মাসজিদের ফাযীলত কুনূ্তে নাযিলা ও ক্বাযা নামাজ

মাসজিদের ফাযীলত কুনূ্তে নাযিলা ও ক্বাযা নামাজ

মাসজিদের ফাযীলত কুনূ্তে নাযিলা ও ক্বাযা নামাজ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৫১. অধ্যায়ঃ নামাজের জন্য পদচারণা করা যদ্বারা পাপ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।
৫২. অধ্যায়ঃ ফাজরের নামাজের পর বসে থাকার এবং মসজিদসমূহের ফাযীলত
৫৩. অধ্যায়ঃ ঈমামতির জন্য বেশী যোগ্য কে ?
৫৪. অধ্যায়ঃ যখন মুসলিমদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হয়, তখন সকল সলাতে কুনূ্তে নাযিলাহ্ পাঠ মুস্তাহাব
৫৫. অধ্যায়ঃ যে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়নি এবং তা করার [সম্পাদনের] ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব

৫০.অধ্যায়ঃ মাসজিদের দিকে অধিক পদচারণা ও যাতায়াতের ফাযীলত

১৩৯৯. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যার হাঁটার পথ [অর্থাৎ-ঘর] মসজিদ থেকে বেশী দূরে সে নামাজের অধিক সাওয়াব লাভের হাক্বদ্বার আর যে ব্যক্তি নামাজের জন্য অপেক্ষা করে ইমামের সাথে [জামাআতে] নামাজ আদায় করে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বেশী সাওয়াবের হাক্বদ্বার যে একাকী নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ে।

আবু কুরায়ব-এর বর্ণনাতে “জামাআতে ইমামের সাথে নামাজ আদায় করে” কথাটি উল্লেখ করা হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৭]

১৪০০. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি জৈনিক লোক সম্পর্কে জানি যার বাড়ী অপেক্ষা কারো বাড়ী মসজিদ থেকে অধিক দূরে ছিল বলে আমার জানা নেই। জামাআতের সাথে কোন ওয়াক্তের নামাজ আদায় করা তিনি ছাড়তেন না। উবাই ইবনি কাব বলেনঃ তাকে বলা হলো অথবা [বর্ণনাকারী আবু উসমান নাহদীর সন্দেহ] আমি বললামঃ যদি তুমি একটি গাধা কিনে নাও এবং তার পিঠে আরোহণ করে রাতের অন্ধকারে এবং রোদের মধ্যে নামাজ আদায় করিতে আসো তাহলে তো বেশ ভালই হয়। একথা শুনে সে বললঃ আমার বাড়ী মাসজিদের পাশে হোক তা আমি পছন্দ করি না। আমি চাই মাসজিদে হেঁটে আসা এবং মাসজিদে থেকে ঘরে আমার পরিবার-পরিজনের কাছে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ আমার জন্য [আমালনামায়] লিপিবদ্ধ হোক। তার এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তাআলা তোমার জন্য অনুরূপ সাওয়াবই একত্রিত করে রেখেছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৮]

১৪০১. আত্‌ তায়মী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৩৯৯]

১৪০২. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এক আনসারী ছিল যার বাড়ী মাদীনার অন্য লোকদের বাড়ীর তুলনায় [মাসজিদে নাবাবী থেকে] দূরে অবস্থিত ছিল। কিন্ত সে জামাআতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে এক ওয়াক্ত নামাজও ছাড়ত না। উবাই ইবনি কাব বলেন, আমরা তার জন্য সমবেদনা অনুভব করলাম। তাই তাকে বললাম, হে অমুক! আপনি যদি একটি গাধা খরিদ করে নিতেন তাহলে সূর্যের খরতাপ থেকে রক্ষা পেতেন এবং বিষাক্ত পোকা-মাকড় থেকেও নিরাপত্তা লাভ করিতে পারতেন। সে বলিল, আল্লাহ্‌র শপথ!মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ঘরের সাথেই আমার ঘর হোক তা আমি পছন্দ করি না। তার এ কথা আমার কাছে খুবই দুর্বিষহ মনে হলো। তাই আমি নবী [সাঃআঃ] -এর কাছে গিয়ে বিষয়টি তাঁকে জানালাম। তিনি তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করিলেন- সে পুনরায় অনুরূপ কথা বলিল। সে এ কথাও বলিল যে, এভাবে সে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে সাওয়াব বা পুরস্কার আশা করে। এ কথা শুনে নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ তুমি যা আশা করেছ তা তুমি অবশ্যই লাভ করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০০]

১৪০৩. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০১]

১৪০৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদের বাড়ী মসজিদ থেকে দূরে অবস্থিত ছিল। আমরা মাসজিদের আশে-পাশে বাড়ী নির্মাণের জন্য ঐ ঘর-বাড়ী বেঁচে ফেলতে মনস্থ করলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তা করিতে নিষেধ করেন। তিনি [আমাদের সম্বোধন করে] বললেনঃ [নামাজের জন্য মাসজিদের আসার] প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তোমাদের মর্যাদা ও সাওয়াব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯০, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০২]

১৪০৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মাসজিদে নাবাবীর পাশে কিছু জায়গা খালি হলে বানূ সাল্যমাহ্‌ গোত্র সেখানে এসে বসতি স্থাপন করিতে মনস্থ করিল। বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে পৌছলে তিনি তাদের [বানূ সালিমাহ্‌ গোত্রের লোকদের] উদ্দেশে বললেনঃ আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মাসজিদের কাছে চলে আসতে চাও। তারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা তাই মনস্থ করেছি। এ কথা শুনে তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ হে বানূ সালিমাহ্‌ গোত্রের লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঐ বাড়ীতেই থাকো। কারণ তোমাদের নামাজের জন্য মাসজিদে আসার প্রতিটি পদক্ষেপ লিপিবদ্ধ করা হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯১, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৩]

