মুযদালিফা, মিনা ও আরাফাত । জামরায় কংকর মারা

মুযদালিফা, মিনা ও আরাফাত । জামরায় কংকর মারা

মুযদালিফা, মিনা ও আরাফাত । জামরায় কংকর মারা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ৭, অনুচ্ছেদঃ (৫০-৬৫)=১৬টি

৫০. অনুচ্ছেদঃ মিনায় গমন এবং সেখানে অবস্থান
৫১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মিনার যে জায়গাতে আগে পৌঁছবে সেটিই হইবে তার অবস্থানস্থল
৫২. অনুচ্ছেদঃ মিনায় নামাজ কসর করা
৫৩. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতে অবস্থান এবং সেখানে দুআ করা
৫৪. অনুচ্ছেদঃ সম্পূর্ণ আরাফাতই অবস্থান স্থল
৫৫. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতের ময়দান হইতে প্রত্যাবর্তন
৫৬. অনুচ্ছেদঃ মাগরিব ও এশা একসাথে মুযদালিফাতে আদায় করা
৫৭. অনুচ্ছেদঃ মুযদালিফায় যে লোক ঈমামকে পেল সে লোক হজ্জ পেয়ে গেল
৫৮. অনুচ্ছেদঃ রাতেই দুর্বল লোকদের মুযদালিফা হইতে [মিনায়] পাঠানো
৫৯. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর দিন সকাল বেলা কংকর মারা
৬০. অনুচ্ছেদঃ সূর্য উঠার আগেই মুযদালিফা হইতে [মিনার উদ্দেশ্যে] রাওয়ানা হওয়া
৬১. অনুচ্ছেদঃ ছোট নুড়ি পাথর নিক্ষেপ [রমী] করিতে হইবে
৬২. অনুচ্ছেদঃ সূৰ্য ঢলে পড়ার পর রমী [কংকর নিক্ষেপ] করা
৬৩. অনুচ্ছেদঃ আরোহী বা হাঁটা অবস্থায় রমী করা
৬৪. অনুচ্ছেদঃ জামরায় কিভাবে কংকর মারতে হইবে
৬৫. অনুচ্ছেদঃ জামরায় কংকর মারার সময় লোকদের হাঁকিয়ে সরিয়ে দেয়া নিষেধ

৫০. অনুচ্ছেদঃ মিনায় গমন এবং সেখানে অবস্থান

৮৭৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদের নিয়ে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনায় যুহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ আদায় করিলেন, তারপর ভোরে যাত্রা শুরু করেন আরাফাতের দিকে।

-সহীহ, হাজ্জাতুন নাবী [সাঃআঃ] [৫৫/৬৯], মুসলিম, জাবির হইতে।আবু ঈসা বলেন, হাদীস বিশারদগণ বর্ণনাকারী ইসমাঈল ইবনি মুসলিমের স্মরণশক্তির সমালোচনা করিয়াছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৮০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মিনায় যুহর ও ফজরের নামাজ [অর্থাৎ যুহর হইতে পরবর্তী ফজর পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্তের নামাজ] আদায় করিলেন। তারপর ভোরেই আরাফাতের দিকে যাত্রা শুরু করেন।

-সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।আবদুল্লাহ ইবনিয যুবাইর ও আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, মিকসাম-ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত খাদীস সম্পর্কে আলী ইবনিল মাদীনী ইয়াহইয়ার সনদে শুবা হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, হাকাম মিকসাম হইতে মাত্র পাঁচটি হাদীস শুনেছেন। এরপর এই পাঁচটি হাদীস তিনি বিস্তারিত উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু এগুলোর মধ্যে উক্ত হাদীসটি ছিল না।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫১. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি মিনার যে জায়গাতে আগে পৌঁছবে সেটিই হইবে তার অবস্থানস্থল

৮৮১. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ [সাঃআঃ]! আমরা মিনায় আপনার জন্য কি একটা ঘর বানিয়ে দিব যা আপনাকে ছায়া দিবে? তিনি বললেনঃ না। যে ব্যক্তি মিনায় যে জায়গাতে আগে পৌঁছবে সেটিই হইবে তার অবস্থানস্থল।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৩০০৬], আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহিহ।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৫২. অনুচ্ছেদঃ মিনায় নামাজ কসর করা

৮৮২.হারিসা ইবনি ওয়াহব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় থাকা অবস্থায় আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সর্বাধিক সংখ্যক লোকসহ মিনায় [চার রাকআত ফরযের স্থলে] দুই রাকআত নামাজ আদায় করেছি।

-সহীহ, সহীহ আবু দাউদ [১৭১৪], বুখারী, মুসলিম।ইবনি মাসউদ, ইবনি উমার ও আনাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলেন, আমি মিনাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করেছি এবং এখানে আবু বাকর, উমার ও উসমান [রাদি.]-এর খিলাফাতের প্রথম দিকেও দুই রাকাআত নামাজ আদায় করেছি।মক্কাবাসীদের জন্য মিনায় নামাজ কসর করা প্রসঙ্গে ঈমামদের মধ্যে মতের অমিল আছে। একদল আলিম বলেন, মিনায় মুসাফির ছাড়া অন্য কোন মক্কাবাসী সেখানে নামাজ কসর করিবে না। এই মত দিয়েছেন ইবনি জুরাইজ, সুফিয়ান সাওরী, ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তান, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ]। কিছু আলিম বলেছেন, মক্কাবাসীর জন্য মিনায় নামাজ কসর করায় কোন সমস্যা নেই। এই অভিমত আওযাঈ, মালিক, সুফিয়ান ইবনি উআইনা ও আবদুর রাহমান ইবনিল মাহদী [রঃ]-এর।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতে অবস্থান এবং সেখানে দুআ করা

৮৮৩. ইয়াযীদ ইবনি শাইবান [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, ইবনি মিরবা আনসারী [রাদি.] আমাদের নিকটে আসলেন। আরাফাতের এমন এক জায়গায় আমরা অবস্থান করছিলাম যাকে আমর [রাদি.] [ইমামের স্থান হইতে] বহু দূর বলে মনে করছিলেন। ইবনি মিরবা আনসারী [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর প্রতিনিধি হিসাবে আমি তোমাদের নিকটে এসেছি। তিনি বলেছেনঃ হজ্জের নির্ধারিত স্থানসমূহে তোমরা অবস্থান কর। কারণ, তোমরা ইবরাহীম [আঃ]-এর ওয়ারিসী প্রাপ্ত হয়েছ।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০১১]।আলী, আইশা, জুবাইর ইবনি মুতইম ও শারদ ইবনি সুওয়াইদ সাকাফী [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। আমরা হাদীসটি প্রসঙ্গে শুধু ইবনি উআইনা হইতে-আমর ইবনি দীনারের সূত্রেই জানতে পারি। ইবনি মিরবার নাম ইয়াযীদ আনসারী। এই একটি হাদীসই তার সূত্রে বর্ণিত আছে বলে জানা যায়।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৮৪. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরাইশ এবং তাহাদের ধর্মের যারা অনুসারী ছিল তাহাদেরকে হুম্স বলা হত। তারা মুযদালিফায় অবস্থান করত এবং বলত, আমরা আল্লাহর ঘরের অধিবাসী। তারা ব্যতীত অন্য লোকেরা আরাফাতে অবস্থান করত। আল্লাহ্ তাআলা এই বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ

‏ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ ‏

“অতঃপর যেখান হইতে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সেখান হইতে প্রত্যাবর্তন কর” [সূরাদি. বাকারা-১৯৯]।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০১৮],বুখারী, মুসলিম।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। হাদীসটির তাৎপর্য এই যে, মক্কাবাসীরা [হজ্জের সময়] হারাম শারীফের বাইরে বের হত না। হারাম শারীফের বাইরে আরাফাতের ময়দান অবস্থিত। তাই তারা মুযদালিফায় অবস্থান করত এবং আল্লাহ্‌র ঘরের অধিবাসী বলে [গর্ববোধের] নিজদেরকে পরিচয় দিত। আরাফাতে তারা ব্যতীত অন্যান্য লোক থাকত। এ প্রসঙ্গেই আল্লাহ্ তাআলা অবতীর্ণ করেনঃ “অতঃপর লোকেরা যেখান হইতে প্রত্যাবর্তন করে তোমরাও সেখান হইতে প্রত্যাবর্তন কর”। “হুমস” হল হারামবাসী।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪. অনুচ্ছেদঃ সম্পূর্ণ আরাফাতই অবস্থান স্থল

৮৮৫. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরাফাতে অবস্থান গ্রহণ করিলেন, তারপর বললেনঃ এটাই আরাফাতের ময়দান, এটাই অবস্থান স্থল। আর গোটা আরাফাতই অবস্থান স্থল। এরপর সূর্য ডুবে গেলে তিনি সেখান হইতে ফিরে আসলেন এবং তার বাহনের পিছনে উসামা ইবনি যাইদকে বসালেন। স্বীয় অবস্থান হইতে তিনি হাত দিয়ে ইশারা করছিলেন। লোকজন তাহাদের উটগুলো ডানে বামে হাকাচ্ছিল। তাহাদের দিকে তিনি তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেনঃ হে লোক সকল! তোমরা শান্তভাবে পথ চল। লোকদেরকে নিয়ে মুযদালিফায় পৌঁছে তিনি দুই ওয়াক্তের [মাগরিব ও এশা] নামাজ একসাথে আদায় করিলেন। ভোরে কুযাহ নামক জায়গাতে এসে তিনি অবস্থান করিলেন এবং বললেনঃ এটা হলো কুযাহ; এটাও অবস্থান স্থল, আর সম্পূর্ণ মুযদালিফাই অবস্থানের জায়গা। এরপর তিনি ওয়াদী মুহাসসারে আসলেন। তাহাঁর উটটিকে তিনি বেত মারলেন, ফলে তা দ্রুত উপত্যকাটি অতিক্রম করিল। তারপর তিনি থামলেন এবং তাহাঁর পিছনে ফাযলকে বসালেন এরপর তিনি জামরায় আসলেন এবং এখানে কংকর নিক্ষেপ করিলেন। তিনি কুরবানীর জায়গায় পৌছে বললেনঃ এটা কুরবানী করার জায়গা। আর সম্পূর্ণ মিনাই কুরবানী করার জায়গা। এরকম সময় তাকে খাসআম গোত্রের এক যুবতী ফাতাওয়া জিজ্ঞাসা করিল, আমার বাবা খুবই বয়স্ক ব্যক্তি। আল্লাহ তাআলার নির্ধারিত হজ্জ তার উপর ফরয হয়েছে। তার পক্ষ হইতে আমি হজ্জ আদায় করলে সেটা কি তার জন্য যথেষ্ট হইবে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবার পক্ষ হইতে হজ্জ আদায় কর। আলী [রাদি.] বলেন, তিনি এমন সময় ফাযলের ঘাড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চাচাতো ভাইয়ের ঘাড় কেন ঘুরিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ আমি লক্ষ্য করলাম এরা দুইজন যুবক-যুবতী। সুতরাং তাহাদেরকে আমি শাইতান হইতে নিরাপদ মনে করিনি। এরপর এক লোক এসে তাকে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে মাথা মুণ্ডনের পূর্বেই তাওয়াফ [ইফাযা] করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ মাথা মুণ্ডন করে ফেলো, কোন সমস্যা নেই, অথবা বলিলেন, চুল ছেটে ফেলো, কোন সমস্যা নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আরেক লোক এসে বলিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কংকর মারার পূর্বেই কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কংকর মেরে নাও, কোন সমস্যা নেই। আলী [রাদি.] বলেন, তারপর বাইতুল্লাহু পৌছে তিনি তাওয়াফ করিলেন, তারপর যমযম কূপের নিকটে এসে বললেনঃ হে আবদুল মুত্তালিব বংশের লোকেরা! জনতা তোমাদের উপর প্রবল হয়ে উঠবে এই ভয় যদি না হত তবে আমি [তোমাদের সঙ্গে] অবশ্যই পানি টেনে তুলতাম।

