মিশকাত শরীফ । পাক-পবিত্রতা বিষয়ক হাদীস
মিশকাত শরীফ । পাক-পবিত্রতা বিষয়ক হাদীস >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্বঃ ৩, অধ্যায়ঃ পাক-পবিত্রতা
পরিচ্ছদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ
২৮১. আবু মালিক আল আশ্আরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাক-পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক। আলহাম্দু লিল্লা-হ মানুষের আমালের পাল্লাকে ভরে দেয় এবং সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হাম্দু লিল্লা-হ সাওয়াবে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা বলেছেন, আকাশমণ্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে তা পরিপূর্ণ করে দেয়। নামাজ হল নূর বা আলো। দান-খায়রাত [দানকারীর পক্ষে] দলীল। সব্র বা ধৈর্য হল জ্যোতি। কুরআন হল তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল । প্রত্যেক মানুষ ভোরে ঘুম হইতে উঠে নিজের আত্মাকে তাদের কাজে ক্রয়-বিক্রয় করে– হয় তাকে সে আযাদ করে দেয় অথবা জীবনকে ধবংস করে দেয় । {১}
আর এক বর্ণনায় এসেছে, লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু আল্ল-হু আকবার আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে সব পরিপুর্ণ করে দেয়। {2] মিশকাতুল মাসাবীহ-এর সংকলক বলেছেন, আমি এ বর্ণনাটি বোখারী-মুসলিম কিংবা হুমায়দী বা জামিউল উসূলে কোথাও পাইনি। অবশ্য দারিমী এ বর্ণনাটিকে সুবহানাল্ল-হি ওয়াল হামদু লিল্লা-হি এর স্হলে বর্ণনা করিয়াছেন। {১} সহীহ : মুসলিম ২২৩, আহমাদ ৫/৩৪২-৪৩।{2] দারিমী ৬৫৩। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [সহাবীগণের উদ্দেশ্য করে] বললেনঃ আমি কি তোমাদের এমন একটি কথা বলব না আল্লাহ তাআলা যা দিয়ে তোমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিবেন এবং [জান্নাতেও] পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন? সহাবীগণ আবেদন করিলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আবশ্যই। তখন তিনি [সাঃআঃ] বললেন, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণভাবে উযূ কর, মাসজিদের দিকে অধিক পদক্ষেপ রাখা এবং এক ওয়াক্ত আদায়ের পর আর এক ওয়াক্তের সালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটাই হল রিবাত্ব [প্রস্তুতি গ্রহণ]। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫১। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৩. মালিক ইবনি আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এটাই রিবা-ত্ব, এটাই রিবা-ত্ব দুবার বলা হয়েছে- [মুসলিম ২৫১] । আর তিরমিজিতে তা তিনবার উল্লিখিত হয়েছে । {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫১, তিরমিজি ৫১। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৪. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করে এবং উত্তমভাবে উযূ করে, তার শরীর হইতে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নিচ হইতেও তা বের হয়ে যায়। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৪৫। মিশকাত গ্রন্থকার বলেন, আমি বোখারীতে এ হাদিসটি পাইনি। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন মুসলিম অথবা মুমিন বান্দা উযূ করে এবং তার চেহারা ধুয়ে নেয়, তখন তার চেহারা হইতে পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে তার চোখের দ্বারা কৃত সকল গুনাহ বের হয়ে যায় যা সে চোখ দিয়ে দেখেছে। যখন সে তার দুই হাত ধোয় তখন তার দুই হাত দিয়ে করা গুনাহ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যা তার দুহাত দিয়ে ধরার কারণে সংঘটিত হয়েছে। অনুরূপভাবে সে যখন তার দুই পা ধোয়, তার পা দ্বারা কৃত গুনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যায় যে পাপের জন্য তার দু পা হাঁটছে। ফলে সে [উযূর জায়গা হইতে উঠার সময়] সকল গুনাহ হইতে পাক-পবিত্র হয়ে যায়। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৪৪। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৬. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে মুসলিম ফার্য সলাতের সময় হলে উত্তমভাবে উযূ করে, বিনয় ও ভয় সহকারে রুকূ করে [নামাজ আদায় করে তার এ নামাজ], তা তার সলাতের পূর্বের গুনাহর কাফ্ফারাহ্ [প্রায়চিত্ত] হয়ে যায়, যতক্ষন না সে কাবীরাহ্ গুনাহ করে থাকে। আর এভাবে সর্বদাই চলতে থাকিবে। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২২৮। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৭. উসমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা তিনি এরূপে উযূ করিলেন, তিনবার নিজের দু হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করিলেন, নাকে পানি দিয়ে তা ঝেড়ে পরিষ্কার করিলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তারপর কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধুলেন, এভাবে বাম হাতও কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ করিলেন, তারপর ডান পা তিনবার ও বাম পা তিনবার করে ধুলেন। এরপর তিনি {উসমান [রাদি.]] বললেন, যে ব্যক্তি আমার ন্যায় উযূ করিবে ও মনোযোগ সহকারে দুই রাক্আত [নাফ্ল] নামাজ আদায় করিবে তার পূর্বেকার সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। মুত্তাফাকুন আলায়হি; এ বর্ণনার শব্দসমুহ ঈমাম বোখারীর। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৯৩৪, মুসলিম ২২৬। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৮. উক্ববাহ্ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে মুসলিম উযূ করে এবং উত্তমরূপে উযূ করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে [অন্তর ও দেহ সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে রুজু করে] দুরাক্আত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৩৪। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৮৯. উমার ইবনুল খাত্ত্বাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি উযূ করিবে এবং উত্তমভাবে অথবা পরিপূর্ণভাবে উযূ করিবে এরপর বলবেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه
“আশ্হাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”, অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর বান্দা ও রসূল। আর এক বর্ণনায় আছেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ اِلَّا اللّهُ وَحْدَه لَا شَرِيْكَ لَه وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُولُه
“আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু ওয়াহদাহু লা- শারীকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ”– [অর্থাৎ- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তিনি এক ও একক। তাহাঁর কোন শারীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রসূল।] তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে। এসব দরজার যেটি দিয়ে খুশী সে সেই দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে। ঈমাম মুসলিম তার সহীহ গ্রন্থে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন।
আর হুমায়দী তাহাঁর আফরাদে মুসলিম গ্রন্থে, ইবনুল আসীর জামিউল উসূল গ্রন্থে এরূপ ও শায়খ মুহীউদ্দীন নাবাবী হাদিসের শেষে আমি যেরূপ বর্ণনা করেছি এরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু ঈমাম তিরমিজি উপরউক্ত দুআর পরে আরো বর্ণনা করেছেনঃ
اللّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ وَاجْعَلْنِي مِنَ الْمُتَطَهِّرِينَ
“আল্লা-হুম্মাজ আলনী মিনাত্ তাওয়া-বীনা ওয়াজ আলনী মিনাল মুতাত্বাহ্হিরীন”- [অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তাওবাহকারীদের মধ্যে শামিল কর এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে গণ্য কর”। {১}