১৪০৬. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বানূ সালিমাহ্‌ গোত্রের লোকজন মাসজিদে নাবাবীর কাছে এসে উক্ত খালি স্থানে বসতি স্থাপন করিতে মনস্থ করিল| মাসজিদের নাবাবীর পাশে কিছু খালি জায়গা ছিল। বিষয়টি নবী [সাঃআঃ] অবগত হলে তিনি তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে বানূ সালিমাহ্‌ গোত্রের লোকজন ! তোমরা তোমাদের বর্তমান ঘর-বাড়ীতেই থাকো | নামাজের জন্য মাসজিদে আসতে তোমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ [পদক্ষেপের বিনিময়ে সাওয়াব] লিখিত হয় | নবী [সাঃআঃ] -এর কথা শুনে তারা বললঃ আমরা এতে [এ কথায় এতো খুশী হলাম যে] আমাদের বাড়ী-ঘর স্থানান্তরিত করে মাসজিদের কাছে আসলেও তত খুশী হতাম না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯২, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৪]

৫১. অধ্যায়ঃ নামাজের জন্য পদচারণা করা যদ্বারা পাপ মোচন ও মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।

১৪০৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাড়ী থেকে পাক-পবিত্র হয়ে [ওযূ করে] তারপর কোন ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোন ঘরে [মাসজিদে] যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৫]

১৪০৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তবে বকরের হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছেনঃ তোমাদের কারো বাড়ীর দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ঐ নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? এ ব্যাপারে তোমরা কি বলো? সবাই বললঃ না, তার শরীরে কোন প্রকার ময়লা থাকিবে না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ এটিই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দৃষ্টান্ত | এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা সকল পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৬]

১৪০৯. জাবির হইতে বর্ণীত, যিনি আবদুল্লাহর পুত্র হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে তোমাদের কারোর বাড়ীর দরজার পাশ দিয়ে দুকূল ছাপিয়ে উঠা প্রবহমান নদীর সাথে উপমা দেয়া যেতে পারে। আর ঐ নদীতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে। বর্ণনাকারী বলেন, হাসান বলেছেনঃ এভাবে [গোসল করলে] কোন ময়লা অবশিস্ট থাকিবে না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৭]

১৪১০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে এবং সন্ধ্যায় নামাজ আদায় করিতে মাসজিদে যায় এবং যতবার যায় আল্লাহ তাআলা ততবারই তার জন্য জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর উপকরণ প্রস্তত করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৮]

৫২. অধ্যায়ঃ ফাজরের নামাজের পর বসে থাকার এবং মসজিদসমূহের ফাযীলত

১৪১১. সিমাক ইবনি হার্‌ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন,আমি জাবির ইবনি সামুরাহ্‌-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি [ফাজ্‌রের নামাজের পর] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে বসতেন? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, অনেক দিন বসেছি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদের যে জায়গায় ফাজ্‌রের নামাজ [অথবা বলেছেন ভোরের নামাজ] আদায় করিতেন সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সেখানে থেকে উঠতেন না। সূর্য উদিত হওয়ার পর তিনি সেখান থেকে উঠতেন। লোকজন তখন জাহিলী যুগের ঘটনাবলী সম্পর্কে আলোচনা করত। এসব ঘটনা আলোচনা করিতে গিয়ে লোকজন হাসত আর তা দেখে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মুচকি হাসতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৪০৯]

১৪১২. জাবির ইবনি সামুরাহ্‌ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

[তিনি বলেছেনঃ ] নবী [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের নামাজ আদায়ের পর সূর্য স্পষ্টভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত নামাজের জায়গায় বসে থাকতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১০]

১৪১৩. সিমাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে বর্ণিত। কিন্ত তাতে ভালভাবে শব্দটির উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৩৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১১]

১৪১৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার কাছে সব চাইতে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদসমূহ আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০০, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১২]

৫৩. অধ্যায়ঃ ঈমামতির জন্য বেশী যোগ্য কে ?

১৪১৫

আবু সাঈদ আল খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তিনজন লোক একত্রিত হলে তাদের একজনকে তাদের ঈমাম বা নেতা হইতে হইবে। আর তাদের মধ্যে ঈমামত বা নেতৃত্বের সবচাইতে বেশী হাক্বদ্বার সেই ব্যক্তি যে সবচেয়ে বেশী কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০১, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৩]

১৪১৬

ক্বাতাদাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০২, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৪]

১৪১৭

আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [ই.ফা, ১৪০৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৫]

১৪১৮

আবু মাসঊদ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন আমাদেরকে বললেনঃ যে স‍র্বাপেক্ষা বেশী কুরাআনের পাঠক ও কুরআনী জ্ঞানের অধিকারী সে-ই ক্বওমের [লোকজনের] ইমামাত করিবে। সবাই যদি কুরানের জ্ঞানের সমপর্যায়ের হয় সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সুন্নাত সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত হইবে সে-ই ইমামাত করিবে। সুন্নাহর জ্ঞানেরও সবাই সমান হলে হিজরাতে যে অগ্রগামী সে ইমামাত করিবে। কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিজস্ব প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামাত করিবে না কিংবা তার অনুমতি ছাড়া তার বাড়ীতে তার বিছানায় বসবে না। বর্ণনাকারী আশাজ্জ তার বর্ণনায় [ইসলাম] শব্দের স্হানে [বয়স] শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৬]

১৪১৯

আবু কুরায়ব, ইসহাক্ব, আশাজ্জ, ইবনি আবু উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] … তারা সকলে আমাশ [রাদি.] -এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

পূর্বোক্ত হাদীসের অনূরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। [ই.ফা, ১৪০৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৭]

১৪২০

আবু মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদেরকে বললেনঃ আল্লাহর কিতাব কুরআন মাজীদের জ্ঞান যে সবচেয়ে বেশী এবং যে কুরআন তিলাওয়াতও সুন্দরভাবে করিতে পারে সে-ই নামাজের জামাআতে ইমামাত করিবে। সুন্দর ক্বিরাআতের ব্যাপারে সবাই যদি সমকক্ষ হয় তাহলে তাদের মধ্যে যে হিজরাতে অগ্রগামী সে ইমামাত করিবে। হিজরাতের ব্যাপারেও সবাই যদি সমকক্ষ হয় তাহলে তাদের মধ্যে যে বয়সে প্রবীণ সেই ইমামাত করিবে। কোন ব্যক্তি যেন কারো নিজের বাড়ীতে [বাড়ীর কর্তাকে বাদ দিয়ে] কিংবা কারো ক্ষমতাসীন এলাকায় নিজে ইমামাত না করে। আর কেউ যেন কারো বাড়ীতে গিয়ে অনুমতি ছাড়া তার বিছানায় না বসে। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৮]

১৪২১

মালিক ইবনি হুওয়াইরিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা প্রায় এ বয়সের কিছু যুবক রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে এসে বিশরাত [অর্থাৎ-বিশদিন] অবস্হান করলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু ও নম্র হৃদয়। তিনি বুঝতে পারলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের লোকজনের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছি। তাই নিজ পরিবারে আমরা কাকে কাকে রেখে গিয়েছি এ বিষয়ে তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা তাঁকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেনঃ ঠিক আছে, তোমরা নিজ পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মধ্যে অবস্হান করে তাদেরকে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষাদান করো। আর এ বিষয়ে তাদেরকে বিভিন্ন কাজ করিতে আদেশ করো। আর নামাজের সময় হলে তোমাদের কেউ আযান দিবে। তবে বয়সে যে সবার বড় সে ইমামাত করিবে। {১} [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৪১৯]

{১}এক্ষেত্রে বয়সে বড় হওয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে কারণ তাদের হিজরাত, ইসলাম গ্রহণ, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম] –এর সাহচর্য এবং বিশদিন অবস্হান – এ সকল বৈশিষ্ঠ্যে তারা সমান ছিল একমাত্র বয়স ব্যতীত।

১৪২২

আইয়ূব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে বর্ণিত। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২০]

১৪২৩

মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস আবু সুলাইমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার সমবয়সী একদল যুবকের সাথে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] –এর কাছে আসলাম। এতটুকু বর্ণনা করার পর তারা সবাই ইবনি উলাইয়্যাহ্ বর্ণিত হাদীসের অনূরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২০]

১৪২৪

মালিক ইবনি হুওয়াইরিস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং আমার এক বন্ধু নবী [সাঃআঃ] -এর কাছে গেলাম। যখন আমরা তাহাঁর নিকট থেকে ফিরতে চাইলাম তখন তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃনামাজের সময় হলে আযান দিবে এবং তারপর ইক্বামত দিবে [অর্থাৎ-নামাজ আদায় করিবে]। তবে তোমাদের মধ্যে যে বয়সে বড় হইবে সেই যেন ইমামাত করে। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪০৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২১]

১৪২৫

খালিদ আল হায্‍যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে হাফ্‌সা ইবনি গিয়াস এতটুকু কথা অতিরিক্ত বলেছেন যে, হায্‍যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, তারা উভয়ে [মালিক ইবনিল হুওয়াইরিস এবং তার বন্ধু] ক্বিরাআতের ব্যাপারে সমকক্ষ ছিলেন | [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১০, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২১]

৫৪. অধ্যায়ঃ যখন মুসলিমদের ওপর কোন বিপদ আপতিত হয়, তখন সকল নামাজে কুনূ্তে নাজিলা পাঠ মুস্তাহাব

১৪২৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্‌রের নামাজে ক্বিরাআত শেষ তাকবীর দিয়ে রুকূতে গিয়ে রুকূ থেকে যখন মাথা উঠাতেন তখন বলিতেনঃ

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ

“সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা-ওয়ালাকাল হাম্‌দ” – [অর্থাৎ – যে আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তাহাঁর প্রশংসা শুনেন। হে আমাদের প্রভু ! সকল প্রশংসা তোমারই জন্য নির্দিষ্ট।]। এরপর তিনি দাঁড়িয়ে বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ أَنْجِ الْوَلِيدَ بْنَ الْوَلِيدِ وَسَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ وَعَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ وَاجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ كَسِنِي يُوسُفَ اللَّهُمَّ الْعَنْ لِحْيَانَ وَرِعْلاً وَذَكْوَانَ وَعُصَيَّةَ عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ ‏

হে আল্লাহ! ওয়ালীদ ইবনি ওয়ালীদ, সালামাহ্‌ ইবনি হিশাম ও আইয়্যাশ ইবনি রবীআহ্‌ এবং দুর্বল ও নিপীড়িত মুমিনদের নাযাত দান করো। হে আল্লাহ ! তুমি মুযার গোত্রকে কঠোরহস্তে পাকড়াও করো। আর ইউসুফ [আঃ] -এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দিয়ে তাদের শায়েস্তা করো। হে আল্লাহ ! তুমি লিহ্‌ইয়ান, রিলান, যাক্‌ওয়ান ও উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রের ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করো। কেননা তারা আল্লাহ এবং তাহাঁর রসূলের অবাধ্য হয়েছে। অতঃপর আমরা জানতে পারলাম যে, আয়াত- “হে নবী ! এর ব্যাপারে তোমার কোন করণীয় নেই। আল্লাহ তাদের তাওবাহ্‌ কবূল করুন আর তাদেরকে শাস্তি দান করুন এ ব্যাপারে তিনি পূর্ণ ইখতিয়ারের অধিকারী। কেননা তারা তো যালিম” – [সুরা আ-লি ইমরান ৩: ১২৮]। অবতীর্ণ হওয়ার পর নবী [সাঃআঃ] এভাবে কুনূত পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

[ই.ফা.১৪১১, ইসলামিক সেন্টার-১৪২২]

১৪২৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে ইউসুফের সময়ে দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষের মুখোমুখী করা পর্যন্ত উল্লেখ করিয়াছেন। পরের অংশটুকু উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১২, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২২]

১৪২৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এক সময় একমাস যাবৎ ফাজরের নামাজে দ্বিতীয় রাকআতে রুকূ থেকে ওঠার পরে কুনূত পড়েছেন। এতে তিনি যখন রুকূ থেকে উঠে

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলিতেন তখন কুনূত পড়তে গিয়ে বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ أَنْجِ الْوَلِيدَ بْنَ الْوَلِيدِ اللَّهُمَّ نَجِّ سَلَمَةَ بْنَ هِشَامٍ اللَّهُمَّ نَجِّ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ اللَّهُمَّ نَجِّ الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اللَّهُمَّ اشْدُدْ وَطْأَتَكَ عَلَى مُضَرَ اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا عَلَيْهِمْ سِنِينَ كَسِنِي يُوسُفَ 

হে আল্লাহ, ওয়ালীদ ইবনি ওয়ালীদকে মুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ ! সালামাহ্‌ ইবনি হিশামকে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! আয়েশাহ ইবনি আবু রাবীআহ্‌কে মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! দুর্বল অসহায় মুমিনদেরকেও মুক্তি দাও। হে আল্লাহ ! তুমি মুযার গোত্রকে তোমার কঠোরতা দ্বারা পিষে মারো। হে আল্লাহ ! তুমি তাদের ওপর ইউসুফ [আঃ] -এর সময়ের দুর্ভিক্ষের মতো দুর্ভিক্ষ দান করো। আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] বলেছেন, পরে আমি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] -কে এ দুআ পরিত্যাগ করিতে দেখেছি। এতে আমি বিস্মিত হয়ে বললামঃ আমি দেখছি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এখন তাদের জন্য দুআ করা ছেড়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ আমাকে তখন বলা হলো তুমি কি দেখছনা যে, তারা সবাই মুক্ত হয়ে চলে এসেছেন?

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৩]

১৪২৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ইশার নামাজ আদায় করেছিলেন। সেজদা করার পূর্বে রুকূ থেকে উঠে যখন তিনি

 سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ” বলিলেন তখন এ বলে দুআ করলেনঃ

اللَّهُمَّ نَجِّ عَيَّاشَ بْنَ أَبِي رَبِيعَةَ 

“হে আল্লাহ! আইয়্যাশ ইবনি রাবীআকে মুক্তিদান করো” এতটুকু বর্ণনা করার পর আবু হুরায়রাহ্ আওযাঈ বর্ণিত হাদীসের বা সিনী ইউসুফ {অর্থাৎ- ইউসুফ [আঃ] }-এর যুগের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ দিয়ে শাস্তিদান করো পর্যন্ত উল্লেখ করিলেন। এতে তিনি আওযাঈ বর্ণিত হাদীসের পরের অংশটুকু উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৪]

১৪৩০. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ আমি তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] -এর মতো করে [প্রায় অনুরূপ] নামাজ আদায় করে দেখাব। এরপর আবু হুরায়রাহ্ যুহর, ইশা ও ফাজরের নামাজে কুনূত পড়তেন। এতে তিনি মুমিনদের জন্য দুআ করিতেন এবং কাফিরদেরকে অভিসম্পাত করিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৫]

১৪৩১. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, “বিরি মাউনাহ্‌” নামক স্থানে যে মুমিনদেরকে হত্যা করা হয়েছিল, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদের হত্যাকারীদের জন্য ত্রিশদিন পর্যন্ত ফাজরের নামাজে বদ দুআ করেছিলেন। আনাস বর্ণনা করিয়াছেন, “বিরি মাউনাহ্‌” নামক স্থানে নিহতদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আয়াত অবতীর্ণ করে ছিলেন যা আমরা পাঠ করতাম। অবশেষে তা মানসুখ বা রহিত করে দেয়া হয়েছিল। আয়াতটি ছিল-

অর্থাৎ“আমাদের ক্বওমকে এ সংবাদ পৌছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রভুর সাক্ষাৎ লাভ করেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর আমরাও তাহাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৬]

১৪৩২. মুহাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাসকে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি ফাজ্‌রের নামাজে কুনূত পড়তেন? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, রুকূর পরে সংক্ষিপ্তভাবে পড়তেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৭, ইসলামিক সেন্টার-১৪২৭]

১৪৩৩. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মাস যাবৎ ফাজ্‌রের নামাজে রুকূ করার পর কুনূত পড়েছেন। এতে তিনি রিল ও যাক্‌ওয়ান গোত্রদ্বয়ের জন্য বদ-দুআ করিতেন। আর উসাইয়্যাহ্‌ গোত্র সম্পর্কে বলিতেন যে, উসায়ইয়্যাহ্‌ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৮]

১৪৩৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক মাস যাবৎ ফাজ্‌রের নামাজে রুকূ থেকে উঠার পর কুনূতে বানূ উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রের জন্য বদ-দুআ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪১৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৪২৯]

১৪৩৫. আসিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] – কে কুনূত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, কুনূত রুকূ করার পূর্বে পড়তে হইবে না পরে? জবাবে তিনি বললেনঃ রুকূ করার পূর্বে পড়তে হইবে। তিনি বলেন, এ কথা শুনে আমি আবার বললাম যে, কোন কোন লোক বলে থাকে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকূ করার পর কুনূত পড়তেন। আনাস [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [রুকূর পরে] একমাস কুনূত পাঠ করিয়াছেন। তখন তিনি ঐ সব লোকদের জন্য বদ-দুআ করিতেন যারা তাহাঁর [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর] সহাবীকে হত্যা করেছিল যাদেরকে ক্বারী বলে সম্বোধন করা হত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২০, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩০]

১৪৩৬. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, বিরি মাউনাহ্‌-এর ঘটনায় ক্বারী বলে পরিচিত সত্তর জন সহাবীকে হত্যার কারণে নবী [সাঃআঃ] যতখানি বেদনাহত হয়ে ছিলেন এমনটি আর কোন সেনাদলের ক্ষেত্রে হইতে দেখিনি। এ ঘটনার পর তিনি একমাস পর্যন্ত [ঐসব সাহাবার] হত্যাকারীদের জন্য বদ-দুআ করেছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২১, ই.সে ১৪৩১]

১৪৩৭. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে উভয়েই কিছুটা অতিরিক্ত শাব্দিক তারতম্যসহ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২২, ইসলামিক সেন্টার-১৪৩২]

১৪৩৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক সময়ে নবী [সাঃআঃ] রিল, যাক্‌ওয়ান ও উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রসমূহকে লানত করে একমাস পর্যন্ত নামাজে কূনূত পড়েছেন। এরা সবাই আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের সাথে নাফরমানী করেছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩২, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৩]

১৪৩৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ [অর্থবোধক] হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৪]

১৪৪০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আরবে কিছু গোত্রের জন্য এক সময়ে একমাস যাবৎ বদ-দুআ করেছিলেন। কিন্তু পরে তিনি তা পরিত্যাগ করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৫, ইসলামিক সেন্টার-১৪৩৫]

১৪৪১. বারা ইবনি আযিয [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্‌র এবং মাগরিবের নামাজে কুনূত পড়তেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৬]

১৪৪২. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফাজ্‌র ও মাগরিবের নামাজে কুনূত পড়তেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৭]

১৪৪৩. খুফাফ ইবনি ঈমা আল গিফারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, কোন এক নামাজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ বলে বদ- দুআ করলেনঃ

اللَّهُمَّ الْعَنْ بَنِي لِحْيَانَ وَرِعْلاً وَذَكْوَانَ وَعُصَيَّةَ عَصَوُا اللَّهَ وَرَسُولَهُ غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ ‏

হে আল্লাহ ! তুমি বানী লিহ্‌ইয়ান, রিল যাক্‌ওয়ান ও উসাইয়্যাহ্‌ গোত্রসমূহের ওপর লানাত বর্ষণ করো। তারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের নাফরমানী করেছে। আর গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন এবং আসলাম গোত্রকে নিরাপদ রাখুন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৮]

১৪৪৪. হারিস ইবনি খুফাফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, খুফাফ ইবনি ঈমা বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [খুফাফ ইবনি ঈমা] বলেন, একদিন নামাজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকূ করিলেন এবং তারপর রুকূ থেকে মাথা তুলে বললেনঃ

غِفَارُ غَفَرَ اللَّهُ لَهَا وَأَسْلَمُ سَالَمَهَا اللَّهُ وَعُصَيَّةُ عَصَتِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ اللَّهُمَّ الْعَنْ بَنِي لِحْيَانَ وَالْعَنْ رِعْلاً وَذَكْوَانَ

গিফার গোত্রকে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন। আসলাম গোত্রকে আল্লাহ নিরাপদে রাখুন। আর উসাইয়্যাহ্‌ গোত্র তো আল্লাহ ও তাহাঁর রসূলের নাফরমানী করেছে। এরপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ ! তুমি বানী লিহ্‌ইয়ান গোত্রের ওপর লানাত বর্ষণ করো, রিল ও যাকওয়ান গোত্রদ্বয়ের ওপর লানাত বর্ষণ করো। এরপর তিনি সাজদায় চলে গেলেন। খুফাফ ইবনি ঈমা বলেছেনঃ এ কারণেই কুনূতে কাফিরদের লানাত করা হয়ে থাকে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪২৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৩৯]

১৪৪৫. খুফাফ ইবনি ঈমা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি তাতে “এ কারণেই কুনূতে কাফিরদের লানাত করা হয়ে থাকে” কথাটি বলেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩০, ইসলামিক সেন্টার- নেই]

৫৫. অধ্যায়ঃ যে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়নি এবং তা করার [সম্পাদনের] ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করা মুস্তাহাব

১৪৪৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] খায়বার যুদ্ধ শেষে ফিরে আসার সময় রাতে সফররত ছিলেন। এক সময় রাতের শেষভাগে তাঁকে তন্দ্রায় পেয়ে বসলে তিনি সেখানেই অবতরণ করিলেন। আর বিলালকে বললেনঃ তুমি আজ রাতে আমাদের পাহারার কাজ করো। সুতরাং বিলাল যতটা পারলেন রাতের বেলায় নামাজ আদায় করিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর সাহাবীগণ ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু ফাজরের সময় ঘনিয়ে আসলে বিলাল পূর্ব দিকে মুখ করে তার উটের সাথে হেলান দিলেন। এ সময় ঘুমে বিলালের দুচোখ বন্ধ হয়ে আসলো। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] , বিলাল কিংবা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাহাবীগণের কারোরই নিদ্রা ভঙ্গ হলো না।এ অবস্থায় তাদের গায়ে সূর্যের আলো এসে পড়ল।প্রথমে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তিনি জেগে উঠে বিলালকে ডাকলেন, হে বিলাল ! বিলাল বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আপনি যে কারণে জাগতে পারেন নি আমিও ঐ একই কারণে জাগতে পারিনি। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হুকুম দিলেন তাড়াতাড়ি যাত্রা করো। সুতরাং সবাই উটগুলো হাঁকিয়ে কিছু দূরে নিয়ে গেলে এবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ওযূ করিলেন এবং বিলালকে নামাজের জন্য আদেশ করিলেন। বিলাল নামাজের জন্য ইক্বামত দিলে তিনি তাদের সবাইকে সাথে ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন। নামাজ শেষে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ কেউ নামাজ আদায় করিতে ভুলে গেলে যখনই স্মরণ হইবে তখনই তা আদায় করে নিবে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِي‏

“আমার স্মরণের জন্য নামাজ আদায় করো” – [সূরাত্ব-হা-২০:১৪]।

ইউনুস বলেছেনঃ ইবনি শিহাব [আরবি] [লিযিক্‌রী] -এর স্থানে [আরবি] [লিয্‌যিক্‌রা-] আদায় করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩১, ইসলামিক সেন্টার- ১৪৪০]

১৪৪৭. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , আমরা একদিন নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে শেষ রাতে বিশ্রামের জন্য ঘুমালাম। কিন্তু সূর্যোদয়ের পূর্বে আমরা জাগিনি [নিদ্রা থেকে জেগে  উঠে] নবী [সাঃআঃ] বললেনঃ প্রত্যেকে নিজের উটের লাগাম টেনে নিয়ে যাও। কারন এই স্তানে আমাদের মাঝে শাইত্বন এসে হাজির হয়েছে। বর্ণনাকারী আবু হুরায়রাহ্ বলেছেন আমরা তাই করলাম। অতঃপর তিনি পানি চেয়ে নিয়ে ওযু করিলেন এবং দুটি সেজদা করিলেন [অর্থাৎ দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন] ইয়াকুব বলেছেনঃ অতঃপর নবী [সাঃআঃ] [ফাজরের দুই রাকআত] সুন্নাত আদায় করিলেন। অতঃপর নামাজের ইকামত দেওয়া হলে তিনি ফজরের [ফরজ] নামাজ আদায় করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩২ , ইসলামিক সেন্টার-১৪৪১]

১৪৪৮. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদিন [যুদ্ধ থেকে ফেরার সময়] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের সামনে  বক্তৃতা করিলেন। তিনি বললেনঃ আজকের বিকাল থেকে তোমাদের সারারাত পথ চলতে  হইবে এবং ইনশাআল্লাহ আগামীকাল সকালে পানির কাছে উপস্থিত হইবে। সুতরাং লোকজন সেখান থেকে এভাবে যাত্রা করিল যে, কেউ কারো দিকে   ফিরেও তাকাচ্ছিল না। আবু কাতাদাহ্ বলেন- রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -ও পথ চলছিলেন। এক সময় রাত্রি দ্বিপ্রহর হয়ে গেল। আমি তাহাঁর পাশে পাশেই চলছিলাম। এ সময় রাসুল [সাঃআঃ] তন্দ্রায় ঝিমুচ্ছিলেন। ঘুমের প্রভাবে এক সময় তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারির উপর একদিকে ঝূকে পড়লেন। ঠিক সে সময় আমি তাহাঁর পাশে গিয়ে তাঁকে ঠেলে ধরলাম [অথাৎ-ঠেকনা দিলাম]। তিনি [সাঃআঃ] সওয়ারীর উপর সোজা হয়ে বসলেন , কিন্তু তাঁকে জাগালাম না। এরপর তিনি [সাঃআঃ] চলতে থাকলেন এবং এ অবস্তায় রাতের অধিকাংশ সময় অতিক্রান্ত হলে সওয়ারির উপর থেকে আবার একদিকে ঝূকে পড়লেন। তখন আমি আবার তাঁকে সওয়ারির উপর তাঁকে না জাগিয়ে ঠেলে ধরলাম | এভাবে তিনি [সাঃআঃ] সওয়ারীর উপর সোজা হয়ে বসলেন। আবু ক্বাতাদাহ্ বলেন- এরপর তিনি [সাঃআঃ] আবার চলতে থাকলেন। রাত ভোর হয়ে আসলে তিনি [সাঃআঃ] এবার প্রথম দুবারের চেয়ে বেশি করে একদিকে ঝুকে পড়লেন এমনকি  পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। তখন আমি পুনরায় ঠেস লাগিয়ে ধরলাম। এবার তিনি মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করেন – কে? আমি বললাম – আবু ক্বাতাদাহ্। তিনি [সাঃআঃ] পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, এভাবে আমার পাশে পাশে কতক্ষন চলছ? আমি বললাম , আমি রাতের প্রথ্ম থেকেই এভাবে  আপনার সাথে চলছি। তিনি [সাঃআঃ] তখন বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করুন। কারন তুমি তাহাঁর নবী কে দেখাশুনা করেছ। তারপর তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ তুমি কি কাউকে দেখিতে পাচ্ছ? আমি বললাম  হাঁ এই তো একজন আরোহী | তারপর বললাম, এই তো আরও একজন আরোহী উপস্থিত হল।  এভাবে আমরা সাত জন একত্র হলাম। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাস্তা থেকে কিছু সরে গিয়ে মাটিতে মাথা রাখলেন [অর্থাৎ- শুয়ে পড়লেন]। এ সময় তিনি [সাঃআঃ] আমাদের বললেনঃ নামাজের খেয়াল রেখো। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ই ছিলেন প্রথম ব্যাক্তি যিনি নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন আর তখন সূর্যের আলো তাহাঁর পিঠের উপর এসে পড়েছিল। আবু ক্বাতাদাহ্ বলেন-এরপর আমারা সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উটে পড়লাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা সবাই যার যার সওয়ারীতে সওয়ার হও। তাই আমরা সওয়ারীতে চেপে যাত্রা করলাম। সূর্য বেশ কিছু উপরে উঠলে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সওয়ারী থেকে অবতরন করে  আমার কাছে অল্প পানিসহ যে ওযুর পাত্র ছিল তা চেয়ে নিয়ে অন্য সময়ের চেয়ে সংক্ষিপ্ত করে ওযু করিলেন। আবু ক্বাতাদাহ্ বলিলেন- এরপরও ঐ পাত্রে  কিছু পানি অবশিষ্ট থাকল। তিনি [সাঃআঃ] আবু ক্বাতাদাহ্-কে বললেনঃ পাত্রটি রেখে দাও , দেখবে পরে বিস্ময়কর কাণ্ড ঘটবে। তখন বিলাল নামাজের আযান দিলে  রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথমে দুরাকআত [সুন্নাত] নামাজ আদায় করিলেন এবং প্রতিদিনের মত করে ফাজরের ফারজ নামাজ আদায় করিলেন। আবু ক্বাতাদাহ্ বলেন – অতঃপর সওয়ারীতে আরোহণ  করলে আমারাও সওয়ারিতে আরোহণ করে তাহাঁর সাথে রওয়ানা হলাম। এ সময়ে আমারা পরস্পর চুপিসারে বলাবলি করছিলাম যে, আমারা নামাজের ব্যাপারে যে অবহেলা প্রদর্শন করছিলাম তার কাফফারাহ্ বা ক্ষতিপুরন কীভাবে হইবে? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ আমার জীবন ও কাজ-কর্ম কি তোমাদের জন্য অনুসরণীও আদর্শ নয়? এরপর তিনি [সাঃআঃ] আবার বললেনঃ ঘুমানোতে কোন দোষ বা অবহেলা নেই। অবহেলা তখনই বলা  হইবে যদি কোন ব্যাক্তি নামাজ না আদায় করে দেরি করে এবং অন্য নামাজের ওয়াক্ত হয়ে যায়। কোন সময় কারো যদি এরুপ হয়ে যায় সে যখন জাগ্রত হইবে তখনই যেন নামাজ আদায় করে নেয়। পরদিন সকালে যেন সে সময়মত নামাজ আদায় করে। পরে তিনি বললেনঃ অন্য সবাই কী করছে তা কি জান? সকালে লোকজন যখন তাদের নবী কে দেখিতে পেল না তখন আবু বাকর ও উমর তাদের বলিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের পিছনে আছেন। তিনি তোমাদের পিছনে ফেলে যেতে পারেন না। কিন্তু লোকজন বললঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তোমাদের সামনে আছেন। [নবী সাঃআঃ বলিলেন] এ ব্যাপারে তারা যদি আবু বাকর ও উমর-এর কথা মানতো তাহলে সঠিক কাজ করত।

আবু ক্বাতাদাহ্ বলেনঃ যখন বেলা বেড়ে দুপুর হল এবং সবকিছু সূর্যতাপে উপ্তপ্ত হয়ে উঠল তখন আমারা  লোকজনের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন তারা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে এসে বলছিলঃ হে আল্লাহ্‌র রাসুল ! আমারা পিপাসায় মরে গেলাম। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ না , তোমরা মরবে না। এরপর  তিনি বললেনঃ আমার ছোট পেয়ালাটা আনো। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] ওযুর পাত্রটাও চেয়ে নিলেন। এরপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পেয়ালাতে পানি ঢালতে থাকলেন আর আবু ক্বাতাদাহ্ পান করাতে থাকলেন। লোকজন  যখন দেখল যে , পানি মাত্র একপাত্র আর এতগুলো লোক তখন তারা [পানি থেকে বঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে] ভিড় জমিয়ে তুলল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ তোমরা ধীরে সুস্থে পানি পান করিতে থাকো। সবাইকে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করানো যাবে। সতরাং লোকজন তাই করিল। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পানি  ঢালছিলেন আর আমি [আবু ক্বাতাদাহ্] পান করাচ্ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমি এবং রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ছাড়া পানি পান করেত  আর কেউ অবশিষ্ট রইল না। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পেয়ালার পানি ঢেলে আমাকে বললেনঃ পান করো  | আমি বললাম- হে আল্লাহ্‌র রাসুল ! আপনি পান না করা পর্যন্ত আমি পান করব না। এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যিনি পান করান তিনি সবার শেষে পান করেন। আবু ক্বাতাদাহ্ বলেনঃ আমি তখন পানি পান করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পান করিলেন। পরে অবশ্য লোকজন পানি পান করার ফলে শান্ত মনে তৃপ্তি সহকারে যেতে থাকল।

হাদিসের বর্ণনাকারী সাবিত বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনি রাবাহ ও এ কথা শুনে বললেনঃ তাহলে তো আপনি এ হাদীসটি সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কোন কওমের লোক? আমি বললাম, আমি আনসারদের একজন। তিনি বলিলেন, তাহলে বর্ণনা কর। কেননা, তুমি তোমার হাদীস সম্পর্কে নিশ্চয়ই ভালভাবে অবহিত আছ। আবদুল্লাহ ইবনি রাবাহ বলেন- আমি ঐ রাতে কাফিলায় শারীক ছিলাম। তবে আমি জানতাম না যে , অন্য কেউও আমার মত হাদীসটি স্মরণ রেখেছেন।  

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৩ ইসলামিক সেন্টার-১৪৪২]

১৪৪৯. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , আমি নবী [সাঃআঃ] -এর কোন এক সফরে তাহাঁর সাথে ছিলাম। এক রাতে আমরা রাতের বেলায়ই পথ চলছিলাম | রাতের শেষ দিকে বিশ্রামের জন্য আমরা একস্থানে অবতরন করলে ঘুমের প্রভাবে আমাদের চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। এ অবস্তায় সূর্য উদিত হলো। ইমরান ইবনি হুসাইন বলেন, আমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম যিনি ঘুম থেকে জেগে উটলেন তিনি আবু বাকর। আমাদের নীতি ছিল নবী [সাঃআঃ] ঘুমানোর পর নিজে নিজেই যতক্ষণ না জাগতেন ততক্ষন আমারা কেউ তাঁকে নিদ্রা থেকে জাগাতাম না। আবু বকরের পর যিনি প্রথম ঘুম থেকে জাগলেন তিনি উমর। তিনি নবী [সাঃআঃ] -এর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে  উচ্চ শব্দে তাকবীর  বলিতে শুরু করিলেন। এতে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জেগে উঠলেন। তিনি [সাঃআঃ] মাথা উটিয়ে দেখিতে পেলেন সূর্য আগেই উদিত হয়েছে। তখন তিনি [সাঃআঃ] সবাইকে বললেনঃ  তোমরা এখান থেকে যাত্রা শুরু করো। এরপর তিনিও আমাদের সাথে যাত্রা করিলেন। অতঃপর সূর্যের কিরণ আরো পরিস্কারভাবে  চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তিনি সওয়ারী থামিয়ে অবতরন করিলেন এবং আমাদেরকে সাথে করে ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন। কিন্তু জৈনিক ব্যক্তি সবার থেকে দূরে থাকল এবং আমাদের সাথে নামাজ আদায় করিলেন না। নামাজ শেষ করে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন তুমি কি কারনে আমাদের সাথে নামাজ আদায় করলে না? সে বলিল , হে আল্লাহ্‌র নবী , আমার জন্য গোসল ফরজ হয়েছে [তাই নামাজ আদায় করিতে পারলাম না] তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করিতে বলিলেন। অতঃপর সে তায়াম্মুম করে নামাজ আদায় করিল। তারপর তিনি [সাঃআঃ]  আমাকে একদল লোকের সাথে সম্মুখের দিকে আগে আগে পাঠিয়ে দিলেন যাতে আমরা পানি খুঁজে বের করি। আমরা ইতিমধ্যে যার পর নাই তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলাম। আমরা পথ চলতে চলতে এক স্ত্রী লোককে দেখিতে পেলাম। সে তার সওয়ারীর উপর দুটি চামড়ার মশকের উপর দুদিকে পা ঝুলিয়ে বসেছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম , এখানে পানি কোথায় পাওয়া যাবে? সে বলে উঠল হায় ! হায় ! এখানে পানি তোমরা কোথায় পাবে? আমরা তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম , তোমার গোত্রের বসতি এলাকা থেকে পানি কত দূরে? সে বললঃ একদিন ও একরাতের পথের ব্যবধান। আমরা তাকে বললাম, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে চলো। সে বললঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আবার কি? এরপর আমরা আর তাকে নিজের ইচ্ছামত কোন কিছুই করিতে দিলাম না। বরং তাকে ধরে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে নিয়ে আসলাম। তিনি [সাঃআঃ] তাকে জিজ্ঞেস করিলেন , সে আমাদেরকে যা বলেছিল তাঁকেও তাই বলিল। সে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে আরও জানালেন যে , সে ইয়াতিম শিশুর অভিভাবিকা। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর উটকে বসাতে আদেশ করলে সেটাকে বসানো হল এবং  তিনি চামড়ার মশকের উপর দিকের মুখ দুটিতে কুল্লি করে দিলেন। এরপর উটটিকে দাড় করানো হলো। আমরা তৃষ্ণার্ত চল্লিশ জনে সবাই এবার তৃষ্ণা দূর করে পানি পান করলাম। আমরা আমাদের মশক ও পানির পাত্রগুলি ভর্তি করে নিলাম এবং আমাদের সঙ্গী লোকটিকেও গোসল করালাম। তবে কোন উটকে পানি পান করালাম না। অথচ মশক তখনও পানির চাপে ফেটে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। এরপর নবী [সাঃআঃ] আমাদের লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের যার কাছে যা আছে নিয়ে এসো। সুতরাং আমরা ঐ মহিলার জন্য খেজুর ও খেজুরের টুকরা এনে জমা করলে সেগুলো দিয়ে তার জন্য একটি পুটলি বাঁধা হলো। [এগুলো দিয়ে] নবী [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ এবার তুমি গিয়ে তোমার বাচ্চাদের খওয়াও। আর মনে রেখ যে, তোমার পানি আমরা আদৌ নেই নি। সে তার লোকদের নিকট ফিরে গিয়ে বললঃ আমি সবচেয়ে বড় জাদুকরের সাক্ষাৎ পেয়েছি। অথবা সে সম্ববত বলেছিল , একজন নবী র সাক্ষাৎ পেয়েছি। এমন-এমন বিস্ময়কর দেখলাম তার ব্যাপারটা আল্লাহ তাআলা ঐ মহিলার দ্বারা উক্ত জনপদকে হেদায়েত দান করিলেন। সুতরাং সেও ইসলাম গ্রহণ করিল এবং উক্ত জনপদের লোকেরাও ইসলাম গ্রহণ করিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৪ , ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৩]

১৪৫০. ইমরান ইবনি হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , কোন এক সফরে আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর সাথে ছিলাম। আমরা রাতের বেলা পথ চললাম। রাতের শেষভাগে ভোর অল্প কিছু পূর্বে আমরা এমনভাবে পড়লাম [অর্থাৎ ক্লান্তিতে শরীর এলিয়ে দিলাম] যার চেয়ে অন্য কোন পড়াই কোন মুসাফিরের কাছে অধিক পছন্দনীয় বা সুখকর নয়। একমাত্র সূর্যতাপে আমরা জেগে উটলাম। …… এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি হাদীসটি সালাম ইবনি যারীর বর্ণিত  হাদিসের অনুরূপ করে বর্ণনা করিলেন। এ বর্ণনাতে তিনি হ্রাস-বৃদ্ধিও করিলেন। হাদীসটিতে তিনি উল্লেখ করিয়াছেন-উমর ইবনি খাত্তাব জেগে উটে যখন লোকদের অবস্থা দেখলেন তখন উচ্চঃস্বরে তাকবীর শুরু করিলেন। উমর ছিলেন উচু কন্ঠস্বরের লোক। তাহাঁর গুরুগম্ভীর শব্দে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] জেগে উঠলেন। তিনি জেগে উটলে লোকজন তাহাঁর কাছে তাদের অবস্তা জানিয়ে অভিযোগ করলে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন- এ ঘুমে কোন ক্ষতি নেই। তোমরা এখান থেকে যাত্রা করো। এরপর তিনি হাদীসটি বর্ণনা করিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৫,  ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৪]

১৪৫১. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সফররত অবস্তায় রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে তিনি ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। আর ভোরের কাছাকাছি সময়ে জাগ্রত হলে তাহাঁর বাহু দাঁড় করিয়ে হাতের তালুতে ভর করে শুয়ে থাকতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- নেই, ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৫]

১৪৫২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ কোন নামাজ করিতে ভুলে গেলে যখন স্মরণ হইবে তখনই যেন তা আদায় করে নেয়। এ ব্যবস্তা গ্রহণ করা ছাড়া আর কোন কাফফারাহ্ তাকে দিতে হইবে না।

হাদিসের বর্ণনাকারী ক্বাতাদাহ্ তার বর্ণনায় arbi “আমার স্মরণের জন্য নামাজ আদায় করো” – [সূরা ত্ব-হা ২০ : ১৪]  এ আয়াতটি উল্লেখ করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৬ , ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৬]

১৪৫৩. আবু আওয়ানাহ্ , ক্বাতাদাহ্ , আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এর বর্ণনাতে “এর কাফফারাহ্ এ [স্মরণ হলেই আদায় করে নেয়া] ছাড়া আর কিছুই নয়”- কথাটি উল্লেখ করা হয়নি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৭ , ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৭]

১৪৫৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন , কেউ কোন নামাজ আদায় করিতে ভুলে গেলে অথবা ঘুমিয়ে পড়লে তার কাফফারাহ্ হলো যখনই স্মরণ হইবে তখনই তা আদায় করে নিবে।  

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৮ , ইসলামিক সেন্টার-১৪৪৮]

—————–

১৪৫৫. নাস্‌র ইবনি আলী আল জাহ্‌যামী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীত।

তিনি বলেছেন , রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ কেউ ঘুম থেকে জাগতে না পারার কারনে নামাজ আদায় করিতে না পারলে অথবা নামাজ আদায় করিতে ভুলে গেলে যখনই স্মরণ হইবে তখনই নামাজ আদায় করিবে। কেননা, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ  আমার স্মরণের জন্য নামাজ আদায় করো – [সূরা ত্ব-হা ২০ : ১৪]

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৪৩৯ ,ইসলামিক সেন্টার- ১৪৪৯]

{বিঃদ্রঃ হাদীস নং ১৪৫৫ দুইবার এসেছে, তাই প্রথমটি হাদীস নং ১৪৫৪ এর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হল।}


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply