বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায়

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায়

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায়, এই অধ্যায়ে হাদীস =২৬ টি ( ১৬৩৩-১৬৫৮ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ৪৫ বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায়

পরিচ্ছেদঃ ১ – মদীনা ও মদীনাবাসীদের জন্য দুআ
পরিচ্ছেদঃ ২ – মদীনায় অবস্থান এবং তথা হইতে প্রস্থান
পরিচ্ছেদঃ ৩ – মদীনা শরীফের হরম হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ৪ – মদীনার মহামারী সম্বন্ধে বর্ণনা
পরিচ্ছেদঃ ৫ – মদীনা হইতে ইহুদীদের বহিষ্কার
পরিচ্ছেদঃ ৬ – মদীনার ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ৭ – মহামারীর বর্ণনা

পরিচ্ছেদঃ ১ – মদীনা ও মদীনাবাসীদের জন্য দুআ

১৫৭৬ আনাস ইব্নু মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, হে আল্লাহ! মদীনাবাসীদের মাপযন্ত্রে বরকত দান কর। আর তাদের সা ও মুদে বরকত দাও।

[বুখারি ২১৩০, মুসলিম ১৩৬৮]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৭৭ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন কেউ বাগান হইতে প্রথম ফল আনত, তখন তা প্রথমত রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর খিদমতে নিয়ে আসত। তিনি উহা নিয়ে বলিতেন, হে আল্লাহ্, আমাদের ফলে বরকত দান করুন। আমাদের শহরে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা আপনার বন্ধু ও নবী ইব্রাহীম [আ] মক্কার জন্য দুআ করেছিলেন। আমি আপনার বান্দা ও নাবী হিসেবে আপনার কাছে মদীনার জন্য দুআ করছি। দুআর শেষে তিনি সকলের চাইতে ছোট যে ছেলেকে তথায় পেতেন, তাকে ডেকে উহা তাকে দিয়ে দিতেন।

[সহীহ, মুসলিম ১৩৭৩]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছেদঃ ২ – মদীনায় অবস্থান এবং তথা হইতে প্রস্থান

১৫৭৮ যুবাইর ইব্নুল আওয়াম [রাদি.]-এর মুক্ত দাস ইউহান্নাস হইতে বর্ণিতঃ

ফিতনার সময়ে আমি আবদুল্লাহ্ ইব্নু উমার [রাদি.]-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় তাঁর এক দাসী এসে সালাম দিয়ে তাকে বলল, হে আবু আবদুর রহমান, আমি মদীনা ছেড়ে চলে যেতে চাই। কেননা এইখানে অভাব-অনটনে কষ্ট পাচ্ছি। ইব্নু উমার [রাদি.] তাকে বলিলেন, হতভাগ্য! বস। আমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিতেছিলেন, যে ব্যক্তি মদীনার অভাব-অনটন ও কষ্ট সহ্য করিবে, আমি কিয়ামতে তার সাক্ষী হব অথবা তার জন্য সুপারিশ করব।

[সহীহ, মুসলিম ১৩৭৭]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদী

১৫৭৯ জাবির ইব্নু আবদুল্লাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

এক গ্রাম্য ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর নিকট তার ইসলাম গ্রহণের বায়আত করিল, মদীনায় তার জ্বর আসতে লাগল। সে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে এসে বলিতে লাগল, হে আল্লাহ্‌র নবী! আপনি আমার বায়আত ভঙ্গ করে দিন। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ তা অস্বীকার করলেন। সে পুনরায় এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র নবী, আমার বায়আত ভঙ্গ করে দিন। নবী সাঃআঃ অস্বীকার করা সত্ত্বেও সে মদীনা হইতে বের হয়ে পড়ল। তখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, মদীনা লোহার ভাট্টির

{১} মতো, উহা ময়লা বাহির করে খাঁটি সোনা বানিয়ে দেয়। [বুখারি ১৮৮৩, মুসলিম ১৩৮৩]{১} মদীনায় থাকবার বায়আত করেছিল। সে যে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল এমন নয়, মদীনাও মন্দ লোকদেরকে মদীনায় থাকতে দেয় না এবং ভাল লোকদেরকে যেতে দেয় না, সেই জন্য মদীনাকে লোহার ভাট্টির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮০ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-কে আমি বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, যে আমাকে এমন লোকালয়ে যাওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে যা অন্যান্য লোকালয়কে খেয়ে ফেলবে। লোকে তাকে ইয়াস্রাব বলে থাকে আর উহা হল মদীনা। উহা মন্দ লোকদের বের করে দেয়, যেমন লোহার ভাট্টি লোহার ময়লা বের করে দেয়।

{১} [বুখারি ১৮৭১, মুসলিম ১৩৮২]{১} লোকালয়কে খাওয়া অর্থ বিজয় অর্থাৎ মদীনাবাসীরা অন্য অনেক লোকালয় জয় করে মদীনার অন্তর্ভুক্ত করে নিবেন। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর জীবদ্দশায়ই মক্কা, তায়েফ, ইয়ামান, খায়বর বিজয় হয়েছিল, আর মদীনা তখন রাজধানী ছিল।বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮১ উরওয়া ইব্নু যুবাইর [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছন, যদি কোন ব্যক্তি মদীনার প্রতি ঘৃণা করে তথা হইতে বের হয়ে পড়ে, তবে আল্লাহ্ তাআলা উহাতে তা অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ব্যক্তি দান করে থাকেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৮২ সুফিয়ান ইব্নু আবু যুহায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন ইয়ামান বিজিত হইবে। তথা হইতে লোক সফর করে মদীনায় আগমন করিবে। তারা নিজেদের বাড়িঘর এবং যা তাদের ইচ্ছা হইবে মদীনা হইতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা তা বুঝতে পারত! শাম বিজিত হইবে, তথা হইতে কিছু লোক মদীনায় আগমন করিবে এবং নিজেদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের কথা মান্য করব্‌ তাদেরকে মদীনা হইতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা তা বুঝতে পারত! ইরাক বিজিত হইবে। তথা হইতে কিছু সংখ্যক লোক সফর করে মদীনা আগমন করিবে এবং তাদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের কথা মান্য করিবে তাদেরকে মদীনা হইতে নিয়ে যাবে, অথচ মদীনা তাদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তারা জানতে পারত!

[ইয়ামেন, শাম ও ইরাক বিজিত হওয়ার পর অনেকে তথাকার সুন্দর আবহাওয়া ও জিনিসপত্র সস্তা দেখে নিজেদের বাড়িঘর এবং যারা তাদের সহিত যেতে ইচ্ছা করেছিল তাদেরকে মদীনা হইতে নিয়ে গেল এবং তথায় যেয়ে বসতি ঠিক করিল। অতঃপর নানা ফিত্না-ফাসাদে আক্রান্ত হল।]

[সহীহ, বুখারি ১৮৭৫, মুসলিম ১৩৮৮]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৩ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, অতি উত্তম অবস্থায় মদীনাকে ত্যাগ করা হইবে, এমন কি তথায় কুকুর ও ব্যাঘ্র আসবে এবং মসজিদের খুঁটি ও মিম্বরে পেশাব করিবে। সাহাবায়ে কিরাম প্রশ্ন করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্! ঐ সময় মদীনার ফলমূল কে ভোগ করিবে? তিনি বলিলেন, ক্ষুধার্ত জন্তুরা ও পশু পাখিরা।

{১} [বুখারি ১৮৭৪, মুসলিম ১৩৮৯]{১} এই অবস্থা কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হইবে, যখন ইসলামের নাম-নিশানা থাকিবে না, মদীনা উজাড় হয়ে যাবে।বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৪ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইব্নু আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] যখন মদীনা হইতে যাচ্ছিলেন, তখন মদীনার প্রতি লক্ষ্য করে স্বীয় দাস মুযাহিমকে বলছিলেন, হয়ত তুমি ও আমি যে সমস্ত লোকের মধ্যে গণ্য হব, যাদেরকে মদীনা বের করে দিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৩ – মদীনা শরীফের হরম হওয়া সম্পর্কে বর্ণনা

১৫৮৫ আনাস ইব্নু মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ যখন উহুদ পাহাড় তার দৃষ্টিগোচর হল তখন তিনি বলিলেন, এই পাহাড় আমাদের ভালবাসে। হে আল্লাহ্! ইব্রাহীম [আ] মক্কাকে হারাম করিয়াছেন, আমি মদীনার উভয় কঙ্করময়ের মধ্যস্থলকে হারাম করিতেছি।

[বুখারি ৩৩৬৭, মুসলিম ১৩৬৫]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৬ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিতেন যদি আমি মদীনায় হরিণ চরিতে দেখি, তা হলে উহাকে কখনও তাড়া করব না। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, মদীনার উভয় দিকের মধ্যবর্তী অংশ হেরেম।

[বুখারি ১৮৭৩, মুসলিম ১৩৭২]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৮৭ আবু আয়্যূব আনসারী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দেখলেন, কয়েকটি ছেলে একটি শিয়ালকে ঘিরে রেখেছে। তিনি ছেলেদেরকে তাড়িয়ে শিয়ালটিকে ছাড়িয়ে দিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আবু আয়্যূব ইহাও বলেছেন, রসূল সাঃআঃ-এর হেরেমেও কি এইরূপ কার্য হচ্ছে ?

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৮৮ এক ব্যক্তি হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমার কাছে যায়দ ইব্নু সাবিত [রাদি.] আগমন করলেন, তখন আমি আসওয়াফে [মদীনার একটি গ্রাম] একটি পাখি ধরেছিলাম। তিনি আমার হাত হইতে উহা নিয়ে ছেড়ে দিলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৪ – মদীনার মহামারী সম্বন্ধে বর্ণনা

১৫৮৯ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ মদীনায় এলেন, তখন আবু বাকর ও বেলালের [রাদি.] জ্বর আসতে শুরু করিল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি উভয়ের কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আব্বা আপনার অবস্থা কিরূপ ? হে বেলাল! আপনার অবস্থা কিরূপ ?

আয়িশা [রাদি.] বলেন, আবু বাক্রের যখন জ্বর আসত, তিনি বলিতেন,

كُلُّ امْرِئٍ مُصَبَّحٌ فِي أَهْلِهِ وَالْمَوْتُ أَدْنَى مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ

“প্রত্যেকে নিজের পরিজনের মধ্যে প্রভাত করে আর মৃত্যু তার জুতার ফিতার চাইতেও তার অতি নিকটে থাকে”

আর যখন বেলালের জ্বর হত, তখন তিনি উচ্চৈঃস্বরে এই কবিতা পড়তেন,

أَلَا لَيْتَ شِعْرِي هَلْ أَبِيتَنَّ لَيْلَةً بِوَادٍ وَحَوْلِي إِذْخِرٌ وَجَلِيلُ

وَهَلْ أَرِدَنْ يَوْمًا مِيَاهَ مَجِنَّةٍ وَهَلْ يَبْدُوَنْ لِي شَامَةٌ وَطَفِيلُ

হায় যদি আমি জানতে পারতাম যে, কখনও আমি এক রাত্রির জন্যও মক্কার উপত্যকায় রাত্রি যাপন করিতে পারব। আর আমার চতুষ্পার্শ্বে ইয্খির ও জলিল নামক ঘাস থাকিবে। আর পুনরায় কখনও মাজিন্না কুয়ার নিকট যেতে পারব, আর পুনরায় কখনও শামা ও তফীল পাহাড় আমার দৃষ্টিগোচর হইবে।

আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি ইহা শুনে রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি দুআ করলেন,

اللهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكَّةَ أَوْ أَشَدَّ وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا وَانْقُلْ حُمَّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ

হে আল্লাহ্! আমাদের মনে মদীনার মুহব্বত এইরূপ করে দিন, যেরূপ মক্কার মুহব্বত রয়েছে, বরং উহা হইতেও প্রগাঢ় ভালবাসা। আর মদীনাকে স্বাস্থ্যকর করে দিন। উহার সা ও মুদ্দে বরকত দিন, উহার জ্বর অন্যত্র নিয়ে যান এবং উহার জ্বরকে জুহফাতে সরিয়ে দিন। {১}

{১} ইয্খির ও জালীল-মক্কার ঘাসের নাম। মাজান্না মক্কার অদূরে এক স্থানের নাম। এখানে জাহিলিয়াতের যুগে মেলা বসত। শামা ও তফীল মক্কার তিন মাইল দূরে দুইটি পাহাড়। জুহফা মক্কা হইতে ৮২ মাইল দূরে একটি লোকালয়ের নাম, তখন তথায় ইহুদীরা বাস করত।এই জ্বর মদীনা হইতে কদাকার একটি স্ত্রীলোকের মতো হয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। এক ব্যক্তি উহাকে রাস্তায় দেখেছে। রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, আর কখনও মদীনায় জ্বর প্রত্যাবর্তন করিবে না।বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৯০ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

আমির ইব্নু ফুহাইরা বলিতেন, আমি মৃত্যুর পূর্বে মৃত্যুকে দেখেছি, যারা ভীরু তাদের মৃত্যু উপর হইতে অবতরণ করে।

[বুখারি ৩৯২৬, মুসলিম ১৩৭৫, আর ইয়াহইয়াহ কর্তৃক আয়িশা [রাদি.] থেকে বর্ণিত অংশটুকু, মুনকাতে]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৯১ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, মদীনার দ্বারে ফিরিশতা মোতায়েন রয়েছে। উহাতে কখনও মহামারী দেখা দিবে না আর দাজ্জালও প্রবেশ করিবে না।

[বুখারি ১৮৮০, মুসলিম ১৩৭৯]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৫ – মদীনা হইতে ইহুদীদের বহিষ্কার

১৫৯২ উমার ইব্নু আবদুল আযীয [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ সর্বশেষ কথা যা বলেছেন তাতে ছিল,

قَاتَلَ اللهُ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوا قُبُورَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ لَا يَبْقَيَنَّ دِينَانِ بِأَرْضِ الْعَرَبِ

অর্থাৎ আল্লাহ্ তাআলা ইহুদী ও নাসারাদেরকে ধ্বংস করুন। তারা নিজেদের নবীদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। আরবের মাটিতে দুই ধর্ম একত্র হইতে পারবে না।

[বুখারি ৪৩৬, ৪৩৭, মুসলিম ৫২৯, ঈমাম মুসলিম হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল][তারা কবরকে কেবলা বানিয়ে ঐদিকে নামাজ আদায় করত অর্থাৎ কবরকে সিজদা করত। ইসলামে এটা হারাম। প্রথম চার খলীফার যুগে আরব হইতে সমস্ত কাফিরকে বের করে দেয়া হয়েছিল। আজ পর্যন্ত তথায় কেবল ইসলাম ধর্মই বিরাজমান]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৯৩ ইবনি শিহাব হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন, মদীনায় দুই ধর্ম একত্র হইতে পারে না।

[বুখারি ৩১৬৮, ঈমাম মুসলিম ৫২৯, হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল]\

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইব্নু শিহাব [রাদি.] বলেছেন, উমার [রাদি.] এ ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পেরেছেন যে, ইহা সত্যই রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর বাণী, অতঃপর তিনি তথা ইহুদীদেরকে খায়বর হইতে বের করে দিয়েছিলেন।

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৯৪ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাদি.] ফিদক ও নাজরান হইতেও ইহুদী বিতাড়িত করেছিলেন। খায়বরের ইহুদীদের না কোন জায়গা ছিল, না কোন বাগান ছিল। ফিদকের ইহুদীদের স্থাবর সম্পত্তির অর্ধেক ছিল এবং অর্ধেক ফল ছিল। কেননা নবী সাঃআঃ তাদের সাথে এ মর্মে চুক্তি করে ছিলেন। উমার [রাদি.] অর্ধেক ফল ও স্থাবর সম্পত্তির দাম নির্ধারিত করে উহা তাদেরকে দিয়ে দেন এবং তাদেরকে তথা হইতে বহিষ্কার করেছিলেন।

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৬ – মদীনার ফযীলত

১৫৯৫ উরওয়া ইব্নু যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ উহুদ পাহাড় দেখে বলেছেন, এই পাহাড় আমাদের এবং আমরা এই পাহাড়কে ভালবাসি। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৫৯৬ আবদুর রহমান ইব্নু কাসিম [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইব্নু খাত্তাব [রাদি.]-এর মুক্ত দাস আসলাম বলেছেন, তিনি মক্কার রাস্তায় আবদুল্লাহ ইব্নু আয়াশ আল-মাখযুরীর সহিত সাক্ষাৎ করিতে যেয়ে তাঁর সম্মুখে নাবীয দেখিতে পেলেন। আসলাম বলিলেন, এই পানীয়কে উমার [রাদি.] খুব পছন্দ করেন। অতঃপর আবদুল্লাহ্ ইব্নু আয়াশ [রাদি.] একটি বড় পেয়ালা ভরে উমার [রাদি.]-এর সম্মুখে রাখলেন। তিনি উহা উঠিয়ে পান করিতে ইচ্ছা করলেন। অতঃপর মাথা তুলে বলিলেন, এই পানীয় খুব ভাল এটা বলে তিনি উহা পান করলেন। অতঃপর যে তাঁর ডানদিকে ছিল তাকে দান করলেন। যখন আবদুল্লাহ্ ইব্নু আয়াশ প্রস্থান করিতে উদ্যত হলেন তখন উমার [রাদি.] তাহাকে ডেকে বলিলেন, তুমি কি বল যে, মদীনা হইতে মক্কা ভাল। আবদুল্লাহ্ বলিলেন, মক্কায় আল্লাহ্‌র হেরেম এবং উহা শান্তির স্থান আর সেখানে তাঁর ঘর রয়েছে। উমার [রাদি.] বলিলেন, আমি আল্লাহ্‌র ঘর ও হেরেম সম্বন্ধে কিছু বলিতেছি না। উমার [রাদি.] আবারও আবদুল্লাহকে তদ্রুপ জিজ্ঞেস করলে তিনি ঐ একই উত্তর দিলেন। উমার [রাদি.] তখন আবার বলিলেন, আল্লাহ্‌র হেরেম এবং তাঁর গৃহ সম্বন্ধে কিছুই বলিতেছি না। অতঃপর তিনি চলে গেলেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

