মানত সম্পর্কে হাদিস ও কসম এর বিষয়ে হাদিস সমূহ
মানত সম্পর্কে হাদিস ও কসম এর বিষয়ে হাদিস সমূহ, এই অধ্যায়ে হাদীস =১৮ টি ( ১০০৮-১০২৫ পর্যন্ত ) >> মুয়াত্তা ইমাম মালিক এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায় – ২২ঃ মানত ও কসম সম্পর্কিত অধ্যায়
পরিচ্ছেদ ১ঃ কোথাও হেঁটে যাওয়ার মানত করা
পরিচ্ছেদ ২ঃ বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করা এবং পরে অক্ষম হওয়া
পরিচ্ছেদ ৩ঃ পায়ে হেঁটে কাবা শরীফে যাওয়ার অঙ্গীকার করা
পরিচ্ছেদ ৪ঃ পাপকার্যে মানত বৈধ নয়
পরিচ্ছেদ ৫ঃ নিরর্থক কসমের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ৬ঃ যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না
পরিচ্ছেদ ৭ঃ যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়
পরিচ্ছেদ ৮ঃ কসমের কাফ্ফারা
পরিচ্ছেদ ৯ঃ কসম সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম
পরিচ্ছেদ ১ঃ কোথাও হেঁটে যাওয়ার মানত করা
১০০২ আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
সাদ ইবনি উবাদা [রাদি.] রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আমার মাতার ইন্তেকাল হয়ে গিয়েছে। তিনি একটা মানত করেছিলেন, কিন্তু পূর্ণ করে যেতে পারেননি। এখন কি করা যায়? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন, তাঁর তরফ হইতে তুমিই উহা আদায় করে দাও।
[বুখারি ২৭৬১, মুসলিম ১৬৩৮] কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০০৩ আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তার ফুফু বর্ণনা করিয়াছেন, তাঁর দাদী মসজিদ-ই কোবায় হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলেন, কিন্তু ইহা পূরণ করার পূর্বেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে যায়। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] ঐ মানত {১} আদায় করে দেওয়ার জন্য তাঁর কন্যাকে নির্দেশ দেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কারো তরফ হইতে হেঁটে যাওয়ার মানত পূরণ করা জরুরী নয়।
{১} মসজিদ-ই কোবা মদীনা হইতে তিন মাইল দূরে অবস্থিত। রসূলুল্লাহ্ [সা] পদব্রজে ও আরোহী অবস্থায় সেখানে গমন করিতেন। আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাদি.] এ দিকে লক্ষ্য করে মানত পুরা করার নির্দেশ দিয়াছিলেন।কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০০৪ আবদুল্লাহ্ ইবনি আবু হাবীবা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমার বয়স তখন অল্প। এক ব্যক্তিকে বললাম : “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার নযর বা মানত করলাম” কোন ব্যক্তি এই কথা না বলে “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া আমার উপর ওয়াজিব” এইরূপ বললে এতে কোন দোষ নেই। ঐ ব্যক্তি আমাকে তখন বলল, আমার হাতে এই শসাটি তুমি নিয়ে যাও, আর এইটুকু বল দেখি, “বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া আমার উপর ওয়াজিব।” আমি বললাম। হ্যাঁ, বলিতেছি এবং ঐ কথা বলে দিলাম। তখন আমি অল্প বয়ষ্ক ছিলাম। তাই প্রথমে কিছু চিন্তা করিনি। কিন্তু পরে বুঝ হওয়ার পর চিন্তা হল। অন্য লোকেরা বলিতে লাগল : এখন তোমার উপর বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া ওয়াজিব হয়েছে। শেষে সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাদি.]-কে আমি এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও আমাকে বলিলেন, হ্যাঁ, বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত তোমাকে হেঁটে যেতে হইবে। শেষ পর্যন্ত আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যেয়ে এই নযর পুরা করলাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, আমার মতেও হুকুম এটাই।
২২ – بَاب مَا جَاءَ فِيمَنْ نَذَرَ مَشْيًا إِلَى بَيْتِ اللهِ فَعَجَزَ
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ২ঃ বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করা এবং পরে অক্ষম হওয়া
১০০৫ উরওয়াহ্ ইবনি উযাইনী লাইসী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমার দাদী বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলেন। তিনি যখন মানত পূরণ করিতে যাত্রা করেন আমিও তাঁর সাথে চললাম। শেষে হাঁটতে হাঁটতে অত্যন্ত ক্লান্ত হয়ে পড়লে তিনি স্বীয় গোলামকে আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-এর নিকট এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিতে প্রেরণ করেন। আমিও তার সাথে গেলাম। আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] জবাবে বলিলেন, এখন সে কিছুতে আরোহণ করে যাক। পরে যে স্থান হইতে আরোহণ করেছিল সেই স্থান হইতে পুনরায় তাহাকে হেঁটে যেতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, এই ধরনের ব্যক্তিকে এর সাথে একটি কুরবানীও করিতে হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] জ্ঞাত হয়েছেন, সাঈদ ইবনিল মুসায়্যাব [রাদি.] এবং আবু সালমা ইবনি আবদুর রহমানও এই বিষয়ে আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.]-এর মতো অভিমত ব্যক্ত করেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০০৬ ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মানত করেছিলাম, কিন্তু কোমরের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি। তাই বাহনে চড়ে আমাকে মক্কায় আসতে হল। আতা ইবনি আবু রাবাহ [রাহিমাহুল্লাহ] অন্যদেরকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলিলেন, তোমাকে একটা কুরবানী দিতে হইবে। মদীনায় এসে সেখানকার আলিমদের নিকটও এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তাঁরা বলিলেন, যে স্থান হইতে সওয়ার হয়েছিলে সেই স্থান হইতে তোমাকে আবার হেঁটে যেতে হইবে। শেষে আমি তাই করলাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যাওয়া আমার ওপর ওয়াজিব। এই কথা বলে যদি কেউ হেঁটে যাত্রা শুরু করে এবং পরে অপারগ হয়ে যায় তবে সে সওয়ার হয়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে যে স্থান হইতে সে অপারগ হয়েছিল সেই স্থান হইতে পুনরায় হেঁটে যাবে। হেঁটে না পারলে যতদূর সামর্থ্যে কুলায় হেঁটে যাবে আর বাকীটুকু সওয়ার হয়ে যাবে এবং একটি উট বা গরু কুরবানী করিবে। সম্ভব না হলে একটি বকরী কুরবানী করিবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যদি কেউ অন্য একজনকে বলে : তোমাকে আমি বায়তুল্লাহ্ পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যাব, তবে কি হুকুম হইবে? তিনি বলিলেন, যদি এই কথা বলার সময় কথকের এই নিয়্যত হয়ে থাকে যে, তার ঘাড়ে উঠিয়ে নিয়ে যাবে এবং এভাবে নিজেকে কষ্টে ফেলে তার উদ্দেশ্য হয়, তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হইবে না বরং সে পায়ে হেঁটে যাবে এবং একটি কুরবানী দিবে। আর বলার সময় যদি তার কিছু নিয়্যত না থাকে, তবে সে সওয়ার হয়ে যাবে এবং ঐ ব্যক্তিকেও সঙ্গে নিয়ে যাবে। কারণ সে তাকে বহন করে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছিল। ঐ ব্যক্তি যদি সঙ্গে যেতে না চায় তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হইবে না। কেননা সে আপন অঙ্গীকার রক্ষা করেছে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- কেউ যদি নির্দিষ্ট কতিপয় মানতের শপথ করে যা প্রতি বৎসর চেষ্টা করলেও সারা জীবনে পূরণ করা অসম্ভব, যেমন সে বলল, পায়ে হেঁটে বায়তুল্লাহ্ যাব বা এক হাজার বার হজ্জ করব, ভাই অথবা পিতার সাথে কথা বলব না ইত্যাদি। সে কি একটি মানতই পূরণ করিবে না সবগুলোই তাকে পূরণ করিতে হইবে?
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন, আমার মতে সবগুলোই তাকে পূরণ করিতে হইবে, যতদিন এবং যতদূর পর্যন্ত সম্ভব হয় সে উহা পূরণ করিতে থাকিবে এবং নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে যাবে।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৩ঃ পায়ে হেঁটে কাবা শরীফে যাওয়ার অঙ্গীকার করা
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, পুরুষ বা মহিলা যদি পায়ে হেঁটে হজ্জ বা উমরা করার কসম করে, তবে ঐ পুরুষ বা মহিলার কসম ভেঙ্গে ফেলবে। কসম ভঙ্গ করার পর, উমরার বেলায় সায়ী করা পর্যন্ত এবং হজ্জের বেলায় তাওয়াফে যিয়ারত করা পর্যন্ত সে পায়ে হেঁটে চলবে। মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, হজ্জ অথবা উমরা ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য এই ধরনের মানতে হাঁটতে হইবে না।
আমি এই বিষয়ে যা শুনিয়াছি তন্মধ্যে এটাই উত্তম।
পরিচ্ছেদ ৪ঃ পাপকার্যে মানত বৈধ নয়
১০০৭ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
হুমায়দ ইবনি কায়স [রাদি.] এবং সাউর ইবন দীলী [রাদি.] তাঁরা দুজনে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ হইতে তাঁর নিকট রেওয়ায়ত বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এক ব্যক্তিকে একবার রৌদ্রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিতে পেলেন। তিনি বলিলেন, এই ব্যক্তির কি হয়েছে? তাঁরা বলিলেন, এই ব্যক্তি মানত করেছে যে, সে কারো সাথে কথা বলবে না, ছায়ায় দাঁড়াবে না, কোথাও বসবে না এবং সর্বদাই সে রোযা রাখবে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ তখন বলিলেন, তাহাকে বলে দাও, সে যেন কথা বলে, ছায়ায় দাঁড়ায় ও বসে, আর যেন রোযা পুরা করে নেয়। [সহীহ, ঈমাম বুখারি ইবনি আব্বাস থেকে মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেন, বুখারি ৬৭০৪, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মরসাল]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ উক্ত ব্যক্তিকে কোন কাফ্ফারার নির্দেশ দিয়েছেন বলে আমি শুনিনি। তিনি তাহাকে যা ইবাদত তা পূরণ করা এবং যা নাফরমানী তা বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০০৮ ইয়াহইয়া ইবনি সাইদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
কাসিম ইবনি মুহাম্মদ [রাহিমাহুল্লাহ]-কে বলিতে শুনেছেন আবদুল্লাহ্ ইবনি আব্বাস [রাহিমাহুল্লাহ]-এর নিকট একজন মহিলা এসে বলল, আমার পুত্রকে কুরবানী দেওয়ার মানত করেছি। তিনি বলিলেন, পুত্রকে জবাই করো না এবং তোমার কসমের কাফ্ফারা দিয়ে দাও। এক ব্যক্তি তখন বলে উঠল : কাফ্ফারা কি করে হইতে পারে? ইবনি আব্বাস বলিলেন, স্ত্রীর সাথে যিহার করাও গুনাহ। উহাতেও আল্লাহ্ তাআলা কাফ্ফারার বিধান রেখেছেন। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
{১} ঈমাম আবু হানীফা ও ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে এইখানে কাফ্ফারা অর্থ কোন বকরী ইত্যাদি ফিদয়া দেওয়া। ঈমাম আবু ইউসুফ ও শাফিঈ [রাহিমাহুল্লাহ]-এর মতে ইহা মানত হইবে না। কেননা গুনাহ্র কাজে মানত করা ধর্তব্য নয়। সুতরাং এর কাফ্ফারাও ওয়াজিব হইবে না।কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০০৯ আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করে সে অবশ্যই তাঁর আনুগত্য করিবে আর যে আল্লাহর নাফরমানী করিবে সে তার নাফরমানী করিবে না
।[সহীহ, বুখারি ৬৬৯৬, ৬৭০০]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : গুনাহর কাজ করার মানত যদি কেউ করে তবে সে যেন ঐ গুনাহ না করে। রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর এই কথার মর্ম হল, যে সমস্ত কাজের সওয়াব নাই তেমন কাজে মানত করিয়া উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিলে তবে তার উপর কিছুই ওয়াজিব হইবে না। যেমন কেউ শাম বা মিসর বা রাবাযা যাওয়ার মানত করিল। তদ্রুপ কাহারও সঙ্গে কথা না বলার মানত করিল অথবা মন্দ কাজ করার কসম করিল, যেহেতু এইসব কাজে আল্লাহর ফরমানবরদারী নাই। এইগুলি পুরণ না করিলে কিছুই ওয়াজিব হইবে না। যে কাজে আল্লাহর আনুগত্য রয়েছে সেই ধরনের কাজে মানত করিলে ইহা পুরণ করা জরুরী হয়।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৫ঃ নিরর্থক কসমের বিবরণ
১০১০ হিশাম ইবনি উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
যে, উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] বলিতেন : কথায় কথায় লা ওয়াল্লাহি, বালা ওয়াল্লাহি [না, আল্লাহর কসম, হ্যাঁ আল্লাহর কসম] ধরনের কসম করা য়ামীন লাগব হইবে [অর্থাৎ শরীয়তের দৃষ্টিতে উহা কসম বলে ধর্তব্য হইবে না]। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : য়ামীনে লাগব হল সত্য মনে কয়ে কোন বিষয়ে কসম করা অথচ পরে তা বিপরীত বলে সাব্যস্ত হয়। এই বিষয়ে এটাই উত্তম যা আমি শুনিয়াছি।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : ভবিষ্যতে কোন কাজ করা না করা সম্পর্কে কসম করা হলে তা পূরণ করা বাধ্যতামূলক, যেমন কেউ বলল : আল্লাহর কসম, এই কাপড়টি আমি দশ দীনারে বিক্রয় করব না। কিন্তু পরে দশ দীনারে তা বিক্রয় করে দিল বা কেউ বলল : আল্লাহর কসম, এই ব্যক্তির গোলামকে আমি মারব, পরে মারল না ইত্যাদি। এই ধরনের কসমের কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়। আর য়ামীনে লাগব-এর জন্য কাফ্ফারা নেই।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৬ঃ যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয় না
১০১১ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন : যদি কেউ কসম করে ইনশাআল্লাহ [যদি আল্লাহ চাহেন] বলে তবে কসমকৃত কাজটি না করলে এই কসম ভঙ্গ হইবে না। {১} [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : ইনশাআল্লাহ কসমের সঙ্গে সঙ্গে এবং কথার ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে বলিতে হইবে। কেউ কসম করে কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যদি ইনশাআল্লাহ বলে তবে আর উহা ধর্তব্য হইবে না।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : কেউ বলল, আমি যদি এই কাজ করি তবে আমি কাফের বা মুশরিক। পরে যদি ঐ ব্যক্তি কাজটি করে ফেলে তবে তার কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে। কিন্তু অন্তরে শিরক কুফরীর আকীদা না হলে এতে কাফের বা মুশরিক হয়ে যাবে না। তবে গুনাহগার হইবে। ভবিষ্যতে এই ধরনের কিছু করিবে না বলে তাকে তাওবা করিতে হইবে। এই ধরনের কসম অতি নিন্দনীয়।
{১} তা কসম বলে গণ্য হয় না এবং এতে কাফফারাও ওয়াজিব হয় না। কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৭ঃ যে ধরনের কসমে কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়
১০১২ আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন : কোন বিষয়ে কসম করার পর তার বিপরীত বিষয় যদি অধিক ভাল ও মঙ্গলজনক মনে হয়; তবে ঐ কসম ভেঙ্গে তার কাফ্ফারা দেবে এবং মঙ্গলজনক কাজটি করিবে। [সহীহ, মুসলিম ১৬৫০]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, কেউ বলল : আমি মানত করলাম। কিন্তু কিসের উপর মানত করিল তা বলল না। তবুও তার উপর কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : একই কসম কেউ যদি একাধিকবার করে, যেমন আল্লাহর কসম, আমি ইহা হইতে কম করব না। এই বিষয়ের উপর সে তিনবার বা ততোধিক কসম করিল। তবে তার একবারই কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : কেউ কসম করিল আল্লাহর কসম, আমি এই খাদ্য আহার করব না, এই কাপড়টি পরব না এবং এ ঘরে প্রবেশ করব না। পরে এ কাজগুলো সে যদি করে ফেলে তবে তার উপর একই কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে। যেমন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে বলল : তোমাকে যদি এ কাপড়টি পরতে দেই এবং মসজিদে যেতে অনুমতি দেই তবে তুমি তালাক। উহা সমস্তটা মিলিয়ে একই কথা বলে গণ্য হয় এবং যে কোন একটি হলে তালাক হয়ে যায় আর পরে অন্যটি সংঘটিত হলে দ্বিতীয়বার তালাক হয় না। এইখানেও তদ্রূপ একবারই কাফ্ফারা ওয়াজিব হইবে।
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : আমাদের নিকট মাসআলা এই- স্বামীর অনুমতি ব্যতিরেকেও স্ত্রীর মানত করা জায়েয আছে। তবে তা একান্ত ব্যক্তিগত হইতে হইবে। শর্ত হল, স্বামীর কোন ক্ষতি যেন না হয়। স্বামীর ক্ষতি হলে সে স্ত্রীকে এই ধরনের মানত হইতে বিরত করিতে পারবে। তবে স্ত্রীর উপর ঐ মানত ওয়াজিব থেকে যাবে। যখনই স্বামীর অনুমতি লাভ করিবে উহা আদায় করিবে।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছেদ ৮ঃ কসমের কাফ্ফারা
১০১৩ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] বলিলেন : কেউ যদি কসম করে ও পরে আরও কসম দ্বারা উহাকে জোরালো করে এবং পরে উহা ভেঙ্গে ফেলে তবে তার উপর একটি গোলাম আযাদ করা অথবা দশজনকে কাপড় দেয়া জরুরী হইবে। আর যদি তাকীদযুক্ত নয় এমন কসম করে ভেঙ্গে ফেলে তবে দশজন মিসকীনের প্রত্যেককে এক মুদ পরিমাণ গম দিবে আর তা না পারলে তিন দিন রোযা রাখবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০১৪ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] যখন স্বীয় কসমের কাফ্ফারা দিতেন তখন দশজন মিসকীনকে আহার করাতেন এবং প্রতিজনকে এক মুদ পরিমাণ গম দিতেন, আর কসম যত তাকীদযুক্ত করিতেন তত সংখ্যক গোলাম আযাদ করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
ইয়াহইয়া ইবনি সাঈদ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত, সুলায়মান ইবনি ইয়াসার [রাহিমাহুল্লাহ] বলিলেন : আমি লোকদেরকে পেয়েছি তারা যখন কসমের কাফ্ফারা দিতেন তখন প্রত্যেক মিসকীনকে ছোট মুদের এক মুদ পরিমাণ গম দিতেন এবং উহাই যথেষ্ট বলে মনে করিতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন : কসমের কাফ্ফারা কাপড় দিতে চাইলে পুরুষ মিসকীনকে একটি কাপড় দিলেই চলবে, আর মিসকীন নারী হলে অন্তত দুটি করে কাপড় দিতে হইবে। একটি জামা আরেকটি ওড়না। কেননা এতটুকুর কমে সালাত হয় না।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
পরিচ্ছেদ ৯ঃ কসম সম্পর্কীয় বিবিধ আহকাম
১০১৫ নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.] একবার আরোহী হয়ে যাচ্ছিলেন এবং পিতার নামে কসম খাইতেছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সহিত তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তখন বলিলেন : আল্লাহ তাআলা পিতার নামে কসম করিতে নিষেধ করিয়াছেন। কেউ কসম করলে আল্লাহর নামে করো, আর তা না হলে চুপ থেকো।
[বুখারি ৬৬৪৬, মুসলিম ১৬৪৬] কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১০১৬ মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিতেন : লা ওয়া মুকাল্লিবাল কুলূব! এরূপ নয়, মনের গতি পরিবর্তনকারীর কসম। [সহীহ, বুখারি ৬৬২৮, ঈমাম মালেকের নিকট পৌঁছেছে মর্মে তিনি বর্ণনা করিয়াছেন]
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০১৭ ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবু লুবাবা ইবনি আবদুল মুনজির [রাদি.]-এর তাওবা যখন আল্লাহ তাআলা কবূল করেন তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট এসে আরয করলেন : হে আল্লাহর রসূল! আমার আত্মীয়-স্বজনের সাথে আমি যেখানে বাস করি, আমার যে বাড়িটিতে আমি গুনাহ করেছিলাম, যেখানে আমার এ গুনাহ হয়েছিল, উহা ত্যাগ করে আপনার নিকট এসে থাকব কি? আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের ওয়াস্তে এই বাড়িটি সাদকা করব কি? রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলিলেন: তোমার ধন-সম্পদের এক তৃতীয়াংশ সাদকা দিয়ে দিলেই যথেষ্ট হইবে।
{১} [সহীহ, আবু দাঊদ ৩৩১৯, আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন {মিশকাত ৩৪৩৯, তবে ঈমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল}]{১} আবু লুবাবা [রাদি.] মদীনার ইহুদী বসতি বনূ কুরায়যায় বসবাস করিতেন। এদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ শুরু হলে ইনি মুসলমানদের তরফ হইতে আলোচনা করিতে যান এবং এদের সহানুভূতিতে ইশারায় ইহাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর গোপন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন। পরে এই জন্য অত্যন্ত অনুতপ্ত হন এবং মসজিদে নববীর একটি স্তম্ভের সাথে নিজেকে বেঁধে রাখেন ও বলেন, যতদিন আল্লাহ আমার এই গুনাহ মাফ না করিবেন ততদিন এই অবস্থায়ই আমি থাকব। শুধু প্রশ্রাব-পায়খানার সময় তাঁর স্ত্রী বাঁধন খুলে দিতেন, পরে আবার বেঁধে রাখতেন। শেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর ক্ষমার ঘোষণা করেন। তখন তিনি আনন্দে সকল কিছু সদকা করে দিতে চেয়েছিলেন।কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
১০১৮ উম্মুল মুমিনীন আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। সে বলেছিল : আমার ধন-সম্পদ কাবার দরজায় ওয়াক্ফ করলাম, তবে এর কি হুকুম হইবে? আয়িশা [রাদি.] বলিলেন : তাকে কসমের কাফ্ফারার মতো কাফ্ফারা দিতে হইবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] বলেন, যদি কেউ বলে : আমার ধন-সম্পদ আল্লাহর রাহে সদকা করে দিলাম। অতঃপর সে কসম ভঙ্গ করিল; তবে তাকে সমস্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ সদকা করিতে হইবে। কেননা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ আবু লুবাবা [রাদি.] সম্পর্কে এ হুকুমটি দিয়েছিলেন।
কসম ও মানত সম্পর্কে হাদিস -এই হাদীসটির তাহকিকঃ অন্যান্য
Leave a Reply