আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা

আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা

আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ১১, অধ্যায়ঃ ৫

  • অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৫. প্রথম অনুচ্ছেদ

২৬০৪.হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ হইতে বর্ণীতঃ

তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, একবার উসামাহ্ ইবনি যায়দকে জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ বিদায় হজে আরাফার ময়দান হইতে ফিরে আসার সময় কিভাবে চলেছিলেন? জবাবে তিনি [উরওয়াহ্] বললেন, তিনি [সাঃআঃ] স্বাভাবিক গতিতে চলতেন এবং যখনই খোলা পথ পেতেন দ্রুতবেগে চলতেন।

[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৬৬, মুসলিম ১২৮৬, আবু দাউদ ১৯২৩, নাসায়ী ৩০২৩, ইবনি মাজাহ ৩০১৭, আহমাদ ২১৮৩৩, সহীহ ইবনি খুযায়মাহ্ ২৮৪৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৮৬। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৫. আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি একবার আরাফার দিন নবী সাঃআঃ-এর সাথে আরাফার ময়দান হইতে ফিরে এসেছেন। এমন সময় নবী সাঃআঃ পেছন হইতে জোরে জোরে উট তাড়ানোর হাঁক ও উটকে পিটানোর শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি [সাঃআঃ] নিজের হাতের চাবুক দিয়ে পেছনে তাদের দিকে ইশারা করে বললেন, হে লোকেরা! তোমরা প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলো, কারণ উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়াই শুধু নেক কাজ নয়

। [বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৭১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৮৩। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৬. {ইবনি আব্বাস [রাদি.]] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] আরাফার ময়দান হইতে মুযদালিফা পর্যন্ত ফিরে আসার সময় নবী সাঃআঃ-এর পেছনে বসেছিলেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] মুযদালিফা হইতে মিনায় আসা পর্যন্ত [আমার বড় ভাই] ফযল ইবনি আব্বাসকেও তাহাঁর পেছনে বসিয়েছিলেন। তাঁরা উভয়ে বলেছেন, নবী সাঃআঃ জামারাতুল আক্বাবায় কংকর মারা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করেছিলেন।

[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৫৪৪, মুসলিম ১২৮১। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৭. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ মাগরিব ও ইশার সালাত মুযদালিফায় একত্রে আদায় করিয়াছেন। প্রত্যেক সলাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ইক্বামাত দিয়েছেন এবং এ দুই সলাতের মাঝে কোন নফল নামাজ আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করাননি।

[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৭৩, নাসায়ী ৩০২৮, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯১৪। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৮. আব্দুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-কে কক্ষনো মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সালাত একত্রে আদায় করা ছাড়া আর অন্য কোন সালাত একত্রে আদায় করিতে দেখিনি। আর সেদিনই তিনি [সাঃআঃ] ফজরের নামাজও [কিছু] সময়ের আগে আদায় করেছিলেন।

[বোখারী ও মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৮২, মুসলিম ১২৮৯, আহমাদ ৩৬৩৭, ইবনি আবী শায়বাহ্ ৮২৪০। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬০৯.ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ নিজের পরিবারের যেসব দুর্বল [শিশু ও মহিলা]-দেরকে মুযদালিফার রাতে সময়ের আগেই [মিনায়] পাঠিয়েছিলেন আমিও তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলাম। [বোখারী ও মুসলিম]{১}

{১} সহীহ : বোখারী ১৬৭৮, মুসলিম ১২৯৩, আবু দাউদ ১৯৩৯, নাসায়ী ৩০৩২, আহমাদ ১৯২০, ইবনি মাজাহ ৩০২৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৫০৮, ইরওয়া ১০৭১। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬১০. ফযল ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নবী সাঃআঃ-এর উটের পেছনে বসাছিলেন। তিনি [সাঃআঃ] আরাফার সন্ধ্যায় ও মুযদালিফায় ভোরে লোকেদের উদ্দেশে বলেছেন, তোমরা [অবশ্যই] প্রশান্তির সাথে ধীরে সুস্থে চলবে। তিনি [সাঃআঃ] নিজেও নিজের উষ্ট্রীকে মিনার অন্তর্গত মুহাস্‌সির নামক স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত সংযত রেখেছিলেন। এখানে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তোমরা আঙ্গুল দিয়ে ধরা যায় এমন ছোট পাথর জামারাতে মারার জন্য লও। ফযল বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ জামারায় পাথর মারা পর্যন্ত সব সময় তালবিয়াহ্ পড়ছিলেন।

[মুসলিম]{১}, {১} সহীহ : মুসলিম ১২৮২, আহমাদ ১৮২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৫৩৩। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬১১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ মুযদালিফা হইতে প্রশান্তির সাথে ধীরস্থিরভাবে রওয়ানা হলেন, লোকজনকেও শান্তশিষ্টভাবে রওয়ানা হওয়ার জন্য আদেশ করিলেন। তবে মুহাস্‌সির উপত্যকায় পৌঁছার পর উটকে কিছুটা দৌড়ালেন এবং তাদেরকে জামারায় আঙুল দিয়ে নিক্ষেপ করার মতো পাথর মারতে নির্দেশ দিলেন। এমন সময় তিনি [সাঃআঃ] বললেন, সম্ভবত এ বছরের পর আমি আর তোমাদেরকে দেখিতে পাবো না। [গ্রন্থকার লিখেছেন, বোখারী ও মুসলিমে এ হাদিসটি পাইনি, তবে তিরমিজি কিছু আগ-পিছ করে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন]{১}

{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬১১, নাসায়ী ৩০২১, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৫২৪। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৫. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

২৬১২. মুহাম্মাদ ইবনি ক্বায়স ইবনি মাখরামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ ভাষণ দানকালে বললেন, জাহিলী যুগের লোকেরা যখন সূর্যাস্তের পূর্বে মানুষের চেহারায় মানুষের পাগড়ীর মতো দেখা যেত তখন আরাফার ময়দান হইতে রওয়ানা হতো। আর সূর্যোদয়ের পর মানুষের চেহারায় ওইভাবে মানুষের পাগড়ীর মতো যখন দেখাতো তখন মুযদালিফা হইতে রওয়ানা হতো। আর আমরা সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত আরাফার ময়দান হইতে রওয়ানা হবো না এবং সূর্যোদয়ের আগে মুযদালিফা হইতে রওয়ানা হবো। আমাদের নিয়ম-নীতি মূর্তিপূজক ও শির্কপন্থীদের নিয়ম-নীতির বিপরীত।

[বায়হাক্বী]{১}, {১} জইফ : সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫/১২৫, মুসতাদ্রাক লিল হাকিম ৩/৫২৩। কারণ সানাদটি মুরসাল। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৬১৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ মুযদালিফার রাতে আমাদেরকে আবদুল মুত্ত্বালিব বংশীয় বালকদেরকে গাধার উপর চড়িয়ে দিয়ে তাহাঁর আগেই মিনার দিকে রওয়ানা দিলেন। তখন আমাদের উরু চাপড়িয়ে বললেন, আমার প্রিয় সন্তানেরা! তোমরা সূর্যোদয়ের পূর্বে জামারায় পাথর নিক্ষেপ করো না। [আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবনি মাজাহ]{১}

{১} সহীহ : আবু দাউদ ১৯৪০, নাসায়ী ৩০৬৪, ইবনি মাজাহ ৩০২৫, ইবনি আবী শায়বাহ্ ১৩৭৫৫, আহমাদ ০৮২, সহীহ ইবনি হিব্বান ৩৮৬৯, ইরওয়া ১০৭৬। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬১৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ কুরবানীর [আগের] রাতে উম্মু সালামাহ [রাদি.]-কে [মিনায়] পাঠালেন। তিনি {উম্মু সালামাহ [রাদি.]] ভোর হবার আগেই পাথর মারলেন। তারপর মাক্কায় পৌঁছে তাওয়াফে যিয়ারত [তাওয়াফে ইফাযাহ্] করিলেন। আর সেদিনটি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর তাহাঁর ঘরে থাকারই দিন ছিল।

[আবু দাউদ]{১}, {১} জইফ : আবু দাউদ ১৯৪২, দারাকুত্বনী ২৬৮৯, মুসতাদরাক লিল হাকিম ১৭২৩, সুনানুল কুবরা লিল হাকিম ৯৫৭১, ইরওয়া ১০৭৭। কারণ এর সনদে যহ্হাক ইবনি উসমান একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

২৬১৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুক্বীম [মাক্কাবাসী] অথবা উমরাহকারী [মক্কার বাইরে থেকে আগন্তুক] হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ না করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ [লাব্বায়কা] পাঠ করিতে থাকিবে।

[আবু দাউদ]{১}. {১} জইফ : আবু দাউদ ১৮১৭, ইরওয়া ১০৯৯। কারণ এর সনদে ইবনি আবী লায়লা স্মৃতিশক্তিগত ত্রুটিজনিত কারণে একজন দুর্বল রাবী। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ৫. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

২৬১৬. য়াকূব ইবনি আসিম ইবনি উরওয়াহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি শারীদ [ইবনি সুওয়াইদ]-কে বলিতে শুনেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে [আরাফাহ্ হইতে] রওয়ানা হয়েছি। মুযদালিফায় না পৌঁছা পর্যন্ত তাহাঁর [সাঃআঃ -এর] পা কোথাও মাটি স্পর্শ করেনি।

[আবু দাউদ]{১}, {১} সানাদ সহীহ : আহমাদ ১৯৪৬৫। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৬১৭. ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে সালিম [রাহিমাহুল্লাহ] [আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.]-এর পুত্র] বলেছেন, যে বছর হাজ্জাজ ইবনি ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনুয্ যুবায়র-এর বিরুদ্ধে সৈন্য-সামন্ত নিয়ে মাক্কায় পৌঁছেন, [আমার পিতা] আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞেস করিলেন, আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে আমরা হজ্জের কাজ কিভাবে সম্পন্ন করবো? সালিমই [তাৎক্ষণিক] বলেন, আপনি যদি সুন্নাতের অনুসারী হয়ে করিতে চান, তাহলে আরাফার দিন সকালে শীঘ্র সালাত আদায় করিবেন [যুহর ও আসর এক সাথে তথা যুহরের প্রথম সময়ে]। তখন [আমার পিতা] আব্দুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বললেন, সে [সালিম] সঠিক বলেছে, কেননা সাহাবীগণ সুন্নাত অনুসারে যুহর ও আসর একত্রে সালাত আদায় করিতেন।

রাবী ইবনি শিহাব বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ কি এটা করিয়াছেন [অর্থাৎ- যুহর ও আসর একত্রে আদায় করিয়াছেন]? তখন সালিম [রাহিমাহুল্লাহ] বললেন, তাঁরা কি রসূলের সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছুর অনুসরণ করিতেন? অর্থাৎ- করিতেন না।

[বোখারী]{১}, {১} সহীহ : বোখারী ১৬৬২, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৯৪৫৬। আরাফা ও মুজদালিফায় অবস্থান হতে ফিরে আশা -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply