . আমর ইবনি মায়মূন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] বলিয়াছেন, জাহিলী যুগের লোকেরা [মুযদালিফা থেকে] সূর্যোদয়ের পূর্বে রওয়ানা হতো না। কিন্তু নাবী [সাঃআঃ] তাহাদের বিপরীত করেছেন। তিনি সূর্য উঠার পূর্বেই রওয়ানা করেছেন। {১৯৩৮}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ মুযদালিফা থেকে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করা

১৯৩৯. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবু ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের যেসব দুর্বল লোককে মুযদালিফার রাতে আগেই প্রেরণ করেছিলেন, আমিও তাহাদের মধ্যে ছিলাম। {১৯৩৯}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বনী আবদুল মুত্তালিবের অল্প বয়স্কদেরকে মুযদালিফার রাতে গাধার পিঠে চড়িয়ে আগেভাগেই [মিনায়] পাঠান এবং তিনি আমাদের উরুতে হালকা আঘাত করে বলেনঃ হে আমার প্রিয় সন্তান! সূর্যোদয়ের পূর্বে তোমরা জামরায় কংকর মারবে না। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল-লাতহু শব্দের অর্থ হচ্ছে মৃদু আঘাত করা। {১৯৪০}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর পরিবারের দুর্বল লোকদেরকে রাতের অন্ধকারেই মিনায় প্রেরণ করেন এবং তাহাদেরকে নির্দেশ দেন, তারা যেন সূর্যোদয়ের পূর্বেই জামরায় কংকর নিক্ষেপ না করে। {১৯৪১}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪২. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] কুরবানীর রাতেই উম্মু সালামাহ [রাদি.]-কে মিনায় প্রেরণ করেন এবং তিনি ফাজ্‌রের পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর তিনি [বায়তুল্লাহ] যিয়ারাতে গিয়ে তাওয়াফে ইফাদা সম্পন্ন করেন। আয়িশাহ [রাদি.] বলেন, ঐ দিনটি ছিল এমন দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেদিন তার কাছে অবস্থান করবেন। {১৯৪২}

{১৯৪২} বায়হাক্বী। সানাদে যাহ্‌হাক বিন উসমান সম্পর্কে হাফিয আফ-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন ঃ সত্যবাদী তবে সন্দেহভাজন। ইবনিল কাইয়িম বলেন ঃ হাদিসটি মুনকার। অনুরূপ বলিয়াছেন ঈমাম আহমাদ ও অন্যরা। ঈমাম যাহাবী তাক যুআফা ওয়াল মাতরুকীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৪৩. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জামরাতুল আকাবায় কংকর মেরেছেন। বর্ণনাকারী বলিলেন, আমরা রাতেই জামরায় কংকর মেরেছি। আসমা [রাদি.] বলিলেন, আমরা রসূলুল্লাহর [সাঃআঃ] সময়ে এরূপ করেছি। {১৯৪৩}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুযদালিফা হইতে শান্তভাবে রওয়ানা হলেন এবং লোকদেরকে ছোট কংকর মারার নির্দেশ দিলেন। তিনি দ্রুত গতিতে মুহাসসির উপত্যকা অতিক্রম করেন। {১৯৪৪}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৬৮ঃ বড় হাজ্জের দিন

১৯৪৫. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [জিলহাজ্জের ১০ তারিখ] নহরের দিন তিনটি জামরার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করেন ঃ এটি কোন দিন? লোকেরা বলিল, আজ কুরবানীর দিন। তিনি বলিলেনঃ আজ হাজ্জের বড় দিন। {১৯৪৫}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪৬. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আবু বকর [রাদি.] নহরের দিন আমাকে এরূপ ঘোষণা দিতে পাঠালেন যে, এ বছরের পর আর কোন মুশরিক হাজ্জ করিতে পারবে না এবং কেউ উলঙ্গ হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করিতে পারবে না। আর এই কুরবানীর দিনই হচ্ছে হাজ্জে আকবার এবং হাজ্জে আকবার হল হাজ্জ। {১৯৪৬}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬৯ঃ হারাম [সম্মানিত] মাসসমূহ

১৯৪৭. আবু বাকরাহ হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] তাহাঁর বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলেনঃ মহান আল্লাহ যেদিন আকাশসমূহ এবং পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, সেদিন থেকে কালচক্র একইভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বার মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এ চারটি মাসের মধ্যে যুল্‌-কাদাহ, যুল-হিজ্জা ও মুহাররম এ তিনটি মাস পরপর রয়েছে। চতুর্থ মাসটি হলো রজবে মুদার, যা জুমাদা ও শাবানের মধ্যবর্তী মাস। {১৯৪৭}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৪৮. আবু বাকরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] সূত্রে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যদিও পূর্বের হাদিসে ইবনি আবু বাকরাহ বলা হয়েছে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু এ হাদিসে ইবনি আওন তার নাম উল্লেখ করেছেন আবদুর রহমান ইবনি আবু বাকরাহ। {১৯৪৮}

{১৯৪৮} ডক্টর সাইয়্যিদ মুহাম্মাদ সাইয়্যিদ বলেন ঃ এর সনদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-৭০ঃ যে ব্যক্তি [নয় তারিখে] আরাফাহ্‌য় উপস্থিত হইতে পারেনি

১৯৪৯. আবদুর রহমান ইবনি ইয়ামুর আদ-দীলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর নিকট এমন সময় এলাম যখন তিনি আরাফাহ্‌য় ছিলেন। এ সময় নাজ্‌দ এলাকার কতিপয় লোক বা একদল লোক এলো। তারা তাহাদের একজনকে নির্দেশ দিলে সে উচ্চস্বরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলো, হাজ্জ কেমন? এক ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়া হলে সেও উচ্চস্বরে বললো, হাজ্জ-হাজ্জ হচ্ছে [নয় তারিখে] আরাফাহ্‌র ময়দানে উপস্থিত হওয়া। যে ব্যক্তি মুযদালিফার রাতে ফাজ্‌রের সলাতের ওয়াক্ত হওয়ার আগে আরাফাহ্‌য় উপস্থিত হইতে পেরেছে সে তার হাজ্জকে পূর্ণ করেছে। মিনায় তিন দিন অবস্থান করিতে হয়। কেউ সেখানে দুই দিনে কাজ সমাপ্ত করিতে চাইলে করিতে পারে, এতে দোষ নেই। আর কেউ বিলম্ব করিতে চাইলে করিতে পারে, এতেও দোষ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে তাহাঁর পেছনে সওয়ারীর উপর বসালেন এবং উক্ত কথাগুলো ঘোষণা দিতে থাকলো। ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মিহরান সুফিয়ান হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি আল-হাজ্জ আল-হাজ্জ শব্দটি দুবার উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল কাত্তান সুফিয়ান হইতে আল-হাজ্জ শব্দটি শুধু একবার উচ্চারণ করেছেন। {১৯৪৯}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৫০. উরওয়াহ ইবনি মুদাররিস আত্‌-তায়ী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মুযদালিফায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তায়ী পাহাড় থেকে আগমন করেছি। আমার সওয়ারী ক্লান্ত হয়ে পড়েছে এবং আমি নিজেও ক্লান্ত। আল্লাহর শপথ! চলার পথে আমি যে পাহাড়ই পেয়েছি, তার উপর ক্ষণিক অবস্থান করেছি। আমার হাজ্জের কিছু অবশিষ্ট আছে কি? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের সাথে [কুরবানীর দিন] এ স্থানে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেছে এবং এর পূর্বে রাতে বা দিনে আরাফাহ্‌য় উপস্থিত হয়েছে, তার হাজ্জ পরিপূর্ণ হয়েছে এবং সে তার অবাঞ্ছিত জিনিসগুলো দূর করেছে। {১৯৫০}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭১ঃ মিনায় অবতরণ

১৯৫১. আবদুর রহমান ইবনি মুয়ায [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে নাবী [সাঃআঃ]-এর জনৈক সাহাবীর হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] মিনাতে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন এবং তাহাদের অবস্থানস্থল নির্ধারণ করে দিলেন। তিনি ক্বিবলাহ্‌র ডানদিকে ইঙ্গিত করে বলিলেনঃ এখানে মুহাজিরগণ অবস্থান করিবে এবং ক্বিবলাহ্‌র বামদিকে ইঙ্গিত করে বলিলেনঃ এখানে আনসারগণ অবস্থান করিবে। আর অন্যান্য লোক তাহাদের আশেপাশে অবস্থান করিবে। {১৯৫১}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭২ঃ মিনায় কোন দিন খুত্ববাহ দিতে হইবে?

১৯৫২.ইবনি আবু নাজীহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি তাহাঁর পিতা হইতে বনী বাক্‌রের দুই ব্যক্তি সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তারা বলিয়াছেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যের দিন [১২ তারিখ] খুত্ববাহ দিতে দেখেছি। এ সময় আমরা তাহাঁর সওয়ারীর নিকটেই ছিলাম। মিনাতে এটাই ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পেশকৃত খুত্ববাহ। {১৯৫২}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৫৩. সাররা বিনতু নাবহান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি জাহিলী যুগে প্রতীমা ঘরের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আইয়্যামে তাশরীকের দ্বিতীয় দিন আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বলিলেনঃ আজ কোন দিন? আমরা বলিলাম, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল অধিক অবগত। তিনি বলিলেনঃ এটা কি আইয়্যামে তাশরীকের দিন নয়?

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অনুরূপভাবে আবু হাররাহ আর-রাক্বাশীর চাচাও বর্ণনা করেছেন যে, তিনি [সাঃআঃ] আইয়্যামে তাশরীকের মাঝের দিন খুত্ববাহ দিয়েছেন। {১৯৫৩}

{১৯৫৩} ইবনি খুযাইমাহ। সানাদে রবীআহ বিন আবদুর রহমান মাজহুল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৩ঃ যিনি বলেন তিনি [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন খুত্ববাহ দিয়েছেন

১৯৫৪. আল-হিরমাস ইবনি যিয়াদ আল-বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ]-কে কুরবানীর দিন মিনায় তাহাঁর আল-আদবা নামক উষ্ট্রীর উপর চড়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। {১৯৫৪}

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৯৫৫. আবু উমামাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে কুরবানীর দিন মিনায় খুত্ববাহ দিতে শুনিয়াছি। {১৯৫৫}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৭৪ঃ কুরবানীর দিন কখন খুত্ববাহ প্রদান করিবে?

১৯৫৬. রাফি ইবনি আমর আল-মুযানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মিনাতে দ্বি-প্রহরে শাহ্বা নামক খচ্চরে উপবিষ্ট হয়ে লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখেছি। এ সময় আলী [রাদি.] তাহাঁর ভাষণের পুনরাবৃত্তি করে শুনাচ্ছিলেন। তখন লোকদের কেউ দাঁড়ানো এবং কেউ বসা অবস্থায় ছিল। {১৯৫৬}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৫ঃ মিনার খুত্ববাহ্‌য় ঈমাম কি আলোচনা করবেন

১৯৫৭. আবদুর রহমান ইবনি মুয়ায আত-তাইমী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনায় আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। এ সময় আমরা ছিলাম উৎকর্ণ, যাতে তার বক্তব্য [ভাল করে] শুনতে পাই। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থানেই ছিলাম। তিনি তাহাদের হাজ্জের যাবতীয় বিধি-বিধান শিখালেন, এমনকি কংকর মারা সম্পর্কেও। তিনি তাহাঁর উভয় শাহাদাত আঙ্গুল নিজের দু কানের মধ্যে রেখে বলিলেনঃ কংকরগুলো খুবই ক্ষুদ্র হওয়া চাই। তারপর মুহাজিরদেরকে নির্দেশ দিলে তারা মাসজিদের পেছনে গিয়ে অবস্থান করিলেন। অতঃপর অন্যান্য লোক তাহাদের অবস্থান গ্রহণ করে। {১৯৫৭}

সহিহ। সংক্ষিপ্তভাবে এটি গত হয়েছে। মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৬ঃ মিনার রাতগুলো মাক্কাহ্‌য় যাপন করা

১৯৫৮. আবদুর রহমান ইবনি ফাররূখ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ইবনি উমার [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করেন, আমরা লোকদের মালপত্র ক্রয় করি এবং তা সংরক্ষণের জন্য আমাদের কেউ মক্কায় গিয়ে রাত যাপন করে। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনাতেই রাত যাপন করিতেন এবং দিনেও সেখানেই থাকতেন। {১৯৫৮}

