মুকাতাব ( চুক্তিবদ্ধ দাসের বর্ণনা ) বিষয়ক হাদীস
মুকাতাব ( চুক্তিবদ্ধ দাসের বর্ণনা ) বিষয়ক হাদীস >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৫০, মুকাতাব ( চুক্তিবদ্ধ দাসের বর্ণনা ), অধ্যায়ঃ (১-৫)=৫টি
৫০/১. অধ্যায়ঃ মুকাতাব বা চুক্তির ভিত্তিতে অর্থের কিস্তি প্রসঙ্গে। প্রতি বছর এক কিস্তি করে আদায় করা।
৫০/২. অধ্যায়ঃ মুকাতাবের উপর যে সব শর্তারোপ করা বৈধ এবং আল্লাহর কিতাবে নেই এমন শর্তারোপ করা।
৫০/৩. অধ্যায়ঃ মানুষের নিকট মুকাতাবের সাহায্য চাওয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করা।
৫০/৪. অধ্যায়ঃ মুকাতাবের সমর্থন সাপেক্ষে তাকে বিক্রয় করা।
৫০/৫. অধ্যায়ঃ মুকাতাব যদি (কাউকে) বলে, আমাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিন, আর সে যদি ঐ উদ্দেশে তাকে খরিদ করে।
৫০/১. অধ্যায়ঃ মুকাতাব বা চুক্তির ভিত্তিতে অর্থের কিস্তি প্রসঙ্গে। প্রতি বছর এক কিস্তি করে আদায় করা।
আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “তোমাদের এবং তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদের মধ্যে কেউ তার মুক্তির জন্য চুক্তিপত্র লিখতে চাইলে তাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হও, যদি তোমরা ওদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও এবং আল্লাহ তোমাদের যে সম্পদ দিয়েছেন, তা হইতে তোমরা ওদের দান করিবে”- (আন-নূর ৩২)। রাওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বর্ণনা করেন, আমি আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, যদি আমি জানতে পারি যে, তার (গোলামের) অর্থ-সম্পদ রয়েছে, তবে কি তার সাথে কিতাবের চুক্তি করা আমার জন্য ওয়াজিব হইবে? তিনি বলিলেন, আমি তো ওয়াজিব ছাড়া অন্য কিছু মনে করি না। আমর ইবনু দীনার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ মতামত কি আপনি (পূর্ববর্তী) কারো কাছ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন? তিনি বলিলেন, না। তারপর আতা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, মূসা ইবনু আনাস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাকে অবহিত করিয়াছেন যে, আনাস (রাদি.)-এর কাছে তার ক্রীতদাস সীরীন মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ) হবার আবেদন জানাল। সে বিত্তশালী ছিল। কিন্তু আনাস (রাদি.) তাতে অস্বীকৃতি জানালেন। সীরীন তখন উমর (রাদি.)-এর কাছে বিষয়টি উত্থাপন করিল। উমর (রাদি.) তখন তাকে [আনাস (রাদি.)-কে] বেত্রাঘাত করিলেন এবং নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করিলেন, “তোমরা তাদের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হও, যদি তোমরা তাদের মধ্যে মঙ্গলের সন্ধান পাও”- (আন-নূর ৩৩)।
২৫৬০.আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেছেন, বারীরা (রাদি.) একবার মুকাতাবাতের সাহায্য চাইতে তাহাঁর কাছে আসলেন। প্রতিবছর এক উকিয়া করে পাঁচ বছরে পাঁচ উকিয়া তাকে পরিশোধ করিতে হইবে। তার প্রতি আয়েশা (রাদি.) আগ্রহান্বিত হলেন। তাই তিনি বলিলেন, যদি আমি এককালীন মূল্য পরিশোধ করে দেই তবে কি তোমার মালিক তোমাকে বিক্রি করিবে? তখন আমি তোমাকে মুক্ত করে দিব এবং তোমার ওয়ালার অধিকার আমার হইবে। বারীরা (রাদি.) তার মালিকের কাছে গিয়ে উক্ত প্রস্তাব পেশ করিলেন। কিন্তু তারা বলিল, না; তবে যদি ওয়ালার অধিকার আমাদের হয়। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর খিদমতে গেলাম এবং বিষয়টি তাঁকে বললাম। (রাবী বলেন) তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাঁকে বলিলেন, তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা, ওয়ালা তারই হইবে, যে মুক্ত করিবে। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে বলিলেন, মানুষের কী হল, তারা এমন সব শর্তারোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই ! আল্লাহর কিতাবে নেই এমন শর্ত কেউ আরোপ করলে তা বাতিল বলে গণ্য হইবে। আল্লাহর দেয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।
৫০/২. অধ্যায়ঃ মুকাতাবের উপর যে সব শর্তারোপ করা বৈধ এবং আল্লাহর কিতাবে নেই এমন শর্তারোপ করা।
এ বিষয়ে ইবনু উমর (রাদি.) হইতে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
২৫৬১. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বারীরা (রাদি.) একবার তার মুকাতাবাতের ব্যাপারে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন পর্যন্ত তিনি মুকাতাবাতের অর্থ হইতে কিছুই আদায় করেননি। আয়েশা (রাদি.) তাকে বলিলেন, তুমি তোমার মালিকের কাছে ফিরে যাও। তারা সম্মত হলে আমি তোমার মুকাতাবাতের প্রাপ্য পরিশোধ করে দিব। আর তোমার ওয়ালার (অভিভাবকের) অধিকার আমার হইবে। বারীরা (রাদি.) কথাটি তার মালিকের কাছে পেশ করিলেন। কিন্তু তারা তা অস্বীকার করিল এবং বলিল, তিনি যদি তোমাকে মুক্ত করে সওয়াব পেতে চান, তবে করিতে পারেন। ওয়ালা আমাদেরই থাকবে। আয়েশা (রাদি.) বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে পেশ করলে তিনি বলিলেন, তুমি খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা, যে মুক্ত করিবে, সেই ওয়ালার অধিকারী হইবে। (রাবী বলেন) তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) (সাহাবীগণের সমাবেশে) দাঁড়িয়ে বলিলেন, মানুষের কী হল, এমন সব শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। যে এমন সব শর্তারোপ করিবে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা তার জন্য প্রযোজ্য হইবে না; যদিও সে শতবার শর্তারোপ করে। কেননা, আল্লাহর দেয়া শর্তই সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য।
২৫৬২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.) মুক্ত করার জন্য জনৈকা বাঁদীকে খরিদ করিতে চাইলেন। কিন্তু তার মালিক পক্ষ বলিল, এই শর্তে (আমরা সম্মত) যে, ওয়ালা আমাদেরই থাকবে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, এ শর্তারোপ যেন তোমাকে তা ক্রয় করিতে বিরত না রাখে। কেননা, ওয়ালা তারই জন্য যে মুক্ত করিবে।
৫০/৩. অধ্যায়ঃ মানুষের নিকট মুকাতাবের সাহায্য চাওয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করা।
২৫৬৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বারীরা (রাদি.) এসে বলিলেন, আমি প্রতি বছর এক উকিয়া করে নয় উকিয়া আদায় করার শর্তে কিতাবাতের চুক্তি করেছি। এ ব্যাপারে আপনি আমাকে সাহায্য করুন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তোমার মালিক পক্ষ সম্মত হলে আমি উক্ত পরিমাণ এককালীন দান করে তোমাকে মুক্ত করিতে পারি এবং তোমার ওয়ালা হইবে আমার জন্য। তিনি তার মালিকের কাছে গেলেন, তারা তার এ শর্ত মানতে অস্বীকার করিল। তখন তিনি বলিলেন, বিষয়টি আমি তাদের কাছে উত্থাপন করেছিলাম, কিন্তু ওয়ালা তাদেরই হইবে, এ শর্ত ছাড়া তারা মানতে অসম্মতি প্রকাশ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিষয়টি শুনে এ সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন। আমি ঘটনাটি তাঁকে খুলে বললাম। তখন তিনি বলিলেন, তাকে নিয়ে যাও এবং মুক্ত করে দাও। ওয়ালা তাদের হইবে, এ শর্ত মেনে নাও, (এতে কিছু আসে যায় না।) কেননা, যে মুক্ত করিবে, ওয়ালা তারই হইবে। আয়েশা (রাদি.) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সাহাবীগণের সমাবেশে দাঁড়িয়ে আল্লাহর হামদ ও সানা পাঠ করিলেন আর বলিলেন, তোমাদের কিছু লোকের কী হল? এমন সব শর্ত তারা আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই। এমন কোন শর্ত, যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তা বাতিল বলে গণ্য হইবে; এমনকি সে শর্ত শতবার আরোপ করলেও। কেননা, আল্লাহর হুকুমই যথার্থ এবং আল্লাহর শর্তই নির্ভরযোগ্য। তোমাদের কিছু লোকের কী হল? তারা এমন কথা বলে যে, হে অমুক! তুমি মুক্ত করে দাও, ওয়ালা (অভিভাকত্ব) আমারই থাকবে। অথচ যে মুক্ত করিবে সে-ই ওয়ালার অধিকারী হইবে।
৫০/৪. অধ্যায়ঃ মুকাতাবের সমর্থন সাপেক্ষে তাকে বিক্রয় করা।
আয়েশা (রাদি.) বলেন, ধার্যকৃত অর্থের কিছু অংশও বাকী থাকবে। মুকাতাব ক্রীতদাসরূপেই গণ্য হইবে। যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) বলেন, তার যিম্মায় এক দিরহাম অবশিষ্ট থাকলেও (ক্রীতদাস বলে গণ্য হইবে)। ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, যতক্ষণ তার যিম্মায় কিছু অংশও অবশিষ্ট থাকবে মুকাতাব ক্রীতদাসরূপেই গণ্য হইবে; সে বেঁচে থাকুক বা মারা যাক কিংবা কোন ধরণের অপরাধ করুক।
২৫৬৪. আমরাহ বিনতু আবদুর রহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
বারীরা (রাদি.) একবার উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে সাহায্য চাইতে আসলেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমার মালিক পক্ষ চাইলে আমি তাদের এক সাথেই তোমার মূল্য দিয়ে দিব এবং তোমাকে মুক্ত করে দিব। বারীরা (রাদি.) মালিক পক্ষকে তা বলিলেন, কিন্তু জবাবে তারা বলিল, তোমার ওয়ালা আমাদের থাকবে; এছাড়া আমরা সম্মত নই। (রাবী) মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ধারণা করেন যে, আয়েশা (রাদি.) রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর কাছে তা উত্থাপন করেছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছিলেন, তুমি তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দাও। কেননা, ওয়ালা তারই হইবে, যে মুক্ত করে।
৫০/৫. অধ্যায়ঃ মুকাতাব যদি (কাউকে) বলে, আমাকে ক্রয় করে আযাদ করে দিন, আর সে যদি ঐ উদ্দেশে তাকে খরিদ করে।
২৫৬৫. আবু আয়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে গিয়ে বললাম, আমি উতবা ইবনু আবু লাহাবের ক্রীতদাস ছিলাম। সে মারা গেলে তার ছেলেরা আমার মালিক হল। আর তারা আমাকে ইবনু আবু আমর মাখযূমীর নিকট বিক্রি করেন। ইবনু আবু আমর আমাকে মুক্ত করে দিলেন। কিন্তু উতবার ছেলেরা ওয়ালার শর্তারোপ করিল। তখন আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, মুকাতাব থাকা অবস্থায় বারীরা (রাদি.) একবার তার কাছে এসে বলিলেন, আমাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দিন। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সে বলিল, তারা ওয়ালার শর্তারোপ ব্যতিরেকে আমাকে বিক্রি করিবে না। তিনি বলিলেন, তাহলে এতে আমার প্রয়োজন নেই। নাবী (সাঃআঃ) সে কথা শুনলেন, কিংবা তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছল। তখন তিনি আয়েশা (রাদি.)-এর কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করিলেন। আর আয়েশা (রাদি.) বারীরা (রাদি.)-কে যা বলেছিলেন তাই জানালেন। তখন তিনি বলিলেন, তুমি তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দাও, আর তাদেরকে যত ইচ্ছা শর্তারোপ করিতে দাও। পরে আয়েশা (রাদি.) তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দিলেন এবং তার মালিকপক্ষ ওয়ালার শর্তারোপ করিল। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, ওয়ালা তারই থাকবে, যে মুক্ত করে যদিও তার মালিকপক্ষ শত শর্তারোপ করে থাকে।
Leave a Reply