{১} মক্কা ও মদীনা এই উভয় শহরের মধ্যে কোন্টা উত্তম এ ব্যাপারে সে যুগের লোকদের মধ্যেও মতভেদ ছিল। আলিমদের সম্মিলিত মত এই যে, মক্কা উত্তম। আবু হানীফা, শাফেয়ী ইব্নু আবদুল বার প্রমুখের মতও এটাই। কিন্তু উমার [রাদি.] ও সাহাবায়ে কিরামের এক দলের মতে ও মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে মদীনা উত্তম।বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

পরিচ্ছেদঃ ৭ – মহামারীর বর্ণনা

১৫৯৭ আবদুল্লাহ্ ইব্নু আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইব্নু খাত্তাব [রাদি.] শাম দেশের দিকে যাত্রা করলেন। যখন তিনি সুরগ নামক স্থানে পৌঁছলেন তখন বড় বড় সেনাপতি তাঁর সাথে মিলিত হলেন, যেমন আবু উবায়দা ইব্নুল জাররাহ ও তাঁর সঙ্গিগণ। ঐ সেনাপতিগণ বলিলেন, আজকাল শাম দেশে মহামারী বিস্তার লাভ করেছে। ইবনি আব্বাস বলিলেন, নেতৃস্থানীয় মুহাজিরদেরকে ডেকে আন, যাঁরা প্রথমে হিজরত করিয়াছেন। তাঁদেরকে ডেকে আনা হল। উমার [রাদি.] তাঁদের সাথে শাম দেশের মহামারী সম্বন্ধে পরামর্শ করলেন। তাঁদের কেউ মন্তব্য করলেন, আপনি কাজের জন্য বের হয়েছেন এখন প্রত্যাবর্তন করা সমীচীন হইবে না। কেউ বলিলেন, আপনার সাথে অন্যান্য লোকও রয়েছে আর রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ-এর সাহাবীও রয়েছেন। তাদেরকে এই মহামারীতে নিয়ে যাওয়া যুক্তিযুক্ত হইবে না। উমার [রাদি.] তাঁদেরকে বিদায় দিলেন। অতঃপর বলিলেন, যাও আনসারদেরকে ডেকে আন! অতঃপর ইব্নু আব্বাস আনসারদেরকে ডেকে আনলেন। উমার [রাদি.] তাঁদের সহিত পরামর্শ করলেন। তাঁরাও মুহাজিরদের মতো মত প্রকাশ করলেন। উমার [রাদি.] তাঁদেরকেও বিদায় দিলেন। অতঃপর বলিলেন, যাও কুরাইশ সর্দারদেরকে ডেকে আন। যাঁরা মক্কা বিজয়ের পর হিজরত করিয়াছেন, আমি কুরাইশের বয়োবৃদ্ধদের ডেকে আনলাম। তাঁদের দুইজনের মধ্যেও কোন মতবিরোধ হল না, বরং সকলেই এক বাক্যে বলিলেন, আমাদের মতে আপনার ফিরে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। লোকদেরকে মহামারীতে নিয়ে যাওয়া সমীচীন মনে হচ্ছে না। অতঃপর উমার [রাদি.] ঘোষণা করে দিলেন, সকাল বেলায় আমরা ফিরে যাব।

সকাল বেলা সকলেই সওয়ার হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করিতে এল। সে সময় আবু উবায়দা [রাদি.] বলিলেন, কি হল, আল্লাহ্‌র তকদীর [নির্ধারিত বিধান] হইতে পালিয়ে যাচ্ছেন ? উমার [রাদি.] বলিলেন, যদি এই কথা অন্য কেউ বলত। হ্যাঁ, আমরা আল্লাহ্‌র তকদীর হইতে আল্লাহ্‌র তকদীরের প্রতি পলায়ন করছি। যদি তোমার নিকট উট থাকে আর তুমি দুই দিক ঘেরাও করা মাঠে নিয়ে যাও, যার একদিক শস্য শ্যামল থাকে আর অন্যদিক শুষ্ক ও খালি থাকে। যদি তুমি উটকে শ্যামল দিকে চরাও তখনও তুমি উহা আল্লাহ্‌র তাকদীরেই উহাকে চরালে আর যদি শুষ্ক ভূমিতে চরাও তবুও আল্লাহ্‌র তাকদীরেই চরালে। এই সময়ে আবদুর রহমান ইব্নু আউফ [রাদি.] এসে পড়লেন। তিনি কোথাও কোন কাজে গিয়েছিলেন। তিনি বলিলেন, আমার এই ব্যাপারে জানা আছে। আমি রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃকে বলিতে শুনিয়াছি যদি তুমি কোন স্থানে মহামারীর কথা শুনতে পাও তবে তথায় গমন করো না। আর যদি কোন স্থানে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে আর তুমি সেখানে থাক তবে তথা হইতে পলাইও না। ইব্নু আব্বাস [রাদি.] বলেন, এটা শুনে উমার [রাদি.] আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং তথা হইতে প্রত্যাবর্তন করলেন।

[বুখারি ৫৭২৯, মুসলিম ২২১৯]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৮ সাদ ইব্নু আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উসামা ইব্নু যায়দের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, তুমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে মহামারী সম্বন্ধে কি শুনেছ ? তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ্ সাঃআঃ বলেছেন মহামারী এক প্রকার আযাব, যা বনী ইসরাইলের এক সম্প্রদায়ের প্রতি পাঠানো হয়েছিল অথবা তোমাদের পূর্বেকার লোকদের প্রতি পাঠানো হয়েছিল। যখন তোমরা কোন স্থানে মহামারীর কথা শোন, তথায় যেও না, আর যদি কোথাও মহামারী সংক্রামিত হয়ে পড়ে আর তথায় থাক, তবে তথা হইতে পলায়ন করো না। আবু নায্র বলেন, পলায়নের ইচ্ছায় বের হইও না।

[বুখারি ৩৪৭৩, মুসলিম ২২২৮]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৫৯৯ আবদুল্লাহ্ ইব্নু আমির ইব্নু রবীআ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাদি.] শাম দেশের দিকে রওয়ানা হলেন, যখন সুরগ নামক স্থানে পৌঁছালেন, তখন জানতে পারলেন, শাম দেশে মহামারী বিস্তার লাভ করেছে। অতঃপর আব্দুর রহমান ইবনি আউফ [রাদি.] তাহাকে অবহিত করলেন যে, রসূল সাঃআঃ বলেছেন, তোমরা যখন কোন স্থানে মহামারীর কথা জানবে সেখানে আগমন করিবেন না। আর যখন কোন স্থানে অবস্থান কালে সেখানে মহামারী শুরু হয় তখন তোমরা পলায়ন করার উদ্দেশ্যে সেখান থেকে বের হইবে না।

[বুখারি ৫৭৩০, মুসলিম ২২১৯]বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১৬০০ সালিম ইবনি আবদুল্লাহ্ হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] আবদুর রহমান ইবনি আউফ-এর কথায় সুরগ হইতে ফিরে এলেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১৬০১ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

উমার [রাদি.] বলেছেন, রুক্বার একটি ঘর আমার নিকট শাম দেশের দশটি ঘর হইতে উৎকৃষ্ট। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, ইহা এইজন্য যে, রুকবা স্বাস্থ্যকর স্থান ছিল, সেখানে লোকেরা দীর্ঘায়ু লাভ করত, আর শামে প্রায়ই মহামারী দেখা দিত।

বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায় -এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়


by

Tags:

Comments

One response to “বিভিন্ন প্রকারের মাসআলা সম্বলিত অধ্যায়”

Leave a Reply