মসজিদ নির্মাণ এর ফযীলত, কবর ও কিবলা পরিবর্তন
নবী [সাঃআঃ] -এর মসজিদ নির্মাণ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] -এর মসজিদ নির্মাণ
২. অধ্যায়ঃ বায়তুল মুকাদ্দাস হইতে কাবার দিকে ক্বিবলাহ্ পরিবর্তন
৩. অধ্যায়ঃ কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ , মাসজিদে ছবি বানানো, কবরকে সাজদার স্থান নির্ধারণ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
৪. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণের ফযীলত এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান
১. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] -এর মসজিদ নির্মাণ
১০৪৮. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রসুল! পৃথিবীতে কোন্ মসজিদটি সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল? তিনি বলিলেন, মাসজিদুল হারাম। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম এরপর কোনটি [মসজিদটি]। তিনি বলিলেন, আল মাসজিদুল আক্বসা বা বায়তুল মাক্বদিস। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, এ দুটি মাসজিদের নির্মাণকালের মধ্যে ব্যবধান কত? তিনি বলিলেন, চল্লিশ বছর। [তিনি আরো বললেনঃ] যে স্হানেই নামাজের সময় উপস্হিত হইবে, তুমি সেখানেই নামাজ আদায় করে নিবে। কারণ সে জায়গাটাও মসজিদ।
আবু কামিল বর্ণিত হাদীসে আছে, তাই যেখানেই নামাজের সময় হইবে, তুমি সেখানেই নামাজ আদায় করে নিবে। কারণ সেটিও মসজিদ।
[ইসলামিক ফাঊন্ডেশন বাংলাদেশ ১০৪২, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ১০৫২]
১০৪৯. ইবরাহীম ইবনি ইয়াযীদ আত্ তায়মী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে “সাদ্দাহ” অর্থাৎ মাসজিদের দরজার বাইরে কুরআন মাজীদ পাঠ করে শুনাতাম। আমি সাজদার আয়াত পড়লে তিনি তখন সাজদাহ্ করিতেন। আমি তাকে বলতাম, আব্বাজান! আপনি রাস্তায় সাজদাহ করছেন? তিনি বলিতেন, আমি আবু যার-কে বলিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পৃথিবীতে নির্মিত সর্বপ্রথম মসজিদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, মাসজিদুল হারাম [সর্বপ্রথম নির্মিত হয়েছিল] আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এর পর কোন মসজিদ [নির্মিত হয়েছিল?] তিনি বলিলেন, মাসজিদুল আক্বসা। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, এ দুটি মাসজিদের [নির্মিত কাজের] মধ্যে কতদিনের ব্যবধান? তিনি বলিলেন, চল্লিশ বছর। এছাড়া গোটা পৃথিবীইতো মসজিদ। সুতরাং যেখানেই নামাজের সময় হইবে, সেখানেই নামাজ আদায় করে নিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৩ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৩]
১০৫০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি, প্রত্যেক নবীকে শুধু তার কাওমের জন্য পাঠানো হতো। কিন্তু আমাকে সাদা ও কালো সবার জন্য নবী করে পাঠানো হয়েছে। আমার জন্য গণীমাত বা যুদ্ধলব্ধ অর্থ-সম্পদ হালাল করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমার পূর্বে আর কারো [কোন নবীর] জন্য তা হালাল ছিল না। আমার জন্য গোটা পৃথিবী পাক-পবিত্র ও মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং নামাজের সময় হলে যে কোন লোক যে কোন স্হানে নামাজ আদায় করে নিতে পারে। আমাকে একমাসের পথের দূরত্ব পর্যন্ত অত্যন্ত শান শাওকাত সহকারে [শত্রু ও অন্তর ভীতি দ্বারা] সাহায্য করা হয়েছে। আর আমাকে শাফাআতের সুযোগ দান করা হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৪ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৪]
১০৫১. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন….. অতঃপর তিনি উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৫ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৪]
১০৫২. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অন্য সব লোকের চেয়ে তিনটি বিষয়ে আমাদেরকে [উম্মাতে মুহাম্মাদীকে] মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাদের [নামাজের] কাতার বা সারি মালাকগণের [ফেরেশতাগণের] কাতার বা সারির মত করা হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী আমাদের জন্য মসজিদ করে দেয়া হয়েছে। আর পানি না পেলে পৃথিবীর মাটিকে আমাদের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ করে দেয়া হয়েছে। এরপর তিনি আরেকটি বিষয়ও উল্লেখ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৬ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৫]
১০৫৩. হুযায়ফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, …….. এরপর এ কথা বলে তিনি পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৭ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৬]
১০৫৪. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ অন্য সব নবীদের চাইতে আমাকে ছয়টি বিশেষ মর্যাদা দান করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমার জন্য গণীমাতের [যুদ্ধলব্ধ] অর্থ সম্পদ হালাল করা হয়েছে। আমার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূমি বা মাটি পবিত্রতা হাসিলকারী বা মসজিদ করা হয়েছে। আমাকে সমগ্র সৃষ্টির জন্য [নবী করে] পাঠানো হয়েছে। আর আমাকে দিয়ে নবীদের আগমন-ধারা সমাপ্ত করা হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৮ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৭]
১০৫৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আমাকে অত্যন্ত প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। একদিন ঘুমের মাঝে স্বপ্নে আমার কাছে পৃথিবীর ধনভান্ডারের চাবিসমূহ এনে আমার হাতে দেয়া হলো। আবু হুরায়রাহ্…… [এর ব্যাখ্যা করে] বলেছেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তো বিদায় নিয়ে চলে গিয়েছেন, আর তোমরা তা আহরণ {১} করে চলেছ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৪৯ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৮]
{১} দুনিয়ার দিক-দিগন্ত বিজিত হওয়া এবং ধনরাজী আহরণ করা। [শারহে নাবাবী – ১ম খন্ড, ১৯৯]
১০৫৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি যে, অতঃপর ইউনুছ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫০ ইসলামিক সেন্টার-১০৫৯]
১০৫৭
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] -এর মাধ্যমে নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫১ ইসলামিক সেন্টার-১০৬০]
১০৫৮. আবুত্ ত্বহির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন, আমাকে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। আর একদিন ঘুমের মাঝে স্বপ্নে আমার কাছে পৃথিবীর ধন-ভান্ডারের চাবিসমুহ এনে আমার হাতে দেয়া হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫২ ইসলামিক সেন্টার-১০৬১]
১০৫৯. হাম্মাদ ইবনি মুনাববিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] … রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে কিছু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করে আমাদের শুনালেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হলো, তিনি বলিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আমাকে প্রবল প্রভাব দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে। আমাকে সংক্ষিপ্ত অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৩ ইসলামিক সেন্টার-১০৬২]
১০৬০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হিজরাত করে মদিনায় আগমন করিলেন, মাদিনার উচ্চভূমিতে বানী আমর ইবনি আওফ গোত্রের এলাকায় অবতরণ করিলেন, এবং সেখানে চৌদ্দ রাত অবস্থান করিলেন। অতঃপর তিনি বানী নাজ্জার গোত্রের লোকজনকে ডেকে পাঠালেন তারা সবাই [খোলা] তরবারিসহ আগমন করলো। হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ্ [সাঃআঃ] কে তাহাঁর সওয়ারী বা বাহনের উপর দেখিতে পাচ্ছি। আবু বাকর তাহাঁর পেছনে বসে আছেন এবং বানী নাজ্জারের লোকজন তাকে ঘিরে আছেন। অবশেষে তিনি আবু আইয়ুবের [আনসারী] বাড়ীর আঙীনায় অবতরণ করিলেন। বর্ণনাকারী আনাস বলেছেন, নামাজের সময় হলেই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করে নিতেন। এমনকি তিনি বকরীর খোঁয়াড়েও নামাজ আদায় করিতেন। পরে তিনি মসজিদ নির্মাণ করিতে আদিষ্ট হলে বানী নাজ্জার গোত্রের নেতৃস্হায়ী লোকদের ডেকে পাঠালেন। তারা উপস্হিত হলে তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বলিলেন, হে বানী নাজ্জার! তোমরা তোমাদের এ বাগানটি অর্থের বিনিময়ে আমার কাছে বিক্রি কর। তারা বললো না, আল্লাহর শপথ, আমরা আল্লাহর নিকট ছাড়া আপনার কাছে এর মূল্য দাবী করব না। আনাস বলেন, ঐ বাগানটিতে যা ছিল তা আমি বর্ণনা করছি, ঐ বাগানে ছিল খেজুর গাছ, মুশরিকের কিছু কবর এবং কিছু ঘর-বাড়ির ধ্বংস স্তুপ। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর নির্দেশে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো, মুশরিকদের কবরগুলো খুঁড়ে ফেলা হলো এবং ধ্বংসাবশেষ গুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হলো। তারা [কর্তিত] খেজুর গাছের গুড়িসমুহ ক্বিবলার দিকে সারি করে রাখল এবং দরজার দুপাশে পাথর স্হাপন করিল। আনাস ইবনি মালিক বর্ণনা করিয়াছেন। এসব কাজ করার সময় তারা একসুরে কবিতা আবৃতি করছিল। আর তাদের সাথে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একসুরে কবিতা আবৃতি করছিলেন।
তারা বলছিল,
হে আল্লাহ ! আখিরাতের কল্যান ছাড়া প্রকৃত কোন কল্যান নেই।
তুমি আনসার ও মুহাজিরদের সাহায্য করো
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৪ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৩]
১০৬১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মসজিদ নির্মাণের পূর্বে বকরীর খোঁয়াড়েও নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৫ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৪]
১০৬২. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উপরে বর্ণিত হাদীসটির বিষয়বস্তুর অনুরূপ করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৫ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৪]
২. অধ্যায়ঃ বায়তুল মুকাদ্দাস হইতে কাবার দিকে ক্বিবলাহ্ পরিবর্তন
১০৬৩. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কুরআন মাজীদের আয়াত ওয়া হায়সু মা কুনতুম ফাওয়ালু উজূহাকুম শাত্বরাহ্ [অর্থাৎ – এখন যেখানেই তোমরা অবস্হান করো না কেন, ঐ [কাবাহ ঘরের] দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করো] অবতীর্ণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ষোল মাস যাবৎ বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে নবী [সাঃআঃ] -এর পিছনে নামাজ আদায় করেছি। নবী [সাঃআঃ] নামাজ আদায়ের পর এ আয়াত অবতীর্ণ হলো। তখন সবার মধ্য হইতে জনৈক ব্যাক্তি উঠে রওয়ানা হলো। সে নামাজরত একদল আনসারের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদের কাছে হাদীসটি বর্ণনা করিলেন। তারা সবাই [নামাজরত অবস্থায়ই] মুখ ফিরিয়ে বায়তুল্লাহ বা কাবাহ্ ঘরের দিকে করে নিলো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৭ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৫]
১০৬৪. বারা ইবনি আযিয [রাদি. হইতে বর্ণীতঃ
আমরা বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে ষোল কিংবা সতের মাস পর্যন্ত রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পেছনে নামাজ আদায় করেছি। এরপর আমাদেরকে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়া হয়। অর্থাৎ – ষোল কিংবা সতের মাস পরে আমরা কাবার দিকে মুখ করে নামাজ আদায়ের নির্দেশ লাভ করি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৮ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৬]
১০৬৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, কুবা নামক মাসজিদে লোকজন ফাজরের নামাজ আদায় করছিল। ঠিক তখনই একজন আগন্তুক এসে তাদেরকে বলিল,আজ রাতে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ওপর একটি আয়াত অবর্তীণ হয়েছে। তখন তাদের [মাসজিদে কুবায় নামাজ আদায়কারী মুসল্লীদের] মুখ ছিল শামের [বায়তুল মাক্বদিস বা মাসজিদে আক্বসার, বা যা বর্তমানে ফিলিস্তীনে অবস্হিত] দিকে। অতঃপর [নামাজরত অবস্হায়] তারা কাবার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৫৯ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৭]
১০৬৬. সুওয়াইদ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ইবনি উমর ও আবদুল্লাহ ইবনি দীনার-এর মাধ্যমে আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, লোকজন ফাজ্বরের নামাজ আদায় করছিল। ঠিক তখন একজন সেখানে এসে হাজির হলো … এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬০ ইসলামিক সেন্টার-১০৬৮]
১০৬৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বায়তুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করিতেন। তারপর এক সময় এ আয়াত অবর্তীর্ণ হলো [আরবি] অর্থাৎ- “আমি বার বার তোমাকে আসমানের দিকে তাকানো দেখছিলাম। এখন আমি তোমাকে তোমার পছন্দনীয় ক্বিবলার দিকে ফিরিয়ে দিলাম। সুতরাং তুমি তোমার মুখ মাসজিদে হারামের দিকে ফিরিয়ে নাও”- [সূরাহ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৩৩]। এরপর জনৈক ব্যক্তি ভোরবেলা বানী সালমাহ্ গোত্রের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করছিল। সে দেখিতে পেলো তারা ফজর সলা্তের এক রাকআত আদায় করেছে এবং দ্বিতীয় রাকআতে রুকূরত আছে। তখন সে ডেকে বলিল, ক্বিবলাহ্ কিন্তু পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। [এ কথা শুনার পর] তারা নামাজরত অবস্থায়ই [নতুন] ক্বিবলার দিকে ঘুরে গেল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬১, ইসলামিক সেন্টার- ১০৬৯]
৩. অধ্যায়ঃ কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ , মাসজিদে ছবি বানানো, কবরকে সাজদার স্থান নির্ধারণ করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা
১০৬৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
উম্মু হাবীবাহ্ ও উম্মু সালামাহ্ [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর দু স্ত্রী] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে এমন একটি গীর্জার বর্ণনা দিলো যার মধ্যে মূর্তি বা ছবি যা তারা হাবশায় দেখেছিলেন। তাদের কথা শুনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তারা এরূপই করে থাকে। তাদের মধ্যেকার কোন নেক লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ নির্মাণ করে এবং তার মধ্যে ছবি বা মূর্তি স্থাপন করে। ক্বিয়ামাতের দিন এরা হইবে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট সৃষ্টি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬২, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭০]
১০৬৯. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেনঃ ] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন পীড়িত তখন সাহাবীগণ তাহাঁর কাছে কাথা-বার্তা বলিলেন। তখন উম্মু সালামাহ্ ও উম্মু হাবীবাহ্ গীর্জার কথা বর্ণনা করিলেন। এরপর বর্ণনাকারী হাদীসটিতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭১]
১০৭০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] -এর স্ত্রীগণ আবিসিনিয়ায় [যা বর্তমানে ইথিওপিয়া] মারিয়াহ্ নামক যে এক রকম গীর্জা দেখেছিলেন তার আলোচনা করিলেন। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বর্ণনাকারী হাদীসটির অবশিষ্টাংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৪ ইসলামিক সেন্টার- ১০৭২]
১০৭১. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর রোগ-শয্যায় বলেছিলেন, আল্লাহ ইয়াহূদ ও নাসারাদের [খৃস্টানদের] প্রতি লানাত বর্ষণ করুন। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছেন। আয়িশা [রাদি.] বলেছেনঃ যদি এরূপ করার আশঙ্কা না থাকতো তাহলে তাকে উন্মুক্ত স্থানে কবর দেয়া হত।
কিন্তু যেহেতু তিনি আশংকা করিতেন যে, তাহাঁর কবরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করা হইতে পারে তাই উন্মুক্ত স্থানে কবর করিতে দেননি। বরং আয়েশাহ [রাদি.] -এর কক্ষে তাহাঁর কবর করা হয়েছে।
তবে ইবনি আবু শায়বাহ্-এর বর্ণিত হাদীসে [আরবি] স্থানে [আরবি] কথাটি বর্ণনা করা হয়েছে। আর তিনি ক্বালাত শব্দটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৫ ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৩]
১০৭২. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহূদদের ধ্বংস করুন। তারা তাদের নবীদের কবরকে মসজিদ বা সাজদার স্থান বানিয়ে নিয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৪]
১০৭৩. আবু হুরায়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহূদ ও নাসারাদের [খৃষ্টানদের] ওপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন। কারণ তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৫]
১০৭৪. আয়িশাহ্ ও আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তারা উভয়েই বর্ণনা করিয়াছেন যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর ওয়াফাতের সময় ঘনিয়ে আসলে তিনি চাদর টেনে টেনে মুখমন্ডলের উপর দিচ্ছিলেন। কিন্তু আবার যখন অস্বস্তিবোধ করছিলেন তখন তা সরিয়ে দিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তিনি বলছিলেন ইয়াহূদ [ইয়াহূদী] ও নাসারাদের [খৃষ্টানদের] ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক। তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে মসজিদ বা সাজদার স্থান করে নিয়েছে [অর্থাৎ-সেখানে তারা সাজদাহ্ করে]। আর ইয়াহূদ ও নাসারাদের মতো না করিতে তিনি [সাঃআঃ] বার বার হুঁশিয়ার করে দিচ্ছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৬]
১০৭৫. জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মৃত্যুর পাঁচদিন পূর্বে তাঁকে বলিতে শুনেছি যে, তোমাদের মধ্যে থেকে আমার কোন খলীল বা একান্ত বন্ধু থাকার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে মুক্ত। কারণ মহান আল্লাহ ইব্রাহীমকে যেমন খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করিয়াছেন, সে রকমভাবে আমাকেও খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করিয়াছেন। আমি আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে কাউকে খলীল বা একান্ত বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করিতে চাইলে আবু বকরকেই তা করতাম। সাবধান থেকো তোমাদের পূর্বের যুগের লোকেরা তাদের নবী ও নেককার লোকদের কবরসমূহকে মসজিদ [সাজদার স্থান] হিসেবে গ্রহণ করত। সাবধান তোমরা কবরসমূহকে সাজদার স্থান বানাবে না। আমি এরূপ করিতে তোমাদেরকে নিষেধ করে যাচ্ছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৭]
৪. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণের ফযীলত এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান
১০৭৬ : উবায়দুল্লাহ আল খাওলানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] যে সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মসজিদ নির্মাণ করিলেন এবং এ কারণে লোকজন তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করিতে শুরু করলো তখন উবায়দুল্লাহ খাওলানী উসমানকে বলিতে শুনেছেন, তোমরা আমার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছ। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করিবে, হাদীস বর্ণনাকারী বুকায়র বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন এর মাধ্যমে [মসজিদ নির্মাণ] যদি সে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রত্যাশা করে তাহলে মহান আল্লাহ তাআলাও তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করেন বলে উল্লেখ করিয়াছেন।
ইবনি ঈসা তাহাঁর বর্ণনায় [জান্নাতের মধ্যে অনুরূপ] শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৮]
১০৭৭ : মাহমূদ ইবনি লাবীদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেন] উসমান ইবনি আফফান [রাদি.] মসজিদ নির্মাণ করিতে মনস্থ করলে লোকজন তা করা পছন্দ করলো না। বরং মসজিদ যেমন আছে তেমন রেখে দেয়াই তারা ভাল মনে করলো। তখন উসমান বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কেউ মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তাআলাও তার জন্য জান্নাতের মধ্যে অনুরূপ একখানা ঘর তৈরি করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১০৭৯]
Leave a Reply