মারইয়াম আঃ এবং তার পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ
মারইয়াম আঃ এবং তার পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬০, আম্বিয়া কিরাম, অধ্যায়ঃ (৪৩-৪৯)=৭টি
৬০/৪৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এ হল আপনার রবের অনুগ্রহের বিবরণ যা তাহাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি করা হয়েছে। ইতিপূর্বে আমি এ নামে কারও নামকরণ করিনি। (মারইয়াম ২-৭)
৬০/৪৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী আর স্মরণ কর, কিতাবে মারিয়ামের ঘটনা। যখন তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজন হইতে পৃথক হলেন……। (মারইয়াম ১৬) মহান আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাহাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (আল্ ইমরান ৪৫) মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ আদম (আঃ), নূহ (আঃ) ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে পৃথিবীতে মনোনীত করিয়াছেন……বে-হিসাব দিয়ে থাকেন। (আল্ ইমরান ৩৩-৩৭)
৬০/৪৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর যখন ফেরেশতামন্ডলী বলিল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।
৬০/৪৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬০/৪৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
৬০/৪৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর এ কিতাবে বর্ণনা করুন মারইয়ামের কথা, যখন সে নিজ পরিবারের লোকদের থেকে পৃথক হলো। (মারইয়াম ১৬)
৬০/৪৯. অধ্যায়ঃ মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ।
৬০/৪৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর বাণীঃ এ হল আপনার রবের অনুগ্রহের বিবরণ যা তাহাঁর বান্দা যাকারিয়ার প্রতি করা হয়েছে। ইতিপূর্বে আমি এ নামে কারও নামকরণ করিনি। (মারইয়াম ২-৭)
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, سَمِيَّا অর্থ-সমতুল্য। তেমন বলা হয় رضِيّا অর্থ مَرضِيّا পছন্দনীয়। عَتِيَّا অর্থ عَصِيَّا অর্থাৎ অবাধ্য يَعتُو عَتَا থেকে গৃহীত। যাকারিয়া বলিলেন, হে আমার প্রতিপালক! কেমন করে আমার সন্তান হইবে? আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা? আর আমিও তো বার্ধক্যের চূড়ান্তে পৌঁছেছি। তিনি বলিলেন, তোমার নিদর্শন হলো তুমি সুস্থ অবস্থায় তিন দিন কারো সঙ্গে কথাবার্তা বলবে না। অতঃপর তিনি মিরহাব হইতে বের হয়ে তাহাঁর কাউমের নিকট আসলেন, আর ইঙ্গিতে তাদেরকে সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পড়তে বলিলেন। فَأَوحَي অর্থ, অতঃপর তিনি ইশারা করে বলিলেন। (আল্লাহ বলিলেন), হে ইয়াহইয়া! এ কিতাব শক্তভাবে ধারণ কর। যে দিন তিনি জীবিত পুনরুত্থিত হইবেন- (মারইয়াম ২-১৫)। لَطِفاً حَفِيّاً অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ অতিশয় অনুগ্রহশীল। عاَقِراً (বন্ধ্যা) শব্দটি পুং ও স্ত্রী লিঙ্গেই ব্যবহৃত হয়।
৩৪৩০. মালিক ইবনু সাসাআহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) সাহাবাগণের নিকট মিরাজের রাত্রির বর্ণনায় বলেছেন, তারপর তিনি আমাকে নিয়ে উপরে চললেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌঁছলেন এবং দরজা খুলতে বলিলেন, জিজ্ঞেস করা হল কে? বলিলেন, আমি জিবরাঈল। প্রশ্ন হলো। আপনার সঙ্গে কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ)। জিজ্ঞেস করা হলো। তাঁকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? উত্তর দিলেন হাঁ, অতঃপর আমরা যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন সেখানে ইয়াহইয়া ও ঈসা (আঃ)-কে দেখলাম। তাঁরা উভয়ে খালাতো ভাই ছিলেন। জিবরাঈল বলিলেন, এঁরা হলেন, ইয়াহইয়া এবং ঈসা (আঃ)। তাদেরকে সালাম করুন, তখন আমি সালাম দিলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। অতঃপর তাঁরা বলিলেন, নেক ভাই এবং নেক নাবীর প্রতি মারহাবা।
৬০/৪৪. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণী আর স্মরণ কর, কিতাবে মারিয়ামের ঘটনা। যখন তিনি স্বীয় পরিবার-পরিজন হইতে পৃথক হলেন……। (মারইয়াম ১৬) মহান আল্লাহর বাণীঃ স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাহাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। (আল্ ইমরান ৪৫) মহান আল্লাহর বাণীঃ আল্লাহ আদম (আঃ), নূহ (আঃ) ও ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং ইমরানের বংশধরকে পৃথিবীতে মনোনীত করিয়াছেন……বে-হিসাব দিয়ে থাকেন। (আল্ ইমরান ৩৩-৩৭)
ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, আল্-ইমরান অর্থাৎ মুমিনগণ। যেমন,আল্-ইবরাহীম, আল্ ইয়াসীন এবং আল্ মুহাম্মাদ। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ সমস্ত মানুষের মধ্যে ইবরাহীমের সব থেকে ঘনিষ্ঠ হলো তারা, যারা তাহাঁর অনুসরণ করে। আর তারা হলেন মুমিনগণ। آلُ এর মূল হলো أَهلُ আর أَهلُ কে ছোট অর্থে করা হলে তা أُهَيلٌ হয়।
৩৪৩১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, এমন কোন আদম সন্তান নেই যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারইয়াম এবং তাহাঁর ছেলে (ঈসা) (আঃ)-এর ব্যতিক্রম। অতঃপর আবু হুরাইরা বলেন, “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাহাঁর এবং তাহাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৬০/৪৫. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর যখন ফেরেশতামন্ডলী বলিল, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন।
আর যখন ফেরেশতারা বলিল; হে মারইয়াম! আল্লাহ তোমাকে পছন্দ করিয়াছেন এবং তোমাকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন করে দিয়েছেন। আর তোমাকে বিশ্ব নারী সমাজের উর্দ্ধে মনোনীত করিয়াছেন। হে মারইয়াম তোমার পালনকর্তার উপাসনা কর এবং রুকুকারীদেরও সাথে সিজদা ও রুকু কর। এ হলো গায়েবী সংবাদ, যা আমি আপনাকে পাঠিয়ে থাকি। আর আপনি তো তাদেরও কাছে ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে প্রতিপালন করিবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদেরও কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলো। (আল্ ইমরান ৪২-৪৪)
বলা হয় يَكفُلُ অর্থ يَضُمُّ অর্থাৎ নিজ তত্ত্বাবধানে নেয়া। كَفَّلَهَا অর্থ স্বীয় তত্ত্বাবধানে নিল। লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা, ঋণ-করযের দায়িত্ব গ্রহণও এ ধরনের কিছু নয়।
৩৪৩২. আলী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি যে, সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারইয়াম হলেন সর্বোত্তম আর নারীদের সেরা হলেন খাদীজা (রাদি.)।
৬০/৪৬. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বললঃ হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তাহাঁর তরফ থেকে তোমাকে একটি কালিমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, তার নাম মাসীহ ঈসা ইবনু মারইয়াম……হও অমনি তা হয়ে যায়।” (আল্ ইমরান ৪৫)
يُبَسِّركِ আর يَبشُركِ উভয়ের একই অর্থ। وَجِيهاً অর্থ সম্মানিত আর ইবরাহীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মসীহ শব্দের অর্থ সিদ্দীক। মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, اَلكَهلُ অর্থ اَلحَلِيم অর্থ, সহনশীল আর اَلاَكمَهُ অর্থ হলো, রাতকানা যে দিনে দেখে আর রাতে দেখিতে পায় না। অন্যেরা বলেন, যে অন্ধ হয়ে জন্মেছে (সে হলো اَلاَكمَهُ)।
৩৪৩৩. আবু মূসা আল-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, সকল নারীর উপর আয়েশার মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্যের উপর সারীদের মর্যাদা। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই পূণাঙ্গতা অর্জন করিয়াছেন। কিন্তু নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারইয়াম এবং ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া ছাড়া কেউ পূর্ণাঙ্গতা অর্জন করিতে পারেনি।
৩৪৩৪.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, কুরাইশ বংশীয়া নারীরা উটে আরোহণকারী সকল নারীদের তুলনায় উত্তম। এরা শিশু সন্তানের উপর অধিক স্নেহশীলা হয়ে থাকে আর স্বামীর সম্পদের প্রতি খুব যত্নবান হয়ে থাকে। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেছেন, ইমরানের কন্যা মারইয়াম কখনও উটে আরোহণ করেননি। ইবনু আখী যুহরী ও ইসহাক কালবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীস বর্ণনায় ইউনুস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর অনুসরণ করিয়াছেন।
৬০/৪৭. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ
“হে আহলে কিতাব! তোমরা তোমাদের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না……অভিভাবক হিসেবে।” (আন-নিসা ১৭১)
আবু উবাইদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন আল্লাহর كَلِمَتُهُ হচ্ছে “হও, অমনি তা হয়ে যায়। আর অন্যরা বলেন منهوَرُوحٌ অর্থ তাকে আয়ু দান করিলেন তাই তাকে وَرُوحٌ নাম দিলেন। ثَةٌثَلَاَلُواتَقُووَلاَ তোমরা তিন ইলাহ বল না।