{১৯৫৮} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। সানাদে আবু হারীয় সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ মাজহুল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৫৯. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল-আব্বাস [রাদি.] হাজ্জীদেরকে পানি পান করানোর জন্য মিনায় অবস্থানের রাতগুলোতে মক্কায় অবস্থান করার অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাহাকে অনুমতি দেন। {১৯৫৯}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৭ঃ মিনাতে সলাত আদায়

১৯৬০. আবদুর রহমান ইবনি ইয়াযীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসমান [রাদি.] মিনাতে চার রাকআত সলাত আদায় করেছেন [কসর করেননি]। আবদুল্লাহ বলেন, আমি নাবী [সাঃআঃ] এর সাথে এবং আবু বাক্‌র ও উমারের [রাদি.] সাথে দুই রাকআত সলাত আদায় করেছি। হাফস ইবনি গিয়াছের বর্ণনায় রয়েছে ঃ এবং উসমানের [রাদি.] খিলাফাতের শুরুতে তার সাথেও দুই রাকআত সলাত আদায় করেছি। অতঃপর উসমান [রাদি.] চার রাকআত পড়েছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়্যাহ হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে ঃ পরে এ নিয়ে মতভেদ পরিলক্ষিত হয়। আমি নিজের জন্য চার রাকআতের চেয়ে দুই রাকআত মাক্ববুল সলাতই পছন্দ করি । আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুআবিয়্যাহ ইবনি কুররাহ তাহাঁর শায়খদের সূত্রে আমাকে বলিয়াছেন, পরে আবদুল্লাহ [রাদি.] উসমান [রাদি.] এর সাথে চার রাকআতই পড়েছেন। কেউ তাহাকে জিজ্ঞেস করলো, উসমান [রাদি.] চার রাকআত সলাত আদায়ের কারণে আপনি তার সমালোচনা করেছেন। অথচ দেখছি আপনিও চার রাকআত আদায় করছেন। তখন তিনি বলিলেন, মতপার্থক্য করা মন্দ কাজ। {১৯৬০}

মুজদালিফা মিনা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৬১. আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উসমান [রাদি.] মিনাতে চার রাকআত সলাত আদায় করেছেন। কারণ তিনি হজ্জের পর সেখানে কিছুদিন অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। {১৯৬১}

{১৯৬১} এর সনদ মুনকাতি হওয়ার কারণে যয়ীফ। আল্লামা মুনযিরী বলেন ঃ মুনকাতি। যুহরী উসমানকে পাননি। এজন্য হাফিয ইবনি হাজার ফাতহুল বারী গ্রন্থে এটিকে মুরসাল বলিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৬২. ইবরাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসমান [রাদি.] সলাত চার রাকআত পড়েছেন। কারণ তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে বাসস্থান বানিয়েছিলেন। {১৯৬২}

{১৯৬২} সানাদে ইবরাহীম ও উসমানের মাঝে ইনকিতা হয়েছে। এছাড়া সনদের মুগীরাহ হলো ইবনি মুকসিম। তিনি একজন মুদাল্লিস এবং তিনি এটি আন আন শব্দে বর্ণনা করেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৬৩. আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসমান [রাদি.] যখন তাহাদের এলাকায় কিছু সম্পদ পেলেন তখন তিনি সেখানে কিছুদিন অবস্থানের ইচ্ছা করিলেন। সেজন্যই তিনি সলাতে চার রাকআত আদায় করেন। অতঃপর [উমাইয়্যাহ] শাসকগণও সেখানে অনুরূপ করেছেন। {১৯৬৩}

{১৯৬৩} পূর্বেরটির অনুরূপ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

১৯৬৪. আয-যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] আরববাসীদের অধিক উপস্থিতির কারণেই মিনাতে পূর্ণ চার রাকআত সলাত আদায় করেছেন। যাতে তারা জানতে পারে যে, [আসলে] সলাত চার রাকআতই। {১৯৬৪}

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭৮ঃ মাক্কাহবাসীর জন্য সলাত ক্বাসর করার অনুমতি প্রসঙ্গে

১৯৬৫. হারিসাহ ইবনি ওয়াহব আল-খুযাঈ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তার মা ছিলেন উমার [রাদি.] এর স্ত্রী। তার গর্ভে উবাইদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর জন্ম হয়। তিনি বলেন, আমি রাসূলু্ল্লাহ্‌র [সাঃআঃ] সাথে মিনায় সলাত আদায় করেছি। সে বছর লোকজনের সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অধিক ছিলো। সুতরাং বিদায় হাজ্জের দিন তিনি আমাদেরকে ক্বসর সলাত পড়িয়েছেন। {১৯৬৫}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৭৯ঃ জামরাতে কংকর মারা

১৯৬৬. সুলাইমান ইবনি আমর ইবনিল আহওয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার মাতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সওয়ারী অবস্থায় উপত্যকার কেন্দ্রস্থল থেকে কংকর মারতে দেখেছি। প্রত্যেক কংকর মারার সময় তিনি তাকবীর বলিয়াছেন। এ সময় এক লোক তাঁকে পেছন থেকে আড়াল করে রেখেছিলো। আমি লোকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে লোকেরা বললো, তিনি আল-ফাদল ইবনি আব্বাস [রাদি.]। লোকজনের ভীড় হচ্ছিল। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেনঃ হে লোকেরা! তোমরা [বড়] কংকর নিক্ষেপ করে একে অপরকে হত্যা করো। তোমরা জামরায় কংকর নিক্ষেপ করার সময় ছো্ট পাথর কুচি নিক্ষেপ করিবে। {১৯৬৬}

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১৯৬৭. সুলাইমান ইবনি আমর ইবনিল আহওয়াস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার মাতার হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জামরাতে আকাবার নিকট বাহনে সওয়ার অবস্থায় দেখেছি এবং দেখেছি তাহাঁর আঙ্গুলের ফাঁকে কংকর রয়েছে। তিনি নিক্ষেপ করলে লোকেরাও নিক্ষেপ করলো। {১৯৬৭}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৬৮. ইয়াযীদ ইবনি আবু যিয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উক্ত সানাদে পূর্বোক্ত হাদিস বর্ণনা করেছেন। এতে আরো রয়েছে ঃ তিনি [কংকর মেরে] সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেননি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৬৯

ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ. তিনি কংকর মারার জন্য [কুরবানীর পরের] তিন দিন জামরাতসমূহে পায়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করিতেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, নাবী [সাঃআঃ] ও এরূপ করিতেন। {১৯৬৯} হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে তাহাঁর বাহনে সওয়ার অবস্থায় কংকর মারতে দেখেছি। এ সময় তিনি বলছিলেন ঃ তোমরা হাজ্জের নিয়ম-পদ্ধতি শিখে নাও। তিনি আরো বলেনঃ আমি অবহিত নই আমার এই হাজ্জের পর আবার হাজ্জ করার সুযোগ পাবো কি না। {১৯৭০}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরবানীর দিন আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দ্বি-প্রহরে তাহাঁর বাহনে আরোহিত অবস্থায় কংকর নিক্ষেপ করিতে দেখেছি। আর এর পরের দিনগুলোতে তিনি সূর্য ঢলে পড়ার পর কংকর নিক্ষেপ করেছেন। {১৯৭১}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭২. ওয়াবারাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার [রাদি.]-কে জামরায় কখন কংকর নিক্ষেপ করবো তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তোমার ঈমাম যখন নিক্ষেপ করেন তখন তুমিও নিক্ষেপ করিবে। আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে তিনি বলেন, সূর্য ঢলা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতাম। সুতরাং সূর্য ঢলে পড়লেই আমরা কংকর নিক্ষেপ করতাম। {১৯৭২}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৩. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [কুরবানীর দিন] যুহরের সলাত আদায় করে দিনের শেষভাগে ফরয তাওয়াফ সম্পন্ন করেন। এরপর মিনায় আসেন এবং সেখানে তাশরীকের দিন রাতগুলো অতিবাহিত করেন। তিনি সূর্য ঢলার পর জামরায় কংকর মারেন। তিনি প্রত্যেক জামরায় সাতটি কংকর মারেন এবং প্রত্যেক কংকর মারার সময় তাকবীর বলেন। তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় জামরায় দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে বিনয়ের সাথে দুআ করেন। অবশ্য তৃতীয় জামরাতে কংকর মারার পর সেখানে অবস্থান করেননি। {১৯৭৩}

সহিহ। তার “যুহরের সলাত আদায় করে” কথাটি বাদে। কেননা এটি মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৪. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, তিনি জামরাতুল কুবরার নিকটবর্তী হয়ে বায়তুল্লাহকে তার বামদিকে এবং মিনাকে তার ডান দিকে রেখে জামরাতে সাতটি কংকর মারলেন এবং বলিলেনঃ যাঁর উপর সুরাহ আল-বাক্বারাহ অবতীর্ণ হয়েছে তিনি এভাবেই [কংকর] নিক্ষেপ করেছেন। {১৯৭৪}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৫. আবুল বাদ্দাহ ইবনি আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উটের রাখালদেরকে মিনার বাইরে রাত যাপনের অনুমতি দেন। তারা কেবল কুরবানীর দিন কংকর মারবে এবং পরের দুদিন ও প্রত্যাবর্তনের দিন [তের তারিখ] কংকর নিক্ষেপ করিবে। {১৯৭৫}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৬. আবুল বাদ্দাহ ইবনি আদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে তার পিতার হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] উটের রাখালদেরকে একদিন বাদ দিয়ে একদিন [অর্থাৎ ১১ ও ১২ তারিখ] কংকর মারার বিশেষ অনুমতি দিয়েছেন। {১৯৭৬}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৭. আবু মিজলায [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে [জামরাতে] কয়টি কংকর মারতে হইবে তা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি অবহিত নই যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছয়টি কংকর মেরেছেন নাকি সাতটি। {১৯৭৭}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৭৮. আয়িশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ কোন ব্যাক্তি জামরায় আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করার পর স্ত্রী সহবাস ছাড়া তার জন্য সবই হালাল হয়ে যায়।

ঈমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদিসটি যয়ীফ। কারণ যুহরীর সাথে হাজ্জাজের সাক্ষাৎ হয়নি এবং তার থেকে তিনি হাদিসও শুনেননি। {১৯৭৮}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ–৮০ঃ মাথার চুল কামানো এবং ছোট করা সম্পর্কে

১৯৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুআ করিলেন ঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? তিনি বলিলেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! চুল খাটোকারীদের? এবার তিনি বলিলেনঃ এবং চুল খাটোকারীদের প্রতিও। {১৯৭৯}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বিদায় হাজ্জে তাহাঁর মাথা চুল মুণ্ডন করেছিলেন। {১৯৮০}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কুরবানীর দিন জামরাতুল আকাবায় কংকর মেরে মিনায় তাহাঁর অবস্থান স্থলে ফিরে এসে কুরবানীর পশু আনিয়ে তা যাবাহ করিলেন। পরে নাপিত ডাকিয়ে প্রথমে তাহাঁর মাথার ডান দিকের চুল মুড়ালেন এবং তিনি উপস্থিত লোকদেরকে এক বা দুইগাছি করে চুল বিতরণ করিলেন। তারপর মাথার বাম দিকের চুল মুড়ালেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, এখানে আবু ত্বালহা আছে কি না? অবশিষ্ট চুলগুলো তিনি আবু ত্বালহা [রাদি.]-কে দিলেন। {১৯৮১}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮২. হিশাম ইবনি হাসসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত সানাদে পূর্বের অনুরূপ হাদিস বর্ণিত। তাতে আরো আছে, তিনি [সাঃআঃ] নাপিতকে বলিলেনঃ ডানদিক থেকে শুরু করো এবং তা মুণ্ডন করো।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মিনাতে অবস্থানকালে নাবী [সাঃআঃ]-কে [হাজ্জের] বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি জবাবে বলিতে থাকেন ঃ কোন দোষ নেই। এক ব্যাক্তি জিজ্ঞেস করলো, আমি কুরবানী করার পূর্বেই মাথা মুড়িয়েছি। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এখন কুরবানী করো, কোনো দোষ নেই। লোকটি বললো, সন্ধ্যা হয়ে গেছে অথচ এখনো কংকর নিক্ষেপ করিনি। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেনঃ এখন কংকর নিক্ষেপ করো, কোনো দোষ নেই। {১৯৮৩}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮৪. ইবনি আব্বাস রাদি. হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নারীদের মাথার চুল মুড়ানোর প্রয়োজন নেই। বরং তারা চুল কাটবে। {১৯৮৪}

সহিহ, পরবর্তী হাদিস দ্বারা। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯৮৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ নারীদের জন্য মাথা কামানোর দরকার নেই, তাহাদেরকে চুল ছাঁটতে হইবে। {১৯৮৫}

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply