মিশকাত শরীফ কিতাব – ইলম (বিদ্যা)
মিশকাত শরীফ কিতাব – ইলম (বিদ্যা) পর্ব >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ২, অধ্যায়ঃ ইলম (বিদ্যা)
পরিচ্ছদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
১৯৮
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার পক্ষ হইতে [মানুষের কাছে] একটি বাক্য হলেও পৌছিয়ে দাও। বানী ইসরাইল হইতে শোনা কথা বলিতে পার, এতে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করিবে, সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে প্রস্তুত করে নেয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৪৬১।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
১৯৯
সামুরাহ্ বিন জুনদুব ও মুগীরাহ্ বিন শুবাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার পক্ষ হইতে এমন হাদিস বলে, যা সে মিথ্যা মনে করে, নিশ্চয়ই সে মিথ্যাবাদীদের একজন। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম [পূর্বে উল্লেখিত হয়েছে]
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০০
মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা যার কল্যান কামনা করেন, তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন। বস্তুত আমি শুধু বণ্টনকারী। আর আল্লাহ তাআলা আমাকে দান করেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭৩১২, মুসলিম ১০৩৭।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০১
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সোনা-রূপার খনির ন্যায় মানবজাতিও খনিবিশেষ। যারা জাহিলিয়্যাতের [অন্ধকারের] যুগে উত্তম ছিল, দ্বীনের জ্ঞান লাভ করার কারণে তারা ইসলামের যুগেও উত্তম। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৮৩, মুসলিম ২৬৩৮; হাদিসের শব্দ মুসলিমের।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০২
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ দুই ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো ব্যাপারে হিংসা করা ঠিক নয়। প্রথম ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তাআলা সম্পদ দান করিয়াছেন সাথে সাথে তা সত্যের পথে [ফী সাবীলিল্লাহ] বা সৎকার্জে ব্যয় করার জন্য তাকে তাওফীক্বও দিয়েছেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তাআলা হিকমাহ্, অর্থাৎ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করিয়াছেন এবং সে এ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা যথোপযুক্তভাবে কাজে লাগায় এবং [লোকদেরকে] তা শিখায়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭৩, মুসলিম ৮১৬।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার আমাল বন্ধ [নিঃশেষ] হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমালের সাওয়াব [অব্যাহত থাকে]: [১] সদাক্বায়ে জারিয়া, [২] জ্ঞান- যা থেকে মানুষ উপকৃত হইতে থাকে এবং [৩] সুসন্তান- যে তার [পিতা-মাতার] জন্য দুআ করিতে থাকে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৬৩১।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৪
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদসমূহের কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তাআলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য হইতে একটি [কঠিন] বিপদ দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্থ লোকের অভাব [সাহায্যের মাধ্যমে] সহজ করে দিবে, আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামাতের দিনে তাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দোষ-ত্রুটি গোপন করিবে [প্রকাশ করিবে না], আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করিতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করিতে থাকে। যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোন পথ বা পন্থায় অনুপ্রবেশ করার সন্ধান করে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তার জান্নাতে প্রবেশ করার পথ সহজ করে দেন। যখন কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং জ্ঞান চর্চা করে, তাদের উপর আল্লাহর তরফ থেকে স্বস্তি ও প্রশান্তি নাযিল হইতে থাকে, আল্লাহর রহ্মাত তাদেরকে ঢেকে নেয় এবং মালায়িকাহ্ তাদেরকে ঘিরে রাখে এবং আল্লাহ তাআলা মালাকগণের নিকট তাদের উল্লেখ করেন। আর যার আমাল তাকে পিছিয়ে দেয় তার বংশ তাকে এগিয়ে দিতে পারে না। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৬৯৯।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৫
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন প্রথমে এক শাহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তাআলার সামনে হাশরের ময়দানে তাকে পেশ করিবেন এবং তিনি তার সকল নিআমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নিআমাতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞেস করিবেন, তুমি এসব নিআমাত পাবার পর দুনিয়াতে তাহাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছ? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার [সন্তুষ্টির] জন্য তোমার পথে [কাফিরদের বিরুদ্ধে] লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছো। আর তা বলাও হয়েছে [তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে]। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুর করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নিআমাত আল্লাহ তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নিআমাত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করিবেন, এসব নিআমাতের তুমি কি শোকর আদায় করেছো? সে উত্তরে বলবে, আমি ইল্ম অর্জন করেছি, মানুষকে ইল্ম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তোমাকে আলিম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তৃতীয় ব্যক্তি – যাকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করিয়াছেন, তাকেও আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তাকে দেয়া সব নিআমাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তাকে এবার জিজ্ঞেস করিবেন, এসব নিআমাত পেয়ে তুমি কি আমাল করেছো? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে করচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ কর। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছো, তুমি খরচ করেছো, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছো। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৯০৫।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৬
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [শেষ যুগে] আল্লাহ তাআলা ইল্ম বা জ্ঞানকে তাহাঁর বান্দাদের অন্তর হইতে টেনে বের করে ঊঠিয়ে নিবেন না, বরং [জ্ঞানের অধিকারী] আলিমদেরকে দুনিয়া হইতে উঠিয়ে নিয়ে যাবার মাধ্যমে ইলম বা জ্ঞানকে উঠিয়ে নিবেন। তারপর [দুনিয়ায়] যখন কোন আলিম অবশিষ্ট থাকিবে না, তখন লোকজন অজ্ঞ মূর্খ লোকদেরকে নেতারূপে গ্রহন করিবে। অতঃপর তাদের নিকট [মাসআলা-মাসায়িল] জিজ্ঞেস করা হবে। তখন তারা বিনা ইল্মেই ফাতাওয়া জারী করিবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করিবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১০০, মুসলিম ২৬৭৩।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৭
তাবিঈ শাক্বীক্ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে লোকজনের সামনে ওয়ায-নাসীহাত করিতেন। একদিন এক ব্যক্তি তাঁকে বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা চাই, আপনি এভাবে প্রতিদিন আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করুন। তখন তিনি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বললেন, এরূপ করিতে আমাকে এ কথাই বাধা দিয়ে থাকে যে, আমি প্রতিদিন [ওয়ায-নাসীহাত] করলে তোমরা বিরক্ত হয়ে উঠবে। এ কারণে আমি মাঝে মধ্যে ওয়ায-নাসীহাত করে থাকি, যেমনিভাবে আমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লক্ষ্য রাখতেন যাতে আমাদের মধ্যে বিরক্তির উদ্রেক না হয়। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭০, মুসলিম ২৮২১।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৮
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] যখন কোন কথা বলিতেন [অধিকাংশ সময়] তিনবার বলিতেন, যাতে মানুষ তাহাঁর কথাটা ভাল করে বুঝতে পারে। এভাবে যখন তিনি কোনও সম্প্রদায়ের কাছে যেতেন তাদেরও সালাম করিতেন তখন তাদের তিনবার করে সালাম করিতেন। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৯৫।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২০৯
আবু মাস্ঊদ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] -এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমার সওয়ারী চলতে পারছে না, আপনি আমাকে একটি সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিন। রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, এ সময় তো আমার নিকট তোমাকে দেবার মত কোন সওয়ারী নেই। এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে এমন এক লোকের সন্ধান দিতে পারি, যে তাকে সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোন কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন করে, সে উক্ত কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১৮৯৩।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১০
জারীর ইবনি আবদুল্লাহ আল বাজালী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন আমরা দিনের প্রথম বেলায় রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নিকট ছিলাম। এমন সময় কাঁধে তরবারী ঝুলিয়ে একদল লোক রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে এসে পৌঁছল। তাদের শরীর প্রায় উলঙ্গ, আবা বা কালো ডোরা চাদর দিয়ে কোন রকমে শরীর ঢেকে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ লোক, বরং সকলেই মুযার গোত্রের ছিল। তাদের চেহারায় ক্ষুধার লক্ষণ প্রকাশ পেতে দেখে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল এবং তিনি খাবারের খোঁজে ঘরে প্রবেশ করিলেন। তারপর কিছু না পেয়ে বেরিয়ে আসলেন এবং বিলাল [রাদি.] -কে [আযান ও ইক্বামাত দিতে] নির্দেশ করিলেন। বিলাল [রাদি.] আযান ও ইক্বামাত দিলেন এবং সকলকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] খুত্বাহ্ দিলেন এবং এ আয়াত পড়লেনঃ
[আরবী]
“হে মানুষেরা! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করিয়াছেন, যিনি তা হইতে জোড়া সৃষ্টি করিয়াছেন, এরপর এ জোড়া হইতে বহু নারী-পুরুষ সৃষ্টি করিয়াছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা পরস্পর [নিজেদের অধিকার] দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার বন্ধন সম্পর্কে সতর্ক থাক। আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” [সুরাহ্ আন্ নিসা ৪:১]
অতঃপর রসূল [সাঃআঃ] সূরাহ্ আল হাশ্র-এর এ আয়াত পড়লেনঃ
[আরবী]
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের প্রত্যেকে ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য [ক্বিয়ামাতের জন্য] কি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।” [সূরাহ্ আল হাশ্র ৫৯:১৮]
[অতঃপর রসূল [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমাদের] প্রত্যেকেরই তাদের দীনার, দিরহাম, কাপড়-চোপড়, গম ও খেজুরের ভাণ্ডার হইতে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বললেন, যদি খেজুর এক টুকরাও হয়। বর্ণনাকারী [জারীর] বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করিতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগল। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়-চোপড়ে দুটি স্তুপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, [আনন্দে] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর চেহারা ঝকমক করছে, যেন তা স্বর্ণে জড়ানো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ চালু করিল সে এ চালু করার সাওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের উপর আমাল করিবে তাদেরও সম-পরিমাণ সাওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সাওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতির প্রচলন করিল, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির উপর আমাল করিবে তাদের জন্য গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে আমালকারীদের গুনাহ কম করিবে না।
{১}
{১} সহীহ : মুসলিম ১০১৭।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২১১
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকেই অন্যায়ভাবে হত্যা করা হোক, তার খুনের [গুনাহর] একটি অংশ প্রথম হত্যাকারী আদাম সন্তানের উপর বর্তাবে। কারণ সে-ই [আদামের সন্তান কাবীল] প্রথম হত্যার প্রচলন করেছিল। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৩৩৩৬, মুসলিম ১৬৭৭।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২১২
কাসীর বিন ক্বায়স [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি দিমাশ্ক -এর মাসজিদে আবুদ দারদা [রাদি.]-এর সাথে বসা ছিলাম, এমন সময় তার নিকট একজন লোক এসে বলিল, হে আবুদ্ দারদা! আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর শহর মাদীনাহ্ থেকে শুধু একটি হাদিস জানার জন্য আপনার কাছে এসেছি। আমি শুনিয়াছি আপনি নাকি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। এছাড়া আর কোন উদ্দেশে আমি আপনার কাছে আসিনি। তার এ কথা শুনে আবুদ্ দারদা [রাদি.] বললেন, [হাঁ] রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি [কুরআন ও হাদিসের] ইলম সন্ধানের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের পথসমূহের একটি পথে পৌঁছিয়ে দিবেন এবং মালায়িকাহ্ ইল্ম অনুসন্ধানকারীর সন্তুষ্টি এবং পথে তার আরামের জন্য তাদের পালক বা ডানা বিছিয়ে দেন। অতঃপর আলিমদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সকলেই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা ও দুআ করে থাকেন, এমনকি পানির মাছসমূহও [ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে]। আলিমদের মর্যাদা মূর্খ ইবাদাতকারীর চেয়ে অনেক বেশী। যেমন পূর্ণিমা চাঁদের মর্যাদা তারকারাজির উপর এবং আলিমগণ হচ্ছে নবীদের ওয়ারিস। নবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম [ধন-সম্পদ] মীরাস [উত্তরাধিকারী] হিসেবে রেখে যান না। তাঁরা মীরাস হিসেবে রেখে যান শুধু ইল্ম। তাই যে ব্যক্তি ইল্ম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে।{২২৯] আর তিরমিজি হাদিস বর্ণনাকারীর নাম ক্বায়স বিন কাসীর বলে উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু রাবীর নাম কাসীর ইবনি ক্বায়সই এটিই সঠিক [যা মিশকাতের সংকলকও নকল করিয়াছেন]।{১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : আহমাদ ২১২০৮, আবু দাউদ ৩৬৪১, তিরমিজি ২৬৮২, ইবনি মাজাহ ২২৩, সহীহুত্ তারগীব ৭০, দারিমী ৩৫৪।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২১৩
আবু উমামাহ্ আল বাহিলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট দুই ব্যক্তি সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এদের একজন ছিলেন আবিদ [ইবাদাতকারী], আর দ্বিতীয়জন ছিলেন আলিম [জ্ঞান অনুসন্ধানকারী]। তিনি বললেন, আবিদের উপর আলিমের মর্যাদা হল যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির উপর। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আল্লাহ তাআলা, তাহাঁর মালায়িকাহ্ এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনের অধিবাসীরা, এমনকি পিঁপড়া তার গর্তে ও মাছ পর্যন্ত ইল্ম শিক্ষাকারীর জন্য দুআ করে। {১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ২৬৭৫, সহীহুত্ তারগীব ৮১, দারিমী ১/৯৭-৯৮।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২১৪
মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
দারিমী এ হাদীসে মাকহূল [রাহিমাহুল্লাহ] থেকে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন এবং দুই ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি বলেছেন, আবিদের তুলনায় আলিমের মর্যাদা এমন, যেমন তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের উপর আমার মর্যাদা। এরপর তিনি [সাঃআঃ] এ কথার প্রমাণে কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ [আরবী]
“নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলিমরাই তাঁকে ভয় করে”- [সূরাহ্ ফাত্বির/মালায়িকাহ্ ৩৫: ৮]। এছাড়া তার হাদিসের অবশিষ্টাংশ তিরমিজির বর্ণনার অনুরূপ। {১}
{১} হাসান : দারিমী ২৮৯।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২১৫
আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ একদা লোকেরা [আমার পরে] তোমাদের অনুসরণ করিবে। আর তারা দূর-দূরান্ত হইতে দ্বীনের জ্ঞানার্জনের উদ্দেশে তোমাদের কাছে আসবে। সুতরাং তারা তোমাদের নিকট এলে তোমরা তাদেরকে ভাল কাজের [দ্বীনের ইল্মের] নাসীহাত করিবে। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৬৫০, যঈফুল জামি ১৭৯৭। কারণ এর সানাদে আমারাহ্ ইবনি জুওয়াইন নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। আবার কোন কোন ঈমাম তাকে মিথ্যুকও বলেছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২১৬
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জ্ঞানের কথা মুমিনের হারানো ধন। সুতরাং মুমিন যেখানেই তা পাবে সে-ই হবে তার অধিকারী। {১}
তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি গরীব। তাছাড়াও এর অপর বর্ণনাকারী ইব্রাহীম ইবনি ফায্লকে দুর্বল [জইফ] বলা হয়েছে।
{১} খুবই দুর্বল : তিরমিজি ২৬৮৭, ইবনি মাজাহ ৪১৬৯, যঈফুল জামি ৪৩০২।
আলবানী বলেনঃ বরং ইবরাহীম ইবনুল ফাযল মাতরূক, অর্থাৎ- তার বর্ণিত হাদিস অগ্রহণযোগ্য, মুহাদ্দিসগণ এ রাবীর হাদিস গ্রহণ করেননি। [তাকরীবুত্ তাহযীব]
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
২১৭
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ একজন ফাক্বীহ [আলিমে দীন] শায়ত্বনের [শয়তানের] কাছে হাজার আবিদ [ইবাদাতকারী] হইতেও বেশী ভীতিকর। [তিরমিজি ও ইবনি মাজাহ]{১}
{১} মাওযূ: তিরমিজি ২৬৮১, ইবনি মাজাহ ২২, যঈফুত্ তারগীব ৬৬। আলবানী বলেনঃ ইবনি মাজাহ হাদিসটির সানাদকে গরীব বলেছেন। আর এ হাদিসের ভিতরে সবচেয়ে বড় বিপদ হলো রূহ বিন জান্নাহ যে সবচেয়ে বেশী জইফ। হাদিস জালকরণের অভিযোগে সে অভিযুক্ত। সাখাযী বলেন, এ হাদিস বর্ণনায় সে মুনকার বলে সাব্যস্ত হয়েছে। ইবনি আবদুল বার-এর বর্ণনাও অনুরূপ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
২১৮
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয এবং অপাত্রে তথা অযোগ্য মানুষকে ইলম শিক্ষা দেয়া শুকরের গলায় মণিমুক্তা বা স্বর্ণ পরানোর শামিল।{১}
{১} জইফ : প্রথম অংশ তথা [طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيْضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ] সহীহ। ইবনি মাজাহ ২২৪, সহীহুল জামি ৩৯১৩, যঈফুল জামি ৩৬২৬, বায়হাক্বী ১৫৪৪। কারণ এর সানাদে হাফস্ ইবনি সুলায়মান রয়েছে, যে হাদিস জালকরণের অভিযোগে অভিযুক্ত।
বায়হাক্বী এ বর্ণনাটি শুআবুল ঈমান-এ মুসলিম শব্দ পর্যন্ত নকল করিয়াছেন এবং বলেছেন, এ হাদিসের মাতান [মূল ভাষ্য] মাশহুর, আর সানাদ জইফ। বিভিন্ন সানাদে এ হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে, এসবই জইফ।
তবে আল্লামা সুয়ূত্বী এর পঞ্চাশটির মতো সানাদ উল্লেখ করিয়াছেন, এ কারণে তিনি এ হাদিসের প্রতি সহীহ হওয়ার হুকুম লাগিয়েছেন। ঈমাম ইরাক্বীও কোন কোন আয়িম্মায়ে মুহাদ্দিসীনের পক্ষ থেকে সহীহ বলেছেন। আর অনেকেই একে হাসান বলেছেন। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এ হাদিসের শেষে مسلمة শব্দ যা সাধারণের মধ্যে প্রসিদ্ধ। অবশ্য এর কোনই ভিত্তি নেই। আর কোন কোন সানাদে এর শুরুতে اطلبوا العلم ولو بالصين অর্থাৎ- বিদ্যার্জন কর, যদি এর জন্য সুদূর চীন যেতে হয় তবুও। সম্পূর্ণ বাতিল কথা। বিস্তারিত দেখুন আল আহাদীসুয্ যঈফাহ্ [হাদিস নং ৪১৬]।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
২১৯
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ মুনাফিক্বের মধ্যে দুটি অভ্যাস একত্র হইতে পারে না- নেক চরিত্র ও দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান। [তিরমিজি]{১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬৪৭, সহীহুল জামি ৩২২৯।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২০
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য বের হয়েছে, সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর পথেই রয়েছে। [তিরমিজি ও দারিমী]{১}
{১} হাসান লিগয়রিহী : তিরমিজি ২৬৪৭, সহীহুত্ তারগীব ৮৮।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান লিগাইরিহি
২২১
সাখবারাহ্ আল আযদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানানুসন্ধান করে, তা তার পূর্ববর্তী সময়ের গুনাহের কাফফারাহ্ হয়ে যাবে। [তিরমিজি ও দারিমী]{১}
{১} মাওযূ : তিরমিজি ২৬৪৭, যঈফুল জামি ৫৬৮৬, দারিমী ৫৮০। কারণ এর সানাদে আবু দাউদ আল আমা রয়েছে যিনি নাসীফ নামে প্রসিদ্ধ, তিনি একজন মিথ্যুক রাবী। আর মুহাম্মাদ বিন হুমায়দ একজন দুর্বল রাবী।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
২২২
আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ মুমিন ব্যক্তি কল্যাণকর কাজে অর্থাৎ- জ্ঞানার্জনে পরিতৃপ্ত হইতে পারে না, যে পর্যন্ত না পরিণামে সে জান্নাতে পৌঁছে যায়। [তিরমিজি]{১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৬৮৬, যঈফুল জামি ৪৭৮৩।
ঈমাম তিরমিজি কিতাবুল ইলম-এর মধ্যে হাদিসটিকে হাসান গরীব বলেছেন। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ এর সানাদে আবুল হায়সাম থেকে দার্রাজ-এর বর্ণনা রয়েছে যিনি [দার্রাজ] একজন দুর্বল রাবী। বিশেষতঃ আবুল হায়সাম থেকে বর্ণনাকালে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে এমন কোন জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যা সে জানে, অথচ গোপন রাখে [বলে না], ক্বিয়ামাতের [কিয়ামতের] দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে। [আহমাদ, আবু দাউদ ও তিরমিজি]{১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৭৮৮৩, আবু দাউদ ৩৬৫৮, তিরমিজি ২৬৪৯, সহীহুল জামি ৬২৮৪।
ঈমাম হাকিম ইবনি উমার [রাদি.] থেকে এর শাহিদ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি একে সহীহ বলেছেন। যাহাবীও এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২৪
وَرَوَاهُ ابْنُ مَاجَةَ عَنْ أَنَسٍ
ইবনি মাজাহ হইতে বর্ণীতঃ
এ হাদিসটিকে আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ নির্ণীত নয়
২২৫
কাব ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জন করে আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিবেন। [তিরমিজি]{১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : তিরমিজি ২৬৫৪, সহীহুল জামি ১০৬। যদিও ঈমাম তিরমিজি হাদিসটিকে গরীব বলেছেন। কারণ পরবর্তী হাদিস দুটি এর শাহিদ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২২৬
ইবনি মাজাহ হইতে বর্ণীতঃ
এ হাদিসটি ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।{১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ২৫৩। ইবনি মাজাহ-এর রিওয়ায়াতটি জইফ। মুনযিরী সেদিকেই ইঙ্গিত করিয়াছেন। কারণ এর সানাদে হাম্মাদ এবং আবু কার্ব নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২২৭
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ইল্ম বা জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়, কেউ সে জ্ঞান পার্থিব স্বার্থোদ্ধারের অভিপ্রায়ে অর্জন করলে ক্বিয়ামাতের দিন জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৮২৫২, আবু দাউদ ৩৬৬৪, ইবনি মাজাহ ২৫২, সহীহুত্ তারগীব ১০৫।
ঈমাম হাকিম ও যাহাবী একে সহীহ বলেছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২৮
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কোন কথা শুনেছে, অতঃপর এ কথাকে স্মরণ রেখেছে ও রক্ষা করেছে এবং যা শুনেছে হুবহু তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কারণ জ্ঞানের অনেক বাহক নিজে জ্ঞানী নয়। আবার কেউ কেউ এমন আছে যারা নিজেরা জ্ঞানী হলেও, নিজের তুলনায় বড় জ্ঞানীর নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়। তিনটি বিষয়ে মুসলিমের অন্তর বিশ্বাসঘাতকতা [অবহেলা] করিতে পারে নাঃ [১] আল্লাহর উদ্দেশে নিষ্ঠার সাথে কাজ করা [২] মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করা এবং [৩] মুসলিমের জামাআতকে আঁকড়ে ধরা। কারণ মুসলিমদের দুআ বা আহ্বান তাদের পরবর্তী [মুসলিমদেরও] শামিল করে রাখে। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬৫৮, মুসনাদে শাফিঈ ১৬।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২২৯
যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আহমাদ, তিরমিজি ও আবু দাউদ হাদিসটি যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিরমিজি ও আবু দাউদ [আরবী] হইতে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেননি । {১}
{১} সহীহ : ঈমাম আহমাদ ১২৯৩৭, ২১০৮০; তিরমিজি ২৬৫৮, আবু দাউদ, ইবনি মাজাহ ৩০৫৬, দারিমী ২২৭।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩০
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি। আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তির মুখ উজ্জ্বল করুন যে আমার কথা শুনেছে এবং যেভাবে শুনেছে ঠিক সেভাবেই অন্যের কাছে তা পৌঁছে দিয়েছে। অনেক সময় যাকে পৌঁছানো হয় সে শ্রোতা থেকে অধিক স্মরণকারী হয়। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬৫৮, ইবনি মাজাহ ২৩২।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩১
আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এ হাদিসটি দারিমী আবুদ্ দারদা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন । {১}
{১} সহীহ : দারিমী ২৩০।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩২
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমার পক্ষ হইতে হাদিস বর্ণনার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করিবে। যে পর্যন্ত আমার হাদিস বলে তোমরা নিশ্চিত না হবে, তা বর্ণনা করিবে না। কেননা, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করেছে [বর্ণনা করেছে], সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নাম নির্ধারণ করে নিয়েছে। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৯৫১, যঈফুল জামি ১১৪, আহমাদ ২৬৭৫, যঈফাহ্ ১৭৪৩। তবে শেষের অংশটুকু মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। ঈমাম তিরমিজি [রাহিমাহুল্লাহ] কিতাবুত্ তাফসীরে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ ঈমাম আত তিরমিজির এ সানাদটি দুর্বল। কারণ এর সানাদে আবদুল আলা আস্ সালাবী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। তবে ইবনি আবী শায়বাহ্ হাদিসটি সহীহ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। যেমন ইবনুল ক্বত্ত্বান বলেছেন এবং মানাভী তা ফায়যুল ক্বদীর নামক গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৩৩
ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি মাজাহ এ হাদিসকে ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন এবং প্রথম অংশ আমার পক্ষ হইতে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করিবে অংশটুকু বর্ণনা করেননি। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৩০।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৩৪
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাপারে নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে কোন মতামত দিয়েছে সে যেন তার বাসস্থান জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে [শব্দগুলো হল], যে লোক কুরআন সম্পর্কে নিশ্চিত ইল্ম ছাড়া [মনগড়া] কোন কথা বলে, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে নির্দিষ্ট করে নেয়।{১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৯৫০, ২৯৫১।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৩৫
জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন সম্পর্কে নিজের মনগড়া কোন কথা বলিল এবং সে সত্যেও উপনীত হল, এরপরও [মনগড়া কথা বলে] সে ভুল করিল [কেননা, সে ভুল পন্থা অবলম্বন করেছে]। {১}
{১} জইফ: আবু দাউদ ৩৬৫২, তিরমিজি ২৯৫২, যঈফুল জামি ৫৭৩৬।
আলবানী বলেনঃ এর সানাদ খুবই দুর্বল এবং এর দুর্বলতা ইতোপূর্বেও আমি বর্ণনা করেছি। কিতাবুত্ তাজ এর মধ্যে আমি এর তাহক্বীক্ব ও অনুভূতি ব্যক্ত করেছি। এখানেও তার প্রতি আমি ইঙ্গিত করলাম।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৩৬
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআনের কোন বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়া কুফরী। {১}
{১} হাসান সহীহ: আবু দাউদ ৪৬০৩, আহমাদ ৭৭৮৯, সহীহুত্ তারগীব ১৪৩।
ঈমাম হাকিম একে সহীহ বলেছেন, যাহাবীও তা সমর্থন করিয়াছেন। আর এর সহীহ হওয়ার কারণ এ হাদিসের অনেক শাহিদ হাদিস আছে। যেগুলো আমি ত্ববারানীর আল মুজামুস্ সগীর গ্রন্থে তালীক্ব হিসেবে উল্লেখ করেছি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
২৩৭
আমর ইবনি শুআয়ব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর পিতার মাধ্যমে তাহাঁর দাদা হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একটি দল সম্পর্কে শুনলেন, তারা পরস্পর কুরআন নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে, ঝগড়া করেছে। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে। তারা আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের দ্বারা বাতিল করার চেষ্টা করছিল। অথচ আল্লাহর কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে তার এক অংশ অপর অংশের পরিপূরক হিসেবে ও সত্যতা প্রমাণ করার জন্য। তাই তোমরা এর এক অংশকে অপর অংশের দ্বারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করো না, বরং তোমরা তার যতটুকু জান শুধু তা-ই বল, আর যা তোমরা জান না তা কুরআনের আলিমের নিকট সোর্পদ কর। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ২৭০২, ইবনি মাজাহ ৮৫। হাদিসের শব্দ আহমাদ-এর। তবে এর অপর এক বর্ণনায় আছে তারা যে বিষয়ে ঝগড়া করছিল তা ছিল তাক্বদীর সম্পর্কীয়।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৩৮
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কুরআন মাজীদ সাত হরফের সাথে অবতীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে প্রত্যেক আয়াতের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য দিক রয়েছে। প্রত্যেকটি দিকের একটি হাদ্ [সীমা] রয়েছে। আর প্রত্যেকটি সীমার একটি অবগতির স্থান রয়েছে। {১}
{১} জইফ : আবু ইয়ালা ৫১৪৯, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ২৯৮৯। কারণ এর সানাদে ইব্রাহীম বিন মুসলিম নামে দুর্বল রাবী রয়েছে। আর আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] তাহাঁর সিলসিলাতুয্ যঈফাহ্ হাদিসটিকে তার শেষের অংশ ছাড়া দুর্বল বলেছেন।
হাদিসের প্রথম অংশ সহীহ যা বোখারী ও মুসলিমে উল্লেখ আছে। কিন্তু উপরোক্ত সানাদটি দুর্বল।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
২৩৯
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ইলম বা জ্ঞান তিন প্রকার- [১] আয়াতে মুহকামাতের জ্ঞান, [২] সুন্নাতে ক্বায়িমার জ্ঞান এবং [৩] ফারীযায়ে আদিলার জ্ঞান। এর বাইরে যা আছে তা অতিরিক্ত। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ২৮৮৫, ইবনি মাজাহ ৫৪, যঈফুল জামি ৩৮৭১।
এ হাদিসের সানাদে দুজন রাবী আবদুর রহমান বিন যিয়াদ বিন নাঈম, আবদুর রহমান রাফি জইফ। বিধায় ঈমাম যাহাবী তার তালখীস নামক গ্রন্থের ৩/৩২২ পৃষ্ঠায় হাদিসটিকে জইফ বলেছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৪০
আওফ ইবনি মালিক আল আশজাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ {তিন ব্যাক্তি বাগাড়ম্বর করে] [১] শাসক [২] শাসকের পক্ষ হইতে নির্দেশপ্রাপ্ত ব্যাক্তি [৩] অথবা কোন অহংকারী লোক। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৩৬৬৫, সহীহুল জামি ৭৭৫৩, আহমাদ ২৩৪৮৫, ২৩৪৭২, ২৩৪৫৪।
মুসনাদে আহমাদে এর অনেক সানাদ আছে যার কোন কোনটি সহীহ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৪১
আমর ইবনি শুআয়ব হইতে বর্ণীতঃ
দারিমী এ হাদিসটি আমর ইবনি শুআয়ব থেকে তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের এ বর্ণনায় শব্দ [আরবী] এর পরিবর্তে [আরবী] উল্লেখ রয়েছে। {১}
{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৩৭৫৩, সহীহুল জামি ৭৭৫৪।
দারিমী কিতাবুর্ রিক্বাক-এ জইফ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি মাজাহও এটি বর্ণনা করিয়াছেন হাদিস নং ৩৭৫৩। এ হাদিসটির সানাদ সহীহ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৪২
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যাক্তিকে ভুল ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে অর্থাৎ বিনা ইল্মে [বিদ্যায়] ফাতাওয়া দেয়া হয়েছে এর গুনাহ তার উপর বর্তাবে যে তাকে ফাতাওয়া দিয়েছে। আর যে ব্যাক্তি তার কোন ভাইকে [অপরকে] এমন কোন কাজের পরামর্শ দিয়েছে, যা কল্যাণ হবে না বলে সে জানে, সে নিশ্চয়ই তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। {১}
{১} হাসান : আবু দাউদ ৩৬৫৭, সহীহুল জামি ৬০৬৮। ঈমাম দারিমীও এটিকে [হাদিস নং ১৫৯] হাসান বলে উল্লেখ করিয়াছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৪৩
মুআবিয়াহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমাদেরকে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী কথাবার্তা বলিতে নিষেধ করিয়াছেন। {১}
{১} জইফ : আবু দাউদ ৩৬৫৬, যঈফুল জামি ৬০৩৫। যাহাবী বলেন, এর সানাদে আবদুল্লাহ [রাদি.] বিন সাদ অপরিচিত [মাজহূল] রাবী।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৪
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা [আমার নিকট হইতে] ফারায়িয ও কুরআন শিখে নাও এবং লোকদেরকে তা শিখিয়ে দাও। কারণ আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে [আমার মৃত্যু হবে]। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২০৯১, যঈফুল জামি ২৪৫০, দারিমী ১/৭৩, হাকিম ৪/৩৩৩।
{এ হাদীসে ইযতিরাব আছে। অর্থাৎ- সানাদে রাবীর নাম এবং মাতানে শব্দের কম বেশি হয়েছে, এছাড়া ঈমাম আহমাদ [রাহিমাহুল্লাহ] মুহাম্মাদ বিন আল ক্বাসিম আল আসাদী-কে জইফ বলেছেন। আলবানী বলেন, বরং আহমাদ, দারাকুত্বনী একে মিথ্যাবাদী বলেছেন। এছাড়া এর সানাদে শাহর বিন হাওশাব রাবী জইফ। তবে ঈমাম তিরমিজি, দারিমী ও হাকিম এ হাদিসটিকে অন্য একটি মারফূ সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। এটিকে হাকিম ও যাহাবী সহীহ বলেছেন।]
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৫
আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর [ইন্তিকালের নিকটবর্তী সময়ে তাহাঁর] সাথে ছিলাম। তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠালেন, অতঃপর বললেন, এটা এমন সময় যখন মানুষের নিকট হইতে ইলমকে [দ্বীনী বিদ্যাকে] ছিনিয়ে নেয়া হবে, এমনকি তারা ইলম হইতে কিছুই রাখতে পারবে না। {১}
{১} সহীহ : তিরমিজি ২৬৫৩, সহীহুল জামি ৬৯৯০।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৪৬
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন সময় খুব বেশি দূরে নয় মানুষ যখন জ্ঞানের সন্ধানে উটের কলিজায় আঘাত করিবে [অর্থাৎ উটে আরোহণ করে দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে]। কিন্তু মদীনার আলিমের চেয়ে বড় কোন আলিম কোথাও খুঁজে পাবে না। {১}
জামি আত তিরমিজিতে ইবনি উআয়নাহ্ হইতে বর্ণিত হয়েছে, মাদীনার সে আলিম মালিক ইবনি আনাস। আবদুর রাযযাকও একথা লিখেছেন। আর ইসহাক্ব ইবনি মুসার বর্ণনা হল, আমি ইবনি উআয়নাহকে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, মাদীনার সে আলিম হলো উমারী জাহিদ। অর্থাৎ উমার ফারূক [রাদি.]-এর খান্দানের লোক। তার নাম হল আবদুল আযীয ইবনি আবদুল্লাহ।
{১} জইফ : তিরমিজি ২৬৮০, যঈফুল জামি ৬৪৪৮, হাকিম ১/৯১, যঈফাহ্ ৪৮৩৩। যদিও ঈমাম তিরমিজি এটিকে হাসান বলেছেন। কারণ এর সানাদে ইবনি জুরায়য এবং আবুয্ যুরায়য নামে দুজন মুদাল্লিস রাবী রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৭
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে অবগত হয়েছি যে, তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা এ উম্মাতের [কল্যাণের] জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শেষে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন যিনি তাদের দীনকে সংস্কার করিবেন। {১}
{১} সহীহ : আবু দাউদ ৪২৯১, সিলসিলাহ্ আস্ সহীহাহ্ ৫৯৯। এ হাদিসটি হাকিম মুসতাদ্রাকে বর্ণনা করিয়াছেন এবং সহীহ বলেছেন। সহীহ বলার ব্যাপারে ঈমাম যাহাবীও একমত হয়েছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৪৮
ইবরাহীম ইবনি আবদুর রহমান আল উযরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেক আগত জামাআতের মধ্যে নেক তাক্বওয়াসম্পন্ন এবং নির্ভরযোগ্য মানুষ [কিতাব ও সুন্নাহর] এ জ্ঞান গ্রহণ করিবেন। আর তিনিই এ জ্ঞানের মাধ্যমে [কুরআন-সুন্নাহ্] সীমালংঘনকারীদের রদবদল, বাতিলপন্থীদের মিথ্যা অপবাদ এবং জাহিল অজ্ঞদের ভুল -বিশ্লেষণকে বিদূরিত করিবেন। {২৬৪]
ঈমাম বায়হাক্বী এ হাদিসটি মাদখাল গ্রন্থে মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন।
{১}
{১} সহীহ : বায়হাক্বী ১০/২০৯। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ হাদিসটি মুরসাল হলেও সহীহ বটে। কেননা এর অনেক মাওসুল সানাদ আছে। এর কোন কোনটিকে হাফিয আল আলাঈ সহীহ বলেছেন। [বুগ্ইয়াতুল মুলতামিস ৩-৪ পৃঃ]
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৪৯
হাসান আল বসরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ এমন ব্যক্তি যার মৃত্যু এসে পৌঁছেছে এমন অবস্থায়ও ইসলামকে জীবন্ত করার উদ্দেশে ইলম বা জ্ঞানার্জনে মশগুল রয়েছে, জান্নাতে তার সাথে নবীদের মাত্র একধাপ পার্থক্য থাকিবে। {১}
{১} জইফ : দারিমী ৩৫৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৫১৫৬। এর সানাদ মুরসাল হওয়ার কারণে জইফ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫০
হাসান আল বসরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে বানী ইসরাঈলের দুজন লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তাদের একজন ছিলেল আলিম, যিনি ওয়াক্তিয়া ফারয সালাত আদায় করার পর বসে মানুষকে তালীম দিতেন। আর দ্বিতীয়জন দিনে সিয়াম পালন করিতেন, গোটা রাত ইবাদাত করিতেন [রসূল [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হল] এ দুব্যক্তির মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে উত্তম কে? রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, ওয়াক্তিয়া ফারয সালাত আদায় করার পরপরই বসে বসে যে ব্যক্তি তালীম দেয়, সে ব্যক্তি যে দিনে সিয়াম পালন করে ও রাতে ইবাদাত করে তার চেয়ে তেমন বেশী মর্যাদাবান। যেমন- তোমাদের একজন সাধারণ মানুষের ওপর আমার মর্যাদা। {১}
{১} হাসান সহীহ : দারিমী ৩৪০। আলবানী বলেন, এর সানাদ হাসান সহীহ তবে হাদিসটি মুরসাল বটে, কিন্তু এর একটি মাওসূল শাহিদ হাদিস একে শক্তিশালী করছে। যা আবু উমামাহ্ [রাদি.]আল বাহিলী থেকে বর্ণিত হয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান সহীহ
২৫১
আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ উত্তম ব্যক্তি হল সে, যে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান এ সমৃদ্ধ। যদি তার কাছে লোকজন মুখাপেক্ষী হয়ে আসে, তাহলে সে তাদের উপকার সাধন করে। আর যখন তার কাছে মানুষের প্রয়োজন থাকে না, তখন তাকে অন্যের মুখাপেক্ষী হইতে হয় না। {১}
{১} মাওযূ : ফিরদাওস ৬৭৪২, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ৭১২।
আলবানী বলেন, এ হাদিসটি মাওযূ [জাল]। তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এর সানাদ সম্বন্ধে অবগত হয়েছি। ইবনি আসাকির তাহাঁর তারীখে দামিশক ১৩ খণ্ডের ১৭৩ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করিয়াছেন। ঈসা ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি উমার ইবনি আলী এ সূত্রে। দারাকুত্বনী বলেন, এ ঈসা মাতরূকুল হাদিস। ইবনি হিব্বান বলেন, সে তার পিতার বরাতে অনেক কথা বলেছেন। [১/৮৪ পৃষ্ঠা]
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ জাল হাদিস
২৫২
তাবিঈ ইক্বকিমাহ্ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
আব্দুল্লাহ ইবনি আব্বাস[রাদি.] বলেছেনঃ হে ইক্বরিমাহ। প্রত্যেক জুমুআয় [সপ্তাহে] মাত্র একদিন মানুষকে ওয়ায-নাসীহাত শুনাবে। যদি একবার ওয়ায-নাসীহাত করা যথেষ্ট নয় মনে কর তাহলে সপ্তাহে দুবার। এর চেয়েও যদি বেশী করিতে চাও তাহলে সপ্তাহে তিনবার ওয়ায-নাসীহাত কর। তোমরা এ কুরআনকে মানুষের নিকট বিরক্তিকর করে তুলো না। কোন জাতি যখন তাদের কোন ব্যাপারে আলাপ-আলোচনায় ব্যস্ত থাকে তখন তোমরা সেখানে পৌঁছলে তাদের আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের কাছে ওয়ায-নাসীহাত করিতে যেন আমি কখন তোমাদেরকে না দেখি। এ সময় তোমরা চুপ করে থাকিবে। তবে তারা যদি তোমাদেরকে ওয়ায-নাসীহাত করার জন্য বলে তখন তাদের আগ্রহ পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে হাদিস শুনাও। কবিতার ছন্দে দুআ করা পরিত্যাগ করিবে এবং এ বিষয়ে সতর্ক থাকিবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সহাবীগণকে দেখেছি, তারা এরূপ করিতেন না। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৬৩৩৭।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৩
ওয়াসিলাহ্ বিন আসক্বা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জ্ঞান সন্ধান করেছে ও অর্জন করিতে পেরেছে, তার সাওয়াব দুই গুন। আর যদি সে জ্ঞান অর্জন করিতে না পেরেও থাকে, তাহলেও তার সাওয়াব [চেষ্টা করার জন্য] এক গুন। {১}
{১} খুবই দুর্বল : দারিমী ৩৩৫, যঈফাহ্ ৬৭০৯। এর সানাদে ইয়াযীদ বিন রবীআহ্ আস্ সান্আনী নামে একজন রাবী রয়েছে আবু হাতিম যাকে মুনকিরুল হাদিস [হাদিস অস্বীকার] বলেছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
২৫৪
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মুমিনের ইন্তিকালের পরও তার যেসব নেক আমল ও নেক কাজের সাওয়াব তার নিকট সবসময় পৌঁছতে থাকিবে, তার মধ্যে- [১] ইলম বা জ্ঞান-যা সে শিখেছে এবং প্রচার করেছে; [২] নেক সন্তান-যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গেছে; [৩]কুরআন- যা সে উত্তরাধিকারীদের জন্য রেখে গেছে; [৪] মাসজিদ- যা সে নির্মাণ করে গেছে; [৫] মুসাফিরখানা- যা সে পথিক মুসাফিরদের জন্য নির্মাণ করে গেছে; [৬] কূপ বা ঝর্ণা- যা সে খনন করে গেছে মানুষের পানি ব্যবহার করার জন্য এবং [৭] দান-খয়রাত- যা সুস্থ ও জীবিতাবস্থায় তার ধন- সম্পদ থেকে দান করে গেছে। মৃত্যুর পর এসব নেক কাজের সাওয়াব তার তার নিকট পৌঁছতে থাকিবে। {১}
{১} হাসান : ইবনি মাজাহ ২৪২, সহীহ তারগীব ৭৭। এ হাদিসটি ইবনি খুযায়মাহ্ তাহাঁর সহীহ গ্রন্থে রিওয়ায়াত করিয়াছেন। ঈমাম মুনযিরী ও আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] একে হাসান বলেছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
২৫৫
আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা আমার কাছে ওয়াহী পাঠিয়েছেন, যে ব্যক্তি ইলম [বিদ্যা] হাসিল করার জন্য কন পথ ধরবে আমি তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিব। আর যেই ব্যক্তির দুই চোখ আমি নিয়ে নিয়েছি, তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করব। ইবাদাতের পরিমাণ বেশি হবার চেয়ে ইলমের পরিমাণ বেশি হওয়া উত্তম। দ্বীনের মূল হল তাক্বওয়া তথা হারাম ও দ্বিধা-সন্দেহের বিষয় হইতে বেঁচে থাকা। {১}
{১} সহীহ: বায়হাক্বী ৫৭৫১, সহীহুল জামি ১৭২৭। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমি এর সানাদ সম্পর্কে ওয়াকিফ নই। তবে হাদিসটি সহীহ। এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তার এ পৃথক পৃথক অংশ বিভিন্ন সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন প্রথম অংশ মুসলিমে, দ্বিতীয় অংশ বোখারীতে, তৃতীয়-চতুর্থ অংশ মুসতাদরাক হাকিম-এ ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৫৬
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাতে সামান্য কিছু সময় দ্বীনের জ্ঞান আলোচনা করা [ইবাদাতে রত থাকা] গোটা রাত জাগরণ অপেক্ষা উত্তম। {১}
{১} জইফ : দারিমী ২৬৪। এতে এমন এক ব্যক্তি রয়েছেন যার নাম জানা যায়নি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৭
আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মসজিদে নবাবীতে অনুষ্ঠিত দুটি মজলিসের কাছ দিয়ে অতিক্রম করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, উভয় মজলিসই উত্তম কাজ করছে, কিন্তু এদের এক মাজলিস অন্য মাজলিস অপেক্ষা উত্তম। একটি দল ইবাদাতে লিপ্ত, তারা অবশ্য আল্লাহর নিকট দুআ করছে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আগ্রহ প্রকাশ করছে। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তাদের আশা পূর্ণও করিতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে নাও পারেন। আর দ্বিতীয় দলটি হল ফাকীহ ও আলিমদের। তারা ইলম অর্জন করেছে এবং মূর্খদের শিখাচ্ছে, তারাই উত্তম। আর আমাকে শিক্ষকরূপে পাঠানো হয়েছে। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] এ দলের সাথেই বসে গেলেন।” {১}
{১} জইফ : দারিমী ৩৪৯। এর সানাদ জইফ সিলসিলাতুল আহাদীসুয্ যঈফাহ্ ওয়াল মাওযূআহ্ প্রথম খণ্ডের হাঃ ১১ এর বর্ণনা রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৮
আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হল: হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! সে ইলমের সীমা কী যাতে পৌছলে একজন লোক ফাকীহ বা আলিম বলে গণ্য হবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]: বললেন, যে ব্যক্তি আমার উম্মাতের জন্য দ্বীন সংক্রান্ত চল্লিশটি হাদিস মুখস্থ করেছে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামাতের দিন ফাকীহ হিসেবে [ক্ববর হইতে] উঠাবেন। আর আমি তার জন্য কিয়ামাতের দিন শাফাআত করব ও তার আনুগত্যের সাক্ষ্য দিব।” {১}
{১} জইফ : বায়হাক্বী ১৭২৬। কারণ এর সানাদে আবদুল মালিক ইবনি হারূন ইবনি আন্তারাহ্ রয়েছে যাকে ইবনি মাঈন মিথ্যুক হিসেবে অবহিত করিয়াছেন তার ইবনি হিব্বান মিথ্যার অপবাদ দিয়েছেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৫৯
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের জিজ্ঞেস করিলেন: তোমরা বলিতে পার, সর্বাপেক্ষা বড় দানশীল কে? সহাবীগণ উত্তরে বললেন, আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল সবচেয়ে বেশী জানেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেন, দান-খয়রাতের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় দাতা হলেন আল্লাহ তাআলা। আর বানী আদামের মধ্যে আমিই সর্বাপেক্ষা বড় দাতা। আর আমার পর বড় দাতা হচ্ছে সে ব্যক্তি, যে ইলম শিক্ষা করিবে এবং তা বিস্তার করিতে থাকিবে। কিয়ামাতের দিন সে একাই একজন “আমীর অথবা বলেছেন, একটি উম্মাত হয়ে উঠবে।” {১}
{১} জইফ : বায়হাক্বী ১৭৬৭, হায়সামী ১/১৬৬। কারণ এর সানাদে যুআয়দ ইবনি আবদুল আযীয নামে একজন মাতরুক [পরিত্যক্ত] রাবী রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬০
আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেন: দুজন লোভী ব্যক্তির পেট কখনো পরিতৃপ্তি লাভ করে না। একজন জ্ঞানপিপাসু লোক- ইলম দ্বারা তার পেট কখনো ভরে না। দ্বিতীয়জন হল দুনিয়া পিপাসু- দুনিয়ার ব্যাপারে সেও কখনো পরিতৃপ্ত হয় না।” {১}
{১} সহীহ : বায়হাক্বী ১০২৭৯, মুসতারাকে হাকিম ১/৯২। যদি এর সানাদে ক্বাতাদাহ্ মুদাল্লিস রাবী এবং সে আন্আনাহ্ সূত্রে বর্ণনা করে তথাপি এর শাহিদ বর্ণনা থাকায় তা সহীহ হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬১
তাবিঈ আওন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেছেন: দুই পিপাসু ব্যক্তি কক্ষনো পরিতৃপ্ত হয় না। তার একজন হলেন আলিম আর অপরজন দুনিয়াদার। কিন্তু এ দুজনের মর্যাদা সমান নয়। কেননা আলিম ব্যক্তি, তার প্রতি তো আল্লাহর সস্তুষ্টি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর দুনিয়াদার তো [ধীরে ধীরে] আল্লাহর অবাধ্যতার পথে অগ্রসর হইতে থাকে। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] দুনিয়াদার ব্যক্তি সম্পর্কে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন: –
[আরবী]
“কক্ষনো নয়, নিশ্চয় মানুষ নিজকে [ধনে জনে সম্মানে] স্বয়ংসম্পূর্ণ ভেবে আল্লাহর অবাধ্যতা করিতে থাকে।” [সূরাহ আল আলাকু ৯৬:৬-৭]
বর্ণনাকারী বলেন, অপর ব্যক্তি আলিম সম্পর্কে তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করিলেন:
[আরবী]
“আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিশ্চয় আলিমরাই তাকে ভয় করে” [সূরাহ ফাত্বির ৩৫:২৮]
{১}
{১} জইফ : সুনানে দারিমী ৩৩২। কারণ এর সানাদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে, অর্থাৎ- বর্ণনাকারী আওন ইবনি আবদুল্লাহ যাহাবী ইবনি মাস্ঊদ-এর থেকে শ্রবণ করেনি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬২
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ[সাঃআঃ] : বলেছেন : সেদিন বেশি দূরে নয় যখন আমার উম্মাতের কতক লোক দ্বীনের ইলম অর্জনে তৎপর হবে ও কুরআন অধ্যয়ন করিবে। তারা বলবে, আমরা আমীর-উমরাদের কাছে যাবো এবং তাদের পার্থিব স্বার্থে কিছু ভাগ বসিয়ে আমাদের দ্বীন নিয়ে আমরা সরে পড়ব। কিন্তু তা কখনো হবার নয়। যেমন কাটাঁর গাছ থেকে শুধু কাটাঁই পাওয়া যায়, কোন ফল লাভ করা যায় না। ঠিক এভাবে আমীর-উমরাদের নৈকট্য দ্বারা। মুহাম্মাদ ইবনি সাব্বাহ [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, গুনাহ ছাড়া কিছু অর্জিত হয় না।” {১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ২৫৫, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১২৫০। কারণ এর সানাদে ওয়ালীদ ইবনি মুসলিম রয়েছে যিনি আন্আনাহ্ সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন আর উবায়দুল্লাহ [রাদি.] ইবনি আবু বুরদা-কে ইবনি হিব্বান সহ কেউ বিশ্বস্ত বলেননি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬৩
আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আলিমগণ যদি ইলমের হিফাযাত ও মর্যাদা রক্ষা করিতেন, উপযুক্ত ও যোগ্য লোকেদের কাছে ইলম সোপর্দ করিতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তারা তাদের ইলমের কারণে নিজেদের যুগের লোকেদের নেতৃত্ব করিতে পারতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের কাছে বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তারা তাদের কাছ থেকে দুনিয়ার কিছু স্বার্থ লাভ করিতে পারেন। তাই তারা দুনিয়াদারদের কাছে মর্যাদাহীন হয়ে পড়েছেন। আমি তোমাদের নবী [সাঃআঃ] -কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি : যে ব্যক্তি নিজের সমস্ত চিন্তাকে এক মাকসুদ, অর্থাৎ শুধুমাত্র আখিরাতের চিন্তায় নিবদ্ধ করে নিবে- আল্লাহ তার দুনিয়ার যাবতীয় মাকসুদ পূরণ করে দিবেন। অপরদিকে যাকে দুনিয়ার নানা দিক ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে, তার জন্য আল্লাহর কোন পরওয়াই নেই, চাই সে কোন জঙ্গলে [দুনিয়ায় যে কোন অবস্থায়] ধ্বংস হোক না কেন।” {১}
{১} জইফ : ইবনি মাজাহ ২৫৭, হাকিম ৪/৩২৭-২৯। কারণ এর সানাদে নাহ্শাল ইবনি সাঈদ রয়েছে যাকে ইসহক ইবনি রহওয়া মিথ্যুক বলেছেন, আবু হাতিম ও নাসায়ী মাতরুক [পরিত্যাজ্য] বলেছেন। এছাড়াও ইয়াযীদ আর রুক্কাশীও দুর্বল রাবী।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬৪
বায়হাক্বী হইতে বর্ণীতঃ
বায়হাক্বী এ হাদিসকে শুআবুল ঈমানে ইবনি উমার [রাদি.] থেকে তার বক্তব্য হিসেবে শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন।” {১}
{১} সহীহ : শুআবুল ঈমান ১০৩৪০।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৬৫
তাবিঈ আমাশ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: ইলমের জন্য বিপদ হল [ইলম শিখে] তা ভুলে যাওয়া। অযোগ্য লোক ও অপাত্রে ইলমের কথা বলা বা জ্ঞান দেয়া ইলমকে ধ্বংস করার সমতুল্য। দারিমী মুরসালরূপে বর্ণনা করিয়াছেন।” {১}
{১} জইফ : দারিমী ৬২৪, সিলসিলাহ্ আয্ যঈফাহ্ ১৩০৩। কারণ আমাশ আনাস [রাদি.] সহ কোন সাহাবী থেকে শ্রবণ করেননি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬৬
সুফ্ইয়ান সাওরী [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
উমর ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] কাব [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, প্রকৃত আলিম কারা? কাব [রাহিমাহুল্লাহ] বললেন, যারা অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমাল করে। উমার [রাদি.] পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, আলিমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয় কোন্ জিনিস? কাব [রাহিমাহুল্লাহ] বললেন, [সম্মান ও সম্পদের] লোভ-লালসা” {১}
{১} জইফ : দারিমী ৫৭৫। কারণ সুফ্ইয়ান সাওরী এবং উমার [রাদি.]-এর মাঝে অনেক দূরত্ব রয়েছে, অর্থাৎ- তাদের উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ সংঘটিত হয়নি।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬৭
আহ্ওয়াস ইবনি হাকীম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ] কে মন্দ [লোক] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিল। তিনি বললেন, আমাকে মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না, বরং ভাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর। এ কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, সাবধান! খারাপ মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট হচ্ছে মন্দ আলিম। আর ভাল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল ভাল আলিমরা। {১}
{১} জইফ : দারিমী ৩৭০। কারণ আহ্ওয়াস থেকে দারিমী পর্যন্ত এর সানাদের সবগুলো বর্ণনাকারী দুর্বল। এর উপর হাদিস মুরসালুত তাবিঈ যা গ্রহণযোগ্য নয়।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৬৮
আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহর নিকট মর্যাদার দিক দিয়ে সর্বাধিক মন্দ সে ব্যক্তি হবে, যে তার ইলমের দ্বারা উপকৃত হইতে পারেনি। {১}
{১} খুবই দুর্বল : দারিমী ২৬২। কারণ এর সানাদে আবুল ক্বাসিম ইবনি ক্বায়স নামে একজন মাজহুল বা অপরিচিত রাবী রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
২৬৯
তাবিঈ যিয়াদ ইবনি হুদায়র [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা উমার [রাদি.] আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলিতে পারো ইসলাম ধ্বংস করিবে কোন জিনিসে? আমি বললাম, আমি বলিতে পারি না। তখন তিনি {উমার [রাদি.]] বললেন, আলিমদের পদঙ্খলন, আর আল্লাহর কিতাব কুরআন নিয়ে মুনাফিক্বদের ঝগড়া-বিবাদ বা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এবং পথভ্রষ্ট শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করিবে। {১}
{১} সহীহ : সুনানে দারিমী ২১৪।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭০
হাসান {আল বসরী] [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, ইলম দুই প্রকার। এক প্রকার ইলম হল অন্তরে যা উপকারি ইলম। আর অপর প্রকার ইলম হল মুখে মুখে, আর এটা হল আল্লাহর পক্ষে বানী আদামের বিরুদ্ধে দলীল। {১}
{১} মুরসালুত্ তাবিঈ : দারিমী ৩৬৪। তবে এর সানাদটি সহীহ।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭১
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে দুই পাত্র [দুই প্রকারের ইলম] শিখেছি। এর মধ্যে এক পাত্র আমি তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু অপর পাত্রের ইলম- তা যদি আমি তোমাদেরকে বলে দেই তাহলে আমার এ গলা কাটা যাবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১২০।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭২
আবদুল্লাহ ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, হে লোক সকল! যে যা জানে সে যেন তা-ই যেন বলে। আর যে জানেনা সে যেন বলে আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। কারন যে ব্যাপারে তোমার কিছু জানা নেই সে ব্যাপারে “আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত আছেন” এ কথা ঘোষনাই তোমার জ্ঞান। [কুরআনে] আল্লাহ তাআলা তার নবীকে বলেছেনঃ “আপনি বলুন আমি [দীন প্রচারের বিনিময়ে] তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। আর যারা মিথ্যা দাবী করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই”-[সুরাহ সোয়াদ ৮৮: ৮৬]। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৪৭৭৪, মুসলিম ২৭৯৮।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭৩
তাবিঈ ইবনি সীরীন [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নিশ্চয়ই এ [সানাদের] ইলম হচ্ছে দীন। অতএব তোমরা লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের দ্বীন কার নিকট থেকে গ্রহন করছো? {১}
{১} সহীহ : মুক্বদ্দামাহ্ মুসলিম।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭৪
হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [তাবিঈদের উদ্দেশ্যে] বলেন, হে কুরআন-ধারী [আলিম] গন! সোজা সরল পথে চল। কেননা [প্রথমে দ্বীন গ্রহন করার দরুন পরবর্তীদের তুলনায়] তোমরা অনেক অগ্রসর হয়েছে। অপরপক্ষে তোমরা যদি [সরল পথ বাদ দিয়ে] ডান ও বামের পথ অবলম্বন কর, তাহলে পথভ্রষ্ট হয়ে সুদুর বিভ্রান্তিতে পতিত হবে। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ৭২৮২।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭৫
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তোমরা জুব্বুল হুযুন থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সহাবীগন জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসুল! জুব্বুল হুযুন কি? তিনি বললেন, এটা হল জাহান্নামের মধ্যে একটি গর্ত। এ গর্ত হইতে বাচার জন্য জাহান্নামও দৈনিক চারশ বার আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়। সহাবীগন জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসুল! এতে [এ গর্তে] কারা যাবে? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, যারা দেখানোর উদ্দেশ্যে আমাল ও কুরআন অধ্যয়ন করে থাকে।
তিরমিজি ও ইবনি মাজাহ মুকাদ্দামাহ, ইবনি মাজার অপর এক বর্ননায় আছেঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ কথাও বলেছেন, কুরআন অধ্যনকারী [আলিম]-গনের মধ্যে তারাই আল্লহর নিকট সর্বাপেক্ষা ঘৃনিত, যারা আমীর-ওমরাহদের সাথে বেশী বেশী সাক্ষাত বা মেলামেশা করে।
{১}
{১} জইফ : তিরমিজি ২৩৮৩, ইবনি মাজাহ ২৫৬, যঈফুত্ তারগীব ১৬। কারণ এর সানাদে আম্মার ইবনি সায়িফ আয্ যববী রয়েছে যিনি আবু মুআয [রাদি.] আল বাসারী থেকে হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে দুর্বল। আর আবু মুআয [রাদি.] যার নাম সুলায়মান ইবনি আরক্বাম সে একজন মাতরুক বা পরিত্যক্ত রাবী।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৭৬
আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ শীঘ্রই মানুষের উপর এমন এক যুগ আসবে, যখন শুধু নাম ব্যাতীত ইসলামের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকিবে না। সেদিন কুরআনের অক্ষরই শুধু অবশিষ্ট থাকিবে। তাদের মাসজিদ্ গুলোতো বাহ্যিকভাবে আবাদ হইতে থাকিবে, কিন্তু হিদায়াতশুন্য থাকিবে। তাদের আলিমগন হবে আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট লোক, তাদের নিকট থেকেই [দ্বীনের] ফিতনাহ-ফাসাদ সৃষ্টি হবে। অতঃপর এ ফিতনাহ তাদের দিকেই ফিরে আসবে। {১}
{১} খুবই দুর্বল : শুআবুল ঈমান ১৯০৮, যঈফাহ্ ১৯৩৬। কারণ এর সানাদে বিশর ইবনি ওয়ালীদ আল ক্বযী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে যার বার্ধক্যজনিত বুদ্ধিভ্রষ্টতা ছিল।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ খুবই দুর্বল
২৭৭
যিয়াদ ইবনি লাবীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একটি বিষয় বর্ণনা করিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, সেটা ইলম উঠে যাওয়ার সময় সংঘটিত হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কিরুপে ইলম উঠে যাবে? অথচ আমরা তো কুরআন শিক্ষা করছি, আমাদের সন্তানদেরকেও কুরআন শিক্ষা দিচ্ছি। আমাদের সন্তানগণ ক্বিয়ামাত আবধি তাদের সন্তান-সন্ততিদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতে থাকিবে। তিনি [সাঃআঃ] বলেন, যিয়াদ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। আমি তো তোমাকে মদীনার একজন বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যাক্তি বলেই মনে করতাম। এসব ইয়াহুদী ও নাসারাগণ কি তাওরাত ও ইঞ্জিল পড়ছে না কিন্তু তারা তদানুযায়ী কাজ করছে না এমন নয় কি? আহমাদ, ইবনি মাজাহ; ঈমাম তিরমিজিও অনুরুপ যিয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন । {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ১৮০১৯, ইবনি মাজাহ ৪০৪৮।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৭৮
وَكَذَا الدَّارِمِيُّ عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ
আবু উমামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইয়াম দারিমীহ ও আবু উমামাহ্ [রাদি.] থেকে অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন।
{১} জইফ : দারিমী ২৪০, ইবনি মাজাহ ২২৮। কারণ এর সানাদে হাজ্জাজ ইবনি আর্ত্বাত নামে একজন মুদাল্লিস বারী রয়েছে যিনি عَنْعَنَ সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৭৯
ইবনি মাস্ঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তোমরা ইলম শিক্ষা কর, লোকদের তা শিক্ষা দিতে থাক। তোমরা অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলো [বা ফারায়িয] শিখবে, অন্যকেও শিখাবে। এভাবে কুরআন শিখ, লোকদের শিখাও। নিশ্চয়ই আমি একজন মানুষ, আমাকে উঠিয়ে নেয়া হবে এবং ফিতনাহ্-ফাসাদ ও হাঙ্গামা সৃষ্টি হবে। এমন কি দুই ব্যাক্তি অবশ্য পালনীয় বিষয়ে মতভেদ করিবে, অথচ ঐ দুই ব্যাক্তি এমন কাউকে পাবে না, যে এ দুজনের মীমংসা করে দিতে পারে। {১}
{১} জইফ : দারিমী ২২১। কারণ এর সানাদে সুলায়মান ইবনি জাবির [রাদি.] আল হিজ্রী নামে একজন মাজহূল বা অপরিচিত রাবী রয়েছে।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৮০
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ইলম বা জ্ঞান দ্বারা কারো কোন উপকার হয় না, তা এমন এক ধনভান্ডারের ন্যায় যা থেকে আল্লাহর পথে খরচ করা হয় না। {১}
{১} হাসান : আহমাদ ১০০৯৮, দারিমী ৫৫৬। যদিও আহমাদের সানাদে ইবনি লাহ্ইয়াহ্ দাবরাজ আবুস্ সাম্হ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যারা উভয়েই দুর্বল। এছাড়াও দারিমীর সানাদে ইব্রাহীম ইবনি মুসলিম আল হিজরী নামে একজন দুর্বল রাবী রয়েছে। তবে এ দু বর্ণনার সমষ্টিতে হাদিসটি হাসানের স্তরে উন্নীত হয়েছে। বিশেষত তার একটি সহীহ শাহিদ বর্ণনা থাকায়।
মিশকাত শরীফ কিতাব -এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস
Leave a Reply