-হাসান, হিযাবুল মারআ, আল-হাজ্জুল কাবীর [২৮]।জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে, এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। আলী [রাদি.]-এর এই হাদীসটি আমাদের নিকটে আবদুর রাহমান ইবনিল হারিস ইবনি আইয়্যাশের সূত্র ছাড়া অন্য কোন সূত্রে বর্ণিত আছে বলে জানা নেই। সাওরী হইতে একাধিক বর্ণনাকারী অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আরাফাতে যুহরের ওয়াক্তে যুহর ও আসর একসাথে আদায় করিতে বলেছেন। কিছু আলিম বলেন, নিজের অবস্থান স্থলেই কোন লোক নামাজ আদায় করলে এবং ইমামের সঙ্গে নামাযে হাযির না হয়ে নিজ অবস্থান স্থলে নামাজ আদায় করলে সে চাইলে ইমামের মত দুই নামাজ একসাথে আদায় করিতে পারে। বর্ণনাকারী যাইদ ইবনি আলী হলেন ঈমাম হুসাইন [রাদি.]-এর পৌত্র।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৫৫. অনুচ্ছেদঃ আরাফাতের ময়দান হইতে প্রত্যাবর্তন

৮৮৬. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওয়াদী মুহাসসারে তার উট দ্রুত হাঁকিয়ে যান। এই হাদীসে বিশর আরো উল্লেখ করেন যে, তিনি শান্তভাবে মুযদালিফা হইতে ফিরে আসেন এবং লোকদেরকেও শান্তভাব অবলম্বনের হুকুম দেন। আবু নুআইম আরো বর্ণনা করেনঃ তিনি নুড়ি পাথর [জামরায়] ছুঁড়ে মারার হুকুম দেন এবং বলেনঃ এই বছরের পর হয়ত আমি আর তোমাদের দেখা পাব না।

– সহীহ, সহীহ আবু দাউদ [১৬৯৯, ১৭১৯], মুসলিম।উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৬. অনুচ্ছেদঃ মাগরিব ও এশা একসাথে মুযদালিফাতে আদায় করা

৮৮৭. আবদুল্লাহ ইবনি মালিক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

মুযদালিফাতে ইবনি উমার [রাদি.] নামাজ আদায় করিলেন। সেখানে তিনি এক ইকামাতে দুই নামাজ [মাগরিব ও এশা] একসাথে আদায় করিলেন এবং বললেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এই স্থানে আমি এরকমই করিতে দেখেছি।

– সহীহ, সহীহ আবু দাউদ [১৬৮২, ১৬৯০], নাসা-ঈ, মুসলিমের শব্দ ইকামাতুন ওয়াহিদাতুন ঐ বর্ণনাটি শাজ, বুখারীর শব্দ প্রত্যেক নামাযের জন্যই ইকামাত, এ বর্ণনাটি সংরক্ষিত।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৮৮. মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ হইতে, তিনি ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ হইতে, তিনি আবু ইসহাক হইতে, তিনি সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে, তিনি ইবনি উমার হইতে, তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

-সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।মুহাম্মাদ ইবনি বাশশার বলেন, ইয়াহইয়া সুফিয়ানের বর্ণনাটিকে সঠিক বলেছেন। আলী, আবু আইয়্যুব, আবদুল্লাহ্ ইবনি মাসউদ, জাবির ও উসামা ইবনি যাইদ [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি উমার [রাদি.]-এর হাদীস সম্বন্ধে সুফিয়ানের রিওয়ায়াতটি ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদের রিওয়ায়াত অপেক্ষা বেশি সহীহ। সুফিয়ানের রিওয়ায়াতটি হাসান সহীহ।এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ বলেন, মাগরিবের নামাজ মুযদালিফার বাইরে আদায় করা যাবে না। মুযদালিফায় পৌছার পর দুই নামাজ [মাগরিব-এশা] এক ইকামাতে একইসাথে আদায় করিবে, এর মধ্যে নফল নামাজ আদায় করিবে না। কিছু আলিম এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। এই অভিমত সুফিয়ান সাওরীর। তিনি বলেন, ইচ্ছা করলে মাগরিব আদায় করে রাতের খাবার খেয়ে, পোশাক-পরিচ্ছদ ছেড়ে তারপর ইকামাত দিয়ে এশার নামাজ আদায় করা যায়। আবার কিছু আলিম বলেন, মুযদালিফায় মাগরিব ও এশা একসাথে এক আযান ও দুই ইকামাতে আদায় করিবে। মাগরিবের আযান দেওয়ার পর ইকামাত দিবে এবং মাগরিবের নামাজ আদায় করিবে, আবার ইকামাত দিয়ে এশার নামাজ আদায় করিবে। এই মত ঈমাম শাফির। আবু ঈসা বলেনঃ আবু ইসহাক-মালিক পুত্রদ্বয় আবদুল্লাহ ও খালিদ সূত্রে-ইবনি উমার [রাদি.] হইতে এই হাদীসটিকে ইসরাঈল বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে সাঈদ ইবনি জুবাইর [রঃ] বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। সাঈদ ইবনি জুবাইর হইতে সালামা ইবনি কুহাইলও এটিকে বর্ণনা করিয়াছেন। মালিকের পুত্রদ্বয় আবদুল্লাহ ও খালিদ-ইবনি উমার [রাদি.] হইতে এটিকে আবু ইসহাক বর্ণনা করিয়াছেন। ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭. অনুচ্ছেদঃ মুযদালিফায় যে লোক ঈমামকে পেল সে লোক হজ্জ পেয়ে গেল

৮৮৯.আবদুর রাহমান ইবনি ইয়ামার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকটে নাজদবাসী কিছু লোক আসলো। তিনি তখন আরাফাতে অবস্থান করছিলেন। তারা হজ্জ সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করে। এই মর্মে এক ঘোষণাকারীকে তিনি ঘোষণা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেনঃ হজ্জ হচ্ছে আরাফাতে অবস্থান। মুযদালিফার রাতে ফজর উদয় হওয়ার পূর্বেই কোন লোক এখানে পৌঁছতে পারলে সে হজ্জ পেল। তিনটি দিন হচ্ছে মিনায় অবস্থানের। দুই দিন অবস্থান করে কোন লোক তাড়াতাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করলে তাতে কোন সমস্যা নেই। আর তিন দিন পর্যন্ত অবস্থানকে কোন লোক বিলম্বিত করলে তাতেও কোন সমস্যা নেই। মুহাম্মাদ আল-বুখারী বলেন, ইয়াহইয়ার বর্ণনায় আরো আছেঃ এক লোককে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর পিছনে আরোহণ করালেন। সে লোক তা ঘোষণা দিতে থাকল।

— সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০১৫]।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৯০. ইবনি আবী উমার সুফিয়ান হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদীসের মতই ইবনি আবী উমার সুফিয়ান ইবনি উয়াইনা হইতে, তিনি সুফিয়ান সাওরী হইতে, তিনি বুকাইর ইবনি আতা হইতে তিনি আবদুর রাহমান ইবনি ইয়ামুর [রাদি.] হইতে তিনি নাবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন।

– সহীহ, দেখুন পূর্বের হাদীস।সুফিয়ান ইবনি উআইনা বলেন, এটি একটি উত্তম হাদীস যা সুফিয়ান সাওরী বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিম আবদুর রাহমান ইবনি ইয়ামুরের হাদীস অনুসারে আমল করেন। তাঁরা বলেন, [৯ যিলহজ্জ দিবাগত রাতে] কোন লোক যদি ফজর উদয়ের পূর্বে আরাফাতে হাযির হইতে ব্যর্থ হয় তবে তার হজ্জ ছুটে গেল। ফজর উদয়ের পর হাযির হলে তা ধর্তব্য হইবে না। সে উমরা করিবে এবং পরবর্তী বছর হজ্জ আদায় করিবে। এই মত প্রকাশ করিয়াছেন সুফিয়ান সাওরী, সাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক। আবু ঈসা বলেনঃ শুবা বুকাইর ইবনি আতা হইতে সাওরীর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটি ওয়াকী বর্ণনা করে বলেছেন, হজ্জ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মূল হচ্ছে এই হাদীসটি।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৯১.উরওয়া ইবনি মুযাররিস ইবনি আওস ইবনি হারিসা ইবনি লাম আত-তাঈ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি মুযদালিফায় রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আসলাম, তখন তিনি নামাযের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাঈ-এর দুই পাহাড় [অঞ্চল] হইতে এসেছি। আমার বাহনকেও আমি ক্লান্ত করে ফেলেছি এৰং নিজেকেও খুবই পরিশ্রান্ত করেছি। আল্লাহর শপথ! আমি এমন কোন বালির স্তুপ ছেড়ে যাইনি যেখানে আমি অবস্থান করিনি। আমার কি হজ্জ হইবে? রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমাদের এই নামাযে যে লোক শরীক হয়েছে, আমাদের সাথে ফিরে আসা পর্যন্ত অবস্থান করেছে এবং এর পূর্বে রাতে বা দিনে আরাফাতে থেকেছে তার হজ্জ পূর্ণ হয়েছে এবং সেলোক তার অপরিচ্ছন্নতা দূর করে নিয়েছে।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০২৬], বুখারী, মুসলিম।এ হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। তাফাসাহু এর অর্থ তার হজ্জ। বালির স্তুপকে হাবল বলা হয়। পাথরের স্তুপকে জাবাল বলা হয়।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. অনুচ্ছেদঃ রাতেই দুর্বল লোকদের মুযদালিফা হইতে [মিনায়] পাঠানো

৮৯২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাল-সামানবাহী দলের সাথে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতেই আমাকে মুযদালিফা হইতে [মিনায়] পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

– সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০২৬], নাসা-ঈ অনুরূপ।আইশা, উন্মু হাবীবা, আসমা বিনতু বাকর ও ফাযল ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৯৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার পরিবারের মধ্যে দুর্বলদের [মুযদালিফা হইতে মিনায়] আগেই পাঠিয়ে দেন। আর তিনি বলে দেনঃ তোমরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত [জামরায়] কংকর নিক্ষেপ করিবে না।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০২৫]।ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম বলেন, রাতে মুযদালিফা হইতে দুর্বলদেরকে আগেই মিনায় পাঠিয়ে দেয়াতে কোন সমস্যা নেই। এই হাদীসের ভিত্তিতে বেশিরভাগ আলিম বলেন, সূর্য না উঠা পর্যন্ত কংকর মারবে না। তবে কিছু সংখ্যক আলিম রাতেও কংকর মারার অনুমতি দিয়েছেন। এই অভিমত সুফিয়ান সাওরী ও শাফিঈর। আবু ঈসা বলেন, “রাতেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাল-পত্রবাহীদের সাথে আমাকে মুযদালিফা হইতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন” মর্মে ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটি সহীহ। এটি তার বরাতে একাধিক সূত্রে বর্ণিত আছে।শুবা হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন মুশাশ হইতে, তিনি আতা হইতে, তিনি ইবনি আব্বাস হইতে, তিনি ফাযল ইবনি আব্বাস হইতে, “রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতে মুযদালিফা হইতে তার পরিবারের দুর্বলদেরকে আগেই [মিনায়] পাঠিয়ে দেন।” এই হাদীসটি ভুল।বর্ণনাকারী মুশাশ এই হাদীসটি বর্ণনা করিতে গিয়ে ভুল করিয়াছেন। এর সনদে তিনি ফাযল ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নাম ঢুকিয়ে দিয়েছেন।অথচ আতা হইতে ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর সূত্রে এই হাদীসটি ইবনি জুরাইয প্রমুখ বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তারা ফাযল ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর নাম উল্লেখ করেননি। মুশাশ বসরার অধিবাসী, শুবা তার নিকট হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯. অনুচ্ছেদঃ কুরবানীর দিন সকাল বেলা কংকর মারা

৮৯৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরবানীর দিন [১০ই যিলহজ্জ] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সকাল বেলা কংকর মেরেছেন এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে সূৰ্য ঢলে যাওয়ার পর কংকর মেরেছেন।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০৫৩], মুসলিম।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। কুরবানীর দিনের পরবর্তী দিনসমূহে তারা দুপুরের পর কংকর মারার কথা বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬০. অনুচ্ছেদঃ সূর্য উঠার আগেই মুযদালিফা হইতে [মিনার উদ্দেশ্যে] রাওয়ানা হওয়া

৮৯৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

সূর্য উঠার আগেই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] [মুযদালিফা হইতে] যাত্রা করেন।

পরবর্তী হাদীসের সহায়তায় এ হাদীসটি সহীহ।

উমার [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। সূর্য উঠা পর্যন্ত জাহিলী যুগের লোকেরা অপেক্ষা করত, তারপর রাওয়ানা হত।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৯৬. আমর ইবনি মাইমুন [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা মুযদালিফায় অবস্থানরত ছিলাম। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] তখন বললেনঃ সূর্য না উঠা পর্যন্ত মুশরিকরা এখান হইতে রাওয়ানা হত না। তারা বলতঃ হে সাবির। আলোকিত হও। কিন্তু তাহাদের বিপরীত নীতি অনুসরণ করেন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]। অতঃপর সূর্য উঠার পূর্বেই উমার [রাদি.]-ও রাওয়ানা হন।

সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০২২], বুখারীএই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬১. অনুচ্ছেদঃ ছোট নুড়ি পাথর নিক্ষেপ [রমী] করিতে হইবে

৮৯৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আমি ছোট কংকর দিয়ে জামরায় নিক্ষেপ করিতে দেখেছি।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০২৩], মুসলিম।সুলাইমান ইবনি আমর ইবনিল আহওয়াস তার মাতা উম্মু জুনদুব আল-আযদিয়া হইতে এবং ইবনি আব্বাস, ফাদল ইবনি আব্বাস, আবদুর রাহমান ইবনি উসমান আত-তাইনী ও আবদুর রাহমান ইবনি মুআয [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ বলেন, রমী করার পাথর হইবে ছোট আকৃতির।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬২. অনুচ্ছেদঃ সূৰ্য ঢলে পড়ার পর রমী [কংকর নিক্ষেপ] করা

৮৯৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, সূর্য ঢলে পড়ার পর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কংকর নিক্ষেপ করিতেন।

-জাবির [রাদি.] বর্ণিত ৯০১ নং হাদীসের সহায়তায় হাদীসটি সহীহ।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩. অনুচ্ছেদঃ আরোহী বা হাঁটা অবস্থায় রমী করা

৮৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরোহী অবস্থায় জামরায় কংকর মেরেছেন।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০৩৪], মুসলিম, জাবির হইতে দেখুন হাদীস নং [৮৮৭]।জাবির, কুদামা ইবনি আবদুল্লাহ ও উম্মু সুলাইমান ইবনি আমর ইবনিল আহওয়াস [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি আব্বাস [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করিয়াছেন। হেঁটে রমী বা পাথর নিক্ষেপ করাকে অন্য একদল আলিম পছন্দনীয় বলেছেন। ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে যে, কংকর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হেঁটে গিয়েছেন। আমাদের মতে এই হাদীসের তাৎপর্য হলঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন কোন সময় কার্যক্রম অনুসরণের সুযোগ প্রদানের জন্য আরোহী অবস্থায় কংকর মেরেছেন। আলিমগণের নিকট উভয় প্রকার হাদীসই গ্রহণযোগ্য।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯০০. ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

কংকর মারার উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জামরায় পায়ে হেঁটে যেতেন এবং পায়ে হেঁটে ফিরে আসতেন।

-সহীহ, সহীহা [২০৭২], সহীহ আবু দাউদ [১৭১৮]।এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। হাদীসটিকে মারফূ না করে কেউ কেউ উবাইদুল্লাহ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীস অনুযায়ী বেশিরভাগ আলিম আমল করিয়াছেন। কেউ কেউ বলেন, কুরবানীর দিন সাওয়ার হয়ে এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে হেটে কংকর মারবে। আবু ঈসা বলেন, যারা এই কথা বলেছেন তারা মূলতঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আমলের হুবহু অনুসরণার্থে তা বলেছেন। কেননা, কুরবানীর দিন কংকর মারার উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জামরায় সাওয়ারী অবস্থায় গিয়েছেন। আর শুধুমাত্র জামরা আকাবাতেই কুরবানীর দিন কংকর মারা হয়।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ জামরায় কিভাবে কংকর মারতে হইবে

৯০১. আবদুর রাহমান ইবনি ইয়াযীদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, জামরা আকাবায় যখন আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] আসলেন তখন উপত্যকার মাঝে দাঁড়ালেন, কিবলামুখী হলেন এবং বরাবর ডান ভ্রু উচু করে কংকর মারতে শুরু করিলেন। তিনি সাতটি কংকর মারলেন এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় আল্লাহু আকবার বলিলেন। এরপর তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই, যার উপর সূরা বাকারা নাযিল হয়েছে তিনি এখান হইতেই কংকর মেরেছেন।

-সহীহ, ইবনি মা-জাহ [৩০৩০], বুখারী, মুসলিম।হান্নাদ ওয়াকী হইতে, তিনি মাসউদী হইতে উক্ত সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ফাযল ইবনি আব্বাস, ইবনি উমার ও জাবির [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনি মাসউদ [রাদি.] বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। এই হাদীস অনুযায়ী আলিমগণ আমল করিয়াছেন। তাহাদের মতে সাতটি কংকর উপত্যকার মধ্য হইতে মারা এবং প্রতিটি কংকর মারার সময় তাকবীর বলা পছন্দনীয়। কিছু সংখ্যক আলিম এই সুযোগ রেখেছেন যে, যদি উপত্যকার মধ্য হইতে কংকর মারা সম্ভব না হয় তাহলে যেখান হইতে সম্ভব সেখান হইতেই তা মারা যাবে।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯০২. আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলার যিকির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জামরায় কংকর ছুড়া এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করার নিয়ম রাখা হয়েছে।

যঈফ, মিশকাত [২৬২৪], যঈফ আবু দাঊদ [৩২৮]আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহিহ।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ জামরায় কংকর মারার সময় লোকদের হাঁকিয়ে সরিয়ে দেয়া নিষেধ

৯০৩. কুদামা ইবনি আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে উষ্ট্রীতে সাওয়ার হয়ে জামরায় কংকর মারতে দেখেছি। সেখানে কোন রকম মারপিট, কোন ধাক্কাধাক্কি এবং সরে যাও সরে যাও ইত্যাদি কিছু ছিল না।

-সহীহ ইবনি মা-জাহ [৩০৩৫]।আবদুল্লাহ ইবনি হানযালা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। কুদামা ইবনি আব্দুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ বলেছেন। হাদীসটি শুধুমাত্র এই সূত্রেই পরিচিত। আর উহা আইমান ইবনি নাবিল [রঃ] হইতে বর্ণিত হাদীস। হাদীস বিশেষজ্ঞগণের মত অনুযায়ী আইমান ইবনি নাবিল একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।ওমরাহ হজ – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply