রাজী, রিল, যাক্ওয়া, বিরে মাউনার যুদ্ধ ও যোদ্ধাদের ঘটনা
রাজী, রিল, যাক্ওয়া, বিরে মাউনার যুদ্ধ ও যোদ্ধাদের ঘটনা >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৬৪, মাগাযী, অধ্যায়ঃ ২৯=১টি
৬৪/২৯. অধ্যায়ঃ রাজী, রিল, যাক্ওয়া, বিরে মাউনার যুদ্ধ এবং আযাল, কারাহ, আসিম ইবনু সাবিত, খুবায়ইব (রাদি.) ও তার সঙ্গীদের ঘটনা
ইবনু ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আসিম ইবনু উমার (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, রাজীর যুদ্ধ হয়েছিল উহূদের পর।
৪০৮৬
আবু হুরাইরাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আসিম ইবনু উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.)এর নানা আসিম ইবনু সাবিত আনসারী (রাদি.) এর নেতৃত্বে একটি গোয়েন্দা দল প্রেরণ করিলেন। যেতে যেতে তারা উসফান ও মাক্কার মধ্যবর্তী স্থানে পৌছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বানী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর বানী লিহইয়ানের প্রায় একশ তীরন্দাজ তাদের ধাওয়া করিল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করে এমন এক স্থানে গিয়ে পৌছল, যে স্থানে অবতরণ করে সাহাবীগন খেজুর খেয়েছিলেন। তারা সেখানে খেজুরের আঁটি দেখিতে পেল যা সাহাবীগন মাদীনাহ থেকে পাথেয়রূপে এনেছিলেন। তখন তারা বলিল, এগুলো তো ইয়াসরিবের খেজুর (এর আঁটি)। এর পর তারা পদচিহ্ন ধরে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত তাঁদেরকে ধরে ফেলল। আসিম ও তাহাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে ফাদফাদ নামক টিলায় উঠে আশ্রয় নিলেন। এবার শত্র“দল এসে তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলিল, আমরা তোমাদেরকে প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি, যদি তোমরা নেমে আস তাহলে আমরা তোমাদের একজনকেও হত্যা করব না। আসিম (রাদি.) বলিলেন, আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্র“তিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ আপনার রসূলের নিকট পৌছিয়ে দিন। এর পর তারা মুসলিম গোয়েন্দা দলের প্রতি আক্রমন করিল এবং তীর বর্ষন করিতে শুরু করিল। এভাবে তারা আসিম (রাদি.) সহ সাতজনকে তীর নিক্ষেপ করে শহীদ করে দিল। এখন শুধু বাকী থাকলেন খুবায়ব (রাদি.), যায়দ (রাদি.) এবং অপর একজন (আবদুল্লাাহ ইবনু তারিক) সাহাবী (রাদি.)। পুনরায় তারা তাদেরকে ওয়াদা দিল। এই ওয়াদায় আশ্বস্ত হয়ে তাঁরা তাদের কাছে নেমে এলেন। এবার তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে এর দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথী তৃতীয় সাহাবী (আবদুল্লাহ ইবনু তারিক) (রাদি.) বলিলেন, এটাই প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। তাই তিনি সঙ্গে যেতে অস্বীকার করিলেন। তারা তাঁকে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করিল এবং বহু চেষ্টা করিল। কিন্তু তিনি তাতে রাযী হলেন না। অবশেষে কাফিররা তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবায়ব ও যায়দ (রাদি.) কে মক্কার বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিল। বানী হারিস ইবনু আমির ইবনু নাওফল গোত্রের লোকেরা খুবায়ব (রাদি.) কে কিনে নিল। কেননা বদর যুদ্ধের দিন খুবায়ব (রাদি.) হারিসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছু দিন বন্দী অবস্থায় কাটান। অবশেষে তারা তাকে তাঁকে হত্যা করার দৃঢ় সংকল্প করলে তিনি নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার জন্য হারিসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। (পরবর্তীকালে মুসলিম হওয়ার পর) হারিসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি আমার একটি শিশু বাচ্চা সম্পর্কে অসাবধান থাকায় সে পায়ে হেঁটে তাহাঁর কাছে চলে যায় এবং তিনি তাকে স্বীয় উরুর উপর বসিয়ে রাখেন। এ সময় তাহাঁর হাতে ছিল সেই ক্ষুর। এ দেখে আমি অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। খুবায়ব (রাদি.) তা বুঝতে পেরে বলিলেন, তাকে মেরে ফেলব বলে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? ইনশাআল্লাহ আমি তা করার নই। সে (হারিসের কন্যা) বলত, আমি খুবায়ব (রাদি.) থেকে উত্তম বন্দী আর কখনও দেখেনি। আমি তাকে আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মাক্কার কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তার জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিযিক ব্যতীত আর কিছুই নয়। এরপর তারা তাঁকে হত্যা করার জন্য হারামের বাইরে নিয়ে গেল। তিনি তাদেরকে বলিলেন, আমাকে দুরাকাত সালাত আদায় করার সুযোগ দাও। (সালাত আদায় করে) তিনি তাদের কাছে ফিরে এসে বলিলেন, আমি মৃত্যুর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করিতে তাহলে আমি (সালাতকে) আরো দীর্ঘায়িত করতাম। হত্যার পূর্বে দুরাকআত সালাত আদায়ের সুন্নাত প্রবর্তন করিয়াছেন তিনিই। এরপর তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুনে রাখুন। এরপর তিনি দুটি পংক্তি আবৃত্তি করিলেন-
“যেহেতু আমি মুসলিম হিসেবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার শঙ্কা নেই,
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশে যে কোন পার্শ্বে আমি ঢলে পড়ি।
আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি তাই ইচ্ছা করলে,
আল্লাহ ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বারাকাত দান করিতে পারেন।”
এরপর উকবাহ ইবনু হারিস তাহাঁর দিকে এগিয়ে গেল এবং তাঁকে শহীদ করে দিল। কুরায়শ গোত্রের লোকেরা আসিম (রাদি.)-এ শাহাদাতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাহাঁর মৃতদেহ থেকে কিছু অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়েছিল। কারণ আসিম (রাদি.) বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মতো এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন, যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসিম (রাদি.)-কে রক্ষা করিল। ফলে তাঁরা তাহাঁর দেহ থেকে কোন অংশ নিতে সক্ষম হল না।
[৩০৪৫] (আ.প্র. ৩৭৮০, ই.ফা. ৩৭৮৩)
৪০৮৭
জাবির (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খুবায়ব (রাদি.) এর হত্যাকারী হল আবু সিরওয়া (উকবাহ ইবনু হারিস)।
(আ.প্র. ৩৭৮১, ই, ফা. ৩৭৮৪)
৪০৮৮
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) কোন এক প্রয়োজনে সত্তরজন সাহাবীকে পাঠালেন, যাদের ক্বারী বলা হত। বানী সুলায়ম গোত্রের দুটি শাখা-রিল ও যাকওয়ান বিরে মাউনা নামক একটি কুপের নিকট তাদেরকে আক্রমন করলে তাঁরা বলিলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের সঙ্গে লড়াই করার উদ্দেশে আসিনি। আমরা তো কেবল নাবী (সাঃআঃ) এর নির্দেশিত একটি কাজের জন্য এ পথ দিয়ে যাচ্ছি। তখন তারা তাদেরকে তাদেরকে হত্যা করে ফেলল। তাই নাবী (সাঃআঃ) এক মাস পর্যন্ত ফজরের সলাতে তাদের জন্য বদদুআ করিলেন। এভাবেই কুনূত পড়া শুরু হয়। এর পূর্বে আমরা কুনূত পড়িনি। আবদুল আযীয (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এক ব্যক্তি আনাস (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করিলেন, কুনূত কি রুকূর পর পড়তে হইবে, না কিরাআত শেষ করে পড়তে হইবে? উত্তরে তিনি বলিলেন, না বরং কিরাআত শেষ করে পড়তে হইবে।
[১০০০] (আ.প্র. ৩৭৮২, ই.ফা. ৩৭৮৫)
৪০৮৯
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক মাস ব্যাপী আরবের কতিপয় গোত্রের প্রতি বদদুআ করার জন্য সলাতে রুকুর পর কুনূত পাঠ করিয়াছেন।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[৩৫] [১০০০] (আ.প্র. ৩৭৮৩, ই.ফা. ৩৭৮৬)
[৩৫] কুনূতে নাযিলার ক্ষেত্রে রুকুর পরেই কুনুত করিতে হইবে তবে বিতরের ক্ষেত্রে রুকুর পুর্বে ও পরে কুনূত করা উভয়ই দলীল সিদ্ধ। তবে রাসুল (সাঃআঃ) থেকে বিতরের ক্ষেত্রে রুকুর পূর্বে কুনূত করার বেশি প্রমান পাওয়া যায়। সংক্ষিপ্ত কনূতের ক্ষেত্রে রুকুর পুর্বে আর দীর্ঘ দুআর ক্ষেত্রে রুকুর পরে কনূত করিতে হইবে।
৪০৯০
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা ও বনূ লিহইয়ানের লোকেরা শত্রুর মুকাবালা করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর কাছে সাহায্য চাইলে সত্তরজন আনসার সহাবী পাঠিয়ে তিনি তদেরকে সাহায্য করিলেন। সেকালে আমরা তাদেরকে ক্বারী নামে অভিহিত করতাম। তারা দিনে লাকড়ি জুটাতেন এবং রাতে সালাতে কাটাতেন। যেতে যেতে তাঁরা বিরে মাউনার নিকট পৌঁছলে তারা (ঐ গোত্রগুলির লোকেরা) তাঁদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং তাঁদেরকে শহীদ করে দেয়। এ সংবাদ নাবী সাঃআঃ-এর কাছে পৌঁছলে তিনি এক মাস পর্যন্ত ফাজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র যথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যাহ এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদুআ করে কুনূত পাঠ করেন। আনাস (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাদের সম্পর্কিত কিছু আয়াত আমরা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে যায়। (একটি আয়াত ছিল) ………… অর্থাৎ আমাদের কাওমের লোকদেরকে জানিয়ে দাও। আমরা আমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ট করিয়াছেন।
ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি তাঁকে বলেছেন, আল্লাহর নাবী মুহাম্মাদ সাঃআঃ এক মাস পর্যন্ত ফাজরের সালাতে আরবের কতিপয় গোত্র- তথা রিল, যাকওয়ান, উসায়্যা এবং বনূ লিহইয়ানের প্রতি বদদুআ করে কুনূত পাঠ করিয়াছেন।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর উস্তাদ] খলীফা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইবনু যুরায় (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও সাঈদ ও ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাঁরা সত্তরজন সকলেই ছিলেন আনসার। তাঁদেরকে বিরে মাউনা নামক স্থানে শাহীদ করা হয়েছিল। [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেন, এখানে قُرْآنًا শব্দটি কিতাব বা অনুরূপ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
[১০০১] (আঃপ্রঃ ৩৭৮৪, ইঃফাঃ ৩৭৮৭)
৪০৯১
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর মামা উম্মু সুলায়ম-এর ভাই [হারাম ইবনু মিলহান(রা;) কে সত্তরজন অশ্বারোহীসহ (আমির ইবনু তুফাইলের নিকট) পাঠালেন। মুশরিকদের দলপতি আমির ইবনু তুফায়ল (পূর্বে) নাবী (সাঃআঃ)-কে তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহন করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিল। সে বলেছিল, পল্লী এলাকায় আপনার কর্তৃত্ব থাকবে এবং শহর এলাকায় আমার কর্তৃত্ব থাকবে। অথবা আমি আপনার খলীফা হব বা গাতফান গোত্রের দুই হাজার সৈন্য নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। এরপর আমির উম্মু ফুলানোর গৃহে মহামারিতে আক্তান্ত হল। সে বলিল, অমুক গোত্রের মহিলার বাড়িতে উটের যেমন ফোঁড়া হয় আমারও তেমন ফোঁড়া হয়েছে। তোমরা আমার ঘোড়া নিয়ে আস। তারপর ঘোড়ার পিঠেই সে মারা যায়। উম্মু সুলায়ম (রাদি.) এর ভাই হারাম [ইবনু মিলহান (রাদি.)] এক খোঁড়া ব্যক্তি ও কোন এক গোত্রের অপর ব্যক্তি সহ সে এলাকার দিকে রওয়ানা করিলেন। [হারাম ইবনু মিলহান (রাদি.)] তার দুই সঙ্গীকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তোমরা নিকটেই অবস্থান কর। আমিই তাদের নিকট যাচ্ছি। তারা যদি আমাকে নিরাপত্তা দেয়, তাহলে তোমরা এখানেই থাকবে। আর যদি তারা আমাকে শাহীদ করে দেয় তাহলে তোমরা তোমাদের সঙ্গীদের কাছে চলে যাবে। এরপর তিনি (তাদের নিকট গিয়ে) বলিলেন, তোমরা (আমাকে) নিরাপত্তা দিবে কি? দিলে আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর একটি পয়গাম তোমাদের কাছে পৌছিয়ে দিতাম। তিনি তাদের সঙ্গে এ ধরনের আলাপ- আলোচনা করছিলেন। এমন সময় তারা এক ব্যক্তিকে ইশারা করলে সে পেছন থেকে এসে তাঁকে বর্শা দ্বারা আঘাত করিল। হাম্মাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার মনে হয় আমার শায়খ (ইসহাক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেছিলেন যে, বর্শা দ্বারা আঘাত করে এপার ওপার করে দিয়েছিল। (আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে) হারাম ইবনু মিলহান (রাদি.) বলিলেন, আল্লাহু আকবার, কাবার প্রভুর শপথ! আমি সফলকাম হয়েছি। এরপর উক্ত (হারামের সঙ্গী) লোকটি ব্যতীত সকলেই নিহত হলেন। খোঁড়া লোকটি ছিলেন পর্বতের চুড়ায়। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রতি (একখানা) আয়াত অবতীর্ণ করিলেন যা পরে মানসূখ হয়ে যায়। আয়াতটি ছিল এইঃ…………. “আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌছে গেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ঠ হয়েছেন এবং আমাদেরকেও সন্তুষ্ঠ করিয়াছেন।” তাই নাবী (সাঃআঃ) ত্রিশ দিন পর্যন্ত ফজরের সলাতে রিল, যাকওয়ান, বনূ লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের জন্য বদদুআ করিয়াছেন, যারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসুলের অবাধ্য হয়েছিল।
[১০০০] (আ. প্র ৩৭৮৫, ই.ফা. ৩৭৮৮)
৪০৯২
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর মামা হারাম ইবনু মিলহান (রাদি.)-কে বিরে মাউনার দিন বর্শা বিদ্ধ করা হলে তিনি এভাবে দুহাতে রক্ত নিয়ে নিজের চেহারা ও মাথায় মেখে বলিলেন, কাবার প্রভুর কসম, আমি সফলকাম হয়েছি।
[১০০০] (আ.প্র. ৩৭৮৬, ই.ফা. ৩৭৮৯)
৪০৯৩
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, (মাক্কার কাফিরদের) অত্যাচার চরম আকার ধারণ করলে আবু বকর (রাদি.) (মক্কা ছেড়ে) বেরিয়ে যাওয়ার জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে বলিলেন, অবস্থান কর। তখন তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি কামনা করেন যে, আপনাকে অনুমতি দেয়া হোক?তিনি বলিলেন, আমি তো তাই আশা করি। আয়েশা (রাদি.) বলেন, আবু বকর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) এর জন্য অপেক্ষা করিলেন। একদিন যুহরের সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)এসে তাঁকে ডেকে বলিলেন, তোমার কাছে যারা আছে তাদেরকে সরিয়ে দাও। তখন আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, এরা তো আমার দু মেয়ে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি কি জান আমাকে চলে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে?আবু বকর (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আপনার সঙ্গে যেতে পারব? নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হ্যাঁ আমার সঙ্গে যেতে পারবে। আবু বকর বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছে দুটি উটনী আছে। এখান থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্যই ্এ দুটিকে আমি প্রস্তুক করে রেখেছি। এর পর তিনি নাবী (সাঃআঃ)-কে দুটি উটের একটি প্রদান করিলেন। এ উটটি ছিল কান-নাক কাটা। তাঁরা উভয়ে সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন এবং সওর পর্বতের গুহায় পৌছে তাতে লুকিয়ে থাকলেন। আয়েশা (রাদি.) এর বৈমাত্রেয় ভাই আমির ইবনু ফুহাইরাহ ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনু তুফাইল ইবনু সাখ্বারার গোলাম। আবু বকর (রাদি.) এর একটি দুধের গাভী ছিল। তিনি (আমির ইবনু ফুহাইরা ) সেটিকে সন্ধ্যাবেলা চরাতে নিয়ে গিয়ে রাতের অন্ধকারে তাদের দুজনের কাছে নিয়ে যেতেন এবং ভোরবেলা তাঁদের (কাফিরের) কাছে নিয়ে যেতেন। কোন রাখালই এ বিষয়টি বুঝতে পারত না। তাঁরা দুজন গারে সওর থেকে বের হলে তিনিও তাদের সঙ্গে রওয়ানা হলেন। তাঁরা মাদীনাহ পৌছে যান। আমির ইবনু ফুহাইরাহ পরবর্তীকালে বিরে মাউনার দুর্ঘটনায় শাহাদাত লাভ করেন।
(অন্য সনদে) আবু উসামাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হিশাম ইবনু উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, বিরে মাউনা গমনকারীরা শাহীদ হলে আমর ইবনু উমাইয়া যামরী বন্দী হলেন। তাঁকে আমির ইবনু তুফায়ল এক নিহত ব্যক্তির লাশ দেখিয়ে জিজ্ঞেস করিল, এ ব্যক্তি কে? আমর ইবনু উমাইয়া বলিলেন, ইনি হচ্ছেন আমির ইবনু ফুহাইরাহ। তখন সে (আমির ইবনু তুফায়ল) বলিল, আমি দেখলাম, নিহত হওয়ার পর তার লাশ আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এমনকি আমি তার লাশ আসমানে যমীনের মাঝে দেখেছি। এরপর তা (যমীনের উপর) রেখে দেয়া হল। এ সংবাদ নাবী (সাঃআঃ)-এর কাছে পৌছলে তিনি সাহাবীগনকে তাদের শাহাদাতের সংবাদ জানিয়ে বলিলেন, তোমাদের সাথীদেরকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর পূর্বে তারা তাদের প্রতিপালকের কাছে প্রার্থনা করে বলেছিলেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট এবং আপনিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট-এ সংবাদ আমাদের ভাইদের কাছে পৌছে দিন। তাই মহান আল্লাহ তাঁদের এ সংবাদ মুসলিমদের কাছে পৌছিয়ে দিলেন। ঐ দিনের নিহতদের মধ্যে উরওয়াহ ইবনু আসমা ইবনু সাল্লাত (রাদি.) ও ছিলেন। তাই এ নামেই উরওয়াহ (ইবনু যুবায়রের )-এর নামকরণ করা হয়েছে। আর মুনযির ইবনু আমর (রাদি.) ও এ দিন শাহাদাত লাভ করেছিলেন। তাই এ নামেই মুনযির-এর নামকরণ করা হয়েছে।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[৪৭৬] (আ.প্র. ৩৭৮৭. ই.ফা. ৩৭৯০)
৪০৯৪
আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক মাস ব্যাপী সলাতে রুকুর পরে কুনূত পাঠ পড়েছেন। এতে তিনি রিল, যাকওয়ান গোত্রের জন্য বদদুআ করিয়াছেন। তিনি বলেন, উসায়্যা গোত্র আল্লাহ ও তাহাঁর রসুলের অবাধ্যতা করেছে।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[১০০০] (আ. প্র ৩৭৮৮ ই.ফা. ৩৭৯১)
৪০৯৫
আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, যারা বিরে মাউনার নিকট নাবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণকে শহীদ করেছিল সে হত্যাকারী রিল, যাকওয়ান, বানী লিহইয়ান এবং উসায়্যা গোত্রের প্রতি নাবী (সাঃআঃ) ত্রিশদিন ব্যাপী ফাজরের সালাতে বদদুআ করিয়াছেন। তারা আল্লাহ ও তাহাঁর রসুলের নাফরমানী করেছে। আনাস (রাদি.) বর্ণনা করিয়াছেন যে, বিরে মাউনা নামক স্থাানে যারা শাহাদাত লাভ করিয়াছেন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাহাঁর নাবীর প্রতি আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেন। আমরা তা পাঠ করতাম। অবশ্য পরে এর তিলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে। (আয়াতটি হল)…….. অর্থাৎ আমাদের কাছে এ খবর পৌছিয়ে দাও যে, আমরা আমাদের প্রতিপালকের সান্নিধ্যে পৌছে গেছি। তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং আমরাও তাহাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছি।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[১০০০] (আ.প্র. ৩৭৮৯, ই.ফা. ৩৭৯২)
৪০৯৬
আসিমুল আহওয়াল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) কে সলাতে (দুআ) কুনুত পড়তে হইবে কি না-এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলিলেন, হ্যাঁ পড়তে হইবে। আমি বললাম, রুকুর আগে পড়তে হইবে, না পরে? তিনি বলিলেন, রুকুর আগে। আমি বললাম, অমুক ব্যক্তি আপনার সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আপনি রুকুর পর কুনূত পাঠ করার কথা বলেছেন। তিনি বলিলেন, সে মিথ্যা বলেছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাত্র একমাস ব্যাপী রুকুর পর কুনূত পাঠ করিয়াছেন। এর কারণ ছিল এই যে, নাবী (সাঃআঃ) সত্তরজন কারীর একটি দলকে মুশরিকদের নিকট কোন এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) ও তাদের মধ্যে চুক্তি ছিল। আক্রমণকারীরা বিজয়ী হল। তাই রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের প্রতি বদদুআ করে সলাতে রুকুর পর এক মাস ব্যাপী কুনূত পাঠ করিয়াছেন।
মাউনার যুদ্ধ সম্পর্কিত হাদিস -[১০০০] (আ.প্র. ৩৭৯০, ই.ফা. ৩৭৯৩)
Leave a Reply