মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার এবং সালাত আদায় করার স্থান সমূহ
মসজিদের আদব ও শিষ্টাচার এবং সালাত আদায় করার স্থান সমূহ >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
পর্বঃ ৮, সালাত (নামাজ), অধ্যায়ঃ (৪১-৮৯)=৪৯টি
৮/৪১. অধ্যায়ঃ অমুকের মসজিদ বলা যায় কি?
৮/৪২. অধ্যায়ঃ মসজিদে কোনো কিছু ভাগ করা ও (খেজুরের) কাঁদি ঝুলানো।
৮/৪৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে যাকে খাবার দাওয়াত দেয়া হল, আর যিনি তা কবুল করেন।
৮/৪৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে বিচার করা ও নারী-পুরুষের মধ্যে লিআন [১] করা।
৮/৪৫. অধ্যায়ঃ কারো ঘরে প্রবেশ করলে যেখানে ইচ্ছা বা যেখানে নির্দেশ করা হয় সেখানেই সালাত আদায় করিবে। এ ব্যাপারে অধিক যাচাই বাছাই করিবে না।
৮/৪৬. অধ্যায়ঃ ঘর বাড়িতে মসজিদ তৈরি
৮/৪৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডান দিক হইতে শুরু করা।
৮/৪৮. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলে তদস্থলে মসজিদ নির্মাণ কি বৈধ?
৮/৪৯. অধ্যায়ঃ ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করা।
৮/৫০. অধ্যায়ঃ উট রাখার স্থানে সালাত আদায়।
৮/৫১. অধ্যায়ঃ চুলা, আগুন বা এমন কোন বস্তু যার ঊপাসনা করা হয়, তা সামনে রেখে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করারই উদ্দেশ্যে সালাত আদায়।
৮/৫২. অধ্যায়ঃ কবরস্থানে সালাত আদায় করা মাকরূহ
৮/৫৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর গজবে বিধ্বস্ত ও আযাবের স্থানে সালাত আদায় করা।
৮/৫৪. অধ্যায়ঃ গির্জায় সালাত আদায়
৮/৫৫. অধ্যায়ঃ
৮/৫৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আমার জন্যে যমীনকে সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা হাসিলের উপায় করা হয়েছে।
৮/৫৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে মহিলাদের ঘুমানো
৮/৫৮. অধ্যায়ঃ মসজিদে পুরুষদের নিদ্রা যাওয়া
৮/৫৯. অধ্যায়ঃ সফর হইতে ফিরে আসার পর সালাত আদায়।
৮/৬০. অধ্যায়ঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দুরাকাআত সালাত আদায় করে নেয়।
৮/৬১. অধ্যায়ঃ মসজিদে হাদাস হওয়া (উযূ নষ্ট হওয়া)
৮/৬২. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণ
৮/৬৩. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা
৮/৬৪ অধ্যায়ঃ কাঠের মিম্বার তৈরি ও মসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহন।
৮/৬৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে
৮/৬৬. অধ্যায়ঃ মসজিদ অতিক্রমকালে যেন তীরের ফলা ধরে রাখে।
৮/৬৭. অধ্যায়ঃ মসজিদ অতিক্রম করা
৮/৬৮. অধ্যায়ঃ মসজিদে কবিতা পাঠ
৮/৬৯. অধ্যায়ঃ বর্শা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ।
৮/৭০. অধ্যায়ঃ মসজিদের মিম্বারের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা।
৮/৭১. অধ্যায়ঃ মসজিদে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দেয়া ও চাপ সৃষ্টি।
৮/৭২. অধ্যায়ঃ মসজিদ ঝাড়ু দেয়া এবং ন্যাকড়া, আবর্জনা ও কাঠ খড়ি কুড়ানো
৮/৭৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করা।
৮/৭৪. অধ্যায়ঃ মসজিদের জন্য খাদিম
৮/৭৫, অধ্যায়ঃ কয়েদী অথবা ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে মসজিদে বেঁধে রাখা।
৮/৭৬. অধ্যায়ঃ ইসলাম গ্রহণের গোসল করা এবং মসজিদে কয়েদীকে বাঁধা।
৮/৭৭. অধ্যায়ঃ রোগী ও অন্যদের জন্য মসজিদে তাঁবু স্থাপন
৮/৭৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনে উট নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
৮/৭৯. অধ্যায়ঃ
৮/৮০. অধ্যায়ঃ মসজিদে ছোট দরজা ও পথ বানানো
৮/৮১. অধ্যায়ঃ বাইতুল্লায় ও অন্যান্য মসজিদে দরজা রাখা ও তালা লাগানো।
৮/৮২. অধ্যায়ঃ মসজিদে মুশরিকের প্রবেশ
৮/৮৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে আওয়ায উঁচু করা
৮/৮৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে হালকা রাঁধা ও বসা
৮/৮৫. অধ্যায়ঃ মসজিদে চিত হয়ে পা প্রসারিত করে শোয়া
৮/৮৬. অধ্যায়ঃ লোকের অসুবিধা না হলে রাস্তায় মসজিদ বানানো বৈধ।
৮/৮৭. অধ্যায়ঃ বাজারের মসজিদে সালাত আদায়।
৮/৮৮. অধ্যায়ঃ মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করানো।
৮/৮৯. অধ্যায়ঃ মদীনার রাস্তার মসজিদসমূহ এবং যে সকল স্থানে নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করেছিলেন।
৮/৪১. অধ্যায়ঃ অমুকের মসজিদ বলা যায় কি?
৪২০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যুদ্ধের জন্যে তৈরি ঘোড়াকে হাফয়া (নামক স্থান) হইতে সানিয়াতুল ওয়াদা পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর যে ঘোড়া যুদ্ধের জন্যে তৈরি নয়, সে ঘোড়াকে সানিয়া হইতে যুরাইক গোত্রের মসজিদ পর্যন্ত দৌড় প্রতিযোগিতা করিয়েছিলেন। আর এই প্রতিযোগিতায় আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) অগ্রগামী ছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪০৩, ইঃফাঃ ৪০৯)
৮/৪২. অধ্যায়ঃ মসজিদে কোনো কিছু ভাগ করা ও (খেজুরের) কাঁদি ঝুলানো।
আবু আবদুল্লাহ বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, اَلْقِنْوُ – اَلْعِذْقُ একই জিনিসের নাম। এর দ্বিবচন قِنْوَانِ এবং বহুবচনেও قُنْوَانٌ যেমন صِنْوٌ ওصِنْوَانٌ –
৪২১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বাহরাইন হইতে কিছু সম্পদ এলো। তিনি বললেনঃ এগুলো মসজিদে রেখে দাও। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এ যাবত যত সম্পদ আনা হয়েছে তার মধ্যে এ সম্পদই ছিল পরিমাণে সবচে বেশী। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাতে চলে গেলেন এবং এর দিকে দৃষ্টি দিলেন না। সালাত শেষ করে তিনি এসে সম্পদের নিকট গিয়ে বসলেন। তিনি যাকেই দেখলেন, কিছু সম্পদ দিয়ে দিলেন। ইতোমধ্যে আব্বাস (রাদি.) এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমাকেও কিছু দিন। কারণ আমি নিজের ও আকীলের (এ দুজন বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের কয়েদী ছিলেন) পক্ষ হইতে মুক্তিপণ দিয়েছি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ নিয়ে যান। তিনি তা কাপড়ে ভরে নিলেন। অতঃপর তা উঠাতে চেষ্টা করিলেন, কিন্তু পারলেন না। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! কাউকে বলুন, যেন আমাকে এটি উঠিয়ে দেয়। তিনি বলিলেন না। আবাস (রাদি.) বললেনঃ তাহলে আপনি নিজেই তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। আব্বাস (রাদি.) তা হইতে কিছু সম্পদ রেখে দিলেন। অতঃপর পুনরায় তা তুলতে চেষ্টা করিলেন। (এবারও তুলতে না পেরে) তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! কাউকে আদেশ করুন যেন আমাকে তুলে দেয়। তিনি বললেনঃ না। অতঃপর আব্বাস (রাদি.) বললেনঃ তাহলে আপনিই আমাকে তুলে দিন। তিনি বললেনঃ না। অতঃপর আব্বাস (রাদি.) আরো কিছু সম্পদ নামিয়ে রাখলেন। এবার তিনি উঠতে পারলেন এবং তা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর এই লোভ দেখে এতই বিস্মিত হয়েছিলেন যে, তিনি আব্বাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেন যতক্ষণ না তিনি চোখের আড়াল হলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সেখানে একটি দিরহাম অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত উঠলেন না।
(আঃপ্রঃ অনুচ্ছেদ পৃঃ ২০৯, ইঃফাঃ অনুচ্ছেদ ২৮৩)
৮/৪৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে যাকে খাবার দাওয়াত দেয়া হল, আর যিনি তা কবুল করেন।
৪২২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-কে মসজিদে পেলাম আর তাহাঁর সঙ্গে ছিলেন কয়েক জন সাহাবী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তোমাকে কি আবু তাল্হা পাঠিয়েছেন? আমি বললামঃ জী হাঁ। তিনি বললেনঃ খাবার জন্য? আমি বললামঃ জী হাঁ। তখন তাহাঁর আশে পাশে যাঁরা ছিলেন, তিনি তাঁদেরকে বললেনঃ উঠ। অতঃপর তিনি চলতে শুরু করিলেন। (রাবী বলেন) আর আমি তাঁদের সামনে সামনে অগ্রসর হলাম।
(আঃপ্রঃ ৪০৪, ইঃফাঃ ৪১০)
৮/৪৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে বিচার করা ও নারী-পুরুষের মধ্যে লিআন [১] করা।
[১] লিআনঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সৃষ্ট বিবাদে কোন মিমাংসা না হলে, সর্ব শেষ ফয়সালা হিসেবে তারা প্রত্যেকে নিজের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করিবে এই বলে যে, যদি আমি মিথ্যা বাদী হই তাহলে আল্লাহর অভিসম্পাত আমার উপর পতিত হোক। (সুরা নূর ২৪/৬-৯)
৪২৩. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসুল। কেউ তার স্ত্রীর সাথে অন্য ব্যক্তিকে দেখিতে পেলে কি তাকে হত্যা করিবে? পরে মসজিদে সেও তার স্ত্রী একে অন্যকে লিআন করিল। তখন আমি তা প্রত্যক্ষ করলাম।
(আঃপ্রঃ ৪০৫, ইঃফাঃ ৪১১)
৮/৪৫. অধ্যায়ঃ কারো ঘরে প্রবেশ করলে যেখানে ইচ্ছা বা যেখানে নির্দেশ করা হয় সেখানেই সালাত আদায় করিবে। এ ব্যাপারে অধিক যাচাই বাছাই করিবে না।
৪২৪. ইতবান ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরে এলেন এবং বললেনঃ তোমার ঘরের কোন জায়গায় আমার সালাত আদায় করা তুমি পছন্দ কর? তিনি বললেনঃ তখন আমি তাঁকে একটি স্থানের দিকে ইঙ্গিত করলাম। নাবী (সাঃআঃ) তাকবীর বলিলেন। আমরা তাহাঁর পেছনে কাতার হয়ে দাঁড়ালাম। তিনি দুরাকাআত সালাত আদায় করিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪০৬, ইঃফাঃ ৪১২)
৮/৪৬. অধ্যায়ঃ ঘর বাড়িতে মসজিদ তৈরি
বারা ইবন আযিব (রাদি.) নিজের বাড়ীর মসজিদে জামাআত করে সালাত আদায় করেছিলেন-
৪২৫. মাহমূদ ইবনু রাবী আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইতবান ইবনু মালিক (রাদি.) , যিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী আনসারগণের অন্যতম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে আরয করিলেন হে আল্লাহর রাসুল! আমার দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছে। আমি আমার গোত্রের লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করি। কিন্তু বৃষ্টি হলে আমার ও তাদের বাসস্থানের মধ্যবর্তী নিম্নভুমিতে পানি জমে যাওয়াতে তা পার হয়ে তাদের মসজিদে পৌছাতে এবং তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করিতে সমর্থ হই না। আর হে আল্লাহর রাসুল! আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি আমার ঘরে এসে কোন এক স্থানে সালাত আদায় করেন এবং আমি সেই স্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করে নিই। রাবী বলেনঃ তাঁকে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ ইনশাআল্লাহ অচিরেই আমি তা করব। ইতবান (রাদি.) বলেনঃ পর দিন সূর্যোদয়ের পর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ও আবু বকর (রাদি.) আমার ঘরে তাশরীফ আনেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ভেতরে প্রবেশ করিতে চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। ঘরে প্রবেশ করে তিনি না বসেই জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ঘরের কোন স্থানে সালাত আদায় করা পছন্দ কর? তিনি বলেনঃ আমি তাঁকে ঘরের এক প্রান্তের দিকে ইঙ্গিত করলাম। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বলিলেন। তখন আমরাও দাঁড়ালাম এবং কাতারবন্দী হলাম। তিনি দুরাকআত সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন। তিনি (ইতবান) বলেনঃ আমরা তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য বসালাম এবং তাহাঁর জন্য তৈরি খাযিরাহ [১] নামক খাবার তাহাঁর সামনে পেশ করলাম। রাবী বলেনঃ এ সময় মহল্লার কিছুলোক এসে ঘরে ভীড় জমালেন। তখন উপস্থিত লোকদের মধ্য হইতে এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, মালিক ইবনু দুখাইশিন কোথায়? অথবা বললেনঃ ইবনু দুখশুন কোথায়? তখন তাদের একজন জওয়াব দিলেন, সে মুনাফিক। সে মহান আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলকে ভালবাসে না। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এরূপ বলো না। তুমি কি দেখছ না যে, সে আল্লাহর সন্তোষ লাভের জন্য
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বলেছে? তখন সে ব্যক্তি বললেনঃ আল্লাহ ও তাহাঁর রাসুলই ভাল জানেন। আমরা তো তার সম্পর্ক ও নাসীহাত কামনা মুনাফিকদের সাথেই দেখি। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তো এমন ব্যক্তির প্রতি জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন, যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ
“লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বলে। রাবী ইবন শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ অতঃপর আমি মাহমূদ ইবন রাবী (রাদি.)-এর হাদীস সম্পর্কে হুসায়ন ইবনু মুহাম্মাদ আনসারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, যিনি বনূ সালিম গোত্রের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন। তিনি এ হাদীস সমর্থন করিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪০৭, ইঃফাঃ ৪১৩). [১] খাযিরাহঃ ছোট ছোট গোশতের টুকরা বা কিমা, পানি দ্বারা সিদ্ধ করার পর সেটাতে আটা মিশিয়ে রান্না করা খাবার।
৮/৪৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে প্রবেশ ও অন্যান্য কাজ ডান দিক হইতে শুরু করা।
ইবন উমার (রাদি.) প্রবেশের সময় প্রথম ডান পা দিয়ে শুরু করিতেন এবং বের হওয়ার সময় প্রথম বাঁ পা দিয়ে শুরু করিতেন-
৪২৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) নিজের সমস্ত কাজে যথাসম্ভব ডানদিক হইতে আরম্ভ করা পছন্দ করিতেন। তাহারাত অর্জন, মাথা আঁচড়ানো এবং জুতা পরার সময়ও।
(আঃপ্রঃ ৪০৮, ইঃফাঃ ৪১৪)
৮/৪৮. অধ্যায়ঃ জাহিলী যুগের মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলে তদস্থলে মসজিদ নির্মাণ কি বৈধ?
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ইয়াহুদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ, তারা নাবীগণের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে।
আর কবরের উপর সালাত আদায় করা মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে উমার ইবন খত্তাব (রাদি.) আনাস ইবন মালিক (রাদি.) কে একটি কবরের কাছে সালাত আদায় করিতে দেখে বললেনঃ কবর! কবর! কিন্তু তিনি তাঁকে সালাত পুনরায় আদায় করিতে বলেন নি-
৪২৭. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মু হাবীবা ও উম্মু সালামা (রাদি.) হাবশায় তাঁদের দেখা একটা গির্জার কথা বলেছিলেন, যাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল। তাঁরা উভয়ে বিষয়টি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট বর্ণনা করিলেন। তিনি ইরশাদ করলেনঃ তাদের অবস্থা ছিল এমন যে, কোন সৎ লোক মারা গেলে তারা তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো। আর তার ভিতর ঐ লোকের মূর্তি তৈরি করে রাখতো। কিয়ামত দিবসে তারাই আল্লাহর নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট সৃষ্টজীব বলে পরিগণিত হইবে।
(আঃপ্রঃ ৪০৯, ইঃফাঃ ৪১৫)
৪২৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) মদীনায় পৌঁছে প্রথমে মদীনার উচ্চ এলাকায় অবস্থিত বনূ আমর ইবনু আওফ নামক গোত্রে উপনীত হন। তাদের সঙ্গে নাবী (সাঃআঃ) চৌদ্দ দিন (অপর বর্ণনায় চব্বিশ দিন) অবস্থান করেন। অতঃপর তিনি বনূ নাজ্জারকে ডেকে পাঠালেন। তারা কাঁধে তলোয়ার ঝুলিয়ে উপস্থিত হলো। আমি যেন এখনো সে দৃশ্য দেখিতে পাচ্ছি যে, নাবী (সাঃআঃ) ছিলেন তাহাঁর বাহনের উপর, আবু বকর (রাদি.) সে বাহনেই তাহাঁর পেছনে আর বনূ নাজ্জারের দল তাহাঁর আশেপাশে। অবশেষে তিনি আবু আয়্যূব আনসারী (রাদি.)-র ঘরের সাহানে অবতরণ করিলেন। নাবী (সাঃআঃ) যেখানেই সালাতের ওয়াক্ত হয় সেখানেই সালাত আদায় করিতে পছন্দ করিতেন এবং তিনি ছাগল-ভেড়ার খোঁয়াড়েও সালাত আদায় করিতেন। এখন তিনি মসজিদ তৈরি করার নির্দেশ দেন। তিনি বনূ নাজ্জারকে ডেকে বললেনঃ হে বনূ নাজ্জার! তোমরা আমার কাছ হইতে তোমাদের এই বাগিচার মূল্য নির্ধারণ কর। তারা বললোঃ না, আল্লাহর কসম, আমরা এর দাম নেব না। এর দাম আমরা একমাত্র আল্লাহর নিকটই আশা করি। আনাস (রাদি.) বলেনঃ আমি তোমাদের বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর এবং ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুর গাছ। নাবী (সাঃআঃ)-এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হলো, অতঃপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে রাখা হলো, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হলো অতঃপর মসজিদের কিবলায় সারিবদ্ধ করে রাখা হলো এবং তার দুই পাশে পাথর বসানো হলো। সাহাবীগণ পাথর তুলতে তুলতে ছন্দোবদ্ধ কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। আর নাবী (সাঃআঃ)-ও তাঁদের সাথে ছিলেন। তিনি তখন বলছিলেনঃ
اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الآخِرَهْ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهْ
“হে আল্লাহ! আখিরাতের কল্যাণ ব্যতীত (প্রকৃত) আর কোন কল্যাণ নেই। তুমি আনসার ও মুহাজিরগণকে ক্ষমা কর।”
(আঃপ্রঃ ৪১০, ইঃফাঃ ৪১৬)
৮/৪৯. অধ্যায়ঃ ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করা।
৪২৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) ছাগল থাকার স্থানে সালাত আদায় করিয়াছেন। রাবী বলেন, অতঃপর আমি আনাস (রাদি.)-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, মসজিদ নির্মাণের পূর্বে তিনি (নাবী (সাঃআঃ)) ছাগলের খোঁয়াড়ে সালাত আদায় করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৪১১, ইঃফাঃ ৪১৭)
৮/৫০. অধ্যায়ঃ উট রাখার স্থানে সালাত আদায়।
৪৩০. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি ইবনু উমর (রাদি.)–কে তাহাঁর উটের দিকে সালাত আদায় করিতে দেখেছি। আর ইবনু উমর (রাদি.) বলেছেনঃ আমি দেখেছি নাবী (সাঃআঃ) এমন করিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪১২, ইঃফাঃ ৪১৮)
৮/৫১. অধ্যায়ঃ চুলা, আগুন বা এমন কোন বস্তু যার ঊপাসনা করা হয়, তা সামনে রেখে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করারই উদ্দেশ্যে সালাত আদায়।
যুহরী (র.) বলেনঃ আমাকে আনাস ইবন মালিক (রাদি.) জানিয়েছেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমার সামনে আগুন (জাহান্নাম) পেশ করা হলো, তখন আমি সালাতে ছিলাম
৪৩১. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একবার সূর্য গ্রহণ হলো। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর বললেনঃ আমাকে জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। আজকের মত ভয়াবহ দৃশ্য ইতোপূর্বে কখনো দেখিনি।
(আঃপ্রঃ ৪১৩, ইঃফাঃ ৪১৯)
৮/৫২. অধ্যায়ঃ কবরস্থানে সালাত আদায় করা মাকরূহ
৪৩২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের ঘরেও কিছু সালাত আদায় করিবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না।
(আঃপ্রঃ ৪১৪, ইঃফাঃ ৪২০)
৮/৫৩. অধ্যায়ঃ আল্লাহর গজবে বিধ্বস্ত ও আযাবের স্থানে সালাত আদায় করা।
উল্লেখ রয়েছে যে, আলী (রাদি.) ব্যাবিলনের ধ্বংসস্তূপে সালাত আদায় করা মাকরূহ মনে করিতেন
৪৩৩. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করিবে না। কান্না না আসলে সেখানে প্রবেশ করো না, যেন তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের প্রতিও আসতে না পারে।
(আঃপ্রঃ ৪১৫, ইঃফাঃ ৪২১)
৮/৫৪. অধ্যায়ঃ গির্জায় সালাত আদায়
উমার (রাদি.) বলেছেনঃ আমরা তোমাদের গির্জাসমূহে প্রবেশ করি না, কারণ তাতে মূর্তি রয়েছে। ইবন আব্বাস (রাদি.) গির্জায় সালাত আদায় করিতেন। তবে যেগুলোতে মূর্তি ছিল সেগুলোতে নয়
৪৩৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উম্মু সালামা (রাদি.) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট তাহাঁর হাবশায় দেখা মারিয়া নামক একটা গির্জার কথা উল্লেখ করিলেন। তিনি সেখানে সেখানে যে সব প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন, সেগুলোর বর্ণনা দিলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ এরা এমন সম্প্রদায় যে, এদের মধ্যে কোন সৎ বান্দা অথবা বলেছেন কোন সৎ লোক মারা গেলে তার কবরের উপর তারা মসজিদ বানিয়ে নিত। আর তাতে ঐ সব ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি স্থাপন করতো। এরা আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম সৃষ্টজীব।
(আঃপ্রঃ ৪১৬, ইঃফাঃ ৪২২)
৮/৫৫. অধ্যায়ঃ
৪৩৫. উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন উতবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাহাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করিতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হইতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করিয়াছেন। (এ বলে) তারা যে (বিদআতী) কার্যকলাপ করত তা হইতে তিনি সতর্ক করেছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪১৭, ইঃফাঃ ৪২৩)
৪৩৬. উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন উতবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা ও আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেছেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর মৃত্যু পীড়া শুরু হলে তিনি তাহাঁর একটা চাদরে নিজ মুখমণ্ডল আবৃত করিতে লাগলেন। যখন শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো, তখন মুখ হইতে চাদর সরিয়ে দিলেন। এমতাবস্থায় তিনি বললেনঃ ইয়াহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ, তারা তাদের নাবীদের কবরকে মসজিদে পরিণত করিয়াছেন। (এ বলে) তারা যে (বিদআতী) কার্যকলাপ করত তা হইতে তিনি সতর্ক করেছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪১৭, ইঃফাঃ ৪২৩)
৪৩৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইয়াহূদীদের ধবংস করুন। কেননা তারা তাদের নাবীদের করবকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৪১৮, ইঃফাঃ ৪২৪)
৮/৫৬. অধ্যায়ঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর উক্তিঃ আমার জন্যে যমীনকে সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা হাসিলের উপায় করা হয়েছে।
৪৩৮. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ আমাকে এমন পাঁচটি বিষয় প্রদান করা হয়েছে, যা আমার পূর্বে কোন নাবীকে দেয়া হয়নি।
(১) আমাকে এমন প্রভাব দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে যা একমাসের দূরত্ব পর্যন্ত অনুভূত হয়।
(২) সমস্ত যমীন আমার জন্যে সালাত আদায়ের স্থান ও পবিত্রতা অর্জনের উপায় করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কেউ যেখানে সালাতের ওয়াক্ত হয় (সেখানেই) যেন সালাত আদায় করে নেয়।
(৩) আমার জন্য গনীমত হালাল করা হয়েছে।
(৪) অন্যান্য নাবী নিজেদের বিশেষ গোত্রের প্রতি প্রেরিত হইতেন আর আমাকে সকল মানবের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে।
(৫) আমাকে সার্বজনীন সুপারিশের অধিকার প্রদান করা হয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৪১৯, ইঃফাঃ ৪২৫)
৮/৫৭. অধ্যায়ঃ মসজিদে মহিলাদের ঘুমানো
৪৩৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
কোন আরব গোত্রের একটা কালো দাসী ছিল। তারা তাকে আযাদ করে দিল। অতঃপর সে তাদের সাথেই থেকে গেল। সে বলেছে যে, তাদের একটি মেয়ে গলায় লাল চামড়ার উপর মূল্যবান পাথর খচিত হার পরে বাইরে গেল। দাসী বলেছেঃ সে হারটা হয়ত নিজে কোথাও রেখে দিয়েছিল, অথবা কোথাও পড়ে গিয়েছিল। তখন একটা চিল তা পড়ে থাকা অবস্থায় গোশ্তের টুকরা মনে করে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল। দাসী বলেছেঃ অতঃপর গোত্রের লোকেরা বেশ খোঁজাখুঁজি করিতে লাগলো। কিন্তু তারা তা পেল না। তখন তারা আমার উপর এর দোষ চাপাল। সে বলেছেঃ তারা আমার উপর তল্লাশী শুরু করলো, এমন কি আমার লজ্জাস্থানেও। দাসীটি বলেছেঃ আল্লাহর কসম! আমি তাদের সাথে সেই অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলাম, এমন সময় চিলটি উড়ে যেতে যেতে হারটি ফেলে দিল। সে বলেছেঃ তাদের সামনেই তা পড়লো। তখন আমি বললামঃ তোমরা তো এর জন্যই আমার উপর দোষ চাপিয়েছিলে। তোমরা আমার সম্পর্কে সন্দেহ করেছিলে অথচ আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। এই তো সেই হার! সে বলেছেঃ অতঃপর সে রাসূলুল্ললাহ (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করলো। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ তার জন্য মসজিদে (নাবাবীতে) একটা তাঁবু অথবা ছাপড়া করে দেয়া হয়েছিল। আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ সে (দাসীটি) আমার নিকট আসতো আর আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতো। সে আমার নিকট যখনই বসতো তখনই বলতোঃ
(وَيَومُ الوِشَاحِ مِن تَحَاجِيبِ رَبِّنَا * اَلاَ اِنَّهُ مِن بَلدَةِ الكُفرِ اَنجَانِي )
“সেই হারের দিনটি আমার প্রতিপালকের আশ্চর্য ঘটনা বিশেষ। জেনে রাখুন সে ঘটনাটি আমাকে কুফরের শহর হইতে মুক্তি দিয়েছে।”
আয়েশা (রাদি.) বলেন, আমি তাকে বললামঃ কি ব্যাপার, তুমি আমার নিকট বসলেই সে এ কথাটা বলে থাক? আয়েশা (রাদি.) বলেনঃ সে তখন আমার নিকট উক্ত ঘটনা বর্ণনা করিল।
(আঃপ্রঃ ৪২০, ইঃফাঃ ৪২৬)
৮/৫৮. অধ্যায়ঃ মসজিদে পুরুষদের নিদ্রা যাওয়া
আবু ক্বিলাবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আনাস ইবন মালিক (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেনঃ উক্বল গোত্রের কতিপয় ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে আসলেন এবং সুফ্ফায় অবস্থান করিলেন। আবদুর- রহমান ইবন আবু বকর (রাদি.) বলেনঃ সুফ্ফাবাসিগণ ছিলেন দরিদ্র।
৪৪০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মসজিদে নববীতে ঘুমাতেন। তিনি ছিলেন অবিবাহিত যুবক। তার কোন পরিবার-পরিজন ছিল না।
(আঃপ্রঃ৪২১ , ইঃফাঃ ৪২৭)
৪৪১. সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ফাতিমা (রাদি.)-এর গৃহে এলেন, কিন্তু আলী (রাদি.)-কে ঘরে পেলেন না। তিনি ফাতিমা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার চাচাত ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাহাঁর মধ্যে বাদানুবাদ হওয়ায় তিনি আমার সাথে রাগ করে বাইরে চলে গেছেন। আমার নিকট দুপুরের বিশ্রামও করেননি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে বললেনঃ দেখ তো সে কোথায়? সে ব্যক্তি খুঁজে এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসুল, তিনি মসজিদে শুয়ে আছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এলেন, তখন আলী (রাদি.) কাত হয়ে শুয়ে ছিলেন। তাহাঁর শরীরের এক পাশে চাদর পড়ে গেছে এবং তার শরীরে মাটি লেগেছে। আল্লাহর রাসুল মাটি ঝেড়ে দিতে দিতে বললেনঃ উঠ, হে আবু তূরাব ! উঠ, হে আবু তূরাব ! [১]
(আঃপ্রঃ ৪২২, ইঃফাঃ ৪২৮). [১] আবু তুরাবঃ আলী (রাযী.)-এর উপাধি।
৪৪২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাদের কারো গায়ে বড় চাদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল লুঙ্গি কিংবা ছোট চাদর, যা তার ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিস্ফে সাক বা হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তারা লজ্জাস্থান দেখা যাবার ভয়ে কাপড় হাত দিয়ে ধরে রাখতেন।
(আঃপ্রঃ ৪২৩, ইঃফাঃ ৪২৯)
৮/৫৯. অধ্যায়ঃ সফর হইতে ফিরে আসার পর সালাত আদায়।
কাব ইবন মালিক (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করিতেন-
৪৪৩. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি তখন মসজিদে ছিলেন। রাবী মিসআর (রাদি.) বলেনঃ আমার মনে পড়ে রাবী মুহারিব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) চাশতের সময়ের কথা বলেছেন। তখন নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি দু রাকাআত সালাত আদায় কর। জাবির (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি তা আদায় করে দিলেন বরং কিছু বেশী দিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪২৪, ইঃফাঃ ৪৩০)
৮/৬০. অধ্যায়ঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দুরাকাআত সালাত আদায় করে নেয়।
৪৪৪. আবু কাতাদাহ সালামী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার পূর্বে দুরাকাআত সালাত আদায় করে নেয়।
(আঃপ্রঃ ৪২৫, ইঃফাঃ ৪৩১)
৮/৬১. অধ্যায়ঃ মসজিদে হাদাস হওয়া (উযূ নষ্ট হওয়া)
৪৪৫. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মসজিদে সালাতের পরে হাদাসের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে সালাত আদায় করেছে সেখানে যতক্ষণ বসে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ তার জন্য দুআ করিতে থাকেন। তাঁরা বলেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর। হে আল্লাহ! তার উপর রহম কর।
(আঃপ্রঃ ৪২৬, ইঃফাঃ ৪৩২)
৮/৬২. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণ
আবু সাঈদ (রাদি.) বলেনঃ মসজিদে নববীর ছাদ ছিল খেজুর গাছের ডালের তৈরী। উমার (রাদি.) মসজিদ নির্মাণের হুকুম দিয়ে বলেনঃ আমি লোকদেরকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করিতে চাই। মসজিদে লাল বা হলুদ রং লাগানো থেকে সাবধান থাক, এতে মানুষকে তুমি ফিতনায় ফেলবে। আনাস (রাদি.) বলেনাঃ লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করিবে অথচ তারা একে কমই (ইবাদাতের মাধ্যমে) আবাদ রাখবে। ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ তোমরা তো ইয়াহুদী ও নাসারাদের মত মসজিদকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে ফেলবে।
৪৪৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সময়ে মসজিদ তৈরি হয় কাঁচা ইট দিয়ে, তার ছাদ ছিল খেজুরের ডালের, খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। আবু বকর (রাদি.) এতে কিছু বাড়ান নি। অবশ্য উমর (রাদি.) বাড়িয়েছেন। আর তার ভিত্তি তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যুগে যে ভিত্তি ছিল তার উপর কাঁচা ইট ও খেজুরের ডাল দিয়ে নির্মাণ করেন এবং তিনি খুঁটিগুলো পরিবর্তন করে কাঠের (খুঁটি) লাগান। অতঃপর উসমান (রাদি.) তাতে পরিবর্তন সাধন করেন এবং অনেক বৃদ্ধি করেন। তিনি দেয়াল তৈরি করেন নকশী পাথর ও চুন-সুরকি দিয়ে। খুঁটিও দেন নকশা করা পাথরের, আর ছাদ বানিয়েছিলেন সেগুন কাঠের।
(আঃপ্রঃ ৪২৭, ইঃফাঃ ৪৩৩)
৮/৬৩. অধ্যায়ঃ মসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা
আর আল্লাহ তাআলার বাণীঃ মুশরিকদের এ অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করিবে, যখন তারা নিজেরাই নিজেদের কুফরীর স্বীকৃতি দিচ্ছে। এদের কর্মসমূহ বিফল হয়ে গেছে। আর এরা জাহান্নামে অনন্তকাল থাকবে। আল্লাহর মাসজিদসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ তো কেবল তারাই করিবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি, এবং সালাত কায়িম করে ও যাকাত দেয়, ও আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। বস্তুতঃ এদেরই সম্বন্ধে আশা করা যায় যে, তারা হিদায়াত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হইবে। (সুরা আত-তাওবাহ ৯/১৭-১৮)
৪৪৭. ইকরিমাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ ইবনু আব্বাস (রাদি.) আমাকে ও তাহাঁর ছেলে আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)- কে বললেনঃ তোমরা উভয়ই আবু সাঈদ (রাদি.) এর নিকট যাও এবং তাহাঁর হইতে হাদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি একটা বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদীস বর্ণনা শুরু করিলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নাববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেনঃ আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার (রাদি.) দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) তা দেখে তার দেহ হইতে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলিতে লাগলেনঃ আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করিবে। সে তাদেরকে আহবান করিবে জান্নাতের দিকে আর তারা তাকে আহবান করিবে জাহান্নামের দিকে। আবু সাঈদ (রাদি.) বলেনঃ তখন আম্মার (রাদি.) বললেনঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْفِتَنِ
“আমি ফিতনা হইতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।”
(আঃপ্রঃ ৪২৮, ইঃফাঃ ৪৩৪)
৮/৬৪ অধ্যায়ঃ কাঠের মিম্বার তৈরি ও মসজিদ নির্মাণে কাঠমিস্ত্রী ও রাজমিস্ত্রীর সাহায্য গ্রহন।
৪৪৮. সাহল (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) জনৈকা মহিলার নিকট লোক পাঠিয়ে বললেনঃ তুমি তোমার গোলাম কাঠমিস্ত্রীকে বল, সে যেন আমার জন্য কাঠের মিম্বার বানিয়ে দেয় যাতে আমি বসতে পারি।
(আঃপ্রঃ৪২৯ , ইঃফাঃ ৪৩৫)
৪৪৯. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
জনৈকা মহিলা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল ! আমি কি আপনার বসার জন্য কিছু তৈরি করে দিব? আমার এক কাঠমিস্ত্রী গোলাম আছে। তিনি বললেনঃ তোমার ইচ্ছে হলে সে যেন একটা মিম্বার বানিয়ে দেয়।
(আঃপ্রঃ ৪৩০, ইঃফাঃ ৪৩৬)
৮/৬৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে
৪৫০. উবাইদুল্লাহ খাওলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি উসমান ইবনু আফফান (রাদি.) কে বলিতে শুনেছেন, তিনি যখন মসজিদে নাবাবী নির্মাণ করেছিলেন তখন লোকজনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেছিলেনঃ তোমরা আমার উপর অনেক বাড়াবাড়ি করছ অথচ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে বলিতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি মসজিদ নির্মাণ করে, বুকায়র (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমার মনে হয় রাবি আসিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর বর্ণনায় ঊল্লেখ করিয়াছেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরি করে দেবেন।
(আঃপ্রঃ ৪৩১, ইঃফাঃ ৪৩৭)
৮/৬৬. অধ্যায়ঃ মসজিদ অতিক্রমকালে যেন তীরের ফলা ধরে রাখে।
৪৫১. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি তীর সাথে করে মসজিদে নাববী অতিক্রম করছিল। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ এর ফলাগুলো হাত দিয়ে ধরে রাখ।
(আঃপ্রঃ ৪৩২, ইঃফাঃ ৪৩৮)
৮/৬৭. অধ্যায়ঃ মসজিদ অতিক্রম করা
৪৫২. আবু বুরদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর পিতা আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তীর নিয়ে আমাদের মসজিদ অথবা বাজার দিয়ে চলে সে যেন তার ফলা হাত দিয়ে ধরে রাখে, যাতে করে তার হাতে কোন মুসলমান আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।
(আঃপ্রঃ ৪৩৩, ইঃফাঃ ৪৩৯)
৮/৬৮. অধ্যায়ঃ মসজিদে কবিতা পাঠ
৪৫৩. আবু সালামা ইবনু আবদূর রহমান ইবনু আওফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
হাস্সান ইবনু সাবিত আনসারী (রাদি.) আবু হুরাইরা (রাদি.)-কে আল্লাহর কসম দিয়ে এ কথার সাক্ষ্য চেয়ে বলেনঃ আপনি কি নাবী (সাঃআঃ)-কে এ কথা বলিতে শুনেছেন, হে হাস্সান! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর পক্ষ হইতে (কবিতার মাধ্যমে মুশরিকদের) জবাব দাও। হে আল্লাহ! হাস্সান কে রুহুল কুদুস (জিবরীল) (আঃ) দ্বারা সাহায্য কর। আবু হুরাইরা (রাদি.) বললেনঃ হ্যাঁ।
(আঃপ্রঃ ৪৩৪, ইঃফাঃ ৪৪০)
৮/৬৯. অধ্যায়ঃ বর্শা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ।
৪৫৪. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ একদা আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে আমার ঘরের দরজায় দেখলাম। তখন হাবশার লোকেরা মসজিদে (বর্শা দ্বারা) খেলা করছিল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রাখছিলেন। আমি ওদের খেলা অবলোকন করছিলাম।
(আঃপ্রঃ ৪৩৫, ইঃফাঃ ৪৪১)
৪৫৫. See previous Hadith. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
উরওয়া আয়েশা (রাদি.) হইতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি নাবী (সাঃআঃ) কে দেখলাম এমতাবস্থায় হাবশিরা তাদের বর্শা বল্লম নিয়ে খেলা করছিল।
(আঃপ্রঃ ৪৩৫ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৪৪১ শেষাংশ)
৮/৭০. অধ্যায়ঃ মসজিদের মিম্বারের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের আলোচনা।
৪৫৬. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ বারীরা (রাদি.) তাহাঁর নিকট এসে কিতাবাতের [১] দেনা পরিশোধের জন্য সাহায্য চাইলেন। তখন তিনি বললেনঃ তুমি চাইলে আমি (তোমার মূল্য) তোমার মালিককে দিয়ে দিব এ শর্তে যে , উত্তরাধিকার স্বত্ব থাকবে আমার। তার মালিক আয়েশা (রাদি.)- কে বললোঃ আপনি চাইলে বাকী মূল্য বারীরাকে দিতে পারেন। রাবী সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আর একবার বলেছেনঃ আপনি চাইলে তাকে আযাদ করিতে পারেন, তবে উত্তরাধিকার স্বত্ব থাকবে আমাদের। যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আসলেন তখন আমি তাহাঁর নিকট ব্যাপারটি বললাম। তিনি বললেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করে আযাদ করে দাও। কারন উত্তরাধিকার স্বত্ব থাকে তারই, যে আযাদ করে। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়ালেন। সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আর একবার বলেনঃ অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মিম্বারে আরোহন করে বললেনঃ লোকদের কী হলো? তারা এমন সব শর্ত করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই। কেউ যদি এমন শর্তারোপ করে যা আল্লাহর কিতাবে নেই, তার সে শর্তের কোন মূল্য নেই। এমনকি এরূপ শর্ত একশবার আরোপ করলেও। মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)…. আমরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বারীরা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন, তবে মিম্বারে আরোহন করার কথা উল্লেখ করেননি।
আলী ইবনু আবদুল্লাহ আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। জাফর ইবনু আওন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইয়াহইয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাধ্যমে আমরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি আয়েশা (রাদি.) হইতে শুনিয়াছি।
(আঃপ্রঃ৪৩৬ , ইঃফাঃ ৪৪২). [১] কিতাবাতঃ দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে মনিবের সঙ্গে কিস্তি হিসেবে মুক্তিপণ পরিশোধের চুক্তি।
৮/৭১. অধ্যায়ঃ মসজিদে ঋণ পরিশোধের তাগাদা দেয়া ও চাপ সৃষ্টি।
৪৫৭. কাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি মসজিদের ভিতরে ইবনু আবু হাদরাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)–এর নিকট তাহাঁর পাওনা ঋণের তাগাদা করিলেন। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে বেশ উচ্চৈঃস্বরে কথাবার্তা হলো। এমনকি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘর হইতেই তাদের কথার আওয়ায শুনলেন এবং তিনি পর্দা সরিয়ে তাদের নিকট বেরিয়ে গেলেন। আর ডাক দিয়ে বললেনঃ হে কাব! কাব (রাদি.) উত্তর দিলেন, লাব্বায়েক রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বললেনঃ তোমার পাওনা ঋণ হইতে এতটুকু ছেড়ে দাও। আর হাতে ইঙ্গিত করে বোঝালেন, অর্থাৎ অর্ধেক পরিমাণ। তখন কাব (রাদি.) বললেনঃ আমি তাই করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি ইবনু আবু হাদরাদকে বললেনঃ উঠ আর বাকীটা দিয়ে দাও।
(আঃপ্রঃ ৪৩৭, ইঃফাঃ ৪৪৩)
৮/৭২. অধ্যায়ঃ মসজিদ ঝাড়ু দেয়া এবং ন্যাকড়া, আবর্জনা ও কাঠ খড়ি কুড়ানো
৪৫৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একজন কাল বর্ণের পুরুষ অথবা বলেছেন কাল বর্ণের মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত। সে মারা গেল। নাবী (সাঃআঃ) তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সাহাবীগণ বলিলেন, সে মারা গেছে। তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে খবর দিলে না কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার সালাত আদায় করিলেন।
৮/৭৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে মদের ব্যবসা হারাম ঘোষণা করা।
৪৫৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ সুদ সম্পর্কীয় সুরা বাকারার আয়াত সমূহ অবতীর্ণ হলে নাবী (সাঃআঃ) মসজিদে গিয়ে সে সব আয়াত সাহাবীগণকে পাঠ করে শুনালেন। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৩৯, ইঃফাঃ ৪৪৫)
৮/৭৪. অধ্যায়ঃ মসজিদের জন্য খাদিম
ইবন আব্বাস (রাদি.) (এ আয়াত) আমার গর্ভে যা আছে তা একান্ত আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম (৩:৩৫) –এর ব্যাখ্যায় বলেন : মসজিদের জন্য উৎসর্গ করলাম ।
৪৬০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একজন পুরুষ অথবা বলেছেন একজন মহিলা মসজিদ ঝাড়ু দিত। (রাবী সাবিত (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ) আমার মনে হয় তিনি বলেছেন একজন মহিলা। অতঃপর তিনি নাবী (সাঃআঃ)–এর হাদীস বর্ণনা করে বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) তার কবরে জানাযার সালাত আদায় করিয়াছেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪০, ইঃফাঃ ৪৪৬)
৮/৭৫, অধ্যায়ঃ কয়েদী অথবা ঋণগ্রস্থ ব্যক্তিকে মসজিদে বেঁধে রাখা।
৪৬১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ গত রাতে একটা অবাধ্য জ্বিন হঠাৎ আমার সামনে প্রকাশ পেল। রাবী বলেন, অথবা তিনি অনুরূপ কোন কথা বলেছেন, যেন সে আমার সালাতে বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু আল্লাহ আমাকে তার উপর ক্ষমতা দিলেন। আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, তাকে মসজিদের খুঁটিঁর সাথে বেঁধে রাখি, যাতে ভোর বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখিতে পাও। কিন্তু তখন আমার ভাই সুলায়মান (আঃ)–এর এই উক্তি আমার স্মরণ হলো, “হে প্রভু! আমাকে এমন রাজত্ব দান কর, যার অধিকারী আমার পরে আর কেউ না হয়”- (সু-রা সোয়াদ ৩৮/৩৫)। (বর্ণনাকারী) রাওহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) সেই শয়তানটিকে অপমানিত করে ছেড়ে দিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪১, ইঃফাঃ ৪৪৭)
৮/৭৬. অধ্যায়ঃ ইসলাম গ্রহণের গোসল করা এবং মসজিদে কয়েদীকে বাঁধা।
কাযী শুরাইহ [১] (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) দেনাদার ব্যক্তিকে মসজিদের খুঁটিঁর সাথে বেঁধে রাখার নির্দেশ দিতেন।
[১] শুরাইহঃ উমর (রাদি.)–এর খিলাফাতের সময়কার বিশিষ্ট কাযী।
৪৬২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ সুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নাবাবীর নিকট এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করিলেন, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেনঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রাসুল”।
(আঃপ্রঃ ৪৪২, ইঃফাঃ ৪৪৮)
৮/৭৭. অধ্যায়ঃ রোগী ও অন্যদের জন্য মসজিদে তাঁবু স্থাপন
৪৬৩. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ খন্দকের যুদ্ধে সাদ (রাদি.)–এর হাতের শিরা যখম হয়েছিলো। নাবী (সাঃআঃ) মসজিদে (তাহাঁর জন্য) একটা তাঁবু স্থাপন করিলেন, যাতে নিকট হইতে তাহাঁর দেখাশুনা করিতে পারেন। মসজিদে বনূ গিফারেরও একটা তাঁবু ছিল। সাদ (রাদি.)–এর প্রচুর রক্ত তাঁদের দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে তাঁবুর লোকেরা! তোমাদের তাঁবু হইতে আমাদের দিকে কী প্রবাহিত হচ্ছে? তখন দেখা গেল যে, সাদের যখম হইতে রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। অবশেষে এতেই তিনি মারা গেলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪৩, ইঃফাঃ ৪৪৯)
৮/৭৮. অধ্যায়ঃ প্রয়োজনে উট নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করা।
ইবন আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) নিজের উটে সওয়ার হয়ে তওয়াফ করিয়াছেন
৪৬৪. উম্মু সালামা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট (বিদায় হজ্জে) আমার অসুস্থতার কথা জানালে তিনি বললেনঃ সওয়ার হযে লোকদের হইতে দূরে থেকে ত্বওয়াফ কর। আমি ত্বওয়াফ করলাম। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বাইতুল্লাহর পাশে তিলাওয়াত করে সালাত আদায় করেছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪৪, ইঃফাঃ ৪৫০)
৮/৭৯. অধ্যায়ঃ
৪৬৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)–এর দুজন সাহাবী নাবী (সাঃআঃ)–এর নিকট হইতে অন্ধকার রাতে বের হলেন। {তাঁদের একজন আবক্বাদ ইবনু বিশ্র (রাদি.) আর দ্বিতীয় জন সম্পর্কে আমার ধারণা যে, তিনি ছিলেন উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাদি.)} আর উভয়ের সাথে চেরাগ সদৃশ কিছু ছিল, যা তাঁদের সামনের দিকটাকে আলোকিত করছিল। তাঁরা উভয়ে যখন আলাদা হয়ে গেলেন, তখন প্রত্যেকের সাথে একটা করে (আলো) রয়ে গেল। অবশেষে এভাবে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে পৌঁছলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪৫, ইঃফাঃ ৪৫১)
৮/৮০. অধ্যায়ঃ মসজিদে ছোট দরজা ও পথ বানানো
৪৬৬. আবু সাইদ খুদরী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) এক ভাষণে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তাহাঁর এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর নিকট যা আছে- এ দুয়ের মধ্যে একটি গ্রহণের ইখতিয়ার দিলেন। তিনি আল্লাহর নিকট যা আছে– তা গ্রহণ করিলেন। তখন আবু বক্র (রাদি.) কাঁদতে লাগলেন। আমি মনে মনে ভাবলাম, এই বৃদ্ধকে কোন বস্তুটি কাঁদাচ্ছে? আল্লাহ তাহাঁর এক বান্দাকে দুনিয়া ও আল্লাহর নিকট যা রয়েছে-এ দুয়ের একটা গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিলে তিনি আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা গ্রহণ করিয়াছেন (এতে কাঁদার কি আছে?)। মূলতঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–ই ছিলেন সেই বান্দা। আর আবু বকর (রাদি.) ছিলেন আমাদের মাঝে সর্বাধিক জ্ঞানী। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে আবু বক্র, তুমি কাঁদবে না। নিজের সাহচর্য ও সম্পদ দিয়ে আমাকে যিনি সবচেয়ে অধিক ইহসান করিয়াছেন তিনি আবু বক্র। আমার কোন উম্মাতকে যদি আমি খলীল (অন্তরঙ্গ বন্ধু) রূপে গ্রহণ করতাম, তবে তিনি হইতেন আবু বক্র। কিন্তু তাহাঁর সাথে রয়েছে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্য। আবু বক্রের দরজা ব্যতীত মসজিদের কোন দরজাই রাখা হইবে না, সবই বন্ধ করা হইবে।
(আঃপ্রঃ ৪৪৬, ইঃফাঃ ৪৫২)
৪৬৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) অন্তিম রোগের সময় এক টুকরা কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে বাইরে এসে মিম্বারে বসলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও সানা সিফাত বর্ণনার পর বললেনঃ জান-মাল দ্বারা আবু বক্র ইবনু আবু কুহাফার চেয়ে অধিক কেউ আমার প্রতি ইহসান করেনি। আমি কাউকেও অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে অবশ্যই আবু বক্রকে গ্রহণ করতাম। তবে ইসলামের বন্ধুত্বই উত্তম। আবু বক্রের দরজা ব্যতীত এই মসজিদের ছোট দরজাগুলো সব বন্ধ করে দাও।
(আঃপ্রঃ ৪৪৭, ইঃফাঃ ৪৫৩)
৮/৮১. অধ্যায়ঃ বাইতুল্লায় ও অন্যান্য মসজিদে দরজা রাখা ও তালা লাগানো।
আবু আব্দুল্লাহ [ইমাম বুখারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] বলেনঃ আমাকে আব্দুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন যে, আমাকে সুফিয়ান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবন জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করছেন, তিনি বলেনঃ আমাকে ইবন আবী মুলায়কা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, “হে আবদুল মালিক! তুমি ইবন আব্বাস(রাদি.)-এর মসজিদ ও তার দরজাগুলোকে যদি দেখিতে”
৪৬৮. ইবনু উমর হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যখন মক্কায় আসেন তখন উসমান ইবনু তালহা (রাদি.)–কে ডাকলেন। তিনি দরজা খুলে দিলে নাবী (সাঃআঃ), বিলাল, উসামাহ ইবনু যায়দ ও উসমান ইবনু তালহা (রাদি.) ভিতরে গেলেন। অতঃপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হল। তিনি সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করিলেন। অতঃপর সকলেই বের হলেন। ইবনু উমর (রাদি.) বলেনঃ আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে বিলাল (রাদি.)–কে (সালাতের কথা) জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, নাবী (সাঃআঃ) ভিতরে সালাত আদায় করিয়াছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম: কোন স্থানে? তিনি বলিলেন, দুই স্তম্ভের মাঝামাঝি। ইবনু উমর (রাদি.) বলেনঃ কয় রাকআত আদায় করিয়াছেন তা জিজ্ঞেস করিতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
(আঃপ্রঃ ৪৪৮, ইঃফাঃ ৪৫৪)
৮/৮২. অধ্যায়ঃ মসজিদে মুশরিকের প্রবেশ
৪৬৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কতিপয় অশ্বারোহী সৈন্য নজদ অভিমুখে পাঠালেন। তারা বনূ হানীফা গোত্রের সুমামা ইবনু উসাল নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে এলেন। অতঃপর তাকে মসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৪৯, ইঃফাঃ ৪৫৫)
৮/৮৩. অধ্যায়ঃ মসজিদে আওয়ায উঁচু করা
৪৭০. সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে নাবাবীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করলো। আমি তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)। তিনি বললেনঃ যাও, এ দুজনকে আমার নিকট নিয়ে এস। আমি তাদের নিয়ে তাহাঁর নিকট এলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেনঃ তোমরা কোন স্থানের লোক? তারা বললোঃ আমরা তায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেনঃ তোমরা যদি মদীনার লোক হইতে, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের কঠোর শাস্তি দিতাম। তোমরা দুজনে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলেছো!
(আঃপ্রঃ ৪৫০, ইঃফাঃ ৪৫৬)
৪৭১. কাব ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর যুগে তিনি ইবনু আবু হাদরাদের নিকট তাহাঁর প্রাপ্য সম্পর্কে মসজিদে নাববীতে তাগাদা করেন। এতে উভয়ের আওয়ায উঁচু হয়ে গেল। এমন কি সে আওয়ায আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘর হইতে শুনতে পেলেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাহাঁর ঘরের পর্দা সরিয়ে তাদের দিকে বের হয়ে এলেন এবং কাব ইবনু মালিককে ডেকে বললেনঃ হে কাব! উত্তরে কাব বললেনঃ লাব্বায়কা ইয়া রসূলাল্লাহ! তখন নাবী (সাঃআঃ) হাতে ইঙ্গিত করিলেন যে, তোমার প্রাপ্য হইতে অর্ধেক ছেড়ে দাও। কাব (রাদি.) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আমি তাই করলাম। তখন আল্লাহর রাসুল ইবনু আবু হাদরাদ (রাদি.)–কে ব ললেনঃ উঠ এবার (বাকী) ঋণ পরিশোধ কর।
(আঃপ্রঃ ৪৫১, ইঃফাঃ ৪৫৭)
৮/৮৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে হালকা রাঁধা ও বসা
৪৭২. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)–কে প্রশ্ন করিলেন, তখন তিনি মিম্বারে ছিলেন- আপনি রাতের সালাত কীভাবে আদায় করিতে বলেন? তিনি বলেনঃ দুরাকআত দুরাকআত করে আদায় করিবে। যখন তোমাদের কারো ভোর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হয় তখন সে আরো এক রাকআত আদায় করে নিবে। আর এটি তার পূর্ববর্তী সালাতকে বিতর করে দেবে। [নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন] ইবনু উমর (রাদি.) বলিতেনঃ তোমরা বিতরকে রাতের শেষ সালাত হিসেবে আদায় কর। কেননা নাবী (সাঃআঃ) এ নির্দেশ দিয়েছেন।
(আঃপ্রঃ ৪৫২, ইঃফাঃ ৪৫৮)
৪৭৩. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)–এর নিকট এমন সময় আসলেন যখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ রাতের সালাত কীভাবে আদায় করিতে হয়? নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ দুরাকআত দুরাকআত করে আদায় করিবে। আর যখন ভোর হবার আশঙ্কা করিবে, তখন আরো এক রাকআত আদায় করে নিবে। সে রাকআত তোমরা পূর্বের সালাতকে বিতর করে দিবে। ওয়ালীদ ইবন কাসীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আমার নিকট বলেছেন যে, ইবনু উমর (রাদি.) তাঁদের বলেছেনঃ এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ)–কে সম্বোধন করে বলিলেন, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৫৩, ইঃফাঃ ৪৫৯)
৪৭৪. আবু ওয়াক্বিদ লায়সী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মসজিদে ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনজন লোক এলেন। তাঁদের দুজন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর নিকট এগিয়ে এলেন আর একজন চলে গেলেন। এ দুজনের একজন হালকায় খালি স্থান পেয়ে সেখানে বসে পড়লেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি তাদের পেছনে বসলেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কথাবার্তা হইতে অবসর হয়ে বললেনঃ আমি কি তোমাদের ঐ তিন ব্যক্তি সম্পর্কে খবর দেব? এক ব্যক্তি তো আল্লাহর দিকে অগ্রসর হলো! আল্লাহও তাকে আশ্রয় দিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি লজ্জা করলো, আর আল্লাহ তাআলাও তাকে (বঞ্চিত করিতে) লজ্জাবোধ করিলেন। তৃতীয় ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নিল, কাজেই আল্লাহও তার হইতে ফিরে থাকলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৫৪, ইঃফাঃ ৪৬০)
৮/৮৫. অধ্যায়ঃ মসজিদে চিত হয়ে পা প্রসারিত করে শোয়া
৪৭৫. আব্বাদ ইবনু তামীম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর চাচা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি (তাহাঁর চাচা) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–কে মসজিদে চিত হয়ে এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। ইবনু শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, উমর ও উসমান (রাদি.) এমন করিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪৫৫, ইঃফাঃ ৪৬১)
৮/৮৬. অধ্যায়ঃ লোকের অসুবিধা না হলে রাস্তায় মসজিদ বানানো বৈধ।
হাসান বসরী, আয়্যুব এবং মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এরূপ বলেছেন।
৪৭৬. উরওয়া বিন যুবাইর হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ)–এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমার জ্ঞানমতে আমি আমার মাতা-পিতাকে সব সময় দ্বীনের অনুসরণ করিতে দেখেছি। আর আমাদের এমন কোন দিন যায়নি যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সে দিনের উভয় প্রান্তে সকাল-সন্ধ্যায় আমাদের নিকট আসেননি। অতঃপর আবু বকর (রাদি.)–এর মসজিদ নির্মাণের প্রয়োজন দেখা দিল। তিনি তাহাঁর ঘরের আঙ্গিণায় একটি মসজিদ তৈরি করিলেন। তিনি এতে সালাত আদায় করিতেন ও কুরআন তিলাওয়াত করিতেন। মুশরিকদের মহিলা ও ছেলেমেয়েরা সেখানে দাঁড়াতো এবং এতে তারা বিস্মিত হয়ে তাহাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতো। আবু বকর (রাদি.) ছিলেন একজন অধিক ত্রন্দনকারী ব্যক্তি। তিনি কু্রআন পড়া শুরু করলে অশ্রু সংবরণ করিতে পারতেন না। তাহাঁর এ অবস্থা নেতৃস্থানীয় মুশরিক কুরাইশদের নেতৃবৃন্দকে শঙ্কিত করে তুলল।
(আঃপ্রঃ ৪৫৬, ইঃফাঃ ৪৬২)
৮/৮৭. অধ্যায়ঃ বাজারের মসজিদে সালাত আদায়।
ইবন আওন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ঘরের মসজিদে সালাত আদায় করিতেন যার দরজা বন্ধ করা হতো
৪৭৭. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ জামাআতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার জন্যে এ বলে দুআ করেনঃ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ
আল্লা-হুম্মাফিরলাহু আল্লা-হুম্মার হামহু লাম ইউহদিস ফিহি
হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন- যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার কোন কাজ সেখানে না করে।
(আঃপ্রঃ ৪৫৭, ইঃফাঃ ৪৬৩)
৮/৮৮. অধ্যায়ঃ মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করানো।
৪৭৮. ইবনু উমর বা ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করান।
(আঃপ্রঃ ৪৫৮, ইঃফাঃ ৪৬৪)
৪৭৯. ইবনু উমর বা ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ নাবী (সাঃআঃ) এক হাতের আঙ্গুল আর এক হাতের আঙ্গুলে প্রবেশ করান।
(আঃপ্রঃ ৪৫৮, ইঃফাঃ ৪৬৪)
৪৮০. আসিম ইবনু আলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আমি এ হাদীস আমার পিতা হইতে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু আমি তা স্মরণ রাখতে পারিনি। পরে এ হাদীসটি আমাকে ঠিকভাবে বর্ণনা করেন ওয়াকিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর পিতা হইতে। তিনি বলেনঃ আমার পিতাকে বলিতে শুনিয়াছি যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) বলেছেন যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ইরশাদ করেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করিবে, তখন তোমার কী অবস্থা হইবে?
(আঃপ্রঃ ৪৫৮ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৪৬৪ শেষাংশ)
৪৮১. আবু মূসা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্যে ইমারত স্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি তাহাঁর হাতের আঙ্গুলগুলো একটার মধ্যে আরেকটা প্রবেশ করালেন।
(আঃপ্রঃ ৪৫৯, ইঃফাঃ ৪৬৫)
৪৮২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) একদা আমাদের বিকালের এক সালাতে ইমামত করিলেন। ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ আবু হুরাইরা (রাদি.) সালাতের নাম বলেছিলেন, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেনঃ তিনি আমাদের নিয়ে দুরাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। অতঃপর মসজিদে রাখা এক টুকরা কাঠের উপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। তাঁকে রাগান্বিত মনে হচ্ছিল। তিনি তাহাঁর ডান হাত বাঁ হাতের উপর রেখে এক হাতের আঙ্গূল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন। আর তাহাঁর ডান গাল বাম হাতের পিঠের উপর রাখলেন। যাঁদের তাড়া ছিল তাঁরা মসজিদের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। সাহাবীগণ বললেনঃ সালাত কি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে? উপস্থিত লোকজনের মধ্যে আবু বকর (রাদি.) এবং উমর (রাদি.) ও ছিলেন। কিন্তু তাঁরা নাবী (সাঃআঃ) এর সঙ্গে কথা বলিতে ভয় পেলেন। আর লোকজনের মধ্যে লম্বা হাত বিশিষ্ট এক ব্যক্তি ছিলেন, যাঁকে যুল-ইয়াদাইন বলা হতো, তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি ভুলে গেছেন, নাকি সালাত সংক্ষেপ করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি ভুলিনি এবং সালাত সংক্ষেপও করা হয়নি। অতঃপর (অন্যদের) জিজ্ঞেস করলেনঃ যুল-ইয়াদাইনের কথা কি ঠিক? তাঁরা বললেনঃ হ্যাঁ! অতঃপর তিনি এগিয়ে এলেন এবং সালাতের বাদপড়া অংশটুকু আদায় করিলেন। অতঃপর সালাম ফিরালেন ও তাকবীর বলিলেন এবং স্বাভাবিক ভাবে সিজদার মতো বা একটু দীর্ঘ সিজদা করিলেন। অতঃপর তাকবীর বলে তাহাঁর মাথা উঠালেন। পরে পুনরায় তাকবীর বলিলেন এবং স্বাভাবিকভাবে সিজদার মত বা একটু দীর্ঘ সিজদা করিলেন। অতঃপর তাকবীর বলে তাহাঁর মাথা উঠালেন। লোকেরা প্রায়ই ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)–কে জিজ্ঞেস করতো, “পরে কি তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন”? তখন ইবনু সীরীন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলিতেনঃ আমার নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, ইমরান ইবনু হুসাইন (রাদি.) আমাকে খবর দিয়েছেন যে, অতঃপর তিনি সালাম ফিরিয়েছিলেন।
(আঃপ্রঃ ৪৬০, ইঃফাঃ ৪৬৬)
৮/৮৯. অধ্যায়ঃ মদীনার রাস্তার মসজিদসমূহ এবং যে সকল স্থানে নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করেছিলেন।
৪৮৩. মূসা ইবনু উক্বা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমি সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রাদি.) কে রাস্তার বিশেষ বিশেষ স্থান অনুসন্ধান করে সে সব স্থানে সালাত আদায় করিতে দেখেছি এবং তিনি বর্ণনা করিতেন যে, তাহাঁর পিতাও এসব স্থানে সালাত আদায় করিতেন। আর তিনিও আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে এসব স্থানে সালাত আদায় করিতে দেখেছেন। মূসা ইবনু উকবা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-ও আমার নিকট ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি সেসব স্থানে সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর আমি সালিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) কে জিজ্ঞেস করি। আমার জানামতে তিনিও সেসব স্থানে সালাত আদায়ের ব্যাপারে নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর সাথে ঐকমত্য পোষণ করিয়াছেন; তবে শারাফুর-রাওহা নামক স্থানের মসজিদটির ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৪৬১, ইঃফাঃ ৪৬৭)
৪৮৪. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) উমরাহ ও হজ্জের জন্যে রওয়ানা হলে যুল-হুলায়ফায় অবতরণ করিতেন, বাবলা গাছের নীচে যুল হুলায়ফার মসজিদের স্থান। আর যখন কোন যুদ্ধ হইতে অথবা হজ্জ বা উমরাহ করে সেই পথে ফিরতেন, তখন উপত্যকার মাঝখানে অবতরণ করিতেন। যখন উপত্যকার মাঝখান হইতে উপরের দিকে আসতেন, তখন উপত্যকার তীরে অবস্থিত পূর্ব নিম্নভূমিতে উট বসাতেন। সেখানে তিনি শেষ রাত হইতে ভোর পর্যন্ত বিশ্রাম করিতেন। এ স্থানটি পাথরের উপর নির্মিত মসজিদের নিকট নয় এবং যে মসজিদ টিলার উপর, তার নিকটেও নয়। এখানে ছিল একটি ঝিল, যার পাশে আবদুল্লাহ (রাদি.) সালাত আদায় করিতেন। এর ভিতরে কতগুলো বালির স্তূপ ছিল। আর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এখানেই সালাত আদায় করিতেন। অতঃপর নিম্নভূমিতে পানি প্রবাহ হয়ে আবদুল্লাহ (রাদি.) যে স্থানে সালাত আদায় করিতে তা সমান করে দিয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ প্রথমাংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮)
৪৮৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) [নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)] হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) শারাফুর-রাওহার মসজিদের নিকট ছোট মসজিদের স্থানে সালাত আদায় করেছিলেন। নাবী (সাঃআঃ) যেখানে সালাত আদায় করেছিলেন, আবদুল্লাহ (রাদি.) সে স্থানের পরিচয় দিতেন এই বলে যে, যখন তুমি মসজিদে সালাতে দাঁড়াবে তখন তা তোমার ডানদিকে। আর সেই মসজিদটি হলো যখন তুমি (মদীনা হইতে) মক্কা যাবে তখন তা ডানদিকের রাস্তার এক পাশে থাকবে। সে স্থান ও বড় মসজিদের মাঝখানে ব্যবধান হলো একটি ঢিল নিক্ষেপ পরিমাণ অথবা তার কাছাকাছি।
(আঃপ্রঃ৪৬২ দ্বিতীয় অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ দ্বিতীয় অংশ)
৪৮৬. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ
আর ইবনু উমর (রাদি.) রাওহার শেষ মাথায় ইরক (ছোট পাহাড়)–এর নিকট সালাত আদায় করিতেন। সেই ইরক–এর শেষ প্রান্ত হলো রাস্তার পাশে মসজিদের কাছাকাছি মক্কা যাওয়ার পথে রাওহা ও মক্কার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এখানে একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) এই মসজিদে সালাত আদায় করিতেন না, রবং সেটাকে তিনি বামদিকে ও পেছনে ফেলে অগ্রসর হয়ে ইরক–এর নিকটে সালাত আদায় করিতেন। আর আবদুল্লাহ (রাদি.) রাওহা হইতে বেরিয়ে ঐ স্থানে পৌঁছার পূর্বে যুহরের সালাত আদায় করিতেন না। সেখানে পৌঁছে যোহর আদায় করিতেন। আর মক্কা হইতে আসার সময় এ পথে ভোরের এক ঘন্টা পূর্বে বা শেষ রাতে আসলে সেখানে অবস্থান করে ফজরের সালাত আদায় করিতেন।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ তৃতীয় অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ তৃতীয় অংশ)
৪৮৭. আবদুল্লাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) রুওয়ায়ছার নিকটে রাস্তার ডানদিকে রাস্তা সংলগ্ন প্রশস্ত সমতল ভূমিতে একটা বিরাট গাছের নীচে অবস্থান করিতেন। অতঃপর তিনি রুওয়ায়ছার ডাকঘরের দুমাইল দূরে ঢিলার পাশ দিয়ে রওয়ানা হইতেন। বর্তমানে গাছটির উপরের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে মাঝখানে ঝুঁকে গেছে। গাছের কাণ্ড এখনো দাঁড়িয়ে আছে। আর তার আশেপাশে অনেকগুলো বালির স্তূপ বিস্তৃত রয়েছে।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ চতুর্থ অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ চতুর্থ অংশ)
৪৮৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আরজু গ্রামের পরে পাহাড়ের দিকে যেতে যে উচ্চভূমি আছে, তার পাশে নাবী (সাঃআঃ) সালাত আদায় করিয়াছেন। এই মসজিদের পাশে দুতিনটি কবর আছে। এসব কবরে পাথরের বড় বড় খণ্ড পড়ে আছে। রাস্তার ডান পাশে গাছের নিকটেই তা অবস্থিত। দুপুরের পর সূর্য ঢলে পড়লে আবদুল্লাহ (রাদি.) আর্জ–এর দিক হইতে এসে গাছের মধ্য দিয়ে যেতেন এবং ঐ মসজিদে যুহরের সালাত আদায় করিতেন।
(আঃপ্রঃ৪৬২ পঞ্চম অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ পঞ্চম অংশ)
৪৮৯. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) সে রাস্তার বাঁ দিকে বিরাট গাছগুলোর নিকট অবতরণ করেন যা হারশা পাহাড়ের নিকটবর্তী নিম্নভূমির দিকে চলে গেছে। সেই নিম্নভূমিটি হারশা–এর এক প্রান্তের সাথে মিলিত। এখান হইতে সাধারণ সড়কের দূরত্ব প্রায় এক তীর নিক্ষেপের পরিমাণ। আবদূল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) সেই গাছগুলোর মধ্যে একটির নিকট সালাত আদায় করিতেন, যা ছিল রাস্তার নিকটে এবং সবচেয়ে উঁচু।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ ষষ্ঠ অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ ষষ্ঠ অংশ)
৪৯০. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) অবতরণ করিতেন মাররুয যাহরান উপত্যকার মেষ প্রান্তে নিম্নভূমিতে, যা মদীনার দিকে যেতে ছোট পাহাড়গুলোর নীচে অবস্থিত। তিনি সে নিম্নভূমির মাঝখানে অবতরণ করিতেন। এটা মক্কা যাওয়ার পথে বাম পাশে থাকে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর মনযিল ও রাস্তার মাঝে দূরত্ব এক পাথর নিক্ষেপ পরিমাণ।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ সপ্তম অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ সপ্তম অংশ)
৪৯১. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) যূ-তুওয়ায় অবতরণ করিতেন এবং এখানেই রাত যাপন করিতেন আর মক্কায় আসার পথে এখানেই ফজরের সালাত আদায় করিতেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)–এর সালাত আদায়ের সেই স্থানটা ছিল একটা বড় টিলার উপরে। যেখানে মসজিদ নির্মিত হয়েছে সেখানে নয় বরং তার নীচে একটা বড় টিলার উপর।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ অষ্টম অংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ অষ্টম অংশ)
৪৯২. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) পাহাড়ের দুটো প্রবেশপথ সামনে রাখতেন যা তার ও দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝখানে কাবার দিকে রয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে মসজিদ নির্মিত হয়েছে, সেটিকে তিনি [ইবনু উমর (রাদি.)] টিলার প্রান্তের মসজিদটির বাম পাশে রাখতেন। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ)–এর সালাতের জায়গা ছিল এর নীচের কাল টিলার উপরে। এটি প্রথম টিলা হইতে প্রায় দশ হাত দূরে। অতঃপর যে পাহাড়টি তোমার ও কাবার মাঝখানে পড়বে তার দুপ্রবেশ দ্বারের দিকে মুখ করে তুমি সালাত আদায় করিবে।
(আঃপ্রঃ ৪৬২ শেষাংশ, ইঃফাঃ ৪৬৮ শেষাংশ)
Leave a Reply