৩৪৩৫. “উবাদা (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শরীক নেই আর মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাহাঁর বান্দা ও রাসুল আর নিশ্চয়ই ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসুল এবং তাহাঁর সেই কালিমাহ যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাহাঁর নিকট হইতে একটি রূহ মাত্র, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন। ওয়ালীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…..জুনাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত হাদীসে জুনাদাহ অতিরিক্ত বলেছেন যে, জান্নাতে আট দরজার যেখান দিয়েই সে চাইবে।
৬০/৪৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ আর এ কিতাবে বর্ণনা করুন মারইয়ামের কথা, যখন সে নিজ পরিবারের লোকদের থেকে পৃথক হলো। (মারইয়াম ১৬)
شَركِيّاً শব্দটি اَشَّرقَ শব্দ থেকে, যার অর্থ পূর্বদিকে। هَاءَجاَفَأ শব্দটি جِئتُ হইতে أَفعَلَ এর রূপে হয়েছে। أَجَأَهاَ এর স্থলে اَلجَأَهاَ ও বলা হয়েছে যার অর্থ হইবে তাকে অধীর করে তুললো। تَسَّاقَط শব্দটি تَسقُط এর অর্থ দেবে। قَاصِياً শব্দটি قَاصِيَّا এর অর্থে ব্যবহৃত। فَزِيّاً অর্থ বিশাল। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেন, نِسياً অর্থ আমার অস্তিত্ব না থাকে। অন্যেরা বলেছেন, النِّسيُ অর্থ তুচ্ছ, ঘৃণিত। আবু ওয়ায়িল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, মারিয়ামের উক্তি تَقِيّاًكُنتَإِن এর অর্থ যদি তুমি জ্ঞানী হও। ওকী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)……বলেন, বারআ (রাদি.) হইতে বর্ণিত। سَرِيّاً শব্দটির অর্থ সিরীয় ভাষায় ছোট নদী।
৩৪৩৬.আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, তিনজন শিশু ছাড়া আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। ঈসা (আঃ), দ্বিতীয় জন বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে জুরাইজ নামে ডাকা হতো। একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সাড়া দেব, না সালাত আদায় করিতে থাকব। তার মা বলিল, হে আল্লাহ! ব্যাভিচারিণীর মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরাইজ তার ইবাদতখানায় থাকত। একবার তার নিকট একটি নারী আসল। তার সঙ্গে কথা বলিল। কিন্ত জুরাইজ তা অস্বীকার করিল। অতঃপর নারীটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূর্ণ করিল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করিল। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলিল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার নিকট আসল এবং তার ইবাদতখানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করিল। তখন জুরাইজ ঊযূ সেরে ইবাদত করিল। অতঃপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করিল হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা বলিল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরী করে দিচ্ছি। সে বলিল, না। তবে মাটি দিয়ে। (তৃতীয় জন) বনী ইসরাঈলের একজন নারী তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। নারীটি দুআ করিল, হে আল্লাহ! আমার ছেলেটি তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলিল, হে আল্লাহ! আমাকে তার মত করো না। অতঃপর মুখ ফিরিয়ে স্তন্য পান করিতে লাগল। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলিলেন, আমি যেন নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখিতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। অতঃপর সেই নারীটির পার্শ্ব দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। নারীটি বলিল, হে আল্লাহ! আমার শিশুটিকে এর মত করো না। শিশুটি তাৎক্ষণিক তার মায়ের স্তন্য ছেড়ে দিল। আর বলিল, হে আল্লাহ! আমাকে তার মত কর। তার মা বলিল, তা কেন? শিশুটি বলিল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন। আর এ দাসীটির ব্যাপারে লোকে বলেছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে কিছুই করেনি।
৩৪৩৭ aiporjonto. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মিরাজের রাতে আমি মূসা (আঃ)-এর দেখা পেয়েছি। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) মূসা (আঃ)-এর আকৃতি বর্ণনা করিয়াছেন। মূসা (আঃ) একজন দীর্ঘদেহধারী, মাথায় কোঁকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, আমি ঈসা (আঃ)-এর দেখা পেয়েছি। অতঃপর তিনি তাহাঁর চেহারা বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইবরাহীম (আঃ)-কেও দেখেছি। তাহাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার অধিক সদৃশ। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, অতঃপর আমার সামনে দুটি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হলো, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করিতে পারেন। আমি দুধের বাটিটি গ্রহণ করলাম আর তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হলো, আপনি ফিতরাত বা স্বভাবকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করিতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।
৩৪৩৮. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি ঈসা (আঃ), মূসা (আঃ) ও ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখেছি। ঈসা (আঃ) গৌর বর্ণ, সোজা চুল এবং প্রশস্ত বুকবিশিষ্ট লোক ছিলেন, মূসা (আঃ) বাদামী রঙের ছিলেন, তাহাঁর দেহ ছিল সুঠাম এবং মাথার চুল ছিল কোঁকড়ানো যেন যুত গোত্রের একজন মানুষ।
৩৪৩৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা নাবী (সাঃআঃ) লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জাল সম্পর্কে আলোচনা করিলেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ টেঁড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চক্ষু টেঁড়া। তার চক্ষু যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত।
৩৪৪০.See previous Hadith. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কাবার নিকট দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও অধিক সুন্দর ছিলেন তিনি। তাহাঁর মাথার সোজা চুল, তাহাঁর দুস্কন্ধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তার মাথা হইতে পানি ফোঁটা ফোঁটা পড়ছিল। তিনি দুজন লোকের স্কন্ধে হাত রেখে কাবা তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মসীহ ইবনু মারইয়াম। অতঃপর তাহাঁর পেছনে অন্য একজন লোককে দেখলাম। তার মাথায় চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চক্ষু টেঁড়া, আকৃতিতে সে আমার দেখা ইবনু কাতানের সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দুস্কন্ধে ভর দিয়ে কাবার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বলিলেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।
৩৪৪১. সালিম (রাদি.)-এর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! নাবী (সাঃআঃ) এ কথা বলেননি যে ঈসা (আঃ) লাল বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কাবা ঘর তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রঙের জনৈক ব্যক্তিকে দেখলাম। তিনি দুজন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাহাঁর মাথার পানি ঝরছে অথবা বলেছেন, তার মাথা হইতে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বলিলেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক ওদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক লোক তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোঁকড়ানো এবং তার ডান চোখ টেঁড়া, তার চোখ যেন আঙ্গুরের মত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ লোকটি কে? তারা বলিলেন, এ হলো দাজ্জাল। মানুষের মধ্যে ইবনু কাতানের সঙ্গে তার বেশি সাদৃশ্য রয়েছে। যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তার বর্ণনায় বলেন, ইবনু কাতান খুযাআ গোত্রের জনৈক ব্যক্তি, সে জাহিলীয়াতের যুগেই মারা গেছে।
৩৪৪২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার অধিক ঘনিষ্ঠ। আর নাবীগণ পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। আমার ও তার মাঝখানে কোন নাবী নেই।
৩৪৪৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, আমি দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা ইবনু মারিয়ামের ঘনিষ্ঠতম। নাবীগণ একে অন্যের বৈমাত্রেয় ভাই। তাঁদের মা ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু দ্বীন হল এক।
ইবরাহীম ইবনু তাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন।
৩৪৪৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেন, ঈসা (আঃ) এক লোককে চুরি করিতে দেখলেন, তখন তিনি বলিলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলিল, কক্ষণও নয়। সেই সত্তার কসম! যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তখন ঈসা (আঃ) বলিলেন, আমি আল্লাহর উপর ঈমান এনেছি আর আমি আমার দুচোখ অবিশ্বাস করলাম।
৩৪৪৫. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উমর (রাদি.)-কে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে বলিতে শুনেছেন যে, আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমরা আমার প্রশংসা করিতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ঈসা মারইয়াম (আঃ) সম্পর্কে নাছারা (খ্রিস্টানরা) বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাহাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাহাঁর রাসুল।
৩৪৪৬.আবু মূসা আল-আশআরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন যদি কোন লোক তার দাসীকে শিষ্টাচার শিখায় এবং তা উত্তমভাবে শিখায় এবং তাকে দ্বীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় অতঃপর তাকে মুক্ত করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দুটি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ঈসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনে অতঃপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দুটি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার রবকে ভয় করে এবং তার মনিবদের মান্য করে তার জন্যও দুটি করে সওয়াব রয়েছে।
৩৪৪৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা হাশরের ময়দানে নগ্নপদে, নগ্নদেহে খাতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত হইবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত পাঠ করিলেন: যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। এটা আমার অঙ্গীকার। আমি তা অবশ্যই পূর্ণ করব- (আল-আম্বিয়া ১০৪)। অতঃপর সর্বপ্রথম যাকে বস্ত্রাচ্ছাদিত করা হইবে, তিনি হলেন ইবরাহীম (আঃ)। অতঃপর আমার সাহাবীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে (জান্নাত) এবং কিছু সংখ্যককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হইবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী। তখন বলা হইবে আপনি তাদের হইতে বিদায় নেয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছে। তখন আমি এমন কথা বলব, যা বলেছিল, নেককার বান্দা ঈসা ইবনু মারইয়াম (আঃ)। তার উক্তিটি হলো এ আয়াতঃ আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। অতঃপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনিই তাদের সংরক্ষণকারী ছিলেন। আর আপনি তো সব কিছুর উপরই সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে এরা তো আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি নিশ্চয়ই ক্ষমতাধর ও প্রজ্ঞাময়- (আল-মায়িদাহ: ১১৭) কাবীসা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এরা হলো ঐ সব মুরতাদ যারা আবু বকর (রাদি.)-এর খিলাফতকালে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তখন আবু বকর (রাদি.) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন।
৬০/৪৯. অধ্যায়ঃ মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ।
৩৪৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, শীঘ্রই তোমাদের মধ্যে মারিয়ামের পুত্র ঈসা (আঃ) শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে আগমন করবেন। তিনি ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং তিনি যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন। তখন সম্পদের ঢেউ বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহণ করিতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্দা করা তামাম দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ হইতে অধিক মূল্যবান বলে গণ্য হইবে। অতঃপর আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পার: “কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাহাঁর [ঈসা (আঃ)-এর] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করিবেই এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবেন।” (আন-নিসা: ১৫৯)
৩৪৪৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমাদের অবস্থা কেমন হইবে যখন তোমাদের মধ্যে মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন আর তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য থেকেই হইবে। [১]
উকাইল ও আওযাঈ হাদীস বর্ণনায় এর অনুসরণ করিয়াছেন।
[১] অর্থাৎ তোমরা যেমন কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী তেমনি তোমাদের নেতা ঈসা (আঃ) -ও এ দুএর অনুসরণে সব কিছু পরিচালনা করবেন।
Leave a Reply