মুহয়ুস্ সুন্নাহ তাহাঁর সিহাহ গ্রন্থে যে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন, “যে উযূ করিল ও উত্তমভাবে তা করিল শেষ …. পর্যন্ত। তিরমিজি তার জামি কিতাবে হুবহু এটাই বর্ণনা করিয়াছেন। অবশ্য তিনি [আরবী] [আন্না মুহাম্মাদান] শব্দের পূর্বে [আরবী] [আশহাদু] শব্দটি বর্ণনা করেননি। {১} সহীহ : মুসলিম ২৩৪, তিরমিজি ৫৫, সহীহুল জামি ৬১৬৭। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৯০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতকে [জান্নাতে যাবার জন্য] এই অবস্থায় ডাকা হবে যখন তাদের চেহারা উযূর কারণে ঝকমক করিতে থাকিবে, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চমকাতে থাকিবে। “অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ উজ্জ্বলতাকে বাড়াতে সক্ষম সে যেন তাই করে”। {১}
{১} সহীহ : বোখারী ১৩৬, মুসলিম ২৪৬। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৯১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [জান্নাতে] মুমিনের অলংকার অর্থাৎ উযূর চিহ্ন সে পর্যন্ত পৌঁছবে যে পর্যন্ত উযূর পানি পৌঁছবে [তাই উযূ সুন্দরভাবে করিবে]। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৫০। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
পরিচ্ছদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২৯২. সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ [হে মুমিনগণ!] তোমরা দ্বীনের উপর যথাযথভাবে অটল থাকিবে। অবশ্য তোমরা সকল [কাজ] যথাযথভাবে করিতে পারবে না, তবে মনে রাখবে তোমাদের সকল কাজের মধ্যে নামাজই হচ্ছে সর্বোত্তম। আর উযূর সব নিয়ম-কানুনের প্রতি মুমিন ব্যতীত অন্য কেউ লক্ষ্য রাখে না। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ২১৮৭৩, ইবনি মাজাহ ২৭৭, দারিমী ৬৫৫, মুয়াত্ত্বা মালিক ৩৬। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৯৩. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ থাকতে উযূ করে তার জন্য [অতিরিক্ত] দশটি নেকী রয়েছে। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ৫৯, যঈফুল জামি ৫৫৩৬। কারণ এর সানাদে আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ আফ্রিক্বী নামে একজন দুর্বল বারী রয়েছে। এছাড়াও আবু গাত্ফি একজন মাজহূল বা অপরিচিত রাবী। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
পরিচ্ছদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ
২৯৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ জান্নাতের চাবি হল নামাজ। আর সলাতের চাবি হল ত্বহারাত [উযূ]। {১}
{১} জইফ : আহমাদ ১৪২৫২, যঈফুল জামি ৫২৬৫। কারণ এর সানাদে আবু ইয়াহ্ইয়া আল ফাতাত থেকে সুলায়মান ইবনি কাওম রয়েছে যারা দুজনই স্মৃতি বিভ্রাটজনিত কারণ দুর্বল রাবী। হাদিসের দ্বিতীয় অংশ তথা مِفْتَاحُ الصَّلَاةِ الطُّهُورُ -এর শাহিদ রিওয়ায়াত থাকায় তা সহীহ। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ অন্যান্য
২৯৫. শাবীব ইবনি আবু রাওহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন এক সহাবী হইতে বর্ণনা করেন। একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্রের নামাজ আদায় করিলেন এবং [সলাতে] সূরাহ আর্ রূম তিলাওয়াত করিলেন। সলাতের মধ্যে তাহাঁর তিলাওয়াতে গোলমাল বেঁধে গেল। নামাজ শেষে তিনি বললেন, মানুষের কি হল! তারা আমার সাথে নামাজ আদায় করছে অথচ উত্তমরূপে উযূ করছে না। এটাই সলাতে আমার কিরাআতে গোলযোগ সৃষ্টি করে। {১}
{১} জইফ : নাসায়ী ৯৪৮, যঈফুল জামি ৫০৩৪। কারণ এর সানাদে আবদুল মালিক ইবনি উমায়র রয়েছে যার মুখস্থশক্তিতে পরিবর্তন ঘটেছিল, এমনকি ইবনি মাঈন তাকে مخلط [মুখলাত্ব] বলেছেন। আর ইবনি হাজার তার ব্যাপারে তাদলিসের অভিযোগ এনেছেন। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৬. বানী সুলায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি [সাহাবী] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] পাঁচটি কথা আমার হাতে অথবা তাহাঁর নিজের হাতে গুণে বললেনঃ সুবহা-নাল্ল-হ বলা হল দাঁড়ি পাল্লার অর্ধেক, আর আলহামদুলিল্লা-হ বলা হল দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করা এবং আল্ল-হু আকবার বলা হল আকাশমন্ডলী ও জমিনের মধ্যে যা আছে তা পূর্ণ করে দেয়া। সিয়াম ধৈর্যের অর্ধেক এবং পাক-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। {১}
{১} জইফ : তিরমিজি ৩৫১৯, যঈফুল তারগীব ৯৪৪। কারণ এর সানাদে ইবনি কুলায়ব হুবারী আল হিম্দী নামে একজন মাজহূল [অপরিচিত রাবী] রয়েছে। কারণ তার থেকে আবু ইসহক আস্ সাবিঈ ছাড়া আর কেউ হাদিস বর্ণনা করেননি। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস
২৯৭. আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যখন কোন মুমিন বান্দা উযূ করে ও কুলি করে, তখন তার মুখ থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। আর যখন সে নাক ঝাড়ে তখন তার নাক থেকে গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধোয়, গুনাহ তার মুখ থেকে বের হয়ে যায়, এমনকি তার চোখের পাতার নীচ হইতেও গুনাহ বের হয়ে যায়। এরপর যখন নিজের দুটি হাত ধোয়, তখন তার হাত হইতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার হাতের নখের নীচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মাথা মাসাহ করে, মাথা হইতে গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি দুই কান থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নিজের পা দুটো ধোয়, তার দুই পায়ের গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার পায়ের নখের নীচ হইতেও গুনাহসমূহ বের হয়ে যায়। অতঃপর মাসজিদের দিকে গমন এবং তার নামাজ হয় তার জন্য অতিরিক্ত। {১}
{১} সহীহ লিগয়রিহী : নাসায়ী ১০৩, সহীহুত্ তারগীব ১৮৫। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ লিগাইরিহি
২৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ক্ববরস্থানে [অর্থাৎ- মাদীনার বাকীতে] উপস্থিত হলেন এবং সেখানে [মৃতদের উদ্দেশ্যে] বললেনঃ আস্সালা-মু আলায়কুম, [তোমাদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক] হে মুমিন অধিবাসীগণ! আমরা ইনশা-আল্লাহ তোমাদের সাথে এসে মিলিত হচ্ছি। আমরা আশা করি, আমরা যেন আমাদের ভাইদের দেখিতে পাই। সহাবীগণ আবেদন করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই ? তিনি [সাঃআঃ] বললেন, তোমরা আমার বন্ধু। আমার ভাই তারা যারা এখনো দুনিয়ায় আসেনি [পরে আসবে]। সহাবীগণ আবেদন করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মাতদের যারা এখন আসেনি, তাদের আপনি ক্বিয়ামাতের দিন কিভাবে চিনবেন? উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, বল দেখি, যদি কোন ব্যক্তির একদল নিছক কালো রঙের ঘোড়ার মধ্যে ধবধবে সাদা কপাল ও সাদা হাত-পা সম্পন্ন ঘোড়া থাকে, সে কি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তারা বললেন, হাঁ, নিশ্চয়ই চিনতে পারবে হে আল্লাহর রসূল। তিনি [সাঃআঃ] তখন বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে [ক্বিয়ামাতের দিন] সাদা ধবধবে কপাল ও সাদা হাত-পা নিয়ে উপস্থিত হবে এবং আমি হাওযে কাওসারের নিকট তাদের অগ্রগামী হিসেবে উপস্থিত থাকব। {১}
{১} সহীহ : মুসলিম ২৪৯। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
২৯৯. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমিই প্রথম ব্যক্তি, যাকে ক্বিয়ামাতের দিন [আল্লাহর দরবারে] সাজদাহ্ করার অনুমতি দেয়া হবে। আর এভাবে আমিই প্রথম ব্যক্তি যাকে সাজদাহ্ হইতে মাথা উঠাবার অনুমতি দেয়া হবে। অতঃপর আমি আমার সামনে [উপস্থিত উম্মাতদের দিকে] দৃষ্টি নিক্ষেপ করব এবং সকল নবী-রাসূলদের উম্মাতদের মধ্য হইতে আমার উম্মাতকে চিনে নিব। এভাবে আমার পেছনে, ডান দিকে, বাম দিকেও তাকাব। আমার উম্মাতকে চিনে নিব। [এটা শুনে] এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিভাবে আপনি নূহ [আঃ] থেকে আপনার উম্মাত পর্যন্ত এত লোকের মধ্যে আপনার উম্মাতকে চিনে নিবেন? উত্তরে তিনি [সাঃআঃ] বললেন, আমার উম্মাত উযূর কারণে ধবধবে সাদা কপাল ও ধবধবে হাত-পা সম্পন্ন হবে, অন্য কোন উম্মাতের মধ্যে এরূপ হবে না। তাছাড়া আমি তাদেরকে চিনতে পারব এসব কারণে যে, তাদের ডান হাতে আমালনামা থাকিবে এবং তাদেরকে আমি এ কারণেও চিনব যে, তাদের অপ্রাপ্ত বয়সের সন্তানরা তাদের সামনে দৌড়াদৌড়ি করিবে। {১}
{১} সহীহ : আহমাদ ৩১২৩০, সহীহুত্ তারগীব ১৮০। মিশকাত শরীফ -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply